সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

সমোচ্চারিত শব্দ

দুটি শব্দের প্রায় একই রকম উচ্চারণ তাদের কে বলা হয় সমোচ্চারিত শব্দ । বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো শব্দ আছে যাদের উচ্চারণ একই রকম হলেও অর্থের দিক থেকে পার্থক্য বিদ্যমান। এ সব শব্দকে প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ বলে। সমোচ্চারিত শব্দের বানান এবং  এর অর্থ জানা না থাকলে বাক্যের অর্থের পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।এজন্য শব্দগুলোর উচ্চরণ বানান সঠিক কোনটি হবে তা  শেখা প্রয়োজন।
কতগুলো প্রায় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ অর্থ বাক্যেপ্রয়োগ দেওয়া হল।

অন্ন (ভাত)     --দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্ব দতিতে মানুষের মুখে অন্ন   ওঠা দায়
অন্য (অপর)  --সংস্কার , সংস্কার বাদ দিয়ে দুটো অন্য কথা বল ।

অনু (পশ্চাৎ)      --এই দেশে এক সময় স্ত্রীলোকদের  মৃত স্বামীর চিতায় অনুগমন করতে হতো ।
অণু (ক্ষুদ্রতম অংশ)  --এটুকু ভাতে আমার  পেটের অণুটুকুও ভরবে না।

অনুপ(উপমাহীন)
অনূপ(জলা ,বিল )

অনিষ্ট (ক্ষতি)
অনিষ্ঠ (নিষ্ঠাহীন)

অংশ (ভাগ)
অংস (কাঁধ)

অলিক (কপাল )
অলীক (অবাস্তব)

অর্ঘ (মুল্য)
অর্ঘ্য (পূজার উপকরণ)

অশ্ম (প্রস্তর )
অশ্ব (ঘোড়া)

অবদান (মহৎ কর্ম )
অবধান (মনোযোগ)

অনুদিত (যা উদিত হয় নি)
অনূদিত (ভাষান্তরিত)

অভি (সম্মুখে)
অভী (ভয়হীন)

অশন (আহার)
অসন (ক্ষেপণ)

অসুর (দৈত্য)
অশূর (যে বীর নয় )

অন্ত  ( মৃত্যু )
অন্ত্য (শেষ )
অন্তঃ  ( মধ্যে )

অবিরাম (অনবরত)
অভিরাম (সুন্দর )

অনিল (বাতাস )
অনীল  (নীল নয় যা )

অভিভাষণ (বক্তৃতা)
অভিবাসন (দেশান্তরে বসতি)

অবতরণ (নিচে নামা)
অবতারণ (প্রসঙ্গ উহ্থাপন)

আদি (মূল )
আধি (মনঃকষ্ট )
আঁধি (প্রবল ঝড়)

অশা (ভরসা)
আসা (আগমন)

আপন (নিজ)
আপণ (দোকান)

আবাস (বাসস্থান)
আভাস (ইঙ্গিত)
আভাষ (আলাপ, ভুমিকা)

আষাঢ় (মাসের নাম)
আসার  (বষণ)

আশি (সংখ্যা)
আশী (সাপের দাঁত)
আসি (আগমন করি)

আবরণ (আচ্ছাদন)
আভরন (অলংকার )

আত্ন (স্বয়ং)
আত্ত (গৃহীত)

অদাড় (আস্তাকুঁড়)
আধার (পাত্র)
আঁধার (অন্ধকার )

আবৃত্তি (সরব পাঠ )
আবৃতি (আবরণ)

অাসক্তি (অনুরাগ)
আসত্তি  (নৈকট্য)

ইতি (শেষ)
ঈতি (কৃষিতে উপদ্রপ)

উপাদান (উপকরণ )
উপাধান (বালিশ)

উৎপত (পাখি)
উৎপথ (কুপথ)

উদ্দেশ (সন্ধান)
উদ্দেশ্য (লক্ষ্য )

একদা (এককালে )
একধা (এক প্রকারে )

একতা (ঐক্য )
এক তা (কাগজের এক পাতা )

এণ (কৃষ্ণসার মৃগ)
এন ( দোষ /পাপ )

ওষধি (একবার ফল দেয় যে গাছ)
ঔষধি (ঔষধের গাছ)
কৃত-যা করা হয়েছে ক্রীত-যা কেনা হয়েছে কমল-পদ্ম কোমল-নরম কোণ-দিক কোন-








প্রশ্ন: অর্থপার্থক্য দেখিয়ে বাক্য রচনা কর ?
শমন ,সমন; সাম,শ্যাম; সামি,স্বামী; সাক্ষর ,স্বাক্ষর ;বারি ,বাড়ি; শারি,শাড়ি; হার, হাড়; দার ,দাঁড়;



রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮

বাগধারা বা বাগবিধি

বাগধারা বা বাগবিধি

অ ,আ

অকাল কুষ্মান্ড (অকেজো)অকাল কুম্মান্ড লোকটা গতকালও কাজটা শেষ করতে পরেনি ।
অকালপক্ব(ইঁচড়ে পাকা)এমন অকালপক্ব ছেলেকে যে শিক্ষকরা প্রশ্রয় দেবে না তাতে সন্দেহ নেই।
অকূল পাথার (মহাবিপদ) ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পেরে অনেক ছাত্র অকূল পাথারে পড়েছে।
অক্কা পাওয়া (মরে যাওয়া) যে কোন দিনই থুত্থুড়ে বুড়োটা অক্কা পেতে পারে।
অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি) মোড়ল সাহেব অগাধ জলের মাছ,তাঁকে বোঝা বড় কঠিন।
অগ্নিপরীক্ষা (কঠিন পরীক্ষা) ২০০৭ সালে বংলাদেশ ক্রিকেট দলের শ্রীলংকা সফর ছিল অগ্নিপরীক্ষা।
অগ্নিশর্মা (খুবই রাগান্বিত) লোকটাকে বেয়াববি দেখে বাবা রেগে অগ্নিশর্মা হলেন।
অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যবিড়ম্বনা) অদৃষ্টের পরিহাসে অনেক ধনকুবের পথের ফকির হয়ে গেল।
অনধিকার চর্চা(অজানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ)আমি ব্যবসায়ী মানুষ,সাহিত্যের আলোচনা আমার জন্যে অনধিকার চর্চা।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা(অনুরোধে কষ্ট স্বীকার)অনুরোধে অনেক ঢেঁকি গিলেছি,এথন আর পারছি না।
অন্ধের যষ্টি/নড়ি(অক্ষম লোকের একমাত্র অবলম্বন)একমাত্র নাতিটি বুড়ির অন্ধের যষ্টি।
অন্ধকার দেখা (বিপদে সমাধানের উপায় না দেখা)বাবার অকাল-মৃত্যুতে মেয়েটা চোখে অন্ধকার দেথতে লাগল।
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া(আন্দাজে কিছু করা) অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে আসল ঘটনাটা জেনে এসো।
অমবস্যার চাঁদ(দুর্লভ ব্যক্তি বা বস্তু) আপনি দেখেছি অমবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছেন।আপনার দেখাই মিলছে না।
অরণ্যে রোদন(নিষ্ফল অনুনয়) লোকটা হাড়কৃপণ,ওর কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই কথা।
অর্ধচন্দ্র (গলা ধাক্কা) দারোয়ান উটকো লোকটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে দিলেন।
আকাশকুসুম(অবাস্তব ভাবনা) শহরের সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া অনেকের জন্য এখন আকাশকুসুম ব্যাপার।
আকাশ থেকে পড়া(স্তম্বিত হওয়া) পাপিয়ার কথা শুনে তাসলিমা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
আকাশ-পাতাল(সীমাহীন) শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রায় এখনও আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
আকাশ ভেঙে পড়া (মহাবিপদে পড়া) বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
আকাশে তোলা(অতিরিক্ত প্রশংসা করা) কেউ কেউ স্বার্থ হাসিলের জন্য কমকর্তাদের আকাশে তোলে।
আকাশের চাঁদ(দুর্লভ বস্তু) সেরা কলেজে ভর্তি হতে পেরে ভাইয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন।
আক্কেল গুডুম(হতবুদ্ধি অবস্হা) ছেলেটার কথাবার্তা শুনে তো আমার আক্কেল গুডুম।
আক্কেল সেলামি(বোকামির দন্ড) ধাপ্পাবাজ লোকটার পাল্লায় পড়ে টাকাগুলো আক্কেল সেলামি দিতে হল।
আখের গোছানো(ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়া) দুর্নীতিবাজরা আখের গুছিয়ে নিলেও পার পাচ্ছে না।
আঙুল ফুলে কলা গাছ(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া) শেয়ারের ব্যবসায় কুদ্দুস সাহেব এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ।
আট কপালে (হতভাগ্য) আট কপালে লোকের ক্ষেত্রে চাকরি জোটা মুশকিল।
আঠারো মাসে বছর(ঢিলেমি) আমার মতামা সব কাজে দেরি করেন।সবাই বলেন তার নাকি আঠার মাসে বছর।
আদাজল খেয়ে লাগা(উঠে পড়ে লাগা) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য মাহমুদ আদাজল খেয়ে লেগেছে।
আদায় কাঁচকলায়(শত্রুভাবাপন্ন্) ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে আদায় কাঁচকলায় সম্পক,কেউ কাউকে সাহায্য করে না।
আবোল–তাবোল(এলোমেলো কথা) আসল ঘটনাটা লুকুতে গিয়ে সে আবোল–তাবোল বকে চলছে।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অকেজো লোক) ও একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি,ওকে দিয়ে কাজটা হবে না।
আমলে আনা(গুরুত্ব দেওয়া) পুলিশ দারোআনের কোন কথাই আমলে আনল না।
আলালের ঘরের দুলাল(বড় লোকের আদুরে ছেলে) এই আলালের ঘরের দুলালটিকাজ দেখলে ভয় পায়।
আষাঢ়ে গল্প (বানানো কথা) সময়মত কাজে আসোনি, তার জন্য আষাঢ়ে গল্প বলার দরকার কি?
আসমান-জমিন ফারাক (বিপুল ব্যবধান) ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় আসমান –জমিন ফারাক।
আস্তানা গড়া(সাময়িকভাবে কোথাও থাকতে শুরু করা) বানভাসি লোকগুলো বাঁধের ওপর আস্তানা গেড়েছে।
আহলাদে আটখানা(আনন্দে আত্নহারা) মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে সে আহলাদে আটখানা।

ই,ঈ,উ, ঊ,এ

ইঁচড়ে পাকা (অল্প বয়সে পেকে গেছে এমন)ওই ইঁচড়ে পাকা ছেলেটাকে পাত্তা দিলেই ঘাড়েচেপে বসবে।
উভয় সংকট(দু দিকেই বিপদ) বিজ্ঞান না বাণিজ্য,কোনটা পড়ব এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছি।
উলুবনে মুক্তো ছড়ানো(অপাত্রে মুল্যবান কিছু প্রদান) ওকে জ্ঞান দেওয়া আর উলোবনে মুক্তো ছড়ানো এখই কথা।
এঁটে উঠা(সমানে পাল্লা দিতে পারা) তোমার সঙ্গে এঁটে উঠা কঠিন।
এক কথার মানুষ(কথা রাথে এমন) আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন,আমি এক জকথার মানুষ।
একচোখা(পক্ষপাতদুষ্ট) একচোখা লোকের কাছে কখনো সুবিচার আশা করা যায় না।
এলাহি কান্ড(বিরাট আয়োজন) সওদাগর সাহেবের মেয়ের বিয়ে,এলাহি কান্ড তো হবেই।
একাই একশ(যথেষ্ট সমথ) ঐ পুঁচকো ছোঁড়াকে মোকাবেলার জন্য আমি একাই এক শ।
এসপার ওসপার(যে–কোনভাবে মীমাংশা) ঝামেলাটা আর সহজ হয় না।এবার এসপার ওসপার করতেই হবে।
ওত পাতা(সুযোগের অপেক্ষা থাকা) বিড়ালটা মাছ চুরি করার জন্য ওত পেতে রয়েছে।

