মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় বহুনির্বাচনী


বহুনির্বাচনী

কবিতার বহুর্নিবাচনী প্রশ্ন উত্তর :

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
প্রশ্ন : নুরলদীনের সারাজীবন কোন শ্রেণির সাহিত্যকর্ম ?
উত্তর : নাটক
প্রশ্ন: দীর্ঘ দেহ নিয়ে নুরুলদীনকে কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর : মরা আঙিনায়
প্রশ্ন: কৃষক নেতা নুরলদীন কোন অঞ্চলে সামন্ত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনি পরিচালনা করেন ?
উত্তর : রংপুর দিনাজপুর
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় উল্লিখিত চাঁদ কিসের প্রতীক ?
উত্তর : মুক্তির
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনকে নির্দেশ করে কোন পঙক্তিটি ?
উত্তর: যখন আমার কন্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়
প্রশ্ন: কাল ঘুম যখন বাংলার- কাল ঘুম কোন অর্থ নির্দেশ করে ?
উত্তর : চিরনিদ্রা
প্রশ্ন: নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ,... নষ্ট,... নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার পঙক্তিটির শূন্যস্থানে কী হবে ?
উত্তর : নদী ও মাঠ
প্রশ্ন: নূরলদীন ছিলেন একজন-
উত্তর: কৃষকনেতা
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় রক্ত ঝরে যাওয়া বলতে কী বোঝানো হযেছে ?
উত্তর : মুক্তি সংগ্রামে বাঙালির আত্মত্যাগকে
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়- কবিতাটিতে নূরলদীন কখন জনতাকে ডাক দিবে-
উত্তর : কাল পূর্ণিমায়
প্রশ্ন: নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার চরণ সংখ্যা কত ?
উত্তর : ৪২
প্রশ্ন: নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় প্রথম অংশে কোন ধরনের বিষয় ফুটে উঠেছে ?
উত্তর : প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য
প্রশ্ন: কৃষক নেতা নূরলদীন ডাক দিয়েছিল কত খ্রিষ্টাব্দে ?
উত্তর : ১৭৮২
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় শেষ চরণ কোনটি ?
উত্তর : দিবে ডাক জাগো বাহে; কোনঠে সবায় ?
প্রশ্ন: সৈয়দ শামসুল হকের নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কেন ?
উত্তর : ২৫ এ মার্চের পর পাকিস্তানিদের নারকীয় তান্ডব
প্রশ্ন: এখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়- চরণটির মর্মার্থ কোনটি ?
উত্তর : শত্রুর অত্যাচার ও শোষণ
প্রশ্ন: অশ্রুপাত শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর : সবকয়টি
প্রশ্ন: অশ্রু শব্দটি কোন ভাষার শব্দ ?
উত্তর : সংস্কৃত
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় নূরলদীনের ডাকে কত বঙ্গাব্দে বাংলার মানুষ জেগে উঠেছিলেন ?
উত্তর : ১১৮৯
প্রশ্ন: সৈয়দ শামসুল হক কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?
উত্তর : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতাটি কিসের প্রস্তাবনাংশ ?
উত্তর : কাব্য নাটকের
প্রশ্ন: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কোন ধরনের রচনা ?
উত্তর : কাব্যনাটক
প্রশ্ন: জাগো, বাহে, কোনঠে সবাই- কোন কবিতার অংশবিশেষ ?
উত্তর : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
প্রশ্ন: মানুষের বন্ধ দরজায় কে হঠাৎ হানা দেয় ?
উত্তর: অতীত
প্রশ্ন: স্তব্ধতার দেহ ছিড়ে কোন ধ্বনি ? কোন.... ? কিসের.... ? পঙক্তিটির শূন্যস্থানে কী হবে ?
উত্তর: শব্দ, প্রপাত
প্রশ্ন: নিচের কোনটি সৈয়দ শামসুল হকের নাটক ?
উত্তর : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
প্রশ্ন: প্রপাত শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর : নির্ঝরের পতন স্থান
প্রশ্ন: নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় নূরলদীন কী বলে ডাক দেবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে ?
উত্তর: জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়
প্রশ্ন: নুরলদীন মূলত কাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন ?
উত্তর : ইংরেজদের বিরুদ্ধে
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় নূরলদীন একদিন কোথায় ডাক দিয়েছিল ?
উত্তর : রংপুরে
প্রশ্ন: নুরলদীন বাংলার মানুষকে আবার ডাক দেবে কেন ?
উত্তর : জেগে উঠতে
প্রশ্ন: সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে নিচের কোনটি সঠিক ?
উত্তর : তিনি বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রযোজক ছিলেন
প্রশ্ন: ১১৮৯ বঙ্গাব্দ-
উত্তর : ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দ
প্রশ্ন: নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার- চরণটিতে কী ফুটে উঠেছে ?
উত্তর : বিরুদ্ধ পরিবেশ
প্রশ্ন: অতীত হঠাৎ কোথায় হানা দেয় ?
উত্তর : বন্ধ দরজায়
