শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

চাষার দুক্ষু


প্রভাষক (বাংলা)
হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
চাষার দুক্ষু
-রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

অনুরাধা ও পারুল প্রতিবেশী ও সহপাঠী। অনুরাধা সময় পেলেই স্টার জলসা, জি বাংলা, স্টার প্লাস চ্যানেল দেখে। ঐ সব নাটকের নায়িকাদের স্টাইলে নিজেকে উপস্থাপনে অনুরাধা সদা তৎপর। অনুরাধার বাবা একজন পাট ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিনি সর্বস্বান্ত প্রায়। অন্যদিকে পারুল পড়াশোনার পাশাপাশি সেলাই মিশিনে কাজ করে পরিবারকে সাহায্য করে। পড়াশোনা শেষ করে পারুল চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি না করে উন্নত প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক লোন নিয়ে গ্রামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। গ্রামের মানুষদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার আশ্রয় এখন পারুল ও তার কুটিরশিল্প।

(ক) কৃষক কন্যার নাম কী?
(খ) ‘একটি চাউল পরীক্ষা করিলেই হাঁড়িভরা ভাতের অবস্থা জানা যায়” - কথাটির দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?
(গ) ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের কোন দিকটি অনুরাধার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে আলোচনা কর।
(ঘ) “স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য চাই অন্ধ বিলাসিতার অনুকরণ বাদ দিয়ে দেশীয় শিল্পের সাথে মেধা, শ্রম ও উদ্যোক্তার যৌথ সমন্বয়’ - উদ্দীপক ও তোমার পঠিত প্রবন্ধের আলোকে আলোচনা কর।

উত্তর - ক :
কৃষক কন্যার নাম জমিরন।

উত্তর - খ : সমগ্র ভারতবর্ষের কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা জানার জন্য তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বা বর্তমানের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানাটাই যথেষ্ট - এই অর্থে লেখিকা এই উক্তি করেছেন।
তৎকালীন বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অংশ ছিল বাংলাদেশ। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এ অঞ্চলটি সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা ও নদীমেখলা। এ দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানা মানেই সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে জানা। বাংলাদেশের কৃষকের অবস্থা বড়ই করুণ। তাদের রুগ্ন অবস্থা সবাইকে ব্যথিত করে। রোদ-বৃষ্টিতে সকলের মুখের খাবার আর গায়ের বস্ত্র যোগালেও তাদের পরনে শতচ্ছিন্ন ময়লা কাপড়, উদরে নেই অন্ন। ভারতবর্ষের কৃষকদের সামগ্রিক অবস্থা জানার জন্য তাই বাংলাদেশের অবস্থা জানাটাই অনেক। এ প্রসঙ্গেই লেখিকা উক্ত উক্তিটি করেছেন।

উত্তর - গ : ‘চাষার দুক্ষু’ নামক প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন চাষার দুঃখের জন্য তাদের বিলাসিতাকে অনেকাংশে দায়ী করেছেন। ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কৃষকের দুঃখ-দুর্দশা ও তার কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অতীতে ভারতবর্ষে কৃষকদের কোনো অভাব ছিল না- কেন না তখন ঘরে ঘরে এন্ডি কাপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য তারা নিজেরাই বানাত। কিন্তু সভ্যতার করাল গ্রাসে আমাদের মেহনতি শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত অনুকরণপ্রিয় বিলাসিতা দেখা দেয়। তারা খেতে না পারলেও টাক মাথা তাজ দিয়ে ঢাকার দিবা স্বপ্ন বোনে। উদ্দীপকের পাট ব্যবসায়ীর কন্যা অনুরাধা। সে সারাক্ষণ আকাশ-সংস্কৃতির ধারক-বাহক। বাবার ব্যবসাতে লাল বাতি জ্বললেও তার স্টার জলসার নায়িকা রূপে হাজির হওয়া চাই, জি বাংলার নায়িকার মতো জীবনযাপনে উপস্থাপন হওয়া চাই। অন্ধ-অনুকরণপ্রিয় বিলাসী জীবন তাকে বাস্তবতার নির্মমতা থেকে স্বাপ্নিক এক পৃথিবীতে নিয়ে যায়। অনুরাধা আমাদের পঠিত ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের চাষার বউ বা মেয়ের প্রতিচ্ছবি যারা খেতে না পারলেও তাজ দিয়ে মাথার টাক ঢাকতে বদ্ধপরিকর।

উত্তর - ঘ : একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সকলের আগ্রহ অভিজ্ঞতা সদিচ্ছা আর কর্মস্পৃহা একান্ত জরুরি। চাষার দুক্ষু প্রবন্ধে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তৎকালীন কৃষকের দারিদ্র্যপূর্ণ জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। শত বছর পূর্বে আমাদের কৃষক সমাজ ছিল আত্মনির্ভরশীল, স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের অন্ন বা বস্ত্রের অভাব ছিল না। নারীরা হেসে খেলে বস্ত্রের অভাব মেটাত, পুরুষেরা গান গেয়ে ধান উৎপাদন করতো, আর মসলিন বানাত। কিন্তু সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে কৃষকের অবস্থা শোচনীয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রাবন্ধিক দেশী শিল্প বিশেষত নারীসংশ্লিষ্ট শিল্পের পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গ্রামে গ্রামে পাঠশালা আর চরকার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার দরকার। উদ্দীপকে পারুল তার পরিবার ও প্রতিবেশী এলাকাবাসীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে। পারুল বাল্যকাল থেকেই পরিশ্রমী আর স্বাবলম্বী। সেই সাথে শিক্ষা আর উচ্চতর প্রশিক্ষণ তাকে করেছে আজকের অনন্যা। সে উপলব্ধি করেছে ব্যক্তি স্বাবলম্বীর মধ্য দিয়ে সমাজ স্বাবলম্বী হবে। প্রবন্ধে লেখিকা গ্রামীণ শিল্প তথা নারীভিত্তিক যে শিল্পের বর্ণনা দিয়েছেন পারুল এখানে লেখিকার মানসকন্যা। সে স্বার্থক এবং তার আলোয় চারপাশের অন্যদের আলোকিত করেছে। উদ্দীপক ও পঠিত প্রবন্ধের আলোকে আমরা একথা নির্দ্বিধায় বলতেই পারি সাবলম্বী হওয়ার জন্য চাই অন্ধ বিলাসিতার অনুকরণ বাদ দিয়ে দেশীয় শিল্পের সাথে মেধা, শ্রম ও উদ্যোগের যৌথ সমন্বয়।

বাংলা অপরিচিতা গল্প


অ প রি চি তা

প্রভাষক (বাংলা)
হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
অপরিচিতা
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা কলেজপড়ুয়া মাধবীলতা। হঠাৎ করেই চাকরিজীবী শরৎচন্দ্রের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়ে গেল। স্কুল শিক্ষক মাধবীলতার বাবা কথা দিয়েছিলেন বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা ও দশ ভরি স্বর্ণ দেবেন। নানা অসুবিধার ফলে বিয়ের সময় তিনি অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। শাশুড়ির কুট কথায় দগ্ধ মাধবীলতা। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। ভবিষ্যৎ আর সমাজের কথা চিন্তা করে মাধবীলতাকে তার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই জানা যায় মাধবীলতা মারা গেছে।

(ক) “অনুপম, যাও, তুমি সভায় গিয়ে বসো গে’। - উক্তিটি কে বলেছেন।
(খ) “কোন কিছুর জন্যই আমাকে কোন ভাবনা ভাবিতেই হয় না” - কেন?
(গ) উদ্দীপকের মাধবীলতা ও তোমার পঠিত ‘অপরিচিতা’ গল্পের ‘কল্যাণী’ চরিত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
(ঘ) “উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তুর বিপরীত চিত্র প্রকাশ করে”- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা আলোচনা কর।

উত্তর (ক) ‘অনুপম, যাও, তুমি সভায় গিয়ে বস গে’ - উক্তিটি করেছেন অনুপমের মামা।
উত্তর (খ) মা এবং মামার ব্যবস্থাপনায় জীবনের সব ঘটনা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে অনুপমকে কোনো ভাবনা ভাবতে হয় না।
অল্প বয়সে বাবাকে হারায় অনুপম। এরপর মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হয়েছে সে। অনুপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটির মতো অতি আদর-যত্নে লালিত-পালিত হয় অনুপম। এরপর আছেন তার মামা। তিনি অতিশয় বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন লোক। তার অনুশাসনে অনুপমের জীবনের সব ঘটনা নিয়ন্ত্রিতভাবে সংঘটিত হয়। তাই অনুপমকে কোনো ভাবনাই ভাবতে হয়নি। অনুপম তার নিজের সম্পর্কে বা পরিবারের কোন বিষয় নিয়েও ভাবতে হয় না।

উত্তর (গ) উদ্দীপকের মাধবীলতা এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক।
অপরিচিতা গল্পের নায়িকা কল্যাণী স্বাধীনচেতা ও ব্যক্তিত্বময়ী এক চরিত্র। কাপুরুষ ও সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ অনুপমকে বিয়ে না করে আজীবন দেশমাতৃকার সেবা করার শপথ নেয়। অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীকে আমরা দেখতে পাই প্রতিবাদী রূপে। সে রেল কর্মচারীর সঙ্গে হিন্দিতে, আর ইংরেজ ভদ্রলোকের সাথে ইংরেজিতে তর্ক করে। ভুল ভাঙার পর অনুপম যখন কল্যাণীর কাছে ফিরে আসতে চায় তখন ব্যক্তিত্বময়ী কল্যাণী অনুপমের দিকে মনোযোগ না দিয়ে দেশের কল্যাণে মনোযোগ দেয়। উদ্দীপকের মাধবীলতা কল্যাণীর ঠিক বিপরীত। মাধবীলতার যখন অল্প বয়সে বিয়ে হয় তখন সে কোনো প্রতিবাদ করেনি। বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচার নীরবে সহ্য করেছে কোনো প্রতিবাদ করেনি। মাধবীলতা তার স্বামীর সঙ্গে ব্যাপারটি আলোচনা করতে পারত- তাও সে করেনি। কল্যাণীর মতো মাধবীলতা স্বাধীনচেতা চ্যক্তিত্বময়ী কোনোটিই নয়। মাধবীলতা সমাজ ও সংসারের সব অত্যাচার মুখ বুঝে মেনে নিয়ে অকালে ঝরে পড়ে।

উত্তর (ঘ) অপরিচিতা গল্পের মধ্যে আমরা দেখি সামাজিক বাধা-কুসংস্কার তুচ্ছ করে শম্ভূনাথ বাবু প্রতিবাদ করে। আর উদ্দীপকের মাধবীলতা ও তার বাবা সমাজের সব ভ্রুকুটি মেনে নেয়।
অপরিচিতা গল্পের কাহিনীকে আমরা দেখি বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন অনুপমের মামার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে কল্যাণীর বাবা বিয়ের আসর থেকে বরযাত্রীদের বিদায় করে দেয়। বাবার মতোই ব্যক্তিত্বময়ী কল্যাণী অনুপমের সাথে যথোপযুক্ত আচরণ করে। গল্পের শেষে অনুপম মায়ের আজ্ঞা আর মামার নির্দেশ অমান্য করে কল্যাণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও কল্যাণী অনুপমকে ফিরিয়ে দেয়।
উদ্দীপকের মাধবীলতা ও তার বাবা যেন সমাজের ক্রীড়নক। সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে বাঁচার লড়াইয়ের উদ্যম বা সাহস কোনোটিই তাদের ছিল না। মাধবীলতার বাবা শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও মেয়েকে যৌতুকের বলির হাত থেকে রক্ষার কোনো চেষ্টাই করেননি। অন্যদিকে মাধবীলতা যেন সব কিছু মেনে নেয়ার জন্যই জন্ম নিয়েছে এ ধরাধামে।
উদ্দীপক ও গল্পের কাহিনীর মধ্যে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। পঠিত গল্পের চরিত্রগুলো সমাজের প্রথাবিরোধী, কুসংস্কারবিরোধী। অন্যদিকে উদ্দীপকের চরিত্রগুলো সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কারের বাইরে এসে যুক্তির আলোয় আপন মুক্তির স্বাদ নিতে অপারগ।

অপরিচিতা


বহুনির্বাচনী
১.‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি’—এই বাক্যটি দ্বারা লেখক কিসের ইঙ্গিত করেছেন?
    ক. অনুপমের ব্যক্তিত্ব
    খ. অনুপমের আদর্শ
    গ. অনুপমের মমত্ববোধ
    ঘ. অনুপমের নির্ভরতা
    উত্তর ক.অনুপমের ব্যক্তিত্ব
২.‘লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট’ দ্বারা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
    ক. শম্ভুনাথ বাবুর ঐতিহ্য
    খ. শম্ভুনাথ বাবুর ঐশ্বর্য
    গ. শম্ভুনাথ বাবুর চারিত্রিক গুণের বৈশিষ্ট্য
    ঘ. শম্ভুনাথ বাবুর দোষ
    উত্তর খ. শম্ভুনাথ বাবুর ঐশ্বর্য
৩. ‘অপরিচিতা’ গল্পে রসিক মনের মানুষ কে?
    ক. হরিশ খ. বিনুদাদা
    গ. ঘটক ঘ. কল্যাণী
    উত্তর: ক. হরিশ
৪.‘তবু ইহার বিশেষ মূল্য আছে’— এখানে কিসের মূল্যের কথা বলা হয়েছে? ?
    ক. কন্যার বয়স খ. যৌতুকের
    গ. জীবনের ঘ. কর্মের
    উত্তর: গ. জীবনের

বাংলা ১ম পত্র গদ্য


✿গদ্য - রেইনকোট

✿গুরুত্বপূর্ণ...

✿লেখক-পরিচিতি
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলা কথা সাহিত্যে এক অনন্যসাধারণ প্রতিভার নাম। ১৯৪৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি তিনি গাইবান্ধার গোয়াটিয়া গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃনিবাস বগুড়া শহরের উপকণ্ঠে আবস্থিত নারুলি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম বি.এম. ইলিয়াস এবং মাতার নাম মরিয়ম ইলিয়াস। তাঁর পিতৃদত্ত নাম আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস। প্রথমে বগুড়ায় ও পরে ঢাকায় তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের অধ্যাপক।
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি লেখার সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর কখোনো জোর দেননি। বরং গুরত্ব দিয়েছেন গুণগত মানের উপর। জীবন ও জগৎকে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহযোগে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, দারিদ্র, শোষণ, বঞ্চনা প্রভৃতি বিষয়কে করেছেন সাহিত্যের অর্ন্তভুক্ত। মানুষ জীবনকে সামগ্রিকভাবে অনুধাবন করতে চেয়েছেন এই সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতেই। মানুষের পরম সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক প্রান্তসমূহ উন্মোচনেও তাঁর রয়েছে গভীর দক্ষতা। তাঁর পাঁচটি ছোটগল্প গ্রন্থে সংকলিত আছে মাত্র ২৮টি গল্প। এছাড়া রয়েছে ২টি উপন্যাস ও ১টি প্রবন্ধসংকলন। তাঁর গল্পগ্রন্থগুলোর নাম: ‘অন্য ঘরে অন্য স্বর’, ‘খেয়ালি’ ‘দুধেভাতে উৎপাত’, ‘ দোজখের ওম’, ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’।
তাঁর উপন্যাস দুটি হলো ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ও ‘খোয়াবনামা’।
১৯৯৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ঢাকায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

✿পাঠ-পরিচিতি
‘রেইনকোট’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। পরে এটি লেখকের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’ (১৯৯৭) গ্রন্থে সংকলিত হয়। এ গল্পের পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে গল্পটি রচিত। মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ পর্যায়। ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরু হয়েছে। তারই একটি ঘটনা এ গল্পের বিষয়; যেখানে ঢাকা কলেজের সামনে গেরিলা আক্রমণের ফলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের তলব করে এবং তাদের মধ্য থেকে নুরুল হুদা ও আবদুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। নুরুল হুদা এই গল্পের কথক। তার জবানিতে গল্পের ঘটনাবলি বিবৃত হয়েছে। বিবৃত হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা শহরের আতঙ্কগ্রস্ত জীবনের চিত্র। গেরিলা আক্রমণের ঘটনা ঘটে যে রাতে, তার পরদিন সকালে ছিল বৃষ্টি। তলব পেলে সেই বৃষ্টির মধ্যে নুরুল হুদাকে কলেজে যেতে যে রেইনকোটটি পরতে হয় সেটি ছিল তার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মন্টুর। গল্পে এই রেইনকোটের প্রতীকী তাৎপর্য অসাধারণ। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় যে উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম- তারই ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ ঘটেছে এ গল্পে।

১. রেইনকোট গল্পের কথক কে? - নুরুল হুদা
২. রেইনকোট গল্পে উল্লিখিত জেনারেল স্টেটমেন্টটি হলো - "শনিতে সাত মঙ্গলে তিন, আর সব দিন দিন "
৩. ফুটফাট বন্ধ কয়দিন - অন্তত ৩ দিন
৪. বাদলায় কোনটির জিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে - বন্দুক বারুদ
৫. মিলিটারির ভয়ে গল্পের নুরুল হুদা কি মুখস্থ করেছে - সূরা
৬. রাস্তায় বেরুলে নুরুল হুদা ঠোঁটের ওপর কি রাখে - পাঁচ কালেমা
৭. মাঠ পেরিয়ে একটু বাঁ দিকে - প্রিন্সিপ্যালের বাড়ি
৮. প্রিন্সিপ্যালেরর কোয়ার্টারের সঙ্গে কোনটির অবস্থান - মিলিটারি ক্যাম্প
৯. কোনটিকে মিলিটারি ক্যাম্প করা হয়েছে - কলেজের জিমনেশিয়ামে
১০. রাস্তায় ঘড়ঘড় করছিলো - বেবি ট্যাকসি
১১. কে নাশতার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছে - ইসহাক
১২. মিন্টু যেখানে গেছে তার খবর জানে কারা - নুরুল হুদা ও তার বউ
১৩. কে রোজ,টাইমলি কলেজে যায় - নুরুল হুদা
১৪. নুরুল হুদা রাস্তায় এসে দেখল কি নেই - রিক্সা
১৫. নুরুল হুদা কিসের পরোয়ানা করে না - রিক্সার
১৬. কোন বৃষ্টিতে বেশ শীত শীত ভাব - শেষ হেমন্তের বৃষ্টিতে
১৭. বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে নুরুল হুদাকে কোন দিকে তাকাতে হয় - উওরে
১৮. কীসের ল্যাজটা দেখা যাচ্ছে না - মিলিটারি লরির
১৯. কে ত্রকটু বাচাল টাইপের - দোকানদার ছেলেটা
২০. স্টেট বাসের রং কেমন ছিলো - লাল
২১. বাসে কত গুলো সিট খালি ছিলো - অর্ধকের বেশি
২২. নুরুল হুদার চাউনি কেমন ছিল - ভোঁতা কিন্তু গরম
২৩. নুরুল হুদা বাস থেকে নেমে নামল কোথায় - নিউ মার্কেট
২৪. আলমারি কিসের - লোহার
২৫. মোট আলমারি কতটি - ১০ টি
২৬. আলমারিগুলো আনা হয়েছে - ঠেলাগাড়ি দিয়ে
২৭. নুরুল হুদার ছেলের বয়স - ৫ বছর
২৮. নুরুল হুদার,মেয়ের বয়স - আড়াই (২.৫) বছর

২৯.চিলেকোঠার সেপাই ক্রমায়াত মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্য

মাসি পিসি বাংলা গদ্য


✿ গদ্য - মাসি পিসি

✿কবি পরিচিতি:
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯এ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম নীরদাসুন্দরী দেবী। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকনাম মানিক । বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন।

প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তাপর জীবনের বাকি আটাশ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে গেছেন। উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক হিসেবে মানিক বাংলা সাহিত্যে খ্যাতিমান। অল্প সময়েই তিনি সৃষ্টি করেছেন প্রায় চল্লিশটি উপন্যাস ও প্রায় তিনশ ছোটগল্প। সেই সঙ্গে লিখেছেন কিছু কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ও ডায়েরি। বিজ্ঞানমনস্ক এই লেখক মানুষের জগৎ তথা অন্তর্জীবনের রূপকার হিসেবে সার্থকতা দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে সমাজবাস্তবতার শিল্পি হিসেবেও সাক্ষর রেখেছেন। ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘চিহ্ন’, প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘প্রাগেতিহাসিক’, ‘সরিসৃপ’, ‘সমুদ্রের স্বদ’, ‘কুষ্ঠরোগীর বৌ’, ‘টিকটিকি’, ‘হলুদ পোড়া’, ‘আজকাল পরশুর গল্প’,‘হারানের নাসজামাই’, ‘ছোটবকুল পুরের যাত্রী’ প্রভৃতি।

কলকাতায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তেসরা ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

✿পাঠ-পরিচিতি:-
‘মাসিপিসি’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ১৩৫২ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় (মার্চ-এপ্রিল ১৯৪৬)। পরে এটি সংকলিত হয় ‘পরিস্থিতি’ (অক্টোবর ১৯৪৬) নামক গল্পগ্রন্থে। বর্তমান পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে ‘ঐতিহ্য’ প্রকাশিত মানিক-রচনাবলি পঞ্চম খণ্ড থেকে।

স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুন জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে ‘মাসি-পিসি’ গল্প। আহ্লাদি নামক ওই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিত্বরক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করে সেটাই গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। অত্যvচারী স্বামী এবং লালসা-উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুণ্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে অসহায় দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধ খুবই প্রশংসনীয়। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে নৌকাচালনা ও সবজির ব্যবসায় পরিচালনা প্রভৃতি এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক।

সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নিঃসন্তান ও বিধবা ফাতেমার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন সকালে রাস্তায় একটি মেয়েকে কাঁদতে দেখেন। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েটি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। সব শুনে তিনি মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন, মাতৃস্নেহে আশ্রয় দেন। স্বামীপক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চায়। মেয়েটি কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক নয়। বৃদ্ধা ফাতেমাও মেয়েটিকে যেতে দেননি। এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর আগে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান।

ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়’—উক্তিটি কার?
খ. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সঙ্গে কিভাবে সঙ্গতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা কি একসূত্রে গাঁথা? মতামত দাও।

উত্তর :

ক। ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়’—উক্তিটি পিসির।


খ। ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’—উক্তিটি দ্বারা সমাজের কুচক্রীদের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতিকে বোঝানো হয়েছে। আহ্লাদিকে অপহরণ করার হীন মতলবে জোতদার ও দারোগা বাবু কানাই চৌকিদারকে পাঠায় মাসি-পিসির বাড়িতে। তারা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কিন্তু মাসি-পিসি তা বুঝতে পারে। তারা চিত্কার করে লোক জড়ো করে। অস্ত্র হাতে ধাওয়া করে দোষীদের। কিন্তু তার পরও শত্রুর অনিষ্ট বিষয়ে নিশ্চিত হয় না মাসি-পিসি। তাই বড় গামলাভর্তি জল ও কাঁথা আর কম্বল ভিজিয়ে রাখে। হাঁড়ি-পাতিল ভরে রাখে। আগুন দিলে তাতে নেভানো যাতে সহজ হয় এ জন্য এ প্রস্তুতি। আর হাতের কাছে রাখে ধারালো অস্ত্র।


গ। নির্যাতিতা ও অসহায়ত্বের প্রতিনিধি হিসেবে উদ্দীকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আহ্লাদির। সে স্বামী-সংসারে নির্যাতিতা। স্বামীর ঘরে টিকতে না পেরে বিধবা মাসি-পিসির কাছে ঠাঁই নেয়। মাসি-পিসির যত্নের কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু আশপাশের কুচক্রীরা কুদৃষ্টি দিয়ে তার জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। স্বামীর বাড়ি থেকে হুমকি আসে। জোতদার দারোগা বাবুর সহায়তায় চৌকিদার পাঠায়। বাবার সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ায় অনেকেই তাকে খরিদ করার পাঁয়তারা করে। উদ্দীপকের ষাটোর্ধ্ব ফাতেমা আশ্রয় দেন অসহায় মেয়েটিকে। মেয়েটি স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। বৃদ্ধা মাতৃস্নেহে তাকে লালন করতে থাকেন। আপন করে নেন। স্বামীর ঘর থেকে নিতে এলেও বৃদ্ধা যেতে দেননি মেয়েটিকে। মৃত্যুকালে সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে যান এই মেয়েটিকে। আর এখানেই উদ্দীপকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।


ঘ। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি স্বামী-সংসারে নির্যাতিতা। অসহায় হয়ে সে মাসি-পিসির কাছে আসে। সেখানে যত্ন-আত্তির ত্রুটি ছিল না তার। কিন্তু আশপাশের দুর্বৃত্তদের চোখ পড়ে অসহায় মেয়েটির ওপর। মাসি-পিসি জীবন বাজি রেখে মেয়েটিকে রক্ষা করতে চান। মাসি-পিসি সারাক্ষণ চিন্তা করেন খাইয়ে-পরিয়ে যত্নে রাখতে হবে আহ্লাদিকে। শ্বশুরবাড়ির কবল থেকে বাঁচাতে হবে, এমনকি গাঁয়ের বজ্জাতদের নজর থেকে সামলে রাখতে হবে, কত দায়িত্ব তাদের, কত কাজ। উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম বিধবা। সকালে হাঁটতে গিয়ে অসহায় একটি মেয়েকে ঘরে তুলে আনেন তিনি। মেয়েটি স্বামীর হাতে নির্যাতিতা। শ্বশুরবাড়ি থেকে নিতে এলেও ফাতেমা বেগম যেতে দেননি তাকে। অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয় তাকে। এমনকি মৃত্যুর আগে নিজের সম্পত্তির উত্তরাধিকার করে যান মেয়েটিকে। উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম বিধবা। কিন্তু মানবিকবোধে উজ্জীবিত এক মহান দায়িত্ববান নারী। অন্যদিকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি ও পিসি আহ্লাদির প্রেক্ষিতে দায়িত্ব-কর্তব্যের এক বিরল দৃষ্টান্ত। সার্বিক আলোচনায় বলা যায়, ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি ও পিসি এবং উদ্দীপকের বৃদ্ধা একসূত্রে গাঁথা।

৩। আব্দুল লতিফের কিশোরী মেয়েটা এবার বাপের বাড়ি এসে কিছুতেই শ্বশুরবাড়ি যেতে চাচ্ছে না। যৌতুকের টাকা দিতে না পেরে মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির বৈবাহিক অত্যাচার কিছুইতেই সহ্য করতে পারছে না। আব্দুল লতিফ এ ব্যাপারে মেয়ের ওপর জোর খাটানোর চেষ্টা করে না। বরং প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এবং যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করে।

ক) ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জীবনভাষ্য কী? ১
খ) জগু কেন আহ্লাদির উপর নির্মম নির্যাতন চালায়? ২
গ) উদ্দীপকের আব্দুল লতিফ ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ) ‘উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের চেতনা অভিন্ন’-মন্তব্য যাচাই কর। ৪


বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য ক্লিক করুন >>

✿গুরুত্বপূর্ণ...

। ১. শেষবেলায় খালে থাকে - পুরো ভাটা
২. খালের ধারে লাগানো সালতিটি কোথায় ছিলো - কংক্রিটেরর পুলের উপর
৩. সালতি থেকে পাড়ে তোলা হচ্ছে - খড়
৪. মাঝখানে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে- আহ্লাদি
৫. অল্প বয়সী বৌটির গায়ে ছিলো - নকশা পাড়ের সস্তা সাদা শাড়ি
৬. আঁট সাঁট থমথমে গড়ন,গোলগাল মুখ- আহ্লাদির
৭. মাসি-পিসি ফিরছে কৈলেশ উক্তিটি- বুড়ো লোকটির(রহমানের)
৮. "বেলা আর নেই কৈলেশ " উক্তিটি - মাসি বলে বিরক্তির সঙ্গে
৯. "অনেকটা পথ যেতে হবে কৈলেশ " উক্তিটি - পিসির
১০. "বেলা বেশি নেই কৈলেশ " উক্তিটি - পিসির
১১. কৈলেশের সাথে দেখা হয়েছিল - জগুর
১২. জগু হল- আহ্লাদির স্বামী
১৩. উড়ে ত্রসে জুড়ে বসেছে - মাসি
১৪. পিসির অহংকার আর খোঁচাই সবচেয়ে অসহ্য লাগত- মাসির
১৫. আহ্লাদিকে বাঁচাতে হবে- শ্বশুরঘরের কবল থেকে
১৬. আহ্লাদিকে সামলে রাখতে হবে - গাঁয়ের বজ্জাতদের নজর থেকে
১৭. জগুর বৌ নেবার আগ্রহ- খুবই স্পষ্ট
১৮. "ডারসনি আহ্লাদি " উক্তিটি - মাসির
১৯. "ডরাসনি,ডর কিসের "? উক্তিটি- পিসির
২০. "কাছারি বাড়ি যেতে হবে ত্রকবার " উক্তিটি- কানাইয়ের
২১. গাঁয়ের গুণ্ডা হলো- সাধু বৈদ্য ওসমানেরা
২২. ফেটি-বাধা বাবরি চুল কার- বৈদ্যের
২৩. কাঁঠাল গাছের ছায়ায় কত জন ঘুপটি মেরে ছিলো- তিন - চারজন।

✿গুরুত্বপূর্ণ....

১. জেলের ভিতর অনশন ধর্মঘট করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল - শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন
২. জেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সুপারিন্টেনডেন্ট ছিলো - আমীর হোসেন সাহেব।
৩. রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার ছিল- মোখলেসুর রহমান সাহেব।
৪. শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলো- ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালবেলা
৫. লেখকের মালপত্র, কাপড়চোপড় ও বিছানা নিয়ে হাজির হল- জমাদার সাহেব
৬. নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজ ছাড়ে - ১১ টায়
৭. লেখকদেরর জন্য আনা হয়েছে - বন্ধ ঘোড়ার গাড়ি
৮. বন্ধ ঘোড়ার গাড়ির মধ্যে লেখকদের সাথে বসল - দুইজন
৯. ট্যাক্সি রিজার্ভ করে দাঁড়িয়ে ছিলো - একজন আর্মড পুলিশ
১০. শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথমে নেয়া হয় - নারায়ণগঞ্জ থানায়
১১. পরবর্তীতে নেয়া হয় - ফরিদপুর জেলে
১২. লেখকরা স্টেশনে আসল - রাত ১১ টায়
১৩. জাহাজ ছাড়ল - রাত ১ টায়
১৪. জাহাজ গোয়ালন্দ ঘাটে পৌছল - রাতে
১৫. তারা পেট পরিষ্কার করার জন্য - ঔষধ খেল
১৬. মুহিউদ্দিন ভুগছে - প্লুরিসিস রোগে
১৭. লেখকদের নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে লাগল- ৪ দিন পর
১৮. লেখকের একটা ব্যারাম ছিলো - নাকে
১৯. লেখকের নাকে ঘা হয়ে গেছে - দু-তিন দিন পর
২০. বার বার অনশন করতে নিষেধ করছিলেন - সিভিল সার্জন সাহেব ।

✿গদ্য - বায়ান্নর দিনগুলো

✿লেখক পরিচিতি
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রাষ্ট্রের স্থপতি ও জাতির জনক। তাঁর জন্ম ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়।তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়ারা খাতুন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি ও দেশব্রতে যুক্ত হন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভগে অধ্যায়ন করেন। ভাষা-আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি বহু বার কারাবরণ করেছেন।বাঙ্গালির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করে এক সর্বাত্বক গড়ে তুলে তিনি সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় প্রাদেশিক নির্বাচনে লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে অসহযোগের ডাক দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন: “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বাঙ্গালির মুক্তিসংগ্রামকে নস্যাৎ করার জন্য ১৯৭১-এর ২৫এ মার্চ মধ্যরাতের পরে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙ্গালির এই অবিসংবাদিত নেতাকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে অর্থাৎ ২৬এ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশর স্বধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার মহান দায়িত্বে ব্রতী হন। বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবদ্দশায় কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন।

বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালি যিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।

✿পাঠ-পরিচিতি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (২০১২) গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও সহধর্মিণীর অনুরোধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে রাজবন্দি থাকা অবস্থায় এই আত্মজীবনী লেখা আরম্ভ করেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় ঢাকা সেনানিবাসে আটক থাকায় জীবনী লেখা বন্ধ হয়ে যায়। জীবনীটিতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে। যৌবনের অধিকাংশ সময় কারা প্রকোষ্ঠের নির্জনে কাটলেও জনগণ-অন্তপ্রাণ এ মানুষটি ছিলেন আপসহীন, নির্ভীক। জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, গভীর উপলব্ধি ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ তিনি এ গ্রন্থে সহজ সরল ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন ও জেল থেকে মুক্তিলাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারে বৎসরের পর বৎসর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে লেখক অনশন ধর্মঘট করেন। স্মৃতিচারণে ব্যক্ত হয়েছে অনশনকালে জেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও আচরণ, নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ ও তাদের কাছে বার্তা পৌঁছানোর নানা কৌশল ইত্যাদি। স্মৃতিচারণে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে ছাত্রজনতার মিছিলে গুলির খবর। সেই সঙ্গে অনশনরত অবস্থায় মৃত্যু অত্যাসন্ন জেনে পিতামাতা-স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভাবনা এবং অবশেষে মুক্তি পেয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে আসার স্মৃতি হৃদয়স্পর্শী বিবরণও পরিস্ফুট হয়েছে সংকলিত অংশে।

✿গুরুত্বপূর্ণ....

১. শেখ মুজিবুর রহমান ছোট ছোট চিঠি লিখল - ৪ টা
২. শোভাযাত্রা করে জেলগেটে ত্রসেছিল - ২২ তারিখে
৩. অপরিণামদর্শিতার কাজ করল - মুসলিম লীগ সরকার
৪. দুনিয়ার কোথাও গুলি করে হত্যা করা হয় নাই - মাতৃভাষা আন্দোলনের জন্য
৫. মানুষের যখন পতন আসে তখন ভুল হতে থাকে - পদে পদে
৬. খানসাহেব ওসমান আলীর বাড়ি - নারায়ণগঞ্জ
৭. ত্রক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে - ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে
৮. "তোমার অর্ডার এসেছে " উক্তিটি - মহিউদ্দিনের
৯. ডাবের পানি আনিয়েছেন - ডাক্তার সাহেব
১০. মহিউদ্দিন লেখকের অনশন ভাঙ্গিয়ে দিলেন- দুই চামচ ডাবের পানি দিয়ে।
১১. ফরিদপুর জেল থেকে লেখক বাড়ি পৌঁছলেন - ৫ দিন পর
১২. লেখকদের বড় নৌকায় মিল্লা ছিল - ৩ জন
১৩. কথার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে- রেণুর
১৪. আমরা আজ স্বাধীন হয়েছি - ২০০ বছর পর
১৫. প্লুরিসিস - বক্ষব্যাধি
১৬. প্রকোষ্ঠ - ঘর বা কুঠরি ।

.