সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম গুলো
১. বিশেষ্য পদ কাকে বলে ? উদাহরণ সহ বিশেষ্যপদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।
২. সর্বনাম বলতে কি বোঝ ?র্সবনামক কতভাগে করা যায় ? উদাহরণসহ লেখ।(চট্রা-১৬,ঢা-১৭,বরি-১৭)
৩.ক্রিয়া বলতে কী বুঝ? বাংলা ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।(ঢা-১৬,কু-১৭)
৪.সমাপিকা ও অসমাক্রিয়া ক্রিয়ার পার্থক্য উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
১। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম লেখ।
অথবা, আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :
ক) যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন িবা ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।
খ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।
গ) সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।
ঘ) শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ) সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন ি বা ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।
২। ণত্ব বিধান কী? ণত্ব বিধানের সূত্রগুলো লেখ।
বা, ণত্ব বিধান কী? উদাহরণসহ ণত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : যে রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানানে মূর্ধন্য (ণ) হয়, তাকে ণত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ণ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।
ক) তৎসম শব্দের বানানে ঋ, র এবং ষ এর পরে ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—চরণ, মরণ, ঋণ, তৃণ, ক্ষীণ, জীর্ণ।
খ) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের ক্ষেত্রে ট-বর্গীয় বর্ণের পূর্বে ‘ণ’ বসে। যেমন—বণ্টন, লুণ্ঠন, কণ্ঠ, খণ্ড, ভণ্ড, মুণ্ড, কুণ্ড।
গ) প্র, পরি, নির এই তিনটি উপসর্গের পর সাধারণত ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন—প্রণয়, প্রণাম, পরিণয়, নির্ণয়।
ঘ) নার, পার, রাম, রবীন্দ্র, চন্দ্র, উত্তর ইত্যাদি শব্দের পর ‘অয়ন’ বা ‘আয়ন’ থাকলে তার পরের ‘ন’ ধ্বনিটি ‘ণ’ হয়। যেমন—নারায়ণ, পরায়ণ, রামায়ণ, রবীন্দ্রায়ণ, চন্দ্রায়ণ, উত্তরায়ণ ইত্যাদি।
ঙ) র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ূ), র-ফলা ( ্র)- এর পর ধ্বনি ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য, য়, হ, ং থাকে, তবে তার পরে ‘ণ’ হবে। যেমন—শ্রাবণ, অর্ণব, গ্রহণ, দ্রবণ।
৩। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও য-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম নিয়মগুলোর মধ্যে পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধানের ব্যতিক্রম ৫টি নিয়ম হলো :
ক) সমাসবদ্ধ পদে দুই পদের পূর্ব পদে ঋ র ষ থাকলেও পরপদে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন—ত্রিনয়ন, ত্রিনেত্র, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার ইত্যাদি।
খ) ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন—অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন ইত্যাদি।
গ) বাংলা ক্রিয়াপদের আন্তঃস্থিত ন ণ হয় না।
যেমন—হবেন, মারেন, যাবেন, করেন, খাবেন ইত্যাদি।
ঘ) আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দে ষ হয় না। যেমন—জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট ইত্যাদি।
ঙ) সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয়যুক্ত পদেও ষ হয় না। যেমন—অদ্বিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।
৪। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের যেকোনো ৫টি নিয়ম লেখ।
উত্তর : প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের ৫টি নিয়ম দেওয়া হলো :
ক) এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।
খ) যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ, উ, ঊ উভয় শুদ্ধ। কেবল যেসব শব্দে ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন ি ু হবে। যেমন—তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পাঞ্জি, পলি ইত্যাদি।
গ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জ্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য ইত্যাদি।
