বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

কবিতা



John Doe
আলী হাসান শিমুল প্রকাশ ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ইং:-


শরতের স্লান বিল --- এডিথ স্যোডেরগ্রান :

শরতের স্লান বিল
কী ভারী স্বপ্ন দ্যাখো তুমি বারে-বারে
বসন্ত-সাদা দ্বীপ
ডুবেছে যা পারাবারে।

শরতের স্লান বিল,
লুকায় তোমার বীচি,
তোমার আয়না ভুলে যায় যত
শুভদিন হারিয়েছি।

শরতের স্লান বিল
উচু আকাশেরে হাল্কা, নীরব বহে,
ক্ষণেকের তরে জীবন-মরণ
ঘুম-ঘুম চোখে চুম্বন করে দোঁহে।
(Pale Lake of Autumn)

তুমি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে
তোমার দু’চোখে তবু ভীরুতার হিম।
রাত্রিময় আকাশে মিলনান্ত নীলে
ছোট এই পৃথিবীকে করেছো অসীম।

বেদনা-মাধুর্যে গড়া তোমার শরীর
অনুভবে মনে হয় এখনও চিনি না
তুমিই প্রতীক বুঝি এই পৃথিবীর
আবার কখনো ভাবি অপার্থিবা কিনা।

সারারাত পৃথিবীতে সূর্যের মতন
দুপুর-দগ্ধ পায়ে করি পরিক্রমা,
তারপর সায়াহ্নের মতো বিস্মরণ-
জীবনকে, স্থির জানি, তুমি দেবে ক্ষমা

তোমার শরীরে তুমি গেঁথে রাখো গান
রাত্রিকে করেছো তাই ঝঙ্কারমুখর
তোমার ও সান্নিধ্যের অপরূপ ঘ্রাণ
অজান্তে জীবনে রাখো জয়ের সাক্ষর।


কালো বা সাদা----- এডিথ স্যোডেরগ্রান

সেতুদের নীচে নদীগুলি ব’য়ে যায়,
পথপাশে ফুল করে সব রোশনাই,
মাঠেদের কানে, ফিসফিস করে নু’য়ে-নু’য়ে পড়ে বন।
আমার জন্য উচুনিচু কিছু নাই,
অথবা কালো বা সাদা,
সেইদিন থেকে, যখন ধবল পোশাকের এক নারী
দেখেছি আমার প্রিয়ের বাহুতে বাঁধা।
(Black or White)

তারার ঝাঁক----- এডিথ স্যোডেরগ্রান

রাত্রি এলে
আমি দাঁড়াই সিঁড়িতে আর শুনি
অযুত তারার গুনগুনুনি আমার বাগানটিতে
এবং আমি আঁধারে দাঁড়ানো।
ঐ খশল একটা তারা ঠুং ক’রে!
খালি-পায়ে হাঁটিস না রে ঘাসে;
বাগান ভ’রে আছে ভাঙা-কাচে।
(The Stars)

বিজ্ঞাপন অথবা ছবি
পাখির মেলা
Cinque Terre Cinque Terre Cinque Terre

তোমার চোখ এতো লাল কেন? – নির্মলেন্দু গুণ


আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

লালসালু উপন্যাস


shimul

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর :

উদ্দীপক ১:ছোট বয়সে মাজেদা বিবির উচ্ছলতা, দুরন্তপনা, লাফালাফি, দৌড়ঝাঁপ কোনো কমতি ছিল না । বিচয়ের পর সেই মাজেদা বিবি একেবারেই বদলে গেল । স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে সে কথা বলে না । মানুষের বিপদে আপদে দোয়া করে । ধর্মপালনে সবসময় সচেষ্ট । কিন্তু মাজেদা বিবির মনে কোনো শান্তি নেই । কারণ চার বছর পার হওয়ার পরেও কোনো সন্তান হয়নি তার । স্বমীর কাছে তাই পাশের গ্রামে আসা পিরের কাছে পানি পড়া খেয়ে সন্তান লাভের বাসনা জানায় মাজেদা বিবি।

প্রশ্ন:ক.মজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম কী ? ১
খ.মজিদের শাক্তি ওপর থেকে আসে, আসে ঐ সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে,--উক্তিটি ব্যাখ্যা কর । ২
গ.উদ্দীপকের মাজেদা বিবির সাথে লালসালু উপন্যাসের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে ?ব্যাখ্যা কর । ৩
ঘ.গ্রমের ধর্মভীরু অশিক্ষিত মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় পিরের প্রতি অন্ধভক্তি -উদ্দীপক ও লালসালু উপন্যাসের আলোকে মন্তব্যটির ব্যাখ্যা কর । ৪

