সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্যাথা কমায় এমন খাদ্য


শরীরের ব্যাথা কমায় এমন খাদ্য

অনেক সময় বিশেষ বিশেষ কিছু খাবারেই সাধারণ মাথাব্যথা, পেটব্যথাসহ অন্যান্য ব্যথা সেরে যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেকেই সাধারণ প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন। ওষুধ না খেয়েও শুধু খাবার বা বিশেষ ফল খেয়েই এ ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। নিচে তেমনই ১০টি খাবার নিয়ে আলোচনা করা হল:

চেরি: চেরি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটি ব্যথা সারাতে সবচেয়ে উপকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। জ্বালাপোড়া থেকে সৃষ্টি ব্যথা ডার্ক চেরি খেলে দূর হয়। তবে শুধু চেরিই নয়; ব্যথা প্রতিরোধী হিসেবে অন্যান্য কালো ফলও উপকারী। গ্যাস্টিকের ব্যথা ও অন্যান্য জ্বালাপোড়ার প্রদাহ থেকে সৃষ্ট ব্যথা ২০টি চেরি ফল খেলেই অনেকটা কমে যাবে।

আদা: আদা ব্যথা উপশম করতে কার্যকরী। আদা কুচি পেট ব্যথা ও বমি বমি ভাব দূর করে। আবার বাতের ব্যথায় আদা কেটে মধু মিশিয়ে রোগীকে খেতে দিলেও উপকার পাওয়া যায়। আদাকে তিলের তেলে গরম করে ওই তেল গাঁটে বা জোড়ে মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায়।

পেঁপে: পেঁপেতে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যেটা প্রদাহ দূরীকরণে সাহায্য করে। সার্জারির ব্যথা কমাতেও পেঁপে জুস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শরীরের অন্য ব্যথা কমাতেও কাজ করে।

লাল মরিচ: লাল মরিচে ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক একটি পদার্থ রয়েছে যেটি ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকর।

দই: দইয়ে মাইক্রো-ফ্লোরা নামে একটি উপাদান আছে, যা প্রদাহ এবং বদহজমের কারণে সৃষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

তিল বীজ: তিল বীজও ব্যথা সারাতে ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা মাথা ব্যথা ও মাংস পেশীর ব্যথা অনায়াসে দূর করতে সাহায্য করে।

হলুদ: হলুদে কারকুমিন নামক এক প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। এটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে এটা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর পর খুব দ্রুত এটা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া কেউ চাইলে এটাকে ডায়েটেও যুক্ত করতে পারে।

অ্যালোভেরা জুস: অ্যালোভেরা জেল পোড়ার ব্যথা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এর জুসও আলসারের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। দিনে ২বার অ্যালোভেরা পানে শুধুমাত্র এর উপসর্গই উপশম করে না; নিরাময়ের কাজও দ্রুত শেষ করে।

স্বাদু পানির মাছ: ব্যথা দূরীকরণে এ মাছগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের মাছের মধ্যে হেরিং, ম্যাকরল, টুনা, স্যালমন এবং সার্ডিন অন্যতম। এ মাছ ঘাড়ের ব্যথা উপশম ও পেশীর জয়েন্টকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এসব মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে; যা হার্ট ফাংশনের উন্নতি করে।

পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতায় মেনথল নামে একটি উপাদান আছে, যা ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, এর তেল পায়ের কজ্বি ও গোড়ালীতে মালিশে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথা ব্যথায় পুদিনা পাতা কপালে ঘষলেও ব্যথা উপশম হয়।



এস এম গল্প ইকবাল : ব্যথা হলো অসুস্থতা বা ইনজুরিতে সৃষ্ট অস্বস্তিকর শারীরিক অনুভূতি। সাধারণত ব্যথা হ্রাস করতে আমরা ওষুধ সেবন করে থাকি। কিন্তু আপনি জেনে খুশি হবেন যে, কিছু খাবারও ব্যথা উপশম করতে পারে। যেহেতু সবসময় ওষুধ সেবন ভালোকিছু নয়, তাই ব্যথানাশের জন্য আপনার ডায়েটে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন যা ব্যথা হ্রাস করবে। যেসব খাবার খেলে প্রদাহ হ্রাস পায়, সেসব খাবারে ব্যথা উপশম হয়। এখানে আপনার ব্যথা কমানোর জন্য ১৮ প্রদাহবিরোধী খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

