১। প্রশ্ন : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের মোট ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) আদ্যবর্ণে য-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটি অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত হলে উচ্চারণ ‘অ্যা’ কারান্ত হয়ে যায়। যেমন—ব্যথা (ব্যাথা), ন্যায় (ন্যায়্) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসথো), কণ্ঠ্য (কনঠো) ইত্যাদি।
(গ) পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা সংযুক্ত হলে তার উচ্চারণ ও-কারান্ত হয়ে থাকে। যেমন—প্রকাশ (প্রোকাশ্), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।
(ঘ) র-ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তবে সে বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যেমন—রাত্রি (রাতত্রি), ছাত্র (ছাতেত্রা), মাত্র (মাতেত্রা) ইত্যাদি।
(ঙ) ল-ফলা শব্দের মধ্যে বা অন্তে বসলে তার র-ফলার মতো দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন—অশ্লীল (অসিস্লল), শ্লেষ (স্লেশ), শ্লথ (স্লোথো) ইত্যাদি।
২। প্রশ্ন : উদাহরণসহ ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম লেখো।
উত্তর : ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) শব্দের প্রথমে ‘ক্ষ’ থাকলে তার উচ্চারণ হয় ‘খ’। যেমন—ক্ষমা (খমা), ক্ষণ (খন্) ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকখোতা), পক্ষ (পোকখো)।
(গ) শব্দের মাঝে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গ্যঁ-এর (গ) মতো হয়। যেমন—জ্ঞান (গ্যাঁন্), জ্ঞাপক (গ্যাঁপোক্) ইত্যাদি।
(ঘ) শব্দের আদিতে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গঁ বা গ্যঁ-এর মতো হবে। যেমন—জ্ঞাপন (গ্যাঁপোন্), অজ্ঞান (অগ্গ্যাঁন্), বিজ্ঞপ্তি (বিগগোঁপিত) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের অন্তে ‘জ্ঞ’ থাকলে উচ্চারণ গঁ, বা গোঁ-এর মতো হবে। যেমন—অবজ্ঞা (অবোগ্গাঁ), অজ্ঞ (অগগোঁ), বিজ্ঞ (বিগেগাঁ) ইত্যাদি।
৩। প্রশ্ন : শব্দের শেষে কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অ’-উচ্চারণ লোপ পায় না? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : কথ্য বাংলায় শব্দের শেষের অ ধ্বনি সাধারণত লোপ পায়। তবে এমন কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে অন্ত্য অ-ধ্বনি লোপ পায় না এবং সংবৃত উচ্চারণ হয়। এগুলো হলো :
(ক) শেষ ব্যঞ্জনের অব্যবহিত আগে অনুস্বার বা বিসর্গ থাকলে : ধ্বংস, বংশ, মাংস, দুঃখ ইত্যাদি।
(খ) শব্দটি ত বা ইত প্রত্যায়ান্ত হলে : গত, শত, নন্দিত, লজ্জিত পুলকিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দটি তুলনাবাচক তর, তম প্রত্যায়ান্ত হলে : বৃহত্তর, মহত্তর, বৃহত্তম, মহত্তম ইত্যাদি।
(ঘ) ঈয় বা অনয় প্রত্যায়ান্ত শব্দে : পানীয়, নমনীয়, দেশীয় ভারতীয় ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের শেষ ব্যঞ্জনটি হ হলে কলহ, দেহ, দাহ, প্রবাহ, মোহ, স্নেহ, লৌহ ইত্যাদি।
৪। প্রশ্ন : অনুস্বার (ং) বিসর্গ (ঃ) ও চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) এর উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দু নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
ং (অনুস্ব্বার) : আধুনিক বাংলা ভাষায় উচ্চারণগত দিক থেকে ‘ং’ (অনুস্বার) এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। ং-কার উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ (অংশো), মাংস (মাঙশো), বাংলা (বাঙলা), সংগ্রাম (সঙগ্রাম), সংজ্ঞা (সঙ্গগাঁ) ইত্যাদি।
ঃ (বিগর্স) : সংস্কৃতে বিসর্গের উচ্চারণ ছিল অনেকটা অর্ধ হ-এর মতো। বাংলায় আবেগ শব্দ অর্থাৎ বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে বিগর্স ব্যবহৃত হয়। যেমন—উঃ (উহ্), আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্) ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) থাকলে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ এর উচ্চারণ ‘ও’ এর মতো হয়। যেমন—অতঃপর (অতোপপর), নিঃশেষ (নিশশেশ্), দুঃখ, (দুকখো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙগো) ইত্যাদি।
মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
উচ্চারণের নিয়ম
উচ্চারণরীতি কাকে বলে ?
১। প্রশ্ন : উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা ভাষা উচ্চারণের চারটি নিয়ম লেখো।
উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।.
প্রশ্ন:- অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রান ধ্বনি ককে বলে ? উদাহরন সহ লেখ ।
বাতাসের চাপের আধিক্যের উপর ভিত্তি করে ব্যঞ্জনধ্বনিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে অধিক পরিমাণে বাতাস মুখের রুদ্ধতাকে সজোরে উন্মোচন করে নির্গত তাদের মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।
মহাপ্রাণ ধ্বনি ১১টি। যথা: খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ, হ।
২. অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে কম পরিমাণে বাতাস নির্গত তাদের অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে।
অল্পপ্রাণ ধ্বনি ১৩টি। যথা: ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব, শ, ষ, স ।
স্বরতন্ত্রীর অবস্থাভেদে ব্যঞ্জনধ্বনি ২ প্রকার।
১. অঘোষ ধ্বনি: যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র কম্পিত বা অনুরণিত হয় না তাদের অঘোষ ধ্বনি বলে। বাংলা অঘোষ ধ্বনির সংখ্যা ১৪টি। যথা: ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ, শ, ষ, স, ঃ
২. ঘোষ ধ্বনি: যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র কম্পিত বা অনুরণিত হয় তাদের ঘোষ ধ্বনি বলে। ঘোষ ধ্বনি ১১টি। যথা: গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব, ভ, হ
]
৩ । প্রশ্ন : বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের যেকোনো ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীকে ‘ঙ’ হরফটির নাম জানানো হয় ‘উঁয়ো’ রূপে। কিন্তু এর প্রাচীন নাম বা পরিচিতি যাই হোক, আধুনিক বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ বর্ণটি কখনো ‘উঁয়ো’ রূপে উচ্চারিত হয় না, হয় ‘অঙ’ রূপে। যেমন—রঙ, ঢঙ, সঙ, রাঙা, সঙিন, কঙ্কন ইত্যাদি।
(খ) ‘ঞ’ সাধারণ ‘চ’ বর্গের (চ, ছ, জ, ঝ) চারটি বর্ণের পূর্বে যুক্তাবস্থায় ব্যবহৃত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষ ‘চ’ এর পরে বসে বাংলা উচ্চারণে ‘দন্ত্য ন’ এর মতো হয়। যেমন—পঞ্চ, লাঞ্ছিত, রঞ্জ, গঞ্জিত, ব্যঞ্জন ইত্যাদি।
(গ) য-এর পর প্রাচীন সংস্কৃত উচ্চারণ ছিল ‘ই অ’-এর মতো কিন্তু বাংলা উচ্চারণে এটি পরিষ্কার ‘জ’। এর প্রাচীন উচ্চারণের স্মারক হচ্ছে ‘য’ এর নিচে বিন্দু দিয়ে লেখা ‘য়’ আমরা যেটাকে অন্তঃস্থ ‘অ’ বলি। বাংলা ভাষায় এ দুটি বর্ণের উচ্চারণের কোনো পার্থক্য নেই। যথা—যম (জম্), জামাই (জামাই), যদি (জাদি), জগৎ (জগোত) ইত্যাদি।
(ঘ) আধুনিক বাংলা ভাষার উচ্চারণগত দিক থেকে এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। সংস্বকৃত ‘ং’ যে বর্ণের পরে সংযুক্ত হতো, যে স্বরবর্ণকে আংশিকভাবে সানুনাষিক করে দিত। বাংলায় ং-এর উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ, (অঙশো), বংশ (বঙেশা), কংস (কঙেশা) হংস (হঙ্স) ইত্যাদি।
(ঙ) ‘ঃ’ (বিসর্গ) এর উচ্চারণ ছিল অনেকটা ‘অর্ধ ‘হ’ এর মতো। বাংলায় কেবল বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রাচীনকালের ‘ঃ’ (বিসর্গ) উচ্চারণের রেশ শুনতে পাই। যেমন—আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্), উঃ (উহ্), ওঃ (ওই্) ইত্যাদি।
উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।
২। প্রশ্ন : বাংলা ‘অ’ এবং ‘এ’ ধ্বনির কমপক্ষে দুটি করে মোট পাঁচটি উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
উত্তর : বাংলা ‘অ’ এবং ‘এ’ ধ্বনির পাঁচটি উচ্চারণের নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলো :
(ক) ‘অ’ কিংবা ‘ আ ’-যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি স্বাভাবিক হয়। যেমন—অমানিশা, কথা ইত্যাদি।
(খ) অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন—গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দের আদ্য ‘এ’ কারের পরে যদি ং ঙ কিংবা ঙ্গ থাকে এবং তারপরে ই, উ অনুপস্থিত থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ‘এ’, অ্যা-কারে রূপান্তরিত হয়। যেমন—বেঙ, খেঙরা, বেঙ্গমা, ভেংবা ইত্যাদি।
(ঘ) এ-কারযুক্ত একাক্ষর ধাতুর সঙ্গে আ প্রত্যয়যুক্ত হলে, সাধারণত সেই এ-কারের উচ্চারণ ‘অ্যা’ করা হয়ে থাকে। যেমন—খেদা, ক্ষেপা, বেচা, ঠেলা, খেলা ইত্যাদি।
(ঙ) একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ’ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবিকৃত এ-কাররূপে উচ্চারিত হয়। যেমন—কে, সে, যে, এ ইত্যাদি।
৩। প্রশ্ন : ‘হ’ সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের যেকোনো ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : ‘হ’ সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) ‘হ’-এর সঙ্গে ঋ-কার, র-ফলা কিংবা রেফ সংযুক্ত হলে ‘হ’ নয়, বরং ‘র’ মহাপ্রাণ হয়। যেমন—হৃদয় (হৃদয়্), সুহৃদ (সুহৃদ্), হৃদ্য (হৃদেদা) ইত্যাদি।
(খ) হ-এর সঙ্গে ণ বা ন যুক্ত হলে উচ্চারণ হৃ-এর মতো হয়। এ ক্ষেত্রে মূলত ‘ন’-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমন—পূর্বাহ্ন (পুর্বানহ), অপরাহ্ন (অপোরান্হ), চিহ্ন (চিন্হ) ইত্যাদি।
(গ) হ-কারের সঙ্গে ম সংযুক্ত হলে ম-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমন—ব্রহ্ম (বোম্হ) ব্রাহ্ম (ব্রাম্হ), ব্রাহ্মণ (ব্রোম্হন্) ইত্যাদি।
(ঘ) হ-এর সঙ্গে ‘য’ ফলা যুক্ত হলে ‘হ’-এর নিজস্ব উচ্চারণ থাকে না। বরং য-এর মহাপ্রাণ হয়। যেমন—উহ্য (উজেঝা), গ্রাহ্য (গ্রাজেঝা), সহ্য (শোজ্ঝা) ইত্যাদি।
(ঙ) হ-এর সঙ্গে ‘ব’ যুক্ত হলে ‘ব’ মহাপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়। যেমন—বিহ্বল (বিওভল), আহ্বান (আওভান), জিহ্বা (জিওভা) ইত্যাদি।
৪। প্রশ্ন : বাংলা ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের যেকোনো ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীকে ‘ঙ’ হরফটির নাম জানানো হয় ‘উঁয়ো’ রূপে। কিন্তু এর প্রাচীন নাম বা পরিচিতি যাই হোক, আধুনিক বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ বর্ণটি কখনো ‘উঁয়ো’ রূপে উচ্চারিত হয় না, হয় ‘অঙ’ রূপে। যেমন—রঙ, ঢঙ, সঙ, রাঙা, সঙিন, কঙ্কন ইত্যাদি।
(খ) ‘ঞ’ সাধারণ ‘চ’ বর্গের (চ, ছ, জ, ঝ) চারটি বর্ণের পূর্বে যুক্তাবস্থায় ব্যবহৃত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষ ‘চ’ এর পরে বসে বাংলা উচ্চারণে ‘দন্ত্য ন’ এর মতো হয়। যেমন—পঞ্চ, লাঞ্ছিত, রঞ্জ, গঞ্জিত, ব্যঞ্জন ইত্যাদি।
(গ) য-এর পর প্রাচীন সংস্কৃত উচ্চারণ ছিল ‘ই অ’-এর মতো কিন্তু বাংলা উচ্চারণে এটি পরিষ্কার ‘জ’। এর প্রাচীন উচ্চারণের স্মারক হচ্ছে ‘য’ এর নিচে বিন্দু দিয়ে লেখা ‘য়’ আমরা যেটাকে অন্তঃস্থ ‘অ’ বলি। বাংলা ভাষায় এ দুটি বর্ণের উচ্চারণের কোনো পার্থক্য নেই। যথা—যম (জম্), জামাই (জামাই), যদি (জাদি), জগৎ (জগোত) ইত্যাদি।
(ঘ) আধুনিক বাংলা ভাষার উচ্চারণগত দিক থেকে এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। সংস্বকৃত ‘ং’ যে বর্ণের পরে সংযুক্ত হতো, যে স্বরবর্ণকে আংশিকভাবে সানুনাষিক করে দিত। বাংলায় ং-এর উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ, (অঙশো), বংশ (বঙেশা), কংস (কঙেশা) হংস (হঙ্স) ইত্যাদি।
(ঙ) ‘ঃ’ (বিসর্গ) এর উচ্চারণ ছিল অনেকটা ‘অর্ধ ‘হ’ এর মতো। বাংলায় কেবল বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রাচীনকালের ‘ঃ’ (বিসর্গ) উচ্চারণের রেশ শুনতে পাই। যেমন—আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্), উঃ (উহ্), ওঃ (ওই্) ইত্যাদি।
৫। প্রশ্ন : বাংলা উচ্চারণে ‘অ’ কখন ‘ও’ রূপে উচ্চারিত হয়? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : বাংলা উচ্চারণে অ ও রূপে উচ্চারিত হওয়ার পাঁচটি নিয়ম হলো:
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পর ‘্য’ (য) ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন—বন্যা (বোন্না), গণ্য (গোনেনা), কথ্য (কোতথো) ইত্যাদি।
(খ) একাক্ষর শব্দের প্রথম ‘অ’ এবং পরে দন্ত্য ‘ন’ থাকলে ‘ও’ কারের মতো উচ্চারণ হয়। যেমন—মন (মোন্), বন (বোন), জন (জোন্) ইত্যাদি।
(গ) তিন বা তার অধিক বর্ণে গঠিত শব্দের মধ্যে ‘অ’ ও-কাররূপে উচ্চারিত হয়। যেমন—আদর (আদোর্), বেতন (বেতোন্), ওজন (ওজোন্) ইত্যাদি।
(ঘ) ‘ত’ বা ‘ইত’ প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণ পদের শেষ ‘অ’ ধ্বনি ‘ও’ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন—উপনীত (উপোনিতো), রক্ষিত (রোকিখতো), নত (নতো) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দান্তে যুক্তবর্ণ থাকলে অন্তিম ‘অ’ ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন—ভক্ত (ভকেতা), পদ্য (পোদেদা), চিহ্ন (চিনেহা) ইত্যাদি।
৬। প্রশ্ন : উদাহরণসহ ‘ব’ ফলা উচ্চরণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : ‘ব’ ফলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণে ব-ফলা সংযুক্ত হলে সে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন—ধ্বনি (ধোনি), স্বাধিকার (শাধিকার্), স্বদেশ (শদেশ্) স্বাগত (শোগতো) ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), বিদ্বান (বিদ্দান), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) উৎ (উদ্) উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের ‘ৎ’ (দ্)-এর সঙ্গে ব-ফলার ‘ব’ বাংলা উচ্চারণে লুপ্ত হয় না। যেমন—উদ্বেগ (উদবেগ), উদ্বোধন (উদবোধোন্), উদ্বাস্তু (উদ্বাস্তু) ইত্যাদি।
(ঘ) বাংলা শব্দে ক থেকে সন্ধির সূত্রে আগত ‘গ’-এর সঙ্গে ‘ব’ ফলা যুক্ত হলে ‘ব’-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন—দিগ্বিদিক (দিগিবদিক্), দ্বিগ্বলয় (দিগ্বলয়), দিগ্বিজয় (দিগবিজয়্) ইত্যাদি।
(ঙ) ‘ব’ অথবা ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ‘ব’-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমন—বাব্বা (বাব্বা), সাব্বাশ (শাব্বাশ্), লম্ব (লমবো) ইত্যাদি।
৭। প্রশ্ন : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের মোট ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : য-ফলা, র-ফলা, ল-ফলা উচ্চারণের ৫টি নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) আদ্যবর্ণে য-ফলা যুক্ত হলে বর্ণটি অ-কারান্ত বা আ-কারান্ত হলে উচ্চারণ ‘অ্যা’ কারান্ত হয়ে যায়। যেমন—ব্যথা (ব্যাথা), ন্যায় (ন্যায়্) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসথো), কণ্ঠ্য (কনঠো) ইত্যাদি।
(গ) পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা সংযুক্ত হলে তার উচ্চারণ ও-কারান্ত হয়ে থাকে। যেমন—প্রকাশ (প্রোকাশ্), গ্রহ (গ্রোহো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।
(ঘ) র-ফলা যদি পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্যে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তবে সে বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যেমন—রাত্রি (রাতত্রি), ছাত্র (ছাতেত্রা), মাত্র (মাতেত্রা) ইত্যাদি।
(ঙ) ল-ফলা শব্দের মধ্যে বা অন্তে বসলে তার র-ফলার মতো দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন—অশ্লীল (অসিস্লল), শ্লেষ (স্লেশ), শ্লথ (স্লোথো) ইত্যাদি।
৮। প্রশ্ন : উদাহরণসহ ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম লেখো।
উত্তর : ‘ক্ষ’ ও ‘ঞ্জ’ উচ্চারণের নিয়ম তুলে ধরা হলো :
(ক) শব্দের প্রথমে ‘ক্ষ’ থাকলে তার উচ্চারণ হয় ‘খ’। যেমন—ক্ষমা (খমা), ক্ষণ (খন্) ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকখোতা), পক্ষ (পোকখো)।
(গ) শব্দের মাঝে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গ্যঁ-এর (গ) মতো হয়। যেমন—জ্ঞান (গ্যাঁন্), জ্ঞাপক (গ্যাঁপোক্) ইত্যাদি।
(ঘ) শব্দের আদিতে ‘জ্ঞ’-এর উচ্চারণ গঁ বা গ্যঁ-এর মতো হবে। যেমন—জ্ঞাপন (গ্যাঁপোন্), অজ্ঞান (অগ্গ্যাঁন্), বিজ্ঞপ্তি (বিগগোঁপিত) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের অন্তে ‘জ্ঞ’ থাকলে উচ্চারণ গঁ, বা গোঁ-এর মতো হবে। যেমন—অবজ্ঞা (অবোগ্গাঁ), অজ্ঞ (অগগোঁ), বিজ্ঞ (বিগেগাঁ) ইত্যাদি।
৯। প্রশ্ন : শব্দের শেষে কোন কোন ক্ষেত্রে ‘অ’-উচ্চারণ লোপ পায় না? উদাহরণসহ ৫টি নিয়ম লেখো।
উত্তর : কথ্য বাংলায় শব্দের শেষের অ ধ্বনি সাধারণত লোপ পায়। তবে এমন কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে অন্ত্য অ-ধ্বনি লোপ পায় না এবং সংবৃত উচ্চারণ হয়। এগুলো হলো :
(ক) শেষ ব্যঞ্জনের অব্যবহিত আগে অনুস্বার বা বিসর্গ থাকলে : ধ্বংস, বংশ, মাংস, দুঃখ ইত্যাদি।
(খ) শব্দটি ত বা ইত প্রত্যায়ান্ত হলে : গত, শত, নন্দিত, লজ্জিত পুলকিত ইত্যাদি।
(গ) শব্দটি তুলনাবাচক তর, তম প্রত্যায়ান্ত হলে : বৃহত্তর, মহত্তর, বৃহত্তম, মহত্তম ইত্যাদি।
(ঘ) ঈয় বা অনয় প্রত্যায়ান্ত শব্দে : পানীয়, নমনীয়, দেশীয় ভারতীয় ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের শেষ ব্যঞ্জনটি হ হলে কলহ, দেহ, দাহ, প্রবাহ, মোহ, স্নেহ, লৌহ ইত্যাদি।
১০। প্রশ্ন : অনুস্বার (ং) বিসর্গ (ঃ) ও চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) এর উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : অনুস্বার, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দু নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
ং (অনুস্ব্বার) : আধুনিক বাংলা ভাষায় উচ্চারণগত দিক থেকে ‘ং’ (অনুস্বার) এবং হসন্তযুক্ত ‘ঙ’ সম্পূর্ণ অভিন্ন। ং-কার উচ্চারণ সর্বত্র ‘অঙ’ হয়। যেমন—অংশ (অংশো), মাংস (মাঙশো), বাংলা (বাঙলা), সংগ্রাম (সঙগ্রাম), সংজ্ঞা (সঙ্গগাঁ) ইত্যাদি।
ঃ (বিগর্স) : সংস্কৃতে বিসর্গের উচ্চারণ ছিল অনেকটা অর্ধ হ-এর মতো। বাংলায় আবেগ শব্দ অর্থাৎ বিস্ময়সূচক অব্যয়ের ক্ষেত্রে বিগর্স ব্যবহৃত হয়। যেমন—উঃ (উহ্), আঃ (আহ্), বাঃ (বাহ্) ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) থাকলে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’ এর উচ্চারণ ‘ও’ এর মতো হয়। যেমন—অতঃপর (অতোপপর), নিঃশেষ (নিশশেশ্), দুঃখ, (দুকখো), নিঃসঙ্গ (নিশ্শঙগো) ইত্যাদি।
সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম
প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের ছয়টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
অথবা, বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : বানান ব্যাকরণের একটি বিবর্তনশীল অধ্যায়। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা বানান আজকের পর্যায়ে এসেছে। বানানের এই পরিবর্তনের ধারায় বাংলা একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম থেকে ছয়টি নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো :
ক. তৎসম শব্দের বানান অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নদী, ভাষা ইত্যাদি।
খ. যেসব তৎসম শব্দের বানানে ই এবং ঈ বা এদের কার চিহ্ন অথবা উ এবং ঊ বা এদের কার চিহ্নের উভয় রূপই শুদ্ধ, সেসব শব্দের বানানে কেবল শুধু ই এবং উ বা এদের কার চিহ্ন বসবে। যেমন : বাড়ি, উনিশ ইত্যাদি।
গ. তৎসম এবং অতৎসম শব্দে কোথাও রেফের পরে দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্জন, অর্চনা, ধর্ম, কীর্তন ইত্যাদি।
ঘ. শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : ক্রমশ, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ. সন্ধি দ্বারা গঠিত শব্দে ক খ গ ঘ এর আগে ং এবং ঙ দুটোই শুদ্ধ। যেমন : অহঙ্কার/অহংকার, সঙ্গীত/সংগীত ইত্যাদি।
চ. নঞর্থক অব্যয় পদ আলাদাভাবে বসবে। যেমন : জানি না, দেখি নি ইত্যাদি।
ছ. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।
জ. বাংলা ক্রিয়াপদের আন্তঃস্থিত ন ণ হয় না।
যেমন—হবেন, মারেন, যাবেন, করেন, খাবেন ইত্যাদি।
ঝ. ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই-কার হবে। যেমন- বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি ইত্যাদি।
১। প্রশ্ন : উচ্চারণরীতি কাকে বলে? বাংলা ভাষা উচ্চারণের চারটি নিয়ম লেখো।
উত্তর : শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
(ক) শব্দের আদ্য ‘অ’-এর পরে ‘য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’ কারের মতো হয়। যেমন-অদ্য (ওদেদা), কন্যা (কোন্না) ইত্যাদি।
(খ) পদের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণদ্বিত্ব ঘটে থাকে। যেমন—বিশ্ব (বিশেশা), পক্ক (পকেকা) ইত্যাদি।
(গ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন-সূক্ষ্ম (শুকেখা), যহ্মা (জক্খাঁ) ইত্যাদি।
(ঘ) পদের মধ্যে কিবা অন্ত্যে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত হলে সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন—সন্ধ্যা (শোন্ধা), স্বাস্থ্য (শাসেথা) ইত্যাদি।
(ঙ) শব্দের মাঝে বা শেষে ‘ক্ষ’-এর উচ্চারণ ‘ক্খ’ হয়ে থাকে। যেমন—দক্ষতা (দোকেখাতা), পক্ষ (পোকেখা) ইত্যাদি।.
মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮
ব্যাকরণ এর বিষয়বস্তু:
প্রশ্ন: ব্যাকরণে কী কী বিষয় আলোচিত হয ?উদাহরণসহ আলোচনা কর । কু.বো.০১, ব. বো.-০২,রা.বো-২০০০
ব্যাকরণ: ব্যাকরণ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। সুতরাং, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।
বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় :
প্রতিটি ভাষারই ৪টি মৌলিক অংশ থাকে- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। আর তাই সব ভাষার ব্যাকরণই প্রধানত এই ৪টি অংশ নিয়েই আলোচনা করে। অর্থাৎ, বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয়/ অংশ ৪টি-
১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology): ধ্বনিতত্ত্ব: ব্যাকরণের এ অংশে ধ্বনি, ধ্বনির উচ্চারণ, ধ্বনির বিন্যাস, ধ্বনির পরিবর্তন, বর্ণ, সন্ধি ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান প্রভৃতি ধ্বনি সম্বন্ধীয় বিষয় আলোচিত হয়।
২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology) : এ অংশে শব্দের প্রকার, পদের পরিচয়, শব্দ গঠন, উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি, লিঙ্গ, বচন, ধাতু, শব্দরূপ, কারক, সমাস, ক্রিয়া-প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, ক্রিয়ার ভাব, শব্দের ব্যু ৎপত্তি ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা থাকে।
৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) : বাক্য, বাক্যের অংশ, বাক্যের প্রকার, বাক্য বিশ্লেষণ, বাক্য পরিবর্তন, পদক্রম, বাগ্ধারা বা বাগিবধি বা বাক্যরীতি, বাক্য সংকোচন, বাক্য সংযোজন, বাক্য বিয়োজন, যতিচ্ছেদ বা বিরাম চিহ্ন প্রভৃতি বিষয় এ অংশে আলোচিত হয়।
৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics):শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার ,অর্থের প্রকারভেদ; মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ
এছাড়াও ব্যাকরণে আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অভিধানতত্ত্ব(Lexicography), ছন্দ ও অলংকার, ইত্যাদি।
প্রশ্ন: অ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁটি নিয়ম লেখ।/অথবা, প্রমিত বাংলা উচ্চারনের পাচঁটি নিয়ম লেখ ।
১। শব্দের দ্বিতীয় স্বর ‘অ’, আ, ও, হলে অ –এর উচ্চারণ স্বাভাবিক হয়। যেমন- অন্ন, অর্থ, অক্ষর , কলম, অমল ইত্যাদি ।
২। স’ বা সম’ উপসর্গযুক্ত আদি অ-ধ্বনি স্বাভাবিক হয়। যেমন: সস্নেহ, সহাস্য, সজীব, সরল, সবিনিয় ইত্যাদি ।
৩। না অর্থে অ বা অন থাকলে অ – ধ্বনি স্বাভাবিক বা বিবৃত হয়। যেমন: অমূল্য, অমৃত, অস্থির , অনিয়ম, আনাগত ইত্যাদি।
৪।অ – এর নিজস্ব উচ্চারন স্বাভাবিক বা বিবৃত হয় । যেমন: যেমন: জল, সরল, দখল, ইত্যাদি।
৫।অ – স্বরধ্বনিযুক্ত একাক্ষর (sylleble) শব্দের অ-এর উচ্চারণ স্বাভাবিক। যেমন: নদ্, টব, শব্, দম্, রব্ ইত্যাদি
মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮
ক্ষুদে গল্প লেখা
শিরোনাম : ইঁদুরের বৈঠক
লোকালয়ের কাছেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ের গুহায় বাস করত একদল ইঁদুর। পাহাড়ের গুহায় কোনো খাবার পাওয়া যেত না বলে তাদের লোকালয়ে যেতে হতো। কিন্তু সেখানে থাকত একটি হুলো বিড়াল। বিড়ালের অত্যাচারে ইঁদুররা লোকালয় থেকে খাদ্য জোগাড় করতে না পেরে একসময় খুব অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। বাঁচার একটা উপায় বের না করলে ইঁদুরের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিড়ালের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, এ বিষয়ে ইঁদুরদের একটা বৈঠক বসল। বৈঠকে অনেক ইঁদুরের সমাবেশ ঘটল। বাঁচার উপায় হিসেবে অনেকেই নানারকম পরামর্শ ও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কারো প্রস্তাবই সভাপতির আসনে বসা বৃদ্ধ ইঁদুরের পছন্দ হলো না।
অবশেষে এক বিজ্ঞ ইঁদুর অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে বলল—আমি বলি কি, ওই হুলো বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া হোক, তাহলে ঘণ্টার আওয়াজ শুনেই আমরা সাবধান হতে পারব। এই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত সব ইঁদুরই হাতে তুড়ি বাজিয়ে রাজি হয়ে গেল। বৈঠকের সভাপতি বৃদ্ধ ইঁদুর এতক্ষণ বসে বসে সবার পরামর্শ শুনছিল। কিন্তু এবার আর কিছু না বলে পারল না। এবার সে বলল, আমার প্রবীণ বিজ্ঞ বন্ধু যা বললেন তা খুবই বুদ্ধির কথা বটে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিতে পারলে আমাদের উদ্যোগ সফল হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে—ওই ঘণ্টাটা বিড়ালের গলায় বাঁধতে যাবে কে?
সভাপতির কথায় বৈঠকের অন্যান্য ইঁদুর চুপ হয়ে গেল। কিন্তু ঘণ্টা বাঁধার উপায় হিসেবে কেউ কোনো উত্তর দিতে পারল না। পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেও উত্তর খুঁজে পেল না। আসলে প্রস্তাব দেওয়া যত সহজ, তা বাস্তবে রূপায়িত করা এত সহজ নয়।
শিরোনাম : একতার ক্ষমতা
এক চাষির ছয় সন্তান। এক মেয়ে, পাঁচ ছেলে। ছেলেদের মধ্যে শান্তি ছিল না। সব সময় ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। এতে চাষির মনেও ছিল অশান্তি। ছেলেদের প্রতি তাঁর উপদেশ-নির্দেশ কোনো কাজে এলো না। বৃদ্ধ বয়সে চাষি একদিন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদের বললেন—তোরা প্রত্যেকে একটা করে কঞ্চি নিয়ে সেগুলো একসঙ্গে একটা আঁটি বেঁধে আমার কাছে নিয়ে আয়।
বাবার কথায় ছেলেরা কঞ্চি জোগাড় করে তা নিয়ে একটা আঁটি বেঁধে আনল। এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—এবার তোরা প্রত্যেকে এই আঁটিটি ভাঙার চেষ্টা কর, দেখি কে পারিস।
বাবার কথায় ছেলেরা একে একে প্রত্যেকের কঞ্চির আঁটি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। চাষি এবার আঁটিটি খুলতে বললেন। তারপর প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি দিলেন। ছেলেরা বুঝতে পারল না তাদের বাবার আসল উদ্দেশ্য কী? সবার হাতে কঞ্চি দেওয়ার পর এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—তোদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি আছে তো! এবার তোরা যার যার কঞ্চিটি ভেঙে ফেল। বাবার কথা শেষ হতে না হতেই ছেলেরা প্রত্যেকে তাদের নিজের হাতের কঞ্চি পটাপট ভেঙে ফেলল। চাষি এবার তাঁর ছেলেদের উদ্দেশে বললেন—দেখলি তো! তোরা যদি এভাবে মিলেমিশে একজোট হয়ে থাকিস, তবে কোনো শত্রুই তোদের ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ একতার ক্ষমতা অনেক বেশি। আর যদি তোরা সব সময় ঝগড়া-বিবাদ করিস, আলাদা হয়ে থাকিস, একজন বিপদে পড়লে তার পাশে সবাই না দাঁড়াস, তাকে সাহায্য না করিস, তবে শত্রুরা তোদের একা পেয়ে ঘায়েল করে দেবে।
শিরোনাম : শক্তি পরীক্ষা
প্রশ্ন:শক্তিপরীক্ষা শিরোনামো একটি গল্প লেখ ?সূর্য আর বাতাসের মধ্যে একদিন প্রচণ্ড তর্ক শুরু হলো। দুজনের মধ্যে কার শক্তি বেশি, এই ছিল তর্কের বিষয়। কেউ কারো কাছে হার মানতে চায় না বলে তর্কেরও শেষ হয় না। শেষ পর্যন্ত দুজনেই বুঝতে পারল, এভাবে তর্ক চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। তাই কথা কাটাকাটি থামিয়ে হাতে-কলমে শক্তি পরীক্ষার একটা উপায় বের করা দরকার। হঠাৎ বাতাসের মাথায় একটা বুদ্ধির উদয় হলো, সে সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল, ওই দেখো রাস্তা দিয়ে একটা লোক যাচ্ছে। যে ওই লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলাতে পারবে সেই হবে বিজয়ী। যে বিজয়ী হবে তাকে বেশি শক্তিশালী বলে মেনে নিতে হবে।
দুজনের মধ্যে ঠিক হলো, প্রথমে বাতাসই জামা খোলার চেষ্টা শুরু করবে। শুরু হলো। বাতাস তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বইতে শুরু করল। বাতাস বইতে শুরু করলে লোকটা আরো ভালোভাবে গায়ে জামা-কাপড় জড়িয়ে নিল। বাতাস তার শক্তি আরো বাড়িয়ে দিলেও কাজ হলো না। বাতাস আরো প্রস্তুতি নিয়ে এবার প্রবল জোরে বইতে শুরু করল। ঠাণ্ডা বাতাসে লোকটার শরীর কাঁপছিল। এবার সে আগের পরা জামার ওপর আরো একটা মোটা কোট পরে নিয়েছে। বাতাসের গতিবেগ থেকে রক্ষার জন্য লোকটি দুহাতে জামা-কাপড় চেপে ধরে রেখেছে। বাতাস তো হতাশ। লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলা বাতাসের পক্ষে সম্ভব হলো না। এবার সূর্য তার শক্তির পরিচয় দিতে শুরু করল। বাতাসের শীতল প্রবাহের পর সূর্যের তাপে লোকটার বেশ আরাম বোধ হলো। আস্তে আস্তে সূর্যের উত্তাপ বাড়তে থাকলে লোকটা তার গায়ের কোটটা খুলে ফেলল। উত্তাপ যখন প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর হয়ে উঠল, তখন আর তার সহ্য হচ্ছিল না। একে একে সে গায়ের সব জামা-কাপড় খুলে গা ঠাণ্ডা করতে পাশের এক নদীতে নেমে গেল। পরীক্ষায় প্রমাণিত হলো, বাতাসের চেয়ে সূর্যের শক্তি অনেক বেশি।
একতাই বল!
একতার শক্তি দিয়ে যে আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হওয়া কোনো কাজকেও অনায়াসে সম্ভব করা যায় সেটা নতুন করে আরও একবার প্রমাণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থের একটি ট্রেনের যাত্রীরা। ট্রেন থেকে নামার সময় প্লাটফর্ম ও ট্রেনের মাঝখানে আটকে যাওয়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে এই যাত্রীরা সম্মিলিত ভাবে কয়েক হাজার টন ওজনের একটি ট্রেনের বগিকে একদিকে খানিকটা কাত করেন। আর তাতেই প্রাণে রক্ষা পায় ঘটনাক্রমে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ব্যক্তির জীবন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নাম প্রকাশ না হওয়া ঐ ব্যক্তি পার্থের একটি স্টেশনে নামতে গেলে তার একটি পা প্লাটফর্ম ও ট্রেনের দরজার মাঝে থাকা মাত্র ৫ সেন্টিমিটারের ছোট ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকে আটকে যায়। এ অবস্থায় তাত্ক্ষণিকভাবে স্টেশন ও ট্রেনের কর্মীরা ট্রেনচালককে স্টেশন থেকে ট্রেন পুনরায় ছাড়তে না করেন। এরপর তারা নানাভাবে ৫/৬ মিনিট সময় ধরে ঐ ব্যক্তিটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তবে এতেও কাজ না হওয়ায় ট্রেনের সকল যাত্রীকে বগিটির একদিকে জড়ো হতে বলা হয় যাতে করে ট্রেনটি কিছুটা কাত হলে ঐ ব্যক্তিকে বের করে আনা যায়। তবে তাদের এই প্রথম বুদ্ধিটি তেমন কোনো কাজে না আসায় যাত্রীদের সবাই একে একে ট্রেন ছেড়ে নিচে নেমে আসেন। সেই সাথে শুরু হয় ট্রেনটিকে একদিকে ধাক্কা দিয়ে সামান্য একটু কাত করার চেষ্টা। এ সময় এলোমেলোভাবে ট্রেনটিকে ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো করে নড়ানো হলে তা ঐ ব্যক্তির আটকে যাওয়া পায়ে পুনরায় বড় কোনো জখম তৈরি করতে পারতো। আর তাই লোকটিকে বাঁচাতে আসা যাত্রীরা এক-দুই-তিন গুনে ট্রেনের বগিটিকে বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় একদিকে কাঁত করেন। আর তাদের এই প্রচেষ্টার ফসল হিসেবেই বের করে আনা সম্ভব হয় ভাগ্যবান লোকটিকে।
ক্ষুদে গল্প লেখা
প্রশ্ন: সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য লেখ
প্রশ্ন: সমাস কাকে বলে? সমাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১৮
সমার্থক শব্দ
প্রশ্ন:সমার্থক বা প্রতি শব্দ বলতে কি বোঝ ? সামর্থক শব্দের প্রয়োজন লেখ ?
উত্তর : সমার্থক শব্দের অর্থ হল সমার্থবোধক,সমার্থজ্ঞাপক,একার্থবোধক, এক বা অনুরূপ অর্থবিশিষ্ট। বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো শব্দ আছেন যা অন্য একটি শব্দের প্রতিশব্দ অর্থাৎ অন্য একটি শব্দ একই অর্থ প্রকাশ করে। একেই সমার্থক শব্দ বলে।
অথবা যে সকল শব্দ একই অর্থ প্রকাশ করে তাকে সমার্থক শব্দ বলে।
যেমন:
অগ্নি শব্দের প্রতিশব্দ আগুন, অনল ,সর্বভূক,দহন,শিখা।
আগুন=আগুনে সবকিছু পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায়।
অনল=আমার সুখের ঘর অনলে পুড়ে ছাই হল।
সর্বভুক=আগুন হল সর্বভূক ,মূহুর্তেই সবকিছু খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলে।
গহন=দহনে পুড়িল হৃদয দেখিল না কেউ।
শিখা=জ্বেলে দে তোর বিজয় শিখা।
১.সমার্থক শব্দের মাধ্যমে ভাষার শব্দভানডার সমৃদ্ধ হয়
২.সমার্থক শব্দের ব্যবহারে একই শব্দ বার বার প্রয়োগজনিত সমস্যা দুর হয়।
৩.এর ব্যবহার প্রকাশশৈলীতে অভিনবত্ব আনয়ন করে।
৪.বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
৫.মনোভাবের সার্থক প্রকাশ ঘটাতে সমার্থশব্দ সাহায্য করে।
৬.এর মাধ্যমে পাঠক নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হতে পারে।
সাহিত্যের মিল দেওয়ার জন্য ,বক্তৃতা আকর্ষণীয় করার জন্য সমার্থক শব্দের ভুমিকা খুবেই গুরুত্বপূর্ণভ। যেমন :সাগর জলে সিনান করি সাজল এলোচুলে। এখানে সাগর এর প্রতিশব্দ সমুদ্র ব্যবহার করলে ছন্দের পতন ঘটে।
প্রশ্ন: যে কোন পাঁচটি শব্দের ২টি/৩টি করে সমার্থক শব্দ লেখ?
বন = কানন অরণ্য, জঙ্গল,
অপূর্ব =আশ্চর্য, অলৌকিক, অপরূপ,
ঈশ্বর = সৃষ্টিকর্তা, ভগবান, বিধাতা
অক্ষয় = ক্ষয়হীন, চিরন্তন, নাশহীন, অশেষ,
মহৎ = উন্নত, উদার, মহান,
কতিপয় সমার্থক শব্দের তালিকাঃ--
সূর্য = দিবাকর, প্রভাকর, ভাস্কর, রবি, তপন, দিনেশ, ভানু, রোদ, সবিতা, আদিত্য, মার্তন্ড, দিনমনি, দিননাথ, দিবাবসু, অর্ক, অংশু, কিরণমালী, অরুণ, মিহির, পুষা, সূর, মিত্র, দিনপতি, বালকি, অর্ষমা
পৃথিবী = ধরা, ধরাধাম, ধরণী, ধরিত্রী, ভুবন, ভূ, বসুধা, বসুন্ধরা, বিশ্ব, পৃথিবী, দুনিয়া, জগত, সংসার, সৃষ্টি, মর্ত, মর্তধাম, মহী, মেদিনী, অবনী, স্থলভাগ, ভূ-মণ্ডল, ইহলোক
আলো = বাতি, প্রদীপ, জ্যোতি, কিরণ, দীপ্তি, প্রভা,
সাগর = সমুদ্র, বারিধি, পারাবার, পাথার, বারীন্দ্র, অর্ণব, সিন্ধু, জলনিধি, জলধি, জলধর, সায়র, জলাধিপতি, রত্নাকর , বরুণ, দরিয়া, বারীন্দ্র, বারীশ, পয়োনিধি, তোয়ধি, বারিনিধি, অম্বুধি
অগ্নি = আগুন, জ্বালানি, তেজ, শিখা, অনল, বহ্নি, হুতাশন, পাবক, দহন, সর্বভূক, বৈশ্বানর, কৃশানু, বিভাবসু, সর্বশুচি
পর্বত = পাহাড়, অচল, অদ্রি, গিরি, ভূধর, শৈল, অটল, চূড়া, নগ, শৃঙ্গী, শৃঙ্গধর, মহীধর, মহীন্দ্র
সোনা= স্বর্ণ, কনক, কাঞ্চন, সুবর্ণ, হেম, হিরণ্য, হিরণ
বন = কানন অরণ্য, জঙ্গল, বিপিণ, কুঞ্জ, কান্তার, অটবি, বনানী, গহন
পাখি = পক্ষী, খেচর, বিহগ, বিহঙ্গ, বিহঙ্গম, পতত্রী, খগ, অণ্ডজ, শকুন্ত, দ্বিজ
আকাশ = গগন, অম্বর, নভঃ, ব্যোম, ঊর্ধ্বলোক, মেঘমণ্ডল, আসমান, নভোমণ্ডল, খগ, অন্তরীক্ষ
অন্ধকার = আঁধার, তমসা, তিমির, তমঃ, তমিস্রা, আন্ধার, তমস্র
ঈশ্বর = সৃষ্টিকর্তা, ভগবান, বিধাতা, বিষ্ণু, আল্লাহ, খোদা, বিশ্বপতি, পরমাত্মা, জগদীশ্বর, আদিনাথ
দেবতা = অমর, দেব, সুর, ত্রিদশ, অজর, ঠাকুর
জল = পানি, অম্বু, জীবন, নীর সলিল, বারি, উদক, পয়ঃ, তোয়, অপ, জীবন, পানীয়
বৃক্ষ = গাছ, শাখী, বিটপী, অটবি, দ্রুম, মহীরূহ, তরু, পাদপ
বায়ু = বাতাস, অনিল, পবন, হাওয়া, সমীর, সমীরণ, মারুত, গন্ধবহ
চাঁদ = চন্দ্র, নিশাকর, বিধু, শশধর, শশাঙ্ক, সুধাংশু, হিমাংশু, চন্দ্রমা, শশী, সুধাকর, সোম, ইন্দু, নিশাকান্ত, মৃগাঙ্ক, রজনীকান্ত
মানুষ = লোক,মানব, মনুষ্য, , জন, নৃ, নর
মৃত্যু = ইন্তেকাল, ইহলীলা-সংবরণ, ইহলোক ত্যাগ, চিরবিদায়, জান্নাতবাসী হওয়া, দেহত্যাগ,
পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, পরলোকগমন, লোকান্তরগমন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ, স্বর্গলাভ
মহৎ = উন্নত, উদার, মহান, বড়, বিশিষ্ট, বিশাল, বৃহৎ, মস্ত, মহানুভব, বদান্য, মহীয়ান
পণ্ডিত = বিদ্বান, জ্ঞানী, বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ
চালাক = চতুর, বুদ্ধিমান, নিপুণ, কুশল, ধূর্ত, ঠগ, সপ্রতিভ
সাহসী = অভীক, নির্ভীক
অপূর্ব =আশ্চর্য, অলৌকিক, অপরূপ, অভিনব, বিস্ময়কর, আজব, তাজ্জব, চমকপ্রদ, অবাক করা, মনোরম, অদ্ভুত, সুন্দর
উত্তর = জবাব, প্রতিবাক্য, মীমাংশা, সাড়া, সিদ্ধান্ত
কপাল = ললাট, ভাল, ভাগ্য, অদৃষ্ট, নিয়তি, অলিক
ইচ্ছা = আকাঙ্ক্ষা, অভিলাষ, অভিরুচি, অভিপ্রায়, আগ্রহ, স্পৃহা, কামনা, বাসনা, বাঞ্চা, ঈপ্সা, ঈহা
পর্দা = আড়াল, পরদা, পর্দা, যবনিকা, মশারি, অভিনয়শেষ, অবগুণ্ঠন, আবরণ, ছদ্মবেশ, ত্তড়, আচ্ছাদন, প্রাবরণ, মুড়ি, বিছানার চাদর,
ঝিল্লী, জীবদেহের ঝিল্লি, উদ্ভিদ্দেহের ঝিল্লি
মাটি = ক্ষিতি, মৃত্তিকা
উত্তম = সেরা, শ্রেষ্ঠ, প্রকৃষ্ট, ভালো, অগ্রণী, অতুল
দৃষ্টান্ত = উদাহরণ, নিদর্শন, নজির, নমুনা, উল্লেখ, অতিষ্ঠা
একতা = ঐক্য, ঐক্যবদ্ধ, মিলন, একত্ব, অভেদ, সংহতি, একাত্মতা, একীভাব
পূর্ণ = সম্পূর্ণ, আস্ত, গোটা, অক্ষত, অখন্ড, সমগ্র, সমাগ্রিক
আদি = প্রথম, প্রাচীন, মূল, আরম্ভ, অগ্র, পূর্ব,
আইন = নিয়ম, কানুন, বিধি, বিধান, ধারা, অনুবিধি। বিহিতক, অধিনিয়ম, উপবিধি, বিল, নিয়মাবলি, বিধিব্যবস্থা
আসল = প্রকৃত, খাঁটি, মূলধন, মৌলিক, মূল, যথার্থ
আনন্দ = সুখ, হাসি, খুশি, হাসিখুশি, মজা, হর্ষ, হরষ, পুলক,স্ফূতর্ত, সন্তোষ, পরিতোষ, প্রসন্নতা, আমোদ, প্রমোদ, উল্লাস, তুষ্টি
দু:খ = কষ্ট, মেহনত, যন্ত্রনা, ক্লেশ, আয়াস
অবস্থা = দশা, রকম, প্রকার, গতিক, হাল, স্তিতি, অবস্থান, পরিবেশ, ঘটনা, ব্যাপার, প্রসঙ্গ, হালচাল
অক্ষয় = ক্ষয়হীন, চিরন্তন, নাশহীন, অশেষ, অনন্ত, অব্যয়, অবিনাশী, অলয়, অনশ্বর, লয়হীন, অমর, স্থায়ী
খ্যাতি = যশ, প্রসিদ্ধি, সুখ্যাতি, সুনাম, নাম, সুবাদ, প্রখ্যাতি, সুযশ, বিখ্যাতি, নামযশ, নামডাক, প্রখ্যা, প্রচার, হাতযশ, প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা।
কুল = বংশ, গোত্র, জাতি, বর্ণ, গণ, সমূহ, অনেক, যূথ, জাত, শ্রেণী,
ফুল = পুষ্প, কুসুম, প্রসূন, রঙ্গন
পদ্ম = কমল, উৎপল, সরোজ, পঙ্কজ, নলিন, শতদল, রাজীব, কোকনদ, কুবলয়, পুণ্ডরীক, অরবিন্দ, ইন্দীবর, পুষ্কর, তামরস, মৃণাল, সরসিজ, কুমুদ
মেঘ = জলধর, জীমৃত, বারিদ, নীরদ, পয়োদ, ঘন, অম্বুদ, তায়দ, পয়োধর, বলাহক, তোয়ধর
বিদ্যুত = বিজলী, ত্বড়িৎ, ক্ষণপ্রভা, সৌদামিনী, চপলা, চঞ্চলা, দামিনী, অচিরপ্রভা, শম্পা
নদী = তটিনী, স্রোতস্বিনী, স্রোতস্বতী, তরঙ্গিনী, প্রবাহিনী, শৈবালিনী, গাঙ, স্বরিৎ, নির্ঝরিনী, কল্লোলিনী
নৌকা = নাও, তরণী, জলযান, তরী
তীর = কূট, তট, সৈকত, কূল, পাড়, পুলিন, ধার, কিনারা
ঢেউ= তরঙ্গ, ঊর্মি, লহরী, বীচি, মওজ
রাত = রাত্রি, রজনী, নিশি, যামিনী, শর্বরী, বিভাবরী, নিশা, নিশিথিনী, ক্ষণদা, ত্রিযামা
দিন = দিবস, দিবা, দিনমান
দেহ = গা, গতর, গাত্র, তনু, শরীর, বিগ্রহ, কায়, কলেবর, অঙ্গ, অবয়ব, , কাঠামো, আকৃতি
ঘর = গৃহ, আলয়, নিবাস, আবাস, আশ্রয়, নিলয়, নিকেতন, ভবন, সদন, বাড়ি, বাটী, বাসস্থান
ধন = অর্থ, বিত্ত, বিভব, সম্পদদেহ,
দ্বন্দ্ব = বিরোধ, ঝগড়া, কলহ, বিবাদ, যুদ্ধ
নারী = অবলা, কামিনী, মহিলা, স্ত্রীলোক, রমণী, ললনা, অঙ্গনা, ভাসিনী, কান্তা, সীমন্তনী
স্ত্রী = পত্নী, জায়া, সহধর্মিণী, ভার্যা, বেগম, বিবি, বধূ, অর্ধাঙ্গী, জীবন সাথী, বউ, গৃহিণী, গিন্নী
পিতা = বাবা, আব্বা, জনক,
মাতা = মা, গর্ভধারিণী, প্রসূতি, জননী, জন্মদাত্রী
পুত্র = ছেলে, তনয়, নন্দন, সুত, আত্মজ
কন্যা = মেয়ে, দুহিতা, দুলালী, আত্মজা, নন্দিনী, পুত্রী, সূতা, তনয়া
কোকিল = পরভৃত, পিক, বসন্তদূত
গরু = গো, গাভী, ধেনু
রাজা = নৃপতি, নরপতি, ভূপতি, বাদশাহ
স্বর্গ = দেবলোক, দ্যুলোক, বেহেশত, সুরলোক, দ্যু, ত্রিদশালয়, ইন্দ্রালয়, দিব্যলোক, জান্নাত
বিলাস = আরাম, শৌখিনতা
উঁচু = লম্বা, দীর্ঘ, মহৎ, বড় বড়, উঁচা, উচ্চ, তুঙ্গ, সমুন্নত, আকাশ-ছোঁয়া, গগনচূম্বী, অভ্রভেদী, অত্যুচ্চ, সুউচ্চ
অক্লান্ত = ক্লান্তিহীন, শ্রান্তিহীন, নিরলস, অনলস, পরিশ্রমী, অদম্য, উদ্যমী, অশ্রান্ত
অবকাশ = সময়, ফূসরত, অবসর, ছুটি, সুযোগ, বিরাম
সাপ = অহি, আশীবিষ, নাগ, ফণী, ভুজঙ্গ, সর্প, উরহ, নাগিনী, ভুজগ, ভুজঙ্গম, সরীসৃপ, ফণাধর, বিষধর, বায়ুভুক
হাতি = হস্তী, করী, দন্তী, মাতঙ্গ, গজ, ঐরাবত, দ্বিপ, দ্বিরদ, বারণ, কুঞ্জর
ঘোড়া = অশ্ব, ঘোটক, তুরগ, বাজি, হয়, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম
হাত = কর, বাহু, ভুজ, হস্ত, পাণি
চুল = অলক, কুন্তল, কেশ, চিকুর
চোখ = অক্ষি, চক্ষু, নয়ন, নেত্র, লোচন, আঁখি, দর্শনেন্দ্রিয়
কান = কর্ণ, শ্রবণ
লাল = লোহিত, রক্তবর্ণ
class="sansserif">
মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১৮
সন্ধি
প্রশ্ন: সন্ধি বলতে কী বোঝো? সন্ধি কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা করো।.
উত্তর: পাশাপাশি দুটি ধ্বনি দ্রুত উচ্চারণকালে সম্পূর্ণ বা আংশিক মিলিত হয় অথবা একটি লোপ পায় কিংবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়, এরূপ পরিবর্তন, লোপ বা মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়; গৈ + অক = গায়ক; নে + অন = নয়ন; ষট + আনন = ষড়ানন।
সন্ধির প্রকারভেদ: বাংলা ভাষায় সন্ধি তিন প্রকার। যেমন:
১. স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে স্বরসন্ধি হয়। যেমন: নর + অধম = নরাধম; শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।
২. ব্যঞ্জন সন্ধি: ব্যঞ্জন ধ্বনির সথে স্বরধ্বনি অথবা ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জন ধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। যেমন: তত্ + অন্ত = তদন্ত; সত্ + জন = সজ্জন।
৩. বিসর্গ সন্ধি: বিসর্গের সঙ্গে স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জন বর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন: মনঃ+যোগ=মনোযোগ; পুনঃ+আয় =পুনরায়।
এ ছাড়া খাঁটি বাংলা সন্ধি আছে। যেমন: দিন+এক = দিনেক; আধা+উলি = আধুলি।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা লেখ।
উত্তর: সন্ধির প্রয়োজনীয়তা: সন্ধি ভাষার শ্রুতিমধুরতা আনে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সন্ধির ফলে ভাষা সংক্ষিপ্ত হয়। তা ছাড়া সন্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ গঠন করা হয়। ফলে ভাষা নির্মাণে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
অনেকে বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন না। বাংলা উচ্চারণরীতির সঙ্গে বাংলা সন্ধির নিয়ম জড়িত। সংস্কৃতের অনুসরণে বাংলা ভাষায় সন্ধি এসেছে। সংস্কৃত শব্দের সন্ধি সংস্কৃত নিয়ম অক্ষুণ্ন রেখেই বাংলা ভাষায় প্রচলিত। সাধারণত তত্সম শব্দের সঙ্গে তত্সম শব্দের সন্ধি হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের সন্ধি করা বিধেয় না। সন্ধি উচ্চারণের সরলীকরণ করে, ভাষার সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতি নিশ্চিত করে। সুতরাং, সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন: সন্ধি কাকে বলে? সন্ধির সাহায্যে কীভাবে শব্দ গঠন করা যায়, উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: সন্ধি অর্থ মিলন। পরস্পর সন্নিহিত দুটি বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধিতে পূর্বপদের বর্ণের সঙ্গে পরপদের প্রথম বর্ণের মিলন ঘটে। যেমন: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।
সন্ধির সাহায্যে শব্দ গঠনে পদ্ধতি: সন্ধির কাজ হচ্ছে বর্ণের সঙ্গে বর্ণ মিলিয়ে নতুন শব্দ গঠন করা। যেমন: নরাধম। এখানে ‘নর’ এবং ‘অধম’—এ দুটি পদের মিলন হয়েছে। ‘নর’-এর অন্ত্যস্বর ‘অ’ আর ‘অধম’-এর আদ্যস্বর ‘অ’ উভয়ে মিলে আ-কার হয়েছে। আর এই ‘আ’-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হওয়ার ফলে নতুন শব্দ ‘নরাধম’ সৃষ্টি হয়েছে। অনুরূপভাবে, অ বা আ-কারের পর ই-কার থাকলে ‘অ’ বা ‘আ’-এর স্থানে এ-কার হয়। এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন: শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা। এমনিভাবে পরস্পর সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি নতুন শব্দ গঠন করে।
一一一一一一
mozahid
00/7/2018,
সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম গুলো
১. বিশেষ্য পদ কাকে বলে ? উদাহরণ সহ বিশেষ্যপদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।
২. সর্বনাম বলতে কি বোঝ ?র্সবনামক কতভাগে করা যায় ? উদাহরণসহ লেখ।(চট্রা-১৬,ঢা-১৭,বরি-১৭)
৩.ক্রিয়া বলতে কী বুঝ? বাংলা ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।(ঢা-১৬,কু-১৭)
৪.সমাপিকা ও অসমাক্রিয়া ক্রিয়ার পার্থক্য উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
১। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম লেখ।
অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :
ক) যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন িবা ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।
খ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।
গ) সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।
ঘ) শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ) সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন ি বা ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।
২। ণত্ব বিধান কী? ণত্ব বিধানের সূত্রগুলো লেখ।
বা, ণত্ব বিধান কী? উদাহরণসহ ণত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : যে রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানানে মূর্ধন্য (ণ) হয়, তাকে ণত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ণ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।
ক) তৎসম শব্দের বানানে ঋ, র এবং ষ এর পরে ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—চরণ, মরণ, ঋণ, তৃণ, ক্ষীণ, জীর্ণ।
খ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রে ট-বর্গীয় বর্ণের পূর্বে ‘ণ’ বসে। যেমন—বণ্টন, লুণ্ঠন, কণ্ঠ, খণ্ড, ভণ্ড, মুণ্ড, কুণ্ড।
গ) প্র, পরি, নির এই তিনটি উপসর্গের পর সাধারণত ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—প্রণয়, প্রণাম, পরিণয়, নির্ণয়।
ঘ) নার, পার, রাম, রবীন্দ্র, চন্দ্র, উত্তর ইত্যাদি শব্দের পর ‘অয়ন’ বা ‘আয়ন’ থাকলে তার পরের ‘ন’ ধ্বনিটি ‘ণ’ হয়। যেমন—নারায়ণ, পরায়ণ, রামায়ণ, রবীন্দ্রায়ণ, চন্দ্রায়ণ, উত্তরায়ণ ইত্যাদি।
ঙ) র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ূ), র-ফলা ( ্র)- এর পর ধ্বনি ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য, য়, হ, ং থাকে, তবে তার পরে ‘ণ’ হবে। যেমন—শ্রাবণ, অর্ণব, গ্রহণ, দ্রবণ।
৩। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও য-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম নিয়মগুলোর মধ্যে পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম ৫টি নিয়ম হলো :
ক) সমাসবদ্ধ পদে দুই পদের পূর্ব পদে ঋ র ষ থাকলেও পরপদে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন—ত্রিনয়ন, ত্রিনেত্র, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার ইত্যাদি।
খ) ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন—অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন ইত্যাদি।
গ) বাংলা ক্রিয়াপদের আন্তঃস্থিত ন ণ হয় না।
যেমন—হবেন, মারেন, যাবেন, করেন, খাবেন ইত্যাদি।
ঘ) আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দে ষ হয় না। যেমন—জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট ইত্যাদি।
ঙ) সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয়যুক্ত পদেও ষ হয় না। যেমন—অদ্বিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।
৪। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের যেকোনো ৫টি নিয়ম লেখ।
উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের ৫টি নিয়ম দেওয়া হলো :
ক) এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।
খ) যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ, উ, ঊ উভয় শুদ্ধ। কেবল যেসব শব্দে ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন ি ু হবে। যেমন—তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পাঞ্জি, পলি ইত্যাদি।
গ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জ্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য ইত্যাদি।
ঘ) সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) হবে। যেমন—অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, সংঘটন, শুভংকর ইত্যাদি।
ঙ) সংস্কৃত ইন্ প্রত্যায়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলোতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন—গুণী-গুণিজন, প্রাণী-প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী-মন্ত্রিপরিষদ ইত্যাদি।
৫। বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :
ক) অ-তৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা হবে না। যেমন—অঘ্রাণ, ইরান, কান, কোরান, গভর্নর ইত্যাদি।
খ) বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন—কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশত, শখ ইত্যাদি।
গ) বাংলায় বিদেশি শব্দের আদিতে বর্ণবিশেষ সম্ভব নয়। এগুলো যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন—স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং ইত্যাদি।
ঘ) হস-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন—কলকল, করলেন, কাত, চট, জজ, ঝরঝর ইত্যাদি।
ঙ) ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন—বলে, হয়ে, দুজন, চাল ইত্যাদি।
৬। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী শ, ষ, স সম্পর্কিত বানানের ৫টি নিয়ম লেখ।
উত্তর : নিম্নে বাংলা শব্দে শ, ষ, স-এর ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখা হলো :
ক) ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আসা বিদেশি sh. tion. ssion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন—সেশন, স্টেশন।
খ) বিদেশি শব্দের উচ্চারণে ‘ং’ ধ্বনির ক্ষেত্রে স ব্যবহৃত হবে। যেমন-ক্লাস, অফিস।
গ) বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহৃত হয় না। যেমন—স্মার্ট, পোশাক।
ঘ) ঋ-কারের পরে মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন—ঋষি, ঋষভ।
ঙ) ট-বর্গীয় ধ্বনির পূর্বে মূর্ধন্য ষ যুক্ত হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ।
৭। ষ-ত্ব বিধান কী? ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : যে রীতি অনুসারে তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ষ ব্যবহৃত হয়, তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ষ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষত্ব বিধান।
নিচে ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো :
ক. তৎসম শব্দের বানানে র, ঋণ বা ঋ-কারের ( ৎ) পর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন—ঋষি, কৃষি, মহর্ষি।
খ. অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি এবং ক ও র-এর পরে স থাকলে তা ষ হয়। যেমন—ভবিষ্যৎ, মুমূর্ষু, ঊষা ইত্যাদি।
গ. ট, ঠ এই দুটি মূর্ধন্য বর্ণের পূর্বে সর্বদা ‘ষ’ হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, দুষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ।
ঘ. ক, খ, প, ফ—এসব বর্ণের আগে ইঃ (ঃি বা উঃ ু ঃ) থাকলে সন্ধির বিসর্গের জায়গায় সর্বদা মূর্ধন্য-ষ বসবে। যেমন—পরি+কার = পরিষ্কার, আবিঃ + কার = আবিষ্কার, নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ, দুঃ+কর = দুষ্কর, চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ।
ঙ. ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতকগুলো ধাতুতে ‘ষ’ হয়। যেমন—অভিষেক, পরিষদ, অনুষঙ্গ, অনুষ্ঠান।
৮। বাংলা বানান ই-কার (ি) ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদারহণসহ লেখ।
উত্তর : বাংলা বানানে ই-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো :
ক. যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ-কার শুদ্ধ সেসব শব্দে ই-কার হবে। যেমন—চুল্লি, তরণি, পদবি, নাড়ি, মমি, ভঙ্গি ইত্যাদি।
খ. সব অ-তৎসম শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—খুশি, পাখি, শাড়ি ইত্যাদি।
ঘ. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন—বর্ণালি, গীতালি, সোনালি, রূপালি ইত্যাদি।
ঙ. পদাশ্রিত নির্দেশক হলে ই-কার বসবে। যেমন—ছেলেটি, বইটি, কলমটি, মেয়েটি ইত্যাদি।
৯। বাংলা বানানে উ-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখ।>
উত্তর :
ক. অ-তৎসম শব্দে উ-কার বসবে। যেমন—কুমির, খুশি, টুপি, বুড়ি ইত্যাদি।
খ. মূল সংস্কৃত শব্দে উ-কার থাকলে তদ্ভব শব্দে উ-কার হবে। যেমন—পূজা-পুজো, পূর্ব-পুব ইত্যাদি।
গ. বিদেশি শব্দে উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—কুর্দি, সুন্নি, কুরআন ইত্যাদি।
ঘ. ক্রিয়াবাচক শব্দে উ-কার হয়। যেমন—আসুন, করুন, ঘুরা, বসুন, ভাবুন ইত্যাদি।
ঙ. প্রত্যয়ান্ত শব্দযোগে উ-কার হয়। যেমন—পটুয়া, রাঁধুনি, হাতুড়ে, পিসতুতো ইত্যাদি।
১০। বাংলা বানানে আ-কার (া) ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো লেখো।
উত্তর : বাংলা বানানে আ-কার ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো নিম্নরূপ :
ক. অ-কার বা আ-কারের পর অ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়। যেমন—হিম + আলয় = হিমালয়, সিংহ + আসন = সিংহাসন ইত্যাদি।
খ. আ-কারের পর ই-কার বা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ কার হয়। যেমন—মহা+ ঈশ= মহেশ।
গ. আ-কারের পর উ-কার বা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়। যেমন—গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি।
১১,প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের ছয়টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
অথবা,
বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : বানান ব্যাকরণের একটি বিবর্তনশীল অধ্যায়। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা বানান আজকের পর্যায়ে এসেছে। বানানের এই পরিবর্তনের ধারায় বাংলা একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম থেকে ছয়টি নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো :
ক) তৎসম শব্দের বানান অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নদী, ভাষা ইত্যাদি।
খ) যেসব তৎসম শব্দের বানানে ই এবং ঈ বা এদের কার চিহ্ন অথবা উ এবং ঊ বা এদের কার চিহ্নের উভয় রূপই শুদ্ধ, সেসব শব্দের বানানে কেবল শুধু ই এবং উ বা এদের কার চিহ্ন বসবে। যেমন : বাড়ি, উনিশ ইত্যাদি।
গ) তৎসম এবং অতৎসম শব্দে কোথাও রেফের পরে দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্জন, অর্চনা, ধর্ম, কীর্তন ইত্যাদি।
ঘ) শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : ক্রমশ, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ) সন্ধি দ্বারা গঠিত শব্দে ক খ গ ঘ এর আগে ং এবং ঙ দুটোই শুদ্ধ। যেমন : অহঙ্কার/অহংকার, সঙ্গীত/সংগীত ইত্যাদি।
চ) নঞর্থক অব্যয় পদ আলাদাভাবে বসবে। যেমন : জানি না, দেখি নি ইত্যাদি।
১২.প্রশ্ন : ণ-ত্ব বিধান কাকে বলে? ণ ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : ণ-ত্ব বিধান : যে বিধান অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানান 'ন' (দন্ত্য ন)-এর স্থানে 'ণ' (মূর্ধন্য ণ) ব্যবহৃত হয়, তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ণ-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণ-ত্ব বিধান। যেমন : ঋণ, মরণ, ভীষণ ইত্যাদি।
ণ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম:
১) সাধারণভাবে তৎসম শব্দে ঋ, র, ষ-এর পরে মূর্ধন্য ণ ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- ঋণ, রণ, উষ্ণ ইত্যাদি।
২) র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ৃ), র-ফলা ( ্র) অথবা 'ক্ষ'-এর পরে যদি ক-বর্গের
৫টি (ক খ গ ঘ ঙ) এবং প-বর্গের ৫টি (প ফ ব ভ ম) এবং য য় হ- এই ১৩টি বর্গের যেকোনো একটি বা দুটি বর্ণ আসে, তবে তার পরে মূর্ধন্য (ণ) হবে।
উদাহরণ- অপরাহ্ন, পরায়ণ, রোপণ, গৃহিণী, প্রাঙ্গণ ইত্যাদি।
৩) ট-বর্গের ট ঠ ড ঢ- এই চারটি বর্ণের পূর্বে যদি ন্ ধ্বনি থাকে এবং ওই 'ন' ধ্বনি-সহযোগে যদি যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, তা হলে তা সর্বদা মূর্ধন্য (ণ) হবে। উদাহরণ-কণ্টক, কণ্ঠ, দণ্ড, বণ্টন ইত্যাদি।
৪) উত্তর, পর, পার, রবীন্দ্র, চন্দ্র, নার শব্দের পরে 'অয়ন'/'আয়ন' শব্দ হলে দন্ত্য ন-এর পরিবর্তে মূর্ধন্য ণ হয়। উদাহরণ- উত্তর+আয়ন=উত্তরায়ণ, পর+আয়ন=পরায়ণ, পার+আয়ন=পারায়ণ, রবীন্দ্র+আয়ন=রবীন্দ্রায়ণ, নার+আয়ন=নারায়ণ ইত্যাদি।
৫) পরি, প্র, নির- এই তিনটি উপসর্গের পরে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। উদাহরণ- পরিণত, প্রণাম, নির্ণয় ইত্যাদি।
১৩,প্রশ্ন : ষ-ত্ব বিধান কাকে বলে? ষ ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : ষ-ত্ব বিধান :বানানে ষ প্রযুক্ত হবে কি না,তা যে বিধান দ্বারা নির্দেশ করা হয়, তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে।ষ-ত্ব বিধান পাঠে আমরা জানতে পারি কোথায় ষ বসবে, কোথায় বসবে না।
ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম:
ক) অ, আ ছাড়া বাদবাকি সব স্বরবর্ণ ও তাদের কার চিহ্নে পরে ষ্ক বসে। যেমন : আবিষ্কার, ভীষণ, পুরুষ, ভূষণ, কৃষি, শেষ, দোষ, ঔষধ, পৌষ ইত্যাদি।
খ) ট এবং ঠ-এর আগে ষ বসে। যেমন : কষ্ট, অষ্টম, বৃষ্টি, নিষ্ঠা।
গ) কিছু কিছু শব্দে স্বভাবতই ষ বসে। যেমন : ভাষা, ভাষণ, আষাঢ়, বর্ষা, আভাষ, অভিলাষ ইত্যাদি।
ঘ) যে শব্দটি তৎসম নয়, তা হোক দেশি বা বিদেশি যেকোনো ভাষা থেকে আগত, সেই শব্দের বানানে কখনোই ষ বসবে না, স বা শ বসবে। যেমন : স্টোর, ফটোস্ট্যাট, স্টেশন, পোশাক ইত্যাদি।
ঙ) সাৎ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ষ বসে না, স বসে। যেমন : অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।
রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮
কার ও ফলা চিহ্ন সংক্ষিপ্ত পরিচয়
বাংলা ২য় পত্র
প্রশ্ন: কার ও ফলা কাকে বলে কার ও ফলার বিস্তারিত বর্ণনা দাও
উত্তর:- বাংলা স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে `কার' বলা হয় । ‘অ’ ভিন্ন স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে । স্বরবর্ণের এ ধরনেরসংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় ’কার”
। স্বরবর্ণের কার চিহ্ন ১০টি । যথা :
আ -কার (া ) :মা , বাবা ঢাকা | ৃ- কার (ৃ): কৃষক তৃণ পৃথিবী |
ই-কার ( ি) : কিনি ,চিনি . মিমি | এ- কার ( ে ) : চেয়ার , টেবিল মেয়ে |
ঈ- কার ( ী ): শশী , সীমান্ত, রীতি | ঐ-কার ( ৈ ) :তৈরি ,বৈরী, হৈচৈ |
উ- কার ( ু) :কুকুর , পুকুর . দুপুর । | ও -কার ( ে া ) : খোকা, পোকা , বোকা । |
ঊ- কার (ূ) : ভূত, মূল্য , সূচি | ঔ-কার ( ৌ) :নৌকা, মৌসুমী ,পৌষ |
ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলা হয়। বাংলায় ফলা চিহ্ন ৭ টি
য-ফলা (্য) : ব্যাঙ,খ্যাতি,সহ্য । | ন-ফলা (ন /ন): বিভিন্ন, যত্ন, রত্ন |
ব-ফলা (্ব) :পক্ব,বিশ্ব , অশ্ব । | ণ-ফলা (ণ):পুবাহ্ণ অপরাহ্ণ |
ম-ফলা (ম): পদ্ম,সম্মান , স্মরণ | ল-ফলা (ল) :ক্লান্ত, ম্লান , অম্ল |
র -ফলা (্র): প্রমাণ,শ্রান্ত,ক্রয় | ----- |
প্রশ্ন: গুরুচণ্ডালী দোষ কাকে বলে ?গুরুচণ্ডালী দোষ দূষণীয় কেন? উদাহরণসহ বিশ্লেষন করো ।
অথবা
ভাষায় সাধু ও চলিতরীতির মিশ্রণ দূষণীয়, ইহা বর্জন অবশ্যই কর্তব্য।’—আলোচনা করো।
উত্তর: গুরুচণ্ডালী দোষ: বাংলা ভাষার দুটি রূপ আছে। তার মধ্যে একটি সাধু এবং অপরটি চলিত। উভয়রীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। তাই একই রচনায় সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ অসংগত ও অশুদ্ধ। ভাষারীতির এ অশিষ্ট প্রয়োগকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণের ফলে ভাষা প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে কলুষিত হয়ে পড়ে। তাই সাধু ও চলিতরীতির মিশ্রণ দূষণীয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এ জন্য উভয়রীতির মিশ্রণ পরিহার করা অবশ্যই কর্তব্য।
সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে !!
যেমন- গরুর গাড়ি চলিত ভাষা সে স্থলে গরুর শকট ,শবদাহ স্থলে শবপোড়া ।
প্রশ্ন: ব্যাকরণ কাকে বলে ? ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।
উত্তর: সংজ্ঞা: ‘ব্যাকরণ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ। ভাষা বিশ্লেষণ করাই ব্যাকরণের কাজ। সুতরাং যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে শাস্ত্রকে বলে সে ভাষার ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা: পৃথিবীর প্রতিটি ভাষা একটি শৃঙ্খলা ও নিয়মবিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ভাষার এ নিয়মবিধি জানার জন্যই ব্যাকরণ পাঠ অপরিহার্য। একটা ভাষা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করার জন্যই সে ভাষার ব্যাকরণ জানতে হবে। ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেগুলোর সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগবিধি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যায়। এ ছাড়া ব্যাকরণ জানা থাকলে লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ সহজতর হয়। বাগধারা, ছন্দ ও অলংকার প্রকরণও ব্যাকরণের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। কাজেই ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।