লালসালু উপন্যাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
লালসালু উপন্যাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

লালসালু উপন্যাস


shimul

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর :

উদ্দীপক ১:ছোট বয়সে মাজেদা বিবির উচ্ছলতা, দুরন্তপনা, লাফালাফি, দৌড়ঝাঁপ কোনো কমতি ছিল না । বিচয়ের পর সেই মাজেদা বিবি একেবারেই বদলে গেল । স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে সে কথা বলে না । মানুষের বিপদে আপদে দোয়া করে । ধর্মপালনে সবসময় সচেষ্ট । কিন্তু মাজেদা বিবির মনে কোনো শান্তি নেই । কারণ চার বছর পার হওয়ার পরেও কোনো সন্তান হয়নি তার । স্বমীর কাছে তাই পাশের গ্রামে আসা পিরের কাছে পানি পড়া খেয়ে সন্তান লাভের বাসনা জানায় মাজেদা বিবি।

প্রশ্ন:ক.মজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম কী ? ১
খ.মজিদের শাক্তি ওপর থেকে আসে, আসে ঐ সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে,--উক্তিটি ব্যাখ্যা কর । ২
গ.উদ্দীপকের মাজেদা বিবির সাথে লালসালু উপন্যাসের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে ?ব্যাখ্যা কর । ৩
ঘ.গ্রমের ধর্মভীরু অশিক্ষিত মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় পিরের প্রতি অন্ধভক্তি -উদ্দীপক ও লালসালু উপন্যাসের আলোকে মন্তব্যটির ব্যাখ্যা কর । ৪

উত্তর:ক. মজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম রহিমা ।

খ.মজিদ মহাব্বতনগর গ্রামে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল তার শক্তি সে পেয়েছিল সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে প্রশ্নের উক্তিটিতে এ কথাই প্রকাশিত হয়েছে । মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে আগন্তুক হিসেবে প্রবেশ করে একসময় সেই গ্রামেই মজিদ শক্তির শিকড় গেড়েছিল । এই শক্তি সে পেয়েছিল মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সকল মানুষের বিশ্বাস থেকে । সালু কাপড়ে আবৃত মাজারটি মজিদকে দিয়েছিল শক্তি যা দিয়ে গ্রামে সে প্রভাব বিস্তার করেছিল । প্রশ্নের উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে ।

গ.উদ্দীপকের মাজেদা বিবির সাথে লালসালু উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীরির নি:সন্তান স্ত্রী আমেনা সাদৃশ্যপূর্ণ । স্বামীভক্ত ও ধর্মভীরু স্ত্রী আমেনা চরিত্রটি দীর্ঘ দিনের সংসারেও নি:সন্তান থেকে যায় । এদিকে খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আনুবিবির প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি আমেনা বিবির মাঝে আরো হতাশা তৈরী করে । সন্তান লাভের আশায় আমেনা বিবি খালেক ব্যাপারীকে আওয়ালপুরের পিরের নিকট থেকে পানি পড়া এনে দিতে বলে । ব্যাপারী তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ছোটো ভাই ধলা মিয়াকে পানি পড়া আনতে আওয়ালপুরের পিরের নিকট্ পাঠাতে চায় ।

উদ্দীপকের মাজেদা বিবি বিয়ের চার বছর পরেও নি:সন্তান থেকে যায় । স্বামী অনুগত মাজেদার মনে তাই কোনো শান্তি নেই । সন্তান কামনায় সে ব্যাকুল হয়ে পরে । তাই স্বামীর কাছে পাশের গায়ে আসা পিরের পানি পড়া খেয়ে সন্তান লাভের বাসনা জানায় । আর লালসালু উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর স্ত্রীও আমেনাও সন্তান লাভের আশায় গোপনে আওয়ালপুরের পিরের বাছে যায় পানি পড়া আনতে । অতএব বলতে পারি , নি:সন্তান হওয়া ও সন্তান লাভের আশায় পিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দিক থেকে খালেক ব্যাপারীর স্ত্রঅ আমেনা ও মাজেদা বিবির মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান রয়েছে ।

ঘ.গ্রামের ধর্মভীরু , অশিক্ষিত মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় পিরের প্রতি অন্ধভক্তিতে --উক্তিটি যথার্থ । লালসালু উপন্যাসের গ্রামের মানুষগুলো পিরের প্রতি অবিচল ও অন্ধবিশ্বাসে নিবিষ্ট থাকে । কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ মানুষগুলোর ধর্মভীরুতার ছত্রছায়ায় মজিদের মতো পিরেরা সমাজে শক্ত ভিত তৈরী করে । উদ্দীপকের বর্ণনায়ও গ্রামের মানুষগুলোকে পিরের অন্ধভক্তিতে আচ্ছন্ন দেখা যায় ।

উদ্দীপকের মাজেদা বিবি ও তার স্বামী পিরের প্রতি দারুণ অনুরক্ত । মাজেদার বিয়ের চার বছর পার হলেও সে নি:সন্তান । তাই তার ভরসা পাশের গ্রামে আসা পীরের পানি পড়া । পানি পড়া খেলে তার সন্তান হবে এমন ধারণা অজ্ঞতা ও অশিক্ষারই বহি:প্রকাশ গ্রামের মানুয়ের অজ্ঞতাই এর জন্য দায়ী ।

