কবিতা
খাঁদু দাদু
..........কাজী নজরুর ইসলাম
ও মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক ড্যাঙ্গা-ড্যাং- ড্যাং!
ওঁর নাকতাকে কে করল খ্যাঁদ্যা রাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে- ছা ব'সে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে।
বুড়ো গরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং।
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছ্যাঁদা দিয়ে টুকি কে দেয় 'টু'!
ছোড়দি বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক! থুঃ!
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
দাদু বুঝি চিনাম্যান মা, নাম বুঝি চাং চু,
তাই বুঝি ওঁর মুখটা অমন চ্যাপটা সুধাংশু।
জাপান দেশের নোটীশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়- নাক
ঘুম দিলে ঐ চ্যাপটা নাকেই বাজতো সাতটা শাঁখ।
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাবড়া করেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চলতে বেঁজির ছা
দাড়ির জালে প'ড়ে দাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি- বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙাতে 'আলমানাক'
গজাল ঠুঁকে দেছেন ভেঙ্গে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক করেছেন 'ট্যান'!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চল দাদু দেখন -হাসিকে!
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙ্গাডেং ড্যাং।
তোমারে পড়িছে মনে - প্রেমের কবিতা, বিরহের কবিতা
- কাজী নজরুল ইসলাম
তোমারে পড়িছে মনে
তোমারে পড়িছে মনে
আজি নীপ-বালিকার ভীরু-শিহরণে,
যুথিকার অশ্রুসিক্ত ছলছল মুখে
কেতকী-বধূর অবগুন্ঠিত ও বুকে-
তোমারে পড়িছে মনে।
হয়তো তেমনি আজি দূর বাতায়নে
ঝিলিমিলি-তলে
ম্লান লুলিত অঞ্ছলে
চাহিয়া বসিয়া আছ একা,
বারে বারে মুছে যায় আঁখি-জল-লেখা।
বারে বারে নিভে যায় শিয়রেরে বাতি,
তুমি জাগ, জাগে সাথে বরষার রাতি।
সিক্ত-পক্ষ পাখী
তোমার চাঁপার ডালে বসিয়া একাকী
হয়ত তেমনি করি, ডাকিছ সাথীরে,
তুমি চাহি' আছ শুধু দূর শৈল-শিরে ।।
তোমার আঁখির ঘন নীলাঞ্জন ছায়া
গগনে গগনে আজ ধরিয়াছে কায়া । ...
আজি হেথা রচি' নব নীপ-মালা--
স্মরণ পারের প্রিয়া, একান্তে নিরালা
অকারণে !-জানি আমি জানি
তোমারে পাব না আমি। এই গান এই মালাখানি
রহিবে তাদেরি কন্ঠে- যাহাদেরে কভু
চাহি নাই, কুসুমে কাঁটার মত জড়ায়ে রহিল যারা তবু।
বহে আজি দিশাহারা শ্রাবণের অশান্ত পবন,
তারি মত ছুটে ফেরে দিকে দিকে উচাটন মন,
খুঁজে যায় মোর গীত-সুর
কোথা কোন্ বাতায়নে বসি' তুমি বিরহ-বিধুর।
তোমার গগনে নেভে বারে বারে বিজলীর দীপ,
আমার অঙ্গনে হেথা বিকশিয়া ঝরে যায় নীপ।
তোমার গগনে ঝরে ধারা অবিরল,
আমার নয়নে হেথা জল নাই, বুকে ব্যথা করে টলমল।
আমার বেদনা আজি রূপ ধরি' শত গীত-সুরে
নিখিল বিরহী-কন্ঠে--বিরহিণী--তব তরে ঝুরে!
এ-পারে ও-পারে মোরা, নাই নাই কূল!
তুমি দাও আঁখি-জল, আমি দেই ফুল!
কাজী নজরুল ইসলাম
কাব্যগ্রন্থ - চক্রবাক
.