অলিভ অয়েল : ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার গবেষকরা পেয়েছেন যে, এক্সট্রা-ভার্জিন অলিভ অয়েলের ওলিওক্যান্থাল নামক কেমিক্যাল প্রদাহমূলক এনজাইমকে তেমনভাবে বাধা দেয়, যেমনটা করে ইবুপ্রোফেন। শাকসবজি, সালাদ ও অন্যান্য খাবারের ওপর অলিভ অয়েল ছিটান- এটি প্রদাহ হ্রাস করবে।

আনারস : আনারসে ব্রোমিলেন নামক প্রোটিন হজমকারক এনজাইম থাকে, একারণে এ ফলটি একটি শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী খাবার। গবেষণায় পাওয়া যায়, আনারস খেলে হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগীদের ব্যথা হ্রাস পেতে পারে এবং কার্পাল টানেল সিন্ড্রোমের লোকদের ফোলা কমে যেতে পারে।

আপেল : এ জনপ্রিয় ফলটি হলো অন্যতম প্রদাহ হ্রাসকারী খাবার, কারণ এতে কোয়েরেক্টিন থাকে- কোয়েরেক্টিন হলো প্রদাহবিরোধী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। একটি প্রচলিত কথা হলো, দিনে একটি আপেল ডাক্তার থেকে দূরে রাখে।

বাদাম ও বীজ : বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও খাবারযোগ্য বীজে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, এল-আরজিনাইন ও ভিটামিন ই থাকে- এসবকিছু প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনার জন্য আদর্শ অপশন হলো অপ্রক্রিয়াজাত লবণমুক্ত বাদাম। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন ন্যাশনাল অফিস আখরোট বাদাম, চিনাবাদাম, আমন্ড, পেস্তা বাদাম ও চিয়া বীজ খেতে বিশেষভাবে সুপারিশ করছে।

সবুজ শাকসবজি : সবুজ শাকসবজি ও পাতাযুক্ত সবজি (যেমন- পাতাকপি, চার্ড, বক চয় ও সিলভার বিট) হলো প্রদাহবিরোধী খাবার, কারণ এসব খাবার প্রদাহবিরোধী ক্যারোটিনয়েডে সমৃদ্ধ। এসব উদ্ভিদ রঞ্জক উদ্ভিজ্জ খাবারকে বর্ণালী করে তোলে।

ডার্ক চকলেট : ডার্ক চকলেটে এমন কেমিক্যাল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, যা প্রদাহ উপশম করতে পারে। ইতালির একটি বড় গবেষণা অনুযায়ী, যেসব লোক প্রতি তিনদিনে ডার্ক চকলেটের একটি বর্গ খেয়েছিল তাদের শরীরে প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন একটি প্রোটিনের মাত্রা তাদের তুলনায় কম ছিল যারা ডার্ক চকলেট খাননি। বাজারে প্রচলিত সস্তা ডার্ক চকলেটে এসব উপকারিতা পাবেন না এবং চকলেট কেনার সময় অবশ্যই লেবেল পড়ে নিতে ভুলবেন না।

বাদামী চাল : বাদামী চাল ও অন্যান্য অপ্রক্রিয়াজাত শস্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, যা প্রদাহ উপশমে সাহায্য করতে পারে। আঁশ সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন কমাতে পারে- এ পদার্থটি রক্তে পাওয়া যায়, যা প্রদাহের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে যকৃত দ্বারা উৎপন্ন হয়, হেলথলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে। এ খাবারের সঙ্গে অন্যান্য প্রদাহবিরোধী খাবার ও পুষ্টিকর খাবার খান।

আঙুর : রেসভিরাট্রোলের জন্য কিছু আঙুর বা মালবেরি খান। রেসভিরাট্রোল প্রদাহমূলক এনজাইমকে তেমনভাবে বাধা দেয়, যেমনটা করে অ্যাসপিরিন, কিন্তু এক্ষেত্রে পাকস্থলি প্রতিক্রিয়া দেখায় না। আঙুরে অ্যান্থোসায়ানিনও থাকে, এটিও প্রদাহ কমায়।

চেরি : চেরিতে অ্যান্থোসায়ানিন নামক কেমিক্যাল থাকে, যা চেরিকে লাল ও নীল করে এবং এটি তেমনভাবে প্রদাহের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেমনটা করে অ্যাসপিরিন। বেরিতেও অ্যান্থোসায়ানিন পাওয়া যায়, যেমন- রাস্পবেরি ও স্ট্রবেরি হলো প্রদাহবিরোধী খাবার।