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতা অবলম্বনে নূরলদীন ডাক দিলে অভাগা মানুষ জেগে উঠবে- তাদের জেগে ওঠাকে কবি কিসের তুলনা করেছেন ?
উত্তর : পাহাড়ি চলের মতো
প্রশ্ন: কবি নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কোন শ্রেণির মানুষের জেগে ওঠার কথা বলেছেন ?
উত্তর : শ্রমজীবী
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় নূরলদীনকে কোন বৈশিষ্ট্যে ফুটিয়ে তুলেছেন ?
উত্তর : প্রতিবাদী
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কতটি লোকালয়ের কথা উল্লেখ আছে ?
উত্তর : ঊনসত্তর হাজার
প্রশ্ন : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কাব্যনাটকটির রচয়িতা কে ?
উত্তর : সৈয়দ শামসুল হক
প্রশ্ন : মাগো ওরা বলে সবার মুখের ভাষা কেড়ে নেবে। এই চরণ দুটির সাথে সাদৃশ্য রয়েছে নিচের কোন চরণটিতে ?
উত্তর : যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়
প্রশ্ন : নূরলদীনের বাড়ি ছিল কোন জেলায় ?
Right Answer : রংপুর
প্রশ্ন : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার পটভূমি কোনটি ?
উত্তর : কৃষক বিদ্রোহ
প্রশ্ন : কবির শিল্পভাবনায় নূরলদীন ক্রমান্বয়ে কিসে পরিণত হয়েছে ?
উত্তর: প্রতিবাদের প্রতীকে
প্রশ্ন : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়- কবিতায় নূরলদীন কিসের বিরোধী ছিলেন ?
উত্তর : সাম্রাজ্যবাদে
প্রশ্ন : অতি অকস্মাৎ স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি ? চরণটিতে কিসের ইঙ্গিত পাওয়া যায় ?
উত্তর : জাগরণের
প্রশ্ন : বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা- কার রচনা ?
উত্তর : সৈয়দ শামসুল হক
প্রশ্ন: ইতিহাসে ক্ষুদিরাম একজন বিপ্লবী চেতনার প্রতীক।ক্ষুদিরামের সঙ্গে নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কার সাদৃশ্য রয়েছে ?
উত্তর : নূরলদীনের
প্রশ্ন : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কোন চাঁদের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরr : পূর্ণিমার
প্রশ্ন : হঠাৎ নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস দিয়ে কী দেখা যায় ?
উত্তর : বড় চাঁদ
প্রশ্ন : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কেন ?
উত্তর : সাহসী ও সংগ্রামী মানুষ বলে
প্রশ্ন : নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিল কত সনে ?
উত্তর : ১১৮৯
প্রশ্ন: নূরলদীনের সারাজীবন কী ধরনের রচনা ?
উত্তর : কাব্যনাটক
প্রশ্ন: নূরলদীনের বাড়ি কোথায় ?
উত্তর : রংপুর
প্রশ্ন: নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় নূরলদীন কাদের জেগে ওঠার আশায় ডাক দিবেন ?
উত্তর : অভাগা মানুষ
প্রশ্ন : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় বন্ধ দরজা বলতে মানুষের কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তর : চেতনা
প্রশ্ন : ১১৮৯ সনে কৃষকনেতা নূরলদীন কিসের ডাক দিয়েছিলেন ?
উত্তর : বিদ্রোহের
প্রশ্ন : সৈয়দ শামছুল হকের সাহত্যে গঠনশৈলীর ক্ষেত্রে কোর ভাবটি পোষণ করে?
উত্তর : নিরীক্ষাপ্রিয় মনোভাব
প্রশ্ন : নূরুলদীনের সারাজীবন কোন ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর : কাব্যনাটক
প্রশ্ন: জাগো বাহে কোনঠে সবায় এটি কোন এলাকার আঞ্চলিক ভাষা?
উত্তর : রংপুর
প্রশ্ন: নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কোন ধরনের মানুষ আবার জেগে ওঠে নূরুলদীনের আশায়?
উত্তর : অভাগা
প্রশ্ন: তিতুমীর এক ঐতিহাসিক চরিত্র। তিতুমীরের সঙ্গে তোমার পঠিত নূরুদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় সাদৃশ্য রয়েছে?
উত্তর : নূরুলদীনের
প্রশ্ন: মাগো ওরা বলে সবার মুখের ভাষা কেড়ে নেবে। উক্ত কবিতাংশের সঙ্গে নূরুলদীনর কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সাদৃশ্য পূৃর্ণ চরন কোনট?
উত্তর : যখন আমার কন্ঠ বাজোয়াপ্ত করে নিয়ে যায়
প্রশ্ন: নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় দালাল বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে?
উত্তর : রাজাকারদের
প্রশ্ন: যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালের আলখাল্লায় বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর : দেশের স্বাধীনতা বিরুধী শক্তিকে
প্রশ্ন: নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় অভাগা মানুষ জেগে উঠে কিসের আশায়?
উত্তর: নূরুলদীনের প্রত্যাবর্তনের আশায়
প্রশ্ন: নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতাটি কিসের প্রস্তবসাংশ
উত্তর : কাব্যনাটকের
প্রশ্ন : নূরুলদীন চরিত্রটি কোন অর্থে প্রয়োগ ঘটেছে?
উত্তর : চেতনা
প্রশ্ন : কবি নূরুলদীনের সাহস আর ক্ষোভকে অসামান্য নৈপূণ্যে কীসর সাথে মিশিয়েছেন?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের সাথে


১। শত বছরে শত সংগ্রাম শেষে
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
ক) ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় হঠাৎ নীলক্ষার নীলে কী দেখা দেয়?
খ) ‘স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ?’ পঙিক্তটি ব্যাখ্যা করো।
গ) উদ্দীপকের শেষের দুই চরণ ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন দিকটির কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) উদ্দীপকটি ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূল ভাবের সঙ্গে কতখানি সাদৃশ্যপূর্ণ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।






শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দরখাস্ত


Flowers in Chania সাধারণ দরখাস্ত লেখার নিয়ম-



তারিখ: ---------------
বরাবর
অধ্যাক্ষ,
(প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা দিবেন )

বিষয়: অনুপস্থিতি থাকায় আবেদনপত্র।
জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমি গত ইং -------- তারিখ হতে এপেন্ডিসাইটিস রোগে আকান্ত হই । শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলেজে উপস্থিতি দেওয়া সম্ভব হয় নি।

অতএব, আমার আকুল আবেদন, আমার শারিরীক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে উক্ত দিন গুলোর ছুটি মঞ্জুর করতে আপনার সদয় মর্জি হয়।

বিনীত নিবেদক
আপনার অনুগত
নাম =
শ্রেণী =
রোল =












মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মহাজাগতিক কিউরেটর ১

মহাজাগতিক

Girl in a jacket
×

মহাজাগতিক কিউরেটর
Flowers in Chania লেখক পরিচিতি:

মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৩এ ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ, জননী আয়েশা আখতার খাতুন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলায়। তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয় বগুড়ায়। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়পক পদে নিযুক্ত হন।

. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা ভাষায় রচিত সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির একচ্ছত্র সম্রাট। ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’ রচনার মাধ্যমে এ-ধারার সাহিত্য তাঁর প্রথম আবির্ভাব। বিজ্ঞানকে উপলক্ষ্য করে কল্পনার বিস্তারে অসামান্যতা তাঁর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও স্বপ্নচারী রোমান্টিক। তাঁর সাহিত্যে ও বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠা ও মানবীয় কল্পনার সম্মিলন ঘটেছে। মাতৃভূমি, মানুষ ও ধরিত্রীর প্রতি নৈতিকতা দায়বদ্ধতা তাঁর সাহিত্যিক মানসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের বিজ্ঞানমুখী তরুণ-প্রজন্মের তিনি আইডল বা আদর্শ। কিশোর উপন্যাস এবং ছোটগল্প রচনাতেও তিনি দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এবং ‘আমি তপু’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। ‘মহাকাশে মহাত্রাস’, ‘টুকুনজিল’, ‘নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’, ‘একজন আতিমানবী’, ‘ফোবিয়ানের যাত্রী’সহ অনেক পাঠকপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির তিনি সৃষ্টা। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান লেখক হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