ঘ) সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) হবে। যেমন—অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, সংঘটন, শুভংকর ইত্যাদি।
ঙ) সংস্কৃত ইন্ প্রত্যায়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলোতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন—গুণী-গুণিজন, প্রাণী-প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী-মন্ত্রিপরিষদ ইত্যাদি।
৫। বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :
ক) অ-তৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা হবে না। যেমন—অঘ্রাণ, ইরান, কান, কোরান, গভর্নর ইত্যাদি।
খ) বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন—কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশত, শখ ইত্যাদি।
গ) বাংলায় বিদেশি শব্দের আদিতে বর্ণবিশেষ সম্ভব নয়। এগুলো যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন—স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং ইত্যাদি।
ঘ) হস-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন—কলকল, করলেন, কাত, চট, জজ, ঝরঝর ইত্যাদি।
ঙ) ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন—বলে, হয়ে, দুজন, চাল ইত্যাদি।
৬। বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুযায়ী শ, ষ, স সম্পর্কিত বানানের ৫টি নিয়ম লেখ।
উত্তর : নিম্নে বাংলা শব্দে শ, ষ, স-এর ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখা হলো :
ক) ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আসা বিদেশি sh. tion. ssion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন—সেশন, স্টেশন।
খ) বিদেশি শব্দের উচ্চারণে ‘ং’ ধ্বনির ক্ষেত্রে স ব্যবহৃত হবে। যেমন-ক্লাস, অফিস।
গ) বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহৃত হয় না। যেমন—স্মার্ট, পোশাক।
ঘ) ঋ-কারের পরে মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন—ঋষি, ঋষভ।
ঙ) ট-বর্গীয় ধ্বনির পূর্বে মূর্ধন্য ষ যুক্ত হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ।
৭। ষ-ত্ব বিধান কী? ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।
উত্তর : যে রীতি অনুসারে তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ষ ব্যবহৃত হয়, তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ‘ষ’-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষত্ব বিধান।
নিচে ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো :
ক. তৎসম শব্দের বানানে র, ঋণ বা ঋ-কারের ( ৎ) পর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন—ঋষি, কৃষি, মহর্ষি।
খ. অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি এবং ক ও র-এর পরে স থাকলে তা ষ হয়। যেমন—ভবিষ্যৎ, মুমূর্ষু, ঊষা ইত্যাদি।
গ. ট, ঠ এই দুটি মূর্ধন্য বর্ণের পূর্বে সর্বদা ‘ষ’ হয়। যেমন—কষ্ট, নষ্ট, দুষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ, শ্রেষ্ঠ।
ঘ. ক, খ, প, ফ—এসব বর্ণের আগে ইঃ (ঃি বা উঃ ু ঃ) থাকলে সন্ধির বিসর্গের জায়গায় সর্বদা মূর্ধন্য-ষ বসবে। যেমন—পরি+কার = পরিষ্কার, আবিঃ + কার = আবিষ্কার, নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ, দুঃ+কর = দুষ্কর, চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ।
ঙ. ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতকগুলো ধাতুতে ‘ষ’ হয়। যেমন—অভিষেক, পরিষদ, অনুষঙ্গ, অনুষ্ঠান।
৮। বাংলা বানান ই-কার (ি) ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদারহণসহ লেখ।
উত্তর : বাংলা বানানে ই-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো :
ক. যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ-কার শুদ্ধ সেসব শব্দে ই-কার হবে। যেমন—চুল্লি, তরণি, পদবি, নাড়ি, মমি, ভঙ্গি ইত্যাদি।
খ. সব অ-তৎসম শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—খুশি, পাখি, শাড়ি ইত্যাদি।
ঘ. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন—বর্ণালি, গীতালি, সোনালি, রূপালি ইত্যাদি।
ঙ. পদাশ্রিত নির্দেশক হলে ই-কার বসবে। যেমন—ছেলেটি, বইটি, কলমটি, মেয়েটি ইত্যাদি।
৯। বাংলা বানানে উ-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম লেখ।>
উত্তর :
ক. অ-তৎসম শব্দে উ-কার বসবে। যেমন—কুমির, খুশি, টুপি, বুড়ি ইত্যাদি।
খ. মূল সংস্কৃত শব্দে উ-কার থাকলে তদ্ভব শব্দে উ-কার হবে। যেমন—পূজা-পুজো, পূর্ব-পুব ইত্যাদি।
গ. বিদেশি শব্দে উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন—কুর্দি, সুন্নি, কুরআন ইত্যাদি।
ঘ. ক্রিয়াবাচক শব্দে উ-কার হয়। যেমন—আসুন, করুন, ঘুরা, বসুন, ভাবুন ইত্যাদি।
ঙ. প্রত্যয়ান্ত শব্দযোগে উ-কার হয়। যেমন—পটুয়া, রাঁধুনি, হাতুড়ে, পিসতুতো ইত্যাদি।
১০। বাংলা বানানে আ-কার (া) ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো লেখো।
উত্তর : বাংলা বানানে আ-কার ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য নিয়মগুলো নিম্নরূপ :
ক. অ-কার বা আ-কারের পর অ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়। যেমন—হিম + আলয় = হিমালয়, সিংহ + আসন = সিংহাসন ইত্যাদি।
খ. আ-কারের পর ই-কার বা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ কার হয়। যেমন—মহা+ ঈশ= মহেশ।
গ. আ-কারের পর উ-কার বা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়। যেমন—গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি।
১১,প্রশ্ন : বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের ছয়টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
অথবা,
বাংলা একাডেমি প্রণীত আধুনিক বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর : বানান ব্যাকরণের একটি বিবর্তনশীল অধ্যায়। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা বানান আজকের পর্যায়ে এসেছে। বানানের এই পরিবর্তনের ধারায় বাংলা একাডেমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম থেকে ছয়টি নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো :
ক) তৎসম শব্দের বানান অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নদী, ভাষা ইত্যাদি।
খ) যেসব তৎসম শব্দের বানানে ই এবং ঈ বা এদের কার চিহ্ন অথবা উ এবং ঊ বা এদের কার চিহ্নের উভয় রূপই শুদ্ধ, সেসব শব্দের বানানে কেবল শুধু ই এবং উ বা এদের কার চিহ্ন বসবে। যেমন : বাড়ি, উনিশ ইত্যাদি।
গ) তৎসম এবং অতৎসম শব্দে কোথাও রেফের পরে দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্জন, অর্চনা, ধর্ম, কীর্তন ইত্যাদি।
ঘ) শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : ক্রমশ, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।
ঙ) সন্ধি দ্বারা গঠিত শব্দে ক খ গ ঘ এর আগে ং এবং ঙ দুটোই শুদ্ধ। যেমন : অহঙ্কার/অহংকার, সঙ্গীত/সংগীত ইত্যাদি।
চ) নঞর্থক অব্যয় পদ আলাদাভাবে বসবে। যেমন : জানি না, দেখি নি ইত্যাদি।
১২.প্রশ্ন : ণ-ত্ব বিধান কাকে বলে? ণ ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : ণ-ত্ব বিধান : যে বিধান অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানান 'ন' (দন্ত্য ন)-এর স্থানে 'ণ' (মূর্ধন্য ণ) ব্যবহৃত হয়, তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে। অর্থাৎ তৎসম শব্দের বানানে ণ-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণ-ত্ব বিধান। যেমন : ঋণ, মরণ, ভীষণ ইত্যাদি।
ণ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম:
১) সাধারণভাবে তৎসম শব্দে ঋ, র, ষ-এর পরে মূর্ধন্য ণ ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ- ঋণ, রণ, উষ্ণ ইত্যাদি।
২) র, ঋ, রেফ (র্ ), ঋ-কার ( ৃ), র-ফলা ( ্র) অথবা 'ক্ষ'-এর পরে যদি ক-বর্গের
৫টি (ক খ গ ঘ ঙ) এবং প-বর্গের ৫টি (প ফ ব ভ ম) এবং য য় হ- এই ১৩টি বর্গের যেকোনো একটি বা দুটি বর্ণ আসে, তবে তার পরে মূর্ধন্য (ণ) হবে।
উদাহরণ- অপরাহ্ন, পরায়ণ, রোপণ, গৃহিণী, প্রাঙ্গণ ইত্যাদি।
৩) ট-বর্গের ট ঠ ড ঢ- এই চারটি বর্ণের পূর্বে যদি ন্ ধ্বনি থাকে এবং ওই 'ন' ধ্বনি-সহযোগে যদি যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, তা হলে তা সর্বদা মূর্ধন্য (ণ) হবে। উদাহরণ-কণ্টক, কণ্ঠ, দণ্ড, বণ্টন ইত্যাদি।
৪) উত্তর, পর, পার, রবীন্দ্র, চন্দ্র, নার শব্দের পরে 'অয়ন'/'আয়ন' শব্দ হলে দন্ত্য ন-এর পরিবর্তে মূর্ধন্য ণ হয়। উদাহরণ- উত্তর+আয়ন=উত্তরায়ণ, পর+আয়ন=পরায়ণ, পার+আয়ন=পারায়ণ, রবীন্দ্র+আয়ন=রবীন্দ্রায়ণ, নার+আয়ন=নারায়ণ ইত্যাদি।
৫) পরি, প্র, নির- এই তিনটি উপসর্গের পরে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। উদাহরণ- পরিণত, প্রণাম, নির্ণয় ইত্যাদি।
১৩,প্রশ্ন : ষ-ত্ব বিধান কাকে বলে? ষ ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর : ষ-ত্ব বিধান :বানানে ষ প্রযুক্ত হবে কি না,তা যে বিধান দ্বারা নির্দেশ করা হয়, তাকে ষ-ত্ব বিধান বলে।ষ-ত্ব বিধান পাঠে আমরা জানতে পারি কোথায় ষ বসবে, কোথায় বসবে না।
ষ-ত্ব বিধানের পাঁচটি নিয়ম:
ক) অ, আ ছাড়া বাদবাকি সব স্বরবর্ণ ও তাদের কার চিহ্নে পরে ষ্ক বসে। যেমন : আবিষ্কার, ভীষণ, পুরুষ, ভূষণ, কৃষি, শেষ, দোষ, ঔষধ, পৌষ ইত্যাদি।
খ) ট এবং ঠ-এর আগে ষ বসে। যেমন : কষ্ট, অষ্টম, বৃষ্টি, নিষ্ঠা।
গ) কিছু কিছু শব্দে স্বভাবতই ষ বসে। যেমন : ভাষা, ভাষণ, আষাঢ়, বর্ষা, আভাষ, অভিলাষ ইত্যাদি।
ঘ) যে শব্দটি তৎসম নয়, তা হোক দেশি বা বিদেশি যেকোনো ভাষা থেকে আগত, সেই শব্দের বানানে কখনোই ষ বসবে না, স বা শ বসবে। যেমন : স্টোর, ফটোস্ট্যাট, স্টেশন, পোশাক ইত্যাদি।
ঙ) সাৎ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ষ বসে না, স বসে। যেমন : অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।
রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮
কার ও ফলা চিহ্ন সংক্ষিপ্ত পরিচয়
বাংলা ২য় পত্র
প্রশ্ন: কার ও ফলা কাকে বলে কার ও ফলার বিস্তারিত বর্ণনা দাও
উত্তর:- বাংলা স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে `কার' বলা হয় । ‘অ’ ভিন্ন স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে । স্বরবর্ণের এ ধরনেরসংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় ’কার”
। স্বরবর্ণের কার চিহ্ন ১০টি । যথা :
আ -কার (া ) :মা , বাবা ঢাকা | ৃ- কার (ৃ): কৃষক তৃণ পৃথিবী |
ই-কার ( ি) : কিনি ,চিনি . মিমি | এ- কার ( ে ) : চেয়ার , টেবিল মেয়ে |
ঈ- কার ( ী ): শশী , সীমান্ত, রীতি | ঐ-কার ( ৈ ) :তৈরি ,বৈরী, হৈচৈ |
উ- কার ( ু) :কুকুর , পুকুর . দুপুর । | ও -কার ( ে া ) : খোকা, পোকা , বোকা । |
ঊ- কার (ূ) : ভূত, মূল্য , সূচি | ঔ-কার ( ৌ) :নৌকা, মৌসুমী ,পৌষ |
ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলা হয়। বাংলায় ফলা চিহ্ন ৭ টি
য-ফলা (্য) : ব্যাঙ,খ্যাতি,সহ্য । | ন-ফলা (ন /ন): বিভিন্ন, যত্ন, রত্ন |
ব-ফলা (্ব) :পক্ব,বিশ্ব , অশ্ব । | ণ-ফলা (ণ):পুবাহ্ণ অপরাহ্ণ |
ম-ফলা (ম): পদ্ম,সম্মান , স্মরণ | ল-ফলা (ল) :ক্লান্ত, ম্লান , অম্ল |
র -ফলা (্র): প্রমাণ,শ্রান্ত,ক্রয় | ----- |
প্রশ্ন: গুরুচণ্ডালী দোষ কাকে বলে ?গুরুচণ্ডালী দোষ দূষণীয় কেন? উদাহরণসহ বিশ্লেষন করো ।
অথবা
ভাষায় সাধু ও চলিতরীতির মিশ্রণ দূষণীয়, ইহা বর্জন অবশ্যই কর্তব্য।’—আলোচনা করো।
উত্তর: গুরুচণ্ডালী দোষ: বাংলা ভাষার দুটি রূপ আছে। তার মধ্যে একটি সাধু এবং অপরটি চলিত। উভয়রীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। তাই একই রচনায় সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ অসংগত ও অশুদ্ধ। ভাষারীতির এ অশিষ্ট প্রয়োগকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণের ফলে ভাষা প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে কলুষিত হয়ে পড়ে। তাই সাধু ও চলিতরীতির মিশ্রণ দূষণীয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এ জন্য উভয়রীতির মিশ্রণ পরিহার করা অবশ্যই কর্তব্য।
সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে !!
যেমন- গরুর গাড়ি চলিত ভাষা সে স্থলে গরুর শকট ,শবদাহ স্থলে শবপোড়া ।
প্রশ্ন: ব্যাকরণ কাকে বলে ? ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো।
উত্তর: সংজ্ঞা: ‘ব্যাকরণ’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ। ভাষা বিশ্লেষণ করাই ব্যাকরণের কাজ। সুতরাং যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে শাস্ত্রকে বলে সে ভাষার ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা: পৃথিবীর প্রতিটি ভাষা একটি শৃঙ্খলা ও নিয়মবিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ভাষার এ নিয়মবিধি জানার জন্যই ব্যাকরণ পাঠ অপরিহার্য। একটা ভাষা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করার জন্যই সে ভাষার ব্যাকরণ জানতে হবে। ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেগুলোর সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগবিধি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যায়। এ ছাড়া ব্যাকরণ জানা থাকলে লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ সহজতর হয়। বাগধারা, ছন্দ ও অলংকার প্রকরণও ব্যাকরণের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। কাজেই ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।