শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮

শুদ্ধ অশুদ্ধ


প্রশ্ন: নিচের বাক্যগুলো শুদ্ধ করে লেখ।
এক নজরে সকল বোর্ডের বাক্যের শুদ্ধ প্রয়োগের উত্তর
অশুদ্ধ শুদ্ধ
১. পূর্বদিকে সূর্য উদয় হয়। পূর্বদিকে সূর্য উদিত হয়।
২.গীতাঞ্জলী পড়েছ কি ? গীতাঞ্জলি পড়েছ কি ?
৩.নদীর জল হ্রাস হয়েছে। নদীর জল হ্রাস পেয়েছে।
৪.এ কথা প্রমাণ হয়েছে। এ কথা প্রমাণিত হয়েছে।
৫.আমার এ পুস্তকের কোনো আবশ্যক নেই। আমার এ পুস্তকের কোনো আবশ্যকতা নেই।
৬.তোমার তথ্য গ্রাহ্যযোগ্য নয় তোমার তথ্য গ্রহনযোগ্য নয়।

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮

প্রবন্ধ

গ্রীষ্মের দুপুর


ভুমিকা :
গ্রীষ্মের দুপুর মানেই সূর্যের প্রচন্ড তাপদাহ। খাঁ খাঁ রোদ্দুর, তপ্ত বাতাসের আগুনের হলকা ।সবুজ পাতা নেতিয়ে পড়ার দৃশ্য। বটের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া রাখাল ছেলে। চারদিকে নিঝুম , নিস্তব্ধ,ঝিমধরা প্রকৃতি। ঘামে দরদর তৃ্ষ্ণার্ত পথিক। কবির ভাষায় :

ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে

খাল বিল চৌচির জল নেই পুকুরে।

মাঠে ঘাটে লোক নেই খাঁ খাঁ রোদ্দুর

পিপাসায় পথিকের ছাতি কাঁপে দুদ্দুর।

গ্রীষ্মের দুপুরের অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য এটি ।রুক্ষ,শুষ্ক ,বৈচিত্র্যহীন,নিপাট দিনের স্থিরচিত্র।গ্রামের কোনো পুকুরঘাটে ,কুয়োতলায়,নদীর তীরে,বিস্তীর্ন চরাচরে রোদ প্রকৃতির দিকে তাকালে গ্রীষ্মের দুপুরের রূপ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

গ্রীষ্মের দুপুরে প্রকৃতির অবস্থা :

চৈত্রের কাঠফাটা রোদে গ্রীষ্মের পদধ্বানি শোনা যায়।বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠ এলে সেই তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়।সূর্যের প্রখোর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে ওঠে।সবজির নধর পাতা খরতাপে নুয়ে পড়ে।মাঝে মাঝে ঘূর্ণি হাওয়ায় ধুলো ওড়ে, ঝরে পড়ে গাছের হলুদ পাতা।দূর আকাশে পাখনা মেলে চিল যেন বৃষ্টিকে আহবান জানায়।পাতার আড়ালে ঘুঘু পাখির উদাস–করা ডাক শোনা যায়।প্রকৃতি যেন পরিশ্রান্ত হয়ে নিঝুম মুহূর্তগুলো কাটাতে থাকে।পুকুর ঘাটে তৃষ্ণার্ত কাক, গাছের ছায়ায় পশু পাখির নি:শব্দ অবস্থান গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পরিচিত দৃশ্য।

গ্রীষ্মের দুপুরে জনজীবন :

গ্রীষ্মের দুপুর মানবজীবনেও নিয়ে আসে নিশ্চলতার আমেজ।কর্মব্যস্ত জীবনে আসে অবসাদ।মাঠে-ঘাটে জীবনের সাড়া যায় কমে।প্রচন্ড রোদের মধ্যে যারা কাজ করে, তাদের মাথায় থাকে মাখাল।কর্মমুখর দিনে গ্রীষ্মের দুপুরে সময় কিছুটা ধরিগতিতে অগ্রসর হয়। রাখাল ছেলে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।পথিকজন পথের ক্লান্তি ঘোছাতে বিশ্রামের প্রহর গোনে।নি:শব্দ প্রকৃতি আর নীরব মানূষের কাছে গ্রীষ্মের দুপুর জেন স্থির।বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন,কোথাও যেন স্বস্তি নেই,শান্তি নেই।মাঠ-ঘাটন চৌচির,নদী–জলাশয় জলশূন্য।মাঠে মাঠে ধুলোওড়া বাতাস।আগুনঢালা সূর্য,ঘর্মাক্ত দেহ,ক্লান্তি অবসাদে গ্রীষ্মের দুপুর যেন অসহনীয় হয়ে উঠে।মুহূর্তের জন্যে প্রাণ সিক্ত হতে চায়,একটু ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শ পেতে চায় মন।