পেঁয়াজ ও রসুন : পেঁয়াজ ও রসুনের মতো কন্দ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহবিরোধী পদার্থ রয়েছে। এছাড়া এসব খাবারে সালফার কম্পাউন্ড থাকে যা ইমিউন সিস্টেমকে সবকিছু মসৃণভাবে সক্রিয় রাখতে প্ররোচিত করে।

গ্রিন ও ব্ল্যাক টি : চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ফ্লেভানয়েড থাকে যা কোষকে সুরক্ষিত রেখে আর্থ্রাইটিসের মতো দশাকে আরো খারাপ হতে দেয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে এমন একটি কেমিক্যাল রয়েছে যা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়ে। তাই সকালে কফির পরিবর্তে গ্রিন টি পানের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

ব্রোকলি : এই সবজিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। ব্রোকলিতে উচ্চমাত্রায় সালফোরাফেনও রয়েছে, যা সাইটোকিনের মাত্রা কমিয়ে প্রদাহ প্রশমিত করে। সালফোরাফেন সমৃদ্ধ অন্যান্য প্রদাহ হ্রাসকারী খাবার হলো পাতাকপি, বাঁধাকপি, বক চয়, ফুলকপি ও ব্রাসেলস স্প্রাউটস।

তৈলাক্ত মাছ : স্যালমনের মতো তৈলাক্ত মাছ, আখরোট বাদাম, তিসি বীজ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, অলিভ অয়েল ও ক্যানোলা অয়েলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে বলে এগুলো শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী খাবার। ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, পিঠ ও ঘাড় ব্যথায় ভোগা যেসব লোক তিন মাস ধরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমন্ট সেবন করেছিল তাদের সার্বিক ব্যথা হ্রাস পেয়েছিল। ব্যথা তাড়াতে সপ্তাহে অন্তত দুবার তৈলাক্ত মাছ খান ও প্রতিদিন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট সেবনের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

সয়া প্রোটিন : ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের গবেষণা অনুসারে, অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভোগা যেসব পুরুষ তিন মাস ধরে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম সয়া প্রোটিন খেয়েছিল তাদের ব্যথা হ্রাস পেয়েছিল এবং তারা আরো সহজে নড়াচড়া করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু যারা খাননি তারা এসব সুফল পাননি। অন্যান্য গবেষণায় পাওয়া যায়, সয়া খাবার খেলে নারীদের প্রদাহও হ্রাস পায়। আপনি শেক বা স্মুদিতে সয়া প্রোটিন পাউডার মেশাতে পারেন অথবা আপনার দৈনিক ডায়েটে সয়াবিন, টফু বা সয়া মিল্ক অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

মাশরুম : মাশরুমের বিভিন্ন উপাদান প্রদাহ প্রশমিত করতে সাহায্য করে, যেমন- ফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, গবেষণা অনুযায়ী। একটি বিশেষ মাশরুম হলো লায়ন’স মানি- এ মাশরুমটিরও কিছু প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে।

সাউয়েরক্রাউট : অন্ত্রের সমস্যার সঙ্গেও প্রদাহের যোগসূত্র রয়েছে, তাই প্রদাহবিরোধী ডায়েট হিসেবে সাউয়েরক্রাউট, দই ও কিমচির মতো ফার্মেন্টেড খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ফার্মেন্টেড খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতা কেবলমাত্র প্রদাহ হ্রাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, গবেষণায় দেখা গেছে যে এসব খাবার রক্তচাপও কমাতেও পারে- যদি এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

অ্যাভোকাডো : প্রদাহ হ্রাসের ক্ষেত্রে অ্যাভোকাডোর ভূমিকা প্রদাহ প্রশমনকারী অন্যান্য খাবারের তুলনায় কম হলেও এ ফলের পেছনে অর্থব্যয় করতে পারেন, কারণ এটিতে অনেক পুষ্টি রয়েছে। অ্যাভোকাডোতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট (যেমন- ক্যারোটিনয়েড ও টকোফেরল) প্রদাহ প্রশমন করে। এ পুষ্টিকর ফলটি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।

বিনস : গবেষণা বলছে যে বিনসে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা একটি শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী খনিজ, ইউ.এস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অনুযায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের মতে, বিনস রক্তে প্রাপ্ত প্রদাহের একটি ইন্ডিকেটর হ্রাস করতে পারে। প্রদাহ প্রশমনের জন্য সর্বোত্তম বিনস হলো ছোট লাল বিনস, কিডনি-আকৃতির বিনস ও পিন্টো বিনস।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট