মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

প্রবন্ধ লেখার নিয়ম কানুন



প্রবন্ধ

রচনা বা প্রবন্ধ লেখার নিয়ম কানুন প্রবন্ধ রচনা রচনা বলতে প্রবন্ধ রচনকে বোঝায়।

‘রচনা’ শব্দের অর্থ কোনো কিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তোলার নামই রচনা । রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা , চিন্তার ধারাবাহিকতা , সংযত বর্ণনা , ভাষার প্রঞ্জলতা ও যুক্তির সৃশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে।

‘প্রবন্ধ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন। ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে । প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

শিক্ষার্থীদের বেলায় রচনা ও প্রবন্ধ কথাটি সমার্থক। শিক্ষার্থীদের রচনায় নতুন কোনো ভাব বা তত্ত্ব থাকে না।একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা মনের ভাব বা বক্তব্যকে প্রকাশ করে। রচনা বা প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারে। এতে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলার দক্ষতা জন্মে। বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য যথার্থ শব্দ প্রয়োগ এবং উপমা, অলংকার ইত্যাদির ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষর্থী সচেতন হয়ে উঠে। প্রকাশের জড়তা কাটিয়ে ওঠা ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবন্ধ- রচনার অনুশীলন প্রয়োজন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি ,অভিজ্ঞতা , ব্যক্তিত্বের প্রকাশের জন্য প্রবন্ধ – রচনা অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই।

রচনার বিভিন্ন অংশ

রচনার প্রধান অংশ তিনটি – ক. ভুমিকা , খ. বিষয়বস্তু, গ.উপসংহার ।

ক.ভুমিকা :

এটি রচনার প্রবেশপথ। একে সূচনা , প্রারম্ভিকা বা প্রাক – কথনও বলা চলে। এতে যে বিষয়ে রচনা হবে, তার আভাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভূমিকা সংক্ষিপ্ত হওয়াই উচিত।

খ. বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য :
বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ।এ অংশে রচনার মূল বিষয়বস্তুর সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্ট করতে হয় ।বিষয় বা ভাবকে পরিস্ফুট করার জন্য প্রয়োজনে ছোট ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা যেতে পারে।তবে লক্ষ রাখতে হবে,অনুচ্ছেদগুলোর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য এ অংশে প্রয়োজনে উদাহরণ ,উপমা , উদ্ধৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

গ. উপসংহার:
বিষয়বস্তু আলোচনার পর এ অংশে একটা সিদ্ধান্তে আসা বলা হয় বলে এটাকে ‘উপসংহার ’ নামে অভিহিত করা হয়।এখানে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত বা অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

রচনার শ্রেণিবিভাগ :

বিষয়বস্তু অনুসারে রচনাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ক. বর্ণনা মুলক রচনা,থ.চিন্তামূলক রচনা।

বর্ণনামূলক রচনার সাধারণত স্থান,কাল,বস্তু,ব্যক্তিগত স্মৃতি –অনুভুতি ইত্যাদি বিষয়ে থাকে।ধান, পাট, শরৎকাল,কাগজ. টেলিভিশন,বনভোজন, শৈশবস্মৃতি ইত্যাদি রচনা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।চিন্তা মূলক রচনায় থাকে সাধারণত তত্ত্ব,তথ্য, ধ্যান–ধারণা,চেতনা ইত্যাদি।শ্রমের মর্যাদা,বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার,পরিবেশদূষণ,অধ্যবসায়,সত্যবাদিতা,চরিত্রগঠন প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনার মধ্যে পড়ে।

প্রবন্ধ- রচনার কৌশল :

১.বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি,রং,ধ্বনি,স্বাদ,গন্ধ,অনুভুতি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে ছবির মতো ফুটিয়ে তুলতে হবে।

২.বর্ণনামূলক রচনা লেখার সময় সময়সীমা এবং পরিসরের কথা মনে রেখে বিশেষ কিছু দিক বেছে নিতে হয় । সেগুলির সাহায্যে মূল বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয় ।

৩. রচনা লেখার সময় পরম্পরা বা ধারাবাহিকতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।চিন্তাগুলো যেন এলোমেলো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। জানা বিষয় ছাড়াও অনেক সময় অজানা বিষয় নিয়ে রচনা লিথতে হতে পারে।বিষয়ের ধারণাগুলো একটির পর একটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ভাবের কোনো অসংগতি না থাকে।

৪.শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রচনার আকার সাধারণত নির্দিষ্ট পরিসরের হয়ে থাকে ।পরিমিত পরিসরে তাই রচনার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অযথা বিষয়কে প্রলম্বিত করা ঠিক নয়। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। এক কথায় রচনা খুব ছোট বা খুব বড় হওয়া উচিত নয়।
৫.প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সন্ধি, সমাসবদ্ধ পদ, অপরিচিত বা অপ্রচলিত শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করা ভালো। বাগাড়ম্বর বা অলংকারবহুল শব্দ ব্যবহার করা হলে অনেক সময় বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষারীতির মাধ্যমে রচনাকে যথাসম্ভব রসমন্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করতে হয়।

প্রবন্ধ রচনায় দক্ষতা অর্জনের উপায় :

প্রবন্ধরচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো সহায়ক হতে পারে :
১. প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর প্রবন্ধ বা রচনা পড়তে হবে।পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ, সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে নানা বিষয়ের ধারণা জন্মায় এবং শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়।এতে লেখা সহজ হয়ে ওঠে।

২. প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।প্রবন্ধের বিষয়বস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ,প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই।একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে,সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

৩.ভাষারীতিতে সাধু এবং চলিত যেন মিশে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।অযথা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য,উদ্বৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪.প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও নিজের বক্তব্যকে আরো জোরালো করার জন্য প্রবাদ- প্রবচন,কবিতার পঙক্তি উদ্বৃতি ইত্যাদি সন্নিবেশ করা চলে।

৫. নিজের অভিজ্ঞতা , শিক্ষা, চিন্তাশক্তি,পঠন- পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপন কৌশল ইত্যাদি প্রয়োগ করে প্রবন্ধকে যথাসম্ভব হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করা উচিত।

বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য

ভূমিকা :
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীতও বসন্ত। এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে। বাংরার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল আলপনা আঁকে অফুরন্ত সৌন্দর্যের।তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে হৃদয়।গ্রীষ্মের দাবদহ,বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি,শরতের আলো–ঝলমলে স্নিগ্ধ আকাশ,হেমন্তের ফসলভরা মাঠ,শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করেছে।

ঋতুচক্রের আবর্তন :
বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান। এ দেশের উত্তরে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা ,দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর। সেখানে মিলিত রয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা ।মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে করে উর্বর , ফুল ও ফসলে করে সুশোভিত। নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি ।সে মাটির প্রাণরসে প্রাণ পায় সবুজ বন- বনানী, শ্যামল শস্যলতা। তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরূপ। নব নব সাজে সজ্জিত হয়ে এ দেশে পরপর আসে ছয়টি ঋতু।এমন বৈচিত্রময় ঋতুর দেশ হয়তো পৃথিবীর আর কোথা ও নেই।

ঋতু পরিচয় :
বর্ষপঞ্জির হিসেবে বছরের বার মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু।বৈশাখ –জৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল,ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল,কার্তিক অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল,পৌষ–মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন–চৈত্র বসন্তকাল ।তবে ঋতুর পালাবদল সবসময় মাসের হিসেব মেনে চলে না।তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না।অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু,আগমন ঘটে নি:শব্দে নতুন কোন ঋতুর।প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা- যাওয়া ।

গ্রীষ্ম :
ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। প্রচন্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়। নদী-নালা খাল –বিল শূকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের হলকা ছুটতে থাকে। ক্লান্তি আর তৃঞ্চায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের। কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ্য আসে ফলের সম্ভার নিয়ে। আম,জাম,কাঁঠাল,আনারস,লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।

বর্ষা:
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা।আকাশে দেখা দেয় সজল-কাজল মেঘ।অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি।পৃথিবীতে প্রাণের সাড়া।আষাঢ়- শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা।কথনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল,পুকুর -নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে। বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়।

সে রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় :
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর
কালি –মাখা মেঘে ওপারে আাঁধার ঘনিয়াছে দেখ চাহি রে।

বর্ষায় বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়।নদীতে দেখা দেয় ভাঙন।বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা।এমনকি শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে।বর্ষায় গরিব মানুষের দু:খ–কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।

শরৎ :
শরৎকাল বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু।বর্ষার বৃষ্টি– ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাম থাকে নীল।শিমুল তুলার মত সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে।এ সময় শিউলি ফুল ফোটে,নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল।নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরুপ ও মনলোভা। ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।

হেমন্ত :
হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল–সমৃদ্ধ ঋতু।তখন সোনার ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে।কৃষকের মুখে থাকে হাসি।কাস্তে হাতে ধান কাটাতে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুণ ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে।এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায়।

শীত :
শীত বাংলাদেশের হিমশীতল ঋতু।শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে।শতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না।শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষও প্রাণিকুল।শতের প্রচন্ডতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে।দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। শীতে বেশি কষ্ট পায় আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ ।শীত কেবল হীমশীতল বিবর্ণ ঋতু নয়।শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে। গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা –পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় ।

বসন্ত :
বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ ।শীতের রুক্ষ,বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের সম্ভার নিয়ে।বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুনসাজে সজ্জিত হয়।পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মার্ধুয সৃষ্টি করে ।

উপসংহার:
বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভুমি।ঋতু পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় রূপ। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন,শরতের কাশফুল,হেমন্তের নবান্নের উৎসব,শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প–পল্লব ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপণী।প্রকৃতির এমন বৈচিত্রময় রূপ পৃথিবীর আর কোথাওকি আছে ?


সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

ব্যাকরণ প্রশ্ন যেগুলো


প্রশ্ন: ই কার ঈ কার ব্যবহারের নিয়ম উদাহরণসহ লেখ ।

ই-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম  নিচে দেওয়া হলো
১. বাংলা ভাষায় ব্যবহূত তৎসম শব্দের বানানে ই-কার ও ঈ-কার দুটিরই প্রয়োগ আছে। কিন্তু অ-তৎসম শব্দের বানানে ‘ই’ ধ্বনির ক্ষেত্রে সর্বত্র কেবল ই-কার ব্যবহার করা সংগত। যেমন—পাখি, চিংড়ি, কেরানি ইত্যাদি।
২.  মৌলিক ক্রিয়াবাচক শব্দ ও পদে ‘ই’ ধ্বনির সর্বত্রই ই-কার হয়ে থাকে। যেমন— চিমটানো, বিলানো  ইত্যাদি।
৩. বিশেষণসূচক ও স্ত্রীবাচক ‘ঈ’ প্রত্যয়ান্ত সংখ্যাবাচক শব্দগুলো ছাড়া সাধারণভাবে সংখ্যাবাচক শব্দের বানানে ই-কার হয়। যেমন—তিন, চল্লিশ, আশি ইত্যাদি।
৪. প্রাণিবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার হয়। যেমন— প্রজাপতি, বুলবুলি, তিমি ইত্যাদি।
৫. স্ত্রীবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার হয়।   যেমন—দিদি, মামি, নানি ইত্যাদি।


ঈ-কার ব্যবহারের পাঁচটি নিয়ম—
১. কোনো কোনো স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার দেওয়া যেতে পারে।  যেমন: রানী, পরী, গাভী  ইত্যাদি ।
২.সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে।
যেমন- কী করছ? কী পড়ো?  কী যে করি! ইত্যাদি।
৩. ব্যক্তির কারী’তে (আরী) ঈ-কার হবে। যেমন-  সহকারী,  ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি।
৪. কোন শব্দের সাথে সন্ধীগঠিত কারণে শব্দান্তে “ঈ” যোগ হলে অবশ্যই ঈ-কার হবে।
যেমন: দায়+ঈ=দায়ী, মন্ত্র+ঈ=মন্ত্রী  ইত্যাদি।
৫. বেশি’ এবং ‘বেশী’ ব্যবহার: ‘বহু’, ‘অনেক’ অর্থে ব্যবহার হবে ‘বেশি’।  শব্দের শেষে যেমন: ছদ্মবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘বেশী’  ব্যবহার হবে।




রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

সাধু ও চলিত ভা্ষার পার্থক্য লেখ।

সাধু ও চলিত ভাষারীতির ৫ টি পার্থক্য লেখ ?


১ যে ভাষা ব্যাকরণের নিয়মকানুর পুরোপুরিভাবে মেনে চলে, তাকে সাধু ভাষা বলে।
২. সাধু ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী।
৩. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
৪. সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়।
৫. সাধু ভাষা নীরস ও প্রাণহীন
৬. সাধু ভাষা কৃত্রিম
৭. গদ্য, সাহিত্য, চিঠিপত্র ও দলীল লিখনে সাধু ভাষার ব্যবহার অধিক।

১.বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক ব্যবহৃত বা মৌখিকভাষাকে চলিত ভাষা বলে।
২. চলিত ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী নয়।
৩ চলিত ভাষায় তদ্ভব, অর্ধতৎসম, ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
৪ চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল।
৫.চলিত ভাষা সরস ও জীবন্ত।
৬ চলিত ভাষা কৃত্রিমবর্জিত।
৭.চলিত ভাষা বক্তৃতা, সংলাপ, আলোচনা ও নাট্য সংলাপের জন্য উপযুক্ত।

জাতীয় সংগীত

জাতীয় সংগীত
রচয়িতা :কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সুরকার: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার সোনার বাংলা গানটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এ গানের রচয়িতা ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিল। ১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এ গানটির প্রথম দশ লাইন সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয়সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।

Flower

আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি ।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে ।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি ॥

তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি ।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি ॥

ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি ॥

ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে ।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি