মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

লালসালু


লেখক পরিচিতি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলাকথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার।
কথা শিল্পী চট্টগ্রাম জেলার ষোলোশহরে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পিতৃনিবাস ছিল নোয়াখালীতে।
তাঁর পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা
অল্প বয়সে মাতৃহীন হওয়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন্
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান হওয়ার পর তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে সহকারী বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে করাচি বেতার কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন।
এরপর তিনি কূটনৈতিক দায়িত্বে নয়াদিল্লি, ঢাকা, সিডনি, করাচি, জাকার্তা, বন, লন্ডন এবং প্যারিসে নানা পদে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল প্যারিস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য তিনি পাকিস্তান সরকারের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ই অক্টোবরে তিনি প্যারিসে পরলোক গমন করেন।

তার গল্প গন্থ: ‘নয়নচারা’ (১৯৪৬), ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ (১৯৬৫)
উপন্যাস: ‘লালসালু’ (১৯৪৮) ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪) ও কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮) তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস।
নাটকও হলো: ‘বহিপীর’, ‘তরঙ্গভঙ্গ’, ‘উজানে মৃত্যু’ ও ‘সুড়ঙ্গ’।

‘লালসালু’র প্রকাশতথ্য

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে লালসালু’ প্রথম প্রকাশিত হয় ঢাকার কমরেড পাবলিশার্স এটি প্রকাশ করে। প্রকাশক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার কথাবিতান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর,
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই উপন্যাসটির ষষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই উপন্যাসটির দশম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। নওরোজ কিতাবিস্তান ‘লালসালু’ উপন্যাসের দশম মুদ্রণ প্রকাশ করে।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘লালসালু’ উপন্যাসের উর্দু অনুবাদ করাচি থেকে প্রকাশিত হয় ‘Lal Shalu’ নামে। অনুবাদক ছিলেন কলিমুল্লাহ।
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘লালসালু’র ফরাসি অনুবাদ। L Arbre sans racines’ নামে প্রকাশিত গ্রন্থটি অনুবাদ করেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সহধর্মিণী অ্যান-মারি-থিরো।
১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে এ অনুবাদটির পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘লালসালু’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। `Tree without Roots’ নামে লন্ডনের Chatto and Windus Ltd. এটি প্রকাশ করেন। ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নিজেই এই ইংরেজি অনুবাদ করেন।


পরবর্তীকালে ‘লালসালু’ উপন্যাসটি জার্মান ও চেক ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।



চরিত্র-সৃষ্টি
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যে অসাধারণ কুশলী শিল্পী তা তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসের চরিত্রগুলি বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। ‘লালসালু’ উপন্যাসের শৈল্পিক সার্থকতার প্রশ্নে সুসংহত কাহিনিবিন্যাসের চাইতে চরিত্র নির্মাণের কুশলতার দিকটি ভূমিকা রেখেছে অনেক বেশি। ‘লালসালু’ একদিক দিয়ে চরিত্র-নির্ভর উপন্যাস। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ। শীর্ণদেহের এই মানুষটি মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ঐশী শক্তির প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য, ভয় ও শ্রদ্ধা, ইচ্ছা ও বাসনা-সবই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আর সমগ্র উপন্যাস জুড়ে এই চরিত্রকেই লেখক প্রাধান্য দিয়েছেন; বরবার অনুসরণ করেছেন এবং তার ওপরই আলো ফেলে পাঠকের মনোযোগ নিবন্ধ রেখেছেন। উপন্যাসের সকল ঘটনার নিয়ন্ত্রক মজিদ। তারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন চরিত্রের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আর তাই মজিদের প্রবল উপস্থিতি অনিবার্য হয়ে পড়ে মহব্বতনগর গ্রামের সামাজিক পারিবারিক সকল কর্মকাণ্ডে। মজিদ একটি প্রতীকী চরিত্র-কুসংস্কার, শটতা, প্রতারণা এবং অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক সে। প্রচলিত বিশ্বাসের কাঠামো ও প্রথাবন্ধ জীবনধারাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়, ওই জীবনধারার সে প্রভু হতে চায়, চায় অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হতে। এজন্য সে যে-কোনো কাজ করতেই প্রস্তুত, তা যতই নীতিহীন বা অমানবিক হোক। একান্ত পারিবারিক ঘটনার রেশ ধরে সে প্রথমেই বৃদ্ধ তাহেরের বাবাকে এমন এক বিপাকে ফেলে যে সে নিরুদ্দেশ হতে বাধ্য হয়। নিজের মাজারকেন্দ্রিক শক্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ অনুভব করে সে আওয়ালপুরের পির সাহেবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। ব্যাপারটি রক্তপাত পর্যন্ত গড়ায় এবং নাস্তানাবুদ পির সাহেবকে শেষ পর্যন্ত পশ্চাদপসরণ করতে সে বাধ্য করে। সে খালেক ব্যাপারীকে বাধ্য করে তার সন্তান-আকাঙ্ক্ষী প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে। আর আক্কাস নামের এক নবীন যুবকের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়। এ ভাবেই মজিদ তার প্রভাব এবং প্রতিষ্ঠাকে নিরঙ্কুশ করে তোলে। মহব্বতনগরে মজিদ তার প্রতাপ ও প্রতিষ্ঠা সুদৃঢ় করলেও এর ওপর যে আঘাত আসতে পারে সে বিষয়ে মজিদ অত্যন্ত সজাগ। সে জানে, স্বাভাবিক প্রাণধর্মই তার ধর্মীয় অনুশাসন এবং শোষণের অদৃশ্য বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। ফলে ফসল ওঠার সময় যখন গ্রামবাসীরা আনন্দে গান গেয়ে ওঠে তখন সেই গান তাকে বিচলিত করে। ওই গান সে বন্ধ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। রহিমার স্বচ্ছন্দ চলাফেরায় সে বাধা দেয়। আক্কাস আলিকে সর্বসমক্ষে লাঞ্ছিত অপমানিত করে। মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও নিজের জাগতিক প্রতিষ্ঠার ভিতটিকে মজবুত করার জন্যে এ সবই আসলে তার হিসেবি বুদ্ধির কাজ। সে ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তার বিশ্বাস সুদৃঢ় কিন্তু প্রতারণা বা ভণ্ডামির মাধ্যমে যেভাবেই হোক সে তার মাজারকে টিকিয়ে রাখতে চায়। এরপরও মাঝে মাঝে তার মধ্যে হতাশা ভর করে। মজিদ কখনো কখনো তার প্রতি মানুষের অনাস্থা অবলোকন করে নিজের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। একেকবার আত্মঘাতী হওয়ার কথা ভাবে। মাজার প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে কূট-কৌশল অবলম্বন করেছে তার সব কিছু ফাঁস করে দিয়ে সে গ্রাম ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবে। প্রতিষ্ঠাকামী মজিদ স্বার্থপরতা, প্রতিপত্তি আর শোষণের প্রতিভূ। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভের পর নিঃসন্তান জীবনে সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একপ্রকার শূন্যতা উপলব্ধি করে। এই শূন্যতা পূরণের অভিপ্রায়ে অল্পবয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করে সে। প্রথম স্ত্রী রহিমার মতো দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা ধর্মের ভয়ে ভীত নয়। এমনকি, মাজারভীতি কিংবা মাজারের অধিকর্তা মজিদ সম্পর্কেও সে কোনো ভীতি বোধ করে না। তারুণ্যের স্বভাবধর্ম অনুযায়ী তার মধ্যে জীবনের চঞ্চলতা ও উচ্ছলতা অব্যাহত থাকে। মজিদ তাকে ধর্মভীতি দিয়ে আয়ত্ত করতে ব্যর্থ হয়। জমিলা তার মুখে থুথু দিলে ভয়ানক ক্রুদ্ধ মজিদ তাকে কঠিন শাস্তি দেয়। তার মানবিক অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র না হয়ে তার ক্ষমতাবান সত্তাটি নিষ্ঠুর শাসনের মধ্যেই পরিতৃপ্তি খোঁজে। রহিমা যখন পরম মমতায় মাজার ঘর থেকে জমিলাকে এনে শুশ্রূষা আরম্ভ করে তখন মজিদের হৃদয়ে সৃষ্টি হয় তুমূল আলোড়ন। মজিদের মনে হয়, ‘মুহূর্তের মধ্যে কেয়ামত হবে। মুহূর্তের মধ্যে মজিদের ভেতরেও কী যেনো ওলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম হয়’। কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হয়। নবজন্ম হয় না তার। মজিদ শেষ পর্যন্ত থেকে যায় জীবনবিরোধী শোষক এবং প্রতারকের ভূমিকায়। মজিদ একটি নিঃসঙ্গ চরিত্র। উপন্যাসেও একাধিকবার তার ভয়নাক নৈঃসঙ্গ্যবোধের কথা বলা হয়েছে? তার কোনো আপনজন নেই যার সঙ্গে সে তার মনের একান্তভাব বিনিময় করতে পারে। কারণ, তাঁর সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক কেবলই বাইরের- কখনো প্রভাব বিস্তারের বা নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আরোপের- কখনোই অন্তরের বা আবেগের নয়। সে কখনোই আবেগী হতে পারে না। কারণ তার জানা আছে আন্তরিকতা ও আবেগময়তা তার পতনের সূচনা করবে। আর তাতেই ধসে পড়তে পারে তিলতিল করে গড়ে তোলা তার মিথ্যার সাম্রাজ্য। এসব সত্ত্বেও মজিদ যে আসলেই দুর্বল এবং নিঃসঙ্গ- এই সত্য ধরা পড়ে রহিমার কাছে। ঝড়ের রাতে জমিলাকে শাসনে ব্যর্থ হয়ে মজিদ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কীভাবে তরুণী বধূ জমিলাকে সে নিয়ন্ত্রণে রাখবে সেই চিন্তায় একেবারে দিশেহারা বোধ করে। এরূপ অনিশ্চয়তার মধ্যেই জীবনে প্রথম হয়ত তার মধ্যে আত্মপরাভবের সৃষ্টি হয়। নিজের শাসক-সত্তার কথা ভুলে গিয়ে রহিমার সামনে মেলে ধরে ব্যর্থতার আত্মবিশ্লেষণমূলক স্বরূপ। ‘কও বিবি কী করলাম? আমার বুদ্ধিতে জানি কুলায় না। তোমারে জিগাই, তুমি কও?’ ওই ঘটনাতেই রহিমা বুঝতে পারে তার স্বামীর দুর্বলতা কোথায় এবং তখন ভয়, শ্রদ্ধা এবং ভক্তির মানুষটি তার কাছে পরিণত হয় করুণার পাত্রে। খালেক ব্যাপারী ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র। ভূ-স্বামী ও প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী হওয়ায় তাঁর কাঁধেই রয়েছে মহব্বতনগরের সামাজিক নেতৃত্ব। উৎসব-ব্রত, ধর্মকর্ম, বিচার-সালিশসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যেখানে তার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত নয়। নিরাক-পড়া এক মধ্যাহ্নে গ্রামে আগত ভণ্ড মজিদ তার বাড়িতেই আশ্রয় গ্রহণ করে। একসময় যখন সমাজে মজিদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় তখন খালেক ব্যাপারী ও মজিদ পরস্পর বজায় রেখেছে তাদের অলিখিত যোগসাজশ। অবশ্য নিয়মও তাই। ভূ-স্বামী ও তথাকথিত ধর্মীয় মোল্লা-পুরোহিতদের মধ্যে স্ব স্ব প্রয়োজনে অনিবার্যভাবে গড়ে ওঠে নিবিড় সখ্য। কারণ দুদলের ভূমিকাই যে শোষকের। আসলে মজিদ ও খালেক ব্যাপারী দুজনেই জানে: ‘অজান্তে অনিচ্ছায়ও দুজনের পক্ষে উলটা পথে যাওয়া সম্ভব নয়। একজনের আছে মাজার, আরেকজনের জমি-জোতের প্রতিপত্তি। সজ্ঞানে না জানলেও তারা একাট্টা, পথ তাদের এক। হাজার বছর ধরেই শোষক শ্রেণির অপকর্মের চিরসাথী ধর্মব্যবসায়ীরা। তারা সম্মিলিত উদ্যোগে সমাজে টিকিয়ে রাখে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার। শিক্ষার আলো, যুক্তবুদ্ধির চর্চা ও অধিকারবোধ সৃষ্টির পথে তৈরি করে পাহাড়সম বাধা- যাতে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত থাকে বিকশিত মানব চেতনা থেকে। এরই ফলে সফল হয় শোষক। শুধু ভূস্বামী শোষক কেন, যে কোনো ধরনের শোষকের ক্ষেত্রে একথা সত্য। তারা শোষণের স্বার্থে ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। একারণেই মজিদের সকল কর্মকাণ্ডে নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছে খালেক ব্যাপারী। এমনকি মজিদের প্রভাব প্রতিপত্তিও মেনে নিয়েছে অবনত মস্তকে; যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিজের একান্ত প্রিয় প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাক দেয়া। ‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খালেক ব্যাপারীর উপস্থিতি থাকলেও সে কখনোই আত্মমর্যাদাশীল ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেনি। আমরা জানি যে, ধর্মব্যবসায়ীরা আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হিসেবে জাহির করে সাধারণ মানুষের ওপর প্রভূত্ব করে। ফলে শোষকরাও তাদের অধীন হয়ে যায়। কিন্তু শোষকদের হাতে যেহেতু থাকে অর্থ সেহেতু তারাও ধর্মব্যবসায়ীদের অর্থের শক্তিতে অধীন করে ফেলে। কিন্তু এখানে খালেক ব্যাপারীর চরিত্রে আমরা সে দৃঢ়তা কখনোই লক্ষ করি না। বরং প্রায় সব ক্ষেত্রেই মজিদের কথার সুরে তাকে সুর মেলাতে দেখা যায়। ফলে মজিদ চরিত্রের সঙ্গে সে কখনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়নি। তার অর্থের শক্তির সবসময় মাজার-শক্তির অধীনতা স্বীকার করেছে। তাঁর এই চারিত্রিক দৌর্বল্য ইতিহাসের ধারা থেকেও ব্যতিক্রমী। মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র। লম্বা চওড়া শারীরিক শক্তিসম্পন্না এই নারী পুরো উপন্যাস জুড়ে স্বামীর ব্যক্তিত্বের কাছে অসহায় হয়ে থাকলেও তার চরিত্রের একটি স্বতন্ত্র মাধুর্য আছে। লেখক নিজেই কার শক্তিমত্তাকে বাইরের খোলস বলেছেন, তাকে ঠান্ডা ভীতু মানুষ বলে পরিচিতি দিয়েছেন। তার এই ভীতি-বিহবল, নরম কোমল শান্ত রূপের পেছনে সক্রিয় রয়েছে ঈশ্বর-বিশ্বাস, মাজার-বিশ্বাস এবং মাজারের প্রতিনিধি হিসেবে স্বামীর প্রতি অন্ধ আনুগত্য ও ভক্তি। ধর্মভীরু মানুষেরা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের কারণে যে কোমল স্বভাবসম্পন্ন হয় রহিমা তারই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সমগ্র মহব্বতনগরের বিশ্বাসী মানুষদেরই সে এক যোগ্য প্রতিনিধি। স্বামী সম্পর্কে মাজার সম্পর্কে তার মনে কোনো প্রশ্নের উদয় হয় না, সে সর্বদাই নিদ্বির্ধায় মেনে নেয় স্বামীর মুখ থেকে উচ্চারিত ধর্মের সকল বিধান। মাজার সংক্রান্ত সকল কাজকর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং তার নিজের সকল গার্হস্থ্য কর্ম প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই সে একান্তভাবে সৎ এবং নিয়মনিষ্ঠ। মাজার নিয়ে যেমন রয়েছে তার ভীতি ও ভক্তি, তেমনি এই মাজারের প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবেও রয়েছে তার মর্যাদা বোধ। এই মর্যাদাবোধ থেকেই সে গ্রামের মাজার ও মাজারের প্রতিনিধি সম্পর্কে গুণকীর্তন করে, তার শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস তুলে ধরে এবং এভাবে সে নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। হাসুনির মায়ের সমস্যা যখন সে তার স্বামীর কাছে জানায় কিংবা আমেনা বিবির সংকট মুহূর্তে তার পাশে গিয়ে অবস্থান নেয় তখন তার মধ্যে মাজার-প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ কাজ করে। এ গর্ববোধ ছাড়াও এখানে সক্রিয় থাকে নারীর প্রতি তার একটি সহানুভূতিশীল মন। রহিমার মনটি স্বামী মজিদের তুলনায় একেবারেই বিপরীতমুখী। মজিদের কর্তৃত্বপরায়ণতা, মানুষের ধর্মভীরুতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগের দূরভিসন্ধি প্রভৃতির বিপরীতে রহিমার মধ্যে সক্রিয় থাকে কোমল হৃদয়ের এক মাতৃময়ী নারী। সেটি জমিলা প্রসঙ্গে লক্ষ করা যায়। তাদের সন্তানহীন দাম্পত্য-জীবনে মজিদ যখন দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব করে তখন রহিমার মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ারই সৃষ্টি হয় না। এর মূলে সক্রিয় তার স্বামীর প্রতি অটল ভক্তি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাস্তবতার প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ এবং সরল ধর্মনিষ্ঠা। কিন্তু জমিলা যখন তার সতীন হিসেবে সংসারে আসে তখনও সামাজিক গার্হস্থ্য বাস্তবতার কারণে যেটুকু ঈর্ষা সঞ্চারিত হওয়া প্রয়োজন ছিল তাও অনুপস্থিত থাকে তার ওই হৃদয়সংবেদী মাতৃমনের কারণে। জমিলা তার কাছে সপত্নী হিসেবে বিবেচিত হয় না বরং তার মাতৃহৃদয়ের কাছে সন্তানতুল্য বলে বিবেচিত হয়। এ পর্যায়ে জমিলাকে কেন্দ্র করে তার মাতৃত্বের বিকাশটি পূর্ণতা অর্জন করে যখন মজিদ জমিলার প্রতি শাসনের খড়গ তুলে ধরে। স্বামীর সকল আদেশ নির্দেশ উপদেশ সে যেভাবে পালন করেছে সেইভাবে জমিলাও পালন করুক সেটি সেও চায় কিন্তু সে পালনের ব্যাপারে স্বামীর জোর-জবরদস্তিকে সে পছন্দ করে না। স্বামীর প্রতি তার দীর্ঘদিনের যে অটল ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য এক্ষেত্রে তাতে ফাটল ধরে। এক্ষেত্রে তার ধর্মভীরুতাকে অতিক্রম করে মুখ্য হয়ে ওঠে নিপীড়িত নারীর প্রতি তার মাতৃহৃদয়ের সহানুভূতি। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে যাকে মনে হয়েছিল ব্যক্তিত্বহীন, একমাত্র আনুগত্যের মধ্যেই ছিল যার জীবনের সার্থকতা, সেই নারীই উপন্যাসের শেষে এসে তার মাতৃত্বের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিত্বময় হয়ে ওঠে। রহিমা চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখানেই লেখকের সার্থকতা। নিঃসন্তান মজিদের সন্তান-কামনাসূত্রে তার দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে আগমন ঘটে জমিলার। শুধু সন্তান-কামনাই তার মধ্যে একমাত্র ছিল কীনা, নাকি তরুণী স্ত্রী-প্রত্যাশাও তার মাঝে সক্রিয় ছিল তা লেখক স্পষ্ট করেননি। কিন্তু বাস্তবে আমরা লক্ষ করি তার গৃহে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে যার আগমন ঘটে সে তার কন্যার বয়সী এক কিশোরী। জমিলার চরিত্রে কৈশোরক চপলতাই প্রধান। এই চপলতার কারণেই দাম্পত্য সম্পর্কে গাম্ভীর্য তাকে স্পর্শ করে না। এমনকি তার পত্নী রহিমাও তার কাছে কখনো ঈর্ষার বিষয় হয়ে ওঠে না। রহিমা তার কাছে মাতৃসম বড়বোন হিসেবেই বিবেচিত হয় এবং তার কাছ থেকে সে তদ্রূপ স্নেহ আদর পেয়ে অভিমান-কাতর থাকে। রহিমার সামান্য শাসনেও তার চোখে জল আসে। তার ধর্মকর্ম পালন কিংবা মাজার-প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবে তার যেরূপ গাম্ভীর্য রক্ষা করা প্রয়োজন সে-ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো সচেতনতাই লক্ষ করা যায় না ওই কৈশোরক চপলতার কারণে। প্রথম দর্শনে স্বামীকে তার যে ভাবী শ্বশুর বলে প্রতীয়মান হয়েছিল, বিয়ের পরেও সেটি তার কাছে হাস্যকর বিষয় হয়ে থাকে ওই কৈশোরক অনুভূতির কারণেই। ধর্মপালন কিংবা স্বামীর নির্দেশ পালন উভয় ক্ষেত্রেই তার মধ্যে যে দায়িত্ববোধ ও সচেতনতার অভাব তার মূলে রয়েছে এই বয়সোচিত অপরিপক্বতা। মাজার সম্পর্কে রহিমার মতো সে ভীতিবিহ্বল নয় কিংবা মাজারের পবিত্রতা সম্পর্কেও নয় সচেতন এবং এই একই কারণে মাজারে সংঘটিত জিকির অনুষ্ঠান দেখার জন্য তার ভিতরে কৌতূহল মেটাতে কোথায় তার অন্যায় ঘটে তা উপলব্ধির ক্ষমতাও তার হয় না। সুতরাং স্বামী মজিদ যখন এসবের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তার অনুচিত কর্ম সম্পর্কে তাকে সচেতন করে, তখন সেসবের কিছু তার কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় না। সুতরাং তাকে শাসনের ব্যাপারে মজিদের সকল উদ্যোগই তার কাছে অত্যাচার কিংবা নিপীড়ন বলে মনে হয়। এবং এই পীড়ন থেকে মুক্তি লাভের জন্য মজিদের মুখে যে সে থুথু নিক্ষেপ করে সেটাও তার মানসিক অপরিপক্বতারই ফল। এমনকি মাজারে যখন তাকে বন্দি করে রেখে আসে মজিদ তখন সেই অন্ধকারের নির্জনে ঝড়ের মধ্যে ছোট মেয়েটা ভয়ে মারা যেতে পারে বলে রহিমা যখন আতঙ্কে স্বামীর ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে তখনও জমিলাকে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখা যায়। এরূপ আচরণের মূলেও সক্রিয় থাকে তার স্বল্প বয়সোচিত ছেলেমানুষি, অপরিপক্বতা। অর্থাৎ এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে একটি প্রাণময় সত্তার উপস্থিতি ঘটিয়েছেন। শাস্ত্রীর ধর্মীয় আদেশ নির্দেশের প্রাবল্যে পুরো মহব্বতনগর গ্রামে যে প্রাণময়তা ছিল রুদ্ধ, জমিলা যেন সেখানে এক মুক্তির সুবাতাস। রূদ্ধতার নায়ক যে মজিদ, ঔপন্যাসিক সেই মজিদের গৃহেই এই প্রাণময় সত্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন।

একদিকে সে নারী অন্য দিকে সে বয়সে তরুণী-দুটিই তার প্রাণধর্মের এক প্রতীকী উদ্বাসন। এ উপন্যাসে মজিদের মধ্য দিয়ে যে ধর্মতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছে তার পেছনে পুরুষতন্ত্রও সক্রিয়। সুতরাং নির্জীব ধর্মতন্ত্রের বিরুদ্ধে সজীব প্রাণধর্মের জাগরণের ক্ষেত্রে এ নারীকে যথাযথভাবেই আশ্রয় করা হয়েছে। জমিলা হয়ে উঠেছে নারীধর্ম, হৃদয়ধর্ম বা সজীবতারই এক যোগ্য প্রতিনিধি। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর পরিবার ছাড়া আরেকটি পরিবারের কাহিনি গুরুত্ব লাভ করেছে। সেটি তাহের-কাদের হাসুনির মায়ের পরিবার। এদের পিতামাতার কলহ এবং তাই নিয়ে মজিদের বিচারকার্যের মধ্য দিয়ে তাহের-কাদেরের পিতা চরিত্রটি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। উপন্যাসে এটিই একমাত্র চরিত্র যে মজিদের আধ্যাত্মিক শক্তির ব্যাপারে অবিশ্বাস পোষণ করেছে, বিচার সভায় প্রদর্শন করেছে অনমনীয় দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্ব। তার নির্ভীক যুক্তিপূর্ণ ও উন্নত-শির অবস্থান নিশ্চিতভাবে ব্যতিক্রমধর্মী। সে মজিদের বিচারের রায় অনুযায়ী নিজ মেয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে ঠিকই কিন্তু তা মজিদের প্রতি শ্রদ্ধা বা আনুগত্যবশত নয়। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই সে এ কাজ করেছে। তবে এর পরপরই তার নিরুদ্দেশ গমনের ঘটনায় এই চরিত্রের প্রবল ব্যক্তিত্বপরায়ণতা ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয় ফুটে ওঠে। এই আচরণের মধ্য দিয়ে মজিদের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদও ব্যক্ত হয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসের কাহিনি অত্যন্ত সুসংহত ও সুবিন্যন্ত। কাহিনি-গ্রন্থনায় লেখক অসামান্য পরিমিতিবোধের পরিচয় দিয়েছেন। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনির বিভিন্ন পর্যায়ে নাট্যিক সংবেদনা সৃষ্টিতে লেখক প্রদর্শন করেছেন অপূর্ব শিল্পনৈপুণ্য। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা, ধর্মতন্ত্র ও ধর্মবোধের দ্বন্দ্ব, ধর্মতন্ত্র-আশ্রয়ী ব্যবসাবৃত্তি ও ব্যক্তির মূলীভূত হওয়ার প্রতারণাপূর্ণ প্রয়াস, অর্থনৈতিক ক্ষমতা-কাঠামোর সঙ্গে ধর্মতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য নাড়ির যোগ প্রভৃতি বিষয়কে লেখক এক স্বাতন্ত্রমণ্ডিত ভাষায় রূপায়ন করেছেন। এ উপন্যাসে কেন্দ্রীয় চরিত্র শেকড়হীন বৃক্ষপ্রতিম মজিদ ধর্মকে আশ্রয় করে মহব্বতনগরে প্রতিষ্ঠা-অর্জনে প্রয়াসী হলেও তার মধ্যে সর্বদাই কার্যকর থাকে অস্তিত্বের এক সূক্ষ্মতর সংকট। এরূপ সংকটের একটি মানবীয় দ্বন্দ্বময় রূপ সৃষ্টিতে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সার্থকতা বিস্ময়কর।



pictur gallery


picture gallery

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে

--জীবনানন্দ দাশ
এই কবির দৃষ্টিতে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে বাংলা সবচেয়ে সুন্দর।
তবে এখানে সহানুভূতি দ্বারা সিক্ত বলে বিষণ্ণতা
ও কারুণ্যও আছে।
পৃথিবীতে এক স্থান আছে-সবচেয়ে সুন্দর করুণ:

সেখানে এরকম ঘাসে আবৃত মাঠ আর
এই নামের গাছ রয়েছে যেখানে।
বাংলাকে বোঝাচ্ছেন।
সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল
সেখানে গাছের না: কাঁঠাল অশ্বত্থ বট জারুল হিজল
সেখানে এখানে নাটার রংয়ের সূর্য ভোরের মেঘে উদিত হয়।
নাটার: গোলাকার ক্ষুদ্র লাল ফল
ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ
সেখানে বরুণ ও বারুণী নদীনালার স্রোতোধারায়
জল নিশ্চিত করে বাংলার প্রাণৈশ্বর্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখে।
বারুণী: হিন্দুধর্মে জলের দেবী বরুণ: বারুণীর স্বামী
বারুণী তাকে গঙ্গা-সাগরের বুকে-সেখানে বরুণ
কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল
এই ধান খোসার আবরণে থাকে সুগন্ধী চাল
আর প্রকৃতির আবরণে থাকে লক্ষ্মীপেঁচা।
প্রকৃতি ও প্রাণিকূলের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
লক্ষ্মীপেঁচা: সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীকরূপী
সেইখানে শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।
সেইখানে ধান খোসার আবরণে থাকে সুগন্ধী
চাল আর প্রকৃতির আবরণে থাকে লক্ষ্মীপেঁচা।
প্রকৃতি ও প্রাণিকূলের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
লক্ষ্মীপেঁচা: সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীকরূপী
সেইখানে লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ
হেমন্তের সোনালি ধান,
হলুদ সর্ষে ফুলকে রূপসী বাংলার শাড়ী রং
হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।
সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকার ঘাসের উপর
সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের পর-
গোবরে পোকা সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে ঘাসের উপর;
সুদর্শন উড়ে যায় ঘরে তার অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে;
শঙ্খমালা বাস্তবের কোনো নারী নয়,
রূপসী বাংলাকে তিনি হলুদ শাড়ি পরিহিতা
অপরূপা নারী হিসেবে কল্পনা করেছেন।
শঙ্খমালা নাম তার : এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে
দেবী দুর্গার বরেই বাংলা/শঙ্খমালা অপরূপা।
বিশালাক্ষী: টানাটানা চোখবিশিষ্ট ভাগ্যের দেবী দূর্গা
তারে আর খুঁজে তুমি পাবে নাকো-বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর
তাই-সে-জন্মেছে নীল বাংলার ঘাস আর ধানের ভিতর।
শব্দার্থ ও টীকা

এই পৃথিবীতে....সুন্দর করুণ-কবির চোখে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, মমতারসে সিক্ত, সহানুভূতিতে আর্দ্র ও বিষণ্ন দেশ বাংলাদেশ।
নাটা-লতাকবঞ্চ; গোলাকার ক্ষুদ্র ফর বা তার বীজ।
সেখানে ভোরের... জাগিছে অরুণ -বাংলার প্রভাতের সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা আঁকতে গিয়ে ভোরে মেঘের আড়াল থেকে গাঢ় লাল সূর্যের আলো বিচ্ছুরণ যেন ধারণ করেছে করমচা বা করমচা ফুলের রং।
বারুণী - বরুণানী। বরুণের স্ত্রী। জলের দেবী।
সেখানে বারুণী থাকে.. অবিকল জল -জলে পরিপূর্ণ এদেদেশের অসংখ্য নদী-নালা স্রোত ধারার প্রাণৈশ্বর্য ও সৌন্দর্যের রূপ আঁকা হয়েছে এই পঙ্ক্তি দুটির মধ্যে।
সেইখানে শঙ্গচিল... অস্ফুট, তরুণ-বাংলাদেশ প্রাণী আর প্রকৃতির ঐক্য ও সংহতিতে একাকার। পানের বনে হাওয়ায় যে চঞ্চলতা জেগে ওঠে সেই চঞ্চলতা সম্প্রসারিত হয় দূর আকাশের শঙ্খচিলে। আর মিষ্টি ম্রিয়মাণ তরুণ ধানের গন্ধের মতো লক্ষ্মীপেঁচাও মিলেমিশে থাকে প্রকৃতির পরিবেষ্টনীতে।
বিশালাক্ষী - যে রমণীর চোখ আয়ত বা টানাটানা। আয়তলোচনা সুন্দরী নারী।
সুদর্শন -এক ধরনের পোকা।
বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর -এখানে আয়তলোচনা দেবী দুর্গার কথা বলা হয়েছে।
পাঠ-পরিচিতি
অসাধারণ সুন্দর এই দেশ। সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যন। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাভূমি পৃথিবীর কোথাও নেই আর। অসংখ্য বৃক্ষ, গুল্ম ছড়িয়ে আছে এদেশের জনপদে-অরণ্যে। মধুকূপী, কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল তাদেরই কোনো কোনোটির নাম। এদেশের পূর্বকাশে যখন সূর্য ওঠে মেঘের আড়াল থেকে তার রং হয় করঞ্জা রঙিন। আর এদেশের প্রতিটি নদ-নদী ভরে থাকে স্বচ্ছতোয়া জলে। সেই জল ফুরায় না কখনই। জলের দেবতা অনিঃশেষ জলধারা দিয়ে সোতস্বিনী রাখে এদেশের অসংখ্য নদীকে। প্রকৃতি আর প্রাণিকুলের বন্ধনে গড়ে উঠেছে চির-অবিচ্ছেদ্য এক সংহতি। তাই হাওয়া যখন পানের বনে চঞ্চলতা জাগায় তখন দূর আকাশের শঙ্খচিল যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট লক্ষ্মীপেঁচাও মিশে থাকে প্রকৃতির গভীরে, অন্ধকারের বিচিত্ররূপ এই দেশে। অন্ধকার ঘাসের ওপর নুয়ে থাকে লেবুর শাখা কিংবা অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায়। জন্ম দেয় শঙ্খমালা নামের রূপসী নারীর হলুদ শাড়ির বর্ণশোভা। কবির বিশ্বাস, পৃথিবীর অন্য কোথায় শঙ্খমালাদের পাওয়া যাবে না। কেননা বিশালাক্ষী বর দিয়েছিল বলেই নীল-সবুজে মেশা বাংলার ভূপ্রকৃতির মধ্যে এই অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে।

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
—জীবনানন্দ দাশ
১.কোনটি সনেট ?-- এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
২. শঙ্খমালা নাম তার- কবির দৃষ্টিতে শঙ্খমালা কে/ কী ?-- বাংলার প্রকৃতি
৩.জীবনানন্দ দাশের কাব্যবৈশিস্ট্যকে কবি রবীন্দ্রনাথ কী নামে আখ্যায়িত করেছেন ?- চিত্ররূপময়
৪. সুতীর্থ কী জাতীয় রচনা ?- উপন্যাস
৫. শঙ্খমালা কোন কবির নায়িকা ?- জীবনানন্দ দাশ
৬. বাংলার প্রাকৃতিক মাধুর্য বর্ণনায় এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় কবির উপলব্ধি যে অর্থের ব্যঞ্জনা পেয়েছে--- স্বদেশপ্রীতি
৭. জীবনানন্দ দাশের মতে কাকে আর এ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না ?—শঙ্খমালাকে
৮. সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরে- রূপসী কে ?—শঙ্খমালা
৯.সুতীর্থ কার লেখা উপন্যাস ?-- জীবনানন্দ দাশ
১০ কোন কবির মাও একজন কবি ছিলেন ?-- জীবনানন্দ দাশ
১১ শঙ্খমালার শাড়ির রং কী ?-- হলুদ
১২. বন্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে কী ধরনের কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন ?- নির্জনতম কবি
১৩ এই পৃথিবীতে একস্থান আছে কবিতার বিশাল্যক্ষীর ক্ষেত্রে নিচের কোনটি প্রযোজ্য ?- দেবী
১৪. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় ব্যবহৃত নিচের কোন প্রসঙ্গটিকে পৌরাণিক বলা যায় ?- সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে
১৫. নিঃসঙ্গতার কবি বলে পরিচিত কে ?-- জীবনানন্দ দাশ
১৬. বারুণী বা জলের দেবীর উল্লেখ আছে কোন কবিতায় ?- এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
১৭. কবি জীবনানন্দ দাশকে কে চিত্ররূপময় বলে আখ্যায়িত করেছেন ?- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮. সুদর্শন মূলত কী ?-- এক ধরনের পোকা
১৯. জীবনানন্দ দাশ মূলত কী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেন ?- ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে
২০. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় বরুণ কাকে অবিরল জল দেয় ?- নদীকে
২১. ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে অবিরল কী দেয় ?- জল
২২. জীবনানন্দ দাশ রচিত উপন্যাস কোনিট ?- মাল্যবান
২৩. নীল-সবুজে মেশা বাংলার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। কারণ-- বিলালাক্ষী বর দিয়েছিল
২৪. ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ বলতে বোঝানো হয়েছে-- : প্রভাত সৌন্দর্য
২৫. জীবনানন্দ দাশের কাছে তার দেশ সুন্দর কী ?- করুণ
২৬. বাংলার নদ-নদী জলাঙ্গীরে জল দেয় কেন ?- দেবীর আদেশে
২৭. বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর পঙক্তি দিয়ে বোঝানো হয়েছে-- আয়তলোচনা দেবী দুর্গাকে
২৮. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- কবিতায় কোন ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে ?- অক্ষরবৃত্ত
২৯ নিচের কোন বানানটি ঠিক ?- জীবনানন্দ দাশ
৩০. বিশালাক্ষী চরিত্রের মাধ্যমে কবি কোন বিষয়টি তুলে ধরেছেন ?- বাঙালির দেবী বিশ্বাস
৩১. জীবনানন্দ দাশ কোন বিবাগের অধ্যাপক ছিলেন ?- : ইংরেজি
৩২. সুদর্শন উড়ে যাওয়ার মধ্যে কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে ?- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
৩৩. জীবনানন্দ দাশের জন্মসাল কত ?- ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ
৩৪. হলুদ শাড়ি লেগে থাকে কার শরীরে ?- শঙ্খমালার
Q-40: এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় কয়জন দেব-দেবীর প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে ?-- ৩
৩৫. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতানুসারে মধুকূপী ঘাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে-- সবুজ ডাঙ্গা
৩৬. শঙ্খচিল কোথাকার হাওয়ার মত চঞ্চল ?- পানের বনের
৩৭. এই পৃথিবীর এক স্থান আছে কবিতার সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে কিসে ?- মধুকূলী ঘাসে
৩৮. অন্ধকার ঘাসের ওপর কী নুয়ে থাকে ?- লেবু শাখা
৩৯. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় মূল উপজীব্য কী ?- বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য
৪০. শঙ্খচিলের চঞ্চলতার মধ্যে কোনটি ফুটে উঠেছে ?- পানের বনের হাওয়া
৪১. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় কিসের গন্ধের কথা বলা হয়েছে ?- ধানের
৪২. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় বর্ণিত রূপসীর নাম কী ?- শঙ্খমালা
৪৩. শঙ্খচিল পানের বনের মতো চঞ্চল বলতে বোঝানো হয়েছে-- প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণীয় সম্পর্ক
৪৪. সুদর্শন উড়ে যাওয়া বলতে কী বুঝানো হয়েছে ?- বাংলার রূপবৈচিত্র্য
৪৫. কোন কবি তার কবিতায় সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভবের এক জগৎ তৈরি করেন ?- জীবনানন্দ দাশ
৪৬. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবির চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশ বাংলাদেশ হওয়ার কারণ কী ?- এই দেশ প্রকৃতি ও তার অনুষঙ্গে অনন্য
৪৭. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় বাংলার যে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে ?--প্রকৃতি
৪৮. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় সবচেয়ে সুন্দর করুণ- বলতে কী বুঝানো হয়েছে ?- স্নেহময়
৪৯. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় সন্ধ্যায় বাতাসে কে উড়ে যায় ?- সুদর্শন
৫০. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- স্থানটি কেমন ?- সুন্দর সকরুণ
৫১ এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় কবির দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে-- নিসর্গ বর্ণনায়
৫২. জীবনানন্দ দাশকে নির্জনতম কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন-- বুন্ধদের বসু
৫৩. কোন কোন নদী জলাঙ্গীরে অবিরল জল দেয় ?- কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা
৫৪. বারুণী কাকে বলা হয়েছে ?- জলের দেবী
৫৫. বাংলা সাহিত্যে রুপসী বাংলার কবি হিসেবে খ্যাত কে?- জীবনান্দ দাশ
৫৬. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় ফসলের মাঠকে কী বলে উপমিত করা হয়েছে?- হলুদ শাড়ি
৫৭. ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুন কোন পাখি?- লক্ষ্মীপেঁচা
৫৮. গলুদ শাড়ী থাকে থাকে কার শরীরে- শঙ্খমালার
৫৯. ধানের গন্ধ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?- কৃষিপ্রধান বাংলাে চিত্র
৬০. নদীর তীর কাশফুলে ভরে আছে। উক্ত বিষয়টি এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতার কোন দিকটি তুলে ধরে?- সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে
৬১. এই পৃথবীতে একস্থান আছে কবিতায় অন্ধকারে কী নুয়ে থাকার কথা বল হয়েছে?- লেবুর শাখা
৬২. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতায় কোন রঙের শাড়িড় কথা বলা হয়েছে?- হলুদ

