শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দরখাস্ত


Flowers in Chania সাধারণ দরখাস্ত লেখার নিয়ম-



তারিখ: ---------------
বরাবর
অধ্যাক্ষ,
(প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা দিবেন )

বিষয়: অনুপস্থিতি থাকায় আবেদনপত্র।
জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমি গত ইং -------- তারিখ হতে এপেন্ডিসাইটিস রোগে আকান্ত হই । শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলেজে উপস্থিতি দেওয়া সম্ভব হয় নি।

অতএব, আমার আকুল আবেদন, আমার শারিরীক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত দিন গুলোর ছুটি মঞ্জুর করতে আপনার সদয় মর্জি হয়।

বিনীত নিবেদক
আপনার অনুগত
নাম =
শ্রেণী =
রোল =












মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মহাজাগতিক কিউরেটর ১

মহাজাগতিক

Girl in a jacket
×

মহাজাগতিক কিউরেটর
Flowers in Chania লেখক পরিচিতি:

মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৩এ ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ, জননী আয়েশা আখতার খাতুন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলায়। তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয় বগুড়ায়। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়পক পদে নিযুক্ত হন।

. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা ভাষায় রচিত সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির একচ্ছত্র সম্রাট। ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’ রচনার মাধ্যমে এ-ধারার সাহিত্য তাঁর প্রথম আবির্ভাব। বিজ্ঞানকে উপলক্ষ্য করে কল্পনার বিস্তারে অসামান্যতা তাঁর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও স্বপ্নচারী রোমান্টিক। তাঁর সাহিত্যে ও বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠা ও মানবীয় কল্পনার সম্মিলন ঘটেছে। মাতৃভূমি, মানুষ ও ধরিত্রীর প্রতি নৈতিকতা দায়বদ্ধতা তাঁর সাহিত্যিক মানসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের বিজ্ঞানমুখী তরুণ-প্রজন্মের তিনি আইডল বা আদর্শ। কিশোর উপন্যাস এবং ছোটগল্প রচনাতেও তিনি দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এবং ‘আমি তপু’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। ‘মহাকাশে মহাত্রাস’, ‘টুকুনজিল’, ‘নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’, ‘একজন আতিমানবী’, ‘ফোবিয়ানের যাত্রী’সহ অনেক পাঠকপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির তিনি সৃষ্টা। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান লেখক হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

পাঠ-পরিচিতি

============

‘জলজ’ গ্রন্থের অন্তর্গত “মহাজাগতিক কিউরেটর” গল্পটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’ তৃতীয় খণ্ড (২০০২) থেকে গৃহীত হয়েছে। “মহাজাগতিক কিউরেটর” বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলেও এতে দেশকালের প্রভাবপুষ্ট মানবকল্যাণকর্মী লেখকের জীবনদৃষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে। অনন্ত মহাজগৎ থেকে আগত মহাজাগতিক কাউন্সিলের দুজন কিউরেটর এর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর নমুনা সংগ্রহে সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীতে আগমনের তথ্য দিয়ে গল্পটির সূচনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দুজন কিউরেটরের সংলাপ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গল্পটি নাট্যগুণ লাভ করেছে। প্রজাতির যাচাই-বাছাই কালে পৃথিবীর নানা প্রাণীর গুণাগুণ কিউরেটরদের সংলাপে উঠে আসে। ‘মানুষ’ নামক প্রজাতি বিবেচনার ক্ষেত্রে কিউরেটর দুজনের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা মূলত কল্পকাহিনীর লেখকেরও মনের কথা। দুজন কিউরেটর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে মানুষের কারণেই হ্রাস ঘটে যাচ্ছে ওজোন স্তরের। মানুষই নির্বিচারে গাছ কেটে ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মানুষই নিউক্লিয়ার বোঝা ফেলছে একে অন্যের ওপর। এক পরিস্থিতিতেও তারা পৃথিবীর বুদ্ধিমান বলে কথিত। ‘মানুষ’ প্রজাতির নির্বুদ্ধিতায় তারা শঙ্কিত হয়। অবশেষে তারা পরিশ্রমী সুশৃঙ্খল সামাজিক প্রাণী পিঁপড়াকেই শনাক্ত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসেবে। ডাইনোসরের যুগ থেকে এখনো বেঁচে থাকা সুবিবেচক ও পরোপকারী পিঁপড়াকে তারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বিবেচনায় সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কল্পকাহিনির রসের সঙ্গে সমাজ, পরিবেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন লেখকের তীব্র শ্লেষ ও পরিহাসের মিশ্রণ গল্পটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।

×


বহুর্নিবাচনী প্রশ্ন:
১.পিঁপড়ারা কোন ধরনের প্রাণী ?
ক) পরিশ্রমী শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক প্রাণী
খ) মানবিকতাসম্পন্ন প্রাণী
গ) সুসভ্য প্রাণী
ঘ. বস্তুবাদী ইহজাগতিক প্রাণী
উত্তর: ক) পরিশ্রমী শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক প্রাণী

২.কোথাও কোথাও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।- কারা ?
ক) মানুষ
খ ০মৌমাছি
গ)পিঁপড়া
ঘ)নীলতিমি
উত্তর: ক) মানুষ

৩. নিচের কোন প্রাণীটির গঠনে বৈচিত্র্য নেই বলেই কিউরেটররা মনে করে ? ক ভাইরাস খ)মানুষ গ)পিঁপড়া ঘ) সাপ উত্তর: ক ভাইরাস

৪. মহজাগতি কিউরেটর গল্পে কোন প্রাণীটি তাদরে নজিস্বতা হারিয়েছে?
ক কুকুর
খ সরীসৃপ বা সাপ
গ হরিণ
ঘ মানুষ
উত্তর: ক কুকুর

৫. পরজীবী বলতে বোঝায়-
ক অন্য জীবের ভেতরে ও বাহিরে থাকে
খ অপরের জীব
গ অন্য জীবের বাহিরে থাকে
ঘ অন্য জীবের ভেতরে থাকে
উত্তর: ক অন্য জীবের ভেতরে ও বাহিরে থাকে

৬. পৃথিবীতে রয়েছে-
ক. এককোষী থেকে লক্ষ-কোটি কোষী প্রাণী
খ. এককোষী থেকে বহুকোষী প্রাণী
গ. অতিকায় বিরাট প্রাণী
ঘ. ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রাণী
উত্তর: ক. এককোষী থেকে লক্ষ-কোটি কোষী প্রাণী

৭. সঠিক বানান কোনটি ?
ক) পিপীলিকা
খ) পিপিলিকা
গ) পিপীলীকা
ঘ) পিপিলীকা
উত্তর: ক পিপীলিকা

৮. মহাজাগতিক কিউরেটর গল্পে কোনটিকে অত্যন্ত সুবিবেচক বলা হয়েছে ?
ক) মানুষ
খ) পিঁপড়া
গ)ডাইনোসর
ঘ) কুকুর
উত্তর: খ পিঁপড়া

৯. বিপদে দিশেহারা হয়না। অন্যকে বাঁচানোর জন্য অকাতারে প্রাণ দেয়। এই বৈশিষ্ট্য গুলো পৃথিবীতে কাদের বৈশিষ্টের সাথে তুলনীয়?

ক) পিঁপড়ার
খ)মানুষের
গ)গাধার
ঘ) কুকুরের
উত্তর: ক পিপঁড়ার

১০. ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাঝে মৌলিক পার্থক্য না থাকার কারণ-
ক) গঠনপ্রক্রিয়া একই
খ) চেতনা একই
গ) বোধশক্তি একই
ঘ) ক্রিয়াকর্ম একই
উত্তর: ক গঠন প্রক্রিয়া

১১। দু’জন কিউরেটরের সংলাপের মধ্য দিয়ে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পটি কী লাভ করেছে?
(ক) নাট্যগুণ (খ) হাস্যরস
(গ) কৌতুক রস (ঘ) ট্র্যাজেডি
উত্তর :নাট্যগুন

১২। পিঁপড়াকে কিউরেটররা কেন নির্বাচন করল?
(ক) ছোট বলে
(খ) কম খায় বলে
(গ) সুশৃঙ্খল বলে
(ঘ) প্রাচীনতম বলে
উত্তর : সুশৃঙ্খল বলে

১৩। কিউরেটরদ্বয় খুঁজছিল সেই সব প্রাণী যারাÑ
(র) সভ্য (রর) সমাজবদ্ধ
(ররর) আত্মত্যাগী
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
উত্তর : ঘ)

১৪। বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে কোন গ্যাসের স্তর থাকে?
(ক) হিলিয়াম (খ) ওজন
(গ) অক্সিজেন (ঘ) নাইট্রোজেন
উত্তর: ওজন স্তর

১৫। ‘গ্যালাক্সি’ শব্দের অর্থ কী?
(ক) ধূমকেতু (খ) মহাকাশ
(গ) নক্ষত্র (ঘ) ছায়াপথ
উত্তর : ঘ) ছায়াপথ










রচনা আদিবাসী নৃগোষ্ঠী

Flowers in Chania

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী



(সংকেত: আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী; বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পরিসংখ্যান; চাকমা; মারমা; তঞ্চঙ্গ্যা; গারো; রাখাইন; মনিপুরী; হাজং; সাঁওতাল; খাসিয়া; অন্যান্য; বর্তমানে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অবস্থা; উপসংহার।)

বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভাষার দেশ। এদেশের বাংলা ভাষাভাষি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙালিদের পাশাপাশি সুদীর্ঘকাল ধরে বসবাস করছে বেশ কিছু ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়। আচারে, অনুষ্ঠানে, ধর্মে, ভাষায়, সংস্কার-সংস্কৃতিতে এরা বাঙালিদের থেকে স্বতন্ত্র। এরা বাংলাদেশেরই অবিচ্ছেদ্য এবং অনিবার্য অংশ।

আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীঃ আদিবাসী এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Aborigines, শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Aborigine থেকে এসেছে যার অর্থ “শুরু থেকে” অর্থাৎ কোনো দেশে বসবাসরত আদিম জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলা হয়। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বলতে মূলত প্রধান জাতির পাশাপাশি বসবাসরত সংখ্যালগিষ্ঠ এবং অপেক্ষোকৃত অনগ্রসর জাতি বা সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পরিসংখ্যানঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৯টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যাদের বেশিরভাগই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেখা গেছে বাংলাদেশে মোট আদিবাসীদের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ জন। তবে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ৪৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং সর্বমোট ২০ লক্ষাধিক আদিবাসী আছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চাকমা, মারমা, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, মনিপুরি, গারো, হাজং, সাঁওতাল, খাসিয়া প্রভৃতি নৃ-গোষ্ঠীগুলো। এরা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার প্রভৃতি অঞ্চলগুলোতে যুগ যুগ ধরে বাস করছে।

চাকমাঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ সম্প্রদায় হলো ‘চাকমা’। চাকমারা নিজেদেরকে বলে চাঙমা। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন প্রভৃতি জেলায় এদের বাস। এরা আবার ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের নিজস্ব সামাজিক, প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা আছে যার প্রধান দায়িত্বে আছে রাজা। রাজাই চাকমাদের প্রথা, রীতি-নীতি নির্ধারণ, ভুমি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, গ্রামের কোন্দল এবং নানা সমস্যার নিষ্পত্তি করে। চাকমাদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। ফলে পুত্রসন্তানরাই কেবল পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে। কৃষি এদের প্রধান জীবিকা হলেও বর্তমানে চাকমারা চাকুরী ও ব্যবসাক্ষেত্রেও জায়গা করে নিয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে চাকমাদের স্বাক্ষরতার হার (৩৭.৭%) সবচেয়ে বেশি। এরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে আছে মাঘী পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, মধু পূর্ণিমা, ফানুস ওড়ানো প্রভৃতি। চাকমাদের অন্যতম বড় উৎসব হলো বিজু উৎসব।

মারমাঃ সংখ্যাগরিষ্ঠের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহৎ সম্প্রদায় হলো ‘মারমা’। পার্বত্য জেলাগুলোতে মারমাদের বসবাস দেখা গেলেও এরা মূলত বান্দরবনের অধিবাসী। মায়ানমার থেকে এসেছে বলে এদেরকে মারমা বলা হয়। তবে মারমা শব্দটি এসেছে ‘ম্রাইমা’ শব্দ থেকে। বান্দরবনে প্রায় ১ লাখ মারমা বাস করে। চাকমাদের মতো এদেরও সামজিক বিচার-আচারের দায়িত্ব রাজার হাতে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা হলেও মারমা মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার লাভ করে। জুম চাষ, নদীর মাছ ও কাঁকড়া শিকার এবং কাপড়, চুরুট প্রভৃতি তৈরি করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হয়ে এরা চাকুরী, ব্যবসাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। মারমারা নিজস্ব ভাষায় কথা বললেও লেখার ক্ষেত্রে বর্মিজ বর্ণমালা ব্যবহার করে। মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে আছে বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, ওয়াগ্যোয়াই প্রভৃতি।

তঞ্চঙ্গ্যাঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মধ্যে তঞ্চঙ্গ্যা উল্লেখযোগ্য। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় এদের বাস। তঞ্চঙ্গ্যারা নিজেদের স্বতন্ত্র্য জাতি বলে দাবি করলেও নৃতাত্ত্বিকগণ মনে করেন এরা চাকমা জাতির একটি উপগোত্র। সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রথা, রীতি-নীতির দিক থেকে চাকমাদের সাথে এদের যথেষ্ট সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষা ইন্দো-এরিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তঞ্চঙ্গ্যারা একে ‘মনভাষা’ বলে উল্লেখ করে।

গারোঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মধুপুরের গভীর অরণ্য, অরণ্য সংলগ্ন এলাকা এবং গারো পাহাড়ের টিলায় বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী গারোদের বাস। এছাড়া নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে কিছু কিছু গারোদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। নৃতান্ত্রিকগণ মনে করেন এরা মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা। গারোরা নিজেদের আচ্ছিক মান্দি অর্থাৎ পাহাড়ের মানুষ বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। তবে যারা সমতলে বাস করে তারা কেবল মান্দি বলে পরিচয় দেয়। গারোদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। গারোদের ভাষার নাম আচ্ছিক ভাষা। তবে সমতলে বসবাসকারী গারোদের ভাষা আলাদা, তাদের ভাষার নাম মান্দি ভাষা। গারোরা স্বতন্ত্র ধর্মমতে বিশ্বাসী আর তাদের সাংস্কৃতিক উৎসব, আচার-অনুষ্ঠানের মূলে রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস। গারোদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব।

রাখাইনঃ রাখাইন সম্প্রদায় মূলত মায়ানমারের একটি জাতিগোষ্ঠী। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ, রাঙ্গামাটি ও বান্দবান জেলায় রাখাইনদের বাস। রাখাইনরা সাধারণত মগ নামে পরিচিত। রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। ফলে এদের প্রধান উৎসবগুলো হলো- বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী পালন, বৈশাখী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা প্রভৃতি। এছাড়া রাখাইনরা সংক্রান্তিতে ৩ দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব পালন করে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে। পুরুষেরা লুঙ্গি, ফতুয়া আর নারীরা লুঙ্গি, ব্লাউজ, অলংকার এবং মাথায় ফুল পরিধান করতে পছন্দ করে। রাখাইনদের বিয়েতে পুরুষদের পণ দেওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে।

মনিপুরীঃ মনিপুরীদের আদি নিবাস ভারতের মনিপুর রাজ্যে। বার্মা-মনিপুর যুদ্ধের সময় এরা এসে বৃহত্তর সিলেটে আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ময়মনসিংহেও মনিপুরীদের দেখতে পাওয়া যায়। ভাষাগত ও ধর্মীয় ভিন্নতার ফলে মনিপুরী সম্প্রদায় আলাদা আলাদা তিনটি উপ-গোষ্ঠীতে বিভক্ত। (১) বিষ্ণুপ্রিয়া, (২) মৈতৈ, (৩) পাঙন। ২০০৩ সালের এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৪০ হাজার বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী এবং ১৫ হাজার মৈতৈ মনিপুরী আছে। মনিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যাবাহী। বিশেষ করে মনিপুরী নৃত্য আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। মনিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান হচ্ছে রাসপূর্ণিমা।

হাজংঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাজং সম্প্রদায়ের দেখা মেলে নেত্রকোনা জেলায়। হা মানে মাটি আর জং অর্থাৎ পোকা। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকাজের সাথে সখ্যতার কারণে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে হাজং। বাংলাদেশে প্রায় ৩০০০ হাজং এর বাস। হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন প্রভৃতি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে এরা ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। হাজংদের নিজস্ব ভাষা আছে। হাজংদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘প্যাক খেলা’ উৎসব। এদের কিছু অংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং কিছু অংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ভাত, মাছ, সবজি ছাড়াও কচি বাঁশের গুড়া বা মিউয়া এদের প্রিয় খাবার।

সাঁওতালঃ পূর্বভারত ও বাংলাদেশের বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সাঁওতাল। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে বিশেষত দিনাজপুর এবং রংপুরে সাঁওতালদের বাস। সাঁওতাল সম্প্রদায় আবার ১২টি উপগোত্রে বিভক্ত। এরা মাটির তৈরি ছোট ছোট ঘরে বাস করে। সাঁওতালদের প্রধান পেশা কৃষি। সাঁওতালদের প্রধান দেবতা বোংগা। এরা মূলত সূর্যের পূজা করে। সাঁওতালদের বার্ষিক উৎসবের নাম সোহরাই। এ উৎসবে সাঁওতাল মেয়েরা দলবেঁধে নাচে। সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। এছাড়া মাছ, কাঁকড়া, শুকর, মুরগি, খরগোস, গুইসাপ, ইঁদুর এবং বেজির মাংস খেতে পছন্দ করে সাঁওতালরা। সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণে ইতিহাসে এরা বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

খাসিয়াঃ বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে খাসিয়াদের বাস। মূলত ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন গভীর অরণ্যে থাকতেই পছন্দ করে এরা। বাংলাদেশে বসবাসকারী খাসিয়ারা সিনতেং গোত্রভুক্ত। খাসিয়ারা মূলত কৃষিজীবী। গভীর অরণ্যে এরা পান চাষ করে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে নারীরা বিয়ে করে বর নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে। সম্পত্তির মালিকানাও নারীরাই লাভ করে।

অন্যান্যঃ আলোচিত সম্প্রদায়গুলো ছাড়াও বাংলাদেশে ত্রিপুরা, খিয়াং, মুন্ডা, চক, লুসাই প্রভৃতি আরো কিছু কিছু ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বসবাস করে থাকে।

বর্তমানে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অবস্থাঃ অতীতে যদিও এই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত, নিগৃহীত হতো কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে সরকার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ কোটা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহায়তাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রাগসর করে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো এখন কেবল কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে না বরং তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সম্মানজনক পদে চাকুরী করছে। এছাড়া ব্যবসা, রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

উপসংহারঃ বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলো এ দেশের নাগরিক। তাই তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। বর্তমানে কিছু কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলে আরো ব্যাপক পরিসরে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, জীবনযাপন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন এবং এগুলো সংরক্ষণ করার যথাযথ ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

তাহারেই পড়ে মনে


তাহারেই পড়ে মনে

Girl in a jacket Mountains

----- সুফিয়া কামাল
“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।”
কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”

কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”

শব্দার্থ ও মূলভাব

কবি পরিচিতি


পাঠপরিচিতি:--

“তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মাদী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। বসন্ত-প্রকৃতির অপরূপসৌন্দর্য যে কবিমনে আনন্দের শিহরন জাগাবে এবং তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ফুটিয়ে তুলবে সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোন কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেত কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না।

এ কবিতায় কবির ব্যক্তি জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপথ ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে (১৯৩২) কবির জীবন প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তার ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক বিষণ্নতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। “তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাকে আচ্ছন্ন করে আছে এই বিষাদময় রিক্ততার সুর। তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা।

কবিতাটির আরেকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর নাটকীয়তা। গঠনরীতির দিক থেকে একটি সংলাপনির্ভর রচনা। কবিতার আবেগময় ভাববস্তুর বেদনাঘন বিষণ্নতার সুর এবং সুললিত ছন্দ এতই মাধুর্যমণ্ডিত যে তা সহজেই পাঠকের অন্তর ছুঁয়ে যায়।

সুজনশীল প্রশ্নের উত্তর

তাহারে পরে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন


** তাহারেই পড়ে মনে বহুুনির্বাচনী
প্রশ্ন:১ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় উত্তরী শব্দের অর্থ কী ?
সঠিক উত্তর: চাদর

প্রশ্ন:২ শুনি নাই, রাখিনি সন্ধান- কবি কীসের সন্ধান রাখেননি ?
সঠিক উত্তর: বসন্তের

প্রশ্ন:৩ তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটির গঠনরীতি কোন বৈশিষ্ট্যের ?
সঠিক উত্তর: নাটকীয়

প্রশ্ন:৪ কবিভক্ত কবির কাছে কিসের মিনতি করেছেন ?
সঠিক উত্তর: কবিকন্ঠে বসন্ত-বন্দনা

প্রশ্ন:৫ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কোন বিষয়টি উঠে এসেছে ?
সঠিক উত্তর: মানবমন ও প্রাকৃতির যোগসাদৃশ্য

প্রশ্ন:৬ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি গান রচনা না করলেও বসন্ত ঋতু এসেছে কেন ?
সঠিক উত্তর: প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে
প্রশ্ন:৭ পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে কে চলে গেছে ?
সঠিক উত্তর: মাঘের সন্ন্যাসী
প্রশ্ন:৮ পারিবারিক নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে কে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন ?
সঠিক উত্তর : সুফিয়া কামাল
প্রশ্ন:৯ পলাশের নেশা মাখি চলেছি দুজনে, বাসনার রঙ-এ মিশি শ্যামলে-স্বপনে, কুহু কুহু শোনা যায় কোকিলের কুহুতান, বসন্ত এসে গেছে। উদ্দীপকের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন কবিতার সাদৃশ্য আছে ?
সঠিক উত্তর: তাহারেই পড়ে মনে
প্রশ্ন:১০ সুফিয়া কামালের স্বামীর নাম কী ?
সঠিক উত্তর: সৈয়দ নেহাল হোসেন
প্রশ্ন:১১ তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি আচ্ছন্ন হয়ে আছে-
সঠিক উত্তর: বিষাদময় রিক্ততার সুর
প্রশ্ন:১২ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় অলখের পাথার বাহিরা তরী তার এসেছে কি ?- চরণটিতে কবির কোন ভাব ফুটে উঠেছে ?
সঠিক উত্তর: উদাসীনতা
প্রশ্ন:১৩ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কোন বিষয়টি উঠে এসেছে ?
সঠিক উত্তর: মানবমন ও প্রাকৃতির যোগসাদৃশ্য
প্রশ্ন:১৪ শুনি নাই, রাখিনি সন্ধান- কবি কীসের সন্ধান রাখেননি ?
সঠিক উত্তর: বসন্তের
প্রশ্ন:১৫ বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে অভিহিত-
সঠিক উত্তর: সুফিয়া কামাল
প্রশ্ন:১৬ দক্ষিণ দুয়ার শব্দটি দ্বারা কবি কিসের আগমনকে জানিয়ে দিয়েছেন ?
সঠিক উত্তর: বসন্তের দক্ষিণা বাতাস
প্রশ্ন:১৭ তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো-
সঠিক উত্তর: নাটকীয়তা
প্রশ্ন:১৮ নিচের কোন পুরষ্কারটি সুফিয়া কামাল পাননি ?
সঠিক উত্তর: স্বাধীনতা পদক
প্রশ্ন:১৯ বসন্ত-বন্দনা বলতে বোঝানো হয়েছে-বসন্তে-
সঠিক উত্তর: কবিতা লেখা
প্রশ্ন:২০কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি ? কে স্নিগ্ধ আঁখি তুলে কথা বলল ?
সঠিক উত্তর: কবি
প্রশ্ন:২১ বসন্তের সৌন্দর্য কবির কাছে অর্থহীন হওয়ার কারণ-
সঠিক উত্তর: প্রিয়জনের মৃত্যু
প্রশ্ন:২২ সংলাপনির্ভর রচনা-
সঠিক উত্তর: তাহারেই পড়ে মনে
প্রশ্ন:২৩ কবি সুফিয়া কামালের পৈতৃক নিবাস কোথায় ?
সঠিক উত্তর: কুমিল্লায়
প্রশ্ন:২৪ ফুল কি ফোটেনি শাখে ? কবি এ জাতীয় প্রশ্ন করেছেন কেন ?
সঠিক উত্তর: উদাসীনতার জন্য
প্রশ্ন:২৫ কুঁড়ি শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্দেশ করা হয়েছে কোনটিতে ?
সঠিক উত্তর: কুঁড়ি>কোরক
প্রশ্ন:২৬ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কী ফোটার কথা জানতে চেয়েছেন ?
সঠিক উত্তর: আমের মুকুল
প্রশ্ন:২৭ কবিভক্ত কবির কাছে কিসের মিনতি করেছেন ?
সঠিক উত্তর: কবিকন্ঠে বসন্ত-বন্দনা
প্রশ্ন:২৮ পুষ্পুশূন্য দিগন্তের পথে কে চলে গেছে ?
সঠিক উত্তর: মাঘের সন্ন্যাসী
প্রশ্ন:২৯ গঠনরীতির দিক থেকে তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কী ধরনের ?
সঠিক উত্তর: সংলাপনির্ভর
প্রশ্ন:৩০ তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কোথায় প্রথম প্রকাশিত হয় ?
সঠিক উত্তর: মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায়
প্রশ্ন:৩১ দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি ? চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে ?
সঠিক উত্তর: কবি মনের উদাসীনতা
প্রশ্ন:৩২ কে কবিকে বসন্তের বন্দনায় গীতি রচনা করতে বলেছেন ?
সঠিক উত্তর: কবিভক্ত
প্রশ্ন:৩৩ কুহেলি শব্দটি তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?
সঠিক উত্তর: কুয়াশা
প্রশ্ন:৩৪ কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-এখানে কবির অনুভূতি-
সঠিক উত্তর: শীতের রিক্ততায় উদ্ভাসিত হয়েছে
প্রশ্ন:৩৫ গঠনরীতির দিক থেকে তাহারেই পড়ে মনে কোন ধরনের কবিতা ?
সঠিক উত্তর: সংলাপনির্ভর
প্রশ্ন:৩৬ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় ব্যবহৃত মিনতি শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত ভাষা-
সঠিক উত্তর: সংষ্কৃত-আরবি
প্রশ্ন:৩৭ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি কেন উম্মনা উদাসীন হয়েছেন ?
সঠিক উত্তর: স্বামীর মৃত্যুর জন্য
প্রশ্ন:৩৮ বসন্ত ঋতুতে কবিকে আচ্ছন্ন করে আছে-
সঠিক উত্তর: শীতের রিক্ততা
প্রশ্ন:৩৯ তাহারেই পড়ে মনে কোন দুয়ার খুলে গেছে ?
সঠিক উত্তর: দক্ষিণ
প্রশ্ন:৪০ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি মৃদু মধু স্বরে কী বলেন ?
সঠিক উত্তর: নাই হলো, না হোক এবারে
প্রশ্ন:৪১ মাধবী শব্দটি তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?
সঠিক উত্তর: বাসন্তী লতা
প্রশ্ন:৪২ পুষ্পশূন্য কোন পথ ?
সঠিক উত্তর: দিগন্তের পথ
প্রশ্ন:৪৩ বাতাবি লেবুর ফুল ফুটেছে কি ?- এখানে কিসের ছায়াপাত ঘটেছে ?
সঠিক উত্তর: কবির উদাসীনতা
প্রশ্ন:৪৪ যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই- এখানে তারে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?
সঠিক উত্তর: বসন্ত
প্রশ্ন:৪৫ দক্ষিণ দুয়ার কীভাবে খুলে গেছে ?
সঠিক উত্তর: প্রকৃতির নিয়মে খুলেছে
প্রশ্ন:৪৬ তাহারেই পড়ে মনে কবিতার পর্ব-বিন্যাস কীরূপ ?
সঠিক উত্তর: ৮ ও ১০ মাত্রা
প্রশ্ন:৪৭ সমীর শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে তুমি কোনটি চিহিৃত করবে ?
সঠিক উত্তর: বাতাস
প্রশ্ন:৪৮ তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি সার্থক-
সঠিক উত্তর: ব্যক্তি ও প্রকৃতির তাৎপর্যময় অভিব্যক্তিতে
প্রশ্ন:৪৯ ডেকেছে কি সে আমারে- চরণাংশে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
সঠিক উত্তর: কবি গভীর চিন্তামগ্ন
প্রশ্ন:৫০ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি গান রচনা না করলেও বসন্ত ঋতু এসেছে কেন ?
সঠিক উত্তর: প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে
প্রশ্ন:৫১ কহিল সে কাছে সরে আসি- পরের পঙক্তি কোনটি ?
সঠিক উত্তর: কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী
প্রশ্ন:৫২ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় উত্তরী শব্দের অর্থ কী ?
সঠিক উত্তর: চাদর
প্রশ্ন:৫৩ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবির মন বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন যে কারণে-
সঠিক উত্তর: প্রিয়জন হারানোর শোকে
প্রশ্ন:৫৪ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি কাকে ব্যথা দিয়েছেন ?
সঠিক উত্তর: পাঠক
প্রশ্ন:৫৫ বসন্ত-বন্দনা তব কন্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি- এ মিনতি করে-
সঠিক উত্তর: কবিভক্ত
প্রশ্ন:৫৬ কবি সুফিয়া কামালের জন্ম কোন জেলায়?
সঠিক উত্তর: বরিশালে
প্রশ্ন:৫৭ কবি সুফিয়া কামালের জন্ম কোন জেলায়?
সঠিক উত্তর: বরিশালে
প্রশ্ন:৫৮ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় হে কবি বলে কে সম্ভোধন করেছেন
সঠিক উত্তর: কবি ভক্ত
প্রশ্ন:৫৯ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবির কাকে মনে পড়ে?
সঠিক উত্তর: মাঘের সন্ন্যাসিকে
প্রশ্ন:৬০ তাহরেই পড়ে মনে কবিতায় কে অর্ঘ্য বিরচন করে?
সঠিক উত্তর: বসন্ত
প্রশ্ন:৬১ কুহেলি শব্দের অর্থ কী?
সঠিক উত্তর : কুয়াশা
প্রশ্ন:৬২ মেঘের সন্ন্যাসি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
সঠিক উত্তর: কবি ভক্তের হৃদয়কে
প্রশ্ন:৬৩ লহ শব্দেটি কী অর্থে ব্যাহৃত হয়েছে?
সঠিক উত্তর: নাও
প্রশ্ন:৬৪ তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি কোন বিষয়ে তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন?
সঠিক উত্তর: প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্ক
==>

বহুনির্বাচনী









মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

MCQ:প্রশ্নের জন্য ok

-----------
Q: venenatis
1.calender
2.color
3.volvo
4.Aliquam
A:-This is a Blue Heading

Q: venenatis

1.calender
2.color
3.volvo
4.Aliquam
A:-This is a Blue Heading

Q: venenatis

1.calender
2.color
3.volvo
4.Aliquam
A:-This is a Blue Heading










বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নেকলেস বহু নির্বাচনী প্রশ্ন


কবি পরিচিতি:
সংক্ষিপ্ত নামঃ গী দ্য মোপাসাঁ।
পূর্ণ নামঃ Henri-Renri-Albert-Gey de Maupassant.
জন্ম তারিখঃ ৫ আগষ্ট, ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
জন্মস্থানঃ নর্মান্ডি, ফ্রান্স।
পিতার নামঃ গুস্তাব দ্য মুপাসাঁ।
মাতার নামঃ লরা লি পয়টিভিন।
সাহিত্য সাধনাঃ পারিবারিক বন্ধু ঔপন্যাসিক গুস্তাব ফ্লবেয়ার এর নির্দেশনা সহযোগিতায় তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেন।
পেশাঃ সাংবাদিকতা ও সাহিত্য সাধনা।
মৃত্যুঃ ৬ জুলাই, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ।

অনুবাদক পরিচিতি:
নাম-পূর্ণেন্দু দস্তিদার।
জন্ম-১৯০৯ সালের ২০ জুন।
জন্মস্থল - চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে।
পিতা- চন্দ্রকুমার দস্তিদার।
মাতা- কুমুদিনী দস্তিদার।
পেশা- আইনজীবী, লেখক, রাজনীতিবীদ।
প্রকাশিত গ্রন্থ- কবিয়াল রমেশ শীল, স্বাধীনতা। সংগ্রামে চট্টগ্রাম, বীরকন্যা প্রীতিলতা।
অনুবাদ গ্রন্থ-শেখভের গল্প, মোপাসাঁর গল্প।
মৃত্যু- ১৯৭১ সালের ৯ মে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারত যাওয়ার পথে।