লালসালু উপন্যাসে সমাজ ধর্মভীরুতা, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও অজ্ঞতার এ অনন্য দৃষ্টান্ত । ‍মহব্বতনগরের প্রতিটি মানুষ যেন এমন প্রাগৈতিহাসিক ধারণায় ঋদ্ধ(সমৃদ্ধ,বৃদ্ধিপ্রাপ্ত) হয়ে আছে ।ফলে তাদের মধ্যে মুক্তচিন্তা, বিবেক বুদ্ধি ও আধিুনিক ধ্যান-ধারণার যথেষ্ট অবাব পরিলক্ষিত হয় । স্বর্থান্বেষী মহল এমন সামাজের মানুষকে সহজেই প্রতারিত করতে সক্ষম হয় । যেমনটি পেরেছে বন্ড, প্রতারক, পির মজিদ । মোদাচ্ছের পিরের নামে অজ্ঞাত এক কবরকে মাজার বলে চালিয়ে দিয়েও সে সফল হয় । কারণ গ্রামের ধর্মভীরু মানুষগুলো অজ্ঞতার ফলে বাস্তবজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে । রহিমা, আমেনা বিবি হাসুনির মা প্রভৃতি নারী চরিত্রগুলোও এখানে ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন আঅেচ্য উপন্যাস ও উদ্দীপকে পিরের প্রতি এমন অন্ধভক্তি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিরই সার্মথক রূপায়ণ



উদ্দীপক ২:সিলেট জেলার জালালাবাদ উপজেলায় রিসিতা নামের এক গৃহবধূ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন । পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন বণৈ অভিয়োগ উঠেছে । ঘটনার পর থেকে রিসিতার ভাসুর ও ননদ পলাতক ।

ক.আক্কাস কে ?
খ.তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় কেন ?
গ.উদ্দীপকের গৃহবধূ ও লালসালু উপন্যাসের জমিলার মধ্যে সাদৃশ্য নির্ণয় করো ।
ঘ.উদ্দীপকটি লালসালু উপন্যাসের একটি বিশেষ দিককেই প্রতিকায়িত করেছে ’--বিশ্লেষণ কর ।

ক. আক্কাস মহব্বতনগর গ্রামের মোদাব্বের মিঞার ছেলে ।

খ. সামাজিাকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে অপমানে ও লজ্জায় তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ।
তাহেরের বাপ বউয়ের সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করত এবং তাহেরের বাপ বউকে ইচ্ছেমতো মারত । চরিত্র নিয়ে পরস্পরের দোষারোপের বিষণয়টি মহব্বতনগর গ্রামের এক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে । এই নিয়ে সালিশ বসালে তাহেরের বাপকে চরমভাবে অপদস্ত করে মজিদ । এই অপমান সহ্যকরতে না পেরে তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ।

গ. উদ্দীপকে গৃহবধু রিসিতা ও লালসালু উপন্যাসের জমিলার মধ্যে পুরুষতান্ত্রিকতার ছোবলে নারী জীবনের বাস্তবচিত্র নির্মানে সাদৃশ্য রয়েছে । লালসালু উপন্যাসের জমিলা পুরুষতান্ত্রিক সমাজবাস্তবতার কাছে বিপন্ন এক নারী চরিত্র । তবে প্রতিবাদী আচরণে জমিলা আলোচ্য উপন্যাসে মুক্তির এক সুবাতাস হিসেবে বিবেচ্য । মজিদের সাথে তার অসম বিয়ে সম্পন্ন হয় । বয়সের অপরিপক্কতার কারণে তার মধ্য ছিল দাযিত্ববোধ ও সচেতনতার অভাব । কিন্তু বয়সের দোহাইয়ে সে মজিদের নিষ্টুরতা বা আক্রোশ থেকে রেহাই পায় না ।
উদ্দীপকের রিসিতাও জমিলার মতোই পুরুষতান্ত্রিক বেড়াজালে বিপন্ন এক নারী । পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তার গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় । আমাদের সমাজ জীবনে নারী এমনই কোনঠাসা হয়ে রয়েছে যে তা রীতিমতো অমানবিক । অর্থাৎ পুরুষতন্ত্রের হিংস্রতার কাছে বিপন্ন ও অসহায় হওয়ার দিক থেকে দুটি চরিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ ।


ঘ. লালসালু উপন্যাসের কাহিনি ও ঘটনা বিন্যাস প্রামীণ সামাজ বাস্তবতার সার্থক উপস্থাপন, যার একটি বিশেষ দিককে উদ্দীপকটি প্রতিকায়িত করেছে ।

লালসালু উপন্যাসের বিষয় হচ্ছে যুগ যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার অন্ধ-বিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবন প্রত্যাশার দন্দ্ব । মজিদ মহব্বতনগরবাসীর সরলতা ও ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসায় নিজের অভাবনীয় স্বার্থ হাসিল করে। মানুষকে ধরর্মের অন্ধ মোহে আকৃষ্ট করে সে নিজের কতৃর্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে । মজিদের শাসন ও শোষণের শিকার তার অল্পবয়সি স্ত্রী জমিলা ।

উদ্দীপকে রিসিতা উপন্যাসের জমিলার প্রতিনিধি হয়ে উঠে এসেছে । কারণ রিসিতা শ্বশুরবাড়িতে পুরুষতান্ত্রিক অমানবিকতার শিকার । তার মতো জমিলাও মজিদের পুরুষতান্ত্রিক আচরণের শিকার । উদ্দীপকের রিসিতা লালসালু উপন্যাসের একটি মাত্র চরিত্রের ভিতর দিয়ে নারী জীবনের দু:খ দুর্দশার চিত্র মনে করিয়ে দেয় । তবে সেই চরিত্র অর্থাৎ জমিলাই লালসালু উপন্যাসের প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় এক মাত্র উপস্থাপক নয়

লালসালু উপন্যাসে উপন্যাসের জমিলা নরীধর্ম , হৃদয়ধর্ম ও সজীবতার যোগ্য প্রতিনিধি । তবে উপন্যাসের সম্পূণর্ প্রেক্ষাপট তাকে ঘিরে নয় বরং তার স্বামী মজিদকে ঘিরেই কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে অর্থাৎ জমিলাও মজিদকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে । আর সেই চরিত্রের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র হিসেবে উদ্দীপকের রিসিতা উপন্যাসের একটি বিশেষ দিককে প্রতিকায়িত করেছে ।

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮

লালসালু উপন্যাসের সমাজ-বাস্তবতা


‘লালসালু’ উপন্যাসের সমাজ-বাস্তবতা

Mountains

‘লালসালু’ উপন্যাসের সমাজ-বাস্তবতা

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’। রচনাটিকে একজন প্রতিভাবান লেখকের দুঃসাহসী প্রচেষ্টার সার্থক ফসল বলে বিবেচনা করা হয়। ঢাকা ও কলকাতার মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবন তখন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অস্থির ও চঞ্চল। ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশবিভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, আবার নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান গড়ে তোলার উদ্দীপনা ইত্যাদি নানা রকম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আবর্তে মধ্যবিত্তের জীবন তখন বিচিত্রমুখী জটিলতায় বিপর্যস্ত ও উজ্জীবিত। নবীন লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, এই চেনা জগৎকে বাদ দিয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাসের জন্য গ্রামীণ পটভূমি ও সমাজ-পরিবেশ বেছে নিলেন। আমাদের দেশ ও সমাজ মূলত গ্রামপ্রধান। এদেশের বেশির ভাগ লোকই গ্রামে বাস করে। এই বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন দীর্ঘকাল ধরে অতিবাহিত হচ্ছে নানা অপরিবর্তনশীল তথাকথিত অনাধুনিক বৈশিষ্ট্যকে আশ্রয় করে। এই সমাজ থেকেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, বেছে নিলেন তাঁর উপন্যাসের পটভূমি, বিষয় এবং চরিত্র। তাঁর উপন্যাসের পটভূমি গ্রামীণ সমাজ; বিষয় সামাজিক রীতি-নীতি, ও প্রচলিত ধারণা বিশ্বাস, চরিত্রসমূহ একদিকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মভীরু, শোষিত, দরিদ্র গ্রামবাসী, অন্যদিকে শঠ, প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ী এবং শোষক-ভূস্বামী।

‘লালসালু’ একটি সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস। এর বিষয় : যুগ-যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্ব। গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণাজাল বিস্তারের মাধ্যমে বিভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই বিবরণে সমৃদ্ধ ‘লালসালু’ উপন্যাস। কাহিনিটি ছোট, সাধারণ ও সামান্য; কিন্তু এর গ্রন্থনা ও বিন্যাস অত্যন্ত মজবুত। লেখক সাধারণ একটি ঘটনাকে অসামান্য নৈপুণ্যে বিশেষণী আলো ফেলে তাৎপর্যমণ্ডিত করে তুলেছেন।

শ্রাবণের শেষে নিরাক-পড়া এক মধ্যাহ্নে মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের প্রবেশের নাটকীয় দৃশ্যটির মধ্যেই রয়েছে তার ভণ্ডামি ও প্রতারণার পরিচয়। মাছ শিকারের সময় তাহের ও কাদের দেখে যে, মতিগঞ্জ সড়কের ওপর একটি অপরিচিত লোক মোনাজাতের ভঙ্গিতে পাথরের মূর্তির মতোন দাঁড়িয়ে আছে। পরে দেখা যায়, ওই লোকটিই গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে সমবেত গ্রামের মানুষকে তিরস্কার করছে, ‘আপনারা জাহেল, বেএলেম, আনপাড়হ। মোদাচ্ছের পিরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলি রাখছেন?’ অলৌকিকতার অবতারণা করে মজিদ নামের ওই ব্যক্তি জানায় যে, পিরের স্বপ্নাদেশে মাজার তদারকির জন্যে তার এ গ্রামে আগমন। তার তিরস্কার ও স্বপ্নদেশের বিবরণ শুনে গ্রামের মানুষ ভয়ে এবং শ্রদ্ধায় এমন বিগলিত হয় যে তার প্রতিটি হুকুম তারা পালন করে গভীর আগ্রহে। গ্রামপ্রান্তের বাঁশঝাড়সংলগ্ন কবরটি দ্রুত পরিচ্ছন্ন করা হয়। ঝালরওয়ালা লালসালুতে ঢেকে দেওয়া হয় কবর। তারপর আর পিছু ফেরার অবকাশ থাকে না। কবরটি অচিরেই মাজারে এবং মজিদের শক্তির উৎসে পরিণত হয়। যথারীতি সেখানে আগরবাতি, মোমবাতি জ্বলে; ভক্ত আর কৃপাপ্রার্থীরা সেখানে টাকা পয়সা দিতে থাকে প্রতিদিন। কবরটি এক মোদাচ্ছের পিরের বলে শনাক্তকরণের মধ্যেও থাকে মজিদের সুগভীর চাতুর্য। মোদাচ্ছের কথাটির অর্থ নাম-না-জানা। মজিদের স্বগত সংলাপ থেকে জানা যায়, শস্যহীন নিজ অঞ্চল থেকে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে-পড়া মজিদ নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এমন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। আসলে এই প্রক্রিয়ায় ধর্ম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা এ দেশের গ্রামাঞ্চলে বহুঁকাল ধরে বিদ্যমান। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ গ্রামীণ সমাজের একটু গুরুত্বপূর্ণ দিক যথাযথভাবেই এখানে তুলে ধরেছেন।