MCQ


১। গঙ্গা নদী বর্তমানে কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত
ক. বাংলাদেশ
খ. ভারত
গ. পাকিস্তান
ঘ. নেপাল

২।জীবনানন্দ দাশের পেশা হিসেবে নিচের কোনটি গ্রহণযোগ্য?
ক. কবি
খ. অধ্যাপক
গ. চিকিৎসক
ঘ. চাকরিজীবী

৩।জলের দেবী হিসেবে নিচের কোন নামটি গ্রহণযোগ্য?
ক. বরুণ
খ. অরুণ
গ. তরুণ
ঘ. বারুণী

৪।বর দানের সঙ্গে সম্পর্কিত কে?
ক. বিশালাক্ষী
খ. বারুণী
গ. শঙ্খচিল
ঘ. সুদর্শন

৫। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতা নিচের কোন নদীটিকে সমর্থন করে?
ক. পদ্মা
খ. কপোতাক্ষ
গ. বুড়িগঙ্গা
ঘ. তুরাগ

৬। জীবনানন্দ দাশ তাঁর রচনায় কোন প্রকৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন?
ক. শহর
খ. নগর
গ. বন্দর
ঘ. গ্রাম

৭।কবির জন্মভূমির নদীর জলে কোন বিষয়টি বিদ্যমান?
ক. সুবাস
খ. স্বচ্ছতোয়া
গ. সুধা
ঘ. অমৃত

৮। কবির মতে বাংলাদেশকে পৃথিবীর কী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়?
ক. সুন্দরী
খ. রানি
গ. লক্ষ্মী
ঘ. ঐশ্বর্য

৯। শঙ্খচিল ও বুনো হাওয়ার মধ্যে কোন বিষয়টি বিদ্যমান?
ক. সংহতি
খ. মধুরতা
গ. প্রেম
ঘ. প্রাণৈশ্বর্য

১০। কুসুম কুমারী দাশের ক্ষেত্রে নিচের যে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য—
i. কবি
ii. সাহিত্যিক
iii. শিক্ষক
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. i ও ii
গ. i ও iii
ঘ. ii ও iii

১১। জীবনানন্দ দাশের কবিতা যার মাধ্যমে অসাধারণ স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছে—
i. চিত্রকল্প
ii. উপমা
iii. প্রতীক সৃজন

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

১২। জীবনানন্দ দাশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলো—
i. কবি
ii. প্রাবন্ধিক
iii. কথাসাহিত্যিক
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i I ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ১৩ ও ১৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।

১৩। উদ্দীপকের প্রথম চরণে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে?
ক. প্রকৃতি চেতনা
খ. সৌন্দর্য চেতনা
গ. প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য
ঘ. মর্ত্যপ্রীতি
১৪। উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় ফুটে উঠেছে—
i. দেশপ্রেম
ii. প্রকৃতিপ্রেম
iii. মানবপ্রেম
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. i ও ii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
বাংলাদেশ অসাধারণ সুন্দর দেশ। সারা পৃথিবীর মধ্যে অনন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাভূমি পৃথিবীর কোথাও নেই আর।

১৫। উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. প্রকৃতিপ্রেম
খ. মাতৃভূমি বন্দনা
গ. সৌন্দর্যতত্ত্ব
ঘ. পৃথিবী বৈচিত্র্য

১৬। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় উপস্থাপিত হয়েছে—
i. প্রাণী ও প্রকৃতির সম্পর্ক
ii. নদীমাতৃক বাংলা
iii. দেবীর অলৌকিক ক্ষমতা

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ১৭ ও ১৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
‘বাংলা আমার আমি বাংলার
বাংলা আমার জন্মভূমি
গঙ্গা ও যমুনা পদ্মা ও মেঘনা
বহিছে যাহার চরণ চুমি’

১৭। উদ্দীপকের সঙ্গে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন চরণের সম্পর্ক রয়েছে?
ক. সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে সেখানে বরুণ
খ. কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল
গ. সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল
ঘ. সেই খানে লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুণ

১৮। ওই চরণ ও উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে—
ক. প্রকৃতিপ্রেম
খ. নদীর সৌন্দর্য
গ. ঐশ্বর্য চেতনা
ঘ. দেশপ্রেম
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ১৯ ও ২০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। কেননা মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে সে দেশের সব কিছুর সাহায্যে যে বেড়ে ওঠে। তাই মানুষের কাছে স্বদেশের সব কিছুই বড় এবং সুন্দর হয়ে ওঠে।

১৯। উদ্দীপকটি তোমার পঠিত কোন রচনার নৈকট্য লাভে সামর্থ্য?
ক. ঐকতান
খ. লোক-লোকান্তর
গ. সেই অস্ত্র
ঘ. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে

২০। নৈকট্য লাভের বিষয়টি যে দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচ্য—
ক. দেশপ্রেম
খ. জীবনবোধ
গ. মানবিকতাবোধ
ঘ. সৌন্দর্যপ্রীতি
২১। জীবনানন্দ দাশ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
ক. ১৮৯০ সালে
খ. ১৮৯৫ সালে
গ. ১৮৯৯ সালে
ঘ. ১৯০৩ সালে

২২। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কতটি নদীর নাম আছে?
ক. ৩টি
খ. ৪টি
গ. ৫টি
ঘ. ৬টি

২৩। জীবনানন্দ দাশ তাঁর রচনায় কিসের ছবি এঁকেছেন?
ক. নিসর্গের
খ. শহরের
গ. নদীর
ঘ. যুদ্ধের

২৪। কবি ছাড়াও জীবনানন্দ দাশ কী ছিলেন?
ক. নাট্যকার
খ. গল্পকার
গ. ঔপন্যাসিক
ঘ. প্রাবন্ধিক

২৫। জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ গ্রন্থ কোনটি?
ক. কবিতার কথা
খ. ঝরাপালক
গ. মাল্যবান
ঘ. সুতীর্থ

২৬। ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে অবিরল কী দেয়?
ক. সম্পদ
খ. মাছ
গ. ঝিনুক
ঘ. জল


২৭। ‘মাল্যবান’ ও ‘সুতীর্থ’ কোন ধরনের রচনা?
ক. গল্প
খ. কাব্য
গ. নাটক
ঘ. উপন্যাস

২৮। কবি জীবনানন্দ দাশের দেশে লক্ষ্মীপেঁচা কিসের গন্ধের মতো অস্ফুট?
ক. গমের
খ. ধানের
গ. পাটের
ঘ. জলের

২৯। রূপসীর শরীরে কী রঙের শাড়ি লেগে থাকে?
ক. লাল
খ. বেগুনি
গ. সবুজ
ঘ. হলুদ

৩০। ‘বারুণী’ শব্দের অর্থ কী?
ক. মত্স্যকন্যা
খ. সাগর দেবী
গ. জলের দেবী
ঘ. পাতালপুরীর কন্যা
৩১। শঙ্খমালা বাংলার কিসের ভেতর জন্মেছে?
ক. ধান
খ. পাট
গ. নদী
ঘ. পানের বনে

৩২। কবি জীবনানন্দ দাশের কাছে তাঁর দেশ সুন্দর কী?
ক. সেরা
খ. শ্রেষ্ঠ
গ. করুণ
ঘ. শুভ

৩৩। ‘সবুজ ডাঙ্গা’ বলতে বোঝানো হয়েছে—
ক. সবুজ প্রকৃতি
খ. সবুজ রং
গ. মাঠ-প্রকৃতি
ঘ. ঐশ্বর্য

৩৪। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কতটি গাছের নাম আছে?
ক. ৩টি
খ. ৪টি
গ. ৫টি
ঘ. ৬টি

৩৫। বর বলতে বোঝানো হয়েছে—
ক. ক্ষমা
খ. দেবতা
গ. ভিক্ষা
ঘ. আশীর্বাদ

৩৬। জীবনানন্দ দাশ কিভাবে তাঁর জগৎ তৈরি করেছেন?
ক. ব্যক্তি অনুভবে
খ. বস্তু অনুভবে
গ. দেশপ্রেমে
ঘ. সূক্ষ্ম গভীর অনুভবে

৩৭। বিশালাক্ষী দ্বারা কবি বুঝিয়েছেন—
ক. দেবী
খ. নর
গ. নারী
ঘ. বিশাল চোখ

৩৮। ধানের গন্ধ দ্বারা বোঝানো হয়েছে—
ক. ধানের সৌন্দর্য
খ. প্রাকৃতিক রূপ
গ. কৃষিপ্রধান বাংলার চিত্র
ঘ. ধান প্রকৃতি

৩৯। ‘লেবুর শাখা নুয়ে থাকা’ বলতে বোঝানো হয়েছে—
ক. সৌন্দর্য চেতনা
খ. প্রকৃতির ঐশ্বর্য
গ. বাংলার সম্পদ
ঘ. ফলের ভারে নুয়ে পড়া

৪০। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর দেশকে সবচেয়ে সুন্দর বলেছেন কেন?
ক. প্রকৃতিপ্রেমে
খ. জাতীয়তাবোধে
গ. বাঙালির মুগ্ধতায়
ঘ. সৌন্দর্য চেতনায়
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
shimul table fixed 100%

উত্তরগুলো মিলিয়ে নাও ১. খ ২. খ ৩. ঘ ৪. ক ৫. ক ৬. ঘ ৭. খ ৮. ক ৯. ক ১০. খ ১১. ঘ ১২. ঘ ১৩. গ ১৪. খ ১৫. খ ১৬. ক ১৭. খ ১৮. গ ১৯. ঘ ২০. ক ২১. গ ২২. ক ২৩. ক ২৪. ঘ ২৫. ক ২৬. ঘ ২৭. ঘ ২৮. খ ২৯. ঘ ৩০. গ ৩১. ক ৩২. গ ৩৩. ক ৩৪. খ ৩৫. ঘ ৩৬. ঘ ৩৭. ক ৩৮. গ ৩৯. ক ৪০. ক

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১৮

কালকেতুর ভোজন”

কালকেতুর ভোজন

কবি-পরিচিতিঃ-
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগের বাঙালি কবি। ধারনা করা হয় তাঁর জন্ম ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে। তাঁর বিখ্যাত কাব্য চণ্ডীমঙ্গলকাব্য প্রাচীন পাঁচালী রচনার মধ্যে শ্রেষ্ঠ । এর রচনাকাল ১৫৪৪ খ্রীস্টাব্দের কাছাকাছি সময় বলে বিবেচনা করা হয়। তিনি রাজা রঘুনাথের সমসাময়িক ছিলেন। মুকুন্দরাম তার চন্ডীমঙ্গল কাব্যের নামকরণ করেন অভয়ামঙ্গল ও অন্বিকামঙ্গল । গনজীবনের করুণ চিত্র তাঁর কাব্যে তুলে ধরেন। কবির প্রতিভার স্বকৃতিস্বরূপ রাজা রঘুনাথ তাকে কবি কঙ্কন উপাধি প্রদান করেন। তার পূর্ণ নাম হচ্ছে কবি কঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তবে এই রচনাকে কেউ কেউ ‘ কবিকঙ্কণ চন্ডী’ও বলেছেন। ‘কবিকঙ্কণ’ কথার মানে যে কবি হাতে অথবা পায়ে ঘুঙুর পরে গান করতেন। অর্থাৎ মঙ্গলকাব্যের পেশাদার গায়ক। তিনি তার কাব্যে উপন্যাসের বীজ বপন করেছেন। আধুনিক যুগের সাহিত্য সমালোচকগণ তার সম্পর্কে বলেছেন – ‘ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগে জন্মগ্রহণ না করে আধুনিক যুগে জন্মগ্রহণ করলে কাব্য না লিখে উপন্যাস লিখতেন ‘।যদি এমন কোন গ্রন্থের নাম করতে হয় যাতে আধুনিক কালের, উপন্যাসের,রস কিছু পরিমাণে মেলে যেমন- নিপুণ পর্যবক্ষেণ, সহৃদয়তা, জীবনে আস্থা, ব্যাপক অভিজ্ঞতা সবই যথোচিত পরিমাণে বর্তমান। মুকুন্দরাম শুদ্ধাচারী বামুন-পন্ডিতঘরের ছেলে, আজন্ম দেববিগ্রহ সেবক।কিন্তু তাঁর সহানুভূতি থেকে কেউই বঞ্চিত হয়নি – না বনের তুচ্ছতম পশু না জনপদের দুর্গততম মানুষ।সংস্কৃত অলঙ্কার প্রয়োগের পাশাপাশি লোক-ব্যবহার, ছেলেভোলানো, ছেলেখেলা, মেয়েলি ক্রিয়াকান্ড, ঘরকন্নার ব্যবস্থা, রান্নাবাড়া ইত্যাদি অনপেক্ষিত সামাজিক ও সাংসারিক ব্যাপারেও বিস্ময়কর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।