পাঠ-পরিচিতি

============

‘জলজ’ গ্রন্থের অন্তর্গত “মহাজাগতিক কিউরেটর” গল্পটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’ তৃতীয় খণ্ড (২০০২) থেকে গৃহীত হয়েছে। “মহাজাগতিক কিউরেটর” বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলেও এতে দেশকালের প্রভাবপুষ্ট মানবকল্যাণকর্মী লেখকের জীবনদৃষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে। অনন্ত মহাজগৎ থেকে আগত মহাজাগতিক কাউন্সিলের দুজন কিউরেটর এর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর নমুনা সংগ্রহে সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীতে আগমনের তথ্য দিয়ে গল্পটির সূচনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দুজন কিউরেটরের সংলাপ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গল্পটি নাট্যগুণ লাভ করেছে। প্রজাতির যাচাই-বাছাই কালে পৃথিবীর নানা প্রাণীর গুণাগুণ কিউরেটরদের সংলাপে উঠে আসে। ‘মানুষ’ নামক প্রজাতি বিবেচনার ক্ষেত্রে কিউরেটর দুজনের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা মূলত কল্পকাহিনীর লেখকেরও মনের কথা। দুজন কিউরেটর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে মানুষের কারণেই হ্রাস ঘটে যাচ্ছে ওজোন স্তরের। মানুষই নির্বিচারে গাছ কেটে ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মানুষই নিউক্লিয়ার বোঝা ফেলছে একে অন্যের ওপর। এক পরিস্থিতিতেও তারা পৃথিবীর বুদ্ধিমান বলে কথিত। ‘মানুষ’ প্রজাতির নির্বুদ্ধিতায় তারা শঙ্কিত হয়। অবশেষে তারা পরিশ্রমী সুশৃঙ্খল সামাজিক প্রাণী পিঁপড়াকেই শনাক্ত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসেবে। ডাইনোসরের যুগ থেকে এখনো বেঁচে থাকা সুবিবেচক ও পরোপকারী পিঁপড়াকে তারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বিবেচনায় সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কল্পকাহিনির রসের সঙ্গে সমাজ, পরিবেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন লেখকের তীব্র শ্লেষ ও পরিহাসের মিশ্রণ গল্পটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।

×


বহুর্নিবাচনী প্রশ্ন:
১.পিঁপড়ারা কোন ধরনের প্রাণী ?
ক) পরিশ্রমী শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক প্রাণী
খ) মানবিকতাসম্পন্ন প্রাণী
গ) সুসভ্য প্রাণী
ঘ. বস্তুবাদী ইহজাগতিক প্রাণী
উত্তর: ক) পরিশ্রমী শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক প্রাণী

২.কোথাও কোথাও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।- কারা ?
ক) মানুষ
খ ০মৌমাছি
গ)পিঁপড়া
ঘ)নীলতিমি
উত্তর: ক) মানুষ

৩. নিচের কোন প্রাণীটির গঠনে বৈচিত্র্য নেই বলেই কিউরেটররা মনে করে ? ক ভাইরাস খ)মানুষ গ)পিঁপড়া ঘ) সাপ উত্তর: ক ভাইরাস

৪. মহজাগতি কিউরেটর গল্পে কোন প্রাণীটি তাদরে নজিস্বতা হারিয়েছে?
ক কুকুর
খ সরীসৃপ বা সাপ
গ হরিণ
ঘ মানুষ
উত্তর: ক কুকুর

৫. পরজীবী বলতে বোঝায়-
ক অন্য জীবের ভেতরে ও বাহিরে থাকে
খ অপরের জীব
গ অন্য জীবের বাহিরে থাকে
ঘ অন্য জীবের ভেতরে থাকে
উত্তর: ক অন্য জীবের ভেতরে ও বাহিরে থাকে

৬. পৃথিবীতে রয়েছে-
ক. এককোষী থেকে লক্ষ-কোটি কোষী প্রাণী
খ. এককোষী থেকে বহুকোষী প্রাণী
গ. অতিকায় বিরাট প্রাণী
ঘ. ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রাণী
উত্তর: ক. এককোষী থেকে লক্ষ-কোটি কোষী প্রাণী