মূলভাব নেকলেস:-
নেকলেস গল্পে ফুটে উঠে একজন উচ্চাভিলাষী কিন্তু অহংকারী মানুষের চিত্র। গল্পের মূল চরিত্র সবসময় কীভাবে বিলাসিতা করা যায় তা নিয়েই চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথেই সে তার ভুল বুঝতে পারে। নেকলেস গল্পটি অপ্রত্যাশিত কিন্তু অত্যন্ত আকর্ষণীয় সমাপ্তির জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:-
--মাতিলদা বিলাসিতার চিন্তা করে মন খারাপ করে থাকতো।
--অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েও খুশি হয়নি মাতিলদা কারণ তার সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার মতো সুন্দর পোশাক ছিল না।
--বান্ধবীর কাছ থেকে গহনা ধার করা।
--‘বল’ নাচের দিনে মাদাম লোইসেলের জয়জয়কার, কারণ সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী, সুরুচিময়ী, সুদর্শনা হাস্যময়ী ও আনন্দপূর্ণ।
--গহনা হারিয়ে ফেলে হতাশ হয়ে পড়া।
-- গহনার মূল্য শোধ করতে গিয়ে কষ্টের জীবন শুরু করা।
--শেষে সত্য জানতে পারা যে সে এতদিন যেটকে হীরার গয়না ভেবেছিল তা হীরার নয়।
--গল্পের নায়কের নাম –মসিঁয়ে/মসিঁয়ে লোইসেল
--গল্পের নায়িকার নাম – মাতিলদা লোইসেল / মাদাম লোইসেল
--মাদাম লোইসেলের বান্ধবীর নাম – মাদাম ফোরস্টিয়ার
--নিয়তির ভুলেই যেন মাদাম লোইসেলের জন্ম হয়েছে – কেরানির ঘরে
-- মাদাম লোইসেলের বিয়ে হয় কার সাথে – শিক্ষা পরিষদ আপিসের এক কেরানির সাথে
-- কীসের অক্ষমতার জন্য সে সাধারণভাবে থাকত – নিজেকে সজ্জিত করার
-- তার শ্রেণির অন্যতম হিসাবে মাদাম লোইসেল কেমন ছিল – অসুখী
-- কাদের কোনো জাতিবর্ণ নেই – সাধারণ পরিবারের মেয়েদের
-- রহিত মাছের রং কি? – গোলাপি
-- কী খেতে সিংহ মানবী প্রলয়লীলার কথা শুনবেন – মুরগির পাখনা
-- সিংহ মানবী কে? – মাদাম লোইসেল
-- মাদাম লোইসেলের প্রিয় – ফ্রক বা জরোয়া গহনা
-- মাদাম লোইসেলের ধনী বান্ধবীটি কে ছিলো – “কনভেন্ট ” ত্রর সহকারী
-- ত্রক সন্ধ্যায় মসিঁয়ে লোইসেল কি নিয়ে ঘরে ফিরল – ত্রকটি বড় খাম
-- “ত্রই যে তোমার জন্য এক জিনিস ত্রনেছি ” উক্তিটি – মসিঁয়ে লোইসেলের
-- পোশাকের জন্য কত ফ্রাঁ লাগবে – চারশত ফ্রাঁ
-- মসিঁয়ের বন্ধুরা গত রবিবারে “ভরতপাখি ” শিকারে কোথায় গিয়রছিলো – নানতিয়ারের সমভূমিতে
-- মসিঁয়ের বন্ধুদের সাথে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা – আগামী গ্রীষ্মে
-- মসিঁয়ে চারশত ফ্রাঁ সঞ্চয় করে রেখেছিল – “বন্দুক ” কেনার জন্য
-- লোইসেল দম্পতি বাড়ি ফিরল – ভোর ৪ টায়
-- কারা খুব বেশি ফুর্তিতে মও ছিলো – অন্য তিন জন ভদ্রলোকের স্ত্রী।
-- মসিঁয়ে বিশ্রাম কক্ষে আধঘুম বসেছিল – মধ্যরাত্রি পর্যন্ত
-- হতাশ হয়ে কাপঁতে কাপঁতে তারা হাঁটতে থাকল – সিন নদীর দিকে
-- প্যারীতে সন্ধ্যার পর লোকের চোখে পড়ে – নিশাচর দুই যাত্রীর গাড়ি
-- হীরার হারটির মূল্য – ৪০,০০০ ফ্রাঁ
-- হারটি কত ফ্রাঁ দিয়ে আনতে পারবে – ৩৬,০০০ ফ্রাঁ।
-- ফেব্রুয়ারি মাসের ভিতর হারটি ফেরত দিলে তারা কত ফ্রাঁ ফেরত দিবে – ৩৪,০০০ ফ্রাঁ
-- লোইসেলের কাছে ছিলো – ১৮,০০০ ফ্রাঁ
-- মাদাম লোইসেলের নখের রং – গোলাপি
-- ফোরস্টিয়ারের হারটির দাম ছিলো – ৫০০ ফ্রাঁ


বহুনির্বাচনী প্রশ্ন:
১.নেকলেস গল্পের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কোনটি ?
  • ক)অহংকারের অহমিকা
  • খ)দাম্ভিকতার পরিণাম
  • গ)জীবনের রূঢ় বাস্তবতা
  • ঘ)বিলাসিতার পরিণাম
  • উত্তর:-
২.নেকলেস গল্পটির রচয়িতা কে ?
  • ক) এমিল জোলা
  • খ) ইভান তুর্গনেভ
  • গ) গী দ্য মোপাসাঁ
  • ঘ) পূর্ণেন্দু দস্তিদার
  • উত্তর:-
৩. নিচের কোনটি গী দ্য মোপাঁসার জীবনকাল ?
  • ক) ১৮৫০-১৮৯২
  • খ) ১৮৫০-১৮৯৩
  • গ) ১৮৫২-১৯০২
  • ঘ) ১৮৫৩-১৮৯৯
  • উত্তর:-
৪: আমার কোনো মণিমুক্তা, একটি দামি পাথর কিছুই নেই যা দিয়ে আমি নিজেকে সাজাতে পারি।- উক্তিটিতে নিহিত রয়েছে কোনটি ?
  • ক) আকাঙ্ক্ষা
  • খ) অক্ষমতা
  • গ) উচ্চাশা
  • ঘ) প্রতিহিংসা
  • উত্তর:-
৫. কবিয়াল রশেম শীল গ্রন্থটির রচয়িতা কে ?
  • ক) শামসুর রাহমান
  • খ) পুর্ণেন্দু দস্তিদার
  • গ) আনিসুজ্জামান
  • ঘ) আখতারুজ্জামান
  • উত্তর:-
৬.মাদাম লোইসেল দারিদ্রতার ভয়ভহতা বঝিতে পারেন কিভাবে?
  • ক) স্বামী চাকরী হারালে
  • খ) পিতা চাকরী হারালে
  • গ) দুঃখজনক ঋণের কারণে
  • ঘ) পিতার মৃত্যুর কারণে
  • উত্তর:-
৭. পার্টিতে যাবার জন্য মাদাম লোইসেল যে নেকলেসটি ধার করেছিল সেটি ছিল-
  • ক) খাঁটি সোনার
  • খ) নকল সোনার
  • গ) খাঁটি হীরার
  • ঘ) নকল হীরার
  • উত্তর:-
৮. প্রাণের চেয়ে মান বড় প্রবাদটি কোন চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ?
  • ক) নুরুল হুদা
  • খ) মাদাম লোইসেল
  • গ) লোইসেল
  • ঘ) লোইসেল ও মাদাম লোইসেল
  • উত্তর:-
৯ . ফরাসি ভাষাক নেকলেস গল্পটির নাম কী ?
  • ক) La Gaulors
  • খ) La Parure
  • গ) La Goluois
  • ঘ) La Perore
  • উত্তর:-
১০. নেকলেস গল্পে দশ ফ্রাঁতে কয়টি গোলাপ কেনার কথা উল্লেখ রয়েছে ?
  • ক) দুটি-তিনটি
  • খ) তিনটি-চারটি
  • গ) চারটি-পাঁচটি
  • ঘ) একটি-দুটি
  • উত্তর:-
১১: গী দ্য মোপাসাঁ কোন দেশের সাহিত্যিক ?
  • ক)ব্রিটেন
  • খ) ফ্রান্স
  • গ) রাশিয়া
  • ঘ) গ্রিস
  • উত্তর:-
১২. মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে।- চরণে দুটির সঙ্গে নেকলেস গল্পটির সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় কোনটি ?
  • ক)মাদাম লোইসেলের পোশাক কেনা
  • খ) কঠোর পরিশ্রম ও ঋণ পরিশোধ
  • গ) ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁ দিয়ে হার কেনা
  • ঘ) বান্ধবীর কাছ থেকে জড়োয়া গহনার ব্যবস্থা করা
  • উত্তর:-
১3: গী দ্য মোপাসাঁ কোন দেশের লেখক? ?
  • ক)ইংল্যান্ড
  • খ)ইতালি
  • গ) জার্মানি
  • ঘ) ফ্রান্স
  • উত্তর:-
১৪: আয় বুঝে ব্যয় কর- প্রবাদটির শিক্ষা কোন চরিত্রটির মধ্যে অনুপস্থিত ?
  • ক) মাদাম লোইসেল
  • খ) মসিঁয়ে লেইসেল
  • গ) ফোরস্টিয়ার
  • ঘ) সকলের
  • উত্তর:- ক
১৫: মাদাম লোইসেল তার শ্রেণির অন্যতম হিসেবে কেমন ছিল ?
  • ক) সূখী
  • খ) রাগী
  • গ) বঞ্চিত
  • ঘ) অসূখী
  • উত্তর:-
১৬: মসিঁয়ে লোইসেল নির্বাক হয়ে গেলেন কেন ?
  • ক) বল নাচে স্ত্রীর সৌন্দর্য দেখে
  • খ) স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে
  • গ) হীরার হার হারিয়ে যাওয়ায়
  • ঘ) আমন্ত্রণ লিপিখানা নিক্ষেপ করতে দেখে
  • উত্তর:-
১৭: নেকলেস গল্পে মূলত কোন বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে ?
  • ক) লোভ করা মহাপাপ
  • খ) পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
  • গ) বিলাসিতা জীবনের সব নয়
  • ঘ) উচ্চাকাখ্ক্ষা ও লোভের পরিণাম ভয়াবহ
  • উত্তর:-
১৮: নেকলেস গল্পের অনুবাদক কে?
  • ক) সিরাজুল ইসলাম
  • খ) মুনীর চৌধুরী
  • গ) পূর্ণেন্দু দস্তিদার
  • ঘ) বুদ্ধদেব বসু
  • উত্তর:-পূর্ণেন্দু দস্তিদার
১৯. মাদাম লোইসেলের জীবনে কোনো আনন্দ ছিল না কেন ?
  • ক) কেরানির পরিবারে জন্মগ্রহণের জন্য
  • খ) স্বামীর অসুস্থতার জন্য
  • গ) নিজের বিদঘুটে চেহারার জন্য
  • ঘ) পিতার অসুস্থতার জন্য
  • উত্তর:- ক
২০: মাদাম লেইসের নৃত্যের মধ্যে কী ছিল?
  • ক) গর্ব ও উৎসাহ
  • খ) আবেগ ও উৎসাহ
  • গ) সাফল্য ও আবেগ
  • ঘ) গর্ব ও আবেগ
  • উত্তর:-
২১: নেকলেস গল্পে কার হারটি নকল ছিল ?
  • ক) ফোরস্টিয়ারের
  • খ) মাতিলদার
  • গ) লোইসেলের
  • ঘ) মসিঁয়ে বান্ধবীর
  • উত্তর:-
২২. মাদাম ফোরসটিয়ার গহনার বাক্সটি-
  • ক) খুলে দেখল
  • খ) রেখে দিলো
  • গ) তেমনভাবে খুলে দেখল না
  • ঘ) ফেলে দিলো
  • উত্তর:-
২৩. মাদাম লোইসেলের শারীরিক পতনের মুল কারণ কী ?
  • ক) প্রতিহিংসা
  • খ) ঈর্ষা
  • গ) উচ্চাভিলাষ
  • ঘ) সিদ্ধান্তহীনতা
  • উত্তর:-
২৪.নেকলেস গল্পে খেলো শব্দটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
  • ক) নিকৃষ্ট বা মূল্যহীন
  • খ) সাধারণ বা খারাপ
  • গ) অতি সামান্য বা কমদামি
  • ঘ) সাধারণ বা কৃত্রিম
  • উত্তর:-
২৫.লোইসেলকে আমন্ত্রণটি কে করেছিলেন?
  • ক) অর্থমন্ত্রি
  • খ) সংস্কৃতিমন্ত্রি
  • গ) কৃষিমন্ত্রি
  • ঘ) জনশিক্ষা মন্ত্রি
  • উত্তর:-














বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সূরা বাংলা উচ্চারণ


সূরা যিলযাল:

উচ্চারণঃ"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম"
ইযা-ঝুলঝিলাতিল আরদুঝিলঝা-লাহা-। ওয়া আখরাজাতিল আরদুআছকা-লাহা-। ওয়া কা-লাল ইনছা-নুমা-লাহা-। ইয়াওমাইযিন তুহাদ্দিছু আখবা-রাহা-।বিআন্না রাব্বাকা আওহা-লাহা-। ইয়াওমাইযিইঁ ইয়াসদুরুন্না-ছুআশতা-তাল লিউউরাও আ‘মা-লাহুম। ফামাইঁ ইয়া‘মাল মিছকা-লা যাররাতিন খাইরাইঁ ইয়ারাহ। ওয়া মাইঁ ইয়া‘মাল মিছকা-লা যাররাতিন শাররাইঁ ইয়ারাহ।

সূরা ত্বীন:

উচ্চারণ : "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম"
উচ্চারণঃ ওয়াততীন ওয়াঝঝাইতূন।ওয়া তূরি ছীনীন। ওয়া হা-যাল বালাদিল আমীন। লাকাদ খালাকনাল ইনছা-না ফীআহছানি তাকবীম। ছুম্মা রাদাদ না-হু আছফালা ছা-ফিলীন। ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া‘আমিলুসসা-লিহা-তি ফালাহুম আজরুন গাইরু মামনূন। ফামা-ইউকাযযি বুকা বা‘দুবিদ্দীন। আলাইছাল্লা-হু বিআহকামিল হা-কিমীন।

সূরা আসর :

উচ্চারণ : "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম"
ওয়াল আছরি ইন্নাল ইনসা-না লাফী খুসরিন. ইল্লাল্লাযিনা আ-মানূ ওয়া আমিলুছ ছোয়া-লিহা-তি ওয়া তাওয়া - ছওবীল হাক্বি. ওয়া তাওয়া ছওবিছ ছবরি

সূরা নাস:

উচ্চারণ : "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম"
কূল আঊ'যু বিরব্বিন্না-স. মালিকিন্না-স. ইলা-হিন্না-স. মিন শাররিল ওয়াস ওয়া-সিল খান্নাছ. আল্লাযি ইউওয়াস বিসু ফী ছুদুরিন্না-স. মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স.

সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্যাথা কমায় এমন খাদ্য


শরীরের ব্যাথা কমায় এমন খাদ্য

অনেক সময় বিশেষ বিশেষ কিছু খাবারেই সাধারণ মাথাব্যথা, পেটব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথা সেরে যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেকেই সাধারণ প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন। ওষুধ না খেয়েও শুধু খাবার বা বিশেষ ফল খেয়েই এ ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। নিচে তেমনই ১০টি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হল:

চেরি: চেরি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটি ব্যথা সারাতে সবচেয়ে উপকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। জ্বালাপোড়া থেকে সৃষ্টি ব্যথা ডার্ক চেরি খেলে দূর হয়। তবে শুধু চেরিই নয়; ব্যথা প্রতিরোধী হিসেবে অন্যান্য কালো ফলও উপকারী। গ্যাস্টিকের ব্যথা ও অন্যান্য জ্বালাপোড়ার প্রদাহ থেকে সৃষ্ট ব্যথা ২০টি চেরি ফল খেলেই অনেকটা কমে যাবে।

আদা: আদা ব্যথা উপশম করতে কার্যকরী। আদা কুচি পেট ব্যথা ও বমি বমি ভাব দূর করে। আবার বাতের ব্যথায় আদা কেটে মধু মিশিয়ে রোগীকে খেতে দিলেও উপকার পাওয়া যায়। আদাকে তিলের তেলে গরম করে ওই তেল গাঁটে বা জোড়ে মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায়।

পেঁপে: পেঁপেতে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যেটা প্রদাহ দূরীকরণে সাহায্য করে। সার্জারির ব্যথা কমাতেও পেঁপে জুস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শরীরের অন্য ব্যথা কমাতেও কাজ করে।

লাল মরিচ: লাল মরিচে ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক একটি পদার্থ রয়েছে যেটি ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকর।

দই: দইয়ে মাইক্রো-ফ্লোরা নামে একটি উপাদান আছে, যা প্রদাহ এবং বদহজমের কারণে সৃষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

তিল বীজ: তিল বীজও ব্যথা সারাতে ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা মাথা ব্যথা ও মাংস পেশীর ব্যথা অনায়াসে দূর করতে সাহায্য করে।

হলুদ: হলুদে কারকুমিন নামক এক প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। এটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে এটা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর পর খুব দ্রুত এটা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া কেউ চাইলে এটাকে ডায়েটেও যুক্ত করতে পারে।

অ্যালোভেরা জুস: অ্যালোভেরা জেল পোড়ার ব্যথা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এর জুসও আলসারের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। দিনে ২বার অ্যালোভেরা পানে শুধুমাত্র এর উপসর্গই উপশম করে না; নিরাময়ের কাজও দ্রুত শেষ করে।

স্বাদু পানির মাছ: ব্যথা দূরীকরণে এ মাছগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের মাছের মধ্যে হেরিং, ম্যাকরল, টুনা, স্যালমন এবং সার্ডিন অন্যতম। এ মাছ ঘাড়ের ব্যথা উপশম ও পেশীর জয়েন্টকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এসব মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে; যা হার্ট ফাংশনের উন্নতি করে।

পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতায় মেনথল নামে একটি উপাদান আছে, যা ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এর তেল পায়ের কজ্বি ও গোড়ালীতে মালিশে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথা ব্যথায় পুদিনা পাতা কপালে ঘষলেও ব্যথা উপশম হয়।



এস এম গল্প ইকবাল : ব্যথা হলো অসুস্থতা বা ইনজুরিতে সৃষ্ট অস্বস্তিকর শারীরিক অনুভূতি। সাধারণত ব্যথা হ্রাস করতে আমরা ওষুধ সেবন করে থাকি। কিন্তু আপনি জেনে খুশি হবেন যে, কিছু খাবারও ব্যথা উপশম করতে পারে। যেহেতু সবসময় ওষুধ সেবন ভালোকিছু নয়, তাই ব্যথানাশের জন্য আপনার ডায়েটে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন যা ব্যথা হ্রাস করবে। যেসব খাবার খেলে প্রদাহ হ্রাস পায়, সেসব খাবারে ব্যথা উপশম হয়। এখানে আপনার ব্যথা কমানোর জন্য ১৮ প্রদাহবিরোধী খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

অলিভ অয়েল : ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার গবেষকরা পেয়েছেন যে, এক্সট্রা-ভার্জিন অলিভ অয়েলের ওলিওক্যান্থাল নামক কেমিক্যাল প্রদাহমূলক এনজাইমকে তেমনভাবে বাধা দেয়, যেমনটা করে ইবুপ্রোফেন। শাকসবজি, সালাদ ও অন্যান্য খাবারের ওপর অলিভ অয়েল ছিটান- এটি প্রদাহ হ্রাস করবে।

আনারস : আনারসে ব্রোমিলেন নামক প্রোটিন হজমকারক এনজাইম থাকে, একারণে এ ফলটি একটি শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী খাবার। গবেষণায় পাওয়া যায়, আনারস খেলে হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগীদের ব্যথা হ্রাস পেতে পারে এবং কার্পাল টানেল সিন্ড্রোমের লোকদের ফোলা কমে যেতে পারে।

আপেল : এ জনপ্রিয় ফলটি হলো অন্যতম প্রদাহ হ্রাসকারী খাবার, কারণ এতে কোয়েরেক্টিন থাকে- কোয়েরেক্টিন হলো প্রদাহবিরোধী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। একটি প্রচলিত কথা হলো, দিনে একটি আপেল ডাক্তার থেকে দূরে রাখে।

বাদাম ও বীজ : বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও খাবারযোগ্য বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, এল-আরজিনাইন ও ভিটামিন ই থাকে- এসবকিছু প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনার জন্য আদর্শ অপশন হলো অপ্রক্রিয়াজাত লবণমুক্ত বাদাম। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন ন্যাশনাল অফিস আখরোট বাদাম, চিনাবাদাম, আমন্ড, পেস্তা বাদাম ও চিয়া বীজ খেতে বিশেষভাবে সুপারিশ করছে।

সবুজ শাকসবজি : সবুজ শাকসবজি ও পাতাযুক্ত সবজি (যেমন- পাতাকপি, চার্ড, বক চয় ও সিলভার বিট) হলো প্রদাহবিরোধী খাবার, কারণ এসব খাবার প্রদাহবিরোধী ক্যারোটিনয়েডে সমৃদ্ধ। এসব উদ্ভিদ রঞ্জক উদ্ভিজ্জ খাবারকে বর্ণালী করে তোলে।

ডার্ক চকলেট : ডার্ক চকলেটে এমন কেমিক্যাল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, যা প্রদাহ উপশম করতে পারে। ইতালির একটি বড় গবেষণা অনুযায়ী, যেসব লোক প্রতি তিনদিনে ডার্ক চকলেটের একটি বর্গ খেয়েছিল তাদের শরীরে প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন একটি প্রোটিনের মাত্রা তাদের তুলনায় কম ছিল যারা ডার্ক চকলেট খাননি। বাজারে প্রচলিত সস্তা ডার্ক চকলেটে এসব উপকারিতা পাবেন না এবং চকলেট কেনার সময় অবশ্যই লেবেল পড়ে নিতে ভুলবেন না।

বাদামী চাল : বাদামী চাল ও অন্যান্য অপ্রক্রিয়াজাত শস্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, যা প্রদাহ উপশমে সাহায্য করতে পারে। আঁশ সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন কমাতে পারে- এ পদার্থটি রক্তে পাওয়া যায়, যা প্রদাহের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে যকৃত দ্বারা উৎপন্ন হয়, হেলথলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে। এ খাবারের সঙ্গে অন্যান্য প্রদাহবিরোধী খাবার ও পুষ্টিকর খাবার খান।

আঙুর : রেসভিরাট্রোলের জন্য কিছু আঙুর বা মালবেরি খান। রেসভিরাট্রোল প্রদাহমূলক এনজাইমকে তেমনভাবে বাধা দেয়, যেমনটা করে অ্যাসপিরিন, কিন্তু এক্ষেত্রে পাকস্থলি প্রতিক্রিয়া দেখায় না। আঙুরে অ্যান্থোসায়ানিনও থাকে, এটিও প্রদাহ কমায়।

চেরি : চেরিতে অ্যান্থোসায়ানিন নামক কেমিক্যাল থাকে, যা চেরিকে লাল ও নীল করে এবং এটি তেমনভাবে প্রদাহের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেমনটা করে অ্যাসপিরিন। বেরিতেও অ্যান্থোসায়ানিন পাওয়া যায়, যেমন- রাস্পবেরি ও স্ট্রবেরি হলো প্রদাহবিরোধী খাবার।

পেঁয়াজ ও রসুন : পেঁয়াজ ও রসুনের মতো কন্দ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহবিরোধী পদার্থ রয়েছে। এছাড়া এসব খাবারে সালফার কম্পাউন্ড থাকে যা ইমিউন সিস্টেমকে সবকিছু মসৃণভাবে সক্রিয় রাখতে প্ররোচিত করে।

