মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮

বিড়াল বাংলা গদ্য ১


এইচ এস সি সব গদ্য একসাথে। গদ্য - বিড়াল
এপ্রিল ২১, ২০১৮


✿ গদ্য - বিড়াল (সাধুরীতিতে)
✿পাঠ-পরিচিতি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। তিন অংশে বিভক্ত এই গ্রন্থে যে কটি গল্প আছে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রচনা হলো ‘বিড়াল’। একদিন কমলাকান্ত নেশায় বুঁদ হয়ে ওয়াটার্লু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। মানুষের কাজ যারা অসহায় নিরন্ন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু তারা তা করে না। ‘বিড়াল’ গল্পে বিড়ালকে তার প্রাপ্য খাদ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সে তিন দিন না খেয়ে পরে দুধ চুরি করে খেয়ে ফেললেও কমলাকান্ত তাকে মারতে পারেনি তার ক্ষুধার যন্ত্রণা নিজের অনুভূতিতে বিবেচনা করে। এমনকি চুরি থেকে তাকে বিরত হওয়ার উপদেশ দিয়ে তার পরের দিনে জলযোগের সময় ছানা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে কমলাকান্ত আনন্দবোধ করে। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে। এর প্রথম অংশ নিখাত হাস্যরসাত্মক, পরের অংশ গূঢ়ার্থে সন্নিহিত। বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-কর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্ত্বিক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে, ‘আমি চোর বটে কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পাইলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া ওঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্ম্মিক।’ মাছের কাঁটা, পাতের ভাত-যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিড়ালের ক্ষিধে দূর করা যায়। লোকজন তা না করে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার নর্দমায় ফেলে দেয়। যে ক্ষুধার্ত নয় তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়। ক্ষুধাকাতর-শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না। এমন ঘোরতর অভিযোগ আনে বিড়ালটি। বিড়ালের ‘সোশিয়ালিস্টিক’, ‘সুবিচারিক’, ‘সুতার্কিক’ কথা শুনে বিস্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত কমলাকান্তের মনে পড়ে আত্মরক্ষামূলক শ্লেষাত্মক বাণী-বিজ্ঞ লোকের মতো এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে এবং তিনি সেরকম কৌশলের আশ্রয় নাই সাম্যাবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষের একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও বঙ্কিমচন্দ্র একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকারবিষয়ক সংগ্রামের কথা কী শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষা ও রূপকাশ্রয়ে উপস্থাপন করেছেন তা এ গল্প পাঠ করে উপলব্ধি করা যায়। এখানে লেখক দুই শ্রেণির মানুষের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। এর মধ্যে কথকের জবানিতে দুই শ্রেণির মানুষের স্ব স্ব পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। দুই শ্রেণির একটিতে কথক নিজে এবং অন্যটিতে চোর বিড়াল। কথক নিজেকে সমাজের লোভী, ধনাঢ্য শ্রেণির পর্যায়ে রেখে সমাজে ধনের বৃদ্ধি হওয়া কেনো জরুরি তা বিড়ালের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন।

১. বিড়াল একটি কাল্পনিক কথোপকথনমূলক গল্প
২. এ গল্পে ১ম অংশ নিখাদ হাস্যরসাত্মক, পরের অংশ গূঢ়ার্থে সন্নিহিত।
৩. বিড়ালের কথাগুলো-সোশিয়ালিস্টিক।
৪. বিড়াল প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা ছিলো - শ্লেষাত্মক
৫. "বিড়াল " গল্প অনুসারে বিড়ালদের রং - কালো
৬. কমলাকান্ত হুঁকা হাতে ঝিমাচ্ছিল - শয়নগৃহে, চারপায়ীর উপর বসে
৭. মিট মিট করে কেমন আলো জ্বলছিল - ক্ষুদ্র আলো
৮. "বিশেষ অপরিমিত লোভ ভাল নহে " উক্তি টি- কমলাকান্তের।
৯. 'দুধ মঙ্গলার, দুহিয়াছে প্রসন্ন ' উক্তিটি - কমলাকান্তের
১০. কমলাকান্তের জন্য রাখা নির্জল দুধ খেয়েছিল - একটি ক্ষুদ্র মার্জার
১১. বিড়াল মনে মনে হেসে কী বলল - "কেউ মরে বিল ছেচেঁ কেই খায় কই "
১২. বিড়ালের উক্তি অনুযায়ী, বিল ছেঁচার সাথে সস্পর্কযুক্ত- কমলাকান্ত
কই খাওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত - বিড়াল ১৩. বিড়াল দুধ খেলেও কমলাকান্ত মার্জারের উপর রাগ করতে পারে নি - অধিকারের কারণে
১৪. বিড়াল দুধ খেলে বিড়ালকে তাড়িয়ে মারতে যাওয়া হল - চিরাগত প্রথা
১৫. চিরাগত প্রথা ভঙ্গ করলে কমলাকান্ত -
মনুষ্যকূলে পরিচিত হবে - কুলাঙ্গার হিসেবে
রিড়ালদের কাছে পরিচিত হবে - কাপুরুষ হিসেবে।
১৬. অতত্রব, পুরুষের ন্যায় আচরণ করাই ভালো - উক্তিটি কমলাকান্তের
১৭. অনুসন্ধানে আবিষ্কৃত যষ্টিটি ছিল - ভগ্ন
১৮. কমলাকান্ত মার্জারের কথা বুঝতে পারল - দিব্যকর্ণ প্রাপ্তির ফলে
১৯. মারপিট কেন? - উক্তিটি বিড়ালের
২০. "পরোপকারই পরম ধর্ম " উক্তিটি- বিড়ালের
২১. কে ধর্মসঞ্চয়ের মূলীভূত কারণ? - মার্জার
২২. মার্জারের মতে সমাজের ধনবৃদ্ধি মানে - ধনীদের ধন বৃদ্ধি
২৩. চোরের দণ্ড আছে কিন্তু দণ্ড নাই - নির্দয়তার
২৪. "না হইলে ত আমার কী " উক্তিটি- বিড়ালের
২৫. কত দিবস উপবাস করলে কমলাকান্ত নসীরাম বাবুর ভাণ্ডার ঘরে ধরা পড়বে - তিন (৩) দিবস
২৬. কমলাকান্ত মার্জারকে কার বই পড়ার কথা বলেছিলো - নিউমান ও পার্কারের বই
২৭. বিড়াল শব্দটি আছে - ৮ বার
২৮. মার্জারী - ৪ বার
২৯. মার্জার আছে - ১১ বার
৩০. " মেও " আছে - ১৩ বার
৩১. যুদ্ধ - ওয়াটার লু
৩২. মাদকদ্রব্য - আফিং
৩৩. যষ্টি - লাঠি
৩৪. ভার্যা - স্ত্রী

বহুনির্বাচনি নমুনা প্রশ্নোত্তর
১। কমলাকান্ত বিড়ালের ওপর রাগ করতে না পারার কারণ কী?
ক. অধিকার খ. কর্তব্য
গ. দায়িত্ব ঘ. সমবেদনা
২। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত প্রথম উপন্যাস কোনটি?
ক. ইন্দিরা খ. দুর্গেশনন্দিনী
গ. আনন্দমঠ ঘ. রজনী
৩। ‘বিড়াল’ গল্পে কেমন করে আলো জ্বলছিল—
ক. উজ্জ্বলভাবে খ. মিটমিট করে
গ. প্রখর জ্যোতিতে ঘ. নিভু নিভু করে
৪. কমলাকান্ত হুঁকা হাতে নিমীলিতলোচনে বসে বসে ভাবছিল। কারণ—
ক. গোয়ালিনী আসেনি খ. বিড়ালে দুধ খেয়েছে
গ. আহার প্রস্তুত হয়নি ঘ. ওয়াটারলু যুদ্ধ চলছে
৫. দুধ খেয়ে মার্জারটি কেমন স্বরে ‘মেও’ বলেছিল?
ক. অতি মধুর স্বরে খ. তীক্ষ আর কর্কশ স্বরে
গ. অতি করুণ স্বরে ঘ. অতি ধীর স্বরে
৬. মার্জারীকে মারতে যাওয়ার আগে কমলাকান্ত হাত থেকে কী নামিয়ে রেখেছিল?
ক. হুঁকা খ. লাঠি
গ. মদের বোতল ঘ. প্রদীপ
৭. মার্জারী তার উপদেশাত্মক বক্তব্যে কমলাকান্তকে কী নামে অভিহিত করেছে?
ক. নিমীলিতলোচন খ. ধ্যানী
গ. শয্যাশায়ী মনুষ্য ঘ. বিজ্ঞ মনুষ্য
৮. মূর্খ ধনীর কাছে গৃহমার্জার যার প্রতিরূপে অবস্থান করে—
ক. মনোরঞ্জনকারী খ. আদরের দুলালী
গ. পরোপকারী ঘ. সতরঞ্জ খেলোয়াড়
৯. কাকে বোঝানো দায় হলো?
ক. প্রসন্নকে খ. মঙ্গলাকে
গ. বিড়ালকে ঘ. কমলাকান্তকে
১০. বিচারককে তাঁর বিচারকার্যের আগে মার্জারী কয় দিন উপবাস করার কথা বলেছে?
ক. ২ দিন খ. ৩ দিন
গ. ১ দিন ঘ. ৪ দিন
১১. ওয়াটারলু যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
ক. ১৮১৪ খ. ১৮১৫
গ. ১৮১৬ ঘ. ১৮১৭
১২. ‘আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি?’— ‘বিড়াল’ গল্পের আলোচ্য চরণে কাদের কথা ব্যক্ত হয়েছে?
ক. চোর খ. বঞ্চিত
গ. পশুপাখি ঘ. অশিক্ষিত মানুষ
১৩. কমলাকান্তের মতে সমাজের উন্নতি নেই। যদি না—
ক. মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হয়
খ. সামাজিক ধন বৃদ্ধি ঘটে
গ. গরিবের ক্ষুধা নিবৃত্তি ঘটে
ঘ. সমাজের নিয়ম বজায় থাকে
১৪. বিচারে পরাস্ত হলে গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করে মূলত—
ক. বিজ্ঞ লোকেরা খ. মূর্খ লোকেরা
গ. কোর্টের বিচারকেরা ঘ. গ্রামের মাতব্বরেরা
১৫. কমলাকান্ত হুঁঁকা হাতে ঝিমাচ্ছিল—
i. চারপায়ীর ওপরে বসে
ii. ঈষত্ আলোতে বসে
iii. গাছের ছায়ায় বসে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii

১. ঘ ২. খ ৩. খ ৪. গ ৫. ক ৬. ক ৭. গ ৮. ঘ ৯. গ ১০. খ ১১. খ ১২. খ ১৩. খ ১৪. ক ১৫. ক
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

বিড়াল (সাধুরীতি)
-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। নাজমার বড় সংসার। স্বামী অকর্মণ্য। তাই সে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে। এ স্বল্প আয়ে সংসার চলে না বলে বাধ্য হয়ে তাকে বিভিন্ন বাড়ি থেকে মশলা, তৈল, তরকারি চুরি করে সংসারের চাহিদা পূরণ করতে হয়। চুরি করার কারণে এখন আর কেউ তাকে কাজে নেয় না। তাই পরিবারের প্রয়োজন কীভাবে পূরণ হবে এ চিন্তায় সে আকুল হয়ে ওঠে।

ক. চোরের দণ্ড আছে কিন্তু নির্দয়তার কী নেই?
খ. ‘তোমার কথাগুলি ভারি সোশিয়ালিস্টিক’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ‘নাজমা ও ‘বিড়ালে’র জীবন কোন দিক থেকে বিপন্ন’-‘বিড়াল’ রচনার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘নাজমার কাজ নীতিবিরুদ্ধ ও ধর্মাচারবিরোধী’- ‘বিড়াল’ রচনা অবলম্বনে মূল্যায়ন কর।

উত্তর ক : চোরের দণ্ড আছে কিন্তু নির্দয়তার দণ্ড নেই।
উত্তর খ : ‘তোমার কথাগুলি ভারি সোশিয়ালিস্টিক’ উক্তিটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের কমলাকান্ত বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। ‘সোশিয়ালিস্টিক’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ সমাজতান্ত্রিক মতবাদ। সমাজতন্ত্রের মূলকথা হচ্ছে, সমাজের সবাই সমান। রাষ্ট্রের সকল সম্পত্তির মালিক হবে রাষ্ট্র, জনগণ যা কিছু উৎপাদন করবে তার সবই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রয়োজন মতো তা সরবরাহ করবে। পৃথিবীতে সবাই বাঁচতে চাই এবং সম্মানের সঙ্গেই বাঁচতে চাই। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে সমাজে সাম্য অবস্থা বিরাজ করবে এমনই প্রত্যাশা ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়ালের। ধনীরা প্রচুর ধন-সম্পত্তি জমা করে তা ভোগ করবে আর দরিদ্র জনতা বঞ্চিত হবে তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে- এমন হতে পারে না। বিড়ালের এসব যুক্তিতে রাগান্বিত হয়ে কমলাকান্ত মন্তব্যটি করেন।

উত্তর গ : উদ্দীপকের নাজমা ও বিড়ালের জীবন অনিশ্চয়তা ও বৈষম্যের জন্যে বিপন্ন।
বঙ্কিমচন্দ্র ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়াল চরিত্রটিকে দরিদ্র, বঞ্চিত, শোষিত, নির্যাতিত, নিগৃহীত সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সমাজের ধনিক শ্রেণী পুঁজিবাদী মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রচুর ধন-সম্পত্তি নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখে। ফলশ্র“তিতে দরিদ্রের বাঁচার পথ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের সমাজের নিরীহ প্রাণী মার্জারের বেলাও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। সে খেতে পায় না বলে অন্যের ঘরে ঢুকে খাবার চুরি করে খায়। লোকেরা তাদের উদ্বৃত্ত খাবার ফেলে দেয়, নষ্ট করে, কিন্তু বিড়ালকে দেয় না। বিড়াল ক্ষুধার তাড়নায় বাড়ির দেয়ালের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর ‘মেও’ ‘মেও’ করে ডাকতে থাকে, কেউ তার ডাকে সাড়া দেয় না। তাই তো সে ধনীর ঘরে ঢুকে দুধ চুরি করে খায়, আর গৃহকর্তা তাকে লাঠি হাতে মারতে আসে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের জন্যই বিড়ালের জীবন আজ বিপন্ন। উদ্দীপকের নাজমাও চরম বৈষম্যের শিকার। তার কর্মবিমুখ স্বামী কোনো কাজ করে না বলে তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। বাড়ি বাড়ি কাজ করে যা কিছু রোজগার হয় তা দিয়ে তার সংসার চলে না বলে তাকে মানুষের বাড়ি থেকে নানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চুরি করেতে হয়। চুরিতে ধরা পড়লে তাকে নানা রকম গঞ্জনা সহ্য করতে হয় এবং কেউ তাকে কাজ দিতে অস্বীকৃতি জানায় ফলে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হয়। ‘বিড়াল’ রচনার আলোকে এদিক থেকে নাজমা ও বিড়ালের জীবন বিপন্ন।

উত্তর ঘ : নাজমার কাজ নীতি ও ধর্মবিরুদ্ধ হলেও এর পেছনে সমাজব্যবস্থার চরম অব্যবস্থা ও অসংগতিকেই দায়ী করা যায়।
পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়। পৃথিবীতে কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। মানুষকে অপরাধী হিসেবে তৈরি করে আমাদের সমাজের ব্যবস্থাপনা। সমাজের নানামুখী বৈষম্য ও অব্যবস্থার কারণে মানুষকে ধীরে ধীরে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সমাজের সব মানুষ যদি তাদের ন্যায্য প্রাপ্য ঠিকমতো পেত তাহলে কেউই অপরাধে জড়িত হতো না। সমাজের অপরাধের মূল কারণ হচ্ছে সামাজিক অনাচার ও বৈষম্য।
উদ্দীপকের নাজমা বড়ই অসহায় ও দরিদ্র। তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সে কাজ করে যা কিছু উপার্জন করে তা দিয়ে তাদের সংসার ঠিকমতো নির্বাহ হয় না। ধনিক শ্রেণীর লোকেরা নাজমাকে ন্যূনতম মানবিক সাহায্য পর্যন্ত করে না ফলে সে অসদুপায় অবলম্বনে বাধ্য হয়। সে অন্যের বাড়ি থেকে নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী চুরি করে। ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়ালের বেলায়ও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই, সে ক্ষুধার তাড়নায় অন্যের হাঁড়ি থেকে দুধ চুরি করে খায়। সমাজের উচ্চস্তরের মানুষেরা যদি তাদের উদ্বৃত্ত খাবার ফেলে বা নষ্ট না করে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দিত তাহলে নাজমাকে বা বিড়ালকে চুরি করতে হতো না। চুরি করা সমাজ ও ধর্মীয় অনুশাসনে খুবই গর্হিত কাজ। কিন্তু মানুষ কখনোই শখের বসে চুরি করে না, সে বাধ্য হয়েই অন্যের বাড়িতে চুরি করে। সমাজের প্রচলিত নিয়ম-নীতি ও অনাচার-বৈষম্যই মানুষকে চোর বানায়, তাই বলা যায় নাজমার কাজটি নীতি ও ধর্মাচার বিরুদ্ধ হলেও তার মূল কারণ সমাজের বৈষম্য।


✿ গদ্য - অপরিচিতা
✿গুরুত্বপূর্ণ

১. অনুপমের বয়স -২৭
২. "এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যের হিসাবে বড়, না গুণের হিসাবে " উক্তিটি- অনুপমের
৩. "তবু ইহার একটি বিশেষ মূল্য আছে " উক্তিটি- অনুপমের
৪. পণ্ডিত মশাই অনুপমকে তুলনা করেছেন - শিমুল ফল ও মাকাল ফলের সাথে।
৫. অনুপমের বাবা কী করে প্রচুর টাকা রোজগার করত? - ওকালতি
৬. মামা অনুপমদের সংসার টাকে কিসের মতো নিজের অন্তরের মধ্যে শুষিয়া লইয়াছেন - ফাল্গুর বালির মত
৭. মামার অস্থিমজ্জায়য় কী জড়িত? - টাকার প্রতি আসক্তি
৮. কে কানপুরে কাজ করে - হরিশ
৯. হরিশ ছুটিতে কোথায় এসেছিল - কলকাতা
১০. কিছুদিন পূর্বেই অনুপম কী পাস করেছে- এম.এ. (MA)
১১. একে তো বরের হাট মহার্ঘ তাহার পরে? - ধনুক ভাঙ্গা পণ
১২. বাপ কেবলই সবুর করিতেছেন কিন্তু সবুর করিতেছে না - মেয়ের বয়স
১৩. হরিশের কেমন গুণ আছে? - সরস রচনার
১৪. কলিকাতার বাইরের পৃথিবীটাকে মামা কীসের অন্তর্গত জানেন? - আণ্ডামান দ্বীপ
১৫. বিনু দাদা কে? - অনুপমের পিসততো ভাই
১৬. মেয়ের পিতার নাম - শম্ভুনাথ সেন/বাবু
১৭.কার মুখ অনর্গল ছুটছিল- মামার
১. জীবনে একবার বিশেষ কাজে কোন পর্যন্ত গিয়েছিলেন - কোন্নগর
২. কার রুচি এবং দক্ষতার উপর কথক/অনুপম ষোল - আনা নির্ভর করতে পারে- বিনুদাদার
৩. "মন্দ নয় হে! খাঁটি সোনা বটে " উক্তিটি- বিনুদাদার
৪. শম্ভুনাথ বাবু কখন অনুপমকে প্রথম দেখেন- বিবাহের তিন(৩) দিন আগে
৫. কার বয়ম ৪০ এর কিছু ওপারে বা এপারে- শম্ভুনাথ বাবুর
৬. কার চুল কাঁচা, গোঁফে পাক ধরা আরম্ভ হয়েছে মাত্র - শম্ভুনাথ বাবুর
৭. মামা কাকে সুদ্ধ এনেছিল - স্যাকরাকে
৮. মামা কোথায় গহনাগুলোর ফর্দ টুকিয়া লইলেন - নোট বইয়ে
৯. "ঠাট্রার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই" উক্তিটি- শম্ভুনাথ বাবুর
১০. "কারণ, প্রমাণ হইয়া গেছে, আমি কেউই নই " উক্তিটি - অনুপমের
১১. "তাহা হইলে তামাশার যেটুকু বাকি আছে তাহা পুরা হইবে " উক্তিটি- হিতৈষীদের
১২. সমস্ত মন কার পানে ছুটিয়া গিয়াছিল - অপরিচিতার
১৩. কিন্তু কথা এমন করিয়া ফুরাইল না উক্তিটি - অনুপমের
১৪. কতক্ষণ পরে গাড়ি আসিল - দুই তিন মিনিট পর
১৫. স্টেশনে দেখা মেয়েটির বয়স কত? - ১৬ বা ১৭
১৬. মেয়েটির সাথে কয়টি ছোটো ছোটো মেয়ে ছিল - দুটি তিনটি
১৭. খাবারওয়ালাকে ডেকে সে খুব খানিকটা কী কিনল? - চানা মুঠ।

পাঠ পরিচিতি:-
অপরিচিতা (সাধুরীতিতে লেখা )
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ — ১৯৪১)
বিশ্ববরেণ্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ — ১৯৪১) বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের প্রথম সার্থক স্রষ্টা। তিনি এমন এক অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন, যাঁর স্পর্শে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি অঙ্গন হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যে ভাস্বর। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্য জীবনে অনেক রূপ নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ছোটগল্প তাঁর সেই বিচিত্রমুখী প্রতিভার অতি স্মরণীয় অভিজ্ঞান।

ছোটগল্প জীবনের সমগ্র রূপ নিয়ে নয়, জীবনের খন্ডাংশ নিয়ে রচিত হয়। তাই এখানে প্রতিফলিত হয় ছোট ছোট সুখ-দুঃখ, দৈনন্দিন জীবনপ্রণালি, সাধারণ ও মধ্যবিত্তের মানবীয় ও সামাজিক টানাপোড়নের কাহিনী। এগুলো তত্কালীন সমাজের একেবারে হুবহু প্রতিলিপি। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ছোটগল্প ‘অপরিচিতা’তেও তত্কালীন হিন্দু সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে।

যৌতুকের বিষবাষ্পে তত্কালীন হিন্দুসমাজ ছিল বিষাক্ত। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার কাছ থেকে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করত ছেলের বাপ বা অভিভাবক। বিয়ের অনুষ্ঠানে অনুপমের মামার সন্দেহপ্রবণতার কারণে অনুপম এবং কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে যায়। এ ঘটনা তত্কালীন সমাজে বিদ্যমান পণ প্রথাকেই নির্দেশ করে।

তত্কালীন হিন্দু সমাজে ছেলের বাবা বা অভিভাবকের মেয়ের বাবার প্রতি প্রভাব খাটানো বা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের একটা বিষয় আমরা দেখতে পাই। এ গল্পেও সে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে। অনুপমের মামা এমন বেহাই চায় যে কখনও প্রত্যুত্তর করবে না। লেখকের ভাষায়—“মামার মুখ তখন অনর্গল ছুটিতেছিল—ধনে মানে আমাদের স্থান যে শহরের কারও চেয়ে কম নয়, সেইটেকেই তিনি নানা প্রসঙ্গে প্রচার করিতেছিলেন। বেহাই সম্প্রদায়ের আর যাই থাক, তেজ থাকাটা দোষের।”

তত্কালীন সমাজে বাল্যবিবাহ রীতি প্রচলিত ছিল। কন্যার বয়স আট বছর হলেই বিয়ে দিতে হবে এটাই ছিল সামাজিক বিধান। এ বিয়েকে বলা হতো গৌরীদান। কিন্তু আমরা ‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখতে পাই কল্যাণীর বয়স পনেরো শুনে অনুপমের মামার মন ভার হয়ে উঠলো। “মেয়ের বয়স যে পনেরো, তাই শুনিয়া মামার মন ভার হইল।”

তত্কালীন হিন্দুসমাজে অর্থের মানদন্ডে সবকিছু বিচার করা হতো। বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে পূর্ববর্তী সময়ে কন্যাকে দেওয়া সোনার গয়নাসমূহ খাঁটি কি না তা বরের অভিভাবক কর্তৃক পরীক্ষা করে দেখার এক নির্মম রেওয়াজ ছিলো তত্কালীন হিন্দু সমাজে। এই নির্মমতার বলি হতে হয় অনুপম ও কল্যাণীকে। শম্ভূনাথ বাবু এমন আচরণে মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে অনুপম-কল্যাণীর জীবনে নেমে আসে করুণ ট্রাজেডি। অনুপম অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। একসময় দেখাও হয় কল্যাণীর সাথে। কল্যাণীর বাবার মন নরম হলেও গলে না কল্যাণীর মন। বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী মেয়েদের শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে।

তত্কালীন সমাজ ছিল কুসংস্কারে পূর্ণ এবং সমাজব্যবস্থায় ছিল নিষ্ঠুরতা ও স্বার্থপরতা। সমগ্র পরিবারে পিতার বা অভিভাবকের কর্তৃত্ব চূড়ান্ত বলে গৃহীত হতো। শিক্ষিত, সত্পাত্র এম.এ. পাশ ছেলে অপূর্ব মামার সকল কথা সশ্রদ্ধচিত্তে গ্রহণ ও পালন করেছে। নিজস্বতা বলে তার কিছু আছে তা আমরা দেখতে পাই না। নির্মম সমাজব্যবস্থার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। লেখকের ভাষায়—“মূর্তিমর্তী মাতৃ-আজ্ঞা-স্বরূপে মামা উপস্থিত, তাঁর বিরুদ্ধে চলা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি আহারে বসিতে পারিলাম না।”পরিশেষে বলা যায়, উনিশ শতক কেবলই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল তা নয় বরং রেনেসাঁর যুগও। এখান থেকেই সমাজের একটু একটু করে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল, যেটা বর্তমানে অনেকটা দূরে এগিয়েছে।

অন্যান্য বিষয়ের সূচী

আরও পড়তে ক্লিক