দিনলিপি লিখন
(১)একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি
২৪.৪.২০১৮ ইং
প্রতিদিনের দিনলিপি লেখার শুরুতেই প্রথমেই আমার জীবন ভাবনা গুলো লিখে রাখি।আজ ২৪ এপ্রির রোজ মঙ্গল বার। সময় সকার ৯:০০টা। আমার জীবনের আরও একটি সম্ভাবনাময় দিনের সূত্রপাত হল প্রতিটি দিনই আমার কাছে নতুন সম্ভাবনাময় এবং জীবন গঠনের আর একটি নতুন আহ্বান।
ভোর ৫ টা সকাল ৭টা
আজ ঘুম থেকে উঠেছি খুব ভোরে। তারপর হাতমুখ ধুয়ে অজু করে নামাজ পড়ে বাইরে বেরুই। এক ঘন্টা হাটাহাটি করি ,একটু ব্যায়ামও করি। তার পর নাস্তা শেষ করে পড়তে বসি।
সকাল ৭টা হতে ৮টা
সকালে লেখাপড়ার খুব একটা সময় আমি পাই না ।তাই যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলিতে একটু চোখ বুলিয়ে নিই। বিাশেষভাবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো । ইংরেজী গ্রমারের কোন সুত্র ভুলে গেলে তা বার বার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করি। আর যে বিষয় গুলো বুঝতে পারিনা সেগুলো খাতায় টুকে রাখি তারপর কলেজে গিয়ে বন্ধুবান্ধবীদের নিকট হতে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে স্যারের সাহায্য নেই।
সকাল ৮টা হতে ৯টা
এক ঘন্টার মধ্যে গোসল ,খাওয়া দাওয়া এবং কলেজের জন্য প্রস্তুত হওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। বেশ তাড়াহুড়ো করতে হয়। অনেক সময় খাবার না খেয়েই কলেজে ছুটতে হয়। মাকে বলি পেটে খিদে নেই ,কলেজ থেকে ফিরে এসে খাব। মা বিষয়টি ঠিকই বুঝেন। একটি কেক বিস্কুট হাতে দিয়ে বলেন রিকসায় যেতে যেতে খেয়ে নিস। রিকসায় বসে খেতে আমার ভাল লাগেনা। মার দেয়া খাবার ব্যাগে পরে থাকতে খাকেতে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রাস্তায় পথ শিশুকে আমি দিয়ে দিই তারা পেয়ে খুবই খুশি হয়। তাদের আনন্দ দেখে মনে হয় আরও বেশি যদি আমি দিতে পারতাম।
সকান ৯টা হতে ২টা
এই সময়টা আমার কলেজে কাটে। কখনও তা তিনটে কিংবা চারটে গড়ায় ।তা অবশ্য নির্ভর করে কলেজ রুটিনের উপর ।বেশির ভাগ সময় কলেজ ২টার সময় ছুটি হয়ে যায়। আজ ছুটি হযেছে আরও এক ঘন্টা আগে। ২য় ঘন্টার পর ছুটির ঘোষনা হয়। কলেজ উন্নয়ন নিয়ে আজ স্যারদের বিষেশ মিটিং আছে।
২টা থেকে বিকেল ৪টা
এ সময় টা সাধারনত বাসায় কাটে। বাসায় এই সময়টা গল্পের বই অথবা টেলিভিশন দেখে কাটে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের বাসায় যাই। অাজ বাসায় ফিরে মায়ের সাথে মার্কেটে যাই মা আমার জন্য সুন্দর একটা হাতঘড়ি কিনলেন।
বিকেল ৪টা হতে সন্ধ্যা ৬্টা
এ সময়টা হল আমার খেলার সময়। আজকাল যদিও খেলার মাঠ বলতে কিছু নেই। খেলা বলতে এখন যা বুঝায় তা হল যন্ত্রনিয়ে খেলা মোবাইল ফোনে কথা বলা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা অথবা কম্পিউটার নিয়ে বসা।
সন্ধ্যা ৬টা হতে ১১টা
একটানা দু ঘন্ট পড়া শেষে হয় খবর দেখি না হয় টেলিভিশনে কোন অনুষ্ঠান , বিশেষত নাটক দেখি।সে সঙ্গে খাওয়া দাওয়ার কাজটা শেষ করি । ঘুমুতে যাওয়ার আগে দিনলিপি লিখি । পরবর্তী দিনের কার্যক্রম ঠিক করে ঘুমুতে যাই।
২৪.৪.২০১৮ইং রাত ১১টা ১০মি:
২৪.৪.২০১৮ ইং
(২) একটি বাদলা দিনের বর্ননা দিয়ে একটি দিনলিপি রচনা কর।
উত্তর:- ---------
প্রশ্ন:৩ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ দিনলিপি রচনা করো।
উত্তর:
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শনিবার
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সময়: রাত ১২.৩০ মিনিট
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমাদের বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ একটি দিন। ভাষা আন্দোলনের এতগুলো বছর পরও দিনটির গুরুত্ব এতটুকু কমেনি আমাদের কাছে।
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়লাম শহীদ মিনারের উদ্দেশে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে দেখলাম মানুষের ঢল নেমেছে। সবার সঙ্গে আমিও খালি পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। সকালের সূর্যের আলো এসে পড়েছে শহীদ মিনারের ওপর। ১৯৫২ সালের এই দিনটিতে মাতৃভাষার দাবিতে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতরা কী অবলীলায় প্রাণদান করেছিলেন, ভাবলে অবাক লাগে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো জাতি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বলি দিয়েছিল। সেদিন বাঙালি তরুণেরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য ঢাকার রাজপথে নেমেছিলেন। কিন্তু পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালায় তাঁদের ওপর। শহীদের বুকের রক্তে লাল হয় ঢাকার রাজপথ। এসব ভাবতে ভাবতে শহীদ মিনারের সামনে এসে পড়লাম। হাতের ফুলের তোড়াটা বেদিতে রেখে শ্রদ্ধা জানালাম শহীদদের উদ্দেশে আর সবার সঙ্গে গেয়ে উঠলাম—
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’
