উত্তর : সম্মানিত সভাপতি, বরেণ্য প্রধান অতিথি, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, সুধী অভিভাবকবৃন্দ এবং সমবেত ছাত্রছাত্রী ভাইবোনেরা- আস্সালামু আলাইকুম। আদর্শ ছাত্র বলতে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাতে একজন ছাত্রের মধ্যে মানুষের সামগ্রিক মহৎ গুণাবলিই প্রতিফলিত হয়। একজন আদর্শ ছাত্রের যে গুণাবলি দরকার সেগুলো হলো- সততা, আদর্শবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, উদ্যম, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ইত্যাদি। যেকোনো জাতির সেরা সম্পদ তরুণসমাজ তথা ছাত্রসমাজ। একটি জাতির সমৃদ্ধি, সম্মান আর মর্যাদার সঙ্গে আজকের ছাত্রসমাজের ভূমিকা সম্পৃক্ত। কারণ তারাই একসময় জাতির হাল ধরবে। তাদের কৃতকর্মের সফলতার ওপরই নির্ভর করবে জাতির ভবিষ্যৎ। বস্তুত একটি দেশ গঠনে যেকোনো দেশের ছাত্রসমাজ যুগোপযোগী ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বের যেকোনো দেশে ছাত্রসমাজ তাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকেই তাদের দেশ গঠনের কার্যক্রম নির্ধারণ করে। দেশের গঠনমূলক কাজে ছাত্ররাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজ, দেশ ও জাতির সমস্যাগুলো দূর করা গেলেই দেশের উন্নতি হবে। আর এই সমস্যাগুলো দূরীকরণে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দেশপ্রেম। ছাত্রসমাজ যদি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হতে পারে এবং তা দেশের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে, তাহলেই জাতির ঐক্য প্রতিষ্ঠা হবে। তখন সবাই মিলে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশের মূল সমস্যাগুলোর অন্যতম নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে ছাত্রসমাজের ভূমিকা সবচেয়ে কার্যকর। ছাত্ররা যদি ঘুষ-দুর্নীতিসহ সব ধরনের নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেরাও সততার অনুশীলন করে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হতে পারে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ। ছাত্রসমাজ যদি নিজেরাই আত্মকর্মসংস্থানের উপায় বের করতে পারে, তাহলে দেশে বেকারত্ব দূর হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এ দিনে বাঙলির অবিসংবাধিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসের সেরা ১০ ভাষণের মধ্যে অন্যতম ভাষণ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন রেসকোর্স ময়দানের বিশাল সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিরবঞ্চিত বাঙালিকে পাকিস্তানী শাসক-শোকদের বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার যে ডাক দিয়েছিলেন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে সামিল হয়েছিল মুক্তিরসংগ্রামে। সাড়ে সাত কোটি মানুষকে জাতীয় চেতনায় উদ্বেলিত ও ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের তিনি নিয়ে এসেছিলেন মুক্তিরবারতা। সে দিনের সে ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমেই বর্বর সামরিক শক্তির মুখোমুখি হয়ে নতুন বাংলাদেশকে আগামীর পথে অগ্রসর হওয়ার শক্তি যুগিয়েছিলেন। তাই এ ভাষণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসের ম্যাগনাকাটার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন; সেই ভাষণটি পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাষণ হিসাবে বিশ্বের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। সংগত কারণে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম ও ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য আরো বিশ্লেষেণের প্রয়োজন মনে করেই এ নিয়ে আজকের দিনে আমার এ আলোচনার সূত্রপাত। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে অনেক লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও গবেষক অনেক আলোচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন। তারপরও এ ভাষণটি আরো বেশি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমি বঙ্গবন্ধুকে যতটুকু পড়েছি এবং পড়ার মাধ্যমে জেনেছি, সে হিসেবে এ ঐতিহাসিক ভাষণটি নিয়ে আরও বিশ্লেষণের দরকার; তাহলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, নেতৃত্ব বিশেষত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আরও অধিক জানতে পারবে মানুষ। এখানে একটি কথা বলে রাখি, আমার মতো একজন নগন্য মানুষের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো মহীরূহের এমন একটি ঐতিহাসিক ভাষণের বিশ্লেষণ করতে যাওয়া শুধু সাহস নয় দুঃসাহসের কাজ। যদিও আমি “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ও জীবনধারা” নামক প্রায় সাত শত পৃষ্ঠার একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছি এবং সে বইটি ২০১৩ সালে অমর একুশের গ্রন্থমেলায় ‘জনতা পাবলিকেশনস’ থেকে প্রকাশিত এবং বিক্রির তালিকায় মোটামুটি ভাল অবস্থানে; তবু সবার প্রতি বিনয় মিনতি জানিয়ে বলছি এ আলোচনায় যাবতীয় ভূলত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি। যাক ভূমিকা না বাড়িয়ে আলোচনার গভীরে যাওয়া যাক-