ক,খ,গ

কড়ায় গন্ডায় (সূক্ষ্ম হিসেব অনুযায়ী) ও তাঁর পাওনা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিতে এসেছিল।
কথার কথা(হালকা কথা) আমি কথার কথায় একটি মন্তব্য করেছি আর তাতেই রাজু ক্ষেপে গেল।
কপাল ফেরা (সৌভাগ্য লাভ) ছেলেটা হঠৎ বিদেশে চাকরি পাওয়ায় চাচা- চাচির কপাল ফিরেছে।
কলুর বলদ(অন্যের জন্য একটানা খাটুনি) সংসারের হাল ধরতে ছোট মামা কলুর বলদের মত ঘানি টানছেন।
কাঁচা পয়সা(অল্প আয়াসে নগদ উপার্জন) দুর্নীতি করে অনেকে কাঁচা পয়াসা কামাই করছে।
কাঁঠালের আমসত্ব(অসম্ভব বস্তু) বাংলায় ১০০-তে ১০০ নম্বর পাওয়া কাঁঠালের আমসত্বের মতো।
কাছাঢিলা(অগোছালো স্বভাবের) যেমন কাছাঢিলা লোক তুমি,ছাতা তুমি হারাবে না তো কে হারাবে।
কাঠখড় পোড়ানো(নানারকম চেষ্টা ও পরিশ্রম) কাজটা হাসিলের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হল।
কাঠের পুতুল(নির্জীব, অসার লোক) কোন কোন মন্ত্রী হয়ে যান কাঠে পুতুল,সব কাজ চালান তাঁর সচিব।
কান খাড়া করা(মনোযোগী হওয়া) আদালতে কী রায় হয় তা শোনার জন্য আইনজীবিরা কান খাড়া করে রইল।
কান পাতলা(বিশ্বাসপ্রবণ) বড় সাহেব এমন কান পাতলা যে তার অধীন কাজ করাই মুশকিল।
কান ভারী করা(কারও বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি) তুমি নাকি আমার বিরূদ্ধে বড়কর্তার কান ভারী করেছ?
কুল কাঠের আগুন(তীব্র মন:কষ্ট) লাঞ্ছনা অপমানে তার মনের মধ্যে কুল কাঠের আগুন জ্বলতে লাগল।
কূপমন্ডূক(সংকীর্ণমনা লোক) আমাদের সমাজে কূপমন্ডূক লোকের অভাব নেই।
কেউকেটা (নিন্দার্থে গণ্যমান্য লোক) আপনি যে এমন কেউকেটা যে আপনার কথা শুনতেই হবে!
কেঁচে গন্ডূষ করা(পুনরায় প্রথম থেকে শুরূ করা) পুরো হিসাবটাই ভুল হয়েছে।আবার কেঁচে গন্ডূষ করতে হবে।
কোমর বাঁধা(কাজে উঠে পড়ে লাগা) পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য তাহমিনা কোমর বেঁধে পড়াশুনায় লেগেছে।
খন্ড প্রলয়(তুমুল কান্ড) মোবাইল ফোন হারানোকে কেন্দ্র করে পাশের বাসায় একটি খন্ড প্রলয় ঘটে গেছে।
খয়ের খাঁ(খোশামোদকারী,চাটুকার) ক্ষমতাসীনদের চারপাশে খঁয়ের খাঁ লোকদের ভিড় জমে যায়।
খুঁটির জোর (পৃষ্ঠপোষকের সহায়তা) খুঁটির জোর আছে বলেই বারবার বদলি ঠেকায়।
গড্ডালিকা প্রবাহ(অন্ধের মতো অনুসরণ) বিত্তের মোহে সমাজের অনেক লোক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়।
গন্ডারের চামড়া(অপমান বা তিরস্কার গায়ে লাগায় না এমন) ওর বোধ হয় গন্ডারের চামড়া,তাই শত অপমানেও কোনো ভাবান্তর নেই।
গদাই লশকারি চাল(ঢিলিমি) এমন গদাই লশকরি চালে চললে কাজটা এ মাসে ও শেষ হবে না।
গলগ্রহ(দায় বা বোঝা) অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।
গাছে তুলে মই কাড়া(কাজে নামিয়ে সরে পড়া) তোমার ভরসায় এত বড় কাজে হাত দিয়েছি।এখন গাছে তুলে মই কেড়ে নিচ্ছ যে।
গায়ে পড়া(অযাচিত ঘনিষ্ঠতা) অমন গায়ে পড়া লোককে চেয়ারম্যান সাহেব পাত্তা দিবেন বলে মনে হয় না।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো(কোন দায়িত্ব গ্রহণ না করা) ও নেবে দায়িত্ব?গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানোই যে ওর স্বভাব।
গোঁয়ার গোবিন্দ(নির্বোধ ও একগুঁযে লোক) কাজটা বুঝে শুনে করবে।গোঁয়ার গোবিন্দের মতো করলে চলবে না।
গোড়ায় গলদ (মূল কিংবা শুরুতে ভুল) বিয়ের আয়োজনে গোড়ায় গলদ ছিল বলে এত বিশৃঙ্থলা।
গোবর গণেশ (বোকা,অকর্ণন্য লোক) ছেলেটার না আছে বুদ্ধি, না পারে কোন কাজ ও একেবারে গোবর গণেশ।
গোল্লায় যাওয়া(উচ্ছন্নে যাওয়া) বাবামায়ের আদরের ঠেলায় ছেলেটা গোল্লায় গেছে।

ঘ,ঙ,চ,ছ,জ,ঝ,ঠ

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া(উদ্বেগ–উৎকন্ঠা খেকে স্বস্তি) ছেলেটা ঘরে ফিরে আসায় সবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
ঘাস কাটা(বাজে কাজে সময় নষ্ট করা) অণ্যেরা কাজ করবে আর তুমি বসে বসে ঘাস কাটবে ?তা হবে না।
ঘোড়া রোগ(উৎকট বাতিক) ভাত জোটে না,বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করতে চায় গরিবের ঘোড়ারোগ আর কি!
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া(ওপরওয়ালাকে এড়িয়ে কাজ হাসিল) সরকারি অফিসে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া কঠিন।
গোড়ার ডিম (অস্তিত্বহহীন বস্তু) ও তোকে বইটা দেবে?ঘোড়ার ডিম দেবে।
চাঁদের হাট(সুখের সংসার) অবসর জীবনে শরীফ সাহেব কৃতি সন্তানদের নিযে চাঁদের হাট বসিয়েছেন।
চোখে চোখে রাখা(সতর্ক নজরদারি) অজানা–অচেনা কেউ এলে তাকে চোখে চোখে রাখা দরকার।
চোখে ধুলো দেওয়া(ফাঁকি দেওয়া) পুলিশের চোথে ধুলো দিয়ে অপরাধী গা ঢাকা দিয়েছে।
চোখের বালি(চক্ষুশূল,ক্রোধ বা বিরক্তির কারণ) মা–মরা ছেলেটা কত শান্ত,তবু সে তার সৎ-মায়ের চোখের বালি।
ছিনিমিনি খেলা(বেহিসাবি খরচ) উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে অনেক ছিনিমিনি থেলা হয়েছে।
ছেঁকে ধরা (ঘিরে ধরা): বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সবাই কারখানার মালিককে ছেঁকে ধরেছে।
ছেলের হাতের মোয়া (সহজপ্রাপ্য জিনিস): ভালো ফলাফল ছেলের হাতের মোয়া নয়,এর জন্য যথেষ্ট পড়াশুনা দরকার।
জগাখিছুড়ি(অবাঞ্ছিত জটিলতা) তোমার জগাখিছুড়ি কাজ দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে উঠে।
জিলিপির প্যাঁচ (কুটিল বুদ্ধি):ওর মনে যে এত জিলিপির প্যাঁচ তা বুঝব কি করে।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা(সুযোগ বুঝে কাজ করা):ঝোপ বুঝে কোপ মারতে না পারলে ব্যাবসায়ে টেকা মুশকিল।
টনক নড়া(চৈতন্য হওয়া)ব্যবসায় লাঠে উঠতেই তার টনক নড়ল ।
ঠাঁট বজায় রাথা(অভাব লুকানো)জমিদরি নেই,কিন্তু চৌধুরী বংশ এখন ও জমিদারি ঠাঁট বজায় আছে।
ঠোঁট কাটা(স্পষ্টবাদী) ঠোঁট কাটা লোক অনেকেরই অপছন্দ।

ড,ঢ,ন,প,ফ,ব

ডুমুরের ফুল(অদৃশ্য ব্যক্তি বা বস্তু) কী ব্যাপার ! তুমি হঠাৎ ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে?
ঢিমে তেতালা(খুবই মন্থর গতি) এমন ঢিমে তেতালাভাবে পড়াশুনা করলে সিলেবাস শেষ হবে না।
তালকানা (তালজ্ঞান বর্জিত) উনি তালকানা লোক।ওর কাছে পরিপাটি কাজ আশা করছ কেন?
থ বনে যাওয়া(বিস্ময়ে হতবাক হওয়া) লোকটার কান্ড দেখে সবাই থ বনে গেল।
তাসের ঘর (ভঙ্গুর ): ওদের বন্ধুত্ব তাসের ঘরের মত ভেঙে গেছে।
তামার বিষ (অর্থের কুপ্রভাব) তামার বিষে ওরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
দা–কুমড়ো (নিদারুণ শত্রুতা) ভাইয়ে ভাইয়ে এখন একেবারে দা-কুমড়ো সম্বন্ধ।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) ধনীর দুলাল ছেলেটাকে দুধের মাছিরা ঘিরে রেখেছে।
দুমুখো সাপ(দু রকম আচরণকারী,ক্ষতিকর লোক) লোকটা আস্ত দুমুখো সাপ,তোমাকে বলেছে একরকম আমাকে অন্যরকম।
ধরাকে সরা জ্ঞান করা(অতিরিক্ত দম্ভে কিছুই গ্রাহ্য না করা) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করল।
ননির পুতুল (অল্প শ্রমে কাতর) ফারিহা তো ননির পুতুল,এত পরিশ্রমের কাজ ওকে দিতে হবে না।
নাক গলানো(অনধিকার চর্চা) যে-কোন ব্যাপারে নাক গলানো কারো কারো স্বভাব।
নেই আাঁকড়া(নাছোড়বান্দা) কী যে নেই আাঁকড়া লোকের পাল্লায় পড়েছি!রেহাই মিলছে না।
পটল তোলা(মারা যাওয়া) চাঁদাবাজরা পটল তুলছে শুনে এলাকার লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
পথে বসা(সর্বস্বান্ত হওয়া) বন্যায় সব হারিয়ে অনেকে এবার পথে বসেছে।
পালের গোদা(দলের চাঁই,সর্দার) পুলিশ পালের গোঁদোকে কোর্টে চালান দিয়েছে।
পুকুর চুরি(বড় রকম চুরি):রাস্তা মেরামত না করেই ঠিকাদার ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে, এ যে রীতিমতো পুকুর চুরি।
ফাঁক–ফোকর(দোষত্রুটি) আইনের ফাঁক-ফোকর গলে সন্ত্রাসীরা জামিনে খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
ফেঁপে উঠা(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া) চোরাচালানি করে কেউ কেউ রাতারাতি ফেঁপে উঠেছে।
ফোঁড়ন কাটা(টিপ্পনী কাটা)কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কাটা ওর স্বভাব।
ফোপড়দালালি(নাক গলানো আচরণ) সব ব্যাপারে ওর ফোপড়দালালি করার অভ্যাস।
বকধার্মিক(ভন্ড) সমাজে বকধার্মিক লোকের অভাব নেই।
বর্ণচোরা আম(কপট লোক) লোকটা একটা বর্ণচোরা আম ।বাইরে থেকে ওকে বোঝা মুশকিল।
বাঁ হাতের ব্যাপার(ঘুষ দেওয়া-নেওয়া) এ অফিসে বাঁ হাতের ব্যাপার ছাড়া ফাইল নড়ে না।
বাজিয়ে দেখা(পরখ করা) সে ঘটনাটা জানে কিনা একটু বাজিয়ে দেখতে হবে।
বাপের বেটা(সাহসী)শাবাশ! বাপের বেটার মতই করছিস কাজটা।
বালির বাঁধ(ক্ষণস্হায়ী) বড়লোকের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর বালির বাঁধ একই কথা।
বিড়াল–তপস্বী(ভন্ড সাধু) সমাজে মাঝে মাঝে বিড়াল তপস্বীদের তৎপরতা বেড়ে যায়।
বিদ্যার জাহাজ(মূর্খ বা অশিক্ষিত লোক) যে নিজে বিদ্যার জাহাজ সে অন্যকে কী শেখাবে?
বুকের পাটা(সাহস) মাস্তানটার বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ করছিস!তোর বুকের পাটা আছে বলতে হবে।
বুদ্ধির ঢ়েঁকি(নির্বোধ) এই কাজের জন্য চাই চালাক-চতুর লোক,বুদ্ধির ঢেঁকি দিয়ে একাজ হবে না।

ভ,

ভিজে বেড়াল(বাইরে নীরিহ ভেতরে ধূত) ভিজে বেড়ালদের অনেক সময় চেনা যায় না।
ভরাডুবি(সর্বনাশ): আদমজি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটচাষিদের এবার ভরাডুবি হয়েছে।
ভূতের বেগার(অযথা শ্রম দান)সরাক্ষণ ভুতের বেগার খাটছি, লাভ কিছুই হবে না।
মামাবাড়ির আবদার(চাইলেই পাওয়া যায় এমন):গতকাল ১০০ টাকা নিলে।আজ আবার ২০০ টাকা চাইছ।একি মামাবাড়ির আবদার নাকি?
মিছরির ছুরি(আপাতত মধুর হলেও শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক) তোমার কথাগুলো ঠিক যেন মিছরির ছুরি।
যক্ষের ধন(কৃপণের কড়ি): পৈতৃক ভিটেটা সে যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছে।
রুই–কাতলা(প্রভাবশালী): সমাজের রুই–কাতলাদের দাপটে চুনোপুঁটিদের আবস্হা এখন কাহিল।
লেফাফা দুরস্ত(বাইরের ঠাঁট ষোল আনা): ঘরে যে এমন টানাটানি,তা ওর লেফাফা ভাব দেখে কে বুঝবে?
রাশভারি(গম্ভীর) আমাদের প্রধান শিক্ষক রাশভারি লোক।সবাই ওকে ভয় পায়।
শাপে বর(অনিষ্টে ইস্ট লাভ) আমার বড়মামা চাকরি না পেয়ে ব্যবসায়ে ঢুকেছেন । এতে তাঁর শাপে বর হয়েছে।
সেয়ানে সেয়ানে(দুই সমান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে) দুজনের মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে অনেকদিন।
সোনায় সোহাগা(সার্থক মিল) পরীক্ষায় পাস করতে না–করতেই এমন ভালো চাকরি পাওয়া,এ যে সোনায সোহাগা!
হ-য-ব-র-ল(উল্টোপাল্টো) অনুষ্ঠানের হ-য-ব-র ল দেথে চলে এসেছি।
হাড়-হাভাতে(একেবারে নি:স্ব): হাড়-হাভাতে ছেলেটাযে কীভাবে এই সংসারে এসে জুটল বলতে পারবে না।
হাতটান(ছেটখাট চুরির অভ্যাস) ছেলেটা কাজে-কর্মে বেশ ওস্তাদ।তবে দোষের মধ্যে হাতটান আছে।
হাতের পাঁচ(শেষ সম্বল)হাতেরপাঁচ হিসাবে হাজারখানেক টাকা আছে।তোমাকে ধার দেব কেমন করে?
হালে পানি পাওয়া (কাজ হাসিলের উপায় না পাওয়া)