মাজারের আয় দিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মজিদ ঘরবাড়ি ও জমিজমার মালিক হয়ে বসে এবং তার মনোভূমির এক অনিবার্য আকাঙ্ক্ষায় শক্ত-সমর্থ লম্বা চওড়া একটি বিধবা যুবতীকে বিয়ে করে ফেলে। আসলে স্ত্রী রহিমা ঠান্ডা ভীতু মানুষ। তাকে অনুগত করে রাখতে কোনো বেগ পেতে হয় না মজিদের। কারণ, রহিমার মনেও রয়েছে গ্রামবাসীর মতো তীব্র খোদাভীতি। স্বামী যা বলে, রহিমা তাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে। রহিমার বিশ্বাস তার স্বামী অলৌকিক শক্তির অধিকারী। প্রতিষ্ঠা লাভের সাথে সাথে মজিদ ধর্মকর্মের পাশাপাশি সমাজেরও কর্তা-ব্যক্তি হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে উপদেশ নির্দেশ দেয়- গ্রাম্য বিচার-সালিশিতে সে-ই হয়ে ওঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রধান ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে মাতব্বর খালেক ব্যাপারীই তার সহায়ক শক্তি। ধীরে ধীরে গ্রামবাসীর পারিবারিক জীবনেও নাক গলাতে থাকে সে। তাহেরের বাপ-মার মধ্যেকার একান্ত পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে তাহেরের বাপের কর্তৃত্ব নিয়েও সে প্রশ্ন তোলে। নিজ মেয়ের গায়ে হাত তোলার অপরাধে হুকুম করে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ার এবং সেই সঙ্গে মাজারে পাঁচ পয়সার সিন্নি দেয়ার। অপমান সহ্য করতে না পেরে তাহেরের বাপ শেষ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ হয়। খালেক ব্যাপারীর নিঃসন্তান প্রথম স্ত্রী আমেনা সন্তান কামনায় অধীর হয়ে মজিদের প্রতিদ্বন্দ্বী পিরের প্রতি আস্থাশীল হলে মজিদ তাকেও শাস্তি দিতে পিছপা হয় না। আমেনা চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করে মজিদ। কিন্তু তবু মাজার এবং মাজারের পরিচালক ব্যক্তিটির প্রতি আমেনা বা তার স্বামী কারুরই কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয় না।

গ্রামবাসী যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে মজিদের মাজারকেন্দ্রিক পশ্চাৎপদ জীবন ধারা থেকে সরে যেতে না পারে, সে জন্য সে শিক্ষিত যুবক আক্কাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। মজিদ এমনই কুট-কৌশল প্রয়োগ করে যে আক্কাস গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। এভাবে একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক গ্রাম, সমাজ ও মানুষের বাস্তব-চিত্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসটি শিল্পিত সামাজিক দলিল হিসেবে বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় সংযোজন।

‘লালসালু’র প্রধান উপাদান সমাজ-বাস্তবতা। গ্রামীণ সমাজ এখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থবির, যুগযুগ ধরে এখানে সক্রিয় এই অদৃশ্য শৃঙ্খল। এখানকার মানুষ ভাগ্য ও অলৌকিকত্ব গভীরভাবে বিশ্বাস করে। দৈবশক্তির লীলা দেখে নিদারুণ ভয় পেয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখে নয়তো ভক্তিতে আপ্লুত হয়। কাহিনির উন্মোচন-মুহূর্তেই দেখা যায়, শস্যের চেয়ে টুপি বেশি। যেখানে ন্যাংটো থাকতেই বাচ্চাদের আমসিপারা শেখানো হয়। শস্য যা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। সুতরাং ওই গ্রাম থেকে ভাগ্যের সন্ধানে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে-গ্রামে গিয়ে বসতি নির্মাণ করতে চায় সেই গ্রামেও একইভাবে কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের জয়-জয়কার। এ এমনই এক সমাজ যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেবলই শোষণ আর শোষণ-কখনো ধর্মীয়, কখনো অর্থনৈতিক। প্রতারণা, শঠতা আর শাসনের জটিল এবং সংখ্যাবিহীন শেকড় জীবনের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত পরতে পরতে ছড়ানো। আর ওই সব শেকড় দিয়ে প্রতিনিয়ত শোষণ করা হয় জীবনের প্রাণরস। আনন্দ, প্রেম, প্রতিবাদ, সততা- এই সব বোধ এবং বুদ্ধি ওই অদৃশ্য দেয়ালে ঘেরা সমাজের ভেতরে প্রায়শ ঢাকা পড়ে থাকে। এই কাজে ভূস্বামী, জোতদার এবং ধর্মব্যবসায়ী একজন আর একজনের সহযোগী। কারণ স্বার্থের ব্যাপারে তারা একাট্টা-পথ তাদের এক। একজনের আছে মাজার, অন্যজনের আছে জমিজোত প্রভাব প্রতিপত্তি। দেখা যায়, অন্য কোথাও নয় আমাদের চারপাশেই রয়েছে এরূপ সমাজের অবস্থান। বাংলাদেশের যে-কোনো প্রান্তের গ্রামাঞ্চলে সমাজের ভেতর ও বাইরের চেহারা যেন এরূপ একই রকম।

আবার এই বদ্ধ, শৃঙ্খলিত ও স্থবির সামাজিক অবস্থার একটি বিপরীত দিকের চিত্রও আছে। তা হলো, মানুষের প্রাণধর্মের উপস্থিতি। মানুষ ভালোবাসে, স্নেহ করে; কামনা-বাসনা এবং আনন্দ-বেদনায় উদ্বেলিত হয়। নিজের স্বাভাবিক ইচ্ছা ও বাসনার কারণে সে নিজেকে আলোকিত ও বিকশিত করতে চায়। সংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভয়ের বাধা ছিন্ন কের সহজ প্রাণধর্মের প্রেরণোয় আত্মশক্তির জাগরণ ঘটাতে চায়। কোনো ক্ষেত্রে যদি সাফল্য ধরা নাও দেয় তবু কিন্তু স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বেঁচে থাকে। প্রজন্ম পরম্পরায় চলতে থাকে তার চাওয়া ন-পাওয়ার সাংঘর্ষিক রক্তময় হৃদয়ার্তি। এটা অব্যাহত থাকে মানব সম্পর্কে মধ্যে, দৈনন্দিন ও পারিবারিক জীবনে, এমনকি ব্যক্তি ও সমষ্টির মনোলোকেও।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মানবতাবাদী লেখক। মানব-মুক্তির স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা তাঁর সাহিত্য সাধনার কেন্দ্রে সক্রিয়। এ দেশের মানুষের সুসংগত ও স্বাতঃস্ফূর্ত বিকাশের অন্তরায়গুলিকে তিনি তাঁর রচিত সাহিত্যের পরিমণ্ডলেই চিহ্নিত করেছেন; দেখিয়েছেন কুসংস্কারের শক্তি আর অন্ধবিশ্বাসের দাপট। স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও সমাজ সরল ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে কীভাবে বিভ্রান্ত ও ভীতির মধ্যে রেখে শোষণের প্রক্রিয়া চালু রাখে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ তিনি দিয়েছেন ‘লালসালু’ উপন্যাসে। ধর্মবিশ্বাস কিন্তু তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য নয়-তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ধর্ম ব্যবসায় এবং ধর্মের নামে প্রচলিত কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও অন্ধত্ব। তিনি সেই সমাজের চিত্র তুলে ধরেন যেখানে ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি’। তিনি মনে করেন, ধর্ম মানুষকে সত্যের পথে, কল্যাণের, পথে, পারস্পরিক মমতার পথে নিয়ে এসেছে; কিন্তু ধর্মের মূল ভিত্তিটাকেই দুর্বল করে দিয়েছে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। এ কারণে মানুষের মন আলোড়িত, জাগ্রত ও বিকশিত তো হয়ইনি বরং দিন দিন হয়েছে দুর্বল, সংকীর্ণ এবং ভীত। স্বার্থ ও লোভের বশবর্তী হয়ে এক শ্রেণির লোক যে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য নানান ভণ্ডামি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর আঘাত তার বিরুদ্ধে। লেখক সামাজিক এই বাস্তবতার চিত্রটিই এঁকেছেন ‘লালসালু’ উপন্যাসে; উন্মোচন করেছেন প্রতারণার মুখোশ।

অত্যন্ত যত্ন নিয়ে রচিত একটি সার্থক শিল্পকর্ম ‘লালসালু’ উপন্যাস। এর বিষয় নির্বাচন, কাহিনি ও ঘটনাবিন্যাস গতানুগতিক নয়। এতে প্রাধান্য নেই প্রেমের ঘটনার, নেই প্রবল প্রতিপক্ষের প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্বসংঘাতের উত্তেজনাকর ঘটনা উপস্থাপনের মাধ্যমে চমক সৃষ্টির চেষ্টা অথচ মানবজীবনের প্রকৃত রূপ আঁকতে চান তিনি। মানুষেরই অন্তর্ময় কাহিনি বর্ণনা করাই লক্ষ্য তাঁর। ফলে চরিত্র ও ঘটনার গৃঢ় রহস্য, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাঁকে দেখাতে হয়েছে যা জীবনকে তার অন্তর্গত শক্তিতে উজ্জীবিত ও উদ্দীপ্ত করে। যে ঘটনা বাইরে ঘটে তার অধিকাংশেরই উৎস মানুষের মনের লোভ, ঈর্ষা, লালসা, বিশ্বাস, ভয়, প্রভূত্ব কামনাসহ নানারূপ প্রবৃত্তি। বাসনাবেগ ও প্রবৃত্তি মানুষের মনে সুপ্ত থাকে বলেই বাইরের বিচিত্র সব ঘটনা ঘটাতে তাকে প্ররোচিত করে। ধর্ম-ব্যবসায়ীকে মানুষ ব্যবসায়ী হিসেবে শনাক্ত করতে না পেরে ভয় পায়। কারণ, তাদের বিশ্বাস লোকটির পেছনে সক্রিয় রয়েছে রহস্যময় অতিলৌকিক কোনো দৈবশক্তি। আবার ধর্ম- ব্যবসায়ী ভণ্ড ব্যক্তি যে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ বোধ করে তা নয়, তার মনেও থাকে সদা ভয়, হয়ত কোনো মানুষ স্বাভাবিক প্রেরণা ও বুদ্ধির মাধ্যমে তার গড়ে তোলা প্রতিপত্তির ভিত্তিটাকে ধসিয়ে দেবে। নরনারীর অবচেতন ও সচেতন মনের নানান ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াই এভাবে লেখকের বিষয় হয়ে উঠেছে ‘লালসালু’ উপন্যাসে।

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

লালসালু উাপন্যাস


গ-অংশ : উপন্যাস

১। ফাহমিদা ও ফাহিয়ানের বিয়ের সাত বছর পেরোলেও তাদের কোনো সন্তান হয় না। কিন্তু গ্রামের লোকেরা সম্পর্কে নানা বাজে কথা বলে। চাকরি দেওয়ার নামে সে নাকি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে। ফাহমিদা এসব কথা কানে তোলে না, সে তার স্বামীকে অত্যন্ত ভালোবাসে ও বিশ্বাস করে। ভবিষ্যতে বংশরক্ষার কথা চিন্তা করে ফাহিয়ান দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ফাহমিদা তার স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে নেয় না; বরং প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
ক) মজিদ কখন গ্রামে প্রবেশ করে? --১
খ) 'শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ) উদ্দীপকের সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের বৈসাদৃশ্য কোথায়? বর্ণনা কর। ৩
ঘ) "উদ্দীপকের সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের ঘটনা সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও চেতনা ভিন্ন"_ উক্তিটি বিচার কর। ৪


২। দিন কাটিয়া যায়। জীবন অতিবাহিত হয়। ঋতুচক্রে সময় পাক খায়। পদ্মার ভাঙনধরা তীরে মাটি ধসিতে থাকে, পদ্মার বুকে জল ভেদ করিয়া জাগিয়া উঠে চর, অর্ধ শতাব্দীর বিস্তীর্ণ চর পদ্মার জলে আবার বিলীন হইয়া যায়। জেলেপাড়ার শিশুর ক্রন্দন কোনো দিন বন্ধ হয় না। ক্ষুধা-তৃষ্ণার দেবতা, হাসি-কান্নার দেবতা, অন্ধকার আত্মার দেবতা, ইহাদের পূজা কোনো দিন সাঙ্গ হয় না।
ক) গ্রামের প্রতিবাদী শিক্ষিত যুবক কে? ১
খ) 'গ্রামবাসী যেন রহিমার অন্য সংস্করণ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ) উদ্দীপকের সঙ্গে 'লালসালু' উপন্যাসের সাদৃশ্য কোথায়? বর্ণনা কর। ৩
ঘ) "উদ্দীপকটি 'লালসালু' উপন্যাসের আংশিক রূপায়ণ মাত্র"- আলোচনা কর। ৪


৩। ওয়াসিকা গ্রামের এক দুরন্ত মেয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে ছোটাছুটি করা, অবাধে সাঁতার কাটতে তার ভালো লাগে। অভাবের তাড়নায় ওয়াসিকাকে তার বাবা পাশের গ্রামের এক বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিলেন। লোকটি গ্রামের মাতব্বর। তাকে সবাই একাব্বর মুন্সি বলে ডাকে। মুন্সির কথা গ্রামের সবাই মানলেও স্বাধীনচেতা ওয়াসিকা তার কথা মানে না।
ক. ধলা মিয়া কেমন ধরনের মানুষ ছিল? ১
খ. 'সজোরে নড়তে থাকা পাখিটার পানে তাকিয়ে সে মূর্তিবৎ বসে থাকে' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২
গ. ওয়াসিকা 'লালসালু' উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ - ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. 'উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি 'লালসালু' উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক দিক ধারণ করেনি- মূল্যায়ন করো। ---- ৪


৪। চেয়ারম্যান সাহেবের কথাই আইন, সিদ্ধান্তই বিচারের রায়। সাথে আছেন ফজর মুন্সি, ইউনিয়নের বড় মসজিদের ইমাম তিনি। শরিয়তের মারপ্যাঁচে খোদার দুনিয়ায় ক্ষমতা তার অনেক। দরিদ্র, অশিক্ষিত গ্রামবাসীদের সব সমস্যার সমাধান হয় ইউনিয়ন পরিষদে। ইমাম সাহেবের কথার ওপরে কথা নেই চেয়ারম্যানের। ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর চলে নির্বিচার খবরদারি। বিবাহ-তালাক, মারামারি, গোণ্ডগোল, জমিজমা থেকে শুরু করে সমাজের সব কিছুতেই চেয়ারম্যান-ইমাম একে অপরের পরিপূরক।

ক. ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টের নাম কী? ১
খ. খালেক ব্যাপারীর সাথে মজিদের এত ঘনিষ্ঠতা কেন? ২
গ. উদ্দীপকের ইউনিয়ন পরিষদের সাথে 'লালসালু' উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর বাড়ির সাদৃশ্য বর্ণনা করো। ৩
ঘ. "উদ্দীপকে ও 'লালসালু' উপন্যাসে সামন্তবাদী সমাজে পুরোহিতের দৌরাত্ম্য লক্ষ করা যায়।"- বিশ্লেষণ করো। ৪

৫। আজ থেকে কয়েক শ বছর আগে ব্রিটিশরা এ দেশে এসেছিল এই অঞ্চল দখল করার জন্য। প্রথমে তারা এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষিত ও সভ্য করে তোলার কৌশল গ্রহণ করে। ধীরে ধীরে তারা এ দেশের ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করতে থাকে। একপর্যায়ে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে শাসনের নামে সব ধরনের নির্যাতন চালাতে শুরু করে।
(ক) ‘লালসালু’ উপন্যাসটি কত সালে প্রকাশিত হয়? ১
(খ) ‘খোদার এলেমে বুক ভরে না তলায় পেট শূন্য বলে’—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ২
(গ) উদ্দীপকের ব্রিটিশদের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়? বুঝিয়ে লেখো। ৩
(ঘ) ‘‘উদ্দীপকের ব্রিটিশ এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের ‘মজিদ’-এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার কৌশল একই ধরনের’’—আলোচনা করো। ৪


৬।‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র টুনি। ১৩ বছর বয়সে টুনির বিয়ে হয় বাবার বয়সী মকবুলের সঙ্গে। সংসারের সব কাজ করলেও সে মন থেকে মকবুলকে কখনো স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। তাই দুই সতীনের সঙ্গে কোনো প্রকার রেষারেষি না থাকলেও অল্প বয়সী টুনি কখনো মকবুলের সংসারে মন বসাতে পারেনি।
(ক) মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কী? ১
(খ) কে মজিদের মুখে থুথু নিক্ষেপ করেছিল এবং কেন? ২
(গ) উদ্দীপকের টুনির সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য আছে—নির্ণয় করো। ৩
(ঘ) উদ্দীপকে ‘লালসালু’ উপন্যাসের যে দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে, তা তোমার মতো করে বিশ্লেষণ করো। --৪


৭। শ্যামপুর গ্রামে কোনো স্কুল নেই। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী। সন্তানকে পাঁচ মাইল দূরের স্কুলে পাঠানোর আগ্রহ তাদের নেই। গ্রামের মক্তবের পড়াশোনাই তাদের ভরসা। শিক্ষিত যুবক মনির গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মক্তবের মৌলভি সাহেব মাতব্বরদের বোঝাতে সক্ষম হন যে স্কুল হলে গ্রামে বখাটে ছেলেদের আড্ডা ও আনাগোনা বাড়বে; পড়াশোনার জন্য মক্তবই যথেষ্ট। মাতব্বরদের বাধায় মনিরের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ থমকে যায়।
(ক) মহব্বতনগরে কে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল? ১
(খ) ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি’—উক্তিটির তাত্পর্য লেখো। ২
(গ) উদ্দীপকের মনির চরিত্রটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আলোচনা করো। ৩
(ঘ) ‘উদ্দীপকের মৌলভি ও ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ নিজেদের স্বার্থহানির ভয়ে আধুনিক শিক্ষাকে ভয় পায়’—উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো। --৪

৮।রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অনেকগুলো মাজারের অবস্থান। এগুলোর একটির রক্ষক এমদাদ গাজী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ মাজার রক্ষণাবেক্ষণ করলেও তিনি জানেন না সেখানে কে শায়িত আছে। নিজেকে অনেক অলৌকিক শক্তির অধিকারী মনে করেন তিনি, সেই সঙ্গে ভক্তবৃন্দের কাছেও তিনি পরম আকাঙ্ক্ষিত। দিনে দিনে অনেক ধন-সম্পদ বেড়ে গেল তাঁর। একসময় তিনি এক ভক্তের অল্পবয়সী এক কন্যাকে বিয়ে করেন। কিন্তু সে কন্যা এমদাদ গাজীর অবাধ্য।
ক. কোন গ্রামে নামকরা পীর সাহেবের আগমন ঘটেছিল? ১
খ. ‘গ্রামের লোকেরা যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ’—ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকের এমদাদ গাজীর মানসিকতা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রকে মনে করিয়ে দেয় আলোচনা করো। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকের এমদাদ গাজী ও ‘লালসালু’ উপন্যাসের সংশ্লিষ্ট চরিত্রের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন’— তোমার অভিমত তুলে ধরো। ৪

৯।অনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রিধারী একজন সচেতন ছেলে। সে গ্রামের অসহায়, দুস্থ মানুষের সেবা করতে চায়। তাই তো সে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে গ্রামের ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে। তার এই মহৎ সিদ্ধান্তকে গ্রামের অনেকেই স্বাগত জানায়; কিন্তু জমির শেখ এর বিরোধিতা করে। সে বলে, ‘মসজিদের উন্নয়ন না করে স্কুল বানাইলে খোদা নারাজ হবে।’
ক. মহব্বতনগরে কে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল? ১
খ. মজিদ স্কুল নির্মাণে বাধা প্রদান করেছিল কেন? ২
গ. উদ্দীপকের অনিক ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছে—নির্ণয় করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের জমির শেখ ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং কেন, তা বিশ্লেষণ করো। ৪

বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১ম পত্রের বহুনির্বাচনি নমুনা প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
লালসালু

১. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কোন উপন্যাসের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন?
ক. লালসালু খ. চাঁদের অমাবস্যা
গ. কাঁদো নদী কাঁদো ঘ. নয়নচারা
উত্তর : ক

২. রহিমা চরিত্রে কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. স্পষ্টবাদিতা খ. ধর্মভীরুতা
গ. দুর্বলতা ঘ. অহংকারী
উত্তর:খ

৩. ঢেঙা বুড়ো কী কারণে নিঃস্ব হয়েছে?
ক. মামলা-মোকদ্দমায় খ. স্ত্রীর কারণে
গ. সন্তানের কারণে ঘ. ভাইয়ের কারণে
উত্তর:ক

৪. হাসুনির মার মা-বাবার মধ্যে কোন বিষয়টি বিদ্যমান?
ক. আনন্দ খ. বেদনা গ. স্বাচ্ছন্দ্য ঘ. চুলোচুলি
উত্তর: ঘ

৫. মজিদের বিরুদ্ধে চরিত্র হিসেবে নিচের কোন চরিত্রটি সমর্থনযোগ্য?
ক. খালেক ব্যাপারী খ. তাহের
গ. রহিমা ঘ. ঢেঙা বুড়ো
উত্তর: ঘ

৬. হাসুনির মায়ের প্রতি মজিদের কোন দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে?
ক. দয়াশীলতার খ. লাম্পট্যের
গ. করুণার ঘ. শোষণের
উত্তর: খ

৭. মজিদের উচ্চতা নির্ণয়ে নিচের কোন শব্দটি গ্রহণযোগ্য?
ক. লম্বা খ. মধ্যম
গ. বেঁটে ঘ. অতিরিক্ত খাটো
উত্তর: গ

৮. ‘চাঁদ’ শব্দের সমার্থক শব্দ কোনটি?
ক. রবি খ. নক্ষত্র গ. তারকা ঘ. ইন্দু
উত্তর: ঘ

৯. মহব্বতনগর গ্রামের মূল লোক কে?
ক. মজিদ খ. খালেক ব্যাপারী
গ. মতলুব খাঁ ঘ. তাহের মিয়া
উত্তর: ক

১০. মজিদের মতে স্ত্রীলোকদের কত প্যাঁচ ছাড়ানো সম্ভব?
ক. ৫ খ. ৬ গ. ৭ ঘ. ৮
উত্তর: গ

১১. আমেনা বিবি কী রঙের চাদর পরেছিল?
ক. হলুদ খ. সাদা
গ. কালো ঘ. লাল
উত্তর: ক

১২. মজিদের মুখে জমিলার থুথু নিক্ষেপে কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. ক্ষোভ খ. ক্রোধ
গ. গর্ব খ. হিংসা
উত্তর: ক

১৩. ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের সাম্রাজ্য পতনে নিচের কোন বিষয়টি গ্রহণযোগ্য?
ক. আক্কাসের স্কুল নির্মাণ
খ. জমিলার থুথু নিক্ষেপ
গ. রহিমার প্রতিবাদ
ঘ. ঢেঙা বুড়োর ক্ষোভ
উত্তর: খ

১৪. মজিদ জমিলাকে কোথায় বেঁধে রেখেছিল?
ক. মাজারে খ. মসজিদে গ. ঘরে ঘ. উঠানে
উত্তর: ক

১৫. মজিদের মতে দুনিয়ার মানুষের মতো কারা তাকে ভয় পায়?
ক. ফেরেশতারা খ. জিন-পরিরা
গ. ভূতেরা ঘ. হিংস্র প্রাণীরা
উত্তর: খ

১৬. মজিদের মতে শয়তানকে তাড়ানোর জন্য আল্লাহ কী ছোড়ে?
ক. বৃষ্টি খ. বজ্র গ. শিলা ঘ. পাথর
উত্তর: গ

১৭. ‘ধান দিয়ে কী হইব, মানুষের জান যদি না থাকে?’—উক্তিটিতে মজিদের প্রতি রহিমার চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. ক্ষোভ
খ. নিন্দা গ. অভিমান ঘ. কটু কথা
উত্তর: ক

১৮. ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের স্বীয় ধর্মের শিকার হয়েছে কোন চরিত্রটি?
ক. জমিলা
খ. খালেক ব্যাপারী
গ. আক্কাস ঘ. তানুবিবি
উত্তর: ক

১৯. ‘নফরমানি করিও না! খোদার ওপর তোয়াক্কল রাখো।’—উক্তিটিতে মজিদের কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে?
ক. খোদাভক্তি খ. ধর্মভীরুতা
গ. মাজারপ্রীতি ঘ. মানবতাবোধ
উত্তর: ক

২০. মজিদের যশ ও খ্যাতির উত্স কী?
ক. কবর খ. ক্ষমতা
গ. দক্ষতা ঘ. খালেক ব্যাপারী
উত্তর: ক

২১. মজিদের নিঃসঙ্গবোধের কারণ কী?
ক. নিঃসন্তান হওয়ায়
খ. মাজার রহস্য উন্মোচন হওয়ার ভয়
গ. গ্রামের মানুষের কাছে অবহেলিত হওয়ায়
ঘ. আওয়ালপুরের পীরের কারণে
উত্তর: ক

২২. ‘আমাগো যদি পোলাপাইন থাকত!’—উক্তিটি কার?
ক. খালেক ব্যাপারীর
খ. আমেনার
গ. রহিমার ঘ. মজিদের
উত্তর: ঘ

২৩. রহিমা কাকে পোষ্য রাখতে চায়?
ক. হাসুনিকে খ. তাহেরকে
গ. কাদেরকে ঘ. আক্কাসকে
উত্তর: ক