জাতির জনক বঙ্গবন্থু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ট্রানিং পয়েন্ট। এই দিন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেসকোর্স ময়দানে পূর্ব নির্ধারিত জনসভায় যোগদানের জন্য দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ জলোচ্ছ্বাসের গর্জনে বাস, লঞ্চ, ষ্টিমার, নৌকা ও পায়ে হেটে বিপুল বিক্রমে রাজধানী ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। বাঁধভাঙা মানুষের স্রোতে দুপুর হ’তে না হ’তেই ভরে ওঠে রেসকোর্সের ময়দান। বাতাসে ওড়ছে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সূর্যের পতাকা। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন আর সাথে সাথে দুলে উঠছে বাঙালিদের সংগ্রামের প্রতীক লক্ষ লক্ষ বাঁশের লাঠি। মঞ্চ থেকে মাঝে মাঝেই শ্লোগান তুলছেন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ‘জয় বাংলা’। ‘আপোষ না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম।’ ‘আমার দেশ তোমার দেশ-বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ পরিষদ না রাজপথ-রাজপথ রাজপথ।’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলদেশ স্বাধীন কর।’ ‘ঘরে ঘরে দুর্ঘ গড়-বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’
জনসভার কাজ শুরু হ’তে তখনো অনেক সময় বাকি। কিন্তু রেসকোর্স বৃহত্তর পরিসর ময়দান পেরিয়ে জনস্রোত ক্রমেই বিস্তৃত হতে থাকে কয়েক বর্গমাইল এলাকা জুড়ে। এদিকে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার না করার প্রতিবাদে বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মচারীরা তাৎক্ষণিক ধর্মঘট শুরু করায় বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেতার কতৃপক্ষ রেসকোর্স থেকে সরাসরি সম্প্রচারের পূর্ব ঘোষণা দিয়ে পরে তা বাতিল করে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার করা হবে’এ ঘোষণার পর সারা বাংলার শ্রোতারা অধীর আগ্রহে রেডিও সেট নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা ২টা ১০ মিনিট থেকে ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা বেতারের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমার ভালোবাসি’ পরিবেশনের পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার মুহুর্তে আকস্মিকভাবেই ঢাকা বেতারে তৃতীয় অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার না করার প্রতিবাদে ঢাকা বেতারের কর্মীরা কাজ করতে অস্বীকার করলে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
মুহূর্মুহূ গর্জনে ফেটে পড়েছে জনসমুদ্রের উত্তাল কন্ঠ। স্লোগানের ঢেউ একের পর এক আছড়ে পড়ছে। লক্ষ কন্ঠে এক আওয়াজ। বাঁধ না মানা দামাল হাওয়ায় সওয়ার লক্ষ কন্ঠের বজ্র শপথ। হাওয়ায় পত পত করে উড়ছে বাংলার মানচিত্র অঙ্কিত সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের পতাকা। লক্ষ হস্তে শপথের বজ্রমুষ্ঠি উত্থিত হচ্ছে আকাশে। জাগ্রত বীর বাঙালির সার্বিক সংগ্রামের প্রত্যয়ের প্রতীক সাত কোটি মানুষের সংগ্রামী হাতিয়ারের প্রতীক বাঁশের লাঠি মুহর্মুহূ শ্লোাগানের সাথে সাথে উত্থিত হচ্ছে আকশের দিকে। এই হলো রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সভার দৃশ্য। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন ৩টা ২০ মিনিটে। কিন্তু ফাল্গুনের সূর্য ঠিক মাথার উপর ওঠার আগে থেকেই এই শ্লোগান চলছে। মঞ্চে মাইকে শ্লে¬াগান দিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। স্লোগান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আবদুর রাজ্জাক। লক্ষ কন্ঠে ফিরে আসছে স্লোগানের জওয়াব বজ্র হুঙ্কারে। স্লোগানের ফাঁকে ফাঁকে নেতৃবৃন্দ দিচ্ছেন টুকরো টুকরো বক্তৃতা। আর আকাশ-বাস কাঁপিয়ে ধ্বণিত হতে থাকে আগুনঝরা স্লোগান: বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়-বাংলাদেশ স্বাধীন কর, তোমার দেশ আমর দেশ-বাংলাদেশ বাংলাদেশ। শেখ মুজিবের পথ ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর। এরপরই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাইকের সামনে এসে দাঁড়ান। লক্ষ জনতার শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত তখন ঢাকার আকাশ-বাতাস। সে গগনবিদারী শ্লোগান চলা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন।
