শব্দার্থ ও টীকা
শস্যহীন জনবহুল এ অঞ্চল -ঔপন্যাসিক বাংলাদেশের এমন একটি বিশেষ অঞ্চলের বর্ণনা দিয়েছেন যেখানে ফসল এবং খাদ্যশস্যের প্রচণ্ড অভাব অথচ, জনসংখ্যার আধিক্য বর্তমান।
বেরিয়ে পড়বার... করে রাখে - অভাবের তাড়নায় দেশের একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষ জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে অজানার উদ্দেশ্যে। এই অজানা, অচেনা স্থান সম্পর্কে তার মধ্যে অনিশ্চয়তার শঙ্কা কাজ করে সেটিই এখানে বোঝানো হয়েছে।
নলি -নৌকা চালানোর জন্য চিকন ও লম্বা বাঁশ বিশেষ।
জ্বালাময় আশা -তীব্র ক্ষুধা ও যন্ত্রণাময় জীবন থেকে মুক্তির প্রত্যাশা।
হা শূন্য -অভাবগ্রস্ত। দারিদ্র্য।
দিনমানক্ষণের সবুর -মুহূর্তের অপেক্ষা। সামান্য সময়ের প্রতীক্ষা।
ফাঁসির শামিল -মৃত্যুর অনুরূপ।
ঝিমধরা -অবসন্ন। স্থির।
সর্পিল গতিতে -সাপের আঁকাবাঁকা চলনের মতো।
সজারু কাঁটা হয়ে ওঠে- হঠাৎ জেগে ওঠে। সচল হয়।
বহির্মুখী উন্মত্ততা- কাজের সন্ধানে বাইরে যাওয়ার ব্যাকুলতা।
জানপছানের লোক- আত্মীয়-স্বজন। প্রিয়জন।
দেহচ্যুত হয়ে- ইঞ্জিন যখন ট্রেনের বগি থেকে পৃথক হয়।
সরভাঙা পাড়- প্রবল স্রোতে নদীর ভেঙে যাওয়া পাড়।
শস্যের চেয়ে টুপি বেশি- ঔপন্যাসিক যে এলাকার বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানে প্রচণ্ড অভাবের পাশাপাশি মানুষগুলো ধর্মভীরু। খাদ্য না থাকলেও মানুষের মধ্যে ধর্মচর্চার কার্পণ্য নেই- এটাই বোঝানো হয়েছে।
হেফজ- মুখস্থ। কণ্ঠস্থ।
সরগলা কেরাত- চিকন সুরে কোরান পাঠ।
ফিকে দাড়ি- পাতলা বা হালকা দাড়ি।
কিতাবে যে বিদ্যে...লোক আবার নেই-পূর্বের লিখিত বিষয় পুস্তকে যেন স্থির ও স্থবির হয়ে আছে। তাকে গতিশীল এবং আধুনিক যুগোপযোগী করার মতো কেউ নেই।
নখোদার এলেমে বুক...পেট শূন্য বলে- ধর্মীয় বিদ্যা এবং ধর্মচর্চাদ্বারা ক্ষুধার্ত মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।
বাহে মূলুকে- উত্তরবঙ্গ এলাকায়।
নিরাক-পড়া-বাতাসহীন নিস্তব্ধ গুমোট আবহাওয়া। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
আকাশটা বুঝি চটের মতো চিরে গেল-টানিয়ে রাখা চটে কাঁচি চালানোর সাথে সাথে যেমন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একেবারে চিরে যায় তেমন অবস্থা বোঝাতে উপমাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
গলুই- নৌকার সামনের বা পেছনের শক্ত ও সরু অংশ।
চোখে ধারালো দৃষ্টি- চোখের সূক্ষ্ম, কৌতূহলী ও আন্তর্ভেদী দৃষ্টি। পানি নিচের মাছের অবস্থান অনুমান করার মতো দৃষ্টি।
ধানের ফাঁকে ফাঁকে... এঁকেবেঁকে চলে- পানিতে নিমজ্জিত ধানক্ষেতে নৌকার এক প্রান্তে চালক খুব সাবধানী। নৌকা চালানোর সময় যেন কোনোভাবে ঢেউ বা শব্দ তৈরি না হয়। তেমনি অপর প্রান্তে জুতি-কোঁচ হাতে দাঁড়িয়ে শিকারি। তার দৃষ্টিকে সাপের এঁকেবেঁকে ছুটে চলার সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে ঔপন্যাসিক উদ্ধৃত উপমাটি প্রয়োগ করেছেন।
চোখে তার তেমনি...শিকারির সূচাগ্র একাগ্রতা- তাহের-কাদের মাছ ধরছে। কাদের সন্তর্পণে নৌকা চালাচ্ছে। তাহের নৌকার সম্মুখভাবে-তার দৃষ্টি যেন সূচের অগ্রভাগের মতো তীক্ষ্ণতাসম্পন্ন। যেখানেই মাছ থাকুক না কেন-দৃষ্টি সূক্ষ্মতায় তা চোখে ধরা পড়বেই।
দাঁড় বাইছে, ... পানি নয়, তুলো- কাদের পেছনে বসে নৌকা চালাচ্ছে। সামনে তাহের। তার ইশারা মতো এতটা সাবধান, সতর্ক ও নিঃশব্দে নৌকা চালাচ্ছে সে। লেখক এখানে পানিকে তুলোর সাথে তুলনা করেছেন। পানিতে বা নৌকায় শব্দ হলে মাছ পালিয়ে যাবে। এ কারণে শিকারিদের অবস্থান এবং বিচরণ নিঃশব্দে এবং সন্তর্পণে হওয়াই উচিত। তাহের কাদেরের নৌকা যেন পানিতে নয়-তুলার উপর দিয়ে চলছে।
ক-টা শিষ নড়ছে- খাদ্য গ্রহণের জন্য মাছ ধানগাছের পানির মধ্যকার অংশের গায়ে জমে থাকা শেওলায় ঠোকর দেয়। আবার কখনো বা পানির উপরকার শেওলা বা পানায় ঠোকর দিতে থাকে। ধানগাছের ডগা, শেওলা বা পানা নড়তে থাকলে শিকারি মাছের অবস্থান বুঝতে পারে।
আলগোছে-খুব সাবধানে, আলতোভাবে।
কোঁচ- মাছ ধরার জন্য নিক্ষেপণযোগ্য অস্ত্র। মাথায় তীক্ষ্ণ শলাকাগুচ্ছ যুক্ত বর্শা বিশেষ।
নিঃশ্বাসরুদ্ধ করা মুহূর্ত- দম বন্ধ হওয়া সময় চরম উত্তেজনাকর মুহূর্ত।
লোকেরা স্থির দৃষ্টিতে... সা-ঝাক- ধানক্ষেতে পানির মধ্যে মাছের অবস্থান দেখে তাহেরের পরবর্তী বিভিন্ন অ্যাকশানের বিবরণ এখানে দেওয়া হয়েছে। বিলের ভিতর অন্য নৌকার শিকারিরা দেখছে-তাহের কীভাবে নিঃশব্দে ডান হাতে কোঁচ তুলে বাম হাতের আঙুল দিয়ে ইশারা করে নৌকার অবস্থান, সামনে-পেছনে-ডাইনে-বায়ে নির্দেশ করছে। অবশেষে শরীরটাকে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে অতি দ্রুত এবং জোরালোভাবে, সা-ঝাক্ শব্দে কোঁচ নিক্ষেপ করেছে।
চোক নিমীলিত- চোখ বোজা। মোনাজাত বা প্রার্থনার সময় একাগ্রতার জন্য চোখ বন্ধ রাখা হয়।
কোটরাগত নিমীলিত সে চোখে একটু কম্পন নেই- দেবে যাওয়া বন্ধ চোখ দুটির মধ্যে কোনো দ্বিধা, ভয় বা কম্পন নেই। নেই মিথ্যে বলার অপরাধবোধ। মানসিকভাবে সে খুব সাহসী।
এভাবেই মজিদের প্রবেশ... নাটকেরই পক্ষপাতী- চেনা নেই, জানা নেই; একটা গ্রামে হঠাৎ করে ঢুকে একটি অসাধারণ অভিনয়ে অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষকে আকৃষ্ট করে ফেলে আগুন্তুক মজিদ। অপরিচিত মানুষ দেখে ছেলে বৃদ্ধ সবাই কৌতূহলী হয়ে ওঠে। আর এই কৌতূহলকে কাজে লাগায় মজিদ। তার আদব-কায়দা অভিনয়, গ্রামের সাধারণ মানুষের আগ্রহ সবকিছুকে কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মকভাবেই উপস্থাপন করেছেন লেখক।
নবাগত লোকটির কোটরাগত চোখে আগুন- শীর্ণকায় মজিদের দেবে যাওয়া চোখে আগুন। অসাধারণ অভিনয়। সে যখন বুঝে ফেলে গ্রামের মানুষগুলো মুর্খ কিন্তু কৌতূহলী-তখনই সে যে বিশাল মিথ্যাটিকে প্রতিষ্ঠিত করবে তার পূর্ব মুহূর্তের অভিনয়টি সে করে নেয়। তার চোখেমুখে ক্রোধের আগুন সবার অন্তরে ছড়িয়ে দিয়ে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে।
জাহেল- অজ্ঞ। মুর্খ। নির্বোধ।
বেএলেম- বিদ্যাহীন। লেখাপড়া জানে না এমন লোক।
আনপাড়হ্- যাদের পড়াশোনা জ্ঞান নেই এমন লোক।
বেচাইন- অস্থির। উতলা।
চড়াই-উতরাই ভাব- অস্তিরতাজনিত শুষ্কতা, ক্লান্তির ভাব।
চিকনাই- উজ্জ্বল। লাবণ্যময় চেহারা।
এখানে ধানক্ষেতে... আকাশে ভাসে না- যে স্থানের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সেখানকার মানুষ জমি-জমায় আবাদ করে- ফসল ফলিয়ে ভালোই আছে কিন্তু তাদের অন্তরে খোদার প্রতি আগ্রহ বা অনুরাগের অভাব আছে।
দুনিয়ায় সচ্ছলভাবে...সে খেলা সাংঘাতিক - বস্তুত মজিদ অভাবগ্রস্ত এলাকার অধিবাসী। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এলাকা ছেড়েছে সে। মহব্বতনগরে এসে সেখানকার মানুষকে বোকা বানিয়ে যে মিথ্যে মাজার ব্যবসার পথে অগ্রসর হয়েছে লেখক তাকে সাংঘাতিক বা ভয়ংকর ‘খেলার’ সাথে তুলনা করেছেন। যদি কখনো এই মিথ্যার রহস্য উন্মোচিত হয়ে যায় তখন সামাল দেওয়া মজিদের পক্ষে কতটা সম্ভব সে কথা ভেবেই লেখক এ মন্তব্য করেছেন।
জমায়েতের অধোবদন চেহারা- মজিদ যখন মিথ্যা মোদাচ্ছের পিরের মাজারের কথা বলে উপস্থিত গ্রামবাসীকে গালাগালি করছিল তখন তাদের ভেতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। সত্যিই তারা পিরের মাজারকে এরকম অযত্ন অবহেলায় ফেলে রেখেছে? এ কারণে তাদের অপরাধী মুখ নিচু হয়ে আছে- চেহারায় প্রকাশ পেয়েছে লজ্জা মিশ্রিত অপরাধবোধ।
সালু- এক রকম লাল সুতি কাপড়।
মাছের পিঠের মতো-এটি একটি উপমা। মাছের পিঠের মাঝখানটা যেমন উঁচু, মাজারের মাঝখানটাও তেমনি উঁচু।
