মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৯

নাটক ‍সিরাজউদ্দৌলা


সৃজনশীল

উদ্ধৃতি:-
রুধিলা বাসবত্রাস...
...ধর্ম পথগামী
হে রাক্ষস রাজানুজ, বিখ্যাত জগতে
তুমি কোন ধর্মমতে, কহ দাসে, শুনি
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি?

ক. সিরাজউদ্দৌলা নাটকে কয়টি দৃশ্য রয়েছে?
খ. ‘লুত্ফা, এত দেয়াল কেন বলো তো’ বক্তব্যটির তাত্পর্য কী?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘রাক্ষসরাজানুজ’-এর কর্মের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের কোন কোন চরিত্রের কর্মের সাদৃশ্য আছে; ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘বাসবত্রাস-এর জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিগত প্রেম নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে সমভাবে বিরাজিত। মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
উত্তর-ক: সিরাজউদ্দৌলা নাটকে ১২টি দৃশ্য রয়েছে।

উত্তর-খ: ‘লুত্ফা, এত দেয়াল কেন বলো তো’ বক্তব্যে সিরাজউদ্দৌলার শাসনব্যবস্থার নানা বাধাবিপত্তির কথা বোঝানো হয়েছে।
নবাব আলীবর্দির মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসেন। সেই থেকে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য নানা রকম ষড়যন্ত্র করা হয়, যাতে নবাবের বিশ্বস্ত লোকেরা জড়িত ছিল। এসব ষড়যন্ত্র, বাধাবিপত্তির কিছু নবাব ভেঙে দেন। কিছুটা তিনি পার হয়ে যান। কিন্তু তারপরও চারপাশে থেকে যায় অনেক ষড়যন্ত্রের জাল। এ জন্য এক অসহায় মানুষ হয়ে তিনি তাঁর স্ত্রী লুত্ফাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেন।
উত্তর-গ: উদ্দীপকে বর্ণিত ‘রাক্ষসরাজানুজ’ -এর কর্মের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মীর জাফর, রাজবল্লভ, জগেশঠ এবং রায়দুর্লভ চরিত্রের কর্মের সাদৃশ্য রয়েছে। সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। নবাব আলীবর্দি খাঁর মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসেন। তিনি সিংহাসনে বসার পর ইংরেজদের নানা কুটিলতা ধরে ফেলেন এবং বাংলায় তাদের ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এতে করে ইংরেজরা তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মীর জাফর, রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ এঁরা বাংলার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হয়েও বাংলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তাঁরা ইংরেজদের সঙ্গে একজোট হন। এঁরা নবাবকে সাহায্য করার মিথ্যা আশ্বাস দেন। এর ফলে তাঁরা পলাশীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও কেউ যুদ্ধ করেননি। এতে নবাবের করুণ পতন হয়।
উদ্দীপকের ‘রাক্ষসরাজানুজ’ বলতে বিভীষণকে বোঝানো হয়েছে, যিনি রাম-লক্ষ্মণের পক্ষ নিয়ে নিজের জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। অর্থাত্ রাক্ষসরাজানুজের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মন্ত্রিপরিষদের কর্মের সাদৃশ্য রয়েছে।

উত্তর-ঘ: সিকান্দার আবু জাফর রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকটি করুণ রসাত্মক; এক অপরিসীম যন্ত্রণাদগ্ধ পরিণতির রচনা। এক অনিবার্য ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আপন লক্ষ্যে অবিচল থাকার মধ্য দিয়ে লেখক সিরাজউদ্দৌলাকে এক আলোকসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আলীবর্দি খাঁ তাঁর মৃত্যুর সময় বাংলার সিংহাসনের দায়িত্ব দিয়ে যান সিরাজউদ্দৌলাকে। সিংহাসনে বসার পর সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের নানা কুটিলতার কথা জানতে পারেন। এ কারণে তিনি ইংরেজদের এ দেশে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এ ছাড়া বাংলার মুক্তির জন্য সিরাজ প্রাণপণ চেষ্টা করেন। পুনরায় ইংরেজরা বাংলার চাষিদের ওপর নীল চাষ করার জন্য অত্যাচার চালালে নবাব তাঁর দোষ স্বীকার করে নেন। তিনি মনে করেন, তাঁর নিজের ভুলের কারণে তিনি বাংলার প্রজাসাধারণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করতে পারেননি। সিরাজের মধ্যে জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিগত প্রেম বিদ্যমান ছিল। নবাবের বিরুদ্ধে যখন তাঁর আত্মীয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, তখন নবাব তা জানা সত্ত্বেও তাঁর মানবিক গুণাবলি থেকে তাদের শাস্তির বিধান করতে পারেননি। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পরও একজন সামন্ত নবাব থেকে জনতার শক্তিতে জাগ্রত হওয়ার বিশ্বাস নিয়ে তাঁকে দেশপ্রেমিক নেতায় পরিণত করেছে। তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্তেও বাংলার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন। উদ্দীপকের ‘বাসবত্রাস’ তথা মেঘনাদের মধ্যেও ছিল জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিগত প্রেম। রাম-লক্ষ্মণ রাক্ষসপুরী আক্রমণ করলে মেঘনাদ তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তিনি পরাজিত হন। তিনি আমৃত্যু রাক্ষসপুরীকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। সুতরাং ‘বাসবত্রাস-এর জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিগত প্রেম নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে সমভাবে বিরাজিত’—উক্তিটি যথার্থ।
গুরুত্বপূর্ন চরিত্র সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক থেকে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়ের কারণ; মোহনলাল, মীরমর্দান, রাইসুল জুহালা; বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগেশঠ, উমিচাঁদ, মোহাম্মদী বেগ, ক্লাইভ, ঘসেটি বেগম ইত্যাদি চরিত্রের ওপর উদ্দীপক থাকতে পারে।(3rem = 48px)