রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

অব্যয়ীভাব সমাস


প্রশ্ন: অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে ? ভিন্নার্থে অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণ দাও ।

সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস।

.

[উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।]

এ সমাসের পূর্বপদের অব্যয়টির সাধারণত কোনো অর্থ থাকে না। তবে এ সব অব্যয় শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থ দ্যোতনা (সৃষ্টি) করে। [প্র পরা প্রতি পরি সম উপ আ অনু উৎ নির,যথা,প্র,পর, ]

সামীপ্য (নিকট), বীপ্সা (পুন: পুন:), অনতিক্রম, অভাব, পর্যন্ত, যোগ্যতা, সাদৃশ্য, পশ্চাৎ, সাফল্য, অবধি প্রভৃতি নানাপ্রকার অর্থে অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণ দেয়া হল ।

(১) সামীপ্য: কুলের সমীপে =উপকূল; নগরীর সমীপে = উপনগরী; কাঠের সমীপে = উপকণ্ঠ; অক্ষির সমীপে = সমক্ষ; দুপুরের কাছাকাছি = দুপুর নাগাদ; সকালের কাছাকাছি = সকালনাগাদ।

(২) বীপ্সা (পুন: পুন: অর্থে)ঃ দিন দিন = প্রতিদিন; গৃহে গৃহে = প্রতিগৃহে; ক্ষণে ক্ষণে = অনুক্ষণ, প্রতিক্ষণ; মণে মণে = প্রতিমণ, মণপিছু; জনে জনে = জনপ্রতি, জনপিছু; জেলায় জেলায় = প্রতিজেলায়; বছর বছর = ফিবছর; রোজ রোজ= হররোজ; মাঠে মাঠে = মাঠকে-মাঠ, সনে সনে = ফি-সন. গাঁ-এ গাঁ-এ = গাঁকে-গাঁ।

(৩) অনতিক্রম ঃ বিধিকে অতিক্রম না করে = যথাবিধি ;উচিতকে অতিক্রম না করে = যথোচিত; এইরকম, যথাশক্তি, যথাসাধ্য, যথেচ্ছ, যথারীতি যথাযোগ্য, যথার্থ, সাধ্যমতো, যথাজ্ঞান, আয়মাফিক।

(৪) অভাবঃ বিঘ্নের অভাব = নির্বিঘ্ন; মানানের অভাব = বে-মানান; বন্দোবস্তের অভাব = বে-বন্দোবস্ত; ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ; ভাতের অভাব = হাভাত; মিলের অভাব = গরমিল; ঝঞ্ঝাটের অভাব = নির্ঝঞ্ঝাট; লুনের (লবনের) অভাব = আলুনি; টকের অভাব মিষ্টির অভাব = না-টক-না-মিষ্টি; ঘরের অভাব = হা-ঘর; হায়ার অভাব = বেহায়া; মক্ষিকার অভাব = নির্মক্ষিক।

(৫) সীমা ও ব্যাপ্তি (পর্যন্ত): জীবন পর্যন্ত = আজীবন; সমুদ্র পর্যন্ত = আসমুদ্র; বাল, বৃদ্ধ ও বণিতা পর্যন্ত = আবালবৃদ্ধবণিতা; মূল পর্যন্ত = আমূল; মরণ পর্যন্ত = আমরণ; পাদ (পা) থেকে মস্তক পর্যন্ত = আপাদমস্তক; আদি থেকে অস্ত পর্যন্ত = আদ্যন্ত; কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ; দিন ব্যাপিয়া = দিনভর; রাত ব্যাপিয়া = রাতভর; গলা পর্যন্ত = গলানাগাল। এইরকম-আশৈশব, আসমুদ্রহিমাচল।

(৬) যোগ্যতাঃ রুপের যোগ্য = অনুরুপ; কুলের যোগ্য = অনুকূল; গুণের যোগ্য = অনুগুণ।

(৭) পশ্চাৎ : গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন; তাপের পশ্চাৎ = অনুতাপ; করণের পশ্চাৎ = অনুকরণ; ইন্দ্রের পশ্চাৎ = উপেন্দ্র; গৃহের পশ্চাৎ = অনুগৃহ।

(৮) সাদৃশ্য : দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ; কথার সদৃশ= উপকথা; ভাষার সদৃশ = উপভাষা; মুর্তির সদৃশ = প্রতিমুর্তি, বনের সদৃশ = উপবন; কিন্তু (হীন দেবতা = উপদেবতা); মন্ত্রীর সদৃশ = উপমন্ত্রী; রাষ্ট্রপতির সদৃশ = উপরাষ্ট্রপতি; দানের সদৃশ = অনুদান; ধ্বনির সদৃশ = প্রতিধ্বনি; লক্ষের সদৃশ = উপলক্ষ।

(৯) ক্ষুদ্রতাঃ উপ (ক্ষুদ্র) গ্রহ = উপগ্রহ; ক্ষুদ্র বিভাগ = উপবিভাগ, ক্ষুদ্র অঙ্গ = প্রত্যঙ্গ; ক্ষুদ্র শাখা = প্রশাখা; ক্ষুদ্র সাগর = উপসাগর; ক্ষুদ্র জাতি = উপজাতি; ক্ষুদ্র নদী = উপনদী।

(১০) সাকল্যঃ বাল বৃদ্ধ ও বণিতা সকলে = আবালবৃদ্ধবণিতা; পামর জনসাধারণ সকলে = আপামর জনসাধারণ।

(১১) বৈপরীত্য : কূলের বিপরীত = প্রতিকূল; দানের বিপরীত = প্রতিদান; শোধের বিপরীত = প্রতিশোধ; পক্ষের বিপরীত = প্রতিপক্ষ।

(১২) সম্মুখ : অক্ষির সম্মুখে = প্রত্যক্ষ।

(১৩) নিপাতনে সিদ্ধ : অক্ষির অগোচর = পরোক্ষ; আত্নাকে অধিকার করে = অধ্যাত্ম; মুখের অভিমুখে = সম্মুখ; দৈবকে অধিকার করে = অধিদৈব; দুঃ (দু:খকে) গত = দুর্গত; দক্ষিণকে প্রগত = প্রদক্ষিণ; বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল; বাস্ত্ত থেকে উৎখাত = উদ্বাস্ত্ত; শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল; হীন দেবতা = অপদেবতা; ঝুড়িকে বাদ না দিয়ে = ঝুড়িসুদ্ধ; দস্ত্তর অনুযায়ী = দস্ত্তর মতো; প্রত্যাশার আধিক্য = হাপিত্যেশ; কাজ চালাবার মতো = কাজচালাগোছ।

অব্যয়ীভাব সমাসের উদাহরণ:↴

প্রদত্তশব্দ ব্যাসবাক্য প্রদত্তশব্দ ব্যাসবাক্য
আকর্ণ = কর্ণ পর্যন্ত আমৃত্যু = মৃত্যু পর্যন্ত
আমরণ= মরণ পর্যন্ত উপগ্রহ = গ্রহের সদৃশ/ক্ষুদ্র
উপকূল = কূলের সমীপে প্রতিজন = জনে জনে
প্রতিবার = বার বার প্রতিক্ষণ = ক্ষণে ক্ষণে
প্রতিকূল = কূলের বিপরীত প্রতিবাদ = বাদের বিপরীত
প্রতিকৃতি = কৃতির সদৃশ প্রতিধ্বনি = ধ্বনির সদৃশ
প্রতিচ্ছবি = ছবির সদৃশ যথারীতি = রীতি অতিক্রম না করে
প্রদত্তশব্দ=ব্যাসবাক্য প্রদত্তশব্দ=ব্যাসবাক্য
যথাশক্তি = শক্তিকে অতিক্রম না করে যথানিয়ম = নিয়মকে অতিক্রম না করে
আনত = ঈষৎ নত উপাধ্যক্ষ = অধ্যক্ষের সদৃশ্য
যথাসময়ে = নির্দিষ্ট সময়ে অধ্যাত্ম = আত্মাকে অধিকার করে
আপদমস্তক = পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ = ভিক্ষার অভাব
অনুসরণ = সরণের পশ্চাৎ আজানু = জানু পর্যন্ত
আপদমস্তক = পা থেকে মাথা পর্যন্ত আজন্ম = জন্ম পর্যন্ত
আরক্তিম = ঈষৎ রক্তিম উপভাষা = ভাষার সদৃশ/ক্ষুদ্র
উপজাতি = জাতির সদৃশ/ ক্ষুদ্র উপসাগর = সাগরের সদৃশ/ ক্ষুদ্র
আপদমস্তক = পা থেকে মাথা পর্যন্ত আজন্ম = জন্ম পর্যন্ত
আরক্তিম = ঈষৎ রক্তিম উপভাষা = ভাষার সদৃশ/ক্ষুদ্র
উপবৃত্তি = বৃত্তির সদৃশ উপপত্নী = পত্নীর সদৃশ
উপবন = বনের সদৃশ/ক্ষুদ্র উপশহর = শহরের সমীপে/
প্রতিদিন = দিন দিন প্রতিমন = মন মন
প্রতিমুহূর্ত = মুহূর্ত মুহূর্ত প্রতিদান = দানের বিপরীত
প্রত্যুত্তর = উত্তরের বিপরীত প্রতিচ্ছায়া = ছায়ার সদৃশ
প্রতিমূর্তি = মূর্তির সদৃশ প্রতিবিম্ব = বিম্বের সদৃশ
যথাবিধি = বিধি অতিক্রম না করে প্রতিবিম্ব = বিম্বের সদৃশ
যথাসাধ্য = সাধ্যকে অতিক্রম না করে যথার্থে = নির্দিষ্ট অর্থে
অতিদীর্ঘ = দীর্ঘ কে অতিক্রান্ অতিপ্রাকৃত = প্রাকৃতকে অতিক্রান্ত
অপবাদ = অপকৃষ্ট বাদ অপকীর্তি = অপকৃষ্ট কীর্তি
দুর্গন্ধ = মন্দ গন্ধ দুর্দিন = মন্দ দিন
দুর্বাক্য = মন্দ বাক্য দুরতিক্রম্য = দুঃখ-কষ্টে অতিক্রম্য
পরিজন =পরিগত/আপন জন বিতৃষ্ণা = বিগত তৃষ্ণা
বিমিশ্র = বিশেষ ভাবে মিশ্র হররোজ = রোজ রোজ
ঘোলাটে = ঈষৎ ঘোলা ফিকানীল = ঈষৎ নীল
হা-ঘর = ঘরের অভাব বেহায়া = হায়ার অভাব
নিরামিষ = আমিষের অভাব অতিমানব = মানবকে অতিক্রান্ত
অতীন্দ্রিয় = ইন্দ্রিয়কে অতিক্রান্ত অতিপ্রিয় = অত্যধিক প্রিয়
দুর্জন = মন্দ জন দুর্বুদ্ধি = মন্দ বুদ্ধি
দুর্নীতি = মন্দ নীতি বিনম্র = বিশেষভাবে নম্র
বিপথ = নিকৃষ্ট পথ ফি বছর = বছর বছর
গরমিল = মিলের অভাব লম্বাটে = ঈষৎ লম্বা
ফিকালাল = ঈষৎ লাল অনুতাপ = তাপের পশ্চাৎ
অনুতাপ = তাপের পশ্চাৎ হা-ভাত = ভাতের অভাব


note: যে শব্দে অব্যয় যুক্ত হয়ে সমাস নিষ্পন্ন হয় ,তাই অব্যয়ীভাব। অর্থাৎ সমস্ত পদে অব্যয় / উপসর্গ যুক্ত থাকলে তা অব্যয়ীভাব সমাস । সেজন্য অব্যয় ও উপসর্গ সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে ।

<<. ক্লিক>>