বাংলা ২য় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বাংলা ২য় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

উচ্চারণের নিয়ম


W3Schools.com

১। প্রশ্ন : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের মোট ৫টি নিয়ম লেখো।


উত্তর : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :

(ক) আদ্যবর্ণে য-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটি অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত হলে উচ্চারণ ‘অ্যা’ কারান্ত হয়ে যায়। যেমন—ব্যথা (ব্যাথা), ন্যায় (ন্যায়্) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসথো), কণ্ঠ্য (কনঠো) ইত্যাদি।
(গ) পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা সংযুক্ত হলে তার উচ্চারণ ও-কারান্ত হয়ে থাকে। যেমন—প্রকাশ (প্রোকাশ্), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।
(ঘ) র-ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তবে সে বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যেমন—রাত্রি (রাতত্রি), ছাত্র (ছাতেত্রা), মাত্র (মাতেত্রা) ইত্যাদি।
(ঙ) ল-ফলা শব্দের মধ্যে বা অন্তে বসলে তার র-ফলার মতো দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন—অশ্লীল (অসিস্লল), শ্লেষ (স্লেশ), শ্লথ (স্লোথো) ইত্যাদি।


২। প্রশ্ন : উদাহরণসহ ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম লেখো।

উত্তর : ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) শব্দের প্রথমে ‘ক্ষ’ থাকলে তার উচ্চারণ হয় ‘খ’। যেমন—ক্ষমা (খমা), ক্ষণ (খন্) ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকখোতা), পক্ষ (পোকখো)।
(গ) শব্দের মাঝে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গ্যঁ-এর (গ) মতো হয়। যেমন—জ্ঞান (গ্যাঁন্), জ্ঞাপক (গ্যাঁপোক্) ইত্যাদি।
(ঘ) শব্দের আদিতে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গঁ বা গ্যঁ-এর মতো হবে। যেমন—জ্ঞাপন (গ্যাঁপোন্), অজ্ঞান (অগ্গ্যাঁন্), বিজ্ঞপ্তি (বিগগোঁপিত) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের অন্তে ‘জ্ঞ’ থাকলে উচ্চারণ গঁ, বা গোঁ-এর মতো হবে। যেমন—অবজ্ঞা (অবোগ্গাঁ), অজ্ঞ (অগগোঁ), বিজ্ঞ (বিগেগাঁ) ইত্যাদি।


৩। প্রশ্ন : শব্দের শেষে কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অ’-উচ্চারণ লোপ পায় না? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।


উত্তর : কথ্য বাংলায় শব্দের শেষের অ ধ্বনি সাধারণত লোপ পায়। তবে এমন কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে অন্ত্য অ-ধ্বনি লোপ পায় না এবং সংবৃত উচ্চারণ হয়। এগুলো হলো :
(ক) শেষ ব্যঞ্জনের অব্যবহিত আগে অনুস্বার বা বিসর্গ থাকলে : ধ্বংস, বংশ, মাংস, দুঃখ ইত্যাদি।
(খ) শব্দটি ত বা ইত প্রত্যায়ান্ত হলে : গত, শত, নন্দিত, লজ্জিত পুলকিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দটি তুলনাবাচক তর, তম প্রত্যায়ান্ত হলে : বৃহত্তর, মহত্তর, বৃহত্তম, মহত্তম ইত্যাদি।
(ঘ) ঈয় বা অনয় প্রত্যায়ান্ত শব্দে : পানীয়, নমনীয়, দেশীয় ভারতীয় ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের শেষ ব্যঞ্জনটি হ হলে কলহ, দেহ, দাহ, প্রবাহ, মোহ, স্নেহ, লৌহ ইত্যাদি।


৪। প্রশ্ন : অনুস্বার (ং) বিসর্গ (ঃ) ও চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) এর উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দু নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
ং (অনুস্ব্বার) : আধুনিক বাংলা ভাষায় উচ্চারণগত দিক থেকে ‘ং’ (অনুস্বার) এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। ং-কার উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ (অংশো), মাংস (মাঙশো), বাংলা (বাঙলা), সংগ্রাম (সঙগ্রাম), সংজ্ঞা (সঙ্গগাঁ) ইত্যাদি।
ঃ (বিগর্স) : সংস্কৃতে বিসর্গের উচ্চারণ ছিল অনেকটা অর্ধ হ-এর মতো। বাংলায় আবেগ শব্দ অর্থাৎ বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে বিগর্স ব্যবহৃত হয়। যেমন—উঃ (উহ্), আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্) ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) থাকলে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ এর উচ্চারণ ‘ও’ এর মতো হয়। যেমন—অতঃপর (অতোপপর), নিঃশেষ (নিশশেশ্), দুঃখ, (দুকখো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙগো) ইত্যাদি।


উচ্চারণরীতি কাকে বলে ?


Girl in a jacket

১। প্রশ্ন : উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা ভাষা উচ্চারণের চারটি নিয়ম লেখো।

উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।.


প্রশ্ন:- অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রান ধ্বনি ককে বলে ? উদাহরন সহ লেখ ।

বাতাসের চাপের আধিক্যের উপর ভিত্তি করে ব্যঞ্জনধ্বনিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।

১. মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে অধিক পরিমাণে বাতাস মুখের রুদ্ধতাকে সজোরে উন্মোচন করে নির্গত তাদের মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।
মহাপ্রাণ ধ্বনি ১১টি। যথা: খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ, হ।

২. অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে কম পরিমাণে বাতাস নির্গত তাদের অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে।
অল্পপ্রাণ ধ্বনি ১৩টি। যথা: ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব, শ, ষ, স

[নোট:-] ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনির উচ্চারণ
স্বরতন্ত্রীর অবস্থাভেদে ব্যঞ্জনধ্বনি ২ প্রকার।
১. অঘোষ ধ্বনি: যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র কম্পিত বা অনুরণিত হয় না তাদের অঘোষ ধ্বনি বলে। বাংলা অঘোষ ধ্বনির সংখ্যা ১৪টি। যথা: ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ, শ, ষ, স, ঃ
২. ঘোষ ধ্বনি: যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র কম্পিত বা অনুরণিত হয় তাদের ঘোষ ধ্বনি বলে। ঘোষ ধ্বনি ১১টি। যথা: গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব, ভ, হ
]

৩ । প্রশ্ন : বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের যেকোনো ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।

উত্তর : ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীকে ‘ঙ’ হরফটির নাম জানানো হয় ‘উঁয়ো’ রূপে। কিন্তু এর প্রাচীন নাম বা পরিচিতি যাই হোক, আধুনিক বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ বর্ণটি কখনো ‘উঁয়ো’ রূপে উচ্চারিত হয় না, হয় ‘অঙ’ রূপে। যেমন—রঙ, ঢঙ, সঙ, রাঙা, সঙিন, কঙ্কন ইত্যাদি।
(খ) ‘ঞ’ সাধারণ ‘চ’ বর্গের (চ, ছ, জ, ঝ) চারটি বর্ণের পূর্বে যুক্তাবস্থায় ব্যবহৃত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষ ‘চ’ এর পরে বসে বাংলা উচ্চারণে ‘দন্ত্য ন’ এর মতো হয়। যেমন—পঞ্চ, লাঞ্ছিত, রঞ্জ, গঞ্জিত, ব্যঞ্জন ইত্যাদি।
(গ) য-এর পর প্রাচীন সংস্কৃত উচ্চারণ ছিল ‘ই অ’-এর মতো কিন্তু বাংলা উচ্চারণে এটি পরিষ্কার ‘জ’। এর প্রাচীন উচ্চারণের স্মারক হচ্ছে ‘য’ এর নিচে বিন্দু দিয়ে লেখা ‘য়’ আমরা যেটাকে অন্তঃস্থ ‘অ’ বলি। বাংলা ভাষায় এ দুটি বর্ণের উচ্চারণের কোনো পার্থক্য নেই। যথা—যম (জম্), জামাই (জামাই), যদি (জাদি), জগৎ (জগোত) ইত্যাদি।
(ঘ) আধুনিক বাংলা ভাষার উচ্চারণগত দিক থেকে এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। সংস্বকৃত ‘ং’ যে বর্ণের পরে সংযুক্ত হতো, যে স্বরবর্ণকে আংশিকভাবে সানুনাষিক করে দিত। বাংলায় ং-এর উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ, (অঙশো), বংশ (বঙেশা), কংস (কঙেশা) হংস (হঙ্স) ইত্যাদি।
(ঙ) ‘ঃ’ (বিসর্গ) এর উচ্চারণ ছিল অনেকটা ‘অর্ধ ‘হ’ এর মতো। বাংলায় কেবল বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রাচীনকালের ‘ঃ’ (বিসর্গ) উচ্চারণের রেশ শুনতে পাই। যেমন—আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্), উঃ (উহ্), ওঃ (ওই্) ইত্যাদি।




১। প্রশ্ন : উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা ভাষা উচ্চারণের চারটি নিয়ম লেখো।

উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।

২। প্রশ্ন : বাংলা ‘অ’ এবং ‘এ’ ধ্বনির কমপক্ষে দুটি করে মোট পাঁচটি উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
উত্তর : বাংলা ‘অ’ এবং ‘এ’ ধ্বনির পাঁচটি উচ্চারণের নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলো :
(ক) ‘অ’ কিংবা ‘ আ ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি স্বাভাবিক হয়। যেমন—অমানিশা, কথা ইত্যাদি।
(খ) অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন—গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দের আদ্য ‘এ’ কারের পরে যদি ং ঙ কিংবা ঙ্গ থাকে এবং তারপরে ই, উ অনুপস্থিত থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ‘এ’, অ্যা-কারে রূপান্তরিত হয়। যেমন—বেঙ, খেঙরা, বেঙ্গমা, ভেংবা ইত্যাদি।
(ঘ) এ-কারযুক্ত একাক্ষর ধাতুর সঙ্গে আ প্রত্যয়যুক্ত হলে, সাধারণত সেই এ-কারের উচ্চারণ ‘অ্যা’ করা হয়ে থাকে। যেমন—খেদা, ক্ষেপা, বেচা, ঠেলা, খেলা ইত্যাদি।
(ঙ) একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবিকৃত এ-কাররূপে উচ্চারিত হয়। যেমন—কে, সে, যে, এ ইত্যাদি।

৩। প্রশ্ন : ‘হ’ সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের যেকোনো ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : ‘হ’ সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) ‘হ’-এর সঙ্গে ঋ-কার, র-ফলা কিংবা রেফ সংযুক্ত হলে ‘হ’ নয়, বরং ‘র’ মহাপ্রাণ হয়। যেমন—হৃদয় (হৃদয়্), সুহৃদ (সুহৃদ্), হৃদ্য (হৃদেদা) ইত্যাদি।
(খ) হ-এর সঙ্গে ণ বা ন যুক্ত হলে উচ্চারণ হৃ-এর মতো হয়। এ ক্ষেত্রে মূলত ‘ন’-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমন—পূর্বাহ্ন (পুর্বানহ), অপরাহ্ন (অপোরান্হ), চিহ্ন (চিন্হ) ইত্যাদি।
(গ) হ-কারের সঙ্গে ম সংযুক্ত হলে ম-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমন—ব্রহ্ম (বোম্হ) ব্রাহ্ম (ব্রাম্হ), ব্রাহ্মণ (ব্রোম্হন্) ইত্যাদি।
(ঘ) হ-এর সঙ্গে ‘য’ ফলা যুক্ত হলে ‘হ’-এর নিজস্ব উচ্চারণ থাকে না। বরং য-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমন—উহ্য (উজেঝা), গ্রাহ্য (গ্রাজেঝা), সহ্য (শোজ্ঝা) ইত্যাদি।
(ঙ) হ-এর সঙ্গে ‘ব’ যুক্ত হলে ‘ব’ মহাপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়। যেমন—বিহ্বল (বিওভল), আহ্বান (আওভান), জিহ্বা (জিওভা) ইত্যাদি।

৪। প্রশ্ন : বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের যেকোনো ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।

উত্তর : ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীকে ‘ঙ’ হরফটির নাম জানানো হয় ‘উঁয়ো’ রূপে। কিন্তু এর প্রাচীন নাম বা পরিচিতি যাই হোক, আধুনিক বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ বর্ণটি কখনো ‘উঁয়ো’ রূপে উচ্চারিত হয় না, হয় ‘অঙ’ রূপে। যেমন—রঙ, ঢঙ, সঙ, রাঙা, সঙিন, কঙ্কন ইত্যাদি।
(খ) ‘ঞ’ সাধারণ ‘চ’ বর্গের (চ, ছ, জ, ঝ) চারটি বর্ণের পূর্বে যুক্তাবস্থায় ব্যবহৃত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষ ‘চ’ এর পরে বসে বাংলা উচ্চারণে ‘দন্ত্য ন’ এর মতো হয়। যেমন—পঞ্চ, লাঞ্ছিত, রঞ্জ, গঞ্জিত, ব্যঞ্জন ইত্যাদি।
(গ) য-এর পর প্রাচীন সংস্কৃত উচ্চারণ ছিল ‘ই অ’-এর মতো কিন্তু বাংলা উচ্চারণে এটি পরিষ্কার ‘জ’। এর প্রাচীন উচ্চারণের স্মারক হচ্ছে ‘য’ এর নিচে বিন্দু দিয়ে লেখা ‘য়’ আমরা যেটাকে অন্তঃস্থ ‘অ’ বলি। বাংলা ভাষায় এ দুটি বর্ণের উচ্চারণের কোনো পার্থক্য নেই। যথা—যম (জম্), জামাই (জামাই), যদি (জাদি), জগৎ (জগোত) ইত্যাদি।
(ঘ) আধুনিক বাংলা ভাষার উচ্চারণগত দিক থেকে এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। সংস্বকৃত ‘ং’ যে বর্ণের পরে সংযুক্ত হতো, যে স্বরবর্ণকে আংশিকভাবে সানুনাষিক করে দিত। বাংলায় ং-এর উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ, (অঙশো), বংশ (বঙেশা), কংস (কঙেশা) হংস (হঙ্স) ইত্যাদি।
(ঙ) ‘ঃ’ (বিসর্গ) এর উচ্চারণ ছিল অনেকটা ‘অর্ধ ‘হ’ এর মতো। বাংলায় কেবল বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রাচীনকালের ‘ঃ’ (বিসর্গ) উচ্চারণের রেশ শুনতে পাই। যেমন—আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্), উঃ (উহ্), ওঃ (ওই্) ইত্যাদি।

৫। প্রশ্ন : বাংলা উচ্চারণে ‘অ’ কখন ‘ও’ রূপে উচ্চারিত হয়? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : বাংলা উচ্চারণে অ ও রূপে উচ্চারিত হওয়ার পাঁচটি নিয়ম হলো:
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পর ‘্য’ (য) ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন—বন্যা (বোন্না), গণ্য (গোনেনা), কথ্য (কোতথো) ইত্যাদি।
(খ) একাক্ষর শব্দের প্রথম ‘অ’ এবং পরে দন্ত্য ‘ন’ থাকলে ‘ও’ কারের মতো উচ্চারণ হয়। যেমন—মন (মোন্), বন (বোন), জন (জোন্) ইত্যাদি।
(গ) তিন বা তার অধিক বর্ণে গঠিত শব্দের মধ্যে ‘অ’ ও-কাররূপে উচ্চারিত হয়। যেমন—আদর (আদোর্), বেতন (বেতোন্), ওজন (ওজোন্) ইত্যাদি।
(ঘ) ‘ত’ বা ‘ইত’ প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণ পদের শেষ ‘অ’ ধ্বনি ‘ও’ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন—উপনীত (উপোনিতো), রক্ষিত (রোকিখতো), নত (নতো) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দান্তে যুক্তবর্ণ থাকলে অন্তিম ‘অ’ ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন—ভক্ত (ভকেতা), পদ্য (পোদেদা), চিহ্ন (চিনেহা) ইত্যাদি।

৬। প্রশ্ন : উদাহরণসহ ‘ব’ ফলা উচ্চরণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

উত্তর : ‘ব’ ফলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণে ব-ফলা সংযুক্ত হলে সে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন—ধ্বনি (ধোনি), স্বাধিকার (শাধিকার্), স্বদেশ (শদেশ্) স্বাগত (শোগতো) ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), বিদ্বান (বিদ্দান), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) উৎ (উদ্) উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের ‘ৎ’ (দ্)-এর সঙ্গে ব-ফলার ‘ব’ বাংলা উচ্চারণে লুপ্ত হয় না। যেমন—উদ্বেগ (উদবেগ), উদ্বোধন (উদবোধোন্), উদ্বাস্তু (উদ্বাস্তু) ইত্যাদি।
(ঘ) বাংলা শব্দে ক থেকে সন্ধির সূত্রে আগত ‘গ’-এর সঙ্গে ‘ব’ ফলা যুক্ত হলে ‘ব’-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন—দিগ্বিদিক (দিগিবদিক্), দ্বিগ্বলয় (দিগ্বলয়), দিগ্বিজয় (দিগবিজয়্) ইত্যাদি।
(ঙ) ‘ব’ অথবা ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ‘ব’-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমন—বাব্বা (বাব্বা), সাব্বাশ (শাব্বাশ্), লম্ব (লমবো) ইত্যাদি।

৭। প্রশ্ন : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের মোট ৫টি নিয়ম লেখো।

উত্তর : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) আদ্যবর্ণে য-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটি অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত হলে উচ্চারণ ‘অ্যা’ কারান্ত হয়ে যায়। যেমন—ব্যথা (ব্যাথা), ন্যায় (ন্যায়্) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসথো), কণ্ঠ্য (কনঠো) ইত্যাদি।
(গ) পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা সংযুক্ত হলে তার উচ্চারণ ও-কারান্ত হয়ে থাকে। যেমন—প্রকাশ (প্রোকাশ্), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।
(ঘ) র-ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তবে সে বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যেমন—রাত্রি (রাতত্রি), ছাত্র (ছাতেত্রা), মাত্র (মাতেত্রা) ইত্যাদি।
(ঙ) ল-ফলা শব্দের মধ্যে বা অন্তে বসলে তার র-ফলার মতো দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন—অশ্লীল (অসিস্লল), শ্লেষ (স্লেশ), শ্লথ (স্লোথো) ইত্যাদি।

৮। প্রশ্ন : উদাহরণসহ ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম লেখো।

উত্তর : ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) শব্দের প্রথমে ‘ক্ষ’ থাকলে তার উচ্চারণ হয় ‘খ’। যেমন—ক্ষমা (খমা), ক্ষণ (খন্) ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকখোতা), পক্ষ (পোকখো)।
(গ) শব্দের মাঝে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গ্যঁ-এর (গ) মতো হয়। যেমন—জ্ঞান (গ্যাঁন্), জ্ঞাপক (গ্যাঁপোক্) ইত্যাদি।
(ঘ) শব্দের আদিতে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গঁ বা গ্যঁ-এর মতো হবে। যেমন—জ্ঞাপন (গ্যাঁপোন্), অজ্ঞান (অগ্গ্যাঁন্), বিজ্ঞপ্তি (বিগগোঁপিত) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের অন্তে ‘জ্ঞ’ থাকলে উচ্চারণ গঁ, বা গোঁ-এর মতো হবে। যেমন—অবজ্ঞা (অবোগ্গাঁ), অজ্ঞ (অগগোঁ), বিজ্ঞ (বিগেগাঁ) ইত্যাদি।

৯। প্রশ্ন : শব্দের শেষে কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অ’-উচ্চারণ লোপ পায় না? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।

উত্তর : কথ্য বাংলায় শব্দের শেষের অ ধ্বনি সাধারণত লোপ পায়। তবে এমন কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে অন্ত্য অ-ধ্বনি লোপ পায় না এবং সংবৃত উচ্চারণ হয়। এগুলো হলো :
(ক) শেষ ব্যঞ্জনের অব্যবহিত আগে অনুস্বার বা বিসর্গ থাকলে : ধ্বংস, বংশ, মাংস, দুঃখ ইত্যাদি।
(খ) শব্দটি ত বা ইত প্রত্যায়ান্ত হলে : গত, শত, নন্দিত, লজ্জিত পুলকিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দটি তুলনাবাচক তর, তম প্রত্যায়ান্ত হলে : বৃহত্তর, মহত্তর, বৃহত্তম, মহত্তম ইত্যাদি।
(ঘ) ঈয় বা অনয় প্রত্যায়ান্ত শব্দে : পানীয়, নমনীয়, দেশীয় ভারতীয় ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের শেষ ব্যঞ্জনটি হ হলে কলহ, দেহ, দাহ, প্রবাহ, মোহ, স্নেহ, লৌহ ইত্যাদি।

১০। প্রশ্ন : অনুস্বার (ং) বিসর্গ (ঃ) ও চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) এর উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।

উত্তর : অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দু নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
ং (অনুস্ব্বার) : আধুনিক বাংলা ভাষায় উচ্চারণগত দিক থেকে ‘ং’ (অনুস্বার) এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। ং-কার উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ (অংশো), মাংস (মাঙশো), বাংলা (বাঙলা), সংগ্রাম (সঙগ্রাম), সংজ্ঞা (সঙ্গগাঁ) ইত্যাদি।
ঃ (বিগর্স) : সংস্কৃতে বিসর্গের উচ্চারণ ছিল অনেকটা অর্ধ হ-এর মতো। বাংলায় আবেগ শব্দ অর্থাৎ বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে বিগর্স ব্যবহৃত হয়। যেমন—উঃ (উহ্), আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্) ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) থাকলে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ এর উচ্চারণ ‘ও’ এর মতো হয়। যেমন—অতঃপর (অতোপপর), নিঃশেষ (নিশশেশ্), দুঃখ, (দুকখো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙগো) ইত্যাদি।

সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম




প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের ছয়টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
অথবা, বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।



উত্তর : বানান ব্যাকরণের একটি বিবর্তনশীল অধ্যায়। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা বানান আজকের পর্যায়ে এসেছে। বানানের এই পরিবর্তনের ধারায় বাংলা একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম থেকে ছয়টি নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো :

ক. তৎসম শব্দের বানান অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নদী, ভাষা ইত্যাদি।

খ. যেসব তৎসম শব্দের বানানে ই এবং ঈ বা এদের কার চিহ্ন অথবা উ এবং ঊ বা এদের কার চিহ্নের উভয় রূপই শুদ্ধ, সেসব শব্দের বানানে কেবল শুধু ই এবং উ বা এদের কার চিহ্ন বসবে। যেমন : বাড়ি, উনিশ ইত্যাদি।

গ. তৎসম এবং অতৎসম শব্দে কোথাও রেফের পরে দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্জন, অর্চনা, ধর্ম, কীর্তন ইত্যাদি।

ঘ. শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : ক্রমশ, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।

ঙ. সন্ধি দ্বারা গঠিত শব্দে ক খ গ ঘ এর আগে ং এবং ঙ দুটোই শুদ্ধ। যেমন : অহঙ্কার/অহংকার, সঙ্গীত/সংগীত ইত্যাদি।

চ. নঞর্থক অব্যয় পদ আলাদাভাবে বসবে। যেমন : জানি না, দেখি নি ইত্যাদি।

ছ. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।

জ. বাংলা ক্রিয়াপদের আন্তঃস্থিত ন ণ হয় না। যেমন—হবেন, মারেন, যাবেন, করেন, খাবেন ইত্যাদি।

ঝ. ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই-কার হবে। যেমন- বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি ইত্যাদি।




১। প্রশ্ন : উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা ভাষা উচ্চারণের চারটি নিয়ম লেখো।

উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।.



মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮

ব্যাকরণ এর বিষয়বস্তু:


Norway
ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

প্রশ্ন: ব্যাকরণে কী কী বিষয় আলোচিত হয ?উদাহরণসহ আলোচনা কর ।
কু.বো.০১, ব. বো.-০২,রা.বো-২০০০



ব্যাকরণ: ব্যাকরণ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। সুতরাং, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।

বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় :
প্রতিটি ভাষারই ৪টি মৌলিক অংশ থাকে- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। আর তাই সব ভাষার ব্যাকরণই প্রধানত এই ৪টি অংশ নিয়েই আলোচনা করে। অর্থাৎ, বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয়/ অংশ ৪টি-


১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology): ধ্বনিতত্ত্ব: ব্যাকরণের এ অংশে ধ্বনি, ধ্বনির উচ্চারণ, ধ্বনির বিন্যাস, ধ্বনির পরিবর্তন, বর্ণ, সন্ধি ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান প্রভৃতি ধ্বনি সম্বন্ধীয় বিষয় আলোচিত হয়।
২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology) : এ অংশে শব্দের প্রকার, পদের পরিচয়, শব্দ গঠন, উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি, লিঙ্গ, বচন, ধাতু, শব্দরূপ, কারক, সমাস, ক্রিয়া-প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, ক্রিয়ার ভাব, শব্দের ব্যু ৎপত্তি ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা থাকে।
৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) : বাক্য, বাক্যের অংশ, বাক্যের প্রকার, বাক্য বিশ্লেষণ, বাক্য পরিবর্তন, পদক্রম, বাগ্ধারা বা বাগিবধি বা বাক্যরীতি, বাক্য সংকোচন, বাক্য সংযোজন, বাক্য বিয়োজন, যতিচ্ছেদ বা বিরাম চিহ্ন প্রভৃতি বিষয় এ অংশে আলোচিত হয়।
৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics):শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার ,অর্থের প্রকারভেদ; মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ
এছাড়াও ব্যাকরণে আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অভিধানতত্ত্ব(Lexicography), ছন্দ ও অলংকার, ইত্যাদি।

প্রশ্ন: অ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁটি নিয়ম লেখ।/অথবা, প্রমিত বাংলা উচ্চারনের পাচঁটি নিয়ম লেখ ।

১। শব্দের দ্বিতীয় স্বর ‘অ’, আ, ও, হলে অ –এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়। যেমন- অন্ন, অর্থ, অক্ষর , কলম, অমল ইত্যাদি ।
২। স’ বা সম’ উপসর্গযুক্ত আদি অ-ধ্বনি স্বাভাবিক হয়। যেমন: সস্নেহ, সহাস্য, সজীব, সরল, সবিনিয় ইত্যাদি ।
৩। না অর্থে অ বা অন থাকলে অ – ধ্বনি স্বাভাবিক বা বিবৃত হয়। যেমন: অমূল্য, অমৃত, অস্থির , অনিয়ম, আনাগত ইত্যাদি।
৪।অ – এর নিজস্ব উচ্চারন স্বাভাবিক বা বিবৃত হয় । যেমন: যেমন: জল, সরল, দখল, ইত্যাদি।
৫।অ – স্বরধ্বনিযুক্ত একাক্ষর (sylleble) শব্দের অ-এর উচ্চারণ স্বাভাবিক। যেমন: নদ্, টব, শব্, দম্, রব্ ইত্যাদি


মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮

ক্ষুদে গল্প লেখা


শিরোনাম : ইঁদুরের বৈঠক



লোকালয়ের কাছেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ের গুহায় বাস করত একদল ইঁদুর। পাহাড়ের গুহায় কোনো খাবার পাওয়া যেত না বলে তাদের লোকালয়ে যেতে হতো। কিন্তু সেখানে থাকত একটি হুলো বিড়াল। বিড়ালের অত্যাচারে ইঁদুররা লোকালয় থেকে খাদ্য জোগাড় করতে না পেরে একসময় খুব অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। বাঁচার একটা উপায় বের না করলে ইঁদুরের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিড়ালের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, এ বিষয়ে ইঁদুরদের একটা বৈঠক বসল। বৈঠকে অনেক ইঁদুরের সমাবেশ ঘটল। বাঁচার উপায় হিসেবে অনেকেই নানারকম পরামর্শ ও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কারো প্রস্তাবই সভাপতির আসনে বসা বৃদ্ধ ইঁদুরের পছন্দ হলো না।

অবশেষে এক বিজ্ঞ ইঁদুর অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে বলল—আমি বলি কি, ওই হুলো বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হোক, তাহলে ঘণ্টার আওয়াজ শুনেই আমরা সাবধান হতে পারব। এই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত সব ইঁদুরই হাতে তুড়ি বাজিয়ে রাজি হয়ে গেল। বৈঠকের সভাপতি বৃদ্ধ ইঁদুর এতক্ষণ বসে বসে সবার পরামর্শ শুনছিল। কিন্তু এবার আর কিছু না বলে পারল না। এবার সে বলল, আমার প্রবীণ বিজ্ঞ বন্ধু যা বললেন তা খুবই বুদ্ধির কথা বটে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিতে পারলে আমাদের উদ্যোগ সফল হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে—ওই ঘণ্টাটা বিড়ালের গলায় বাঁধতে যাবে কে?

সভাপতির কথায় বৈঠকের অন্যান্য ইঁদুর চুপ হয়ে গেল। কিন্তু ঘণ্টা বাঁধার উপায় হিসেবে কেউ কোনো উত্তর দিতে পারল না। পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেও উত্তর খুঁজে পেল না। আসলে প্রস্তাব দেওয়া যত সহজ, তা বাস্তবে রূপায়িত করা এত সহজ নয়।

শিরোনাম : একতার ক্ষমতা




এক চাষির ছয় সন্তান। এক মেয়ে, পাঁচ ছেলে। ছেলেদের মধ্যে শান্তি ছিল না। সব সময় ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। এতে চাষির মনেও ছিল অশান্তি। ছেলেদের প্রতি তাঁর উপদেশ-নির্দেশ কোনো কাজে এলো না। বৃদ্ধ বয়সে চাষি একদিন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদের বললেন—তোরা প্রত্যেকে একটা করে কঞ্চি নিয়ে সেগুলো একসঙ্গে একটা আঁটি বেঁধে আমার কাছে নিয়ে আয়।

বাবার কথায় ছেলেরা কঞ্চি জোগাড় করে তা নিয়ে একটা আঁটি বেঁধে আনল। এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—এবার তোরা প্রত্যেকে এই আঁটিটি ভাঙার চেষ্টা কর, দেখি কে পারিস।

বাবার কথায় ছেলেরা একে একে প্রত্যেকের কঞ্চির আঁটি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। চাষি এবার আঁটিটি খুলতে বললেন। তারপর প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি দিলেন। ছেলেরা বুঝতে পারল না তাদের বাবার আসল উদ্দেশ্য কী? সবার হাতে কঞ্চি দেওয়ার পর এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—তোদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি আছে তো! এবার তোরা যার যার কঞ্চিটি ভেঙে ফেল। বাবার কথা শেষ হতে না হতেই ছেলেরা প্রত্যেকে তাদের নিজের হাতের কঞ্চি পটাপট ভেঙে ফেলল। চাষি এবার তাঁর ছেলেদের উদ্দেশে বললেন—দেখলি তো! তোরা যদি এভাবে মিলেমিশে একজোট হয়ে থাকিস, তবে কোনো শত্রুই তোদের ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ একতার ক্ষমতা অনেক বেশি। আর যদি তোরা সব সময় ঝগড়া-বিবাদ করিস, আলাদা হয়ে থাকিস, একজন বিপদে পড়লে তার পাশে সবাই না দাঁড়াস, তাকে সাহায্য না করিস, তবে শত্রুরা তোদের একা পেয়ে ঘায়েল করে দেবে।



শিরোনাম : শক্তি পরীক্ষা

প্রশ্ন:শক্তিপরীক্ষা শিরোনামো একটি গল্প লেখ ?

সূর্য আর বাতাসের মধ্যে একদিন প্রচণ্ড তর্ক শুরু হলো। দুজনের মধ্যে কার শক্তি বেশি, এই ছিল তর্কের বিষয়। কেউ কারো কাছে হার মানতে চায় না বলে তর্কেরও শেষ হয় না। শেষ পর্যন্ত দুজনেই বুঝতে পারল, এভাবে তর্ক চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। তাই কথা কাটাকাটি থামিয়ে হাতে-কলমে শক্তি পরীক্ষার একটা উপায় বের করা দরকার। হঠাৎ বাতাসের মাথায় একটা বুদ্ধির উদয় হলো, সে সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল, ওই দেখো রাস্তা দিয়ে একটা লোক যাচ্ছে। যে ওই লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলাতে পারবে সেই হবে বিজয়ী। যে বিজয়ী হবে তাকে বেশি শক্তিশালী বলে মেনে নিতে হবে।

দুজনের মধ্যে ঠিক হলো, প্রথমে বাতাসই জামা খোলার চেষ্টা শুরু করবে। শুরু হলো। বাতাস তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বইতে শুরু করল। বাতাস বইতে শুরু করলে লোকটা আরো ভালোভাবে গায়ে জামা-কাপড় জড়িয়ে নিল। বাতাস তার শক্তি আরো বাড়িয়ে দিলেও কাজ হলো না। বাতাস আরো প্রস্তুতি নিয়ে এবার প্রবল জোরে বইতে শুরু করল। ঠাণ্ডা বাতাসে লোকটার শরীর কাঁপছিল। এবার সে আগের পরা জামার ওপর আরো একটা মোটা কোট পরে নিয়েছে। বাতাসের গতিবেগ থেকে রক্ষার জন্য লোকটি দুহাতে জামা-কাপড় চেপে ধরে রেখেছে। বাতাস তো হতাশ। লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলা বাতাসের পক্ষে সম্ভব হলো না। এবার সূর্য তার শক্তির পরিচয় দিতে শুরু করল। বাতাসের শীতল প্রবাহের পর সূর্যের তাপে লোকটার বেশ আরাম বোধ হলো। আস্তে আস্তে সূর্যের উত্তাপ বাড়তে থাকলে লোকটা তার গায়ের কোটটা খুলে ফেলল। উত্তাপ যখন প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর হয়ে উঠল, তখন আর তার সহ্য হচ্ছিল না। একে একে সে গায়ের সব জামা-কাপড় খুলে গা ঠাণ্ডা করতে পাশের এক নদীতে নেমে গেল। পরীক্ষায় প্রমাণিত হলো, বাতাসের চেয়ে সূর্যের শক্তি অনেক বেশি।



একতাই বল!

একতার শক্তি দিয়ে যে আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হওয়া কোনো কাজকেও অনায়াসে সম্ভব করা যায় সেটা নতুন করে আরও একবার প্রমাণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থের একটি ট্রেনের যাত্রীরা। ট্রেন থেকে নামার সময় প্লাটফর্ম ও ট্রেনের মাঝখানে আটকে যাওয়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে এই যাত্রীরা সম্মিলিত ভাবে কয়েক হাজার টন ওজনের একটি ট্রেনের বগিকে একদিকে খানিকটা কাত করেন। আর তাতেই প্রাণে রক্ষা পায় ঘটনাক্রমে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ব্যক্তির জীবন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নাম প্রকাশ না হওয়া ঐ ব্যক্তি পার্থের একটি স্টেশনে নামতে গেলে তার একটি পা প্লাটফর্ম ও ট্রেনের দরজার মাঝে থাকা মাত্র ৫ সেন্টিমিটারের ছোট ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকে আটকে যায়। এ অবস্থায় তাত্ক্ষণিকভাবে স্টেশন ও ট্রেনের কর্মীরা ট্রেনচালককে স্টেশন থেকে ট্রেন পুনরায় ছাড়তে না করেন। এরপর তারা নানাভাবে ৫/৬ মিনিট সময় ধরে ঐ ব্যক্তিটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তবে এতেও কাজ না হওয়ায় ট্রেনের সকল যাত্রীকে বগিটির একদিকে জড়ো হতে বলা হয় যাতে করে ট্রেনটি কিছুটা কাত হলে ঐ ব্যক্তিকে বের করে আনা যায়। তবে তাদের এই প্রথম বুদ্ধিটি তেমন কোনো কাজে না আসায় যাত্রীদের সবাই একে একে ট্রেন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। সেই সাথে শুরু হয় ট্রেনটিকে একদিকে ধাক্কা দিয়ে সামান্য একটু কাত করার চেষ্টা। এ সময় এলোমেলোভাবে ট্রেনটিকে ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো করে নড়ানো হলে তা ঐ ব্যক্তির আটকে যাওয়া পায়ে পুনরায় বড় কোনো জখম তৈরি করতে পারতো। আর তাই লোকটিকে বাঁচাতে আসা যাত্রীরা এক-দুই-তিন গুনে ট্রেনের বগিটিকে বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় একদিকে কাঁত করেন। আর তাদের এই প্রচেষ্টার ফসল হিসেবেই বের করে আনা সম্ভব হয় ভাগ্যবান লোকটিকে।







শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮

সমার্থক শব্দ


প্রশ্ন:সমার্থক বা প্রতি শব্দ বলতে কি বোঝ ? সামর্থক শব্দের প্রয়োজন লেখ ?

উত্তর : সমার্থক শব্দের অর্থ হল সমার্থবোধক,সমার্থজ্ঞাপক,একার্থবোধক, এক বা অনুরূপ অর্থবিশিষ্ট। বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো শব্দ আছেন যা অন্য একটি শব্দের প্রতিশব্দ অর্থাৎ অন্য একটি শব্দ একই অর্থ প্রকাশ করে। একেই সমার্থক শব্দ বলে।

অথবা যে সকল শব্দ একই অর্থ প্রকাশ করে তাকে সমার্থক শব্দ বলে। যেমন:

অগ্নি শব্দের প্রতিশব্দ আগুন, অনল ,সর্বভূক,দহন,শিখা।
আগুন=আগুনে সবকিছু পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায়।
অনল=আমার সুখের ঘর অনলে পুড়ে ছাই হল।
সর্বভুক=আগুন হল সর্বভূক ,মূহুর্তেই সবকিছু খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলে।
গহন=দহনে পুড়িল হৃদয দেখিল না কেউ।
শিখা=জ্বেলে দে তোর বিজয় শিখা।

১.সমার্থক শব্দের মাধ্যমে ভাষার শব্দভানডার সমৃদ্ধ হয়
২.সমার্থক শব্দের ব্যবহারে একই শব্দ বার বার প্রয়োগজনিত সমস্যা দুর হয়।
৩.এর ব্যবহার প্রকাশশৈলীতে অভিনবত্ব আনয়ন করে।
৪.বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
৫.মনোভাবের সার্থক প্রকাশ ঘটাতে সমার্থশব্দ সাহায্য করে।
৬.এর মাধ্যমে পাঠক নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হতে পারে।
সাহিত্যের মিল দেওয়ার জন্য ,বক্তৃতা আকর্ষণীয় করার জন্য সমার্থক শব্দের ভুমিকা খুবেই গুরুত্বপূর্ণভ। যেমন :সাগর জলে সিনান করি সাজল এলোচুলে। এখানে সাগর এর প্রতিশব্দ সমুদ্র ব্যবহার করলে ছন্দের পতন ঘটে।

প্রশ্ন: যে কোন পাঁচটি শব্দের ২টি/৩টি করে সমার্থক শব্দ লেখ?

বন = কানন অরণ্য, জঙ্গল,
অপূর্ব =আশ্চর্য, অলৌকিক, অপরূপ,
ঈশ্বর = সৃষ্টিকর্তা, ভগবান, বিধাতা
অক্ষয় = ক্ষয়হীন, চিরন্তন, নাশহীন, অশেষ,
মহৎ = উন্নত, উদার, মহান,


কতিপয় সমার্থক শব্দের তালিকাঃ--

সূর্য = দিবাকর, প্রভাকর, ভাস্কর, রবি, তপন, দিনেশ, ভানু, রোদ, সবিতা, আদিত্য, মার্তন্ড, দিনমনি, দিননাথ, দিবাবসু, অর্ক, অংশু, কিরণমালী, অরুণ, মিহির, পুষা, সূর, মিত্র, দিনপতি, বালকি, অর্ষমা
পৃথিবী = ধরা, ধরাধাম, ধরণী, ধরিত্রী, ভুবন, ভূ, বসুধা, বসুন্ধরা, বিশ্ব, পৃথিবী, দুনিয়া, জগত, সংসার, সৃষ্টি, মর্ত, মর্তধাম, মহী, মেদিনী, অবনী, স্থলভাগ, ভূ-মণ্ডল, ইহলোক
আলো = বাতি, প্রদীপ, জ্যোতি, কিরণ, দীপ্তি, প্রভা,
সাগর = সমুদ্র, বারিধি, পারাবার, পাথার, বারীন্দ্র, অর্ণব, সিন্ধু, জলনিধি, জলধি, জলধর, সায়র, জলাধিপতি, রত্নাকর , বরুণ, দরিয়া, বারীন্দ্র, বারীশ, পয়োনিধি, তোয়ধি, বারিনিধি, অম্বুধি
অগ্নি = আগুন, জ্বালানি, তেজ, শিখা, অনল, বহ্নি, হুতাশন, পাবক, দহন, সর্বভূক, বৈশ্বানর, কৃশানু, বিভাবসু, সর্বশুচি
পর্বত = পাহাড়, অচল, অদ্রি, গিরি, ভূধর, শৈল, অটল, চূড়া, নগ, শৃঙ্গী, শৃঙ্গধর, মহীধর, মহীন্দ্র
সোনা= স্বর্ণ, কনক, কাঞ্চন, সুবর্ণ, হেম, হিরণ্য, হিরণ
বন = কানন অরণ্য, জঙ্গল, বিপিণ, কুঞ্জ, কান্তার, অটবি, বনানী, গহন
পাখি = পক্ষী, খেচর, বিহগ, বিহঙ্গ, বিহঙ্গম, পতত্রী, খগ, অণ্ডজ, শকুন্ত, দ্বিজ
আকাশ = গগন, অম্বর, নভঃ, ব্যোম, ঊর্ধ্বলোক, মেঘমণ্ডল, আসমান, নভোমণ্ডল, খগ, অন্তরীক্ষ
অন্ধকার = আঁধার, তমসা, তিমির, তমঃ, তমিস্রা, আন্ধার, তমস্র
ঈশ্বর = সৃষ্টিকর্তা, ভগবান, বিধাতা, বিষ্ণু, আল্লাহ, খোদা, বিশ্বপতি, পরমাত্মা, জগদীশ্বর, আদিনাথ
দেবতা = অমর, দেব, সুর, ত্রিদশ, অজর, ঠাকুর
জল = পানি, অম্বু, জীবন, নীর সলিল, বারি, উদক, পয়ঃ, তোয়, অপ, জীবন, পানীয়
বৃক্ষ = গাছ, শাখী, বিটপী, অটবি, দ্রুম, মহীরূহ, তরু, পাদপ
বায়ু = বাতাস, অনিল, পবন, হাওয়া, সমীর, সমীরণ, মারুত, গন্ধবহ
চাঁদ = চন্দ্র, নিশাকর, বিধু, শশধর, শশাঙ্ক, সুধাংশু, হিমাংশু, চন্দ্রমা, শশী, সুধাকর, সোম, ইন্দু, নিশাকান্ত, মৃগাঙ্ক, রজনীকান্ত
মানুষ = লোক,মানব, মনুষ্য, , জন, নৃ, নর
মৃত্যু = ইন্তেকাল, ইহলীলা-সংবরণ, ইহলোক ত্যাগ, চিরবিদায়, জান্নাতবাসী হওয়া, দেহত্যাগ, পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, পরলোকগমন, লোকান্তরগমন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ, স্বর্গলাভ
মহৎ = উন্নত, উদার, মহান, বড়, বিশিষ্ট, বিশাল, বৃহৎ, মস্ত, মহানুভব, বদান্য, মহীয়ান পণ্ডিত = বিদ্বান, জ্ঞানী, বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ
চালাক = চতুর, বুদ্ধিমান, নিপুণ, কুশল, ধূর্ত, ঠগ, সপ্রতিভ
সাহসী = অভীক, নির্ভীক
অপূর্ব =আশ্চর্য, অলৌকিক, অপরূপ, অভিনব, বিস্ময়কর, আজব, তাজ্জব, চমকপ্রদ, অবাক করা, মনোরম, অদ্ভুত, সুন্দর
উত্তর = জবাব, প্রতিবাক্য, মীমাংশা, সাড়া, সিদ্ধান্ত
কপাল = ললাট, ভাল, ভাগ্য, অদৃষ্ট, নিয়তি, অলিক
ইচ্ছা = আকাঙ্ক্ষা, অভিলাষ, অভিরুচি, অভিপ্রায়, আগ্রহ, স্পৃহা, কামনা, বাসনা, বাঞ্চা, ঈপ্সা, ঈহা
পর্দা = আড়াল, পরদা, পর্দা, যবনিকা, মশারি, অভিনয়শেষ, অবগুণ্ঠন, আবরণ, ছদ্মবেশ, ত্তড়, আচ্ছাদন, প্রাবরণ, মুড়ি, বিছানার চাদর,
ঝিল্লী, জীবদেহের ঝিল্লি, উদ্ভিদ্দেহের ঝিল্লি
মাটি = ক্ষিতি, মৃত্তিকা
উত্তম = সেরা, শ্রেষ্ঠ, প্রকৃষ্ট, ভালো, অগ্রণী, অতুল
দৃষ্টান্ত = উদাহরণ, নিদর্শন, নজির, নমুনা, উল্লেখ, অতিষ্ঠা
একতা = ঐক্য, ঐক্যবদ্ধ, মিলন, একত্ব, অভেদ, সংহতি, একাত্মতা, একীভাব
পূর্ণ = সম্পূর্ণ, আস্ত, গোটা, অক্ষত, অখন্ড, সমগ্র, সমাগ্রিক
আদি = প্রথম, প্রাচীন, মূল, আরম্ভ, অগ্র, পূর্ব,
আইন = নিয়ম, কানুন, বিধি, বিধান, ধারা, অনুবিধি। বিহিতক, অধিনিয়ম, উপবিধি, বিল, নিয়মাবলি, বিধিব্যবস্থা
আসল = প্রকৃত, খাঁটি, মূলধন, মৌলিক, মূল, যথার্থ
আনন্দ = সুখ, হাসি, খুশি, হাসিখুশি, মজা, হর্ষ, হরষ, পুলক,স্ফূতর্ত, সন্তোষ, পরিতোষ, প্রসন্নতা, আমোদ, প্রমোদ, উল্লাস, তুষ্টি
দু:খ = কষ্ট, মেহনত, যন্ত্রনা, ক্লেশ, আয়াস
অবস্থা = দশা, রকম, প্রকার, গতিক, হাল, স্তিতি, অবস্থান, পরিবেশ, ঘটনা, ব্যাপার, প্রসঙ্গ, হালচাল
অক্ষয় = ক্ষয়হীন, চিরন্তন, নাশহীন, অশেষ, অনন্ত, অব্যয়, অবিনাশী, অলয়, অনশ্বর, লয়হীন, অমর, স্থায়ী
খ্যাতি = যশ, প্রসিদ্ধি, সুখ্যাতি, সুনাম, নাম, সুবাদ, প্রখ্যাতি, সুযশ, বিখ্যাতি, নামযশ, নামডাক, প্রখ্যা, প্রচার, হাতযশ, প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা।
কুল = বংশ, গোত্র, জাতি, বর্ণ, গণ, সমূহ, অনেক, যূথ, জাত, শ্রেণী,
ফুল = পুষ্প, কুসুম, প্রসূন, রঙ্গন
পদ্ম = কমল, উৎপল, সরোজ, পঙ্কজ, নলিন, শতদল, রাজীব, কোকনদ, কুবলয়, পুণ্ডরীক, অরবিন্দ, ইন্দীবর, পুষ্কর, তামরস, মৃণাল, সরসিজ, কুমুদ
মেঘ = জলধর, জীমৃত, বারিদ, নীরদ, পয়োদ, ঘন, অম্বুদ, তায়দ, পয়োধর, বলাহক, তোয়ধর
বিদ্যুত = বিজলী, ত্বড়িৎ, ক্ষণপ্রভা, সৌদামিনী, চপলা, চঞ্চলা, দামিনী, অচিরপ্রভা, শম্পা
নদী = তটিনী, স্রোতস্বিনী, স্রোতস্বতী, তরঙ্গিনী, প্রবাহিনী, শৈবালিনী, গাঙ, স্বরিৎ, নির্ঝরিনী, কল্লোলিনী
নৌকা = নাও, তরণী, জলযান, তরী
তীর = কূট, তট, সৈকত, কূল, পাড়, পুলিন, ধার, কিনারা
ঢেউ= তরঙ্গ, ঊর্মি, লহরী, বীচি, মওজ
রাত = রাত্রি, রজনী, নিশি, যামিনী, শর্বরী, বিভাবরী, নিশা, নিশিথিনী, ক্ষণদা, ত্রিযামা
দিন = দিবস, দিবা, দিনমান
দেহ = গা, গতর, গাত্র, তনু, শরীর, বিগ্রহ, কায়, কলেবর, অঙ্গ, অবয়ব, , কাঠামো, আকৃতি
ঘর = গৃহ, আলয়, নিবাস, আবাস, আশ্রয়, নিলয়, নিকেতন, ভবন, সদন, বাড়ি, বাটী, বাসস্থান
ধন = অর্থ, বিত্ত, বিভব, সম্পদদেহ,
দ্বন্দ্ব = বিরোধ, ঝগড়া, কলহ, বিবাদ, যুদ্ধ
নারী = অবলা, কামিনী, মহিলা, স্ত্রীলোক, রমণী, ললনা, অঙ্গনা, ভাসিনী, কান্তা, সীমন্তনী
স্ত্রী = পত্নী, জায়া, সহধর্মিণী, ভার্যা, বেগম, বিবি, বধূ, অর্ধাঙ্গী, জীবন সাথী, বউ, গৃহিণী, গিন্নী
পিতা = বাবা, আব্বা, জনক,
মাতা = মা, গর্ভধারিণী, প্রসূতি, জননী, জন্মদাত্রী
পুত্র = ছেলে, তনয়, নন্দন, সুত, আত্মজ
কন্যা = মেয়ে, দুহিতা, দুলালী, আত্মজা, নন্দিনী, পুত্রী, সূতা, তনয়া
কোকিল = পরভৃত, পিক, বসন্তদূত
গরু = গো, গাভী, ধেনু
রাজা = নৃপতি, নরপতি, ভূপতি, বাদশাহ
স্বর্গ = দেবলোক, দ্যুলোক, বেহেশত, সুরলোক, দ্যু, ত্রিদশালয়, ইন্দ্রালয়, দিব্যলোক, জান্নাত
বিলাস = আরাম, শৌখিনতা
উঁচু = লম্বা, দীর্ঘ, মহৎ, বড় বড়, উঁচা, উচ্চ, তুঙ্গ, সমুন্নত, আকাশ-ছোঁয়া, গগনচূম্বী, অভ্রভেদী, অত্যুচ্চ, সুউচ্চ
অক্লান্ত = ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন, নিরলস, অনলস, পরিশ্রমী, অদম্য, উদ্যমী, অশ্রান্ত
অবকাশ = সময়, ফূসরত, অবসর, ছুটি, সুযোগ, বিরাম
সাপ = অহি, আশীবিষ, নাগ, ফণী, ভুজঙ্গ, সর্প, উরহ, নাগিনী, ভুজগ, ভুজঙ্গম, সরীসৃপ, ফণাধর, বিষধর, বায়ুভুক
হাতি = হস্তী, করী, দন্তী, মাতঙ্গ, গজ, ঐরাবত, দ্বিপ, দ্বিরদ, বারণ, কুঞ্জর
ঘোড়া = অশ্ব, ঘোটক, তুরগ, বাজি, হয়, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম
হাত = কর, বাহু, ভুজ, হস্ত, পাণি
চুল = অলক, কুন্তল, কেশ, চিকুর
চোখ = অক্ষি, চক্ষু, নয়ন, নেত্র, লোচন, আঁখি, দর্শনেন্দ্রিয়
কান = কর্ণ, শ্রবণ
লাল = লোহিত, রক্তবর্ণ
class="sansserif">

মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১৮

সন্ধি


Girl in a jacket

প্রশ্ন: সন্ধি বলতে কী বোঝো? সন্ধি কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা করো।.


উত্তর: পাশাপাশি দুটি ধ্বনি দ্রুত উচ্চারণকালে সম্পূর্ণ বা আংশিক মিলিত হয় অথবা একটি লোপ পায় কিংবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়, এরূপ পরিবর্তন, লোপ বা মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়; গৈ + অক = গায়ক; নে + অন = নয়ন; ষট + আনন = ষড়ানন।

সন্ধির প্রকারভেদ: বাংলা ভাষায় সন্ধি তিন প্রকার। যেমন:
১. স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে স্বরসন্ধি হয়। যেমন: নর + অধম = নরাধম; শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।
২. ব্যঞ্জন সন্ধি: ব্যঞ্জন ধ্বনির সথে স্বরধ্বনি অথবা ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জন ধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। যেমন: তত্ + অন্ত = তদন্ত; সত্ + জন = সজ্জন।
৩. বিসর্গ সন্ধি: বিসর্গের সঙ্গে স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জন বর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন: মনঃ+যোগ=মনোযোগ; পুনঃ+আয় =পুনরায়।
এ ছাড়া খাঁটি বাংলা সন্ধি আছে। যেমন: দিন+এক = দিনেক; আধা+উলি = আধুলি।



প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা লেখ।

উত্তর: সন্ধির প্রয়োজনীয়তা: সন্ধি ভাষার শ্রুতিমধুরতা আনে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সন্ধির ফলে ভাষা সংক্ষিপ্ত হয়। তা ছাড়া সন্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ গঠন করা হয়। ফলে ভাষা নির্মাণে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। অনেকে বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন না। বাংলা উচ্চারণরীতির সঙ্গে বাংলা সন্ধির নিয়ম জড়িত। সংস্কৃতের অনুসরণে বাংলা ভাষায় সন্ধি এসেছে। সংস্কৃত শব্দের সন্ধি সংস্কৃত নিয়ম অক্ষুণ্ন রেখেই বাংলা ভাষায় প্রচলিত। সাধারণত তত্সম শব্দের সঙ্গে তত্সম শব্দের সন্ধি হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের সন্ধি করা বিধেয় না। সন্ধি উচ্চারণের সরলীকরণ করে, ভাষার সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতি নিশ্চিত করে। সুতরাং, সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।




প্রশ্ন: সন্ধি কাকে বলে? সন্ধির সাহায্যে কীভাবে শব্দ গঠন করা যায়, উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: সন্ধি অর্থ মিলন। পরস্পর সন্নিহিত দুটি বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধিতে পূর্বপদের বর্ণের সঙ্গে পরপদের প্রথম বর্ণের মিলন ঘটে। যেমন: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।

সন্ধির সাহায্যে শব্দ গঠনে পদ্ধতি: সন্ধির কাজ হচ্ছে বর্ণের সঙ্গে বর্ণ মিলিয়ে নতুন শব্দ গঠন করা। যেমন: নরাধম। এখানে ‘নর’ এবং ‘অধম’—এ দুটি পদের মিলন হয়েছে। ‘নর’-এর অন্ত্যস্বর ‘অ’ আর ‘অধম’-এর আদ্যস্বর ‘অ’ উভয়ে মিলে আ-কার হয়েছে। আর এই ‘আ’-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হওয়ার ফলে নতুন শব্দ ‘নরাধম’ সৃষ্টি হয়েছে। অনুরূপভাবে, অ বা আ-কারের পর ই-কার থাকলে ‘অ’ বা ‘আ’-এর স্থানে এ-কার হয়। এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন: শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা। এমনিভাবে পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি নতুন শব্দ গঠন করে।


一一一一一一
mozahid
00/7/2018,

সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম গুলো

Girl in a jacket

১. বিশেষ্য পদ কাকে বলে ? উদাহরণ সহ বিশেষ্যপদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।
২. সর্বনাম বলতে কি বোঝ ?র্সবনামক কতভাগে করা যায় ? উদাহরণসহ লেখ।(চট্রা-১৬,ঢা-১৭,বরি-১৭)
৩.ক্রিয়া বলতে কী বুঝ? বাংলা ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।(ঢা-১৬,কু-১৭)
৪.সমাপিকা ও অসমাক্রিয়া ক্রিয়ার পার্থক্য উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম সমূহ:

১। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম লেখ।
অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

উত্তর : বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :

ক) যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন িবা ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।
খ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।
গ) সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।
ঘ) শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ) সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন ি বা ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।



২। ণত্ব বিধান কী? ণত্ব বিধানের সূত্রগুলো লেখ।
বা, ণত্ব বিধান কী? উদাহরণসহ ণত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।


উত্তর : যে রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানানে মূর্ধন্য (ণ) হয়, তাকে ণত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ণ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।
ক) তৎসম শব্দের বানানে ঋ, র এবং ষ এর পরে ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—চরণ, মরণ, ঋণ, তৃণ, ক্ষীণ, জীর্ণ।
খ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রে ট-বর্গীয় বর্ণের পূর্বে ‘ণ’ বসে। যেমন—বণ্টন, লুণ্ঠন, কণ্ঠ, খণ্ড, ভণ্ড, মুণ্ড, কুণ্ড।
গ) প্র, পরি, নির এই তিনটি উপসর্গের পর সাধারণত ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—প্রণয়, প্রণাম, পরিণয়, নির্ণয়।
ঘ) নার, পার, রাম, রবীন্দ্র, চন্দ্র, উত্তর ইত্যাদি শব্দের পর ‘অয়ন’ বা ‘আয়ন’ থাকলে তার পরের ‘ন’ ধ্বনিটি ‘ণ’ হয়। যেমন—নারায়ণ, পরায়ণ, রামায়ণ, রবীন্দ্রায়ণ, চন্দ্রায়ণ, উত্তরায়ণ ইত্যাদি।
ঙ) র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ূ), র-ফলা ( ্র)- এর পর ধ্বনি ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য, য়, হ, ং থাকে, তবে তার পরে ‘ণ’ হবে। যেমন—শ্রাবণ, অর্ণব, গ্রহণ, দ্রবণ।


৩। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও য-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম নিয়মগুলোর মধ্যে পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম ৫টি নিয়ম হলো :

ক) সমাসবদ্ধ পদে দুই পদের পূর্ব পদে ঋ র ষ থাকলেও পরপদে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন—ত্রিনয়ন, ত্রিনেত্র, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার ইত্যাদি।
খ) ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন—অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন ইত্যাদি।
গ) বাংলা ক্রিয়াপদের আন্তঃস্থিত ন ণ হয় না। যেমন—হবেন, মারেন, যাবেন, করেন, খাবেন ইত্যাদি।
ঘ) আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দে ষ হয় না। যেমন—জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট ইত্যাদি।
ঙ) সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয়যুক্ত পদেও ষ হয় না। যেমন—অদ্বিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।


৪। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের যেকোনো ৫টি নিয়ম লেখ।

উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের ৫টি নিয়ম দেওয়া হলো :
ক) এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।
খ) যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ, উ, ঊ উভয় শুদ্ধ। কেবল যেসব শব্দে ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন ি ু হবে। যেমন—তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পাঞ্জি, পলি ইত্যাদি।
গ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জ্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য ইত্যাদি।
ঘ) সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) হবে। যেমন—অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, সংঘটন, শুভংকর ইত্যাদি।
ঙ) সংস্কৃত ইন্ প্রত্যায়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলোতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন—গুণী-গুণিজন, প্রাণী-প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী-মন্ত্রিপরিষদ ইত্যাদি।


৫। বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

উত্তর : বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :
ক) অ-তৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা হবে না। যেমন—অঘ্রাণ, ইরান, কান, কোরান, গভর্নর ইত্যাদি।
খ) বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন—কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশত, শখ ইত্যাদি।
গ) বাংলায় বিদেশি শব্দের আদিতে বর্ণবিশেষ সম্ভব নয়। এগুলো যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন—স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং ইত্যাদি।
ঘ) হস-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন—কলকল, করলেন, কাত, চট, জজ, ঝরঝর ইত্যাদি।
ঙ) ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন—বলে, হয়ে, দুজন, চাল ইত্যাদি।



৬। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী শ, ষ, স সম্পর্কিত বানানের ৫টি নিয়ম লেখ।

উত্তর : নিম্নে বাংলা শব্দে শ, ষ, স-এর ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখা হলো :
ক) ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আসা বিদেশি sh. tion. ssion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন—সেশন, স্টেশন।
খ) বিদেশি শব্দের উচ্চারণে ‘ং’ ধ্বনির ক্ষেত্রে স ব্যবহৃত হবে। যেমন-ক্লাস, অফিস।
গ) বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহৃত হয় না। যেমন—স্মার্ট, পোশাক।
ঘ) ঋ-কারের পরে মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন—ঋষি, ঋষভ।
ঙ) ট-বর্গীয় ধ্বনির পূর্বে মূর্ধন্য ষ যুক্ত হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ।


৭। ষ-ত্ব বিধান কী? ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

উত্তর : যে রীতি অনুসারে তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ষ ব্যবহৃত হয়, তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ষ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষত্ব বিধান।
নিচে ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো :
ক. তৎসম শব্দের বানানে র, ঋণ বা ঋ-কারের ( ৎ) পর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন—ঋষি, কৃষি, মহর্ষি।
খ. অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি এবং ক ও র-এর পরে স থাকলে তা ষ হয়। যেমন—ভবিষ্যৎ, মুমূর্ষু, ঊষা ইত্যাদি।
গ. ট, ঠ এই দুটি মূর্ধন্য বর্ণের পূর্বে সর্বদা ‘ষ’ হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, দুষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ।
ঘ. ক, খ, প, ফ—এসব বর্ণের আগে ইঃ (ঃি বা উঃ ু ঃ) থাকলে সন্ধির বিসর্গের জায়গায় সর্বদা মূর্ধন্য-ষ বসবে। যেমন—পরি+কার = পরিষ্কার, আবিঃ + কার = আবিষ্কার, নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ, দুঃ+কর = দুষ্কর, চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ।
ঙ. ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতকগুলো ধাতুতে ‘ষ’ হয়। যেমন—অভিষেক, পরিষদ, অনুষঙ্গ, অনুষ্ঠান।


৮। বাংলা বানান ই-কার (ি) ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদারহণসহ লেখ।

উত্তর : বাংলা বানানে ই-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো :
ক. যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ-কার শুদ্ধ সেসব শব্দে ই-কার হবে। যেমন—চুল্লি, তরণি, পদবি, নাড়ি, মমি, ভঙ্গি ইত্যাদি।
খ. সব অ-তৎসম শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—খুশি, পাখি, শাড়ি ইত্যাদি।
ঘ. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন—বর্ণালি, গীতালি, সোনালি, রূপালি ইত্যাদি।
ঙ. পদাশ্রিত নির্দেশক হলে ই-কার বসবে। যেমন—ছেলেটি, বইটি, কলমটি, মেয়েটি ইত্যাদি।


৯। বাংলা বানানে উ-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখ।>
উত্তর :
ক. অ-তৎসম শব্দে উ-কার বসবে। যেমন—কুমির, খুশি, টুপি, বুড়ি ইত্যাদি।
খ. মূল সংস্কৃত শব্দে উ-কার থাকলে তদ্ভব শব্দে উ-কার হবে। যেমন—পূজা-পুজো, পূর্ব-পুব ইত্যাদি।
গ. বিদেশি শব্দে উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—কুর্দি, সুন্নি, কুরআন ইত্যাদি।
ঘ. ক্রিয়াবাচক শব্দে উ-কার হয়। যেমন—আসুন, করুন, ঘুরা, বসুন, ভাবুন ইত্যাদি।
ঙ. প্রত্যয়ান্ত শব্দযোগে উ-কার হয়। যেমন—পটুয়া, রাঁধুনি, হাতুড়ে, পিসতুতো ইত্যাদি।


১০। বাংলা বানানে আ-কার (া) ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো লেখো।

উত্তর : বাংলা বানানে আ-কার ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো নিম্নরূপ :
ক. অ-কার বা আ-কারের পর অ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়। যেমন—হিম + আলয় = হিমালয়, সিংহ + আসন = সিংহাসন ইত্যাদি।
খ. আ-কারের পর ই-কার বা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ কার হয়। যেমন—মহা+ ঈশ= মহেশ।
গ. আ-কারের পর উ-কার বা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়। যেমন—গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি।




১১,প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের ছয়টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
অথবা,
বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।

উত্তর : বানান ব্যাকরণের একটি বিবর্তনশীল অধ্যায়। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা বানান আজকের পর্যায়ে এসেছে। বানানের এই পরিবর্তনের ধারায় বাংলা একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম থেকে ছয়টি নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো :

ক) তৎসম শব্দের বানান অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নদী, ভাষা ইত্যাদি।
খ) যেসব তৎসম শব্দের বানানে ই এবং ঈ বা এদের কার চিহ্ন অথবা উ এবং ঊ বা এদের কার চিহ্নের উভয় রূপই শুদ্ধ, সেসব শব্দের বানানে কেবল শুধু ই এবং উ বা এদের কার চিহ্ন বসবে। যেমন : বাড়ি, উনিশ ইত্যাদি।
গ) তৎসম এবং অতৎসম শব্দে কোথাও রেফের পরে দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্জন, অর্চনা, ধর্ম, কীর্তন ইত্যাদি।
ঘ) শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : ক্রমশ, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ) সন্ধি দ্বারা গঠিত শব্দে ক খ গ ঘ এর আগে ং এবং ঙ দুটোই শুদ্ধ। যেমন : অহঙ্কার/অহংকার, সঙ্গীত/সংগীত ইত্যাদি।
চ) নঞর্থক অব্যয় পদ আলাদাভাবে বসবে। যেমন : জানি না, দেখি নি ইত্যাদি।


১২.প্রশ্ন : ণ-ত্ব বিধান কাকে বলে? ণ ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

উত্তর : ণ-ত্ব বিধান : যে বিধান অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানান 'ন' (দন্ত্য ন)-এর স্থানে 'ণ' (মূর্ধন্য ণ) ব্যবহৃত হয়, তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ণ-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণ-ত্ব বিধান। যেমন : ঋণ, মরণ, ভীষণ ইত্যাদি।
ণ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম:
১) সাধারণভাবে তৎসম শব্দে ঋ, র, ষ-এর পরে মূর্ধন্য ণ ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- ঋণ, রণ, উষ্ণ ইত্যাদি।
২) র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ৃ), র-ফলা ( ্র) অথবা 'ক্ষ'-এর পরে যদি ক-বর্গের
৫টি (ক খ গ ঘ ঙ) এবং প-বর্গের ৫টি (প ফ ব ভ ম) এবং য য় হ- এই ১৩টি বর্গের যেকোনো একটি বা দুটি বর্ণ আসে, তবে তার পরে মূর্ধন্য (ণ) হবে।
উদাহরণ- অপরাহ্ন, পরায়ণ, রোপণ, গৃহিণী, প্রাঙ্গণ ইত্যাদি।

৩) ট-বর্গের ট ঠ ড ঢ- এই চারটি বর্ণের পূর্বে যদি ন্ ধ্বনি থাকে এবং ওই 'ন' ধ্বনি-সহযোগে যদি যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, তা হলে তা সর্বদা মূর্ধন্য (ণ) হবে। উদাহরণ-কণ্টক, কণ্ঠ, দণ্ড, বণ্টন ইত্যাদি।

৪) উত্তর, পর, পার, রবীন্দ্র, চন্দ্র, নার শব্দের পরে 'অয়ন'/'আয়ন' শব্দ হলে দন্ত্য ন-এর পরিবর্তে মূর্ধন্য ণ হয়। উদাহরণ- উত্তর+আয়ন=উত্তরায়ণ, পর+আয়ন=পরায়ণ, পার+আয়ন=পারায়ণ, রবীন্দ্র+আয়ন=রবীন্দ্রায়ণ, নার+আয়ন=নারায়ণ ইত্যাদি।
৫) পরি, প্র, নির- এই তিনটি উপসর্গের পরে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। উদাহরণ- পরিণত, প্রণাম, নির্ণয় ইত্যাদি।



১৩,প্রশ্ন : ষ-ত্ব বিধান কাকে বলে? ষ ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

উত্তর : ষ-ত্ব বিধান :বানানে ষ প্রযুক্ত হবে কি না,তা যে বিধান দ্বারা নির্দেশ করা হয়, তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে।ষ-ত্ব বিধান পাঠে আমরা জানতে পারি কোথায় ষ বসবে, কোথায় বসবে না। ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম:
ক) অ, আ ছাড়া বাদবাকি সব স্বরবর্ণ ও তাদের কার চিহ্নে পরে ষ্ক বসে। যেমন : আবিষ্কার, ভীষণ, পুরুষ, ভূষণ, কৃষি, শেষ, দোষ, ঔষধ, পৌষ ইত্যাদি।
খ) ট এবং ঠ-এর আগে ষ বসে। যেমন : কষ্ট, অষ্টম, বৃষ্টি, নিষ্ঠা।
গ) কিছু কিছু শব্দে স্বভাবতই ষ বসে। যেমন : ভাষা, ভাষণ, আষাঢ়, বর্ষা, আভাষ, অভিলাষ ইত্যাদি।
ঘ) যে শব্দটি তৎসম নয়, তা হোক দেশি বা বিদেশি যেকোনো ভাষা থেকে আগত, সেই শব্দের বানানে কখনোই ষ বসবে না, স বা শ বসবে। যেমন : স্টোর, ফটোস্ট্যাট, স্টেশন, পোশাক ইত্যাদি।
ঙ) সাৎ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ষ বসে না, স বসে। যেমন : অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।


রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮

কার ও ফলা চিহ্ন সংক্ষিপ্ত পরিচয়


বাংলা ২য় পত্র

প্রশ্ন: কার ও ফলা কাকে বলে কার ও ফলার বিস্তারিত বর্ণনা দাও
উত্তর:- বাংলা স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে `কার' বলা হয় । ‘অ’ ভিন্ন স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে । স্বরবর্ণের এ ধরনেরসংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় ’কার” । স্বরবর্ণের কার চিহ্ন ১০টি । যথা :

আ -কার (া ) :মা , বাবা ঢাকা ‍ৃ- কার (ৃ): কৃষক তৃণ পৃথিবী
ই-কার ( ি) : কিনি ,চিনি . মিমি এ- কার ( ে ) : চেয়ার , টেবিল মেয়ে
ঈ- কার ( ী ): শশী , সীমান্ত, রীতি ঐ-কার ( ৈ ) :তৈরি ,বৈরী, হৈচৈ
উ- কার ( ‍ু) :কুকুর , পুকুর . দুপুর । ও -কার ( ে া ) : খোকা, পোকা , বোকা ।
ঊ- কার (ূ) : ভূত, মূল্য , সূচি ঔ-কার ( ৌ) :নৌকা, মৌসুমী ,পৌষ




ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলা হয়। বাংলায় ফলা চিহ্ন ৭ টি

য-ফলা (্য) : ব্যাঙ,খ্যাতি,সহ্য । ন-ফলা (ন /ন): বিভিন্ন, যত্ন, রত্ন
ব-ফলা (‍্ব) :পক্ব,বিশ্ব , অশ্ব । ণ-ফলা (ণ):পুবাহ্ণ অপরাহ্ণ
ম-ফলা (ম): পদ্ম,সম্মান , স্মরণ ল-ফলা (ল) :ক্লান্ত, ম্লান , অম্ল
র -ফলা (্র): প্রমাণ,শ্রান্ত,ক্রয় -----

প্রশ্ন: গুরুচণ্ডালী দোষ কাকে বলে ?গুরুচণ্ডালী দোষ দূষণীয় কেন? উদাহরণসহ বিশ্লেষন করো
অথবা
ভাষায় সাধু ও চলিতরীতির মিশ্রণ দূষণীয়, ইহা বর্জন অবশ্যই কর্তব্য।’—আলোচনা করো।

উত্তর: গুরুচণ্ডালী দোষ: বাংলা ভাষার দুটি রূপ আছে। তার মধ্যে একটি সাধু এবং অপরটি চলিত। উভয়রীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। তাই একই রচনায় সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ অসংগত ও অশুদ্ধ। ভাষারীতির এ অশিষ্ট প্রয়োগকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণের ফলে ভাষা প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে কলুষিত হয়ে পড়ে। তাই সাধু ও চলিতরীতির মিশ্রণ দূষণীয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এ জন্য উভয়রীতির মিশ্রণ পরিহার করা অবশ্যই কর্তব্য। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে !!
যেমন- গরুর গাড়ি চলিত ভাষা সে স্থলে গরুর শকট ,শবদাহ স্থলে শবপোড়া ।



প্রশ্ন: ব্যাকরণ কাকে বলে ? ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।

উত্তর: সংজ্ঞা: ‘ব্যাকরণ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ। ভাষা বিশ্লেষণ করাই ব্যাকরণের কাজ। সুতরাং যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।

ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে শাস্ত্রকে বলে সে ভাষার ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা: পৃথিবীর প্রতিটি ভাষা একটি শৃঙ্খলা ও নিয়মবিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ভাষার এ নিয়মবিধি জানার জন্যই ব্যাকরণ পাঠ অপরিহার্য। একটা ভাষা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করার জন্যই সে ভাষার ব্যাকরণ জানতে হবে। ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেগুলোর সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগবিধি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যায়। এ ছাড়া ব্যাকরণ জানা থাকলে লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ সহজতর হয়। বাগধারা, ছন্দ ও অলংকার প্রকরণও ব্যাকরণের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। কাজেই ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮

প্রবন্ধ

গ্রীষ্মের দুপুর


ভুমিকা :
গ্রীষ্মের দুপুর মানেই সূর্যের প্রচন্ড তাপদাহ। খাঁ খাঁ রোদ্দুর, তপ্ত বাতাসের আগুনের হলকা ।সবুজ পাতা নেতিয়ে পড়ার দৃশ্য। বটের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া রাখাল ছেলে। চারদিকে নিঝুম , নিস্তব্ধ,ঝিমধরা প্রকৃতি। ঘামে দরদর তৃ্ষ্ণার্ত পথিক। কবির ভাষায় :

ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে

খাল বিল চৌচির জল নেই পুকুরে।

মাঠে ঘাটে লোক নেই খাঁ খাঁ রোদ্দুর

পিপাসায় পথিকের ছাতি কাঁপে দুদ্দুর।

গ্রীষ্মের দুপুরের অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য এটি ।রুক্ষ,শুষ্ক ,বৈচিত্র্যহীন,নিপাট দিনের স্থিরচিত্র।গ্রামের কোনো পুকুরঘাটে ,কুয়োতলায়,নদীর তীরে,বিস্তীর্ন চরাচরে রোদ প্রকৃতির দিকে তাকালে গ্রীষ্মের দুপুরের রূপ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

গ্রীষ্মের দুপুরে প্রকৃতির অবস্থা :

চৈত্রের কাঠফাটা রোদে গ্রীষ্মের পদধ্বানি শোনা যায়।বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠ এলে সেই তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়।সূর্যের প্রখোর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে ওঠে।সবজির নধর পাতা খরতাপে নুয়ে পড়ে।মাঝে মাঝে ঘূর্ণি হাওয়ায় ধুলো ওড়ে, ঝরে পড়ে গাছের হলুদ পাতা।দূর আকাশে পাখনা মেলে চিল যেন বৃষ্টিকে আহবান জানায়।পাতার আড়ালে ঘুঘু পাখির উদাস–করা ডাক শোনা যায়।প্রকৃতি যেন পরিশ্রান্ত হয়ে নিঝুম মুহূর্তগুলো কাটাতে থাকে।পুকুর ঘাটে তৃষ্ণার্ত কাক, গাছের ছায়ায় পশু পাখির নি:শব্দ অবস্থান গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পরিচিত দৃশ্য।

গ্রীষ্মের দুপুরে জনজীবন :

গ্রীষ্মের দুপুর মানবজীবনেও নিয়ে আসে নিশ্চলতার আমেজ।কর্মব্যস্ত জীবনে আসে অবসাদ।মাঠে-ঘাটে জীবনের সাড়া যায় কমে।প্রচন্ড রোদের মধ্যে যারা কাজ করে, তাদের মাথায় থাকে মাখাল।কর্মমুখর দিনে গ্রীষ্মের দুপুরে সময় কিছুটা ধরিগতিতে অগ্রসর হয়। রাখাল ছেলে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।পথিকজন পথের ক্লান্তি ঘোছাতে বিশ্রামের প্রহর গোনে।নি:শব্দ প্রকৃতি আর নীরব মানূষের কাছে গ্রীষ্মের দুপুর জেন স্থির।বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন,কোথাও যেন স্বস্তি নেই,শান্তি নেই।মাঠ-ঘাটন চৌচির,নদী–জলাশয় জলশূন্য।মাঠে মাঠে ধুলোওড়া বাতাস।আগুনঢালা সূর্য,ঘর্মাক্ত দেহ,ক্লান্তি অবসাদে গ্রীষ্মের দুপুর যেন অসহনীয় হয়ে উঠে।মুহূর্তের জন্যে প্রাণ সিক্ত হতে চায়,একটু ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শ পেতে চায় মন।

গ্রীষ্মের দুপুর গ্রামজীবনে নিয়ে আসে বিশ্রামের সুযোগ।কেউ কেউ নির্জন দুপুরে দিবানিদ্রায় ঢলে পড়ে।গৃহীনিরা সংসারের কাজের একটু অবসরে বিশ্রামের সুযোগ খোঁজে।তালপাখার বাতাসে একটু প্রাণ জুড়ায়।শীতের পাটিতে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়।আমবাগানের দুষ্টু ছেলেদের আনাগোনা হয়তো বেড়ে যায়।

গ্রীষ্মের দুপুরে শহরের দৃশ্য অবশ্য অন্যরকম।প্রচন্ড রোদে রাস্তার পিচ গলতে থাকে।রাস্তায় যানবাহনের চলাচল কমে আসে।গলির ঝাঁপখোলা দোকানপাটে ঝিমধরা ভাব।ঘরেবাইরে কর্মের জগৎ হঠাৎ যেন ঝিমিয়ে আসে।অফিস পাড়ার কর্মব্যস্ততা ও এ সময় একটু শিথিল হয়ে আসে।ক্লান্তি ও শ্রান্তি ঘিরে ধরে কর্মচঞ্চল জীবনপ্রবাহকে।গ্রীষ্মের শান্ত দুপুর মনে করিয়ে দেয় ধরিত্রীর সঙ্গে মানুষের জন্ম-জন্মন্তরের সম্পর্কের কথা।অন্য এক উপলদ্ধির জগতে নিয়ে যায় মানুষকে।

উপসংহার : গ্রীষ্মের দুপুরের প্রখর তাপ প্রকৃতি ও জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাব কেবল বাহ্যিক নয় ,অভ্যন্তরীনও।রহস্যময় প্রকৃতির এ যেন এক গোপন আয়োজন। গ্রীষ্মের তপ্ত আকাশে এক সময় দেখা যায় সজল–কাজল মেঘ।নেমে আসে স্বস্তির বৃষ্টি।গ্রীষ্মের দুপুরের ঝিমধরা প্রকৃতি আর নিশ্চল স্থবির জনজীবন,শস্যহীন মাঠ,নদীর ঘাটে বাঁকা নৌকা,রোদ ঝলসানো তপ্ত বাতাসের এই পরিচিত দৃশ্যের কথা এ সময় ভুলে যায় মানুষ।




বর্ষাকাল


ভূমিকা :
বর্ষা বাংলাদেশের আনন্দ –বেদনার এক ঋতু। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দহন শেষে বর্ষা আসে প্রকৃতির আর্শিবাদ হয়ে। একটানা বর্ষণের পর পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে। বর্ষার আগমনে তাই বাংলার প্রকৃতির রূপ ও পালটে যায়। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে গ্রীষ্মের বিবর্ণ প্রকৃতি হয়ে ওঠে কোমল আর সজীব। এ সময় আকাশে সারাক্ষণ চলে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা। এমনকি দিনে কোনো কাজে মন বসে না। বর্ষাঋতুকে নিয়ে কবি লিখেছেন –

ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে
ঘন–গৌরবে নব যৌবনা বরষা
শ্যামা–গম্ভীর সরসা।

বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষাকাল :

ঋতুর গণনা হিসেবে আষাঢ়- শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল।কিন্তু বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয় বৈশাখ থেকে,চলে ভাদ্র–আশ্বিন মাস পযন্ত। সেই হিসাবে বর্ষা বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঋতু। অনেক সময় দেখা যায় শরৎকালকে স্পর্শ করে ও বৃষ্টির কোনো বিরাম নেই।বর্ষার আগমনে তৃষিত পৃথিবী সিক্ত–শীতল হয়ে যায়।
মানুষ,জীবজন্তু,গাছপালা,পশুপাথি সব যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। নদীনালা,খালবিল,মাঠঘাট পানিতে ভরপুর হয়ে যায়।ফোটে কেয়া, কদম ফুল।বর্ষা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ।গাছপালা নতুন পত্রপল্লবে ভরে যায়,উর্বর হয়ে ওঠে ফসলের ক্ষেত।সুখী গৃহবাসী মানুষের কাছে বর্ষার এই ভরভরান্ত দৃশ্য খুবই আনন্দের।ছোট ছেলেমেয়েরা কলার ভেলা বা কেয়াপাতার নৌকা ভাসিয়ে আনন্দ করে।বৃদ্ধরা ঘরে বসে পান–তামাক খায়।কেউবা খোশ গল্পে মেতে ওঠে।

বর্ষাঋতু সাধারণ দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুবই দু:খের।কারণ,অনেক সময় টানা বর্ষণে খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারে না।তাদের আয়–রোজগার বন্ধ থাকে,ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায়।ফলে তাদের দুখ-কষ্টের সীমা থাকে না।অতিবৃষ্টির ফলে নদীভাঙনে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।কৃষেকের ফসলের জমি ভেসে যায়,খেতের ফসল নষ্ট হয়।বানবাসি মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখলে মনে হয় ,বর্ষা এসব মানুষের জীবনে দুর্যোগ ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।

বর্ষার রূপ : বর্ষায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রূপ অন্যরকম হয়ে যায়।আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা চলতে থাকে। কখনো বা আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামে।দু’ তিন দিন হয়তো সূর্যের দেখাই মেলে না।কখনো কখনো শোনা যায় মেঘের গর্জন।একটানা বৃষ্টিতে কোথাও হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে ওঠে ছেলে-বুড়ো।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন –

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে

ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাইরে।’

বর্ষায় পল্লির রূপ :

বর্ষায় পল্লির মাঠ–ঘাট বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়।নদীর দুকূল ছাপিয়ে বর্ষার পানি গ্রামে প্রবেশ করে ।রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়।নৌকা ছাড়া অনেক জায়গায় চলাফেরা করা যায় না।তখন গ্রামগুলোকে মনে হয় নদীর বুকে জেগে ওঠা এক একটা দ্বীপ।বর্ষায় পল্লির দৃশ্য সত্যি অপূর্ব।

বর্ষার অবদান :
বর্ষাকালে আমাদের দেশে কেয়া,কামিনী,কদম, জুঁই,টগর,বেলি,চাঁপা প্রভৃতি ফুলের সুগন্ধে চারপাশ সুরভিত হয়ে ওঠে।অর্থকরী ফসল পাট তখন কৃষকের ঘরে আসে।আউশ ধানের মৌসুম তখন।পেয়ারা,কলা,চালকুমড়া,ঝিঙা,করলা,ঢ়েঁড়শ বরবটি ইত্যাদি ফল ও তরকারি বর্ষারই অবদান ।বর্ষাকালে আমরা প্রচুর মাছ পেয়ে থাকি।এ সময়ে নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত খুব সহজ হয়।

উপসংহার :বর্ষাঋতুর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একটা নিবিড় আত্নীয়তা আছে।সে যোগ কেবল ব্যবহারিক নয়,অন্তরেরও।বর্ষায় বাংলার মানুষের অন্তরও সিক্ত–স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে।প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য মানুষের মনেও গভীর প্রভাব ফেলা যায়।



মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

সাধু চলিত ভাষার পাচঁটি বৈশিষ্ট্য লিখ




প্রশ্ন: সাধু ও চলিত ভাষার মৌলিক পার্থক্যগুলি লেখ ।
প্রশ্ন : সন্ধি ও সমাস কী ? সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য কী ? উদাহরণসহ লিখুন।

সন্ধি: দুটি শব্দ মিলিয়ে একটি শব্দে পরিণত হওয়াকে বা পরস্পর সন্নিহিত দু‘ বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
যেমন, সিংহাসন = সিংহ + আসন

সমাস: বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে ।
যেমন, বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন
সন্ধি ও সমাসের দৃষ্টান্তসহ পাঁচটি মূল পার্থক্য নিচে দেয়া হলোঃ

সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য

নং সাধু ভাষা চলিত ভাষা
১ যে ভাষা ব্যাকরণের নিয়মকানুর পুরোপুরিভাবে মেনে চলে, তাকে সাধু ভাষা বলে। ১.বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহৃত বা মৌখিকভাষাকে চলিত ভাষা বলে।
২. সাধু ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী। ২. চলিত ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী নয়।
৩. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে। ৩ চলিত ভাষায় তদ্ভব, অর্ধতৎসম, ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
৪. সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়। ৪ চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল।
৫. সাধু ভাষা নীরস ও প্রাণহীন ৫.চলিত ভাষা সরস ও জীবন্ত।
৬. সাধু ভাষা কৃত্রিম ৬ চলিত ভাষা কৃত্রিমতা বর্জিত।
৭. গদ্য, সাহিত্য, চিঠিপত্র ও দলীল লিখনে সাধু ভাষার ব্যবহার অধিক। ৭.চলিত ভাষা বক্তৃতা, সংলাপ, আলোচনা ও নাট্য সংলাপের জন্য উপযুক্ত।
নং সন্ধি সমাস
১.পরস্পর সন্নিহিত দু বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে ।যেমন, বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয় । । ১.পরস্পর অর্থ সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদের একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে । যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন ।
২. সন্ধি তিন প্রকার। যথাঃ স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জন্সন্ধি ও বিসর্গ সন্ধি । ২.সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাস ।
৩. সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়। ৩ সমাস ব্যাকরণের রুপতত্ত্বে আলোচিত হয়।
৪. সম্পর্ক শূন্য হলে সন্ধি হয় ।যেমন- মিথ্যা + উক = মিথ্যুক ৪ সম্পর্ক শূন্য হলে সন্ধি হয় কিন্তু সমাস হয় না।যেমন, জমা ও খরচ = জমা-খরচ।
৫. সন্ধিতে বিভক্তি লুপ্ত হয় না । যেমন, হিম + আলয় = হিমালয়, এখানে ‘আ‘ বিভক্তি লুপ্ত হয়নি। ৫.সমাসে বিভক্তি লুপ্ত হয় ।যেমন, ছাত্রের বৃন্দ = ছাত্রবৃন্দ। এখানে ‘র‘ বিভক্তি লুপ্ত হয়ে ছাত্রবৃন্দ হয়েছে।

প্রবন্ধ লেখার নিয়ম কানুন



প্রবন্ধ

রচনা বা প্রবন্ধ লেখার নিয়ম কানুন প্রবন্ধ রচনা রচনা বলতে প্রবন্ধ রচনকে বোঝায়।

‘রচনা’ শব্দের অর্থ কোনো কিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তোলার নামই রচনা । রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা , চিন্তার ধারাবাহিকতা , সংযত বর্ণনা , ভাষার প্রঞ্জলতা ও যুক্তির সৃশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে।

‘প্রবন্ধ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন। ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে । প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

শিক্ষার্থীদের বেলায় রচনা ও প্রবন্ধ কথাটি সমার্থক। শিক্ষার্থীদের রচনায় নতুন কোনো ভাব বা তত্ত্ব থাকে না।একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা মনের ভাব বা বক্তব্যকে প্রকাশ করে। রচনা বা প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারে। এতে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলার দক্ষতা জন্মে। বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য যথার্থ শব্দ প্রয়োগ এবং উপমা, অলংকার ইত্যাদির ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষর্থী সচেতন হয়ে উঠে। প্রকাশের জড়তা কাটিয়ে ওঠা ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবন্ধ- রচনার অনুশীলন প্রয়োজন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি ,অভিজ্ঞতা , ব্যক্তিত্বের প্রকাশের জন্য প্রবন্ধ – রচনা অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই।

রচনার বিভিন্ন অংশ

রচনার প্রধান অংশ তিনটি – ক. ভুমিকা , খ. বিষয়বস্তু, গ.উপসংহার ।

ক.ভুমিকা :

এটি রচনার প্রবেশপথ। একে সূচনা , প্রারম্ভিকা বা প্রাক – কথনও বলা চলে। এতে যে বিষয়ে রচনা হবে, তার আভাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভূমিকা সংক্ষিপ্ত হওয়াই উচিত।

খ. বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য :
বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ।এ অংশে রচনার মূল বিষয়বস্তুর সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্ট করতে হয় ।বিষয় বা ভাবকে পরিস্ফুট করার জন্য প্রয়োজনে ছোট ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা যেতে পারে।তবে লক্ষ রাখতে হবে,অনুচ্ছেদগুলোর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য এ অংশে প্রয়োজনে উদাহরণ ,উপমা , উদ্ধৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

গ. উপসংহার:
বিষয়বস্তু আলোচনার পর এ অংশে একটা সিদ্ধান্তে আসা বলা হয় বলে এটাকে ‘উপসংহার ’ নামে অভিহিত করা হয়।এখানে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত বা অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

রচনার শ্রেণিবিভাগ :

বিষয়বস্তু অনুসারে রচনাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ক. বর্ণনা মুলক রচনা,থ.চিন্তামূলক রচনা।

বর্ণনামূলক রচনার সাধারণত স্থান,কাল,বস্তু,ব্যক্তিগত স্মৃতি –অনুভুতি ইত্যাদি বিষয়ে থাকে।ধান, পাট, শরৎকাল,কাগজ. টেলিভিশন,বনভোজন, শৈশবস্মৃতি ইত্যাদি রচনা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।চিন্তা মূলক রচনায় থাকে সাধারণত তত্ত্ব,তথ্য, ধ্যান–ধারণা,চেতনা ইত্যাদি।শ্রমের মর্যাদা,বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার,পরিবেশদূষণ,অধ্যবসায়,সত্যবাদিতা,চরিত্রগঠন প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনার মধ্যে পড়ে।

প্রবন্ধ- রচনার কৌশল :

১.বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি,রং,ধ্বনি,স্বাদ,গন্ধ,অনুভুতি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে ছবির মতো ফুটিয়ে তুলতে হবে।

২.বর্ণনামূলক রচনা লেখার সময় সময়সীমা এবং পরিসরের কথা মনে রেখে বিশেষ কিছু দিক বেছে নিতে হয় । সেগুলির সাহায্যে মূল বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয় ।

৩. রচনা লেখার সময় পরম্পরা বা ধারাবাহিকতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।চিন্তাগুলো যেন এলোমেলো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। জানা বিষয় ছাড়াও অনেক সময় অজানা বিষয় নিয়ে রচনা লিথতে হতে পারে।বিষয়ের ধারণাগুলো একটির পর একটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ভাবের কোনো অসংগতি না থাকে।

৪.শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রচনার আকার সাধারণত নির্দিষ্ট পরিসরের হয়ে থাকে ।পরিমিত পরিসরে তাই রচনার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অযথা বিষয়কে প্রলম্বিত করা ঠিক নয়। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। এক কথায় রচনা খুব ছোট বা খুব বড় হওয়া উচিত নয়।
৫.প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সন্ধি, সমাসবদ্ধ পদ, অপরিচিত বা অপ্রচলিত শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করা ভালো। বাগাড়ম্বর বা অলংকারবহুল শব্দ ব্যবহার করা হলে অনেক সময় বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষারীতির মাধ্যমে রচনাকে যথাসম্ভব রসমন্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করতে হয়।

প্রবন্ধ রচনায় দক্ষতা অর্জনের উপায় :

প্রবন্ধরচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো সহায়ক হতে পারে :
১. প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর প্রবন্ধ বা রচনা পড়তে হবে।পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ, সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে নানা বিষয়ের ধারণা জন্মায় এবং শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়।এতে লেখা সহজ হয়ে ওঠে।

২. প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।প্রবন্ধের বিষয়বস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ,প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই।একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে,সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

৩.ভাষারীতিতে সাধু এবং চলিত যেন মিশে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।অযথা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য,উদ্বৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪.প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও নিজের বক্তব্যকে আরো জোরালো করার জন্য প্রবাদ- প্রবচন,কবিতার পঙক্তি উদ্বৃতি ইত্যাদি সন্নিবেশ করা চলে।

৫. নিজের অভিজ্ঞতা , শিক্ষা, চিন্তাশক্তি,পঠন- পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপন কৌশল ইত্যাদি প্রয়োগ করে প্রবন্ধকে যথাসম্ভব হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করা উচিত।

বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য

ভূমিকা :
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীতও বসন্ত। এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে। বাংরার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল আলপনা আঁকে অফুরন্ত সৌন্দর্যের।তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে হৃদয়।গ্রীষ্মের দাবদহ,বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি,শরতের আলো–ঝলমলে স্নিগ্ধ আকাশ,হেমন্তের ফসলভরা মাঠ,শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করেছে।

ঋতুচক্রের আবর্তন :
বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান। এ দেশের উত্তরে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা ,দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর। সেখানে মিলিত রয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা ।মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে করে উর্বর , ফুল ও ফসলে করে সুশোভিত। নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি ।সে মাটির প্রাণরসে প্রাণ পায় সবুজ বন- বনানী, শ্যামল শস্যলতা। তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরূপ। নব নব সাজে সজ্জিত হয়ে এ দেশে পরপর আসে ছয়টি ঋতু।এমন বৈচিত্রময় ঋতুর দেশ হয়তো পৃথিবীর আর কোথা ও নেই।

ঋতু পরিচয় :
বর্ষপঞ্জির হিসেবে বছরের বার মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু।বৈশাখ –জৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল,ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল,কার্তিক অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল,পৌষ–মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন–চৈত্র বসন্তকাল ।তবে ঋতুর পালাবদল সবসময় মাসের হিসেব মেনে চলে না।তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না।অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু,আগমন ঘটে নি:শব্দে নতুন কোন ঋতুর।প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা- যাওয়া ।

গ্রীষ্ম :
ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। প্রচন্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়। নদী-নালা খাল –বিল শূকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের হলকা ছুটতে থাকে। ক্লান্তি আর তৃঞ্চায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের। কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ্য আসে ফলের সম্ভার নিয়ে। আম,জাম,কাঁঠাল,আনারস,লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।

বর্ষা:
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা।আকাশে দেখা দেয় সজল-কাজল মেঘ।অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি।পৃথিবীতে প্রাণের সাড়া।আষাঢ়- শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা।কথনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল,পুকুর -নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে। বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়।

সে রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় :
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর
কালি –মাখা মেঘে ওপারে আাঁধার ঘনিয়াছে দেখ চাহি রে।

বর্ষায় বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়।নদীতে দেখা দেয় ভাঙন।বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা।এমনকি শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে।বর্ষায় গরিব মানুষের দু:খ–কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।

শরৎ :
শরৎকাল বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু।বর্ষার বৃষ্টি– ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাম থাকে নীল।শিমুল তুলার মত সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে।এ সময় শিউলি ফুল ফোটে,নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল।নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরুপ ও মনলোভা। ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।

হেমন্ত :
হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল–সমৃদ্ধ ঋতু।তখন সোনার ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে।কৃষকের মুখে থাকে হাসি।কাস্তে হাতে ধান কাটাতে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুণ ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে।এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায়।

শীত :
শীত বাংলাদেশের হিমশীতল ঋতু।শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে।শতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না।শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষও প্রাণিকুল।শতের প্রচন্ডতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে।দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। শীতে বেশি কষ্ট পায় আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ ।শীত কেবল হীমশীতল বিবর্ণ ঋতু নয়।শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে। গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা –পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় ।

বসন্ত :
বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ ।শীতের রুক্ষ,বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের সম্ভার নিয়ে।বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুনসাজে সজ্জিত হয়।পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মার্ধুয সৃষ্টি করে ।

উপসংহার:
বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভুমি।ঋতু পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় রূপ। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন,শরতের কাশফুল,হেমন্তের নবান্নের উৎসব,শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প–পল্লব ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপণী।প্রকৃতির এমন বৈচিত্রময় রূপ পৃথিবীর আর কোথাওকি আছে ?


সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

ব্যাকরণ প্রশ্ন যেগুলো


প্রশ্ন: ই কার ঈ কার ব্যবহারের নিয়ম উদাহরণসহ লেখ ।

ই-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম  নিচে দেওয়া হলো
১. বাংলা ভাষায় ব্যবহূত তৎসম শব্দের বানানে ই-কার ও ঈ-কার দুটিরই প্রয়োগ আছে। কিন্তু অ-তৎসম শব্দের বানানে ‘ই’ ধ্বনির ক্ষেত্রে সর্বত্র কেবল ই-কার ব্যবহার করা সংগত। যেমন—পাখি, চিংড়ি, কেরানি ইত্যাদি।
২.  মৌলিক ক্রিয়াবাচক শব্দ ও পদে ‘ই’ ধ্বনির সর্বত্রই ই-কার হয়ে থাকে। যেমন— চিমটানো, বিলানো  ইত্যাদি।
৩. বিশেষণসূচক ও স্ত্রীবাচক ‘ঈ’ প্রত্যয়ান্ত সংখ্যাবাচক শব্দগুলো ছাড়া সাধারণভাবে সংখ্যাবাচক শব্দের বানানে ই-কার হয়। যেমন—তিন, চল্লিশ, আশি ইত্যাদি।
৪. প্রাণিবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার হয়। যেমন— প্রজাপতি, বুলবুলি, তিমি ইত্যাদি।
৫. স্ত্রীবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার হয়।   যেমন—দিদি, মামি, নানি ইত্যাদি।


ঈ-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম—
১. কোনো কোনো স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার দেওয়া যেতে পারে।  যেমন: রানী, পরী, গাভী  ইত্যাদি ।
২.সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে।
যেমন- কী করছ? কী পড়ো?  কী যে করি! ইত্যাদি।
৩. ব্যক্তির কারী’তে (আরী) ঈ-কার হবে। যেমন-  সহকারী,  ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি।
৪. কোন শব্দের সাথে সন্ধীগঠিত কারণে শব্দান্তে “ঈ” যোগ হলে অবশ্যই ঈ-কার হবে।
যেমন: দায়+ঈ=দায়ী, মন্ত্র+ঈ=মন্ত্রী  ইত্যাদি।
৫. বেশি’ এবং ‘বেশী’ ব্যবহার: ‘বহু’, ‘অনেক’ অর্থে ব্যবহার হবে ‘বেশি’।  শব্দের শেষে যেমন: ছদ্মবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘বেশী’  ব্যবহার হবে।




মঙ্গলবার, ৮ মে, ২০১৮

.ok

Bottom Tooltip

Move the mouse over the text below:

Hover over me Tooltip text
একাদশ শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র
-📕 ----------------------
সমার্থম শব্দ বা প্রতিশব্দ
সসরাংশ,সারমর্ম,
সমোচ্চারিত ও প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ
বিপরীতার্থক শব্দ 
বাক্যসংকোচন/এক কথায় প্রকাশ
বাগ্‌ধারা/ বিশিষ্টার্থ শব্দ
প্রবাদ-বচন
পারিভাষিক শব্দ
লিংক My Academy
ব্যাকরণ ,ভাষা ,ধ্বণিতত্ব ,রূপতত্ব ,বাক্যতত্ব ,বাগর্থতত্ব
লিংক

শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮

সারাংশ

রংপরিবর্তন >>

সারাংশ সারমর্ম
গল্প-কবিতা ছোট-বড় আকারে থাকতে পারে। কোনো কিছু বোঝাতে গিয়ে নানা প্রসঙ্গ আসতে পারে, বাক্যের সংখ্যাও বাড়তে পারে। গল্প বা কবিতা যত বড়ই হোক, এর মূল ভাব কিন্তু ছোট। সহজ ও সাবলীল ভাষায় গল্প বা কবিতাকে সংক্ষেপ করা বা এর অন্তর্নিহিত ভাব লেখাই হলো পুরো ঘটনার সারমর্ম বা সারাংশ।গদ্যের ভাবসংক্ষেপ হলো সারাংশ আর পদ্যের ভাবসংক্ষেপ সারমর্ম।

কিছু কায়দা-কানুন জানা থাকলে সারাংশ কিংবা সারমর্ম ঠিকঠাক লেখা যাবে। এর জন্য যা যা করতে হবে—

পড়ো-বুঝো
সারমর্ম বা সারাংশ লেখার সময় অনুচ্ছেদের কথা বা বাক্য লিখে দিলে চলবে না। আগে মূল ভাব বুঝতে হবে, এরপরই সাজিয়ে সংক্ষেপে লিখতে হবে। কবিতা, গদ্য বা রচনা খেয়াল করে পড়লেই মূল ভাব আঁচ করা যাবে। অর্থাৎ ভালোভাবে পড়লেই মূল বিষয়বস্তু বোঝা যাবে।

মূল ভাব একাধিক হলে
কোনো কোনো সময় রচনায় একাধিক মূল ভাব বা বক্তব্যও থাকতে পারে। যদি এমনটি হয়, তাহলে আসল মূল ভাব বোঝার সহজ উপায় হলো—রচনার বাক্যগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো শনাক্ত করা। এরপর বাক্যগুলোর সঙ্গে কোন ভাবটি বেশি কাছাকাছি তা যাচাই করা।

দরকারি-অদরকারি অং কোন বাক্যগুলো দরকারি, কোনগুলো অদরকারি—সেগুলো আলাদা করতে হবে। তাহলে কাজটা সহজ হবে। মূল রচনার যে অংশটা প্রশ্নে থাকবে, সেখানে উল্লিখিত উদ্ধৃতি, বর্ণনা, সংলাপ, উদাহরণ, উপমা বাদ দিতে হয়। লেখার গণ্ডি
সারমর্ম কিংবা সারাংশ বড় করে লেখার সুযোগ নেই। আর লেখার গণ্ডি অবশ্যই রচনার মূল ভাবের মধ্যেই যেন সীমিত থাকে। এখানে নিজের ইচ্ছামতো কোনো মন্তব্য বা মতামত লেখা যাবে না।

একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
সেথা দেখি এক জন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল অমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
নিজের অভাব ক্ষোভ থাকে কতক্ষণ।

সারর্মম:পদহীন দুঃখীজনের কথা চিন্তা করলে পায়ে জুতা না থাকার দৈন্য মনে স্থান পায় না । অসলে পরের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।

কোথায় স্বর্গ ? কোথায় নরক ? কে বলে তা বহুদূর ?
মানুষরেই মাঝে স্বর্গ-নরক ,মানুষেতেই সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়
আত্নগ্লানির নরক অনলে থখনি পুড়িতে হয় ।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়েঘরে।

সারমর্ম:- এই পৃথিবীতে মানুষের মাঝেই স্বর্গ ও নরক বিদ্যমান । বিবেকবর্জিত মানুষ পৃথিবীতেই নরক যন্ত্রণা ভোগ করে , আর যারা ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে তাদের কাছে পৃথিবীটাই স্বর্গ।

অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মতো দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ-কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়। অতএব অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও, আর শুরু করো দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে।

সারাংশ:মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো বর্তমান। অতীত এবং ভবিষ্যতের ভাবনা মানুষের জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনে না। বরং তা মানুষকে শক্তিহীন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং স্নায়ুবিকভাবে দুর্বল করে তোলে। তাই জীবনকে সফল করে তুলতে হলে অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বর্তমানকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সারাংশ রচনা ,ভাবসম্প্রসারন,চিঠি-পত্র

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮

এক নজরে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণধ্বনির উচ্চারণ রীতি


র্ব্ণ গঠন স্বচ্ছরূপ অস্বচ্ছ নাম উদাহরণ কৌশল
ক+ক=ক্ক ক্ক .... ক-য়ে ক উচ্চারণের সময় দুবার বলতে হয় যেমন ধাক্কা মক্কা
ক্ব ক+ব ক্ব ক্ব .. ক-য়ে ব ফলা উচ্চারণের সময় দুবার উচ্চারণ করতে হয়
ক্ষ ক=ষ=ক্ষ ক্ষ ক্ষ ক-য়ে ষ খিও খ অথবা কখ এর মতো উচ্চারিত হবে যেমন ক্ষেত্র,রক্ষা
হ্ম হ=ম=হ্ম হ্ম হ্ম হ-য়ে ম প্রথমে ম উচ্চারণ হবে তার পর হ যেমন: ব্রাহ্মণ,=ব্রাহমন অর্থাৎ বর্ণবিপর্যযে হম > মহ ।
জ্ঞ জ+ঞ=জ্ঞ জ্ঞ জ্ঞ বর্গী জ য়ে ইয়ো উচ্চারন হল গৃগ্যঁ গ্যঁ । যেমন : জ্ঞান, বিজ্ঞান, ।
ঞ্জ ঞ+জ=ঞ্জ ঞ্জ ঞ্জ ইয়ো তে বর্গীয় জ উচ্চারণ হবে নজ যেমন: অঞ্জন,গঞ্জনা ।
ঞ্চ ঞ+চ=ঞ্চ ঞ্চ ঞ্চ ইয়ো তে চ উচ্চরণ হবে ন্‌চ যেমন: অঞ্চল,=অনচল পঞ্চম পন্ চম
ঞ্ছ ঞ+ছ=ঞ্ছ ঞ্ছ ঞ্ছ ইয়ো তে ছ উচ্চারণ হবে ন্‌ছ যেমন:বাঞ্ছা,লাঞ্ছনা=লান্ ছনা
ঞ্ঝ ঞ+ঝ=ঞ্ঝ ঞ্ঝ ঞ+ঝ ইয়ো তে ঝ উচ্চরণ হবে ন্‌ঝ যেমন: ঝঞ্ঝা ঝনঝা ঝঞ্ঝাট ঝনঝাট
ষ্ণ ষ+ণ ষ্ণ ষ্ণ ষ তে ণ উচ্চরণ হবে শ্‌ন যেমন: উষ্ণ উশনো কৃষ্ণ ক্রিশনো
ট্ট ট+ট=ট্ট ট্ট ট্ট ট তে ট উচ্চরণ হবে ট্‌ট যেমন: চট্টগ্রাম চটটোগ্রাম
ট্র ট+র=ট্র (্র)=ফলা ট্র ট্র ট য়ে র(্র) উচ্চারণ হবে ট্‌র। যেমন:উষ্ট্র=উশটরো রাষ্ট্র রাশটরো
ত্ত ত+ত=ত্ত ত্ত ত্ত ত য়ে ত উচ্চারণ হবে ত্‌ত যেমন: উত্তাল=উৎতাল,মত্ত=মৎতো
ক্ত ক+ত=ক্ত ক্ত ক্ত ক-য়ে ত উচ্চরণ হবে ক্‌ত । ভক্তি=ভোকতি ,শক্ত=শকতো
ত্ন ত+ন=ত্ন ত্ন ত্ন ত-য়ে ন উচ্চরণ হবে ত্‌ন। যত্ন যৎনো রত্ন=রৎনো
ত্ম ত+ম=ত্ম ত্ম ত্ম ত-য়ে ম উচ্চরণ হবে ত্‌তাঁ । আত্মা=আৎতাঁ আত্মীয়=আৎতিঁও
ত্র ত্‌+র=ত্র ত্র ত্র ত য়ে ব ফলা উচ্চারণ হবে ত্‌ত্র। যেমন:যাত্রী=যাৎত্রী
ত্রু ত্‌+র্‌+উ=ত্রু ত্রু ত্রু ত য়ে ্র ‍ু উচ্চরণ হবে ত্রু ত্‌ত্রু শত্রু ত্রুটি
ক্র ক+্র=ক্র ক্র ক্্র কয়ে র ফলা উচ্চরণ হবে ক্র/ক্‌ক্র। য়েমন : ক্রয় ক্রন্দন ক্রোনদোন
বি:

বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা ফলা

ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলা হয়। বাংলায় ফলা চিহ্ন ৭ টি

য-ফলা (্য) : ব্যাঙ,খ্যাতি,সহ্য । ন-ফলা (ন /ন): বিভিন্ন, যত্ন, রত্ন
ব-ফলা (‍্ব) :পক্ব,বিশ্ব াশ্ব । ণ-ফলা (ণ):পুবাহ্ণ অপরাহ্ণ
ম-ফলা (ম): পদ্ম,সম্মান , স্মরণ ল-ফলা (ল) :ক্লান্ত, ম্লান , অম্ল
র -ফলা (্র):প্রমাণ,শ্রান্ত,ক্রয় -----
ফলাযোগে শব্দঃ আহ্বান,অব্বা,অম্মা,হাম্বা,মধ্যাহ্ণ,গোস্বা,গোব্বারা ,কম্বল,সম্বল,অম্বর,অশ্ব,আশ্বিন,ব্যাথা,জেব্রা,ব্রাশ,ট্রুথ ব্রাশ,ব্রেক,

সাধুও ও চলিত ভাষার পাঁচটি করে পার্থক্য লেখ ? :
১. সাধুভাষা লিখিতভাবে ভাব প্রকাশের সর্বজন স্বীকৃত সাধারণ রূপ। ১. সমাজের পারস্পরিক ভাব বিনিময় ও কথোপকথনের উপযুক্ত বাহন হলো চলিত ভাষা।
২. সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট নিয়মের অনুসারী। ২. কিন্তু চলিত ভাষা ব্যাকরণের সকল নিয়ম মেনে চলে না।
৩. সাধুভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশি। ৩.অন্যদিকে,চলিত ভাষায় তদ্ভব,অর্ধতদ্ভব ও বিদেশী শব্দের প্রয়োগ বেশি।
৪. সাধু ভাষায় অপিনিহিত ও অভিশ্রুতির ব্যবহার ৪.চলিত রীতিতে এদের প্রয়োগ করা হয়।
৫. সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়। ৫. চলিত ভাষা পরিবর্তনীয়।
৬. সাধু ভাষা বেশ প্রাচীন। ৬.চলিত ভাষা অপেক্ষাকৃত আধুনিক।
৭.সাধুভাষায় সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়। ৭. চলিত রীতিতে সর্বনামগুলো সংকুচিত রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- এ, সে, এরা, তারা ইত্যাদি।
৮. সাধু ভাষা সাধারণ কথাবার্তা,বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপের উপযোগী নয়। ৮.চলিত ভাষা সাধারণ কথাবার্তা,বক্তৃতা,নাটকের ও সংলাপের উপযোগী।
৯. সাধু ভাষা কোন অঞ্চল বিশেষের প্রভাবাধীন নয় ৯.কিন্তু চলিত ভাষা আঞ্চলিক প্রভাবাধীন।

সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

দিনলিপি লিখন

Flowers in Chania দিনলিপি লিখন

(১)একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি

২৪.৪.২০১৮ ইং

প্রতিদিনের দিনলিপি লেখার শুরুতেই প্রথমেই আমার জীবন ভাবনা গুলো লিখে রাখি।আজ ২৪ এপ্রির রোজ মঙ্গল বার। সময় সকার ৯:০০টা। আমার জীবনের আরও একটি সম্ভাবনাময় দিনের সূত্রপাত হল প্রতিটি দিনই আমার কাছে নতুন সম্ভাবনাময় এবং জীবন গঠনের আর একটি নতুন আহ্বান।

ভোর ৫ টা সকাল ৭টা
আজ ঘুম থেকে উঠেছি খুব ভোরে। তারপর হাতমুখ ধুয়ে অজু করে নামাজ পড়ে বাইরে বেরুই। এক ঘন্টা হাটাহাটি করি ,একটু ব্যায়ামও করি। তার পর নাস্তা শেষ করে পড়তে বসি।

সকাল ৭টা হতে ৮টা
সকালে লেখাপড়ার খুব একটা সময় আমি পাই না ।তাই যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলিতে একটু চোখ বুলিয়ে নিই। বিাশেষভাবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো । ইংরেজী গ্রমারের কোন সুত্র ভুলে গেলে তা বার বার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করি। আর যে বিষয় গুলো বুঝতে পারিনা সেগুলো খাতায় টুকে রাখি তারপর কলেজে গিয়ে বন্ধুবান্ধবীদের নিকট হতে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে স্যারের সাহায্য নেই।

সকাল ৮টা হতে ৯টা
এক ঘন্টার মধ্যে গোসল ,খাওয়া দাওয়া এবং কলেজের জন্য প্রস্তুত হওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। বেশ তাড়াহুড়ো করতে হয়। অনেক সময় খাবার না খেয়েই কলেজে ছুটতে হয়। মাকে বলি পেটে খিদে নেই ,কলেজ থেকে ফিরে এসে খাব। মা বিষয়টি ঠিকই বুঝেন। একটি কেক বিস্কুট হাতে দিয়ে বলেন রিকসায় যেতে যেতে খেয়ে নিস। রিকসায় বসে খেতে আমার ভাল লাগেনা। মার দেয়া খাবার ব্যাগে পরে থাকতে খাকেতে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রাস্তায় পথ শিশুকে আমি দিয়ে দিই তারা পেয়ে খুবই খুশি হয়। তাদের আনন্দ দেখে মনে হয় আরও বেশি যদি আমি দিতে পারতাম।

সকান ৯টা হতে ২টা
এই সময়টা আমার কলেজে কাটে। কখনও তা তিনটে কিংবা চারটে গড়ায় ।তা অবশ্য নির্ভর করে কলেজ রুটিনের উপর ।বেশির ভাগ সময় কলেজ ২টার সময় ছুটি হয়ে যায়। আজ ছুটি হযেছে আরও এক ঘন্টা আগে। ২য় ঘন্টার পর ছুটির ঘোষনা হয়। কলেজ উন্নয়ন নিয়ে আজ স্যারদের বিষেশ মিটিং আছে।

২টা থেকে বিকেল ৪টা
এ সময় টা সাধারনত বাসায় কাটে। বাসায় এই সময়টা গল্পের বই অথবা টেলিভিশন দেখে কাটে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের বাসায় যাই। অাজ বাসায় ফিরে মায়ের সাথে মার্কেটে যাই মা আমার জন্য সুন্দর একটা হাতঘড়ি কিনলেন।

বিকেল ৪টা হতে সন্ধ্যা ৬্টা
এ সময়টা হল আমার খেলার সময়। আজকাল যদিও খেলার মাঠ বলতে কিছু নেই। খেলা বলতে এখন যা বুঝায় তা হল যন্ত্রনিয়ে খেলা মোবাইল ফোনে কথা বলা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা অথবা কম্পিউটার নিয়ে বসা।

সন্ধ্যা ৬টা হতে ১১টা
একটানা দু ঘন্ট পড়া শেষে হয় খবর দেখি না হয় টেলিভিশনে কোন অনুষ্ঠান , বিশেষত নাটক দেখি।সে সঙ্গে খাওয়া দাওয়ার কাজটা শেষ করি । ঘুমুতে যাওয়ার আগে দিনলিপি লিখি । পরবর্তী দিনের কার্যক্রম ঠিক করে ঘুমুতে যাই।
২৪.৪.২০১৮ইং রাত ১১টা ১০মি:



রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮

বাগধারা বা বাগবিধি

বাগধারা বা বাগবিধি

অ ,আ

অকাল কুষ্মান্ড (অকেজো)অকাল কুম্মান্ড লোকটা গতকালও কাজটা শেষ করতে পরেনি ।
অকালপক্ব(ইঁচড়ে পাকা)এমন অকালপক্ব ছেলেকে যে শিক্ষকরা প্রশ্রয় দেবে না তাতে সন্দেহ নেই।
অকূল পাথার (মহাবিপদ) ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পেরে অনেক ছাত্র অকূল পাথারে পড়েছে।
অক্কা পাওয়া (মরে যাওয়া) যে কোন দিনই থুত্থুড়ে বুড়োটা অক্কা পেতে পারে।
অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি) মোড়ল সাহেব অগাধ জলের মাছ,তাঁকে বোঝা বড় কঠিন।
অগ্নিপরীক্ষা (কঠিন পরীক্ষা) ২০০৭ সালে বংলাদেশ ক্রিকেট দলের শ্রীলংকা সফর ছিল অগ্নিপরীক্ষা।
অগ্নিশর্মা (খুবই রাগান্বিত) লোকটাকে বেয়াববি দেখে বাবা রেগে অগ্নিশর্মা হলেন।
অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যবিড়ম্বনা) অদৃষ্টের পরিহাসে অনেক ধনকুবের পথের ফকির হয়ে গেল।
অনধিকার চর্চা(অজানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ)আমি ব্যবসায়ী মানুষ,সাহিত্যের আলোচনা আমার জন্যে অনধিকার চর্চা।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা(অনুরোধে কষ্ট স্বীকার)অনুরোধে অনেক ঢেঁকি গিলেছি,এথন আর পারছি না।
অন্ধের যষ্টি/নড়ি(অক্ষম লোকের একমাত্র অবলম্বন)একমাত্র নাতিটি বুড়ির অন্ধের যষ্টি।
অন্ধকার দেখা (বিপদে সমাধানের উপায় না দেখা)বাবার অকাল-মৃত্যুতে মেয়েটা চোখে অন্ধকার দেথতে লাগল।
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া(আন্দাজে কিছু করা) অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে আসল ঘটনাটা জেনে এসো।
অমবস্যার চাঁদ(দুর্লভ ব্যক্তি বা বস্তু) আপনি দেখেছি অমবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছেন।আপনার দেখাই মিলছে না।
অরণ্যে রোদন(নিষ্ফল অনুনয়) লোকটা হাড়কৃপণ,ওর কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই কথা।
অর্ধচন্দ্র (গলা ধাক্কা) দারোয়ান উটকো লোকটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে দিলেন।
আকাশকুসুম(অবাস্তব ভাবনা) শহরের সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া অনেকের জন্য এখন আকাশকুসুম ব্যাপার।
আকাশ থেকে পড়া(স্তম্বিত হওয়া) পাপিয়ার কথা শুনে তাসলিমা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
আকাশ-পাতাল(সীমাহীন) শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রায় এখনও আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
আকাশ ভেঙে পড়া (মহাবিপদে পড়া) বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
আকাশে তোলা(অতিরিক্ত প্রশংসা করা) কেউ কেউ স্বার্থ হাসিলের জন্য কমকর্তাদের আকাশে তোলে।
আকাশের চাঁদ(দুর্লভ বস্তু) সেরা কলেজে ভর্তি হতে পেরে ভাইয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন।
আক্কেল গুডুম(হতবুদ্ধি অবস্হা) ছেলেটার কথাবার্তা শুনে তো আমার আক্কেল গুডুম।
আক্কেল সেলামি(বোকামির দন্ড) ধাপ্পাবাজ লোকটার পাল্লায় পড়ে টাকাগুলো আক্কেল সেলামি দিতে হল।
আখের গোছানো(ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়া) দুর্নীতিবাজরা আখের গুছিয়ে নিলেও পার পাচ্ছে না।
আঙুল ফুলে কলা গাছ(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া) শেয়ারের ব্যবসায় কুদ্দুস সাহেব এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ।
আট কপালে (হতভাগ্য) আট কপালে লোকের ক্ষেত্রে চাকরি জোটা মুশকিল।
আঠারো মাসে বছর(ঢিলেমি) আমার মতামা সব কাজে দেরি করেন।সবাই বলেন তার নাকি আঠার মাসে বছর।
আদাজল খেয়ে লাগা(উঠে পড়ে লাগা) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য মাহমুদ আদাজল খেয়ে লেগেছে।
আদায় কাঁচকলায়(শত্রুভাবাপন্ন্) ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে আদায় কাঁচকলায় সম্পক,কেউ কাউকে সাহায্য করে না।
আবোল–তাবোল(এলোমেলো কথা) আসল ঘটনাটা লুকুতে গিয়ে সে আবোল–তাবোল বকে চলছে।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অকেজো লোক) ও একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি,ওকে দিয়ে কাজটা হবে না।
আমলে আনা(গুরুত্ব দেওয়া) পুলিশ দারোআনের কোন কথাই আমলে আনল না।
আলালের ঘরের দুলাল(বড় লোকের আদুরে ছেলে) এই আলালের ঘরের দুলালটিকাজ দেখলে ভয় পায়।
আষাঢ়ে গল্প (বানানো কথা) সময়মত কাজে আসোনি, তার জন্য আষাঢ়ে গল্প বলার দরকার কি?
আসমান-জমিন ফারাক (বিপুল ব্যবধান) ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় আসমান –জমিন ফারাক।
আস্তানা গড়া(সাময়িকভাবে কোথাও থাকতে শুরু করা) বানভাসি লোকগুলো বাঁধের ওপর আস্তানা গেড়েছে।
আহলাদে আটখানা(আনন্দে আত্নহারা) মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে সে আহলাদে আটখানা।

ই,ঈ,উ, ঊ,এ

ইঁচড়ে পাকা (অল্প বয়সে পেকে গেছে এমন)ওই ইঁচড়ে পাকা ছেলেটাকে পাত্তা দিলেই ঘাড়েচেপে বসবে।
উভয় সংকট(দু দিকেই বিপদ) বিজ্ঞান না বাণিজ্য,কোনটা পড়ব এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছি।
উলুবনে মুক্তো ছড়ানো(অপাত্রে মুল্যবান কিছু প্রদান) ওকে জ্ঞান দেওয়া আর উলোবনে মুক্তো ছড়ানো এখই কথা।
এঁটে উঠা(সমানে পাল্লা দিতে পারা) তোমার সঙ্গে এঁটে উঠা কঠিন।
এক কথার মানুষ(কথা রাথে এমন) আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন,আমি এক জকথার মানুষ।
একচোখা(পক্ষপাতদুষ্ট) একচোখা লোকের কাছে কখনো সুবিচার আশা করা যায় না।
এলাহি কান্ড(বিরাট আয়োজন) সওদাগর সাহেবের মেয়ের বিয়ে,এলাহি কান্ড তো হবেই।
একাই একশ(যথেষ্ট সমথ) ঐ পুঁচকো ছোঁড়াকে মোকাবেলার জন্য আমি একাই এক শ।
এসপার ওসপার(যে–কোনভাবে মীমাংশা) ঝামেলাটা আর সহজ হয় না।এবার এসপার ওসপার করতেই হবে।
ওত পাতা(সুযোগের অপেক্ষা থাকা) বিড়ালটা মাছ চুরি করার জন্য ওত পেতে রয়েছে।

ক,খ,গ

কড়ায় গন্ডায় (সূক্ষ্ম হিসেব অনুযায়ী) ও তাঁর পাওনা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিতে এসেছিল।
কথার কথা(হালকা কথা) আমি কথার কথায় একটি মন্তব্য করেছি আর তাতেই রাজু ক্ষেপে গেল।
কপাল ফেরা (সৌভাগ্য লাভ) ছেলেটা হঠৎ বিদেশে চাকরি পাওয়ায় চাচা- চাচির কপাল ফিরেছে।
কলুর বলদ(অন্যের জন্য একটানা খাটুনি) সংসারের হাল ধরতে ছোট মামা কলুর বলদের মত ঘানি টানছেন।
কাঁচা পয়সা(অল্প আয়াসে নগদ উপার্জন) দুর্নীতি করে অনেকে কাঁচা পয়াসা কামাই করছে।
কাঁঠালের আমসত্ব(অসম্ভব বস্তু) বাংলায় ১০০-তে ১০০ নম্বর পাওয়া কাঁঠালের আমসত্বের মতো।
কাছাঢিলা(অগোছালো স্বভাবের) যেমন কাছাঢিলা লোক তুমি,ছাতা তুমি হারাবে না তো কে হারাবে।
কাঠখড় পোড়ানো(নানারকম চেষ্টা ও পরিশ্রম) কাজটা হাসিলের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হল।
কাঠের পুতুল(নির্জীব, অসার লোক) কোন কোন মন্ত্রী হয়ে যান কাঠে পুতুল,সব কাজ চালান তাঁর সচিব।
কান খাড়া করা(মনোযোগী হওয়া) আদালতে কী রায় হয় তা শোনার জন্য আইনজীবিরা কান খাড়া করে রইল।
কান পাতলা(বিশ্বাসপ্রবণ) বড় সাহেব এমন কান পাতলা যে তার অধীন কাজ করাই মুশকিল।
কান ভারী করা(কারও বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি) তুমি নাকি আমার বিরূদ্ধে বড়কর্তার কান ভারী করেছ?
কুল কাঠের আগুন(তীব্র মন:কষ্ট) লাঞ্ছনা অপমানে তার মনের মধ্যে কুল কাঠের আগুন জ্বলতে লাগল।
কূপমন্ডূক(সংকীর্ণমনা লোক) আমাদের সমাজে কূপমন্ডূক লোকের অভাব নেই।
কেউকেটা (নিন্দার্থে গণ্যমান্য লোক) আপনি যে এমন কেউকেটা যে আপনার কথা শুনতেই হবে!
কেঁচে গন্ডূষ করা(পুনরায় প্রথম থেকে শুরূ করা) পুরো হিসাবটাই ভুল হয়েছে।আবার কেঁচে গন্ডূষ করতে হবে।
কোমর বাঁধা(কাজে উঠে পড়ে লাগা) পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য তাহমিনা কোমর বেঁধে পড়াশুনায় লেগেছে।
খন্ড প্রলয়(তুমুল কান্ড) মোবাইল ফোন হারানোকে কেন্দ্র করে পাশের বাসায় একটি খন্ড প্রলয় ঘটে গেছে।
খয়ের খাঁ(খোশামোদকারী,চাটুকার) ক্ষমতাসীনদের চারপাশে খঁয়ের খাঁ লোকদের ভিড় জমে যায়।
খুঁটির জোর (পৃষ্ঠপোষকের সহায়তা) খুঁটির জোর আছে বলেই বারবার বদলি ঠেকায়।
গড্ডালিকা প্রবাহ(অন্ধের মতো অনুসরণ) বিত্তের মোহে সমাজের অনেক লোক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়।
গন্ডারের চামড়া(অপমান বা তিরস্কার গায়ে লাগায় না এমন) ওর বোধ হয় গন্ডারের চামড়া,তাই শত অপমানেও কোনো ভাবান্তর নেই।
গদাই লশকারি চাল(ঢিলিমি) এমন গদাই লশকরি চালে চললে কাজটা এ মাসে ও শেষ হবে না।
গলগ্রহ(দায় বা বোঝা) অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।
গাছে তুলে মই কাড়া(কাজে নামিয়ে সরে পড়া) তোমার ভরসায় এত বড় কাজে হাত দিয়েছি।এখন গাছে তুলে মই কেড়ে নিচ্ছ যে।
গায়ে পড়া(অযাচিত ঘনিষ্ঠতা) অমন গায়ে পড়া লোককে চেয়ারম্যান সাহেব পাত্তা দিবেন বলে মনে হয় না।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো(কোন দায়িত্ব গ্রহণ না করা) ও নেবে দায়িত্ব?গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানোই যে ওর স্বভাব।
গোঁয়ার গোবিন্দ(নির্বোধ ও একগুঁযে লোক) কাজটা বুঝে শুনে করবে।গোঁয়ার গোবিন্দের মতো করলে চলবে না।
গোড়ায় গলদ (মূল কিংবা শুরুতে ভুল) বিয়ের আয়োজনে গোড়ায় গলদ ছিল বলে এত বিশৃঙ্থলা।
গোবর গণেশ (বোকা,অকর্ণন্য লোক) ছেলেটার না আছে বুদ্ধি, না পারে কোন কাজ ও একেবারে গোবর গণেশ।
গোল্লায় যাওয়া(উচ্ছন্নে যাওয়া) বাবামায়ের আদরের ঠেলায় ছেলেটা গোল্লায় গেছে।

ঘ,ঙ,চ,ছ,জ,ঝ,ঠ

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া(উদ্বেগ–উৎকন্ঠা খেকে স্বস্তি) ছেলেটা ঘরে ফিরে আসায় সবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
ঘাস কাটা(বাজে কাজে সময় নষ্ট করা) অণ্যেরা কাজ করবে আর তুমি বসে বসে ঘাস কাটবে ?তা হবে না।
ঘোড়া রোগ(উৎকট বাতিক) ভাত জোটে না,বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করতে চায় গরিবের ঘোড়ারোগ আর কি!
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া(ওপরওয়ালাকে এড়িয়ে কাজ হাসিল) সরকারি অফিসে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া কঠিন।
গোড়ার ডিম (অস্তিত্বহহীন বস্তু) ও তোকে বইটা দেবে?ঘোড়ার ডিম দেবে।
চাঁদের হাট(সুখের সংসার) অবসর জীবনে শরীফ সাহেব কৃতি সন্তানদের নিযে চাঁদের হাট বসিয়েছেন।
চোখে চোখে রাখা(সতর্ক নজরদারি) অজানা–অচেনা কেউ এলে তাকে চোখে চোখে রাখা দরকার।
চোখে ধুলো দেওয়া(ফাঁকি দেওয়া) পুলিশের চোথে ধুলো দিয়ে অপরাধী গা ঢাকা দিয়েছে।
চোখের বালি(চক্ষুশূল,ক্রোধ বা বিরক্তির কারণ) মা–মরা ছেলেটা কত শান্ত,তবু সে তার সৎ-মায়ের চোখের বালি।
ছিনিমিনি খেলা(বেহিসাবি খরচ) উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে অনেক ছিনিমিনি থেলা হয়েছে।
ছেঁকে ধরা (ঘিরে ধরা): বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সবাই কারখানার মালিককে ছেঁকে ধরেছে।
ছেলের হাতের মোয়া (সহজপ্রাপ্য জিনিস): ভালো ফলাফল ছেলের হাতের মোয়া নয়,এর জন্য যথেষ্ট পড়াশুনা দরকার।
জগাখিছুড়ি(অবাঞ্ছিত জটিলতা) তোমার জগাখিছুড়ি কাজ দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে উঠে।
জিলিপির প্যাঁচ (কুটিল বুদ্ধি):ওর মনে যে এত জিলিপির প্যাঁচ তা বুঝব কি করে।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা(সুযোগ বুঝে কাজ করা):ঝোপ বুঝে কোপ মারতে না পারলে ব্যাবসায়ে টেকা মুশকিল।
টনক নড়া(চৈতন্য হওয়া)ব্যবসায় লাঠে উঠতেই তার টনক নড়ল ।
ঠাঁট বজায় রাথা(অভাব লুকানো)জমিদরি নেই,কিন্তু চৌধুরী বংশ এখন ও জমিদারি ঠাঁট বজায় আছে।
ঠোঁট কাটা(স্পষ্টবাদী) ঠোঁট কাটা লোক অনেকেরই অপছন্দ।

ড,ঢ,ন,প,ফ,ব

ডুমুরের ফুল(অদৃশ্য ব্যক্তি বা বস্তু) কী ব্যাপার ! তুমি হঠাৎ ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে?
ঢিমে তেতালা(খুবই মন্থর গতি) এমন ঢিমে তেতালাভাবে পড়াশুনা করলে সিলেবাস শেষ হবে না।
তালকানা (তালজ্ঞান বর্জিত) উনি তালকানা লোক।ওর কাছে পরিপাটি কাজ আশা করছ কেন?
থ বনে যাওয়া(বিস্ময়ে হতবাক হওয়া) লোকটার কান্ড দেখে সবাই থ বনে গেল।
তাসের ঘর (ভঙ্গুর ): ওদের বন্ধুত্ব তাসের ঘরের মত ভেঙে গেছে।
তামার বিষ (অর্থের কুপ্রভাব) তামার বিষে ওরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
দা–কুমড়ো (নিদারুণ শত্রুতা) ভাইয়ে ভাইয়ে এখন একেবারে দা-কুমড়ো সম্বন্ধ।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) ধনীর দুলাল ছেলেটাকে দুধের মাছিরা ঘিরে রেখেছে।
দুমুখো সাপ(দু রকম আচরণকারী,ক্ষতিকর লোক) লোকটা আস্ত দুমুখো সাপ,তোমাকে বলেছে একরকম আমাকে অন্যরকম।
ধরাকে সরা জ্ঞান করা(অতিরিক্ত দম্ভে কিছুই গ্রাহ্য না করা) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করল।
ননির পুতুল (অল্প শ্রমে কাতর) ফারিহা তো ননির পুতুল,এত পরিশ্রমের কাজ ওকে দিতে হবে না।
নাক গলানো(অনধিকার চর্চা) যে-কোন ব্যাপারে নাক গলানো কারো কারো স্বভাব।
নেই আাঁকড়া(নাছোড়বান্দা) কী যে নেই আাঁকড়া লোকের পাল্লায় পড়েছি!রেহাই মিলছে না।
পটল তোলা(মারা যাওয়া) চাঁদাবাজরা পটল তুলছে শুনে এলাকার লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
পথে বসা(সর্বস্বান্ত হওয়া) বন্যায় সব হারিয়ে অনেকে এবার পথে বসেছে।
পালের গোদা(দলের চাঁই,সর্দার) পুলিশ পালের গোঁদোকে কোর্টে চালান দিয়েছে।
পুকুর চুরি(বড় রকম চুরি):রাস্তা মেরামত না করেই ঠিকাদার ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে, এ যে রীতিমতো পুকুর চুরি।
ফাঁক–ফোকর(দোষত্রুটি) আইনের ফাঁক-ফোকর গলে সন্ত্রাসীরা জামিনে খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
ফেঁপে উঠা(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া) চোরাচালানি করে কেউ কেউ রাতারাতি ফেঁপে উঠেছে।
ফোঁড়ন কাটা(টিপ্পনী কাটা)কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কাটা ওর স্বভাব।
ফোপড়দালালি(নাক গলানো আচরণ) সব ব্যাপারে ওর ফোপড়দালালি করার অভ্যাস।
বকধার্মিক(ভন্ড) সমাজে বকধার্মিক লোকের অভাব নেই।
বর্ণচোরা আম(কপট লোক) লোকটা একটা বর্ণচোরা আম ।বাইরে থেকে ওকে বোঝা মুশকিল।
বাঁ হাতের ব্যাপার(ঘুষ দেওয়া-নেওয়া) এ অফিসে বাঁ হাতের ব্যাপার ছাড়া ফাইল নড়ে না।
বাজিয়ে দেখা(পরখ করা) সে ঘটনাটা জানে কিনা একটু বাজিয়ে দেখতে হবে।
বাপের বেটা(সাহসী)শাবাশ! বাপের বেটার মতই করছিস কাজটা।
বালির বাঁধ(ক্ষণস্হায়ী) বড়লোকের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর বালির বাঁধ একই কথা।
বিড়াল–তপস্বী(ভন্ড সাধু) সমাজে মাঝে মাঝে বিড়াল তপস্বীদের তৎপরতা বেড়ে যায়।
বিদ্যার জাহাজ(মূর্খ বা অশিক্ষিত লোক) যে নিজে বিদ্যার জাহাজ সে অন্যকে কী শেখাবে?
বুকের পাটা(সাহস) মাস্তানটার বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ করছিস!তোর বুকের পাটা আছে বলতে হবে।
বুদ্ধির ঢ়েঁকি(নির্বোধ) এই কাজের জন্য চাই চালাক-চতুর লোক,বুদ্ধির ঢেঁকি দিয়ে একাজ হবে না।

ভ,

ভিজে বেড়াল(বাইরে নীরিহ ভেতরে ধূত) ভিজে বেড়ালদের অনেক সময় চেনা যায় না।
ভরাডুবি(সর্বনাশ): আদমজি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটচাষিদের এবার ভরাডুবি হয়েছে।
ভূতের বেগার(অযথা শ্রম দান)সরাক্ষণ ভুতের বেগার খাটছি, লাভ কিছুই হবে না।
মামাবাড়ির আবদার(চাইলেই পাওয়া যায় এমন):গতকাল ১০০ টাকা নিলে।আজ আবার ২০০ টাকা চাইছ।একি মামাবাড়ির আবদার নাকি?
মিছরির ছুরি(আপাতত মধুর হলেও শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক) তোমার কথাগুলো ঠিক যেন মিছরির ছুরি।
যক্ষের ধন(কৃপণের কড়ি): পৈতৃক ভিটেটা সে যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছে।
রুই–কাতলা(প্রভাবশালী): সমাজের রুই–কাতলাদের দাপটে চুনোপুঁটিদের আবস্হা এখন কাহিল।
লেফাফা দুরস্ত(বাইরের ঠাঁট ষোল আনা): ঘরে যে এমন টানাটানি,তা ওর লেফাফা ভাব দেখে কে বুঝবে?
রাশভারি(গম্ভীর) আমাদের প্রধান শিক্ষক রাশভারি লোক।সবাই ওকে ভয় পায়।
শাপে বর(অনিষ্টে ইস্ট লাভ) আমার বড়মামা চাকরি না পেয়ে ব্যবসায়ে ঢুকেছেন । এতে তাঁর শাপে বর হয়েছে।
সেয়ানে সেয়ানে(দুই সমান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে) দুজনের মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে অনেকদিন।
সোনায় সোহাগা(সার্থক মিল) পরীক্ষায় পাস করতে না–করতেই এমন ভালো চাকরি পাওয়া,এ যে সোনায সোহাগা!
হ-য-ব-র-ল(উল্টোপাল্টো) অনুষ্ঠানের হ-য-ব-র ল দেথে চলে এসেছি।
হাড়-হাভাতে(একেবারে নি:স্ব): হাড়-হাভাতে ছেলেটাযে কীভাবে এই সংসারে এসে জুটল বলতে পারবে না।
হাতটান(ছেটখাট চুরির অভ্যাস) ছেলেটা কাজে-কর্মে বেশ ওস্তাদ।তবে দোষের মধ্যে হাতটান আছে।
হাতের পাঁচ(শেষ সম্বল)হাতেরপাঁচ হিসাবে হাজারখানেক টাকা আছে।তোমাকে ধার দেব কেমন করে?
হালে পানি পাওয়া (কাজ হাসিলের উপায় না পাওয়া)