এক কথায় প্রকাশ


Flowers in Chania এক কথায় প্রকাশ


অকালে পক্ব হয়েছে যে – অকালপক্ব।
অক্ষির সম্মুখে বর্তমান – প্রত্যক্ষ।
অভিজ্ঞতার অভাব আছে যার – অনভিজ্ঞ।
অহংকার নেই যার – নিরহংকার।
অনেকের মধ্যে একজন – অন্যতম।
অনুতে বা পশ্চাতে বা পরে জন্মেছে যে – অনুজ।
অশ্বের ডাক – হ্রেষা।
অবশ্য হবে বা ঘটবে যা – অবশ্যম্ভাবী।
অনুসন্ধান করবার ইচ্ছা – অনুসন্ধিৎসা।
অনুসন্ধান করতে ইচ্ছুক যে – অনুসন্ধিৎসু।
অন্য গাছের ওপর জন্মে যে গাছ- পরগাছা্।
অপকার করবার ইচ্ছা – অপচিকীর্ষা।
অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে কাজ করে যে – অবিমৃষ্যকারী।
অগ্রে জন্মেছে যে – অগ্রজ।
অতি শীতও নয়, অতি উষ্ণও নয় – নাতিশীতোষ্ণ।
অতি কর্মনিপুণ ব্যক্তি – দক্ষ।
অতি দীর্ঘ নয় যা – নাতিদীর্ঘ।
অতিক্রম করা যায় না যা – অনতিক্রমনীয়/অনতিক্রম্য।
অরিকে দমন করে যে – অরিন্দম।
অণকে দেখা যায় যার দ্বারা --অণুবীক্ষণ
অবজ্ঞায় নাক উচু করে যে --উন্নাসিক
অতীতের বিষয়ের জন্য শোক প্রকাশ --গতানুশোচনা।
অতিকষ্টে যা নিবারণ করা যায় --দুর্নিবার ।
অল্প পরিশ্রমে শ্রান্ত নারী --ফুলটুসি।
অলংকারের ধ্বণি --শিঞ্জন।
অনুচিত বল প্রয়োগকারী --হঠকারী।
অহনের পূর্বাংশ--পূর্বাহ্ণ
অহনের মধ্যাংশ --মধ্যাহ্ন
অবিবাহিত ব্যক্তি--অকৃতদার /অনূঢ়
আপনাকে ভূলে থাকে যে --আত্নভোলা
অশ্ব রাখার স্থান----আস্তাবল
অর্ধেক সম্মত-- নিমরাজি।


আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত – আদ্যন্ত, আদ্যোপান্ত ।
আকাশে উরে বেড়ায় যে – আকাশচারি, খেচর ।
আকাশে গমন করে যে- বিহগ, বিহঙ্গ ।
আচারে নিষ্ঠা আছে যার – আচারনিষ্ঠ ।
আপনাকে কেন্দ্র করে যার চিন্তা – আত্মকেন্দ্রিক ।
আপনাকে যে পণ্ডিত মনে করে- পণ্ডিতম্মন্য ।
আপনার রং লুকায় যে বা যার প্রকৃত বর্ণ ধরা যায় না – বর্ণচোরা ।
আট প্রহর যা পরা যায় – আটপৌরে ।
আয় অনুসারে ব্যয় করে যে – মিতব্যয়ী ।
আল্লার অস্তিত্বে বিশ্বাস আছে যার – আস্তিক ।
আল্লার অস্তিত্বে বিশ্বাস নেই যার – নাস্তিক ।
আকাশে বেড়ায় যে --খেচর, আকাশচারী
আকাশের মাধ্যমে আগত বাণী---আকাশবাণী।
আকাশ ও পৃথিবী ---ক্রন্দসী।
আঘাতের বিপরীত---প্রত্যাঘাত
আকাশের রং---আকাশী
আগামী কালের পরের দিন--পরশু
আকালের বছর ---দুর্বছর
আকাশে যে বিচরণ করে-- নভশ্চর
আবক্ষ জলে নেমে স্নান--আবগাহন
আশা ভঙ্গজনিত খেদ----বিষাদ
ই ঈ
ইতিহাস রচনা করেন যিনি – ঐতিহাসিক ।
ইতস্তত ভ্রমণ--বিচরণ প্রসর।
উসলামি শাস্ত্র অনুযায়ী নির্দেশন---ফতোয়া
ইতিহাস বিষয়ে অভিজ্ঞ যিনি – ইতিহাসবেত্তা ।
ইন্দ্রকে জয় করেছে যে – ইন্দ্রজিৎ ।
ইন্দ্রিয়কে জয় করেছে যে – জিতেন্দ্রিয়ি ।
ঈষৎ আমিষ বা আঁষ গন্ধ যার – আঁষটে ।]
ঈষৎ রক্তবর্ণ--আরক্ত
ঈষৎ পীত বর্ণ---আপীত।
ঈষৎ আমিষ (আশ)গন্ধ যার--আঁষটে


উপকার করবার ইচ্ছা – উপচিকীর্ষা ।
উপকারীর উপকার স্বীকার করে যে – কৃতজ্ঞ ।
উপকারীর উপকার স্বীকার করে না যে – অকৃতজ্ঞ ।
উপকারীর অপকার করে যে – কৃতঘ্ন ।
একই সময়ে বর্তমান – সমসাময়িক ।
একই মায়ের সন্তান – সহোদর ।
এক থেকে শুরু করে ক্রমাগত – একাদিক্রমে ।
একই গুরুর শিষ্য – সতীর্থ ।
উদগিরণর করা হয়েছে এমন--উগীর্ণ
উল্লেখ করা হয় না যা ---উহ্য
উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগের ক্ষমতা ---প্রত্যূৎপন্নমতিত্ব
উদ্দাম নৃত্য --তাণ্ডব
উর্ধ্ব থেকে নেমে আসা----অবতরণ।
ঋতুতে ঋতুতে যজ্ঞ করেন যিনি---ঋৃত্বিক।
ক খ
কর্ম সম্পাদনে পরিশ্রমী --কর্মঠ
কথায় বর্ণনা যায় না যা--- অনির্বচনীয়
কষ্টে নিবারণ করা যায় যা বা যা সহজে নিবারণ করা যায় না -– দুর্নিবার
কষ্টে লাভ করা যায় যা বা যা সহজে লাভ করা যায় না -– দুর্লভ
কোনভাবেই নিবারণ করা যায় না যা--- অনিবার্য
কোন কিছুতেই ভয় নেই যার--- নির্ভীক, অকুতোভয়
কেউ জানতে না পারে এমনভাবে- অজ্ঞাতসারে সম্মুখে সংঘটিত –- চাক্ষুষ
কৃষ্ণ পক্ষের শেষ তিথি--আমাবস্যা
কথায় যা প্রকাশ করা যায় না --অনির্বচনীয়
বলা উচিত নয় যা --অকথ্য /অবাচ্য
কটিদেশ থেকে পদতল পর্যন্ত অংশ--অধঃকায়।
কাম ক্রোধ লোভাদির বশীভূত---অজিতেন্দ্রিয়।
কখনও যা চিন্তা করা যায় না --অচিন্তনীয়
কোথাও উচু কোথাও বা নিচু---বন্ধুর

গ ঘ
গোরু রাখার স্থান--গোয়াল
গুরুুর ভাব ---গরিমা
গাছে উঠতে পটু যে --গেছো
গো দুহনকারী কন্যা --দুহিতা
গাড়ি চালায় যে --গড়োয়ান
গমন করতে পারে যে ---জঙ্গম
গমন করার ইচ্ছা ---গন্তকাম
ঘোড়ার গাড়ির চালক ---কোচওয়ান
ঘোড়া রাখার স্থান---ঘোড়াশাল
ঘোড় অন্ধকার রাত্রি---তামসী
ঘটনার বিবরণ দান ---প্রতিবেদন।
ঘোড়ার ডাক -----হ্রেষা

চ ছ জ ঝ
চৈত্র মাসের ফসল –- চৈতালি
জীবিত থেকেও যে মৃত – জীবন্মৃত
জানার ইচ্ছা – জিজ্ঞাসা
জানতে ইচ্ছুক – জিজ্ঞাসু
জ্বল জ্বল করছে যা – জাজ্বল্যমান
জয় করার ইচ্ছা – জিগীষা
জয় করতে ইচ্ছুক – জিগীষু
জানু পর্যন্ত লম্বিত – আজানুলম্বিত
তল স্পর্শ করা যায় না যার – অতলস্পর্শী
তীর ছোঁড়ে যে – তীরন্দাজ
দিনে যে একবার আহার করে – একাহারী
দীপ্তি পাচ্ছে যা – দীপ্যমান
দু’বার জন্মে যে – দ্বিজ
নষ্ট হওয়াই স্বভাব যার – নশ্বর
নদী মেখলা যে দেশের – নদীমেখলা
নৌকা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে যে – নাবিক
নিজেকে যে বড়ো মনে করে – হামবড়া
নূপুরের ধ্বনি- নিক্কণ
বিদেশে থাকে যে – প্রবাসী
বিশ্বজনের হিতকর – বিশ্বজনীন
ব্যাকরণ জানেন যিনি – বৈয়াকরণ
বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে গবেষণায় রত যিনি – বৈজ্ঞানিক
বেদ-বেদান্ত জানেন যিনি--- বৈদান্তিক
বয়সে সবচেয়ে বড়ো যে--- জ্যেষ্ঠ
বয়সে সবচেয়ে ছোটো যে--- কনিষ্ঠ
ভোজন করার ইচ্ছা--- ‍বুভুক্ষা
মৃতের মত অবস্থা যার--- মুমূর্ষু
মুষ্টি দিয়ে যা পরিমাপ করা যায়--- মুষ্টিমেয়
মৃত্তিকা দ্বারা নির্মিত-- মৃন্ময়
মর্মকে পীড়া দেয় যা-- মর্মন্তুদ
মাটি ভেদ করে ওঠে যা-- উদ্ভিদ
মৃত গবাদি পশু ফেলা হয় যেখানে-- ভাগাড়
মন হরণ করে যা- মনোহর
মন হরণ করে যে নারী- মনোহারিণী

