শিরোনাম : ইঁদুরের বৈঠক
লোকালয়ের কাছেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ের গুহায় বাস করত একদল ইঁদুর। পাহাড়ের গুহায় কোনো খাবার পাওয়া যেত না বলে তাদের লোকালয়ে যেতে হতো। কিন্তু সেখানে থাকত একটি হুলো বিড়াল। বিড়ালের অত্যাচারে ইঁদুররা লোকালয় থেকে খাদ্য জোগাড় করতে না পেরে একসময় খুব অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। বাঁচার একটা উপায় বের না করলে ইঁদুরের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিড়ালের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, এ বিষয়ে ইঁদুরদের একটা বৈঠক বসল। বৈঠকে অনেক ইঁদুরের সমাবেশ ঘটল। বাঁচার উপায় হিসেবে অনেকেই নানারকম পরামর্শ ও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কারো প্রস্তাবই সভাপতির আসনে বসা বৃদ্ধ ইঁদুরের পছন্দ হলো না।
অবশেষে এক বিজ্ঞ ইঁদুর অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে বলল—আমি বলি কি, ওই হুলো বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হোক, তাহলে ঘণ্টার আওয়াজ শুনেই আমরা সাবধান হতে পারব। এই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত সব ইঁদুরই হাতে তুড়ি বাজিয়ে রাজি হয়ে গেল। বৈঠকের সভাপতি বৃদ্ধ ইঁদুর এতক্ষণ বসে বসে সবার পরামর্শ শুনছিল। কিন্তু এবার আর কিছু না বলে পারল না। এবার সে বলল, আমার প্রবীণ বিজ্ঞ বন্ধু যা বললেন তা খুবই বুদ্ধির কথা বটে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিতে পারলে আমাদের উদ্যোগ সফল হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে—ওই ঘণ্টাটা বিড়ালের গলায় বাঁধতে যাবে কে?
সভাপতির কথায় বৈঠকের অন্যান্য ইঁদুর চুপ হয়ে গেল। কিন্তু ঘণ্টা বাঁধার উপায় হিসেবে কেউ কোনো উত্তর দিতে পারল না। পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেও উত্তর খুঁজে পেল না। আসলে প্রস্তাব দেওয়া যত সহজ, তা বাস্তবে রূপায়িত করা এত সহজ নয়।
শিরোনাম : একতার ক্ষমতা
এক চাষির ছয় সন্তান। এক মেয়ে, পাঁচ ছেলে। ছেলেদের মধ্যে শান্তি ছিল না। সব সময় ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। এতে চাষির মনেও ছিল অশান্তি। ছেলেদের প্রতি তাঁর উপদেশ-নির্দেশ কোনো কাজে এলো না। বৃদ্ধ বয়সে চাষি একদিন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদের বললেন—তোরা প্রত্যেকে একটা করে কঞ্চি নিয়ে সেগুলো একসঙ্গে একটা আঁটি বেঁধে আমার কাছে নিয়ে আয়।
বাবার কথায় ছেলেরা কঞ্চি জোগাড় করে তা নিয়ে একটা আঁটি বেঁধে আনল। এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—এবার তোরা প্রত্যেকে এই আঁটিটি ভাঙার চেষ্টা কর, দেখি কে পারিস।
বাবার কথায় ছেলেরা একে একে প্রত্যেকের কঞ্চির আঁটি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। চাষি এবার আঁটিটি খুলতে বললেন। তারপর প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি দিলেন। ছেলেরা বুঝতে পারল না তাদের বাবার আসল উদ্দেশ্য কী? সবার হাতে কঞ্চি দেওয়ার পর এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—তোদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি আছে তো! এবার তোরা যার যার কঞ্চিটি ভেঙে ফেল। বাবার কথা শেষ হতে না হতেই ছেলেরা প্রত্যেকে তাদের নিজের হাতের কঞ্চি পটাপট ভেঙে ফেলল। চাষি এবার তাঁর ছেলেদের উদ্দেশে বললেন—দেখলি তো! তোরা যদি এভাবে মিলেমিশে একজোট হয়ে থাকিস, তবে কোনো শত্রুই তোদের ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ একতার ক্ষমতা অনেক বেশি। আর যদি তোরা সব সময় ঝগড়া-বিবাদ করিস, আলাদা হয়ে থাকিস, একজন বিপদে পড়লে তার পাশে সবাই না দাঁড়াস, তাকে সাহায্য না করিস, তবে শত্রুরা তোদের একা পেয়ে ঘায়েল করে দেবে।
শিরোনাম : শক্তি পরীক্ষা