গ্রিন ও ব্ল্যাক টি : চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফ্লেভানয়েড থাকে যা কোষকে সুরক্ষিত রেখে আর্থ্রাইটিসের মতো দশাকে আরো খারাপ হতে দেয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে এমন একটি কেমিক্যাল রয়েছে যা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়ে। তাই সকালে কফির পরিবর্তে গ্রিন টি পানের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

ব্রোকলি : এই সবজিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। ব্রোকলিতে উচ্চমাত্রায় সালফোরাফেনও রয়েছে, যা সাইটোকিনের মাত্রা কমিয়ে প্রদাহ প্রশমিত করে। সালফোরাফেন সমৃদ্ধ অন্যান্য প্রদাহ হ্রাসকারী খাবার হলো পাতাকপি, বাঁধাকপি, বক চয়, ফুলকপি ও ব্রাসেলস স্প্রাউটস।

তৈলাক্ত মাছ : স্যালমনের মতো তৈলাক্ত মাছ, আখরোট বাদাম, তিসি বীজ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, অলিভ অয়েল ও ক্যানোলা অয়েলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে বলে এগুলো শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী খাবার। ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, পিঠ ও ঘাড় ব্যথায় ভোগা যেসব লোক তিন মাস ধরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমন্ট সেবন করেছিল তাদের সার্বিক ব্যথা হ্রাস পেয়েছিল। ব্যথা তাড়াতে সপ্তাহে অন্তত দুবার তৈলাক্ত মাছ খান ও প্রতিদিন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট সেবনের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

সয়া প্রোটিন : ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের গবেষণা অনুসারে, অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভোগা যেসব পুরুষ তিন মাস ধরে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম সয়া প্রোটিন খেয়েছিল তাদের ব্যথা হ্রাস পেয়েছিল এবং তারা আরো সহজে নড়াচড়া করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু যারা খাননি তারা এসব সুফল পাননি। অন্যান্য গবেষণায় পাওয়া যায়, সয়া খাবার খেলে নারীদের প্রদাহও হ্রাস পায়। আপনি শেক বা স্মুদিতে সয়া প্রোটিন পাউডার মেশাতে পারেন অথবা আপনার দৈনিক ডায়েটে সয়াবিন, টফু বা সয়া মিল্ক অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

মাশরুম : মাশরুমের বিভিন্ন উপাদান প্রদাহ প্রশমিত করতে সাহায্য করে, যেমন- ফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, গবেষণা অনুযায়ী। একটি বিশেষ মাশরুম হলো লায়ন’স মানি- এ মাশরুমটিরও কিছু প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে।

সাউয়েরক্রাউট : অন্ত্রের সমস্যার সঙ্গেও প্রদাহের যোগসূত্র রয়েছে, তাই প্রদাহবিরোধী ডায়েট হিসেবে সাউয়েরক্রাউট, দই ও কিমচির মতো ফার্মেন্টেড খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ফার্মেন্টেড খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতা কেবলমাত্র প্রদাহ হ্রাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, গবেষণায় দেখা গেছে যে এসব খাবার রক্তচাপও কমাতেও পারে- যদি এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

অ্যাভোকাডো : প্রদাহ হ্রাসের ক্ষেত্রে অ্যাভোকাডোর ভূমিকা প্রদাহ প্রশমনকারী অন্যান্য খাবারের তুলনায় কম হলেও এ ফলের পেছনে অর্থব্যয় করতে পারেন, কারণ এটিতে অনেক পুষ্টি রয়েছে। অ্যাভোকাডোতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট (যেমন- ক্যারোটিনয়েড ও টকোফেরল) প্রদাহ প্রশমন করে। এ পুষ্টিকর ফলটি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।

বিনস : গবেষণা বলছে যে বিনসে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা একটি শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী খনিজ, ইউ.এস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অনুযায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের মতে, বিনস রক্তে প্রাপ্ত প্রদাহের একটি ইন্ডিকেটর হ্রাস করতে পারে। প্রদাহ প্রশমনের জন্য সর্বোত্তম বিনস হলো ছোট লাল বিনস, কিডনি-আকৃতির বিনস ও পিন্টো বিনস।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

বিভিন্ন প্রকার বাংলা ফন্ট


এইচ,এস,সি গদ্য নেকলেস

লেখক পরিচিতিঃ

গী দ্য মোপাসাঁ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের ৫ই আগস্ট ফ্রাস্নের নর্মান্ডি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম Henri- Renri-Albert-Guy de Maupassant। তাঁর পিতার নাম গুস্তাভ দ্যা মোপাসাঁ ও মায়ের নাম লরা লি পয়টিভিন (Laure Le poittevin)। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে মোপাসাঁ একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার-এর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে।পারিবারিক বন্ধু গুস্তাব ফ্লবেয়ার মোপাসাঁর সাহিত্য-জীবনে অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এই মহান লেখকের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেন। ফ্লবেয়ারের বাসায় মোপাসাঁর পরিচয় ঘটে এমিল জোলা ও ইভান তুর্গনেভসহ অনেক বিখ্যাত লেখকের সঙ্গে। কাব্যচর্চা দিয়ে তাঁর সাহিত্য-জীবন শুরু হলেও মূলত গল্পকার হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতি ও আদর্শগত কোনো বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত না হয়ে তিনি তাঁর সাহিত্য-চর্চার জগৎ তৈরি করেন। তাঁর বস্তুনিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার তুলনা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে খুব বেশি লক্ষ করা যায় না। অসাধারণ সংযম ও বিস্ময়কর জীবনবোধ তাঁর রচনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। | গী দ্য মোপাসাঁ ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

অনুবাদক-পরিচিতি
পূর্ণেন্দু দস্তিদার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ধলঘাট গ্রামে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২০-এ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক ও রাজনীতিবিদ। তাঁর পিতা চন্দ্রকুমার দস্তিদার ও মাতা কুমুদিনী দস্তিদার। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে অংশ নেওয়ায় কারাবরণ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন আইনজীবী; সমাজ ভাবুক লেখক হিসেবেও খ্যাতি ছিল। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: ‘কবিয়াল রমেশ শীল’, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’। এছাড়াও তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘শেখভের গল্প’ ও ‘মোপাসাঁর গল্প’। তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।

মূলরচনাঃ

সে ছিল চমৎকার এক সুন্দরী তরুণী। নিয়তির ভুলেই যেন এক কেরানির পরিবারে তার জন্ম হয়েছে। তার ছিল না কোনো আনন্দ, কোনো আশা। পরিচিত হবার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেমলাভ করার এবং কোনো ধনী অথবা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিবাহিত হওয়ার কোনো উপায় তার ছিল না। তাই শিক্ষা পরিষদ আপিসের সমান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহ সে স্বীকার করে নিয়েছিল। নিজেকে সজ্জিত করার অক্ষমতার জন্য সে সাধারণভাবেই থাকত। কিন্তু তার শ্রেণির অন্যতম হিসেবে সে ছিল অসুখী। তাদের কোনো জাতিবর্ণ নেই। কারণ জন্মের পরে পরিবার থেকেই তারা শ্রী, সৌন্দর্য ও মাধুর্য সম্পর্কে সজাগ হেয় ওঠে। সহজাত চাতুর্য, প্রকৃতিগত সুরুচিপূর্ণ ও আর বুদ্ধির নমনীয়তাই হলো তাদের আভিজাত্য, যার ফলে অনেক সাধারণ পরিবারের মেয়েকেও বিশিস্ট মহিলার সমকক্ষ করে তোলে। সর্বদা তার মনে দুঃখ। তার ধারণা, যত সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলির জন্যই তার জন্ম হয়েছে। তার বাসকক্ষের দারিদ্র, হতশ্রী, দেওয়াল, জীর্ণ চেয়ার এবং বিবর্ণ জিনিসপত্রের জন্য সে ব্যথিত হতো। তার মতো অবস্থার অন্য কোনো মেয়ে এসব জিনিস যদিও লক্ষ করত না, সে এতে দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হতো। যে খর্বকায় ব্রেটন এই সাধারণ ঘরটি তৈরি করেছিল তাকে দেখলেই তার মনে বেদনাভরা দুঃখ আর বেপরোয়া সব স্বপ্ন জেগে উঠত। সে ভাবত তার থাকবে প্রাচ্য-চিত্র শোভিত, উচ্চ ব্রোঞ্জ-এর আলোকমণ্ডিত পার্শ্বকক্ষ। আর থাকবে দুজন বেশ মোটাসোটা গৃহ-ভৃত্য। তারা খাটো পায়জামা পরে যে বড় আরামকেদারা দুটি গরম করার যন্ত্র থেকে বিক্ষিপ্ত ভারি হওয়ায় নিদ্রালু হয়ে উঠেছে, তাতে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। সে কামনা করে একটি বৈঠকখানা, পুরানো রেশমি পর্দা সেখানে ঝুলবে। থাকবে তাতে বিভিন্ন চমৎকার আসবাব, যার ওপর শোভা পাবে অমূল্য সব প্রাচীন কৌতূহল উদ্দীপক সামগ্রী। যেসব পরিচিত ও আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ সব মেয়েদের কাম্য, সেসব অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে বিকাল পাঁচটায় গল্পগুজব করবার জন্য ছোট সুরভিত একটি কক্ষ সেখানে থাকবে।

তিনদিন ধরে ব্যবহৃত একখানা টেবিলক্লথ ঢাকা গোল একটি টেবিলে তার স্বামীর বিপরীত দিকে সে যখন সান্ধ্যভোজে বসে এবং খুশির আমেজে তার স্বামী বড় সুরুয়ার পাত্রটির ঢাকনা তুলতে বলে, ও! কি ভালো মানুষ! এর চেয়ে ভালো কিছু আমি চাই না- তখন তার মনে পড়বে আড়ম্বরপূর্ণ সান্ধ্যভোজের কথা, উজ্জ্বল রৌপ্যপাত্রাদি, মায়াময় বনভূমির মধ্যে প্রাচীন বিশিস্ট ব্যক্তি ও বিরল পাখির চিত্রশোভিত কারুকার্যপূর্ণ পর্দা দিয়ে ঢাকা দেওয়াল-এর কামনা। সে ভাবে, অপরূপ পাত্রে পরিবেশিত হবে অপূর্ব খাধ্য আর গোলাপি রং-এর রোহিত মাছের টুকরা অথবা মুরগির পাখনা খেতে খেতে মুখে সিংহ-মানবীর হাসি নিয়ে কান পেতে শুনবে চুপি-চুপি-বলা প্রণয়লীলার কাহিনি।



তার কাছে ফ্রক বা জড়োয়া গহনা নেই-নেই বলতে কিছু নেই। অথচ ঐ সব বস্তুই তার প্রিয়। তার ধারণা ঐসবের জন্যই তার সৃষ্টি সুখী করার, কাম্য হওয়ার, চালাক ও প্রনয়যাচিকা হবার কতই না তার ইচ্ছা। তার ‘কনভেন্ট’-এর সহপাঠিনী এক ধনী বান্ধবী ছিল। তার সঙ্গে দেখা করতে তার ভালো লাগত না। কারণ দেখা করে ফিরে এসে তার খুব কষ্ট লাগত। বিরক্তি, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে সে কাদঁত। এক সন্ধ্যায় হাতে একটি বড় খাম নিয়ে বেশ উল্লাসিত হয়ে তার স্বামী ঘরে ফিরল। সে বলল, ‘এই যে, তোমার জন্য এক জিনিস এনেছি।’ মেয়েটি তাড়াতাড়ি খামটি ছিড়ে তার ভিতর থেকে একখানা ছাপানো কার্ড বের করল। তাতে নিচের কথাগুলি মুদ্রিত ছিল: ‘জনশিক্ষা মন্ত্রী ও মাদাম জর্জ রেমপননু আগামী ১৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাহাদের নিজ বাসগৃহে মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন।’ তার স্বামী যেমন আশা করেছিল তেমনভাবে খুশি হওয়ার পরিবর্তে মেয়েটি বিদ্বেষের ভাব নিয়ে আমন্ত্রণ লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করে, বিড় বিড় করে বলে, ‘ওখানা নিয়ে তুমি আমায় কী করতে বল?’ কিন্তু লক্ষ্মীটি, আমি ভেবেছিলাম, এতে তুমি খুশি হবে। তুমি বাইরে কখনও যাও না, তাই এই এক সুযোগ চমৎকার এক সুযোগ! এটা জোগাড় করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সবাই একখানা চায়, কিন্তু খুব বেছে বেছে দেওয়া হচ্ছে। কর্মচারীদের বেশি দেওয়া হয়নি। সেখানে তুমি গোটা সরকারি মহলকে দেখতে পাবে। বিরক্তির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি অধীরভাবে বলে উঠল; ঐ ঘটনার মতো একটি ব্যাপার কি পরে আমি যাব বলে তুমি মনে কর? সে ঐ সম্পর্কে কিছু ভাবেনি। তাই সে বিব্রতভাবে বলে, কেন আমরা থিয়েটারে যাবার সময় তুমি যেই পোশাকটা পর সেটা পরবে। ওটা আমার কাছে খুব সুন্দর লাগে-তার স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে সে আতঙ্কে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তার চোখের পাশ থেকে বড় দুফোঁটা অশ্রু তার গালের উপর গড়িয়ে পড়ল। সে থতমতভাবে বলল: কী হলো? কী হলো তোমার? প্রবল চেষ্টায় মেয়েটি নিজের বিরক্তি দমন করে, তার সিক্ত গা মুছে ফেলে শান্ত কন্ঠে জবাব দেয়। কিছুই না। শুধু আমার কোনো পোশাক নেই বলে আমি ঐ ব্যাপারে যেতে পারব না। তোমার যে কোনো সহকর্মীর স্ত্রীর পোশাক আমার চেয়ে যদি ভালো থাকে, কার্ডখানা নিয়ে তাকে দাও। সে মনে মনে দুঃখ পায়। তারপর সে জবাব দেয় : মাতিলদা, বেশ তো চল আলাপ করি আমরা। এমন কোনো পোশাক অন্য কোনো উপলক্ষেও যা দিয় কাজ চলবে অথচ বেশ সাদাসিধা, তার দাম কত আর হবে? কয়েক সেকেন্ড মেয়েটি চিন্তা করে দেখে এমন একটি সংখ্যার বিষয় স্থির করল যা চেয়ে বসলে হিসাবি কেরানির কাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে এক আতঙ্কিত প্রত্যাখান যেন না আসে। শেষপর্যন্ত ইতস্তত করে, মেয়েটি বলল : আমি ঠিক বলতে পারছিনা, তবে আমার মনে হয় চারশ ফ্রা হলে তা কেনা যাবে। শুনে তার মুখ ম্লন হয়ে গেল। কারণ, তার যেসব বন্ধু গত রবিবার নানতিয়ারের সমভূতিতে ভরতপাখি শিকারে গিয়েছিল, আগামী গ্রীষ্মে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছায় একটি বন্দুক কিনবার জন্য ঠিক ততটা অর্থই সে সঞ্চয় করেছিল। তা সত্ত্বেও জবাব দিল : বেশ ত। আমি তোমায় চারশত ফ্রা দেব। কিন্তু বেশ সুন্দর একটি পোশাক কিনে নিও। বল-নাচের দিন যতই এগিয়ে আসতে থাকে ততই মাদাম লোইসেলকে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন মনে হয়। অবশ্য তার পোশাক প্রায় তৈরি হয়ে এসেছে। একদিন সন্ধ্যায় তার স্বামী তাকে বলল : তোমার হয়েছে কী? গত দুই তিনদিন ধরে তোমার কাজকর্ম কেমন অদ্ভুত ঠেকছে। শুনে মেয়েটি জবাব দেয়। আমার কোনো মণিমুক্তা, একটি দামি পাথর কিছুই নেই যা দিয়ে আমি নিজেকে সাজাতে পারি। আমায় দেখলে কেমন গরিব গরিব মনে হবে। তাই এই অনুষ্ঠানে আমার না যাওয়াই ভালো হবে। স্বামী বলল, কিছু সত্যকার ফুল দিয়ে তুমি সাজতে পার।এই ঋতুতে তাতে বেশ সরুচিপূর্ণ দেখায়। দশ ফ্রাঁ দিলে তুমি দুটি কি তিনটি অত্যন্ত চমৎকার গোলাপফুল পাবে।

মেয়েটি ঐ কথায় আশ্বস্ত হলো না। সে জবাবে বলল, না ধনী মেয়েদের মাঝখানে পোশাকে পরিচ্ছদে ঐ রকম খেলো দেখানোর মতো আর বেশি কিছু অপমানজনক নেই। তখন তার স্বামী চেঁচিয়ে উঠল : আচ্ছা কী বোকা দেখ আমরা! যাও, তোমার বান্ধবী মাদার ফোরসটিয়ারের সঙ্গে দেখা করে তাকে বল তার জড়োয়া গহনা যেন তোমায় ধার দেয়। এটুকু আদায় করার তো তার সঙ্গে তোমায় পরিচয় যথেষ্ট। সে আনন্দধ্বনি করে উঠল। তারপর সে বলল : সত্যিই তো! এটা আমি ভাবিনি। পরদিন সে তার বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে তার দুঃখের কাহিনি তাকে বলল। মাদাম ফোরসটিয়ার তা কাচের দরজা লাগানো গোপনকক্ষে গিয়ে বড় একটি গহনার বাক্স বের করে এনে তা খুলে বলল : ভাই যা ইচ্ছা এখান থেকে নাও। সে প্রথমে দেখল কয়েকটি কঙ্কন, তারপর একটি মুক্তার মালা। ও মণিমুক্তা-খচিত চমৎকার কারুকার্য-ভরা-একটি সোনার ভিনিশাঁর ‘ক্রশ’। আয়নার সামনে গিয়ে সে জড়োয়া গহনাগুলি পরে পরে দেখে আর ইতস্তত করে, কিন্তু ওগুলি নেওয়ার সিন্ধান্তও করতে ছেড়ে যেতেও পারে না। তারপরও সে জিজ্ঞাসা করে : আর কিছু নেই তোমার? কেন? আছে, তোমার যা পছন্দ তুমি তা বেছে নাও। হঠাৎ সে কালো স্যাটিনের একটি বাক্সে দেখল অপরূপ একখানা হীরার হার। অদম্য কামনায় তার বুক দুর দুর করে। সেটা তুলে নিতে গিয়ে তার হাত কাপে। সে তার পোশাকের উপর দিয়ে সেটা গলায় তুলে নেয় এবং সেগুলো দেখে আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায়। তারপর উদ্বগভরা, ইতস্ততভাবে সে জিজ্ঞাসা করল : তুমি ঐখানা আমায় শুধু ধার দেবে? শুধু এটা? কেন দেব না নিশ্চয় দেব। সে সবেগে তার বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরে, পরম আবেগে তাকে বুকে চেপে ধরে। তারপর তার সম্পদ নিয়ে সে চলে আসে। ‘বল’ নাচের দিন এসে গেল। মাদাম লোইসেলের জয়জয়কার। সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী, সুরুচিময়ী, সুদর্শনা হাস্যময়ী ও আনন্দপূর্ণ। সব পুরুষ তাকে লক্ষ করছিল, তার নাম জিজ্ঞাসা করে তার সঙ্গে আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করছিল। মন্ত্রিসভার সব সদস্যের তার সঙ্গে ‘ওয়ালটজ’ নৃত্য করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন। আনন্দে মত্ত হয়ে আবেগ ও উৎসাহ নিয়ে সে নৃত্য করছিল। তার রূপের বিজয়গর্বে, সাফল্যের গৌরবে সে আর কিছুই ভাবে না। এক আনন্দের মেঘের ওপর দিয়ে যেন ভেসে আসছিল! এই সব আহুতি ও মুগ্ধতা আর জাগ্রত সব কামনা। যে কোনো মেয়ের অন্তরে এই পরিপূর্ণ বিজয় কত মধুর! ভোর চারটার দিকে সে বাড়ি ফিরে গেল। অন্য সেই তিনজন ভদ্রলোকের স্ত্রী খুব বেশি ফুর্তিতে মত্ত ছিল, তাদের সঙ্গে তার স্বামী ছোট বিশ্রামকক্ষে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত আধঘুমে বসেছিল। বাড়ি ফিরবার পথে গায়ে জড়াবার জন্য তারা যে আটপৌরে সাধারণ চাদর নিয়ে এসেছিল সে তার কাঁধের ওপর সেটি ছড়িয়ে দেয়। ‘বল’ নাচের পোশাক অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐটির দারিদ্র্য সপুরিস্ফূট হয়ে উঠছিল। মেয়েটি তা অনুভব করতে পারে তাই অন্য যেসব ধনী মেয়ে দামি পশমি চাদর দিয়ে গা ঢেকেছিল তাদের চোখে না পড়বার জন্য সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে লাগল। লোইসেল তাতে টেনে ধরে বলল : থামো, তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে ওখানে। আমি একখানা গাড়ি ডেকে আনি। কিন্তু মেয়েটি কোনো কথায় কান না দিয়ে তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে। রাস্তায় যখন তারা পৌঁছে গেল, সেখানে কোনো গাড়ি পাওয়া গেল না। তারা গাড়ির খোঁজ করতে করতে দূরে কোনো একখানাকে দেখে তার গাড়োয়ানকে ডাকতে থাকে। হতাশ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে তারা সিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সে পুরাতন একখানা তারা পায়, তাহলো সেই নিশাচর দুই-যাত্রীর গাড়ি যা প্যারিতে সন্ধ্যার পর লোকের চোখে পড়ে, তার একখানা, যেইদিনে এইগুলি নিজের দুর্দশা দেখাতে লজ্জা পায়। ঐ খানি তাদের মার্টার স্ট্রিটে ঘরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেল। তারা ক্লান্তভাবে তাদের কক্ষে গেল। মেয়েটির সব কাজ শেষ। কিন্তু স্বামীর ব্যাপারে, তার মনে পড়ল যে দশটায় তাকে আপিসে গিয়ে পৌছাতে হবে। নিজেকে গৌরবময় রূপে শেষ একবার দেখার জন্য সে আয়নার সামনে গিয়ে তার গলায় চাদরখানা খোলে। হঠাৎ সে আর্তনাদ করে উঠল। তার হারখানা গলায় জড়ানো নেই। তার স্বামীর পোশাক তখন মাত্র অর্ধেক খোলা হয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করল কী হয়েছে? উত্তেজিতভাবে মেয়েটি তার দিকে ফিরে বলল : আমার-আমার কাছে-মাদাম ফোরস্টিয়ারের হারখানা নেই। আতঙ্কিতভাবে সে উঠে দাঁড়াল : কী বললে। তা কী করে হবে? এটা সম্ভব নয়। পোশাকের ও বর্হিবাসের ভাঁজের মধ্যে, পকেটে, সব জায়গায় তারা খোঁজ করে। কিন্তু তা পাওয়া গেল না। স্বামী জিজ্ঞাসা করল : ঐ বাড়ি থেকে চলে আসার সময় যে তোমার গলায় ছিল, তোমার ঠিক মনে আছে?

হ্যাঁ, আমরা যখন বিশ্রামকক্ষ দিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম, তখনও তা ছিল আমার খেয়াল আছে। কিন্তু তুমি যদি ওটা রাস্তায় হারাতে, ওটা পড়বার শব্দ আমাদের কানে শোনা উচিত ছিল। গাড়ির মধ্যেই নিশ্চয়ই পড়েছে মনে হয়। হ্যাঁ, সম্ভবত তাই। তুমি গাড়ির নম্বরটি টুকে নিয়েছিল? না। আর তুমি কি তা লক্ষ করেছিলে।? না। হতাশভাবে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত লোইসেল আবার পোশাক পরেনি। সে বলল : আমি যাচ্ছি। দেখি যতটা রাস্তা আমরা হেঁটেছিলাম, সেখানে খুজে পাওয়া যায় কিনা। তারপর সে গেল মেয়েটি তার সান্ধ্য গাউন পরেই সে রয়ে গেল। বিছানায় শুতে যাবার শক্তি তার নেই। কোনো উচ্চাশা বা ভাবনা ছাড়াই সে একখানা চেয়ারে গা এলিয়ে পড়ে রইল।

সকাল সাতটার দিকে তার স্বামী ফিরে এলো। কিছুই সে খুঁজে পায়নি। সে পুলিশের কাছে ও গাড়ির আপিসে গিয়েছিল এবং পুরস্কার ঘোষণা করে একটা বিজ্ঞাপনও দিয়ে এসেছে। সে যথাসাধ্য করে এসেছে বলে তাদের মনে কিছুটা আশা হলো। ঐ ভয়ানক বিপর্যয়ে মেয়েটি সারাদিন এক বিভ্রান্ত অবস্থায় কাটাল। সন্ধ্যাবেলা যখন লোইসেল ফিরে এলো তখন তার মুখে যন্ত্রণর মলিন ছাপ, কিছুই সে খুঁজে পায়নি। সে বলল, তোমার বান্ধবীকে লিখে দিতে হবে যে হারখানার আংটা তুমি ভেঙে ফেলেছ, তাই তা তুমি মেরামত করতে দিয়েছ।। তাতে আমরা ভেবে দেখবার সময় পাব। তার নিদের্শমত মেয়েটি তাই লিখে দিল। এক সপ্তাহ শেষ হওয়ায় তারা সব আশা ত্যাগ করল। বয়সে পাঁচ বছরের বড় লোইসেল ঘোষণা করল : ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেবার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। পরদিন যেই বাক্সে ওটা ছিল, তার ভিতরে যেই স্বর্ণকারের নাম ছিল, তার কাছে তারা সেটা নিয়ে গেল। সে তার খাতাপত্র ঘেঁটে বলল : মাদাম, ঐ হারখানা আমি বিক্রি করিনি, আমি শুধু বাক্সটা দিয়েছিলাম| তারপর তারা সেই হারটির মত হার খোঁজ করার জন্য, তাদের স্মৃতির উপর নির্ভর করে এক স্বর্ণকার থেকে অন্য স্বর্ণকারের কাছে যেতে থাকে। দুজনেরই শরীর বিরক্তি ও উদ্বেগে খারাপ হয়ে গেছে। প্যালেস রয়েলে তারা এমন এক হীরার কণ্ঠহার দেখল সেটা ঠিক তাদের হারানো হারের মতো। তার দাম চল্লিশ হাজার ফ্রাঁ। ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁতে তারা তা পেতে পারে। তিন দিন যেন ওটা বিক্রি না করে সে জন্য তারা স্বর্ণকারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করল। তারা আরও ব্যবস্থা করল যে, যদি ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগে ঐ হারটি খুঁজে পাওয়া যায়, তারা এটা ফেরত দিলে চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত নিতে পারবে। লোসেলের কাছে তার বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রাঁ ছিল। বাকিটা সে ধার করল। মাদার লোইসেল যখন জড়ো গহনা মাদাম ফোরস্টিয়ারকে ফেরত দিতে গেল তখন শেষোক্ত মেয়েটি নির্জীবকণ্ঠে বলল : ওটা আরও আগে তোমায় ফেরত দেওয়া উচিত ছিল; কারণ তা আমারও দরকার হতে পারত। তার বান্ধবী সেই ভয় করেছিল, তেমনভাবে সে গহনার বাক্সটি খুলল না। যদি বদলে দেওয়া হয়েছে। টের পেত, সে কী মনে করত? সে কী বলত? সে কী তাকে অপহারক ভাবত? এবার মাদার লোইসেল দারিদ্রের জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে। সে তার নিজের কাজ সম্পূর্ণ সাহসের সঙ্গেই করে যায়। ঐ দুঃখজনক দেনা শোধ করা প্রয়োজন। সে তা দেবে। দাসীকে তারা বিদায় করে দিল। তারা তাদের বাসা পরিবর্তন করল। নিচু ছাদের কয়েকটি কামরা তারা ভাড়া করল। ঘরকন্যার কঠিন সব কাজ ও রান্নাঘরের বিরক্তিকর কাজকর্ম সে শিখে নিল। তার গোলাপি নখ দিয়ে সে বাসন ধোয়, তৈলাক্ত পাত্র ও ঝোল রাঁধার কড়াই মাজে। ময়লা কাপড় চোপড়, শেমিজ, বাসন মোছার গামছা সে পরিষ্কার করে দড়িতে শুকাতে দেয়। রোজ সকালে সে আবর্জনা নিয়ে রাস্তায় ফেলে। সিঁড়ির প্রত্যেক ধাপে শ্বাস নেবার জন্য থেমে থেমে সে জল তোলে।

সাধারণ পরিবারের মেয়ের মতো পোশাক পরে সে হাতে ঝুড়ি নিয়ে মুদি, কসাই ও ফলের দোকানে যায় এবং তার দুঃখের পয়সার একটির জন্য পর্যন্ত দর কষাকষি করে। প্রত্যেক মাসেই সময় চেয়ে কিছু দলিল বদল করতে হয়, কাউকে কিছু শোধ দিতে হয়। তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েজকন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। রাত্রে এক পাতা পাঁচ ‘সাও’ হিসেবে সে প্রায় লেখা নকল করে। এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল। দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু তাদের সঞ্চয়ও হলো। মাদার লোইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। সে এখন গরিব গৃহস্তঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত ঘাঘরা একপাশে মোচড়ানো, হাতগুলো লাল। সে চড়াগলায় কথা বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধোয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ‘বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে। যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতো? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাঁচতেও পারে! এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস-এলসিস-এ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখ পড়ল। সে হলো মাদাম ফোরস্টিয়ার। সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া। দেখে মাদাম লোইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল। সে কি ঐ মেযেটির সঙ্গে কথা বলবে? হ্যাঁ অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শোধ করা হযেছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন বলবে না? সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, সুপ্রভাত জেনি, তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বোধন করায় সে অবাক হলো। সে বিব্রতভাবে বলল। কিন্তু মাদাম-আপনাকে চিনতে পারলাম না। বোধহয় আপনার ভুল হয়েছে-না, আমি মাতিলদা লোইসেল। তার বান্ধবী বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল : হায়, আমার বেচারী মাতিলদা। এমনভাবে কী করে তুমি বদলে গেলে। হ্যাঁ তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর তেকে আমার দুর্দিন যাচ্ছে-বেশ কিছু দুঃখের দিন গেছে আর সেটা হয়েছে শুধু তোমার জন্য। আমার জন্য? তা কী করে হলো? সেই যে কমিশনারের বল নাচের দিন তুমি আমাকে তোমার হীরার হার পরতে গিয়েছিলে, মনে পড়ে? হ্যাঁ, বেশ মনে আছে। কথা হচ্ছে, সেখানা আমি হরিয়ে ফেলেছিলাম। কী বলছ তুমি? কী করে তা আমায় তুমি ফেরত দিয়েছিলে? ঠিক সেখানার মতো একটি তোমাকে আমি ফেরত দিয়েছিলাম। তার দাম দিতে দশ বছর লেগেছে। তুমি বুঝতেই পার। আমদের মতো লোক যাদের কিছুই ছিল না, তাদের পক্ষে তা সহজ ছিল না। কিন্তু তা শেষ হযেছে এবং সেজন্য আমি এখন ভালোভাবে নিশ্চিন্ত হয়েছি। মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে বলল: তুমি বলছ যে, আমারটা ফিরিয়ে দেবার জন্য তুমি একখানা হীরার হার কিনেছিলে? হ্যাঁ, তা তুমি খেয়াল করনি? ঐ দুটি এক রকম ছিল বলে সে গর্বের ভাবে ও সরল আনন্দে হাসল। দেখে মাদার ফোরস্টিয়ার-এর মনে খুব লাগল। সে তার দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল : হায়, আমার বেচারী মাতিলদা। আমারটি ছিল নকল। তার দাম পাঁচশত ফ্রার বেশি হবে না।

শব্দার্থ ও টীকাঃ

– কনভেন্ট – খ্রিস্টন নারী মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত স্কুল। মিশনারিদের আবাস।
– মাসিঁয়ে – সৌজন্য প্রদর্শন ও সম্মান জানানোর জন্য ফ্রান্সে পুরুষদের মাসিঁয়ে সম্বোধন করা হয়।
– মাদাম – সৌজন্য প্রদর্শন ও সম্মান জানানোর জন্য ফ্রান্সে মহিলাদের মাদাম সম্বোধন করা হয়।
– ফ্রাঁ -ফরাসি মুদ্রার নাম। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই মুদ্রা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় ফ্রান্স ইউরো ব্যবহার করে।
– ‘বল’ নাচ-বিনোদনমূলক সামাজিক নৃত্যানুষ্ঠান। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বহু দেশে এই নৃত্য প্রচলিত।
– ক্রশ – খ্রিস্টন ধর্মীয় প্রতীক।
– স্যাটিন- Satin মসৃণ ও চকচকে রেশমি বস্ত্র।
– প্যারী -প্যারিসের ফরাসি নাম।
– প্যালেস রয়েল – রাজকীয় প্রাসাদ।

পাঠ-পরিচিতিঃ

বিশ্ববিখ্যাত গল্পকার গী দ্য মোপাসাঁর শ্রেষ্ঠ গল্পগুলোর মধ্যে ‘নেকলেস’ অন্যতম। ফরাসি ভাষায় গল্পটির নাম ‘La Parure’। ১৮৮৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ফরাসি পত্রিকা ‘La Gaulois’-এর গল্পটি প্রকাশিত হয় এবং সে বছরই ইংরেজিতে অনূদিত হয়। একই সালে প্রকাশিত ‘নেকলেস’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থের মধ্যে গল্পটি স্থান পায়। অপ্রত্যাশিত কিন্তু অত্যন্ত আকর্ষণীয় সমাপ্তির জন্য গল্পটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

৩। আনন্দময়ী বিদ্যানিকেতনের প্রবীণ শিক্ষক ‘ কর্ম দোষে ফল লাভ ’ গল্পটি পড়ানো শেষে ছাত্রদের দুটি উপদেশ দেন।
উপদেশ-১ : উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে এমন কাজ করো না, যা তোমাদের বিপদে ফেলতে পারে।
উপদেশ-২ : সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারলেই নিজেকে সুখী ভাবা যায়।
ক. ‘নেকলেস’ গল্পে নিয়তির ভুলে কার জন্ম কেরানির পরিবারে? ১
খ. মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করত কেন? ২
গ. উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশ ‘নেকলেস’ গল্পের কোন দিকটির ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।” উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪

font