৭. সঠিক বানান কোনটি ?
ক) পিপীলিকা
খ) পিপিলিকা
গ) পিপীলীকা
ঘ) পিপিলীকা
উত্তর: ক পিপীলিকা

৮. মহাজাগতিক কিউরেটর গল্পে কোনটিকে অত্যন্ত সুবিবেচক বলা হয়েছে ?
ক) মানুষ
খ) পিঁপড়া
গ)ডাইনোসর
ঘ) কুকুর
উত্তর: খ পিঁপড়া

৯. বিপদে দিশেহারা হয়না। অন্যকে বাঁচানোর জন্য অকাতারে প্রাণ দেয়। এই বৈশিষ্ট্য গুলো পৃথিবীতে কাদের বৈশিষ্টের সাথে তুলনীয়?

ক) পিঁপড়ার
খ)মানুষের
গ)গাধার
ঘ) কুকুরের
উত্তর: ক পিপঁড়ার

১০. ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাঝে মৌলিক পার্থক্য না থাকার কারণ-
ক) গঠনপ্রক্রিয়া একই
খ) চেতনা একই
গ) বোধশক্তি একই
ঘ) ক্রিয়াকর্ম একই
উত্তর: ক গঠন প্রক্রিয়া

১১। দু’জন কিউরেটরের সংলাপের মধ্য দিয়ে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পটি কী লাভ করেছে?
(ক) নাট্যগুণ (খ) হাস্যরস
(গ) কৌতুক রস (ঘ) ট্র্যাজেডি
উত্তর :নাট্যগুন

১২। পিঁপড়াকে কিউরেটররা কেন নির্বাচন করল?
(ক) ছোট বলে
(খ) কম খায় বলে
(গ) সুশৃঙ্খল বলে
(ঘ) প্রাচীনতম বলে
উত্তর : সুশৃঙ্খল বলে

১৩। কিউরেটরদ্বয় খুঁজছিল সেই সব প্রাণী যারাÑ
(র) সভ্য (রর) সমাজবদ্ধ
(ররর) আত্মত্যাগী
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
উত্তর : ঘ)

১৪। বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে কোন গ্যাসের স্তর থাকে?
(ক) হিলিয়াম (খ) ওজন
(গ) অক্সিজেন (ঘ) নাইট্রোজেন
উত্তর: ওজন স্তর

১৫। ‘গ্যালাক্সি’ শব্দের অর্থ কী?
(ক) ধূমকেতু (খ) মহাকাশ
(গ) নক্ষত্র (ঘ) ছায়াপথ
উত্তর : ঘ) ছায়াপথ










রচনা আদিবাসী নৃগোষ্ঠী

Flowers in Chania

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী



(সংকেত: আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী; বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পরিসংখ্যান; চাকমা; মারমা; তঞ্চঙ্গ্যা; গারো; রাখাইন; মনিপুরী; হাজং; সাঁওতাল; খাসিয়া; অন্যান্য; বর্তমানে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অবস্থা; উপসংহার।)

বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভাষার দেশ। এদেশের বাংলা ভাষাভাষি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙালিদের পাশাপাশি সুদীর্ঘকাল ধরে বসবাস করছে বেশ কিছু ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়। আচারে, অনুষ্ঠানে, ধর্মে, ভাষায়, সংস্কার-সংস্কৃতিতে এরা বাঙালিদের থেকে স্বতন্ত্র। এরা বাংলাদেশেরই অবিচ্ছেদ্য এবং অনিবার্য অংশ।

আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীঃ আদিবাসী এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Aborigines, শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Aborigine থেকে এসেছে যার অর্থ “শুরু থেকে” অর্থাৎ কোনো দেশে বসবাসরত আদিম জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলা হয়। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বলতে মূলত প্রধান জাতির পাশাপাশি বসবাসরত সংখ্যালগিষ্ঠ এবং অপেক্ষোকৃত অনগ্রসর জাতি বা সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পরিসংখ্যানঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৯টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যাদের বেশিরভাগই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেখা গেছে বাংলাদেশে মোট আদিবাসীদের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ জন। তবে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ৪৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং সর্বমোট ২০ লক্ষাধিক আদিবাসী আছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চাকমা, মারমা, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, মনিপুরি, গারো, হাজং, সাঁওতাল, খাসিয়া প্রভৃতি নৃ-গোষ্ঠীগুলো। এরা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার প্রভৃতি অঞ্চলগুলোতে যুগ যুগ ধরে বাস করছে।

চাকমাঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ সম্প্রদায় হলো ‘চাকমা’। চাকমারা নিজেদেরকে বলে চাঙমা। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন প্রভৃতি জেলায় এদের বাস। এরা আবার ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের নিজস্ব সামাজিক, প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা আছে যার প্রধান দায়িত্বে আছে রাজা। রাজাই চাকমাদের প্রথা, রীতি-নীতি নির্ধারণ, ভুমি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, গ্রামের কোন্দল এবং নানা সমস্যার নিষ্পত্তি করে। চাকমাদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। ফলে পুত্রসন্তানরাই কেবল পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে। কৃষি এদের প্রধান জীবিকা হলেও বর্তমানে চাকমারা চাকুরী ও ব্যবসাক্ষেত্রেও জায়গা করে নিয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে চাকমাদের স্বাক্ষরতার হার (৩৭.৭%) সবচেয়ে বেশি। এরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে আছে মাঘী পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, মধু পূর্ণিমা, ফানুস ওড়ানো প্রভৃতি। চাকমাদের অন্যতম বড় উৎসব হলো বিজু উৎসব।

মারমাঃ সংখ্যাগরিষ্ঠের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহৎ সম্প্রদায় হলো ‘মারমা’। পার্বত্য জেলাগুলোতে মারমাদের বসবাস দেখা গেলেও এরা মূলত বান্দরবনের অধিবাসী। মায়ানমার থেকে এসেছে বলে এদেরকে মারমা বলা হয়। তবে মারমা শব্দটি এসেছে ‘ম্রাইমা’ শব্দ থেকে। বান্দরবনে প্রায় ১ লাখ মারমা বাস করে। চাকমাদের মতো এদেরও সামজিক বিচার-আচারের দায়িত্ব রাজার হাতে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা হলেও মারমা মেয়েরা পৈতৃক সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকার লাভ করে। জুম চাষ, নদীর মাছ ও কাঁকড়া শিকার এবং কাপড়, চুরুট প্রভৃতি তৈরি করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হয়ে এরা চাকুরী, ব্যবসাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। মারমারা নিজস্ব ভাষায় কথা বললেও লেখার ক্ষেত্রে বর্মিজ বর্ণমালা ব্যবহার করে। মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে আছে বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, ওয়াগ্যোয়াই প্রভৃতি।

তঞ্চঙ্গ্যাঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মধ্যে তঞ্চঙ্গ্যা উল্লেখযোগ্য। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় এদের বাস। তঞ্চঙ্গ্যারা নিজেদের স্বতন্ত্র্য জাতি বলে দাবি করলেও নৃতাত্ত্বিকগণ মনে করেন এরা চাকমা জাতির একটি উপগোত্র। সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রথা, রীতি-নীতির দিক থেকে চাকমাদের সাথে এদের যথেষ্ট সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষা ইন্দো-এরিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তঞ্চঙ্গ্যারা একে ‘মনভাষা’ বলে উল্লেখ করে।

গারোঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মধুপুরের গভীর অরণ্য, অরণ্য সংলগ্ন এলাকা এবং গারো পাহাড়ের টিলায় বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী গারোদের বাস। এছাড়া নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে কিছু কিছু গারোদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। নৃতান্ত্রিকগণ মনে করেন এরা মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা। গারোরা নিজেদের আচ্ছিক মান্দি অর্থাৎ পাহাড়ের মানুষ বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। তবে যারা সমতলে বাস করে তারা কেবল মান্দি বলে পরিচয় দেয়। গারোদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। গারোদের ভাষার নাম আচ্ছিক ভাষা। তবে সমতলে বসবাসকারী গারোদের ভাষা আলাদা, তাদের ভাষার নাম মান্দি ভাষা। গারোরা স্বতন্ত্র ধর্মমতে বিশ্বাসী আর তাদের সাংস্কৃতিক উৎসব, আচার-অনুষ্ঠানের মূলে রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস। গারোদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব।

রাখাইনঃ রাখাইন সম্প্রদায় মূলত মায়ানমারের একটি জাতিগোষ্ঠী। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ, রাঙ্গামাটি ও বান্দবান জেলায় রাখাইনদের বাস। রাখাইনরা সাধারণত মগ নামে পরিচিত। রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। ফলে এদের প্রধান উৎসবগুলো হলো- বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী পালন, বৈশাখী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা প্রভৃতি। এছাড়া রাখাইনরা সংক্রান্তিতে ৩ দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব পালন করে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে। পুরুষেরা লুঙ্গি, ফতুয়া আর নারীরা লুঙ্গি, ব্লাউজ, অলংকার এবং মাথায় ফুল পরিধান করতে পছন্দ করে। রাখাইনদের বিয়েতে পুরুষদের পণ দেওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে।

মনিপুরীঃ মনিপুরীদের আদি নিবাস ভারতের মনিপুর রাজ্যে। বার্মা-মনিপুর যুদ্ধের সময় এরা এসে বৃহত্তর সিলেটে আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ময়মনসিংহেও মনিপুরীদের দেখতে পাওয়া যায়। ভাষাগত ও ধর্মীয় ভিন্নতার ফলে মনিপুরী সম্প্রদায় আলাদা আলাদা তিনটি উপ-গোষ্ঠীতে বিভক্ত। (১) বিষ্ণুপ্রিয়া, (২) মৈতৈ, (৩) পাঙন। ২০০৩ সালের এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৪০ হাজার বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী এবং ১৫ হাজার মৈতৈ মনিপুরী আছে। মনিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যাবাহী। বিশেষ করে মনিপুরী নৃত্য আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। মনিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান হচ্ছে রাসপূর্ণিমা।

হাজংঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাজং সম্প্রদায়ের দেখা মেলে নেত্রকোনা জেলায়। হা মানে মাটি আর জং অর্থাৎ পোকা। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকাজের সাথে সখ্যতার কারণে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে হাজং। বাংলাদেশে প্রায় ৩০০০ হাজং এর বাস। হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন প্রভৃতি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে এরা ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। হাজংদের নিজস্ব ভাষা আছে। হাজংদের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘প্যাক খেলা’ উৎসব। এদের কিছু অংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং কিছু অংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ভাত, মাছ, সবজি ছাড়াও কচি বাঁশের গুড়া বা মিউয়া এদের প্রিয় খাবার।

সাঁওতালঃ পূর্বভারত ও বাংলাদেশের বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সাঁওতাল। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে বিশেষত দিনাজপুর এবং রংপুরে সাঁওতালদের বাস। সাঁওতাল সম্প্রদায় আবার ১২টি উপগোত্রে বিভক্ত। এরা মাটির তৈরি ছোট ছোট ঘরে বাস করে। সাঁওতালদের প্রধান পেশা কৃষি। সাঁওতালদের প্রধান দেবতা বোংগা। এরা মূলত সূর্যের পূজা করে। সাঁওতালদের বার্ষিক উৎসবের নাম সোহরাই। এ উৎসবে সাঁওতাল মেয়েরা দলবেঁধে নাচে। সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। এছাড়া মাছ, কাঁকড়া, শুকর, মুরগি, খরগোস, গুইসাপ, ইঁদুর এবং বেজির মাংস খেতে পছন্দ করে সাঁওতালরা। সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণে ইতিহাসে এরা বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

খাসিয়াঃ বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে খাসিয়াদের বাস। মূলত ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন গভীর অরণ্যে থাকতেই পছন্দ করে এরা। বাংলাদেশে বসবাসকারী খাসিয়ারা সিনতেং গোত্রভুক্ত। খাসিয়ারা মূলত কৃষিজীবী। গভীর অরণ্যে এরা পান চাষ করে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে নারীরা বিয়ে করে বর নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে। সম্পত্তির মালিকানাও নারীরাই লাভ করে।

অন্যান্যঃ আলোচিত সম্প্রদায়গুলো ছাড়াও বাংলাদেশে ত্রিপুরা, খিয়াং, মুন্ডা, চক, লুসাই প্রভৃতি আরো কিছু কিছু ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বসবাস করে থাকে।

বর্তমানে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অবস্থাঃ অতীতে যদিও এই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত, নিগৃহীত হতো কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে সরকার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ কোটা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহায়তাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রাগসর করে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো এখন কেবল কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে না বরং তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সম্মানজনক পদে চাকুরী করছে। এছাড়া ব্যবসা, রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

উপসংহারঃ বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলো এ দেশের নাগরিক। তাই তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। বর্তমানে কিছু কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলে আরো ব্যাপক পরিসরে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, জীবনযাপন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন এবং এগুলো সংরক্ষণ করার যথাযথ ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।