উত্তর:ক. মজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম রহিমা ।

খ.মজিদ মহাব্বতনগর গ্রামে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল তার শক্তি সে পেয়েছিল সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে প্রশ্নের উক্তিটিতে এ কথাই প্রকাশিত হয়েছে । মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে আগন্তুক হিসেবে প্রবেশ করে একসময় সেই গ্রামেই মজিদ শক্তির শিকড় গেড়েছিল । এই শক্তি সে পেয়েছিল মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সকল মানুষের বিশ্বাস থেকে । সালু কাপড়ে আবৃত মাজারটি মজিদকে দিয়েছিল শক্তি যা দিয়ে গ্রামে সে প্রভাব বিস্তার করেছিল । প্রশ্নের উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে ।

গ.উদ্দীপকের মাজেদা বিবির সাথে লালসালু উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীরির নি:সন্তান স্ত্রী আমেনা সাদৃশ্যপূর্ণ । স্বামীভক্ত ও ধর্মভীরু স্ত্রী আমেনা চরিত্রটি দীর্ঘ দিনের সংসারেও নি:সন্তান থেকে যায় । এদিকে খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আনুবিবির প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি আমেনা বিবির মাঝে আরো হতাশা তৈরী করে । সন্তান লাভের আশায় আমেনা বিবি খালেক ব্যাপারীকে আওয়ালপুরের পিরের নিকট থেকে পানি পড়া এনে দিতে বলে । ব্যাপারী তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ছোটো ভাই ধলা মিয়াকে পানি পড়া আনতে আওয়ালপুরের পিরের নিকট্ পাঠাতে চায় ।

উদ্দীপকের মাজেদা বিবি বিয়ের চার বছর পরেও নি:সন্তান থেকে যায় । স্বামী অনুগত মাজেদার মনে তাই কোনো শান্তি নেই । সন্তান কামনায় সে ব্যাকুল হয়ে পরে । তাই স্বামীর কাছে পাশের গায়ে আসা পিরের পানি পড়া খেয়ে সন্তান লাভের বাসনা জানায় । আর লালসালু উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর স্ত্রীও আমেনাও সন্তান লাভের আশায় গোপনে আওয়ালপুরের পিরের বাছে যায় পানি পড়া আনতে । অতএব বলতে পারি , নি:সন্তান হওয়া ও সন্তান লাভের আশায় পিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দিক থেকে খালেক ব্যাপারীর স্ত্রঅ আমেনা ও মাজেদা বিবির মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান রয়েছে ।

ঘ.গ্রামের ধর্মভীরু , অশিক্ষিত মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় পিরের প্রতি অন্ধভক্তিতে --উক্তিটি যথার্থ । লালসালু উপন্যাসের গ্রামের মানুষগুলো পিরের প্রতি অবিচল ও অন্ধবিশ্বাসে নিবিষ্ট থাকে । কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ মানুষগুলোর ধর্মভীরুতার ছত্রছায়ায় মজিদের মতো পিরেরা সমাজে শক্ত ভিত তৈরী করে । উদ্দীপকের বর্ণনায়ও গ্রামের মানুষগুলোকে পিরের অন্ধভক্তিতে আচ্ছন্ন দেখা যায় ।

উদ্দীপকের মাজেদা বিবি ও তার স্বামী পিরের প্রতি দারুণ অনুরক্ত । মাজেদার বিয়ের চার বছর পার হলেও সে নি:সন্তান । তাই তার ভরসা পাশের গ্রামে আসা পীরের পানি পড়া । পানি পড়া খেলে তার সন্তান হবে এমন ধারণা অজ্ঞতা ও অশিক্ষারই বহি:প্রকাশ গ্রামের মানুয়ের অজ্ঞতাই এর জন্য দায়ী ।

লালসালু উপন্যাসে সমাজ ধর্মভীরুতা, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও অজ্ঞতার এ অনন্য দৃষ্টান্ত । ‍মহব্বতনগরের প্রতিটি মানুষ যেন এমন প্রাগৈতিহাসিক ধারণায় ঋদ্ধ(সমৃদ্ধ,বৃদ্ধিপ্রাপ্ত) হয়ে আছে ।ফলে তাদের মধ্যে মুক্তচিন্তা, বিবেক বুদ্ধি ও আধিুনিক ধ্যান-ধারণার যথেষ্ট অবাব পরিলক্ষিত হয় । স্বর্থান্বেষী মহল এমন সামাজের মানুষকে সহজেই প্রতারিত করতে সক্ষম হয় । যেমনটি পেরেছে বন্ড, প্রতারক, পির মজিদ । মোদাচ্ছের পিরের নামে অজ্ঞাত এক কবরকে মাজার বলে চালিয়ে দিয়েও সে সফল হয় । কারণ গ্রামের ধর্মভীরু মানুষগুলো অজ্ঞতার ফলে বাস্তবজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে । রহিমা, আমেনা বিবি হাসুনির মা প্রভৃতি নারী চরিত্রগুলোও এখানে ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন আঅেচ্য উপন্যাস ও উদ্দীপকে পিরের প্রতি এমন অন্ধভক্তি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিরই সার্মথক রূপায়ণ



