শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮

সমাস


প্রশ্ন: সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য লেখ

সমাস
১. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততধিক পদের এক পদে মিলনের নাম সমাস।
২. পদ ও পদের মিলনে সমাস হয়।
৩. সমাস ছয় প্রকার, যথা : (ক) দ্বন্দ্ব, (খ) দ্বিগু, (গ) কর্মধারয়, (ঘ) তত্পুরুষ, (ঙ) অব্যয়ীভাব ও (চ) বহুব্রীহি
৪. সমাস বাক্যকে সংক্ষেপ করে
৫. যেসব পদে সমাস হয় তাদের বিভক্তি সাধারণত লোপ পায়। কেবল অলুক দ্বন্দ্বে বিভক্তি লোপ পায় না।
৬. সমাস লক্ষ রাখে অর্থের দিকে।
৭. সন্ধিতে দুই বর্ণের মাঝে যোগ চিহ্ন (+) ব্যবহার করা হয়। ৮. সপ্ত (সাত) অহের (দিনের) সমাহার=সপ্তাহ
৮. আর সমাস অনেক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।
সন্ধি
১. পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির একত্র মিলনকে সন্ধি বলা হয়।
২. দুটি ধ্বনি বা বর্ণের মিলনে হয় সন্ধি।
৩. বাংলা ভাষায় সন্ধি উত্সগত দিক দিয়ে দুই প্রকারের, যথা : তত্সম শব্দের সন্ধি ও বাংলা শব্দের সন্ধি। বাংলা শব্দের সন্ধি গঠনগত দিক দিয়ে দুই প্রকার, যথা : (ক) স্বও সন্ধি ও (খ) ব্যঞ্জন সন্ধি। আর তত্সম শব্দের সন্ধি গঠনগত দিক দিয়ে তিন প্রকার, যথা : (ক) স্বর সন্ধি, (খ) ব্যঞ্জন সন্ধি ও (গ) বিসর্গ সন্ধি।
৪. সন্ধিতে বিভক্তি লুপ্ত হয় না । যেমন, হিম + আলয় = হিমালয়, এখানে ‘আ‘ বিভক্তি লুপ্ত হয়নি।
৫. সন্ধি অল্প সংখ্যক নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।

প্রশ্ন সমাস বলতে কী বোঝো? সমাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা উদাহরণসহ লেখো।

# সমাস = সম+আস। সমাস অর্থাৎ সহাবস্থান। পরস্পর অর্থ সংগতিবিশিষ্ট দুই বা বহুপদ মিলে একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। অর্থাৎ সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ। ভাষাকে সংক্ষেপ করাই এর কাজ। সমাসে অর্থের দিক থেকে মিল থাকতে হয়। যেমন, ধানের খেত কথাটিতে অর্থের দিক থেকে পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধ রয়েছে এবং এখানে দুটি পদ। ধানের ও খেত মিলে একপদ ধানখেত হয়েছে। ‘জন্মদিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উৎসব’ কথাগুলোকে সমাস করলে হয় ‘জন্মোৎসব’ পদ। এখানে অনেক পদ মিলে এক পদ হয়েছে। সমাস অর্থ মিলন বা একাধিক পদের একপদীকরণ। পদগুলো একসঙ্গে একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করবে। অনেক সময় পদগুলো মিলে একটি পদ হলেও মূল পদের অর্থই প্রকাশ করে। দুই বা বহুপদ মিলে একপদে পরিণত হলেও অর্থের কোনো তারতম্য হবে না।

সমাস গঠনের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। যেমন: সমস্যমান পদ, সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ, ব্যাসবাক্য, পূর্বপদ ও পরপদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিলে সমাস নির্ণয় খুবই সহজ হবে। যে কটি পদ মিলে সমাস হয় সেগুলোকে সমস্যমান পদ বলে। যেমন: ধানের খেত=ধানখেত। ধানের খেত সমস্যমান পদ। আবার ‘ধানখেত’ সমস্ত পদ। সমস্যমান পদের প্রথমটিকে পূর্বপদ ও শেষের পদকে পরপদ বলা হয়। যেমন নীল যে পদ্ম=নীলপদ্ম। নীল পূর্বপদ ও পদ্ম পরপদ। সমাস বিশ্লেষণ করার জন্য যে পদ, বাক্য বা বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়, তাকে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বলে। যেমন: হাতেখড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি। ‘দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে’ এই বাক্যাংশ হলো ব্যাসবাক্য।

সমাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা: বাংলা শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে সমাসের বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সমাসের সাহায্যে বক্তব্যকে সংক্ষেপ করা হয়। সমাসে একাধিক পদের সমন্বয়ে অর্থবোধক একটি নতুন পদ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে ভাষার প্রকাশরীতি একদিকে যেমন সুন্দর ও সহজ হয়, অন্যদিকে একটি মাত্র শব্দের ব্যবহার যথার্থ মনোভাবের প্রকাশ ঘটে। যেমন ‘রেলের ওপর দিয়ে চলে যে গাড়ি, সেই গাড়িতে ভ্রমণ আরামদায়ক।’ এ কথা যদি আমরা বলি ‘রেলগাড়িতে ভ্রমণ আরামদায়ক’ তাহলে বাক্যটি একদিকে যেমন সংক্ষিপ্ত হলো, আবার অন্যদিকে শ্রুতিমধুরও হয়। তাই বলা যায়, বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ সংক্ষেপে সুন্দর উপস্থাপনে মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সমাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রচনায় অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা একটা বিশেষ গুণ। এ গুণের একটা বড় অংশ শেখা যায় কেবল সমাসের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। ‘চর ও অচর’ না বলে যদি সমাসবদ্ধ শব্দ ‘চরাচর’ বললে সুন্দর শোনায়। সুতরাং বলা যায়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভাব প্রকাশের সংক্ষিপ্ততা, শ্রুতিমাধুর্য, সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও অলংকরণ—এসবের জন্য সমাসের ভূমিকা তুলনাহীন।

প্রশ্ন: সমাস কাকে বলে? সমাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমাসের সংজ্ঞা: পরস্পর অর্থসংগতি বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।

প্রয়োজনীয়তা: সমাসের বহুবিধ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিচে পর্যায়ক্রমে তা দেওয়া হলো:
ভাষা সংক্ষিপ্তকরণ: সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপকরণ। অর্থাত্ সমাস বাক্যের সংক্ষেপ সাধন করে। যেমন ‘যাদের অন্ন নেই, তারাই দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়’—এ বৃহত্ বাক্যটিকে সমাসসাধিত পদ ব্যবহার করে আমরা বলতে পারি, নিরন্নরা প্রতিদ্বারে ঘুরে বেড়ায়। অনুরূপ— ‘মাস্টার সাহেবের ঘরে আশ্রিত জামাই বাষ্প দ্বারা চালিত যানে ঢাকা গেলেন’; না বলে সংক্ষিপ্তাকারে আমরা বলতে পারি, মাস্টার সাহেবের ঘরজামাই বাষ্পযানে ঢাকা গেলেন। নতুন শব্দ গঠন: সমাস নতুন শব্দ গঠনের একটি অভিনব পদ্ধতি। যেমন জায়া ও পতি দুটো শব্দের মিলনে সমাসসাধিত নতুন শব্দ দম্পতি। ভাষার শ্রুতিমধুরতা বৃদ্ধি: সমাস ভাষাকে শ্রুতিমধুর, প্রাঞ্জল ও ছন্দোময় করে তোলে। যেমন: ‘রাজা সিংহ চিহ্নিত আসনে বসে আছেন’ না বলে, ‘রাজা সিংহাসনে বসে আছেন’ বললে বাক্যটি সুন্দর শোনায়।
বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ গঠন: বহুব্রীহি সমাস নিষ্পন্ন পদ সর্বদা বিশেষণরূপে ব্যবহূত হয়। যেমন: ক) পীত অম্বর যাহার = পীতাম্বর (কৃষ্ণ) বিশেষণ।
খ) না অতি দীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ (বিশেষণ)।
গ) হাতে পরার ঘড়ি = হাতঘড়ি (বিশেষ্য)।
তুলনাকরণ: দুই পদের মধ্যে তুলনা বোঝাতেও সমাস ব্যবহূত হয়ে থাকে। যেমন: বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু।
প্রেম রূপ দরিয়া = প্রেমদরিয়া। সহচর শব্দ গঠন: সমাসের মাধ্যমে সহচর শব্দ গঠিত হয়। যেমন: সোনা ও রূপা = সোনারূপা।