ফুল দেওয়া শেষে বাসায় চলে এলাম। টিভি খুলে দেখলাম, বিভিন্ন চ্যানেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আলোচনা সভা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। কয়েকটি অনুষ্ঠান দেখলাম।
আজ যে আমরা নিজ ভাষায় কথা বলছি, তা ভাষাশহীদদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। তাঁরা তাঁদের জীবনের বিনিময়ে বাঙালি জাতিকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার উপহার দিয়েছেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। পৃথিবীর সব দেশ এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে। কিন্তু যখন দেখি তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষাকে বিকৃত করছে, খুব খারাপ লাগে। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই ভাষাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। সেই সব নির্ভীক ভাষাশহীদ আমাদের হূদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই—
‘সালাম সালাম, হাজার সালাম
সকল শহীদ স্মরণে
বাংলা ২য় পত্রের ৮ (ক) নম্বর প্রশ্নটি থাকবে ‘দিনলিপি’ লেখার ওপর, নম্বর থাকবে ১০। আজ ৮ (ক) নম্বর প্রশ্নের নমুনা উত্তরটি লিখেছে হলিক্রস কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী লাজিমা তারান্নুম অসমিতা
৮ (ক) নম্বর প্রশ্ন: দিনলিপি
প্রশ্ন: জাদুঘর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি দিনলিপি লেখো।
উত্তর:
জাদুঘর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে দিনলিপি
২ জানুয়ারি ২০১৬
১৩৬ গ্রিন রোড, ঢাকা
সময়: রাত ১০টা
বাঙালি হিসেবে নিজেকে আজ আরও গর্বিত মনে হচ্ছে। কেননা, আজ আমি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক জাতীয় জাদুঘর দেখে এসেছি। তাই এই দিনটি আমি আমার স্মৃতির পাতায় আটকে রাখতে চাই।
দিনের প্রথম ভাগ: খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। আগের দিন রাতেই বাবা ও মামার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছিল জাদুঘরে যাওয়া নিয়ে। ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা করলাম। অতঃপর তৈরি হয়ে নিলাম। সকাল ১০টার দিকে আমি, বাবা ও মামা জাদুঘরের উদ্দেশে রওনা হলাম। রাস্তায় যানজটের ভিড় ঠেলে বেলা সাড়ে ১১টায় জাদুঘরে পৌঁছালাম। দিনের মধ্য ভাগ: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ নানা ধাপ অতিক্রম করেছে। আর এসবের চিহ্ন ধারণ করে আছে আমাদের জাতীয় জাদুঘর। শাহবাগে অবস্থিত এই জাদুঘরের বাঁ দিকের গেট দিয়ে ঢুকতেই নজর কাড়ল ডান পাশে অর্ধবৃত্তাকার মৌসুমি ফুলের বাগান আর চারদিকের সবুজ গাছপালা। ১৯১৩ সালের ২০ মার্চ স্থাপিত এই জাদুঘরটি বর্তমানে আট একর জায়গার ওপর একটি সুদৃশ্য ভবন। ভবনের মেটাল ডিটেক্টর দরজা দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ল নভেরার একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। ডান দিকে রয়েছে অফিস আর বাঁ দিকে অডিটোরিয়াম। এরপর বড় সিঁড়ি দিয়ে আমি, বাবা ও মামা দোতলায় এলাম। প্রথমেই দেখলাম বাংলাদেশের বিশাল একটি মানচিত্র, যেটি দেখলে একনজরেই বোঝা যায় কোথায় কী আছে। বাঁ দিক দিয়ে ঢুকলাম গ্যালারিতে। সেখানে রয়েছে গাছপালা, জীবজন্তু, উপজাতি জনজীবন, অতীতের সব মুদ্রা ও স্থাপত্য। অবাক হলাম হাতির দাঁতের পাটি, মৌমাছিসহ মৌচাক দেখে। তৃতীয় তলায় রয়েছে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, চীনামাটির শিল্পকর্ম, নকশিকাঁথা, অলংকার ও প্রাচীন বাংলার নানা নিদর্শন। দেখতে পেলাম প্রথম শহীদ মিনারের পিলার। ভাষাশহীদদের রক্তমাখা শার্ট, বধ্যভূমিতে পাওয়া মাথার খুলি; যা আমাদের নির্মম ইতিহাস ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। চতুর্থ তলায় দেখলাম চীনের বিখ্যাত টেরাকোটা ওয়ারিয়র। এখানে আরও দেখলাম বিশ্ববরেণ্য মনীষীদের প্রতিকৃতি ও বিশ্ব শিল্পকলার সমাহার। মনে হচ্ছিল, আমি এঁদেরই অংশ, এঁদের সমসাময়িক। সময় শেষ হয়ে এল, বেরিয়ে এলাম; কিন্তু সঙ্গে আনলাম বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা ও গর্ব।
দিনের শেষ ভাগ: জাদুঘর থেকে ফিরতে ফিরতে বেলা প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেল। বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তবু মনের ভেতর অন্য রকম আনন্দ অনুভব করছি। হাত-মুখ ধুয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম।
সন্ধ্যার প্রথম ভাগ: সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে বসে জাদুঘরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলাম। নিজের দেশ, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি বলে মা খুব খুশি হলেন। হালকা নাশতা করে পড়তে বসলাম। আজকের এই দিনটিতে আমি এক নতুন আত্মপরিচয় লাভ করেছি বলে দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।