উদ্দীপক ২:সিলেট জেলার জালালাবাদ উপজেলায় রিসিতা নামের এক গৃহবধূ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন । পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন বণৈ অভিয়োগ উঠেছে । ঘটনার পর থেকে রিসিতার ভাসুর ও ননদ পলাতক ।

ক.আক্কাস কে ?
খ.তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় কেন ?
গ.উদ্দীপকের গৃহবধূ ও লালসালু উপন্যাসের জমিলার মধ্যে সাদৃশ্য নির্ণয় করো ।
ঘ.উদ্দীপকটি লালসালু উপন্যাসের একটি বিশেষ দিককেই প্রতিকায়িত করেছে ’--বিশ্লেষণ কর ।

ক. আক্কাস মহব্বতনগর গ্রামের মোদাব্বের মিঞার ছেলে ।

খ. সামাজিাকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে অপমানে ও লজ্জায় তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ।
তাহেরের বাপ বউয়ের সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করত এবং তাহেরের বাপ বউকে ইচ্ছেমতো মারত । চরিত্র নিয়ে পরস্পরের দোষারোপের বিষণয়টি মহব্বতনগর গ্রামের এক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে । এই নিয়ে সালিশ বসালে তাহেরের বাপকে চরমভাবে অপদস্ত করে মজিদ । এই অপমান সহ্যকরতে না পেরে তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ।

গ. উদ্দীপকে গৃহবধু রিসিতা ও লালসালু উপন্যাসের জমিলার মধ্যে পুরুষতান্ত্রিকতার ছোবলে নারী জীবনের বাস্তবচিত্র নির্মানে সাদৃশ্য রয়েছে । লালসালু উপন্যাসের জমিলা পুরুষতান্ত্রিক সমাজবাস্তবতার কাছে বিপন্ন এক নারী চরিত্র । তবে প্রতিবাদী আচরণে জমিলা আলোচ্য উপন্যাসে মুক্তির এক সুবাতাস হিসেবে বিবেচ্য । মজিদের সাথে তার অসম বিয়ে সম্পন্ন হয় । বয়সের অপরিপক্কতার কারণে তার মধ্য ছিল দাযিত্ববোধ ও সচেতনতার অভাব । কিন্তু বয়সের দোহাইয়ে সে মজিদের নিষ্টুরতা বা আক্রোশ থেকে রেহাই পায় না ।
উদ্দীপকের রিসিতাও জমিলার মতোই পুরুষতান্ত্রিক বেড়াজালে বিপন্ন এক নারী । পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তার গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় । আমাদের সমাজ জীবনে নারী এমনই কোনঠাসা হয়ে রয়েছে যে তা রীতিমতো অমানবিক । অর্থাৎ পুরুষতন্ত্রের হিংস্রতার কাছে বিপন্ন ও অসহায় হওয়ার দিক থেকে দুটি চরিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ ।


ঘ. লালসালু উপন্যাসের কাহিনি ও ঘটনা বিন্যাস প্রামীণ সামাজ বাস্তবতার সার্থক উপস্থাপন, যার একটি বিশেষ দিককে উদ্দীপকটি প্রতিকায়িত করেছে ।

লালসালু উপন্যাসের বিষয় হচ্ছে যুগ যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার অন্ধ-বিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবন প্রত্যাশার দন্দ্ব । মজিদ মহব্বতনগরবাসীর সরলতা ও ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মব্যবসায় নিজের অভাবনীয় স্বার্থ হাসিল করে। মানুষকে ধরর্মের অন্ধ মোহে আকৃষ্ট করে সে নিজের কতৃর্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে । মজিদের শাসন ও শোষণের শিকার তার অল্পবয়সি স্ত্রী জমিলা ।

উদ্দীপকে রিসিতা উপন্যাসের জমিলার প্রতিনিধি হয়ে উঠে এসেছে । কারণ রিসিতা শ্বশুরবাড়িতে পুরুষতান্ত্রিক অমানবিকতার শিকার । তার মতো জমিলাও মজিদের পুরুষতান্ত্রিক আচরণের শিকার । উদ্দীপকের রিসিতা লালসালু উপন্যাসের একটি মাত্র চরিত্রের ভিতর দিয়ে নারী জীবনের দু:খ দুর্দশার চিত্র মনে করিয়ে দেয় । তবে সেই চরিত্র অর্থাৎ জমিলাই লালসালু উপন্যাসের প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় এক মাত্র উপস্থাপক নয়

লালসালু উপন্যাসে উপন্যাসের জমিলা নরীধর্ম , হৃদয়ধর্ম ও সজীবতার যোগ্য প্রতিনিধি । তবে উপন্যাসের সম্পূণর্ প্রেক্ষাপট তাকে ঘিরে নয় বরং তার স্বামী মজিদকে ঘিরেই কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে অর্থাৎ জমিলাও মজিদকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে । আর সেই চরিত্রের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র হিসেবে উদ্দীপকের রিসিতা উপন্যাসের একটি বিশেষ দিককে প্রতিকায়িত করেছে ।