বতোর দিনে- জমিতে বীজ বপন বা ফসল বোনার এবং ফসল কাটার উপযুক্ত সময়।
মগরা মগরা ধান- প্রচুর ধান। গোলা বা মোড়া ভর্তি ধান।
হাড় বের করা দিনের কথা- প্রচণ্ড অভাবের দিনের কথা। না খেতে পেরে অপুষ্টি অনাহারে ক্লিষ্ট মানুষের বুকের পাঁজরের হাড় জেগে ওঠে। এ রকম অবস্থার কথা এখানে বর্ণিত হয়েছে।
বেওয়া- বিধবা
রা নেই- কথা বা আওয়াজ নেই। রব। সাড়া। শব্দ। ধ্বনি। মুখের কথা নেই।
মাটি-এ গোস্বা করে- মাটি রাগ করে।
কবরে আজাব হইব- কবরে শাস্তি হবে।
বেগানা- অনাত্মীয়।
গলা সীসার মতো অবশেষে লজ্জা আসে রহিমার সারা দেহে- সীসা একটি কঠিন ধাতব পদার্থ। আগুনে পোড়ালে তা গলে যায় এবং যে পাত্রে রাখা যায় তাতে ছড়িয়ে পড়ে সমান্তরালভাবে। মজিদের উপদেশ বাণী শোনার পর লজ্জা রহিমার সমস্ত শরীরে ওই রূপ ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি উপমা।
গ্রামের লোকেরা যেন-রহিমারই অন্য সংস্করণ- রহিমা মজিদের স্ত্রী। তার অনুগত ও বাধ্য। মজিদের ভয়ে সে ভীতও। মজিদের চোখের ভাষা বোঝে সে। তাছাড়া সে ধর্মভীরু। গ্রামের মানুষগুলোও তারই মতো একই রকম ধর্মভীরু ও মজিদের প্রতি অনুগত।
আত্মমর্যাদার ভুয়ো ঝাণ্ডা উঁচিয়ে রাখবার- জমির মালিকানা সংক্রান্ত ধারণা। গ্রামে যে যত বেশি জমির মালিক, সে তত বেশি মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। এই মালিকানার মর্যাদাকে লেখক ঝান্ডা উঁচিয়ে রাখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে যে বৈষয়িক অহমিকা তাকে লেখক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভুয়ো বা আমার বলে অভিহিত করেছেন।
মাটির এলো খাবড়া দলাগুলো- মাটির ঢেলা, কোদাল দিয়ে কোপানো বা লাঙল দিয়ে চাষ করার পর মাটির যে ছোট ছোট খণ্ড তৈরি হয় সিপাইর খন্ডিত ছিন্ন দেহের একতাল অর্থহীন মাংসের মতো জমিজমা নিয়ে মানুষে মানুষে বিবাদ হয়, হানাহানি, ঝগড়া, বিবাদ, মারামারি এমন কি রক্তারক্তিও হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সৈনিকের অর্থহীন খণ্ডিত দেহের মাংসপিণ্ডের সঙ্গে জমি নিয়ে এই বিবাদ বিসংবাদের অর্থহীনতাকে তুলনা করা হয়েছে। এটি একটি উপমা।
রুঠাজমি- অনুর্বর ভূমি নিষ্ফলা জমি।
শূন্য আকাশ বিশাল নগ্নতায় নীল হয়ে জ্বলেপুড়ে মরে- মেঘ বৃষ্টিবিহীন নীল আকাশকে কেমন
উন্মুক্ত-ন্যাংটা মনে হয়। রোদের তাপদাহে মাঠ-প্রান্তরের মাটি ফেটে চৌচির। বৃষ্টি আর মেঘ শূন্যতায় আকাশকেই মনে হয় শূন্য। তার নীলের ভেতর মৃত্যু যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু নেই যেন।
নধর নধর-কমনীয়, সরস ও নবীন।
কোঁদে কোঁদে পানি তোলে-বিশেষ এক ধরনের পাত্রে এবং গ্রাম্য পদ্ধতিতে জমিতে সেচ দেওয়া।
মাটির তৃষ্ণায় তাদেরও অন্তর খাঁ খাঁ করে- কৃষক শ্রম দিয়ে মেধা মনন দিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে মাঠে ফসল ফলায়। ফসল ফলানোর এক পর্যায়ে মাঠে পানি দিতে হয়। পানির অভাবে চারাগাছ শুকিয়ে যায়-হলুদ হয়ে মারা যায়, মাটি শুষ্ক হয়ে মাঠ ফেটে যায়। এ অবস্থা দেখে কৃষকের বুক ফেটে যায় অজানা শঙ্কায়।
দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো কাস্তে- অমাবস্যার দুইদিন পরের চাঁদ-দ্বিতীয়ার চাঁদ। নতুন ওঠা এই চাঁদের আকৃতি বাঁকা কাণ্ডের মতো। যে কাস্তে হাতে কৃষক মাঠের ধান কাটে আর মনের আনন্দে গান ধরে।
তাগড়া- বলিষ্ঠ লম্বা-চওড়া।
গাঁট্টাগোট্টা- খর্ব ও স্থূল অথচ বলিষ্ঠ দৃঢ় অস্থি গ্রন্থিযুক্ত, আঁটসাঁট দেহবিশিষ্ট।
শ্যোন দৃষ্টি- বাজপাখি বা শিকারি পাখির মতো দৃষ্টি।
ঝালরওয়ালা সালু কাপড়ে... অবজ্ঞা করে যেন- মহব্বতনগরের মানুষের অকৃত্রিম হাসি, অনাবিল আনন্দ মজিদকে করে তোলে ভীতসন্ত্রস্ত। গ্রামের মানুষ যদি ফসলের মাধ্যমে সচ্ছলতা অর্জন করে ফেলে তাহলে তাদের মনে খোদার প্রতি আনুগত্য কমে যাবে-কমে যাবে মজিদের প্রতি নির্ভরশীলতা। মজিদ তো চায় গ্রামের মানুষ অভাব অনটনে থাকুক, ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি-রাহাজানিসহ বিভিন্ন ফ্যাসাদে জড়িয়ে থেকে মজিদের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু তারা নির্ভেজাল জীবন যাপন করলে মজিদ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে এই মনোভাবই এখানে ব্যক্ত হয়েছে।
রিজিক দেনেওয়ালা- জীবনোপকরণ বা অন্ন-বস্ত্র দাতা, খাদ্য যোগানদার।
বুত পূজারী- যারা মূর্তি পূজা করে।
নছিহত- উপদেশ। পরামর্শ।
খতম পড়াবার- অনাবৃষ্টি বা অন্য কোনো বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা পবিত্র কোরান-শরিফ পড়ানোর ব্যবস্থা করে। কোরান শরিফের ৩০ পারা পড়ে শেষ করাকে কোরান খতম বলে। এর মাধ্যমে মঙ্গল ও কল্যাণ সাধন হবে বলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মনে করেন।
কলমা- কলেমা। ইসলাম ধর্মে পাঁচটি কলেমা আছে। এর প্রথমটি কলেমা তাইয়েব-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নাই; মুহম্মদ (সা) আল্লাহর রসুল-অর্থাৎ মুহম্মদ (স) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।
মুরুক্ষু- মুর্খ। বোকা।
আমসিপারা- আরবি বর্ণমালার উচ্চারণসহ সুরা সংকলন। পবিত্র কোরান শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ।
মক্তব- মুসলমান বালক-বালিকাদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয় বা শিক্ষালয়।
জুম্মাবার- শুক্রবার দিন জোহরের সময়ে মুসলমানদের জামাতে অংশগ্রহণ করে আদায়কৃত নামাজ।
রা-নেই-রব। সাড়া। শব্দ। ধ্বনি। মুখের কথা নেই।
তারস্বর- অতি উচ্চ শব্দের চিৎকার।
ধামড়া- বয়স্ক। পাকা।
মারুফ- মহান পুরুষ। মহাপুরুষ।
রুহ- আত্মা। অন্তরাত্মা।
মহা তমিস্রা- গভীর অন্ধকার। ঘোর অমানিশা।
রহমত- করুণা। দয়া। কৃপা। অনুগ্রহ।
মওত- মৃত্যু। মরণ।
ঢেঙা- লম্বা। পাতলা শরীর।
শয়তানের খাম্বা- খাম্বা অর্থ খুঁটি বা স্তম্ভ। এখানে হাসুনির মার বাপ তথা তাহের কাদেরের বাপকে মজিদের দৃষ্টিতে শয়তানের খুঁটি বলা হয়েছে। তাহেরের বাপ বুড়ো, তার সঙ্গে স্ত্রীর সর্বদা ঝগড়া লেগে থাকে। এ দিকে বুড়োর মেয়ে হাসুনির মা মজিদের কাছে এসে বাপের বিরুদ্ধে নালিশ জানায়। তাহেরের বাপ কিছুটা বোকা ও একরোখা। এটি মজিদের মোটেই পছন্দ নয়। মজিদ ভাবে এই বুড়োই শয়তানের খাম্বা।
বাজখাঁই গলায়- গম্ভীর ও কর্কশ স্বরে।
ব্যাক্কই- বেবাক। সবাই। সকলেই।
ঝুটমুট- মিথ্যা। বানানো কথা।
ঢোল-সোহরত- কোনো বিষয় ঢাক-ঢোল বাজিয়ে প্রচার করা, প্রচারের ব্যাপকতা অর্থে।
সুরা ফাতেহা- পবিত্র কোরানের প্রথম সুরা।
নেকবন্দ- পুণ্যবান। মহাপুরুষ।
ঋজুভঙ্গিতে- সোজাসুজিভাবে।
রসনা প্রক্ষিপ্ত হয়েছে- জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে।
সুরায়ে আল-নুর- পবিত্র কোরান-শরিফের একটি সুরা- যেখানে মানব জাতিকে আলোর পথ দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি মূলত নারীদের বিভিন্ন বিধান বর্ণিত হয়েছে।
কেরাত- পবিত্র কোরান-শরিফের বিশুদ্ধ পাঠ।
চোখ-নাবায়- চোখ নত করে। মাথা নত করে নিচের দিকে তাকায়।
হলফ- সত্য কথা বলার জন্য যে শপথ করা হয়। শপথ। প্রতিজ্ঞা।
রদ্দি- পচা। বাসি।
রুদ্ধ নিঃশ্বাসের স্তব্ধতা-দম বন্ধ করা বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো নীরবতা।
দোজখের লেলিহান শিক্ষা- নরকে দাউ দাউ করা আগুনের শিখা।
ঢেঙা বদমেজাজি বৃদ্ধ লোকটি- লম্বা বা দীর্ঘদেহী উগ্র মেজাজি বা রগচটা বুড়ো মানুষটি। এখানে তাহের-কাদেরের বাপের কথা বলা হয়েছে।
আমসিপানা মুখ- শুকিয়ে যাওয়া মুখ।
তির্যক ভঙ্গিতে- বাঁকা। অসরল। কুটিলভাবে।
বাজপাখি- এক ধরনের শিকারি পাখি।
আথলি-পাথালি- এলোমেলো।
লোটা- ঘটি। পাত্র বিশেষ।
নেকবন্দ- পূন্যবান।
বালা- আপদ-বিপদ।
মগড়ার পর মগড়া- ধান সংরক্ষণের গোলার প্রাচুর্য বোঝাতে।
শোকর গুজার- কৃতজ্ঞতা। প্রশংসা। তৃপ্তি বা তুষ্টি প্রকাশ
তোয়াক্কল- ভরসা। নির্ভর।
নিতিবিতি করে- সংকোচে ইতস্তত করা।
পির- মুসলিম দীক্ষাগুরু। পুণ্যাত্মা।
মুরিদ-মুসলমান ভক্ত বা শিষ্য। সাধক।
খড়গনাসা-গৌরবর্ণ চেহারা- ধারালো নাকবিশিষ্ট সুন্দর উজ্জ্বল চেহারা।
এস্তেমাল-ব্যবহার করা। আয়ত্ত করা।
রুহানি তাকত ও কাশফ-আত্মিক শক্তি উন্মোচন করা।
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ-অমাবস্যার পূর্বে চাঁদ ছোট হতে হতে হঠাৎ যেমন মিলিয়ে যায়। এটি একটি উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বাতরস স্ফীত পদযুগল-পির সাহেবের বাতরোগগ্রস্ত পায়ের কথা এখানে বলা হয়েছে।
কালো মাথার সমুদ্র-অনেক মানুষের মাথার চুল এক সঙ্গে একটি কালো সমুদ্রের মতো মনে হয়। এটি একটি উপমা।
বয়েত- কবিতাংশ; আরবি, ফারসি বা উর্দু কবিতার শ্লোক।
বেদাতি- ইসলাম ধর্মের প্রচলিত রীতির বাইরের কিছু।
তকলিফ- কষ্ট।
জঈফ- অতি বৃদ্ধ।
রেস্তায়- সম্পর্কে। আত্মীয়তায়।
সটকাইছে- পালিয়ে গেছে।
কেরায়া নায়ের মাঝি- ভাড়াখাটা নৌকার মাঝি।
রেহেল- কোরান শরিফ রাখার জন্য কাঠের কাঠামো।
তাছির- প্রভাব।
উচক্কা- অবাধ্য। ডানপিঠে। দুরন্ত
বৃষ্টি পানিসিঞ্চিত জঙ্গলের মতো-বৃষ্টির পানি পেয়ে জঙ্গল যেমন আরও ঘন হয়ে উঠে-তেমন।
শিরালি- শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যারা মন্ত্র বা দোয়া পড়ে।
বরগা- ছাদের ভর ধরে রাখার কাঠ বা লোহা।
হুড়কাণ্ড দরজার খিল।
বাজা মেয়ে- বন্ধ্যা নারী। যে নারীর সন্তান হয় না।
মৃত মানুষের খোলা চোখের মতো- এটিও একটি উপমা। মাজারের পিঠের ওপর থেকে কাপড়টি সরে যাওয়ায় তাকে তাকিয়ে থাকা মরদেহের মতো মনে হয়।
বাইরে আকাশে শঙ্খচিল... ডাকাডাকি করে অবিশ্রান্ত-এটি একটি রূপকার্থক বাক্য। শঙ্খচিল স্বাধীনভাবে আকাশে উড়ে, কাকও স্বাধীনভাবে ডাকাডাকি করে। এখানে বস্তুত জমিলার স্বাধীন সত্তার রূপকার্থক পরিচয় জ্ঞাপন করে।
দুলার বাপ- বরের বাবা। শ্বশুর।
ঠাটাপড়া- অকস্মাৎ বজ্রপাত হওয়া।
বালা- বিপদ।
রগড়ে- ডলে। ঘষে।
বর্তন- বড় থালা
এলেমদার- জ্ঞানী। বিদ্বান।
দিনাদির অধিকারী- আল্লাহ। স্রষ্টা
খোদার ঢিল- শয়তানকে তাড়ানোর জন্য বৃষ্টিরূপী শিলা।
নফরমানি- অবাধ্য।
তোয়াক্কল- বিশ্বাস। আস্থা।
বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ-চোখের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা বোঝাতে উৎপ্রেক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত।