প্রশ্ন:-১ প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর
ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব (প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব )
ভাষা সম্পর্কে ঞ্জান লাভ করতে তহলে সে ভাষার ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন অপরিসীম, কারণ--
১. ব্যাকরণ পাঠের মধ্যদিয়ে আমরা যে ভাষাটিকে বলি বা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করি , তার সংগঠন ও কাজকর্মের মূল সুত্রগুলি জানতে বুঝতে পারি । তাতে আমরা সচেতন ভাবে ভাষাটির সমর্থ ব্যবহার করতে পারি -আমরা বা অন্য কউ ভুল করলে সে ভুলটি কি ধরনের এবং কেন করল ত যুক্তিসহকারে বুঝাতে পারি
২. একটি ভাষার ব্যাকরণ জানাথাকলে অন্য ভাষার ব্যাকরণ জানতে বুঝতে সহজ হয় । সব ভাষারই একটি মৌলিক ঐক্য আছে।
৩.ব্যকরণ আমাদের শিখায় ভাষা নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
৪ . ভাষার সৌন্দর্য সম্ভোগের জন্যও সেই ভাষার ব্যাকরণ পাঠ অবশ্যকর্তব্য
৫.সাহিত্যের রস আস্বাদনের জন্যও ব্যাকরণ জানা আবশ্যক ।
৬.ব্যাকরণ পাঠে ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য স্বেচ্ছাচরিতা রোধ হয় , ফলে ভাষার বিশুদ্ধতাও রক্ষা হয় ।
৭.ভাষার সামগ্রিক রুপকে বোধের উপয়োগী করে তোলা ব্যাকরণ শিাক্ষার লক্ষ্য । বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে্ও একই নিয়ম প্রয়োজ্য ।
প্রশ্ন:-২ সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর:সাধুও চলিত ভাষার পার্থক্য গুলো নিন্মে দেওয়া হলো
সাধুভাষা | চলিতভাষা |
---|---|
১. ঊনিশ শতকের শুরুরদিকে সংস্কৃতানুসারী পন্ডিতদের উদ্যোগ আয়োজনে যে সাহিত্যিক গদ্য ভাষার উম্মেষ,তাই সাধু ভাষা | ১. বিশ শতকের শুরুতে প্রমথ চৌ্ধুরীর সবুজপত্রের আহ্বানে ভগীরথী নদীর দুই তীরের মানুয়ের ভাষা হলো চলিত ভাষা |
২. সাধু ভাষায় সন্ধি -সমাসের আধিক্য লক্ষ করা যায় । যেমন : কাষ্ঠাহরণে রাজাজ্ঞা , রাজপুত্রহস্তে ইত্যাদি | ২. চলিত ভাষাতে সন্ধি-সমাসের ব্যবহার কম এবং সেগুলোকে ভেঙ্গে সহজ করে লেখা হয় যেমন: -কাঠ আনতে ,রাজার হুকুম,রাজপুত্তুর হাতে ইত্যাদি । |
৩.সাধু ভাষায় দুরূহ তৎসম শব্দের ব্যবহার বেশী | ৩. চলিত ভাষায় দুরূহ শব্দের ব্যবহার কম হয় |
৪. সাধু ভাষায় ধ্বন্যাত্বক শব্দের প্র্রাধান্য নেই | ৪.চলিত ভাষায় ধ্বন্যাত্বক শব্দের প্রাধান্য রয়েছে যেমন:হনহন গনগনে ঝনঝন |
৫. সাধু ভাষা কথোপকথনে , নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযোগী | ৫. চলিত ভাষা বক্তৃতা আলাপচারিতা ও নাট্যসংলাপের বেশি উপযোগী |
৬ .সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী | ৬. চলিত ভাষা শিক্ষিত ভদ্রসমাজেরর মৌখিক ও লেখ্যভাষা । |
প্রশ্ন:- ৩ উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা ভাষা উচ্চারণের চারটি নিয়ম লেখো।
উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।
প্রশ্ন:-৪ উদাহরণসহ ‘এ’ ধ্বণি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।
অথবা ‘এ’ স্বরধ্বণি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।
অথবা ‘এ’ স্বরধ্বণি উচ্চারণের সংবৃত ও বিবৃত উচ্চারনের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।
অথবা ‘এ’ স্বরধ্বণি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।
অথবা ‘এ’ স্বরধ্বণি উচ্চারণের সংবৃত ও বিবৃত উচ্চারনের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।
উত্তর:-এ স্বরধ্বণি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ নিচে দেওয়া হল ।
এ : এ-ধ্বনির উচ্চারণ দুই রকম : সংবৃত ও বিবৃত। যেমন : মেঘ, সংবৃত/বিবৃত, খেলা (খ্যালা), বিবৃত।
১. সংবৃত
ক) পদের অন্তে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : পথে, ঘাটে, দোষে, গুণে, আসে ইত্যাদি।
খ) তৎসম শব্দের প্রথমে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন : দেশ, প্রেম, শেষ ইত্যাদি।
গ) একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : কে, সে, যে।
ঘ) ‘হ’ কিংবা আকারবিহীন যুক্তধ্বনি পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : দেহ, কেহ, কেষ্ট।
ঙ) ‘ই’ বা ‘উ’-কার পরে থাকলে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন : দেখি, রেণু, বেলুন।
২. বিবৃত : ‘এ’ ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ ইংরেজি ক্যাট/ cat ও ব্যাট / bat -এর ‘এ’ /ধ-এর মতো। যেমন : দেখ (দ্যাখ), একা (এ্যাকা) ইত্যাদি।
ধ্বনির এই বিবৃত উচ্চারণ কেবল শব্দের আদিতেই পাওয়া যায়, শব্দের মধ্যে ও অন্তে পাওয়া যায় না।
ক) দুই অক্ষর বিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয় পদে। যেমন : এত, হেন, কেন ইত্যাদি। কিন্তু ব্যতিক্রম-যেমন, সেথা, হেথা।
খ) অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দু যুক্ত ধ্বনির আগের ধ্বনি বিবৃত। যেমন : খেংড়া, চেংড়া, স্যাঁতসেঁতে, গেঁজেল।
গ) খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন : খেমটা, ঢেপসা, তেলাপোকা, তেনা, দেওর।
ঘ) এক, এগার, তের কয়টি সংখ্যাবাচক শব্দে। ‘এক’ যুক্ত শব্দেও। যেমন : একচোট, একতলা, একঘরে ইত্যাদি।
ঙ) ক্রিয়াপদের বর্তমান কালের অনুজ্ঞায়, তুচ্ছার্থ ও সাধারণ মধ্যম পুরুষের রূপে। যেমন : দেখ্ (দ্যাখ), দেখ (দ্যাখো), খেল্ (খ্যাল), খেল (খ্যালো), ফেল (ফ্যাল), ফেল (ফ্যালো) ইত্যাদি।
ঐ : ধ্বনিটি একটি যৌগিক স্বরধ্বনি। অ+ই কিংবা ও+ই=অই, ওই। অ, ই দুটো স্বরের মিলিত ধ্বনিতে ঐ-ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যেমন : ক +অ+ই=কই/কৈ, বৃ +ই+ধ=বৈধ ইত্যাদি। এরূপ : বৈদেশিক, ঐক্য, চৈতন্য।
ও : বাংলা একাক্ষর শব্দে ও-কার দীর্ঘ হয়। যেমন : গো, জোর, রোগ, ভোর, কোন, বোন ইত্যাদি অন্যত্র সাধারণত হ্রস্ব হয়। যেমন : সোনা, কারো, পুরোভাগ। ও-এর উচ্চারণ ইংরেজি বোট / boat শব্দের / oa -এর মতো।
প্রশ্ন-৫ ‘অ’ ধ্বণি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।
অথবা ‘অ’ ধ্বণি বিবৃত উচ্চারণের উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
অথবা, ‘অ’ ধ্বণি স্বাভাবিক উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
অথবা ‘অ’ ধ্বণি বিবৃত উচ্চারণের উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
অথবা, ‘অ’ ধ্বণি স্বাভাবিক উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
অ-ধ্বনির উচ্চারণ
শব্দের অ-ধ্বনির দুই রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়
১. বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ। যেমন : অমল, অনেক, কত।
২. সংবৃত বা ও-ধ্বনির মতো উচ্চারণ। যেমন : অধীর, অতুল, মন। এ উচ্চারণগুলোতে অ-এর উচ্চারণ অনেকটা ও-এর মতো (ওধীর, ওতুল, মোন)। ‘অ’-ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ
বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ-
ক. শব্দের আদিতে
২. শব্দের আদিতে না-বোধক ‘অ’ যেমন : অটল, অনাচার।
৩. ‘অ’ কিংবা ‘আ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন : অমানিশা, অনাচার, কথা।
খ. শব্দের মধ্যে ও অন্তে
১. পূর্ব স্বরের সঙ্গে মিল রেখে স্বরসঙ্গতির কারণে বিবৃত ‘অ’। যেমন : কলম, বৈধতা, যত, শ্রেয়ঃ।
২. ঋ-ধ্বনি, এ-ধ্বনি, ঐ-ধ্বনি এবং ঔ-ধ্বনির পরবর্তী ‘অ’ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমন : তৃণ, দেব, বৈধ, নোলক, মৌন।
৩. অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন : গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।
প্রশ্ন:-৬. ম-ফলা উচ্চারণের যে কোনো পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ ।
ম-ফলা উচ্চারণের নিয়ম -ক.পদের প্রথমে ব্যঞ্জনবর্নর সাথে মফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার কোরো উচ্চারণ হয় না যেমন-শ্মশান স্মৃতি স্মারক
খ.পদের মধ্যে বা শেষে মফলা যুক্ত বনের উচ্চারণ দ্বিত্ব হয়। যেমন-পদ্ম (পঁদদো) আত্ম (আঁততো)
গ.পদের মধ্যে বা শেষে গ ঙ ট ণ ন ম ও ল- এর সঙ্গে সংযুক্ত ম এর উচ্চারণ সাধারণত অবিকৃত থাকে । যেমন-বাগ্মী (বাগমি) মৃন্ময় (মৃনময়)
ঘ.যুক্ত ব্যাঞ্জনবর্নর সাথে ম-ফলা উচ্চরণ হয় না । যেমন- সূক্ষ্ম (শুকখোঁ) লক্ষ্মন (লক্খোন)
ঙ.ম-ফলা যুক্ত কিছু সংস্কৃত শব্দে মফলা উচ্চারণ হয় । যেমন-স্মিত (স্মিতো) কুষ্মান্ড (কুশ্মান্ডো) সুস্মিতা (শুশ্মিতা)
প্রশ্ন ৭।: শব্দের শেষে কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অ’-উচ্চারণ লোপ পায় না? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : কথ্য বাংলায় শব্দের শেষের অ ধ্বনি সাধারণত লোপ পায়। তবে এমন কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে অন্ত্য অ-ধ্বনি লোপ পায় না এবং সংবৃত উচ্চারণ হয়। এগুলো হলো :
(ক) শেষ ব্যঞ্জনের অব্যবহিত আগে অনুস্বার বা বিসর্গ থাকলে : ধ্বংস, বংশ, মাংস, দুঃখ ইত্যাদি।
(খ) শব্দটি ত বা ইত প্রত্যায়ান্ত হলে : গত, শত, নন্দিত, লজ্জিত পুলকিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দটি তুলনাবাচক তর, তম প্রত্যায়ান্ত হলে : বৃহত্তর, মহত্তর, বৃহত্তম, মহত্তম ইত্যাদি।
(ঘ) ঈয় বা অনয় প্রত্যায়ান্ত শব্দে : পানীয়, নমনীয়, দেশীয় ভারতীয় ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের শেষ ব্যঞ্জনটি হ হলে কলহ, দেহ, দাহ, প্রবাহ, মোহ, স্নেহ, লৌহ ইত্যাদি।
প্রশ্ন:-৫ ণত্ব বিধান কী? ণত্ব বিধানের সূত্রগুলো লেখো।
বা, ণত্ব বিধান কী? উদাহরণসহ ণত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখো।
বা, ণত্ব বিধান কী? উদাহরণসহ ণত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখো।
উত্তর : যে রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানানে মূর্ধন্য (ণ) হয়, তাকে ণত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ণ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।
ক. তৎসম শব্দের বানানে ঋ, র এবং ষ এর পরে ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—চরণ, মরণ, ঋণ, তৃণ, শীণ, জীর্ণ।
খ. যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রে ট-বর্গীয় বর্ণের পূর্বে ‘ণ’ বসে। যেমন—বণ্টন, লুণ্ঠন, কণ্ঠ, খণ্ড, ভণ্ড, মুণ্ড, কুণ্ড।
গ. প্র, পরি, নির এই তিনটি উপসর্গের পর সাধারণত ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—প্রণয়, প্রণাম, পরিণয়, নির্ণয়।
ঘ. নার, পার, রাম, রবীন্দ্র, চন্দ্র, উত্তর ইত্যাদি শব্দের পর ‘অয়ন’ বা ‘আয়ন’ থাকলে তার পরের ‘ন’ ধ্বনিটি ‘ণ’ হয়। যেমন—নারায়ণ, পরায়ণ, রামায়ণ, রবীন্দ্রায়ণ, চন্দ্রায়ণ, উত্তরায়ণ ইত্যাদি।
ঙ. র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ূ), র-ফলা ( ্র)- এর পর ধ্বনি ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য, য়, হ, ং থাকে, তবে তার পরে ‘ণ’ হবে। যেমন—শ্রাবণ, অর্ণব, গ্রহণ, দ্রবণ।
প্রশ্ন:-৮. প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও য-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম নিয়মগুলোর মধ্যে পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম ৫টি নিয়ম হলো :ক. সমাসবদ্ধ পদে দুই পদের পূর্ব পদে ঋ র ষ থাকলেও পরপদে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন—ত্রিনয়ন, ত্রিনেত্র, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার ইত্যাদি।
খ. ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন—অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন ইত্যাদি।
গ. বাংলা ক্রিয়াপদের আন্তঃস্থিত ন ণ হয় না।
যেমন—হবেন, মারেন, যাবেন, করেন, খাবেন ইত্যাদি।
ঘ. আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দে ষ হয় না। যেমন—জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট ইত্যাদি।
ঙ. সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয়যুক্ত পদেও ষ হয় না। যেমন—অদ্বিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।
প্রশ্ন:-৯। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী শ, ষ, স সম্পর্কিত বানানের ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : নিম্নে বাংলা শব্দে শ, ষ, স-এর ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখা হলো :ক. ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আসা বিদেশি sh. tion. ssion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন—সেশন, স্টেশন।
খ. বিদেশি শব্দের উচ্চারণে ‘ং’ ধ্বনির ক্ষেত্রে স ব্যবহৃত হবে। যেমন-ক্লাস, অফিস।
গ. বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহৃত হয় না। যেমন—স্মার্ট, পোশাক।
ঘ. ঋ-কারের পরে মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন—ঋষি, ঋষভ।
ঙ. ট-বর্গীয় ধ্বনির পূর্বে মূর্ধন্য ষ যুক্ত হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ।
প্রশ্ন:-১০। বাংলা বানান ই-কার ()ি ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদারহণসহ লেখো।
উত্তর : বাংলা বানানে ই-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো :ক. যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ-কার শুদ্ধ সেসব শব্দে ই-কার হবে। যেমন—চুল্লি, তরণি, পদবি, নাড়ি, মমি, ভঙ্গি ইত্যাদি।
খ. সব অ-তৎসম শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—খুশি, পাখি, শাড়ি ইত্যাদি।
ঘ. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন—বর্ণালি, গীতালি, সোনালি, রূপালি ইত্যাদি।
ঙ. পদাশ্রিত নির্দেশক হলে ই-কার বসবে। যেমন—ছেলেটি, বইটি, কলমটি, মেয়েটি ইত্যাদি।
প্রশ্ন:-১১। বাংলা বানানে উ-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখো।
উত্তর :ক. অ-তৎসম শব্দে উ-কার বসবে। যেমন—কুমির, খুশি, টুপি, বুড়ি ইত্যাদি।
খ. মূল সংস্কৃত শব্দে উ-কার থাকলে তদ্ভব শব্দে উ-কার হবে। যেমন—পূজা-পুজো, পূর্ব-পুব ইত্যাদি।
গ. বিদেশি শব্দে উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—কুর্দি, সুন্নি, কুরআন ইত্যাদি।
ঘ. ক্রিয়াবাচক শব্দে উ-কার হয়। যেমন—আসুন, করুন, ঘুরা, বসুন, ভাবুন ইত্যাদি।
ঙ. প্রত্যয়ান্ত শব্দযোগে উ-কার হয়। যেমন—পটুয়া, রাঁধুনি, হাতুড়ে, পিসতুতো ইত্যাদি।
প্রশ্ন-১২: বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী, উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর : যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়, তাকে বাক্য বলে। যেমন—আমি প্রত্যহ কলেজে যাই।গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ : গঠন অনুসারে বাংলা বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো—
i. সরল বাক্য ii. জটিল বাক্য ও iii. যৌগিক বাক্য
সরল বাক্য :
যে বাক্যে একটি কর্তা ও একটি সমাপিকা ক্রিয়া বা একটি উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন—বীথি গান গায়। এখানে ‘বীথি’ কর্তা বা উদ্দেশ্য এবং ‘গান গায়’ সমাপিকা ক্রিয়া বা বিধেয়।
জটিল বাক্য : যে বাক্যে একটি স্বাধীন বাক্যের সঙ্গে এক বা একাধিক নির্ভরশীল বা অধীন বাক্য বা বাক্যাংশ থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমন—যে দেশপ্রেমিক, তাকে সবাই ভালোবাসে। এখানে ‘তাকে সবাই ভালোবাসে’—একটি স্বাধীন বাক্য এবং ‘যে দেশপ্রেমিক’—একটি অধীন বাক্যাংশ।
যৌগিক বাক্য : যে বাক্যে দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য এবং, কিন্তু, অথবা, নতুবা ইত্যাদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত অবস্থায় থাকে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন—ছেলেটি গরিব কিন্তু অত্যন্ত মেধাবী। এখানে ‘ছেলেটি গরিব’ ও ‘সে (ছেলেটি) অত্যন্ত মেধাবী’—এ দুটি সরল বাক্য কিন্তু দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি যৌগিক বাক্য গঠন করেছে।
প্রশ্ন-১৩ : একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে, উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর : সার্থক বাক্যের উদাহরণ—গরু মাঠে ঘাস খায়।
সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য : বাক্যকে সার্থক হিসেবে পরিগণিত হতে হলে তার কতগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। এগুলো হলো—
i. আকাঙ্ক্ষা
ii. আসত্তি
iii. যোগ্যতা
১।আকাঙ্ক্ষা : বাক্যের অর্থ ভালোভাবে বোঝার জন্য একটি পদ শোনার পর অন্য একটি পদ শোনার যে আগ্রহ বা ইচ্ছা, তাকে আকাঙ্ক্ষা বলে। যেমন—‘ঢাকা বাংলাদেশের’ বললে একটি জানার আগ্রহ থেকে যায়। আর যদি বলা হয়—‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী’, তাহলে তা সম্পূর্ণরূপে মনের ভাব প্রকাশ করে। এটিই বাক্যের আকাঙ্ক্ষাগুণ।
২। আসত্তি : বাক্যের সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসের (যে পদের পর যে পদ বসবে) নামই আসত্তি। যেমন—খেয়ে কলেজে ভাত যাব আমি। বাক্যটিতে সঠিক পদবিন্যাসের অভাব থাকায় তা সার্থক বাক্য হয়নি। অথচ আমি ভাত খেয়ে কলেজে যাব—বললে তা একটি সার্থক বাক্যের পরিচয় বহন করে। এটিই আসত্তিগুণ।
৩। যোগ্যতা : বাক্যের ভাবগত ও অর্থগত মেলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন—‘গরু আকাশে ওড়ে’ বললে বাক্যটি অর্থ বহন করে না। কারণ গরুর আকাশে ওড়ার যোগ্যতা নেই। কিন্তু ‘পাখি আকাশে ওড়ে’ বললে পাখির সেই গুণ থাকার কারণে তা একটি সার্থক বাক্য হয়ে ওঠে। এটিই বাক্যের যোগ্যতা।
প্রশ্ন-১৪ : অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী, উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর :
অর্থানুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ : অর্থ অনুসারে বাক্য সাত প্রকার। যথা—
১. বিবৃতিমূলক
২. প্রশ্নসূচক
৩. অনুজ্ঞাবাচক
৪. প্রার্থনাসূচক
৫. বিস্ময়সূচক
৬. সংশয়সূচক
৭. কার্যকারণাত্মক
১। বিবৃতিমূলক : যে বাক্য দ্বারা সাধারণভাবে কোনো কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। যেমন—ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলে।
২। প্রশ্নসূচক : যে বাক্য দ্বারা কাউকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়, তাকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলে। যেমন—তোমার নাম কী?
৩। অনুজ্ঞাবাচক : যে বাক্য দ্বারা আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়, তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন—ডাক্তার ডাকো।
৪। প্রার্থনাসূচক : যে বাক্য দ্বারা মনের ইচ্ছা বা প্রার্থনা প্রকাশ করা হয়, তাকে প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে। যেমন—জীবনে সুখী হও।
৫। বিস্ময়সূচক : যে বাক্য দ্বারা মনের আকস্মিক আবেগ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়, তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে। যেমন—হায়! আমার পোড়া কপাল!
৬। সংশয়সূচক : যে বাক্য দ্বারা মনের কোনো সংশয়, সন্দেহ বা সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়, তাকে সংশয়সূচক বাক্য বলে। যেমন—সে আজ এলেও আসতে পারে।
৭। কার্যকারণাত্মক : যে বাক্য দ্বারা কাজের কারণ বা কারণের উৎস প্রকাশ করা হয়, তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে। যেমন—নিয়মিত পড়াশোনা করলে পাস করতে পারবে।
১৫.প্রশ্ন: শব্দ কাকে বলে? উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : শব্দ হচ্ছে ভাবের দ্যোতক। এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে যদি কোনো অর্থ প্রকাশ করে তবে তাকে শব্দ বলে। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭)-এর মতে, অর্থযুক্ত ধ্বনিকে বলে শব্দ। কোনো বিশেষ সমাজের নর-নারীর কাছে যে ধ্বনির স্পষ্ট অর্থ আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নর-নারীর ভাষার শব্দ।”
উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ : উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১) তৎসম শব্দ ২) অর্ধতৎসম শব্দ ৩) তদ্ভব শব্দ ৪) দেশি শব্দ ৫) বিদেশি শব্দ।
তৎসম শব্দ : সংস্কৃত ভাষা থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, সেসব শব্দকে তৎসম শব্দ বলে। যেমন-চন্দ্র, সূর্য, বৃক্ষ, ধর্ম, পুষ্প।
অর্ধতৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কিছুটা বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে, সেসব শব্দকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন – চন্দ্র > চন্দ, গাত্র > গতর, গৃহিণী > গিন্নি, জন্ম > জনম, প্রাণ > পরাণ।
তদ্ভব শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এসেছে সেসব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে। চর্মকার > চম্ময়ার > চামার, হস্ত > হন্থ > হাত , চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ।
দেশি শব্দ: যেসব শব্দ আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষার নিজস্ব শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সেসব শব্দকে দেশি বা খাঁটি বাংলা শব্দ বলে। যেমন-কুলা, মই, ডাব, ডিঙ্গি, চোঙ্গা, ঠোঙ্গা।
বিদেশি শব্দ: সংস্কৃত ছাড়া অন্যান্য বিদেশি ভাষা থেকে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে সেসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন চেয়ার, টেবিল, স্কুল, কলেজ নামাজ, ইমান, হারাম, হালাল, রিকশা, হারিকেন, চা, চিনি, এলাচি, শয়তান।
১৬ প্রশ্ন: অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর: অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। যেমন সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত ইত্যাদি। অর্থগতভাবে বাংলা শব্দসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. যৌগিক শব্দ ২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ৩. যোগরূঢ় শব্দ
যৌগিক শব্দ : যেসব শব্দের প্রচলিত অর্থ ও তার মূল বা প্রকৃতির অর্থ অভিন্ন সেসব শব্দকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন: পক্ষ+ইক= পাক্ষিক, দল+ঈয়= দলীয়, কৃ+তব্য= কর্তব্য।
রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ : যেসব শব্দ তার মূল বা প্রকৃতির অর্থের অনুগামী না হয়ে ভিন্ত অর্থ প্রকাশ করে, সেসব শব্দকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন: হস্ত+ইন= হস্তী, এর মূল অর্থ হচ্ছে, ‘হস্ত আছে যার’ কিন্তু প্রচলিত অর্থে ‘হস্তী’ বলতে এক ধরনের বৃহৎ পশুকে বোঝায়। তেমনি বাঁশি, সন্দেশ, মহাজন ইত্যাদি শব্দগুলো রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দের উদাহরণ।
যোগরূঢ় শব্দ: সমাস নিষ্পন্ন যেসব শব্দ তার সমস্যমান পদসমূহের অর্থের সম্পূর্ণ অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, সেসব শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন পঙ্কজ= পঙ্কে জšে§ যা। পঙ্কে শৈবাল, শামুক, মাছ ছাড়াও অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ জন্মালেও ‘পঙ্কজ’ বলতে কেবল পদ্ম ফুলকেই বোঝায়। তেমনি, অনুজ, অগ্রজ, জলধি, তপোবন ইত্যাদি। শব্দগুলো যোগরূঢ় শব্দের উদাহরণ।
১৭.প্রশ্ন: গঠন অনুসারে বাংলা শব্দের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
উত্তর: বাংলা ভাষার অসংখ্য শব্দ ভাণ্ডার গঠিত হয়েছে নানা প্রক্রিয়ায়। এ গঠন প্রক্রিয়ার দিক থেকে বাংলা শব্দ সমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন
১. মৌলিক শব্দ ২. সাধিত শব্দ
মৌলিক শব্দ: যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ বা বিভাজিত করা যায় না, অর্থাৎ প্রত্যয়, বিভক্তি, উপসর্গ ছাড়া যেসব শব্দ গঠিত হয় সেসব শব্দকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন হাত, মুখ, ফুল, পথ।
সাধিত শব্দ: যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ বা বিভাজিত করলে আলাদা অর্থ পাওয়া যায় অর্থাৎ, প্রত্যয় বা উপসর্গ দ্বারা গঠিত শব্দকেই সাধিত শব্দ বলে। যেমন: নায়ক, মানব, মেধাবী, আহার, বিহার, পরিহার।
প্রশ্ন১৮। “উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।” — বিষয়টি উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ বাংলা ভাষায় ব্যবহূত উপসর্গগুলোর কোন অর্থবাচকতা নেই, শুধু শব্দ বা ধাতুর পূর্বে ব্যবহূত হলেই তাদের অর্থদ্যোতকতা শক্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে; যেমন— ‘পরা’ একটি উপসর্গ। এর কোন স্বকীয় অর্থ নেই; কিন্তু ‘জয়’ শব্দের পূর্বে যুক্ত হলে হয় (পরা + জয়) ‘পরাজয়’। এটি বিপরীতার্থক শব্দ। সেরূপ — ‘হার’ শব্দটির পূর্বে ‘আ’ ‘বি’ ও ‘প্র’ ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত হয়ে অর্থের পরিবর্তন সাধন করে; যেমন— আ + হার = আহার (খাওয়া); বি + হার = বিহার ( ভ্রমণ); প্র+ হার = প্রহার (মার দেওয়া)।
সুতরাং বলা যায় যে, উপসর্গসমূহের নিজস্ব কোন অর্থবাচকতা নেই বটে, কিন্তু অন্য শব্দের পূর্বে যুক্ত হলে তাদের অর্থদ্যোতকতা বা সংশ্লিষ্ট শব্দের নতুন অর্থ সৃষ্টির ক্ষমতা জন্মে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ” উপসর্গ থাকে সামনে, প্রত্যয় পেছনে, নতুন শব্দ তৈরি করার বেলায় তাদের নইলে চলে না।”
উপযুক্ত বক্তব্য ও প্রমাণাদি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিস্তু অর্থদ্যোতকতা রয়েছে।
১৯. গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [কু. বো. ১২, ০৮; য. বো. ১১, ০৯, ০৬, ০১; চ.বো. ১২ ,০৯, ০৫; ঢা. বো. ০৩, ১৩; রা. বো. ১২ , ০২, ০০; সি. বো. ০৯, ০৭, ০১; ও ব. বো. ১২, ১০, ০৫, ০১]
উত্তর: গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:(ক) সরল বাক্য
(খ) জটিল বাক্য
(গ) যৌগিক বাক্য
নিচে প্রত্যেক প্রকারের বাক্য উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো:
(ক) সরল বাক্য: যে বাক্যে শুধু একটি কর্তা এবং একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: আমি নিয়মিত খেলা করি।
(খ) জটিল বাক্য: যে বাক্যের একাধিক খণ্ড বাক্য থাকে এবং একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল হয়, তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমন: যারা ভাল ছেলে, তারা গুরুজনের কথা মেনে চলে।
(গ) যৌগিক বাক্য: একাধিক সরল বা জটিল বাক্য মিলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন: তিনি বিদ্বান, কিন্তু তাঁর অহঙ্কার নেই।
প্রশ্ন:-২০. ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে? পদবিন্যাসের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণের পরিচয় দাও।
উত্তর : ক্রিয়া বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ ক্রিয়ার বিশেষ অবস্থা বা ক্রিয়া কী রূপে সম্পন্ন হয়েছে তা জানিয়ে দেয়, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অর্থাৎ ক্রিয়া বিশেষণ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে। এটি ক্রিয়ার গুণ, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অর্থ প্রকাশক শব্দ হিসেবে কাজ করে এবং ক্রিয়ার সময়, স্থান, প্রকার, উৎস, তীব্রতা, উপকরণ ইত্যাদি প্রকৃতিগত অবস্থার অর্থগত ধারণা দেয়। ক্রিয়া বিশেষণ সাধারণ কর্ম ও ক্রিয়ার পূর্বে বসে। যেমন—আমি আস্তে আস্তে ভাত খাই। কারা যেন গুনগুনিয়ে গান গাইছিল।
বিভক্তিচিহ্ন ছাড়া কিংবা বিভক্তিচিহ্ন যোগে, অসমাপিকা ক্রিয়াপদ যোগে, শব্দদ্বৈত যোগে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়। যেমন—অসমাপিকা ক্রিয়াপদ যোগে ক্রিয়া বিশেষণ : ভালো করে (ইয়া>য়ে) হাঁটো। শব্দদ্বৈত যোগে ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে ডুবছে। বাংলা শব্দভাণ্ডারে ক্রিয়া বিশেষণের সংখ্যা প্রচুর এবং এর প্রয়োগ বৈশিষ্ট্যও বৈচিত্র্যপূর্ণ বলে একে স্বতন্ত্র শব্দশ্রেণি হিসেবে গণ্য করা হয়। পদবিন্যাসের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণ দুই রকম হতে পারে। যেমন—ক. একপদী ক্রিয়া বিশেষণ ও খ. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ পদবন্ধ।
ক. একপদী ক্রিয়া বিশেষণ : আস্তে, জোরে, রেগে, সরবে, সাগ্রহে, অনায়াসে, নির্বিঘ্নে, শান্তভাবে ইত্যাদি একপদী ক্রিয়া বিশেষণ। বাক্যে প্রয়োগ : ছেলেটা জোরে চিৎকার করে উঠল।
খ. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ : আস্তে আস্তে, জোরে জোরে, ভয়ে ভয়ে, থেকে থেকে ইত্যাদি বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ। বাক্যে প্রয়োগ : আমরা ভয়ে ভয়ে হাঁটছিলাম।
প্রশ্ন-২১: ক্রিয়া বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো। (ঢা.বো. ২০১৬)
উত্তর : যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো কিছু করা, ঘটা, হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে।
যেমন—সে হাসছে। বাগানে ফুল ফুটেছে। এবার বৃষ্টি হবে।
নানা মানদণ্ডে ক্রিয়াকে বিভক্ত করা যায়। যথা—
ক. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে। যেমন—ছেলেরা বল খেলছে।
খ. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না। যেমন—আমি বাড়ি গিয়ে ভাত খাব। কর্মপদ সংক্রান্ত ভূমিকা অনুসারে :
ক. অকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া কোনো কর্ম গ্রহণ করে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—সুমন খেলছে।
খ. সকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া মাত্র একটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—অনি বাগান থেকে ফুল তুলছে।
গ. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া দুটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—মুন্নি মাসুমকে একটি কলম দিয়েছে।
ঘ. প্রযোজক ক্রিয়া : কর্তার যে ক্রিয়া অন্যকে দিয়ে করানো হয়, তাকে প্রযোজক বা নিজন্ত ক্রিয়া বলে। যেমন—মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
গঠন বৈশিষ্ট্য অনুসারে :
ক. যৌগিক ক্রিয়া : একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন—ধরে ফেলছে, উঠে পড়ছে, নেমে পড়েছে, খেয়ে ফেলেছে ইত্যাদি।
খ. সংযোগমূলক ক্রিয়া : বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধনাত্মক শব্দের সাথে সমাপিকা ক্রিয়া যোগ করে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন—নাচ করা, গান গাওয়া, মশা মারা, ছেলে ধরা ইত্যাদি।
স্বীকৃতি অনুসারে :
ক. অস্তিবাচক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্তিবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন—সীমা এসেছে।
খ. নেতিবাচক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা নেতিবাচক বা না-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নেতিবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন—রিমা আসেনি।
প্রশ্ন-২২: ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে? উদাহরণসহ ক্রিয়া বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।
উত্তর : যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—মৌসুমি দ্রুত হাঁটছে। অনিম জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
গঠনের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. একপদী ক্রিয়া বিশেষণ : একটি মাত্র পদ দিয়ে যে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে একপদী ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—আস্তে, জোরে, ধীরে, সহজে, সাগ্রহে, সানন্দে ইত্যাদি।
২. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ : একের অধিক পদ দিয়ে যে ক্রিয়া বিশেষণ গঠিত হয়, তাকে বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—আস্তে আস্তে, জোরে জোরে, ধীরে ধীরে, ভয়ে ভয়ে, থেমে থেমে ইত্যাদি।
অর্থ ও অন্বয়গতভাবে ক্রিয়া বিশেষণকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—
১. ধরনবাচক ক্রিয়া বিশেষণ : যেভাবে বা যেমনভাবে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে ধরনবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—ফাহিম নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ডবেগে ঝড়টি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে।
২. কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ : যে সময়টিতে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—তিনি সকালেই বেরিয়ে গেছেন। সুমি আগামীকাল খুলনা যাবে।
৩. স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ : ক্রিয়া সংঘটনের স্থানকে স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—জেলেরা অনেক আগেই নদীতে নেমেছে। তিনি খুব কষ্ট করে গাছে চড়েছেন।
৪. সংযোজক ক্রিয়া বিশেষণ : যে ক্রিয়া বিশেষণ একাধিক বাক্যাংশকে সংযুক্ত করে, তাকে সংযোজক ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন—এখন আমার কোনো কাজ নেই, অবশ্য থাকার কথাও নয়।
৫. না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ : যে ক্রিয়া বিশেষণ বাক্যকে না-বাচক বৈশিষ্ট্য দেয়। যেমন—আমি আর রাগ করব না। তার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি।
প্রশ্ন-২৩ : আবেগ শব্দ বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ এর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো। অথবা, আবেগ শব্দ কাকে বলে? উদাহরণসহ বুঝিয়ে লেখো। (রা.বো. ২০১৬)
উত্তর : যে শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সাথে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশে সহায়তা করে, তাকে আবেগ শব্দ বলে।
যেমন—আরে, তুমি আবার কখন এলে! উঃ, ছেলেটির কী কষ্ট!
অর্থ প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে এর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো
১. সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ দ্বারা অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, তাকে সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—উঁহু, আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়!
২. প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ প্রশংসা ও তারিফের মনোভাব প্রকাশ করে, তাকে প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—শাবাশ! সামনে এগিয়ে যাও।
৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ : অবজ্ঞা, ঘৃণা, বিরক্তি ইত্যাদি মনোভাব যে আবেগ শব্দ দ্বারা প্রকাশ পায়, তাকে বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—কী জ্বালা, তোমার যন্ত্রণায় আর বাঁচি না!
৪. ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ দ্বারা আতঙ্ক, যন্ত্রণা, কাতরতা প্রকাশ পায়, তাকে ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন—উঃ, কী যন্ত্রণা, আর সইতে পারছি না!
৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ বিস্ময় ও আশ্চর্য হওয়ার মনোভাব প্রকাশ করে। যেমন—আরে, তুমি আবার কখন এলে!
৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ : করুণা বা সহানুভূতিমূলক মনোভাব প্রকাশ পায় যে আবেগ শব্দে, তাকে করুণাসূচক আবেগ শব্দ। যেমন—আহা! ছেলেটার বাবা-মা কেউ নেই।
৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ : সম্বোধন বা আহ্বান করার ক্ষেত্রে যে আবেগ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন—ওহে! কোথায় যাচ্ছ?
৮. আলংকারিক আবেগ শব্দ : যে আবেগ শব্দ বাক্যের অর্থের কোনো রকম পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য এবং সংশয়, অনুরোধ, মিনতিসূচক মনোভাব প্রকাশের জন্য অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন—দূর পাগল! এমন কথা কি কেউ বলে?
প্রশ্ন-২৪ : যোজক কাকে বলে? যোজক কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা করো। (কু. বো. ২০১৬)
উত্তর : যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সাথে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজন বলে। যেমন—বাসার কবিতা পড়বে আর বুলবুল গাইবে গান। মগটা ভালো করে ধর নইলে পানি পড়ে যাবে। অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজন পাঁচ প্রকার। যথা—
১. সাধারণ যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশকে সংযুক্ত করা যায়, তাকে সাধারণ যোজক বলে। যেমন—সে ঢাকা যাবে এবং চিড়িয়াখানা দেখবে।
২. বৈকল্পিক যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে বিকল্প নির্দেশ করা হয়, তাকে বৈকল্পিক যোজক বলে। যেমন—শরীর ভালো হলে তুমি কাজ করবে নতুবা বসে থাকবে।
৩. বিরোধমূলক যোজক : যে যোজক দ্বারা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টি দ্বারা প্রথমটির সংশোধন বা বিরোধ নির্দেশ করা হয়, তাকে বিরোধমূলক যোজক বলে। যেমন—তোমাকে টাকা দিতে চাইলাম কিন্তু নিলে না।
৪. কারণবাচক যোজক : যে যোজক দ্বারা একটি বাক্যের কারণ হিসেবে অপর একটি বাক্যের সংযোগ ঘটানো হয়, তাকে কারণবাচক যোজক বলে। যেমন—তুমি বাইরে যাবে না কারণ সেখানে এখন কারফিউ চলছে।
৫. সাপেক্ষ যোজক : পরস্পর নির্ভরশীল যে যোজকগুলো একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তাকে সাপেক্ষ যোজক বলে। যেমন—যদি পরিশ্রম করো, তবে ফল পাবে।
প্রশ্ন-২৫: অনুসর্গ বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ অনুসর্গের প্রকারভেদ আলোচনা করো।
উত্তর : যে শব্দ কখনো স্বাধীনরূপে, আবার কখনো শব্দবিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে তার অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন—তোমাকে দিয়ে আর এ কাজ হবে না। ব্যুত্পত্তিগতভাবে অনুসর্গ দুই প্রকার—বিশেষ্য অনুসর্গ ও ক্রিয়া অনুসর্গ।
বিশেষ্য অনুসর্গ : ক্রিয়া ছাড়া অন্যান্য শব্দ থেকে যে অনুসর্গগুলো এসেছে। যেমন—এখন ওদের মাথার উপরে কোনো ছাদ নেই।
বিশেষ্য অনুসর্গ তিন ধরনের—
ক. সংস্কৃত অনুসর্গ : যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের সংস্কৃত অনুসর্গ বলে। যেমন—অপেক্ষা, উপরে।
খ. বিবর্তিত অনুসর্গ : যে বিশেষ্য অনুসর্গ সংস্কৃতি থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে। যেমন—আগে, বই ইত্যাদি।
গ. ফারসি অনুসর্গ : যে বিশেষ্য অনুসর্গ ফারসি থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। যেমন—দরুন, বদলে।
ক্রিয়া অনুসর্গ : ক্রিয়া থেকে যেসব অনুসর্গ উত্পন্ন হয়, তাদের ক্রিয়া অনুসর্গ বলে। যেমন: তোমরা সবাই মন দিয়ে লেখাপড়া করো।
প্রশ্ন-২৬. সমাপিকা ক্রিয়া কী? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর:
সমাপিকা ক্রিয়া:
যে ক্রিয়া সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।সমাপিকা ক্রিয়াকে ইংরেজিতে Finite Verb বলে।যেমন: করিম স্কুলে যায়।
*সমাপিকা ক্রিয়ার প্রকারভেদ :
সমাপিকা ক্রিয়া পাঁচ প্রকার।যথা:
১. সকর্মক ক্রিয়া
২. অকর্মক ক্রিয়া
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া
৪.প্রযোজক ক্রিয়া
৫. যৌগিক ক্রিয়।
১. সকর্মক ক্রিয়া :
যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।কর্ম আছে কি নাকি নেই? সেটা বুঝব ক্রিয়াকে 'কি' বা 'কাকে'- দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে বুঝব কর্ম আছে।যেমন: রহিম বই পড়ে।
২. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম নেই,তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।যেমন: সে হাঁসে।
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।যেমন: সে আমাকে একটি গোলাপ দিল। এখানে আমাকে ও গোলাপ দুটো কর্ম।
৪.প্রযোজক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দ্বারা অন্যকে দিয়ে কাজ করানো বুঝায়, তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।যেমন: মা শিশুকে চাঁদ দেখায়।
৫. যৌগিক ক্রিয়া: কোন বাক্যে যদি সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া একসঙ্গে থাকে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে।যেমন: আমাকে ট্রেন ধরতে হবে।এখানে ধরতে অসমাপিকা ক্রিয়া ও হবে সমাপিকা ক্রিয়া।একসঙ্গে হয়ে হলো যৌগিক ক্রিয়া।
প্রশ্ন:-২৭ সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্যগুলো লেখ।
উত্তরঃ ১। সংজ্ঞা: পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক শব্দের একশব্দে মিলনের নাম সমাস। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনি একত্র মিলনকে সন্ধি বলে।
সমাস ও সন্ধি উভয় প্রক্রিয়াই নতুন নতুন শব্দ গঠন করে। কিন্তু দু-এর মধ্যে প্রকৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে সমাস ও সন্ধির পার্থক্য দেখানো হলো:
সমাস | সন্ধি |
---|---|
১. অর্থ সম্বন্ধবিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে । | ১. দ্রুত উচ্চারণের ফলে পরষ্পর সন্নিহিত দুটো ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি |
২. সমাসে পদের মিলন ঘটে । | ২. সন্ধিতে ধ্বণির মিলন ঘটে। |
৩.সমাসে পদের সঙ্কোচন হয়। | ৩. সন্ধিতে ধ্বণির সংকোচন হয় |
৪. সমাসে ন্যূনতম দুটি পদের প্রয়োজন হয় যেমন-লেখা ও পড়া=লেখাপড়া | ৪.একই পদের মধ্যে সন্ধি হতে পারে যেমন--ভজ+ত=ভক্ত |
৫. সমাসে অর্থের দিক বিবেচনা করা হয় । | ৫. সন্ধিতে উচ্চারণের দিক বিবেচনা করা হয় । |
৬.সমাসে কখনো কখনো বিভক্তির লোপ হয় । যেমন-ঘোড়ার গাড়ি=ঘোড়াগাড়ি। | ৬.সন্ধিতে বিভক্তি চিহ্নের লোপ হয় না। |
প্রশ্ন:-২৮ অনুসর্গ ও উপসর্গ কি? বিস্তারিত লেখ।
অনু সর্গ এর পরিচয়:
ব্যাকরণে বর্ণিত অব্যয় পদের একটি বিভাগ বিশেষ। এই জাতীয় অব্যয় অন্য পদের পরে পৃথকভাবে বসে পদটিকে বাক্যের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্কিত করে বা বিভক্তির ন্যায় আচরণ করে। এদের অন্যান্য নাম পরসর্গ, কর্মপ্রবচনীয় (post position)। প্রকারভেদ
অনুসর্গ কোন পদের পরে বসে বাক্যের সাথে ওই পদকে সম্পর্কিত করতে পারে, তার প্রকৃতি বিচার করে ৩টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ১. বিশেষ্য অনুসর্গ : এই জাতীয় বিশেষ্য পদের পরে বসে। যেমন– প্রাণের চেয়ে প্রিয়
ছাদের উপর খোলা আকাশ
২. সর্বনাম উপসর্গ : এই জাতীয় সর্বনাম পদের পরে বসে। যেমন– আমার চেয়ে সে বড়।
ওর কাছে বইটি আছে।
৩. বিশেষণ উপসর্গ : এই জাতীয় বিশেষণ পদের পরে বসে। যেমন– মন্দের চেয়ে একটু ভালো খারাপের চেয়ে খারাপ
উৎস ও উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ
উৎসের বিচারে অনুসর্গ তিন প্রকার।
১. সংস্কৃত উপসর্গ : সংস্কৃত শব্দ সরাসরি বসেছে এমন উপসর্গ। যেমন–অপেক্ষা, অভিমুখে, উপরে, কর্তৃক, ইত্যাদি।
২. সংস্কৃত-বিবর্তিত : সংস্কৃত শব্দের ক্রমবিবর্তনের মধ্য আগত কোন শব্দ যখন অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন– সংস্কৃত অগ্রে>প্রাকৃত অগ্গে>বাংলা আগে। এরূপ অন্যান্য অনুসর্গ হতে পারে কাছে, ছাড়া, পাশে
৩. বিদেশী অনুসর্গ : বাংলা, সংস্কৃত, সংস্কৃত থেকে ক্রমবিবর্তিত অপরাপর শব্দ যা অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন– ফারসি : দরুন, বদলে,বনাম। উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ দুই প্রকার।
১. নামজাত অনুসর্গ : ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন অনুসর্গ ছাড়া অন্যান্য অনুসর্গের সাধারণ পরিচয় দেওয়া হয় নামজাত অনুসর্গ বলা হয়। যেমন- উপরে, অপেক্ষা ইত্যাদি।
২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ : কোনো ক্রিয়ামূলের সাথে থেকে উৎপন্ন এমন কিছু শব্দ, যেগুলো অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন– √কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে। [ভালো করে কাজ করো] বিভক্তির সংযুক্তির বিচারে অনুসর্গ অনুসর্গের সাথে বিভক্তি আছে কি নেই তার উপর ভিত্তি করে, অনুসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন– ১. বিভক্তিহীন অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে কোনো বিভক্তি থাকে না বা বিভক্তি যুক্ত করা যায় না। যেমন– দ্বারা, কর্তৃক, নাগাদ ইত্যাদি।
২. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে। নামজাত অনুসর্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন– আগ>আগে, উপর>উপরে, কারণ>কারণে ক্রিয়ামূলজাত অনুসর্গে ‘ইয়া’ বিভক্তযুক্ত হয়ে অনুসর্গ তৈরি হয়। যা সাধু রূপে ব্যবহৃত হয়। চলিত রূপে এর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন– √কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে। √ধর্+ইয়া=ধরিয়া>ধরে বা ধ’রে। উপসর্গ এর পরিচয়:- অব্যয়ের একটি প্রকরণ। মূলত উপসর্গ এক প্রকার ধ্বনি কণিকা। যা সাধারণত তেমন কোনো স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে না, কিন্তু অন্য শব্দের পূর্বে বসে, ভিন্ন ভিন্ন অর্থ-বোধক নূতন শব্দের সৃষ্টি করে। এই জাতীয় ধ্বনি কণিকা উপসর্গ বলে। ইংরেজিতে উপসর্গকে (suffix) বলে। উপসর্গ বদ্ধ রূপমূল (bound morpheme)। উপসর্গের প্রকারভেদ বাংলা ব্যাকরণে সংস্কৃত, বাংলা ও বিদেশী উপসর্গের বিচারে, উপসর্গ ৩ প্রকার। এই উপসর্গগুলো হলো- তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ, বাংলা উপসর্গ, ও বিদেশি উপসর্গ।
১. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত উপসর্গ বিশটি; যথা- প্র, প্ররা, অপ, সম্, নি, অব, অনু, নির্, দুর্, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ।
২. খাঁটি বাংলা উপসর্গ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত খাঁটি বাংলা উপসর্গ একুশটি; যথা- অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়্, আন্, আব্, ইতি, উন্ (উনু, উনা), কদ্, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।
৩. বিদেশী উপসর্গ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশী উপসর্গের মধ্যে ফারসি ও ইংরেজি উপসর্গই বেশি দেখ যায়। কিছু উদাহরণ- ফারসি উপসর্গের উদাহরণ- আম্, কার, খাস, সে (তিন), গর্, দর্, না (লা), নিম্, ফি, বর, ব, বদ্, বে, বাজে, হর্। ইংরেজি উপসর্গের উদাহরণ- ফুল, সাব, হাফ, হেড।
পরবর্তী পৃষ্ঠা