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯

বই পড়ার কৌশল

প্রত্যেকটি কাজ করার বিভিন্ন কার্যকরি পদ্ধতি থাকে। এই পদ্ধতিগুলো মানুষ তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞা থেকে শেখে। কিন্তু সব পদ্ধতিই যে কারর্যকরি হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এই কারণেই প্রত্যেক ফিল্ডেই সফলতা এবং ব্যর্থতা আছে। বই মানুষের এমন এক সঙ্গী যে কোনো অভিযোগ করে নাঃ; হতাশ ব্যক্তির জন্য আশার আলো জ্বেলে দেয় বই, গাফেল ব্যক্তির মনে চিন্তার খোরক যোগায়, জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বোঝায়। বইয়ের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই, এর আবদার কেবলে এতটুকুই- পাঠক যেন তার থেকে উপকৃত হয়। কিন্তু বই থেকে উপকৃত হওয়া ব্যক্তিভেদে পার্থক্য করে। এটা নির্ভর করছে আপনি কেন বই পড়ছেন, কোন পদ্ধতিতে বই পড়ছেন এবং পড়ার পর কী করছেন- এর ওপরে। বই পড়ারো অনেক কৌশল আছে। নিম্নে কিছু কার্যকরি পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

১। প্রস্তুতিমূলক অধ্যয়ন:
প্রস্তুতিমূলক এবং বৈষয়িক অবকাঠামোগত অধ্যয়ন। বইয়ের নাম, সূচিপত্র, কোন অধ্যায়ে কী আলোচিত হয়েছে, প্রবন্ধগুলির শিরোনাম ও উপশিরোনামগুলো কী কী, ব্যবহারিক টিপস, পরিশিষ্ট- এসবে হালকাভাবে নজর বুলিয়ে নিন। এতে আপনার স্মৃতিতে পুরো বইটির বিষয়-কাঠামোর একটি মাইন্ড-ম্যাপ তৈরি হবে।

২। বিস্তারিত অধ্যয়ন:
সম্পূর্ণ বা সবিস্তারে অধ্যয়ন। এই ধাপে কভার-টু-কভার, লাইল-বাই-লাইন পড়ুন। বুঝে বুঝে পড়ুন। প্রতিটি পয়েন্টে আপনার মস্তিষ্ককে কাজ দিন। প্রতিটি তথ্যকে ফিল্টারিং করুন- একমত হচ্ছে কিংবা দ্বিমত করছেন, চিন্তাভাবনা করে হাইলাইট করুন। বইয়ের সারবস্তু কী, তা বুঝার চেষ্টা করুন এবং আপনার ব্যবহারিক জীবনে কোন বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, সেদিকে দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রাখুন। এভাবে পুরো বইটি গভীরভাবে পড়ুন। পড়তে পড়তে ভাবুন, আর ভাবতে ভাবতে পড়ুন।

৩। নিরীক্ষণমূলক অধ্যয়ন:
এটি পূনঃনিরীক্ষণ বা পর্যালোচনামূলক অধ্যয়ন। আপনার টুকে রাখা মার্জিনের মন্তব্যগুলোর কোনো পয়েন্টে একমত হলে কেন একমত হয়েছেন এবং দ্বিমত করলে কেন করেছেন- এসব নিয়ে পর্যালোচনা করুন, পুনঃনিরীক্ষা চালান। হাইলাইট করে রাখা বিভিন্ন অংশ আবারও বুঝে বুঝে পড়ুন। হৃদয়ঙ্গম করুন। এর সাথে মস্তিষ্কে জমে থাকা অন্যান্য চিন্তা/তথ্যের যোগসূত্র তৈরি করুন। বইটির কোন বিষয়গুলো আপনার জন্য অধিক প্রাসঙ্গিক, এই মুহূর্তে কোনগুলো দিয়ে আপনার জীবনে পরিবর্তন সূচনা করতে চান- এসব বিষয়ে তথ্য ও আইডিয়া জানার্লে নোট করুন। গভীরভাবে পাঠ অনুবাধন, দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি সংরক্ষণ, সেইসাথে বাস্তবজীবনে তার সুফল অর্জনে এই ধাপটি বেশ ফলপ্রসূ।

৪। সম্পূরক অধ্যয়ন:
এই ধাপটাকে সাধারণ অধ্যয়ন বলতে পারি। মোটামুটিভাবে পুরো বইটা আবার এক নজর পড়ে নেয়া। এটা অনেকটা স্ক্যানিং বা ভিজুয়ালাইজিং- এর মতো। এতে করে তিনটি ধাপের পাঠের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য তৈরি হবে এবং পূনর্পাঠের সুবাদে তথ্যগুলো মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিতে সাপোর্ট পাবে। এই ধাপটি আপনি খুব কম সময়ে সম্পন্ন করতে পারেন, কিন্তু বইটিকে মনের মণিকোঠায় চিরকালের জন্য উজ্জ্বল করে ধরে রাখতে এর বিকল্প নেই।

বোনাস টিপস:
>> আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের মনোভাব নিয়ে পড়ুন। আল্লাহ্‌ বলেছেন, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করলো সে সফল হলো। ‘বই পাঠ, অনুবাধন, ও আত্মসংস্কারের মধ্য দিয়ে আপনি প্রতিনিয়ত সফলতার পথে অগ্রসর হচ্ছেন’ এই ভাবনা মনে জাগরুক রাখুন।
>> একসাথে তিনের অধিক বিষয়বস্তু নিয়ে পড়াশোনা থেকে বিরত থাকুন। এতে একসাথে তিনটি আলাদা আলাদা বিষয়ে চিন্তাশক্তিকে সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীভূত করে রাখাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। একই সময়ে একটি বিষয়ে বই পড়া শেষ করে পরবর্তী বিষয়ে মনোযোগী হলে অধিক ভালো।
>> একটি বই পাঠকে একটি প্রজেক্ট ওয়ার্ক হিসেবে মূল্যায়ন করুন। কাজগুলোকে চাংকিং করে নিন। চাংকিং মানে আপনার সময়-সুবিধা বুঝে কাজগুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে নেয়া। যেমন মনে করুন: ১৪০ পৃষ্ঠার একটি বই পাঠের প্রজেক্ট হাতে নিলেন। এর জন্য দিন নির্ধারণ করলেন সাতদিন। তাহলে আপনাকে প্রতিদিন ২০ পৃষ্ঠা করে পড়তে হচ্ছে।
>> পড়ার সময় সেলফোনসহ সমস্ত সোস্যাল মিডিয়া বন্ধ রাখুন। ভাল হয় ফোন সাইলেন্ট করে অন্য রুমে রেখে আসলে, নয়ত আমরা যারা এসবে এ্যাডিক্টেড, আমাদের ব্রেন প্রতিনিয়ত সিগনাল দিতে থাকবে। পড়ার সময় কেবলই পড়ুন।
>> পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সামান্য বিরতি নিয়ে পানি কিংবা চা-কফি পান করুন। সামান্য পায়চারি করুন। হাত মুখ ধুয়ে আসুন, অথবা সম্ভব হলে ওযু করে আসুন। সালাতের ওয়াক্ত হলে মাসজিদে যান। এরপর এসে আবার পড়তে বসুন।
>> হাতের বইটিকে জীবনের শেষ বই হিসেবে পড়ুন। ভাবুন, হতে পারে এর একটিমাত্র লাইন আপনার চিন্তার দ্বার খুলে দিবে; এর একটিমাত্র টিপস আমাকে আল্লাহর অভিমুখি হতে প্রেরণা যোগাবে।
>> এমনভাবে পড়ুন এবং এর ভাব ও মর্ম আয়ত্বে আনুন যেনো আপনি তা অন্যকেও ভালোভাবে বুঝাতে সক্ষম হন।

>>পড়ুন এবং কাজে নামুন<<
১। অধ্যয়ন থেকে লিখিত জার্নালের নোট সামনে রেখে কীভাবে আপনার প্রতিদিনের কাজেকর্মে পরিবর্তন আনতে চান?- তার প্রয়োগ-পদ্ধতি নিয়ে ভাবুন, কৌশল নির্ধারণ করুন এবং সে অনুযায়ী বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন। বার্ষিক, মাসিক, সাপ্তাহিক, প্রতিদিনের গোল সেট করুন। রুটিন বানানোর কার্যকরি সব কৌশল এবং ফ্রি হ্যান্ডবুক পেতে productivemuslim সাইটের এই কন্টেন্টগুলো ব্যবহার করতে পারেন- https://goo.gl/
২। সেলফ-হেলপ বা আত্মশুদ্ধিমূলক বইকে ‘ওয়ার্ক বুক’ হিসেবে গ্রহণ করুন। অধ্যয়ন করার সাথে সাথে হোমওয়ার্ক শুরু করে দিন। মনে রাখুন, ব্যবসায়িক সফলতার বই পড়লেই আপনি ব্যবসায় উন্নতি করবেন না, সুবক্তা হওয়ার বই পড়লেই আপনি রাতারাতি সুবক্তা হয়ে যাবেন না, প্রচুর ইসলামিক বই পড়লেই আপনার পুরো লাইফ স্টাইল পরিবর্তন হয়ে যাবে না, যতক্ষণ না আপনার দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষাগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন।
ঘুরে দাঁড়াও(প্রকাশতিব্য) বইতে ওয়েল ইবরাহিম খুব চমৎকার একটি কথা বলেছেন, যা প্রতিনিয়ত আমাদের স্মরণ রাখা উচিত- “চিন্তা করুন আপনি একটি বই পড়ছেন, অথচ এ থেকে আরোহিত জ্ঞান আপনি জীবনে বাস্তবায়ন করছেন না। এতে শুধু আপনার টাকা ও শক্তিরই অপচয় হচ্ছে না, সাথে সময়েরও অপচয় হচ্ছে।”
৩। অর্জিত জ্ঞান কল্যাণের পথে কাজে লাগানোর জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। এবং কাজে প্রয়োগ করতে পারা পর আত্মতৃপ্তিতে ভোগার বদলে আল্লাহর শুকুর আদায় করুন, এবং আরো উন্নতি কীভাবে করা যায়- ভাবুন।
৪। পড়া শেষে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে বইটির একটি সারাংশ লিখুন বইয়ের নোট সেকশনে। বইয়ে দাগাদাগি, কমেন্টস লেখা, রিভিউ লিখতে বলা- এগুলো অনেকে পছন্দ না করলেও বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের ব্রেনের ডোপামিন(যা ভালো অনুভূতি দেয় এবং যে কাজটা করার দ্বারা ভালো অনুভূত হয়েছে, সেই কাজটা পুনরায় করার প্রতি আগ্রহ দান করে) নির্গত করাই উদ্দেশ্য। বই পড়তে পড়তে যেন আপনি বিরক্ত হয়ে না যান, পড়াকে মজা হিসেবে নিতে পারেন- সে জন্য এগুলো বলা। আমরা যদি মাসের পর মাস একই পদ্ধতিতে বই পড়তে থাকি, তাহলে পড়ার যে প্রভাব সেটা মনে বেশী দিন থাকবে না। তাই বই পড়ার সময় দাগানো, কমেন্ট লেখা, রিভিউ লেখা- এগুলো আপনার পড়াকে চাঙ্গা রাখতে, স্মরণ রাখতে এবং সামনে আরো বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করবে।
৫। বইটির বিভিন্ন দিক নিয়ে অন্যদের সাথে মতামত শেয়ার করুন এবং এর কল্যাণকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিন আপনার আশপাশের মানুষদের মাঝে। এতে অন্যরা অনুপ্রাণীত হওয়ার পাশাপাশি আপনার মনে এক অপার্থিব ভালো লাগা তৈরি হবে।
৬। বইয়ের যে বাক্যগুলো আপনাকে খুব টাচ করে, সেগুলো বইয়ের শেষে লিখে রাখুন, অথবা আপনার পার্সোনাল ডায়েরিতে একটি টাইটেলের নীচে লিখে রাখুন; যাতে জীবনের যে কোনো সময় মোটিভেট হতে আপনার ডায়েরির পাতা আপনার কাজে আসে।
৭। লাইফ চেঞ্জিং বিষয়গুলোর ভিতর প্রতিমাসে কমপক্ষে ২টি বিষয় নিজের ওপর প্রয়োগ করুন।


**ইতিহাসের বই থেকে কীভাবে উপকৃত হবেন?
১। সর্বপ্রথম আমাদেরকে জানতে হবে, ইতিহাসের বইগুলো স্রেফ ইনফোরমেশনের ভাণ্ডার নয়। লেখক তার বইতে সেই ঘটনাগুলোকেই ফোকাস করা, যা সে খুব গুরত্বপূর্ণ মনে করে, সে সঠিক বলে বিশ্বাস করে, যা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। তার প্রতিটি উল্লেখিত ঘটনার ভিতর একটি উদ্দেশ্য থাকে, যা উদ্ভাবন করার মাঝেই পাঠকের সাফল্য। মূলত ইতিহাসগ্রন্থগুলো ‘কনভার্সেসন’ এর মতো; যেখানে লেখক পাঠকের সাথে কথা বলে। পাঠককে একটি ঘটনা বিভিন্ন দিক থেকে দেখায়। যাতে পাঠক সেই ঘটনা নিয়ে ভাবে এবং ইতিহাসের সারনির্যাস যা লেখক বোঝাতে চাচ্ছেন, তা উপলব্ধি করতে পারে।
২। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক ইতিহাসগ্রন্থ মানেই খণ্ডন। লেখক তার গ্রন্থে কোনো না কোনো ইতিহাসবিধের ব্যাখ্যাকে রিফিউট করবে। এখানে পাঠককে খুব সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। লেখকের যুক্তিগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং মস্তিষ্কে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ভাবতে হবে।
৩। ঘটনা প্রবাহ অধ্যয়নের মাঝে আপনি এমন অনেক কিছু পাবেন, যা আপনার মনে একটি নতুন আইডিয়া দেবে। এমন কিছু, যা দ্বারা আপনি আপনার বর্তমানের কোনো কিছুর সমাধান পাচ্ছেন। এগুলোই হচ্ছে গল্পের জেমস। বিজ্ঞ ইতিহাসবিদরা নিজেরাই প্রতিটি ঘটনা থেকে জেমস লিখে দেন, কিন্তু কলেবর বড় হওয়ায় অনেকে সেটা করেন না। এমতাবস্থায় পাঠকের দায়িত্ব হচ্ছে সেই জেমসগুলো খুঁজে বের করা এবং কলম বা মার্কার দিয়ে মার্ক করে রাখা। ফুট নোটে খুব কম শব্দে মার্ক করার কারণটা লিখে রাখা। এবং যে পৃষ্ঠায় আপনি জেমস পেয়েছেন, তা সূচিতে উল্লেখ করে রাখতে পারেন উক্ত পেইজের ওপর স্টার চিহ্ন দেয়ার মাধ্যমে। যাতে ভবিষ্যতে আপনি বইটি হাতে নিলে খুব সহজেই আপনার জেমসগুলো পেয়ে যান।

ইতিহাসের গ্রন্থগুলো তিনটি স্টেইজে অধ্যয়ন করা যায়। যথা:
১। দ্রুত পঠন
– অর্থাৎ গল্পের মতো পুরো বইটি খুব দ্রুত শেষ করে ফেলা। এ্যানালাইসিস না করা। এই অধ্যয়ন আপনাকে পুরো বই নিয়ে একটি মাইন্ড ম্যাপ তৈরি করে দেবে।

২। ধীরে ধীরে পড়া – এ সময়ে যুক্তি, দলীল নিয়ে ভাবা; নিজেকে প্রশ্ন করা, কেন লেখক এই যুক্তি এবং দলীল দিলেন? জরুরী লাইনগুলো হাই লাইট করা। তবে খুব বেশী হাই লাইট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রত্যেক চ্যাপ্টার শেষে নিজেকে বিরতি দেয়া এবং পুরো চ্যাপ্টারের শিক্ষা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবা অথবা নোট করা।

৩। ফাইনাল টাচ
– আপনি যখন ১ম এবং ২য় স্টেজ সম্পন্ন করে আসবেন, তখন আপনার সামনে পুরো বইয়ের থিম উপস্থিত। আপনি জানেন প্রতিটি যুক্তির কারণ, ঘটনার গুরুত্ব এবং লেখকের ভুলগুলো। তো এখন আপনার কাজ হচ্ছে, আপনার নোট এবং দাগানো লাইনগুলো আরেকবার পড়া। নিজের লেখা নোট নিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করা- ‘আমি যা লিখলাম, কতটা সঠিক এবং কতটা গুরুত্ব বহন করে?’ এভাবে আপনার নোটের ঘষামাজা করুন। খুব ভাল হয় যদি এই স্টেইজে এসে বই থেকে আপনার অনুধাবিত প্রতিটি শিক্ষা নিয়ে ডায়েরি বা গুগল ডকে রিভিউ লিখতে পারেন। এই ৩টি স্টেইজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এবং ইতিহাস অধ্যয়নের আরও টিপস পেতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন http://wcaleb.org/blog/how-to-read

দ্রষ্টব্য: আপনি যদি বিনোদনের নিয়তে গল্পের মতো পড়তে চান, তাহলে ওপরের নিয়মগুলো অনুসরণের প্রয়োজন নেই।

সর্বশেষ কথা:
একটি বই অধ্যয়নের ক্ষেত্রে সময়ের দিকে নজর রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্লান করে অধ্যয়ন করা অনেক অনেক জরুরী। বাজারে, বা বুক রিভিউ গ্রুপে কোনো বই নিয়ে আলোড়ণ তৈরি হলেই সেটা কিনে না ফেলে বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে কিনুন। গাটের পয়সা খরচ করে একটি বই কেনার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই বইটি কেন কিনবো? এই মুহূর্তে আমার জন্য তা কতটা জরুরী?” মনে রাখবেন, বিক্ষিপ্ত অধ্যয়ন আপনার জ্ঞান মন সবকিছুকেই বিক্ষিপ্ত করে দেবে। পড়ার সময় দুর্বোধ্য বিষয়ের পেছনে বেশী সময় ব্যয় করবেন না। এখানে বেশী সময় অপচয় করার দ্বারা আপনি বিরক্ত হয়ে যাবেন। এছাড়া আপনার দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে। কিছু চ্যাপ্টার থাকবে যা আপনাকে খুব বেশী অনুপ্রাণিত করবে, সেই চ্যাপ্টারগুলো প্রয়োজনে একাধিকবার অধ্যয়ন করুন। সবশেষে- পড়াকে উপভোগ করতে শিখুন।

https://www.wafilife.com/techniques-of-reading/



বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯

নমুনা

Bootstrap Example

This part is inside a .container class.

The .container class provides a responsive fixed width container.

Resize the browser window to see that its width (max-width) will change at different breakpoints.

শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯

কবি ও কবিতা


☰ খুলন

এই পৃষ্ঠার কাজ চলিতেছে ?

বাংলার মুখ – জীবনানন্দ দাশ

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল – একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।

মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯

পৌারনীীত ও সুশাসন ২য় পত্র


অধ্যায় ১০ম:নাগরিক সমস্যা ও আমাদের করণীয় (শৃজনশীল প্রশ্ন)


উদ্ধৃতি: খনেপুর বাজারে সবজি ও ফলের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে তাদের পণ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের জন্য জরিমানা করে। ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে জেনে শুনে নগরিক সমস্যার সৃষ্টি করেছেন।

ক.এইডস্‌ এর পুর্ণরুপ কী
খ.বৈশ্বিক উষ্ঞায়ন বলতে কী বোঝায় ?
গ.উদ্দীপকে উল্লেখিত সবজি ও ফল বিক্রেতাদের কর্মকান্ড কোন সমস্যা নির্দেশ করে?
ঘ.বনির্ত সমস্যা নিরসনকল্পে তোমার সুপারিশ লেখ।

উত্তর:
ক) AIDS এর পূর্ণরুপ Acquired immune Deficiency Ssyndrome

খ) বিশ্বে উষ্ঞায়নের হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়াকে বৈশ্বিক উষ্ঞায়ন বলা হয়। বায়ুমন্ডলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গ্যস যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং মিথেনের এক ধরনের তাপ ধারণক্ষম প্রভাব রয়েছে। বায়ূমন্ডলে এ রকম নানা ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গিয়ে মাশূন্যে তাপ নির্গমনে বাধার সৃষ্টি করছে , যার ফলাফল হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ঞায়ন। যখন বায়ূমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যায় তখান স্বভাবিকভাবেই মহাশূন্যে তাপের বিকিরণ কমে য়ায় এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যা বৈশ্বিক উষ্ঞায়ন হিসেবে পরিচিত।

গ) উদ্দীপকে বর্নিত সমস্যাটিপ বাংলাদেশের খাদ্যে ভেজাল সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। সাধারণভাবে খাদ্যে ভেজাল বলতে খটি বা আসল পন্যের সাথে মিশ্রণ ঘটিয়ে বিক্রয় করাকে বোঝায়। এতে দ্রব্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধতা হারায় । বর্তমান যুগে খাদ্যে ভেজাল একটি মারাত্নক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়। খাদ্যদ্রব্যের সাথে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশ্রণ করে কিছু অসাধু ,লীতি বিবর্জিত ব্যবসায়ী ও বিক্রেতা জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে থাকে উদ্দীপকেও এ সমস্যার প্রতিফলন লক্ষণীয়।

উদ্দীপক খাদ্যে ভেজাল মিশ্রনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যে সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভেজাল খাদ্য। মাছ, মাংস, তরিতরকারি থেকে শুরুকরে তৈরী খাবার , ফলমূল এমনকি শিশু খাদ্যে পর্যন্ত ভেজালের ভয়াঙ্কর দৌরাত্ন্য সৃষ্টি হয়েছে । এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর সীমাহীন মুনাফা অর্জনের লোভে , নাগরিকদের অসচেতনতা এবং অইন প্রয়োগগে প্রশাসনের শিথিলতার কারণে দিন দিন এ সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের ফলে ব্যক্তি পর্যায়ে পুষ্টির অভাব থেকে ভোক্তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। উদ্দীপকেও এ সমস্যাটির কথা বলা হয়েছে।

ঘ) উদ্দীপকের আহনা খাদ্যে ভেজাল সমস্যাটির সম্মুখীন হয়েছে। আর এ সমস্যাটি প্রতিবোধ করতে হলে সরকার ,ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সকল পর্যায়ে বিভিনান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল প্রতিকার বা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে হবে:
১.খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী BSTI-, এর দ্বারা মানোর্ত্তিণ হরার সার্টিফিকেট অর্জন এবং তা প্রদর্শন করতে হবে।
২.BSTI-এর দ্বারা পরিক্ষীত নয় ,এমন উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী বাজারজাত করা হলে কঠিন শাস্তির বিধান এবং তা কার্যকর করতে হবে। ৩.হোটেল রেস্তোরাঁয় পচা-বাসি খাবার যেন পরিবেশন করা না হয় সেজন্য নজরদারি জোরদার করতে হবে।
৪.অসৎ ব্যবসায়ী , উৎপাদক , পরিবেশকদের বিরুদ্ধে কী শাস্তি প্রদান করা হলো , ভ্রাম্যমান আদালত কী করছে তা নিউজ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে।
৫.চাল- ঢাল- আটা-ময়দা ,ফলমূল প্রভৃতির আড়তগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৬.খাদ্যের ভেজালের বিরোদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়েতুলতে হবে।
৭.জনগণ যেন সহজেই ভেজাল খাদ্য চিনতে পারে সে পদ্ধতি প্রচার করতে হবে।

সর্বোপরি ,জনগণের সচেতনতা , সাবধানতা ,ব্যবসায়ীদের সততা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যাটি প্রতিরোধ করা সম্ভব ।