প্রশ্ন:শক্তিপরীক্ষা শিরোনামো একটি গল্প লেখ ?সূর্য আর বাতাসের মধ্যে একদিন প্রচণ্ড তর্ক শুরু হলো। দুজনের মধ্যে কার শক্তি বেশি, এই ছিল তর্কের বিষয়। কেউ কারো কাছে হার মানতে চায় না বলে তর্কেরও শেষ হয় না। শেষ পর্যন্ত দুজনেই বুঝতে পারল, এভাবে তর্ক চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। তাই কথা কাটাকাটি থামিয়ে হাতে-কলমে শক্তি পরীক্ষার একটা উপায় বের করা দরকার। হঠাৎ বাতাসের মাথায় একটা বুদ্ধির উদয় হলো, সে সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল, ওই দেখো রাস্তা দিয়ে একটা লোক যাচ্ছে। যে ওই লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলাতে পারবে সেই হবে বিজয়ী। যে বিজয়ী হবে তাকে বেশি শক্তিশালী বলে মেনে নিতে হবে।
দুজনের মধ্যে ঠিক হলো, প্রথমে বাতাসই জামা খোলার চেষ্টা শুরু করবে। শুরু হলো। বাতাস তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বইতে শুরু করল। বাতাস বইতে শুরু করলে লোকটা আরো ভালোভাবে গায়ে জামা-কাপড় জড়িয়ে নিল। বাতাস তার শক্তি আরো বাড়িয়ে দিলেও কাজ হলো না। বাতাস আরো প্রস্তুতি নিয়ে এবার প্রবল জোরে বইতে শুরু করল। ঠাণ্ডা বাতাসে লোকটার শরীর কাঁপছিল। এবার সে আগের পরা জামার ওপর আরো একটা মোটা কোট পরে নিয়েছে। বাতাসের গতিবেগ থেকে রক্ষার জন্য লোকটি দুহাতে জামা-কাপড় চেপে ধরে রেখেছে। বাতাস তো হতাশ। লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলা বাতাসের পক্ষে সম্ভব হলো না। এবার সূর্য তার শক্তির পরিচয় দিতে শুরু করল। বাতাসের শীতল প্রবাহের পর সূর্যের তাপে লোকটার বেশ আরাম বোধ হলো। আস্তে আস্তে সূর্যের উত্তাপ বাড়তে থাকলে লোকটা তার গায়ের কোটটা খুলে ফেলল। উত্তাপ যখন প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর হয়ে উঠল, তখন আর তার সহ্য হচ্ছিল না। একে একে সে গায়ের সব জামা-কাপড় খুলে গা ঠাণ্ডা করতে পাশের এক নদীতে নেমে গেল। পরীক্ষায় প্রমাণিত হলো, বাতাসের চেয়ে সূর্যের শক্তি অনেক বেশি।
একতাই বল!
একতার শক্তি দিয়ে যে আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হওয়া কোনো কাজকেও অনায়াসে সম্ভব করা যায় সেটা নতুন করে আরও একবার প্রমাণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থের একটি ট্রেনের যাত্রীরা। ট্রেন থেকে নামার সময় প্লাটফর্ম ও ট্রেনের মাঝখানে আটকে যাওয়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে এই যাত্রীরা সম্মিলিত ভাবে কয়েক হাজার টন ওজনের একটি ট্রেনের বগিকে একদিকে খানিকটা কাত করেন। আর তাতেই প্রাণে রক্ষা পায় ঘটনাক্রমে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ব্যক্তির জীবন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নাম প্রকাশ না হওয়া ঐ ব্যক্তি পার্থের একটি স্টেশনে নামতে গেলে তার একটি পা প্লাটফর্ম ও ট্রেনের দরজার মাঝে থাকা মাত্র ৫ সেন্টিমিটারের ছোট ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকে আটকে যায়। এ অবস্থায় তাত্ক্ষণিকভাবে স্টেশন ও ট্রেনের কর্মীরা ট্রেনচালককে স্টেশন থেকে ট্রেন পুনরায় ছাড়তে না করেন। এরপর তারা নানাভাবে ৫/৬ মিনিট সময় ধরে ঐ ব্যক্তিটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তবে এতেও কাজ না হওয়ায় ট্রেনের সকল যাত্রীকে বগিটির একদিকে জড়ো হতে বলা হয় যাতে করে ট্রেনটি কিছুটা কাত হলে ঐ ব্যক্তিকে বের করে আনা যায়। তবে তাদের এই প্রথম বুদ্ধিটি তেমন কোনো কাজে না আসায় যাত্রীদের সবাই একে একে ট্রেন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। সেই সাথে শুরু হয় ট্রেনটিকে একদিকে ধাক্কা দিয়ে সামান্য একটু কাত করার চেষ্টা। এ সময় এলোমেলোভাবে ট্রেনটিকে ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো করে নড়ানো হলে তা ঐ ব্যক্তির আটকে যাওয়া পায়ে পুনরায় বড় কোনো জখম তৈরি করতে পারতো। আর তাই লোকটিকে বাঁচাতে আসা যাত্রীরা এক-দুই-তিন গুনে ট্রেনের বগিটিকে বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় একদিকে কাঁত করেন। আর তাদের এই প্রচেষ্টার ফসল হিসেবেই বের করে আনা সম্ভব হয় ভাগ্যবান লোকটিকে।