বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮

ভাষণ রচনা ১


নবাগত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ
১৭ মে, ২০১৫ ইং

মো. সুজাউদ দৌলা, প্রভাষক

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা

প্রশ্ন :তোমার কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রচনা কর।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবকবৃন্দ এবং প্রীতিভাজন নবাগত ও সতীর্থ শিক্ষার্থী ভাইবোন— সবার প্রতি রইল আমার সালাম ও শুভেচ্ছা।
আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ নতুন প্রাণের স্পর্শে স্পন্দিত ও আনন্দ হিল্লোলে মুখরিত। নবাগত শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা, স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তোমরা এসেছ আমাদের কলেজের আঙিনায়, ছোট্ট গণ্ডি পেরিয়ে মুক্ত জ্ঞানের আলোয়, উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের প্রাথমিক ক্ষেত্রে। তোমাদের এ আগমন শুভ হোক এ কামনা করি। তোমাদের সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক উষ্ণ অভিনন্দন ও গোলাপি শুভেচ্ছা।

নবাগত ভাই ও বোনেরা,

তোমরা জেনে খুশি হবে যে এই অঞ্চলের মধ্যে আমাদের এ প্রতিষ্ঠানটি নানা দিক থেকে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের অধিকারী। এক মহান ব্রত ধারণ করে আছে এ পবিত্র বিদ্যাঙ্গণ। যার স্লোগান হচ্ছে— ‘শিক্ষাই শক্তি। শিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও।’ আজ থেকে তোমাদের জন্য এটাই হোক জীবনের মূলমন্ত্র। আলোকিত জীবনের জন্য তোমাদের সে অভিযাত্রা শুভ হোক, সুন্দর হোক।

নবাগত বন্ধুরা,

জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্বের সফল সমাপ্তির পর তোমরা আজ সম্পূর্ণ নতুন এবং মুক্ত জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করেছ। এখানে রয়েছে জ্ঞানচর্চার উন্মুক্ত অবকাশ এবং স্বাধীন চিন্তা বিকাশের অপূর্ব সুযোগ। নিরন্তর সাধনা ও পঠন-পাঠনের মাধ্যমে বিকশিত হোক তোমাদের মেধা ও মননশীলতা— এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

বন্ধুরা,

তোমরা জেনে খুুশি হবে যে আমাদের এ কলেজ থেকেই অতীতে পড়ালেখা করে জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত হিসেবে দেশে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছেন অনেকে। ডাক্তার, প্রকৌশলী, রাজনীতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীই পরবর্তী জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন সমাজে। তোমরাও তাদের মতোই দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে।

নবীন বন্ধুরা,

আমাদের এ শিক্ষালয়ের দীর্ঘদিনের এক সুমহান ঐতিহ্য ও খ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। এখানকার শিক্ষা-শৃঙ্খলা, ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক, পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে প্রতিবছরই। আজ তোমরা যারা নতুন প্রাণশক্তি ও অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এখানে এসেছ, তোমাদের সাদরে বরণ করে নিয়ে তোমাদেরকেও ঐতিহ্য রক্ষার সুমহান দায়িত্বে অংশীদার করছি। আশা করি, এ প্রতিষ্ঠানের গৌরব বৃদ্ধিতে তোমরাও প্রাণপণ চেষ্টা করবে।

বন্ধুরা,

এ প্রতিষ্ঠানে তোমাদের শিক্ষাজীবন সফল-সার্থক ও গৌরবময় হোক। এখানকার শিক্ষা নিয়ে তোমরা দেশ-জাতি ও বিশ্বমানবতার কল্যাণে নিয়োজিত হও। যৌবনের আলোয় আলোকিত হোক তোমাদের ভুবন— এই প্রত্যাশায় শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ, সবার জন্য শুভকামনা।


প্রশ্ন: ‘আলোকিত মানুষ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রধান অতিথির একটি ভাষণ রচনা কর।

মাননীয় সভাপতি ও বরেণ্য অতিথিবৃন্দ। আজকের এই মহতী ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মানিত করার জন্য আমি আয়োজকদের জানাই কৃতজ্ঞতা। সেই সাথে উপস্থিত সকলকে জানাই আমার আন্তরিক মোবারকবাদ।

বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন, মুক্তবুদ্ধিচর্চার অভাব, স্বশিক্ষিত মানুষের অভাবের কারণে জাতি যে দিশেহারা হয়ে পড়েছে, সেই মুহূর্তে দেশকে বাঁচাতে ও উন্নতি করতে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ায় আমি আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

সুধিবৃন্দ,
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে ‘Education is the backbone of a nation’ অর্থাত্ শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি শিক্ষিত নয়, সেই জাতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে বাধাগ্রস্ত হয়। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত্। তারা যদি অনগ্রসর থাকে তাহলে জাতি তার গতি হারিয়ে ফেলবে। তাই জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে হলে সেই জাতির প্রত্যেক ব্যক্তিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত এবং স্বশিক্ষিত হতে হবে।

প্রিয় শিক্ষা অনুরাগী

আমাদের দেশে ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত আছে। কিন্তু এ শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ না ঘটায় জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে তাল মেলানো সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ আবুল ফজল বলেছেন— ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতির শিক্ষিত জনশক্তি তৈরির কারখানা আর রাষ্ট্র ও সমাজদেহের সব চাহিদার সরবরাহ কেন্দ্র। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করাই আলোকিত মানুষের প্রধান কাজ। আলোকিত মানুষ দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, শ্রমের মর্যাদা এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে দেশকে উন্নতির পথ দেখাতে পারে।

সুধি,

আলোকিত মানুষ গড়ার কাজটি খুব সহজ নয়। ঠিক এ মুহূর্তে একবার ভেবে দেখুন আলোকিত মানুষের অভাবে আমরা আজ কত নিচে আছি। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথার্থ শিক্ষা নয়। এর সাথে স্বশিক্ষায় জনগণকে শিক্ষিত হতে হবে। আর আজকের এই প্রচেষ্টা শুধু একজনকে করলে অথবা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেলে চলবে না, এর জন্য সরকার ও জনগণ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে এক সাথে উচ্চারণ করতে হবে— চলো যাই পড়তে যাই

আলোকিত মানুষ চাই

সবার সুস্থ, সুন্দর জীবন কামনা করে, সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। ধন্যবাদ।