সে সময়ের আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের সংগ্রাম কোন্ রূপ গ্রহণ করবে, তা কি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হবে, নাকি বাঙালির মুক্তি আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, সে বিষয়টা নির্ভর করেছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিক-নির্দেশনার ওপর। তাই এ ভাষণ নিয়ে বাঙালি তথা আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে কৌতুহল ও ভাবনার শেষ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তাঁর ভাষণের প্রতিটি বাক্য কবিতার পঙক্তিতে ভারসাম্যের ওজনে সর্বস্তরের মানুষের ওপর বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছিল। সেই ভাষণের পর পরই ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার বস্নাডের লিখেছেন, “রোববার ৭ মার্চ প্রদত্ত মুজিবের ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন তার চেয়ে লক্ষণীয় হলো তিনি কি বলেন নি। কেউ কেউ আশঙ্কা করছিলেন, আবার কেউ কেউ আশা করেছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করবেন। এর বদলে বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান তিনি জানালেন।” আর্চার বস্নাড ঢাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মর্মার্থ ও তাৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ গিবেষক মফিদুল হক বলেছেন,‘৭ মার্চের ভাষণে প্রতিরোধ আন্দোলনের এই লোকায়ত রূপ মেলে ধরবার পাশাপাশি প্রত্যাঘাতের ডাক এমন এক লোকভাষায় ব্যক্ত করলেন বঙ্গবন্ধু যে তিনি উন্নীত হলেন অনন্য লোকনায়কের ভূমিকায়, যার তুলনীয় নেতৃত্ব জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের কাফেলায় বিশেষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার লোকঐতিহ্য ও জীবনধারার গভীর থেকে উঠে আসা ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃভূমিকায়। জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তিনি যে কতটা সার্থক হয়ে উঠেছিলেন তার পরিস্ফূটন ঘটেছিল সঙ্কটময় মার্চ মাসে তাঁর অবস্থান ও ভূমিকা এবং ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে। তিনি বক্তব্যে যেমন গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী, তেমনি আন্দোলনের স্বাদেশিক রীতির নব-রূপায়ন ও প্রসার ঘটালেন সার্বিক ও সক্রিয় অসহযোগের ডাক দিয়ে, যে অসহযোগে সামিল ছিল ব্যাপক জনতা এবং সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অসহযোগ আন্দোলন ও ৭ মার্চের ভাষণের আবেদন উপচে পড়েছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোতে সামরিক-আধাসামরিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল বাঙালি সদস্যের ওপর এবং এর প্রতিফল জাতি লাভ করলো মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকেই। বক্তৃতার রূপ হিসেবেও প্রচলিত রাজনৈতিক ভাষণের কাঠামো সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে বঙ্গবন্ধু এমন এক সৃজনশীলতার পরিচয় দিলেন যা দেশের মাটির গভীরে শেকড় জারিত করা ও গণ-সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া অনন্য নেতার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর উন্নীত হয়েছিল ওরাকলের পর্যায়ে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এবং এই অমোঘ বাণী দেশবাসীর অন্তরে যে অনুরণন তৈরি করেছিল সেই শক্তিতে অবিসংবাদিত জাতীয় নেতা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হয়েছিলেন তৃতীয় বিশ্বের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কাতারে সামিল আরেক অনন্য নেতায়।’
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতীয় মুক্তির গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে চির বঞ্চিত বাঙালির সংগ্রামের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে আখ্যায়ীত করে বলেছিলেন,‘ “আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাঁকে অনুরোধ করলাম ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না।” তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।’ “আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ, আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।” গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের প্রত্যয় ব্যক্ত করেই বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন সম্ভাব্য সশস্ত্র আঘাত মোকাবিলায় উপযুক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার। অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে এ ভাষণে। যার ফলে বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রাম স্নায়ুযুদ্ধ-পীড়িত বিশ্বে কোনো এক পক্ষের সংগ্রাম না হয়ে অর্জন করে সার্বজননীন সমর্থন পায়। ফলে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে ছিল সোচ্চার, আর এর প্রভাব পড়েছিল অনেক দেশের সরকারের ওপর।
তিনি বক্তৃতা শুরু করেছিলেন বাঙালিদের একান্ত ও নিজস্ব উচ্চারণ ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে। একেবারে আড়ম্বড়হীন, ও বাহুল্যতা ছাড়া লাখো জনতার সামনে এমন অন্তরঙ্গ, প্রায় ব্যক্তিগত সম্বোধন বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব ছিলো। ভাষণের শুরুতেই তিনি বাঙালি আবেগকে উসকে দিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, “আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।” …“আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।”…তিনি যেন বুকভরা ভালোবাসা ও বেদনা নিয়ে তিনি বলেছেন, “৭ জুনে আমাদের ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।” “আমার পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে আমার দেশের গরিব, দুঃখী, আর্ত মানুষের মধ্যে, তার বুকের উপর হচ্ছে গুলি।” “কার সাথে বসব, যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসব?” “গরীরেব যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে।” “আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়,” । মানুষকে হত্যার প্রসঙ্গ এবং সেই কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব ঘটনাকে চিহ্নিত করছেন আমার লোক, আমার মানুষকে হত্যা হিসেবে,এভাবে বারংবার তিনি উচ্চারণ করেছেন আমার মানুষ, আমার দেশের গরিব-দুঃখি, আমার লোক বলে যা মানুষের মনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আগেবে উদ্দীপ্ত হয়েছিল। তিনি তাঁর সেই ঔতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানের তেইশ বছরের নিপীড়নমূলক শাসন এবং তার বিরুদ্ধে জনসংগ্রামের ইতিহাসের নির্যাস একটি বাক্যে তুলে ধরতে ও ভূলে যাননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।”
এ প্রসংগে লেখক আহমদ ছফা বঙ্গবন্ধুকে বলতেন বাংলার ভীম, মধ্যযুগের বাংলার লোকায়ত যে নেতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীন রাজ্যপাট, নির্মাণ করেছিলেন মাটির দুর্গ, ভিতরগড়ে যে দুর্গ প্রাচীর এখনও দেখতে পাওয়া যায়, মাটির হলেও পাথরের মতো শক্ত। বাংলার ইতিহাসের এমন অনন্য নির্মাণ-কীর্তির তুলনীয় আর কিছু যদি আমাদের খুঁজতে হয়, তবে বলতে হবে ৭ মার্চের ভাষণের কথা। যেমন ছিল মধ্যযুগের বাংলার রাজা ভীমের গড়া পাথরের মতো শক্ত মাটির দুর্গ, তেমনি রয়েছে বিশ শতকের বাংলার লোকনেতা মুজিবের ভাষণ, যেন-বা মাটি দিয়ে গড়া, তবে পাথরের মতো শক্ত ’।
তিনি তাঁর ভাষণে বাঙালিকে একান্ত আপন তুমি সন্মোধণ করে বললেন, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ তাঁর এ উচ্চারণে প্রতিটি বাঙালির শিরায় শিরায় আবেগ ও উত্তেজনার ঢেউ খেলে যায়। আর বক্তৃতা শেষ করলেন বাঙালির সংগ্রামের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,_এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ প্রাজ্ঞ ও কৌশলী ভাষণ তাই পৃথিবীর অনেক রাষ্টবিজ্ঞানী আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গে প্রদত্ত ভাষণের চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে তুলনা করে বলেছেন, আব্রাহাম লিংকনের প্রদত্ত ভাষণটি ছিল পূর্বপরিকল্পি ও লিখিত ভাষণ, প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি ছিল তাৎক্ষণিক এবং অলিখিত। সে হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি আব্রাহাম লিংকনের ভাষণটিকেও ছাপিয়ে গেছে। তাই এই ভাষণটি যুগোত্তীর্ণ। যুগে যুগে এ ভাষণ নিপীড়ত, লাঞ্ছিত স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রেরণা ও উদ্দীপনা হিসাবে কাজ করবে। এই কারণেই বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ভাষণটি সারা বিশ্বের সমসাময়িক রাজনৈতিক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব রাজনীতির ছাত্র ও রাজনৈতিক গবেষকদের দ্বারা প্রশংসিত।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ক্ষমতাবান সরকারসমূহ ও বিশ্ব-সমপ্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। সকল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিরা ঢাকায় উপস্থিত থেকে ভাষণের বিবরণ প্রদান করেছেন। ‘নিউজউইক’ সাময়িকীর বিখ্যাত রিপোর্ট, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘পোয়েট অব পলিটিকস্’ হিসেবে, সে-কথা আমরা জানি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের কাছেই নয়; বিশ্ব নেত্রীবৃন্দ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও এ ভাষণকে একটি যুগান্তকারী দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই ধরণের কিছু বক্তব্য ও বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে মনে করছি। প্রথমেই উদ্ধৃত করছি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মতামত ও বিশ্লেষণ। ১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বলেছেন,‘শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ঠ নয়, প্রয়োজন মানুষের মুক্তি। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার সমার্থ। আর এ সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের ভাষণে।’ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন,‘তিনি ছিলেন মানব জাতির পদ প্রদর্শক।…তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয় সমস্ত পৃথিবীও স্বীকার করবে।’ পশ্চিম বঙ্গের প্রয়াত সিপিএম নেতা ও সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছেন,‘৭ মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা। অন্যদিকে আছে স্বাধীনতার পরবর্তী কর্ম পরিকল্পনা।’ কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছেন,‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’ মার্শাল টিটো বলেছেন,‘৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এই ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব প্রমাণ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানীদের কোন রকম বৈধতা নেই। পূর্ব পাকিস্তান আসলে বাংলাদেশ।’ দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন,‘৭ মার্চের ভাষণ আসলে স্বাধীনতার মূল দলিল।’ গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেছেন,‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’
একই সাথে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চেও ভাষণের অনেক বিশ্লেষণ হয়েছে। নিউজ উইক,‘পত্রিকার নিবন্ধ দ্যা পয়েট অব পলিটিক্সে বলা হয়েছে,‘৭ মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয় একটি অনন্য কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি ‘রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান।’ ১৯৯৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে,‘শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষরেণর মাধ্যমেই আসলে বাংলাদেশর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ঐ ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের কৌশলও ছিল।’ বিবিসি-১৯৭১ ‘পৃথিবীর ইতিহাসে জন আব্রাহাম লিংকনের গেটিস বার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলনীয় এই ভাষণটি। যেখানে তিনি একাধারে বিপ্ল¬বী ও রাষ্ট্রনায়ক।’ থমসন রয়টার্স ১৯৭১-বিশ্বের ইতিহাসে এ রকম আর একটি পরিকল্পিত এবং বিন্যস্ত ভাষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একই সংগে বিপ্ল¬বের রূপরেখা দেয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনা ও দেয়া হয়েছে।’ একই সালে এএফপি বলেছে,‘ ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে শেখ মুজিব আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বাঙালিদের যুদ্ধের নির্দেশনাও দিয়ে যান। ঐ দিনই আসলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।’ ১৯৭১ সালে দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের এক ভাষ্যে বলা হয়,‘শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক ঘোষণা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে ঐ ভাষণেরই আলোকে।’ ‘১৯৭২ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার এক নিবন্ধে বলা হয়,‘উত্তাল জনস্রোতের মাঝে, এ রকম একটি ভারসাম্যপূর্ণ, দিকনির্দেশনামূলক ভাষণই শেখ মুজিবকে অনন্য এক ভাবমূর্তি দিয়েছে। দিয়েছে অনন্য মহান নেতার মর্যাদা।’ আর বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ তার কবিতায় বলেছেন,‘কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠবাণী? গণসূর্যে মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর- কবিতাখানী।’
আজকালের পাঠকরা সংক্ষিপ্ত পড়তে চায়। সেই কারণে লেখার পরিধি আর না বাড়িয়ে এই বলেই শেষ করবো আগামী দিনের ঐতিহাসিকরা যখন ইতিহাস লিখবেন সেই ইতিহাসে আপন গৌরব ও মহিমায় মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার অনন্য ভাষণ। পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে।