বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৯

পৌরণীতি একাদশ-দ্বাদশ

W3.CSS

পৌরনীতি ও সুশাসন

১।নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
গ্রাম সমাজ নগর সমাজ
ইউপি চেয়ারম্যান শাসক এলিট
মোড়ল বা মাতব্বর অশাসক এলিট
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ চাপ সৃষ্টিকারী দল

প্রশ্ন:
ক. নগর কাকে বলে?
খ. গ্রামীণ সমাজ বলতে কী বোঝায়?
গ. কিসের ভিত্তিতে ছকে উল্লিখিত গ্রাম ও নগর সমাজের স্তরসমূহকে ভাগ করা যায়?
ঘ. বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ক. নগর বলতে এমন স্থানকে বোঝানো হয়, যেখানে অধিকাংশ মানুষ অকৃষিজ পেশায় জড়িত এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান।

উত্তর: খ. কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে যে মানববসতি গড়ে ওঠে, তা-ই গ্রামীণ সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। মিনু মাসানি একটি সাধারণ বংশোদ্ভূত এবং কিছু জমির ওপর সাধারণ মালিকানাসহ একদল লোককে গ্রামীণ সম্প্রদায় হিসেবে অভিহিত করেন। গ্রামীণ সমাজের ভিত্তি হলো কৃষিভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থা। একই সঙ্গে গ্রামীণ সমাজে কৃষিকেন্দ্রিক কুটিরশিল্পও দেখা যায়। মূলত গ্রামীণ সমাজ হলো একটি কৃষিনির্ভর জনপদ, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম ও পেশাগত গতিশীলতাও কম।

উত্তর: গ. ক্ষমতার ভিত্তিতে উদ্দীপকে উল্লিখিত স্তরায়ণ করা যায়।
ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজের স্তরসমূহ নিম্নরূপ

ক। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বর, এরা সাধারণত ধনী কৃষক পরিবার থেকে আগত। গ্রামের ক্ষমতা কাঠামোয় এরা প্রভাবশালী।
খ। গ্রামীণ মোড়ল বা মাতব্বর: গ্রামীণ নেতৃত্বে এদের ভূমিকা রয়েছে। এরা চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রামের সালিস-বিচার ও বিবাদ মীমাংসা করে।
গ। পাড়া বা কোনো দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ: গ্রামীণ সমাজে এরাও ক্ষমতাবান। এরা জনমত গঠন ও জনগণকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখে।
ঘ। নেতৃত্বে সম্পর্কে সজাগ ও সক্রিয় গ্রাম সদস্য: এরা গ্রামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতন থাকে।
ঙ। গ্রামীণ নেতৃত্বে ও রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন সাধারণ গ্রাম সদস্য: এরা গ্রামীণ বিভিন্ন বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে।

ক্ষমতার ভিত্তিতে নগর সমাজের স্তরায়ণ
ক। শাসক এলিট: নগর জীবনে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত।
খ। অশাসক এলিট: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা।
গ। চাপ সৃষ্টিকারী দল: নগর সমাজে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক দলের সদস্য।
ঘ। সাধারণ জনগণ।
দেখা যাচ্ছে ছকে উল্লিখিত স্তরায়ণ ক্ষমতার ভিত্তিতেই করা।

উত্তর: ঘ. বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের স্তরায়ণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
গ্রামীণ সমাজের স্তরায়ণের ক্ষেত্রে ভূমি, শিক্ষা, ক্ষমতা ও বংশমর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্তরায়ণের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ ও মালিকানা আগে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখনো আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ গুরুত্ব কিছুটা হলেও কমেছে। অন্যদিকে, গ্রামীণ সমাজেও নগর সমাজের মতো শিক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে। শিক্ষার হার বাড়ায় এবং শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ায় স্তরায়ণের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার ভিত্তিতে স্তরায়ণ জোরালো হচ্ছে। উচ্চশিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা মর্যাদাবান শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। যদিও আগে শিক্ষার গুরুত্ব কম ছিল। গ্রামীণ সমাজে স্তরায়ণের ক্ষেত্রে বংশমর্যাদার প্রভাব কমেছে আগের চেয়ে। কে চৌধুরী, কে মল্লিক, কে কাজি কিংবা গাজি তা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না। কে কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেছে, সেটা আজ আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মর্যাদার চেয়ে মানুষের অর্জিত যোগ্যতাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। ক্ষমতার ভিত্তিতে স্তরায়ণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নেতারা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বর্তমানে বিশেষ শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। গ্রামীণ চেয়ারম্যান-মেম্বরদের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে এরা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন সালিস-বিচারসহ নানা বিষয়ে এদের আধিপত্য লক্ষণীয় হয়ে উঠছে। গ্রামীণ সমাজের স্তরায়ণের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কালে এসব নানা পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে উঠছে।

...................................................................................