কালকেতুর ভোজন
__মুকুন্দেরাম চক্রবর্তী

দূর হৈতে ফুল্লরা বীরের পাল্য সাড়া |
সম্ভ্রমে বসিতে দিল হরিণের ছড়া ||
বোঁচা নারিকেলের পুরিয়া দিল জল |
করিল ফুল্লরা তবে ভোজনের স্থল |
চরণ পাখালি বীর জল দিল মুখে |
ভোজন করিতে বৈসে মনের কৌতুকে ||
সম্ভ্রমে ফুল্লরা পাতে মাটিয়া পাথরা |
ব্যঞ্জনের তরে দিলা নূতন খাপরা |
মোচড়িয়া গোঁফ দুটা বান্ধিলেন ঘাড়ে |
এক শ্বাসে সাত হাড়ি আমানি উজাড়ে ||
চারি হাড়ি মহাবীর খায় খুদ জাউ,
ছয় হান্ডি মুসুরি সুপ মিশ্যা তথি লাউ |
ঝুড়ি দুই তিন খায় আলু ওল পোড়া |
কচুর সহিত খায় করঞ্জা আমড়া ||
অম্বল খাইয়া বীর বনিতারে পুছে,
রন্ধন করাছ ভালো আর কিছু আছে |
এন্যাছি হরিণী দিয়া দধি এক হাড়ি ,
তাহা দিয়া অন্ন বীর খায় তিন হাড়ি |
শয়ন কুতসিত বীরের ভোজন বিটকাল,
গ্রাসগুলি তোলে যেন তে আটিয়া তাল ||
ভোজন করিয়া সাঙ্গ কৈল আচমন,
হরীতকী খায়্যা কৈল মুখের শোধন |
নিশাকাল হৈল বীর করিলা শয়নে,
নিবেদিল পশূগণ রাজার চরণে |
অভয়ার চরণে মজুক নিজ চিত,
শ্রীকবিকঙ্কণ গান মধুর সংগীত |

১.চন্ডী মঙ্গল বিষয় বস্তু ২.গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়
শব্দার্থঃ-
হরিণের ছড়াঃ- হরিণের ছাল।
বোঁচা নারিকেলঃ-নারিকেলের মালার ওপরের অংশ কেটে তৈরি পাত্র।
পাখালিঃ-প্রক্ষালন করে।ধুয়ে।
খাপরাঃ-খর্পর।মাটির তৈরি একপ্রকার পাত্র।
আমানিঃ-পানিযুক্ত পান্তাভাত।
হান্ডিঃ-হাঁড়ি।
করঞ্জাঃ-টক ফল বিশেষ।করমচা।
বণিতা:-বধূ।
আচমনঃ-ভোজন শেষে হাত মুখ প্রক্ষালন।ধৌতকরন।
অভয়াঃ-দুর্গা।

পাঠ-পরিচিতিঃ-
“কালকেতুর ভোজন” অংশটি মুকন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য(মুহাম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত ‘কালকেতু উপখ্যান’)হতে সংগৃহীত।ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বর শিবিরে অভিশাপে ব্যাধরুপে মর্ত্যলোকে ধর্মকেতুর গৃহে জন্মগ্রহন করেন।তার নাম হয় কালকেতু।অসীম শক্তিশালী কালকেতু সারাদিন শিকার কর্মশেষে ঘরে ফিরলে স্ত্রী ফুল্লরা তার যে ভোজনের ব্যবস্থা করে তারই চমকপ্রদ বিবরণ উপস্থাপিত হয়েছে এ রচনাটিতে।বৈচত্র্যময় ও বিপুল খাবারের বিবরণের পাশাপাশি তৎকালীন সমাজে বাঙ্গালী গৃহের খাবার পরিবেশন রীতি এ কাব্যাংশে লক্ষণীয়।বর্ণনায় অতিরঞ্জন বা আতিশয্য থাকলেও খাবার গ্রহন ও এর পূর্বাপর বর্ননায় ভঙ্গিটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।মধ্যযুগে বাঙ্গালির গার্হস্থ্য জীবনের বাস্তবতা মুকন্দরাম চক্রবর্তীর কবিত্বশক্তি ও বর্ণনা নৈপুণ্যে অসামান্যতা লাভ করেছে।




বাংলা সাহিত্যের ঔপন্যাসিকদের অগ্রদূত মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন অসাধারন পর্যবেক্ষণ শক্তির অধিকারী, সেই সাথে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম প্রধান কবি।তার বহু রচনার মধ্য কালকেতুর ভোজন একটি অসাধারন কবিতা।কবিতাটিতে কবি মধ্যযুগের বাঙ্গালি সমাজের গার্হস্থজীবনের একটি বাস্তব চিেএর বর্ননা দিয়েছেন।কালকেতুর ভোজন ” কবিতাটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর রচিত বিখ্যাত কাব্য “চণ্ডীমঙ্গল “কাব্য(মুহাম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত কালকেতু উপাখ্যন’)থেকে সংগৃহীত।

কবিতাটিতে কালকেতুর ভোজন কথাটির মূল অর্থ হলো, এখানে কালকেতুর খাবার গ্রহন অর্থে বোঝানে হয়েছে, এখানে ভোজন অর্থ খাবার খাওয়া বা খাবার গ্রহন করা। আর কালকেতু হলো একটি নাম। যিনি ছিলেন ইন্দ্রপুএ নীলাম্বর।

তিনি শিবের অভিশাপে ব্যাধরুপে মর্ত্যলোকে ধর্মকেতুর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে তার নাম রাখা হয় কালকেতু। অর্থাৎ কবিতার মূল বিষয়টি ছিলো কালকেতুর খাবার গ্রহন এর বিবরণ। কবিতার প্রথম দিকে শক্তিশালী কালকেতুর কিছু বননা দেওয়া হয় এবং সারাদিন শিকার শেষে ঘরে ফিরলে তার স্ত্রী ফুল্লরা তার যে ভোজন ব্যবস্থা করা এবং তার স্বামীর জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়ার একটি চমকপ্রদ বিবরণ উপস্থাপিত হয় রচনাটিতে।সেই সাথে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় বাঙ্গালি গৃহে খাবার পরিবেশনের রীতি, বৈচিএ্যময় নানা আয়োজন ও বিপুল খাবারের সমাহার ইত্যাদি বিষয়গুলোও কাব্যাংশে লক্ষনীয় হয়েছে।তবে রচনাটিতে অতিরঞ্জন বা অাতিশয্য থাকলেও খাবার গ্রহন ও এর পূর্বাপর বর্ণনা নৈপুণ্যে অসামান্যতা লাভ করেছে। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর এই কবিতাটিতে সেই মধ্যযুগের বাঙ্গালির জীবনযাত্রার অসাধারন কিছু কথা উথাপিত হয়েছে এখানে।