গ্রীষ্মের দুপুর গ্রামজীবনে নিয়ে আসে বিশ্রামের সুযোগ।কেউ কেউ নির্জন দুপুরে দিবানিদ্রায় ঢলে পড়ে।গৃহীনিরা সংসারের কাজের একটু অবসরে বিশ্রামের সুযোগ খোঁজে।তালপাখার বাতাসে একটু প্রাণ জুড়ায়।শীতের পাটিতে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়।আমবাগানের দুষ্টু ছেলেদের আনাগোনা হয়তো বেড়ে যায়।

গ্রীষ্মের দুপুরে শহরের দৃশ্য অবশ্য অন্যরকম।প্রচন্ড রোদে রাস্তার পিচ গলতে থাকে।রাস্তায় যানবাহনের চলাচল কমে আসে।গলির ঝাঁপখোলা দোকানপাটে ঝিমধরা ভাব।ঘরেবাইরে কর্মের জগৎ হঠাৎ যেন ঝিমিয়ে আসে।অফিস পাড়ার কর্মব্যস্ততা ও এ সময় একটু শিথিল হয়ে আসে।ক্লান্তি ও শ্রান্তি ঘিরে ধরে কর্মচঞ্চল জীবনপ্রবাহকে।গ্রীষ্মের শান্ত দুপুর মনে করিয়ে দেয় ধরিত্রীর সঙ্গে মানুষের জন্ম-জন্মন্তরের সম্পর্কের কথা।অন্য এক উপলদ্ধির জগতে নিয়ে যায় মানুষকে।

উপসংহার : গ্রীষ্মের দুপুরের প্রখর তাপ প্রকৃতি ও জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাব কেবল বাহ্যিক নয় ,অভ্যন্তরীনও।রহস্যময় প্রকৃতির এ যেন এক গোপন আয়োজন। গ্রীষ্মের তপ্ত আকাশে এক সময় দেখা যায় সজল–কাজল মেঘ।নেমে আসে স্বস্তির বৃষ্টি।গ্রীষ্মের দুপুরের ঝিমধরা প্রকৃতি আর নিশ্চল স্থবির জনজীবন,শস্যহীন মাঠ,নদীর ঘাটে বাঁকা নৌকা,রোদ ঝলসানো তপ্ত বাতাসের এই পরিচিত দৃশ্যের কথা এ সময় ভুলে যায় মানুষ।




বর্ষাকাল


ভূমিকা :
বর্ষা বাংলাদেশের আনন্দ –বেদনার এক ঋতু। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দহন শেষে বর্ষা আসে প্রকৃতির আর্শিবাদ হয়ে। একটানা বর্ষণের পর পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে। বর্ষার আগমনে তাই বাংলার প্রকৃতির রূপ ও পালটে যায়। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে গ্রীষ্মের বিবর্ণ প্রকৃতি হয়ে ওঠে কোমল আর সজীব। এ সময় আকাশে সারাক্ষণ চলে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা। এমনকি দিনে কোনো কাজে মন বসে না। বর্ষাঋতুকে নিয়ে কবি লিখেছেন –

ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে
ঘন–গৌরবে নব যৌবনা বরষা
শ্যামা–গম্ভীর সরসা।

বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষাকাল :

ঋতুর গণনা হিসেবে আষাঢ়- শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল।কিন্তু বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয় বৈশাখ থেকে,চলে ভাদ্র–আশ্বিন মাস পযন্ত। সেই হিসাবে বর্ষা বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঋতু। অনেক সময় দেখা যায় শরৎকালকে স্পর্শ করে ও বৃষ্টির কোনো বিরাম নেই।বর্ষার আগমনে তৃষিত পৃথিবী সিক্ত–শীতল হয়ে যায়।
মানুষ,জীবজন্তু,গাছপালা,পশুপাথি সব যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। নদীনালা,খালবিল,মাঠঘাট পানিতে ভরপুর হয়ে যায়।ফোটে কেয়া, কদম ফুল।বর্ষা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ।গাছপালা নতুন পত্রপল্লবে ভরে যায়,উর্বর হয়ে ওঠে ফসলের ক্ষেত।সুখী গৃহবাসী মানুষের কাছে বর্ষার এই ভরভরান্ত দৃশ্য খুবই আনন্দের।ছোট ছেলেমেয়েরা কলার ভেলা বা কেয়াপাতার নৌকা ভাসিয়ে আনন্দ করে।বৃদ্ধরা ঘরে বসে পান–তামাক খায়।কেউবা খোশ গল্পে মেতে ওঠে।

বর্ষাঋতু সাধারণ দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুবই দু:খের।কারণ,অনেক সময় টানা বর্ষণে খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারে না।তাদের আয়–রোজগার বন্ধ থাকে,ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায়।ফলে তাদের দুখ-কষ্টের সীমা থাকে না।অতিবৃষ্টির ফলে নদীভাঙনে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।কৃষেকের ফসলের জমি ভেসে যায়,খেতের ফসল নষ্ট হয়।বানবাসি মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখলে মনে হয় ,বর্ষা এসব মানুষের জীবনে দুর্যোগ ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।

বর্ষার রূপ : বর্ষায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রূপ অন্যরকম হয়ে যায়।আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা চলতে থাকে। কখনো বা আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামে।দু’ তিন দিন হয়তো সূর্যের দেখাই মেলে না।কখনো কখনো শোনা যায় মেঘের গর্জন।একটানা বৃষ্টিতে কোথাও হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে ওঠে ছেলে-বুড়ো।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন –

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে

ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাইরে।’

বর্ষায় পল্লির রূপ :

বর্ষায় পল্লির মাঠ–ঘাট বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়।নদীর দুকূল ছাপিয়ে বর্ষার পানি গ্রামে প্রবেশ করে ।রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়।নৌকা ছাড়া অনেক জায়গায় চলাফেরা করা যায় না।তখন গ্রামগুলোকে মনে হয় নদীর বুকে জেগে ওঠা এক একটা দ্বীপ।বর্ষায় পল্লির দৃশ্য সত্যি অপূর্ব।

বর্ষার অবদান :
বর্ষাকালে আমাদের দেশে কেয়া,কামিনী,কদম, জুঁই,টগর,বেলি,চাঁপা প্রভৃতি ফুলের সুগন্ধে চারপাশ সুরভিত হয়ে ওঠে।অর্থকরী ফসল পাট তখন কৃষকের ঘরে আসে।আউশ ধানের মৌসুম তখন।পেয়ারা,কলা,চালকুমড়া,ঝিঙা,করলা,ঢ়েঁড়শ বরবটি ইত্যাদি ফল ও তরকারি বর্ষারই অবদান ।বর্ষাকালে আমরা প্রচুর মাছ পেয়ে থাকি।এ সময়ে নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত খুব সহজ হয়।

উপসংহার :বর্ষাঋতুর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একটা নিবিড় আত্নীয়তা আছে।সে যোগ কেবল ব্যবহারিক নয়,অন্তরেরও।বর্ষায় বাংলার মানুষের অন্তরও সিক্ত–স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে।প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য মানুষের মনেও গভীর প্রভাব ফেলা যায়।



মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

সাধু চলিত ভাষার পাচঁটি বৈশিষ্ট্য লিখ




প্রশ্ন: সাধু ও চলিত ভাষার মৌলিক পার্থক্যগুলি লেখ ।
প্রশ্ন : সন্ধি ও সমাস কী ? সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য কী ? উদাহরণসহ লিখুন।

সন্ধি: দুটি শব্দ মিলিয়ে একটি শব্দে পরিণত হওয়াকে বা পরস্পর সন্নিহিত দু‘ বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
যেমন, সিংহাসন = সিংহ + আসন

সমাস: বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে ।
যেমন, বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন
সন্ধি ও সমাসের দৃষ্টান্তসহ পাঁচটি মূল পার্থক্য নিচে দেয়া হলোঃ

সাধু ও চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য

নং সাধু ভাষা চলিত ভাষা
১ যে ভাষা ব্যাকরণের নিয়মকানুর পুরোপুরিভাবে মেনে চলে, তাকে সাধু ভাষা বলে। ১.বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহৃত বা মৌখিকভাষাকে চলিত ভাষা বলে।
২. সাধু ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী। ২. চলিত ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী নয়।
৩. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে। ৩ চলিত ভাষায় তদ্ভব, অর্ধতৎসম, ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
৪. সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়। ৪ চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল।
৫. সাধু ভাষা নীরস ও প্রাণহীন ৫.চলিত ভাষা সরস ও জীবন্ত।
৬. সাধু ভাষা কৃত্রিম ৬ চলিত ভাষা কৃত্রিমতা বর্জিত।
৭. গদ্য, সাহিত্য, চিঠিপত্র ও দলীল লিখনে সাধু ভাষার ব্যবহার অধিক। ৭.চলিত ভাষা বক্তৃতা, সংলাপ, আলোচনা ও নাট্য সংলাপের জন্য উপযুক্ত।
নং সন্ধি সমাস
১.পরস্পর সন্নিহিত দু বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে ।যেমন, বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয় । । ১.পরস্পর অর্থ সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদের একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে । যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন ।
২. সন্ধি তিন প্রকার। যথাঃ স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জন্সন্ধি ও বিসর্গ সন্ধি । ২.সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাস ।
৩. সন্ধি ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়। ৩ সমাস ব্যাকরণের রুপতত্ত্বে আলোচিত হয়।
৪. সম্পর্ক শূন্য হলে সন্ধি হয় ।যেমন- মিথ্যা + উক = মিথ্যুক ৪ সম্পর্ক শূন্য হলে সন্ধি হয় কিন্তু সমাস হয় না।যেমন, জমা ও খরচ = জমা-খরচ।
৫. সন্ধিতে বিভক্তি লুপ্ত হয় না । যেমন, হিম + আলয় = হিমালয়, এখানে ‘আ‘ বিভক্তি লুপ্ত হয়নি। ৫.সমাসে বিভক্তি লুপ্ত হয় ।যেমন, ছাত্রের বৃন্দ = ছাত্রবৃন্দ। এখানে ‘র‘ বিভক্তি লুপ্ত হয়ে ছাত্রবৃন্দ হয়েছে।

প্রবন্ধ লেখার নিয়ম কানুন



প্রবন্ধ

রচনা বা প্রবন্ধ লেখার নিয়ম কানুন প্রবন্ধ রচনা রচনা বলতে প্রবন্ধ রচনকে বোঝায়।

‘রচনা’ শব্দের অর্থ কোনো কিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তোলার নামই রচনা । রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা , চিন্তার ধারাবাহিকতা , সংযত বর্ণনা , ভাষার প্রঞ্জলতা ও যুক্তির সৃশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে।

‘প্রবন্ধ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন। ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে । প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

শিক্ষার্থীদের বেলায় রচনা ও প্রবন্ধ কথাটি সমার্থক। শিক্ষার্থীদের রচনায় নতুন কোনো ভাব বা তত্ত্ব থাকে না।একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা মনের ভাব বা বক্তব্যকে প্রকাশ করে। রচনা বা প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারে। এতে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলার দক্ষতা জন্মে। বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য যথার্থ শব্দ প্রয়োগ এবং উপমা, অলংকার ইত্যাদির ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষর্থী সচেতন হয়ে উঠে। প্রকাশের জড়তা কাটিয়ে ওঠা ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবন্ধ- রচনার অনুশীলন প্রয়োজন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি ,অভিজ্ঞতা , ব্যক্তিত্বের প্রকাশের জন্য প্রবন্ধ – রচনা অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই।

রচনার বিভিন্ন অংশ

রচনার প্রধান অংশ তিনটি – ক. ভুমিকা , খ. বিষয়বস্তু, গ.উপসংহার ।

ক.ভুমিকা :

এটি রচনার প্রবেশপথ। একে সূচনা , প্রারম্ভিকা বা প্রাক – কথনও বলা চলে। এতে যে বিষয়ে রচনা হবে, তার আভাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভূমিকা সংক্ষিপ্ত হওয়াই উচিত।

খ. বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য :
বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ।এ অংশে রচনার মূল বিষয়বস্তুর সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্ট করতে হয় ।বিষয় বা ভাবকে পরিস্ফুট করার জন্য প্রয়োজনে ছোট ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা যেতে পারে।তবে লক্ষ রাখতে হবে,অনুচ্ছেদগুলোর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য এ অংশে প্রয়োজনে উদাহরণ ,উপমা , উদ্ধৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

গ. উপসংহার:
বিষয়বস্তু আলোচনার পর এ অংশে একটা সিদ্ধান্তে আসা বলা হয় বলে এটাকে ‘উপসংহার ’ নামে অভিহিত করা হয়।এখানে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত বা অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

রচনার শ্রেণিবিভাগ :

বিষয়বস্তু অনুসারে রচনাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ক. বর্ণনা মুলক রচনা,থ.চিন্তামূলক রচনা।

বর্ণনামূলক রচনার সাধারণত স্থান,কাল,বস্তু,ব্যক্তিগত স্মৃতি –অনুভুতি ইত্যাদি বিষয়ে থাকে।ধান, পাট, শরৎকাল,কাগজ. টেলিভিশন,বনভোজন, শৈশবস্মৃতি ইত্যাদি রচনা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।চিন্তা মূলক রচনায় থাকে সাধারণত তত্ত্ব,তথ্য, ধ্যান–ধারণা,চেতনা ইত্যাদি।শ্রমের মর্যাদা,বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার,পরিবেশদূষণ,অধ্যবসায়,সত্যবাদিতা,চরিত্রগঠন প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনার মধ্যে পড়ে।

প্রবন্ধ- রচনার কৌশল :

১.বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি,রং,ধ্বনি,স্বাদ,গন্ধ,অনুভুতি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে ছবির মতো ফুটিয়ে তুলতে হবে।

২.বর্ণনামূলক রচনা লেখার সময় সময়সীমা এবং পরিসরের কথা মনে রেখে বিশেষ কিছু দিক বেছে নিতে হয় । সেগুলির সাহায্যে মূল বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয় ।

৩. রচনা লেখার সময় পরম্পরা বা ধারাবাহিকতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।চিন্তাগুলো যেন এলোমেলো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। জানা বিষয় ছাড়াও অনেক সময় অজানা বিষয় নিয়ে রচনা লিথতে হতে পারে।বিষয়ের ধারণাগুলো একটির পর একটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ভাবের কোনো অসংগতি না থাকে।

৪.শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রচনার আকার সাধারণত নির্দিষ্ট পরিসরের হয়ে থাকে ।পরিমিত পরিসরে তাই রচনার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অযথা বিষয়কে প্রলম্বিত করা ঠিক নয়। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। এক কথায় রচনা খুব ছোট বা খুব বড় হওয়া উচিত নয়।
৫.প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সন্ধি, সমাসবদ্ধ পদ, অপরিচিত বা অপ্রচলিত শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করা ভালো। বাগাড়ম্বর বা অলংকারবহুল শব্দ ব্যবহার করা হলে অনেক সময় বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষারীতির মাধ্যমে রচনাকে যথাসম্ভব রসমন্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করতে হয়।

প্রবন্ধ রচনায় দক্ষতা অর্জনের উপায় :

প্রবন্ধরচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো সহায়ক হতে পারে :
১. প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর প্রবন্ধ বা রচনা পড়তে হবে।পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ, সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে নানা বিষয়ের ধারণা জন্মায় এবং শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়।এতে লেখা সহজ হয়ে ওঠে।

২. প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।প্রবন্ধের বিষয়বস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ,প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই।একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে,সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

৩.ভাষারীতিতে সাধু এবং চলিত যেন মিশে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।অযথা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য,উদ্বৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪.প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও নিজের বক্তব্যকে আরো জোরালো করার জন্য প্রবাদ- প্রবচন,কবিতার পঙক্তি উদ্বৃতি ইত্যাদি সন্নিবেশ করা চলে।

৫. নিজের অভিজ্ঞতা , শিক্ষা, চিন্তাশক্তি,পঠন- পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপন কৌশল ইত্যাদি প্রয়োগ করে প্রবন্ধকে যথাসম্ভব হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করা উচিত।

বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য

ভূমিকা :
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীতও বসন্ত। এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে। বাংরার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল আলপনা আঁকে অফুরন্ত সৌন্দর্যের।তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে হৃদয়।গ্রীষ্মের দাবদহ,বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি,শরতের আলো–ঝলমলে স্নিগ্ধ আকাশ,হেমন্তের ফসলভরা মাঠ,শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করেছে।

ঋতুচক্রের আবর্তন :
বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান। এ দেশের উত্তরে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা ,দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর। সেখানে মিলিত রয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা ।মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে করে উর্বর , ফুল ও ফসলে করে সুশোভিত। নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি ।সে মাটির প্রাণরসে প্রাণ পায় সবুজ বন- বনানী, শ্যামল শস্যলতা। তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরূপ। নব নব সাজে সজ্জিত হয়ে এ দেশে পরপর আসে ছয়টি ঋতু।এমন বৈচিত্রময় ঋতুর দেশ হয়তো পৃথিবীর আর কোথা ও নেই।

ঋতু পরিচয় :
বর্ষপঞ্জির হিসেবে বছরের বার মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু।বৈশাখ –জৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল,ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল,কার্তিক অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল,পৌষ–মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন–চৈত্র বসন্তকাল ।তবে ঋতুর পালাবদল সবসময় মাসের হিসেব মেনে চলে না।তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না।অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু,আগমন ঘটে নি:শব্দে নতুন কোন ঋতুর।প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা- যাওয়া ।

গ্রীষ্ম :
ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। প্রচন্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়। নদী-নালা খাল –বিল শূকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের হলকা ছুটতে থাকে। ক্লান্তি আর তৃঞ্চায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের। কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ্য আসে ফলের সম্ভার নিয়ে। আম,জাম,কাঁঠাল,আনারস,লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।

বর্ষা:
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা।আকাশে দেখা দেয় সজল-কাজল মেঘ।অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি।পৃথিবীতে প্রাণের সাড়া।আষাঢ়- শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা।কথনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল,পুকুর -নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে। বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়।

সে রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় :
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর
কালি –মাখা মেঘে ওপারে আাঁধার ঘনিয়াছে দেখ চাহি রে।

বর্ষায় বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়।নদীতে দেখা দেয় ভাঙন।বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা।এমনকি শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে।বর্ষায় গরিব মানুষের দু:খ–কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।

শরৎ :
শরৎকাল বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু।বর্ষার বৃষ্টি– ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাম থাকে নীল।শিমুল তুলার মত সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে।এ সময় শিউলি ফুল ফোটে,নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল।নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরুপ ও মনলোভা। ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।

হেমন্ত :
হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল–সমৃদ্ধ ঋতু।তখন সোনার ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে।কৃষকের মুখে থাকে হাসি।কাস্তে হাতে ধান কাটাতে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুণ ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে।এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায়।

শীত :
শীত বাংলাদেশের হিমশীতল ঋতু।শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে।শতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না।শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষও প্রাণিকুল।শতের প্রচন্ডতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে।দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। শীতে বেশি কষ্ট পায় আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ ।শীত কেবল হীমশীতল বিবর্ণ ঋতু নয়।শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে। গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা –পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় ।

বসন্ত :
বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ ।শীতের রুক্ষ,বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের সম্ভার নিয়ে।বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুনসাজে সজ্জিত হয়।পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মার্ধুয সৃষ্টি করে ।

উপসংহার:
বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভুমি।ঋতু পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় রূপ। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন,শরতের কাশফুল,হেমন্তের নবান্নের উৎসব,শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প–পল্লব ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপণী।প্রকৃতির এমন বৈচিত্রময় রূপ পৃথিবীর আর কোথাওকি আছে ?