সমাস


প্রশ্ন: সমাস কাকে বলে ? উহা কত প্রকার ও কি কি ?
উত্তর: পরস্পর অর্থসংগতি যুক্ত দুই বা ততোধিক পদ এক পদ হওয়াকে সমাস বলে।
যেমনঃ লেখপড়া= লেখা ও পড়া।
সমাসের শ্রেণী বিভাগঃ সমাস প্রধানত : ছয় প্রকার।
যেমনঃ ১। দ্বন্দ্ব সমাস ২। তৎপুরুষ সমাস ৩। বহুব্রীহি সমাস
৪। কর্মধারয় সমাস ৫। অব্যয়ী ভাব সমাস ৬। দ্বিগু সমাস



১.দ্বন্দ্ব সমাস:-

যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয়(কখনো বিয়োজক)দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
দ্বন্দ্ব সমাস আট প্রকার:
১. সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ-কর্ম-- কাজ ও কর্ম
২. বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন-রাত-- দিন ও রাত
৩.বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার-জিৎ-- হার অথবা জিৎ
৪.সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ- কলা-- দুধ ও কলা।
৫.মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল-ডাল--চাল ও ডাল।
৬.অলোপ দ্বন্দ্ব: কাগজে-কলমে--কাগজে ও কলমে
৭.বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-- রূপ,রস,গন্ধ,স্পর্শ।
৮.একশেষ দ্বন্দ্ব: আমরা-- আমি,তুমি, সে


১. দ্বন্দ্ব সমাস চেনার উপায়: -

ক) পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ স্বাধীন হবে ।
খ) বিভক্তি সমান থাকবে ।
ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম –পূর্বপদ + ও + পরপদ
উদাহরণ
কুশীলব = কুশ ও লব
দম্পতি = জায়া ও পতি
আমরা = তুমি, আমি ও সে
জন মানব = জন ও মানব
সত্যাসত্য = সত্য ও অসত্য
ক্ষুৎপিপাসা = ক্ষুধা ও পিপাসা
হিতাহিত = হিত ও অহিত
অহি নকুল = অহি ও নকুল
তরু লতা = তরু ও লতা
সাত সতের = সাত ও সতের
লাভালাভ = লাভ ও অলাভ


অলুক দ্বন্দ্ব সমাস :-

চেনার উপায় –ক) পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ স্বাধীন হবে ।
খ) উভয় পদে ৭মী (এ ) বিভক্তি থাকবে ।
ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম –পূর্বপদ + ও + পরপদ
উদাহরণ
দুধে ভাতে =দুধে ও ভাতে
ঘরে বাইরে = ঘরে ও বাইরে
দেশে বিদেশে = দেশে ও বিদেশে
বনে বাদাড়ে = বনে ও বাদাড়ে
কেটে -ছিড়েঁ = কেটে ও ছিঁড়ে
কোলেপিঠে = কোলে ও পিঠে
তেলেবেগুনে = তেলে ও বেগুনে
পথে-প্রান্তরে = পথে ও প্রান্তরে
বনেবাদাড়ে = বানে ও বাদাড়ে
হাতেকলমে =হাতে ও কলমে
হাতে-পায়ে =হাতে ও পায়ে

বহুপদী দ্বন্দ সমাস :

কাক-ছিল-মাছরাঙ্গা = কাক,চিল ও মাছরাঙ্গা
গঙ্গা-যমুনা -মেঘন্ = গঙ্গা,যমুনা ও মেঘনা

একশেষ দ্বন্দ সমাস :-

আমরা = সে তুমি ও আমি ( সি,২০৪/রা-০৫/কু-০৭ )
তোমরা = সে ও তুমি


২.বহুব্রীহি সমাস:-

যে সমাসের পূর্বপদ ও পরপদ কারো অর্থ প্রাধান্য পায় না , সম্পূর্ণ তৃতীয় একটি অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
প্রধানত বহুব্রীহি সমাস সাত প্রকার:
১/ সমানাধিকরন বহুব্রীহি: দশানন--দশ আনন যার
২/ ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: পাপমতি-- পাপে মতি যার
৩/ মধ্যপদোলোপি বহুব্রীহি: বিরালাক্ষী-- বিড়ালের অক্ষির মতো অক্ষি যার
৪/ অলোপ বহুব্রীহি: মুখেভাত-- মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৫/ ব্যাতিহার বহুব্রীহি: লাঠালাঠি-- লাঠিতে লাঠিতে লড়াই।
৬/ না বহুব্রীহি: নির্বাক-- নেই বাক যার।
৭/সহার্থক বহুব্রীহি: সবাক-- বাকের সহিত বর্তমান


৩.কর্মধারয় সমাস:

বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধান হয়।

কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথাঃ-
(১) সাধারণ কর্মধারয়: বিশেষণ ও বিশেষ‍্য, বিশেষ‍্য ও বিশেষ‍্য অথবা বিশেষণ ও বিশেষণ পদের মধ‍্যে এই সমাস হয়ে থাকে। যেমন, নীল যে আকাশ=নীলাকাশ।
(২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা: হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।
(৩)উপমিত কর্মধারয় সমাস
সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।
(৪)রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমন: বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।
(৫)উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।

৪.তৎপুরুষ সমাস:-

দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত। "'তৎপুরুষ"' শব্দটির অর্থ হল "তার পুরুষ"। তার পুরুষ এই শব্দ গুলির একপদীকরণে তৎপুরুষ শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পূর্ব পদ থেকে সম্বন্ধ পদের বিভক্তি 'র' লোপ পেয়েছে ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এইভাবে এই সমাসের অধিকাংশ উদাহরণে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য থাকে এবং তৎপুরুষ শব্দটি হল এই রীতিতে নিষ্পন্ন সমাষের একটি বিশিষ্ট উদাহরণ।তাই উদাহরণের নামেই এর সাধারণ নামকরণ করা হয়েছে তৎপুরুষ সমাস।


৪.তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-


(১)দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।
(২)তৃতীয়া-তৎপুরুষ তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
(৩)চতুর্থী-তৎপুরুষ চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।
(৪)পঞ্চমী-তৎপুরুষ পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
(৫)ষষ্ঠী-তৎপুরুষ ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ দীনের বন্ধু = দনবন্ধু।
(৬)সপ্তমী-তৎপুরুষ সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা। এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে।
যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।


৪.তৎপুরুষ সমাসঃ চেনার উপায়:–


ক) পূর্বপদে বিভক্তি আসবে ।
খ) বিভক্তি অনুসারে তৎপুরুষ সমাসের নাম হবে।
ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম – (পূর্বপদ+ বিভক্তি) + পরপদ
বিভক্তিসমূহ
–২য়া – কে , রে
৩য়া – দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক
৪ র্থী – কে, রে, তরে , জন্য , নিমিত্ত , ব্যাপিয়া
৫ মী – হতে , থেকে , চেয়ে
৬ ষ্ঠী – র , এর
৭মী – এ , য় , তে
উদাহরণ
শরনিক্ষেপ= শরকে নিক্ষেপ – ২য়া তৎপুরুষ সমাস
অতিথিসৎকার= অতিথিকে সৎকার – ২য়া তৎপুরুষ সমাস
তপোবন= তপের নিমিত্ত বন – ৪র্থী তৎপুরুষ সমাস
মুখভ্রষ্ট= মুখ হতে ভ্রষ্ট – ৫মী তৎপুরুষ সমাস
উপলখন্ড= উপলের খন্ড – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
জলসেচন= জলকে সেচন – ৩য়া তৎপুরুষ সমাস
অঙ্গুলিসংকেত= অঙ্গুলি দ্বারা সংকেত – ৩য়া তৎপুরুষ সমাস
মেঘলুপ্ত=মেঘ দ্বারা লুপ্ত – ৩য়া তৎপুরুষ সমাস
মার্তন্ডপ্রায়= মার্তন্ডের প্রায় – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ
সলিলসমাধি= সলিলে সমাধি – ৭মী তৎপুরুষ সমাস
পুষ্প সৌরভ= পুষ্পের সৌরভ – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
জীবনসঞ্চার= জীবনের সঞ্চার – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
রান্নাঘর= রান্নার ঘর – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
সন্ধ্যাপ্রদীপ= সন্ধ্যার প্রদীপ – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গৃহকর্ত্রী= গৃেহর কর্ত্রী – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
বাকবিতণ্ডা = বাক দ্বারা বিতণ্ডা – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
যৌবনবেগ = যৌবনের বেগ – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
মরুকবি = মরুর কবি – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
কূপমন্ডুক = কূপের মন্ডুক – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
গরলপিয়ালা = গরলের পিয়ালা – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
সিন্ধুনীর = সিন্ধুর নীর – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
আম কুড়ানো = আমকে কুড়ানো –২য়া তৎপুরুষ সমাস
জীবনআবেগ = জীবনের আবেগ – ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস


৫.দ্বিগু সমাস:-

তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
চেনার উপায় –
ক) পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকবে।
খ) পরপদে বিশেষ্য থাকবে।
গ) সমস্তপদের অর্থ হবে সমষ্টি বা সমাহার।
ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম –পূর্বপদ + ও + পরপদ
উদাহরণ
তেপান্তর = তে (তিন) প্রান্তরের সমাহার
সেতার = সে (তিন ) তারের সমাহার
ত্রিফলা = ত্রি (তিন) ফলের সমাহার
নবরত্ন = নব (নয়) রত্নের সমাহার
পঞ্চবটী = পঞ্চ (পাঁচ) বটের সমাহার
পঞ্চনদ =পঞ্চ ( পাঁচ ) নদীর সমাহার
পশুরী = পাঁচ সেরের সমাহার
সপ্তর্ষি = সপ্ত (সাত) ঋষির সমাহার
সপ্তাহ = সপ্ত (সাত ) অহের সমাহার
শতাব্দী = শত অব্দের সমাহার
ষড়ভুজ = ষড় (ছয়) ভুজের সমাহার


৬. অব্যয়ীভাব সমাস:-

অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।

অব্যয়ীভাব সমাস >> ব্যাসবাক্য সহ সমান র্নিণয় >>