যা ,যে
যা দমন করা যায় না- --অদম্য
যা দমন করা কষ্টকর--- দুর্দমনীয়
যা নিবারণ করা কষ্টকর--- দুর্নিবার
যা পূর্বে ছিল এখন নেই--- ভূতপূর্ব
যা বালকের মধ্যেই সুলভ---বালকসুলভ
যা বিনা যত্নে লাভ করা গিয়েছে--- অযত্নলব্ধ
যা ঘুমিয়ে আছে--- সুপ্ত
যা বার বার দুলছে--- দোদুল্যমান
যা দীপ্তি পাচ্ছে---দেদীপ্যমান
যা সাধারণের মধ্যে দেখা যায় না--- অনন্যসাধারণ
যা পূর্বে দেখা যায় নি--- অদৃষ্টপূর্ব
যা কষ্টে জয় করা যায়--- দুর্জয়
যা কষ্টে লাভ করা যায়--- দুর্লভ
যা অধ্যয়ন করা হয়েছে--- অধীত
যা অনেক কষ্টে অধ্যয়ন করা যায়--- দুরধ্যয়
যা জলে চরে--- জলচর
যা স্থলে চরে--- স্থলচর
যা জলে ও স্থলে চরে--- উভচর
যা বলা হয় নি--- অনুক্ত
যা কখনো নষ্ট হয় না--- অবিনশ্বর
যা মর্ম স্পর্শ করে--- মর্মস্পর্শী
যা বলার যোগ্য নয়--- অকথ্য
যার বংশ পরিচয় এবং স্বভাব কেউই জানে না--- অজ্ঞাতকুলশীল
যা চিন্তা করা যায় না--- অচিন্তনীয়, অচিন্ত্য
যা কোথাও উঁচু কোথাও নিচু--- বন্ধুর
যা সম্পন্ন করতে বহু ব্যয় হয়--- ব্যয়বহুল
যা খুব শীতল বা উষ্ণ নয়- --নাতিশীতোষ্ণ
যার বিশেষ খ্যাতি আছে--- বিখ্যাত
যা আঘাত পায় নি- --অনাহত
যা উদিত হচ্ছে- --উদীয়মান
যা ক্রমশ বর্ধিত হচ্ছে--- বর্ধিষ্ণু
যা পূর্বে শোনা যায় নি---- অশ্রুতপূর্ব
যা সহজে ভাঙ্গে--- ভঙ্গুর
যা সহজে জীর্ণ হয়--- সুপাচ্য
যা সহজে অতিক্রম করা যায় না -– দুরতিক্রমনীয়/দুরতিক্রম্য
যা খাওয়ার যোগ্য--- খাদ্য
যা চিবিয়ে/চর্বণ করে খেতে হয়--- চর্ব্য
যা চুষে খেতে হয়--- চোষ্য
যা লেহন করে খেতে হয়/লেহন করার যোগ্য--- লেহ্য
যা পান করতে হয়/পান করার যোগ্য- --পেয়
যা পানের অযোগ্য--- অপেয়
যা বপন করা হয়েছে--- উপ্ত
যা বলা হয়েছে--- উক্ত
যার অন্য উপায় নেই--- অনন্যোপায়
যার কোন উপায় নেই--- নিরুপায়
যার উপস্থিত বুদ্ধি আছে--- প্রত্যুৎপন্নমতি
যার সর্বস্ব হারিয়ে গেছে- --সর্বহারা, হৃতসর্বস্ব
যার কোনো কিছু থেকেই ভয় নেই--- অকুতোভয়
যার আকার কুৎসিত--- কদাকার
যার কোন শত্রু নেই/জন্মেনি--- অজাতশত্রু
যার দাড়ি/শ্মশ্রু জন্মে নি--- অজাতশ্মশ্রু
যার কিছু নেই--- অকিঞ্চন
যে কোন বিষয়ে স্পৃহা হারিয়েছে--- বীতস্পৃহ
যে শুনেই মনে রাখতে পারে---শ্রুতিধর
যে বাস্তু থেকে উৎখাত হয়েছে--- উদ্বাস্তু
যে নারী নিজে বর বরণ করে নেয়--- স্বয়ংবরা
যে গাছে ফল ধরে, কিন্তু ফুল ধরে না--- বনস্পতি
যে রোগ নির্ণয় করতে হাতড়ে মরে--- হাতুড়ে
যে নারীর সন্তান বাঁচে না/যে নারী মৃত সন্তান প্রসব করে--- মৃতবৎসা
যে গাছ অন্য কোন কাজে লাগে না--- আগাছা
যে গাছ অন্য গাছকে আশ্রয় করে বাঁচে--- পরগাছা ।
যে পুরুষ বিয়ে করেছে--- কৃতদার ।
যে মেয়ের বিয়ে হয়নি--- অনূঢ়া ।
যে ক্রমাগত রোদন করছে- রোরুদ্যমান (স্ত্রীলিঙ্গ--- রোরুদ্যমানা) ।
যে ভবিষ্যতের চিন্তা করে না বা দেখে না--- অপরিণামদর্শী
যে ভবিষ্যৎ না ভেবেই কাজ করে/অগ্র পশ্চাত বিবেচনা না করে কাজ করে যে--- অবিমৃশ্যকারী।
যে বিষয়ে কোন বিতর্ক/বিসংবাদ নেই--- অবিসংবাদী্
যে বন হিংস্র জন্তুতে পরিপূর্ণ--- শ্বাপদসংকুল।
যে সকল অত্যাচারই সয়ে যায়--- সর্বংসহা।
যে নারী বীর সন্তান প্রসব করে--- বীরপ্রসূ।
যে নারীর কোন সন্তান হয় না--- বন্ধ্যা।
যে নারী জীবনে একমাত্র সন্তান প্রসব করেছে--- কাকবন্ধ্যা।
যে নারীর স্বামী প্রবাসে আছে--- প্রোষিতভর্তৃকা।
যে স্বামীর স্ত্রী প্রবাসে আছে--- প্রোষিতপত্নীক।
যে পুরুষের চেহারা দেখতে সুন্দর--- সুদর্শন (স্ত্রীলিঙ্গ- সুদর্শনা)।
যে রব শুনে এসেছে--- রবাহুত।
যে লাফিয়ে চলে--- প্লবগ।
যে নারী কখনো সূর্য দেখেনি--- অসূর্যম্পশ্যা্
যে নারীর স্বামী মারা গেছে--- বিধবা।
যে নারীর সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে--- নবোঢ়া।
যিনি বক্তৃতা দানে পটু--- বাগ্মী।
লাভ করার ইচ্ছা--- লিপ্সা।

প ফ
পাখির ডাক----কূজন।
পূর্বে যা চিন্তা করা হয় নি ---অচিন্তিতপূর্ব।
পুত্র নেই যার ---অপুত্র্।
পৃথিবীর সাথে সম্পর্কযুক্ত যা ---পার্থিব্
পান করার যোগ্য নয় ---অপেয়।
পশ্চাতে গমন করে যে ---অনুগামী।
পরাজিত করা যায় না ---অপরাজেয়।
পংক্তিতে বসার অযোগ্য --অপাংক্তেয়।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত – আপাদমস্তক।
প্রিয় বাক্য বলে যে নারী – প্রিয়ংবদা।
পূর্বজন্ম স্মরণ করে যে – জাতিস্মর।
পান করার যোগ্য –- পেয়।
পান করার ইচ্ছা – -পিপাসা।
পা ধোয়ার পানি---পাদ্য।
পাপ করতে যে পটু---পাপিষ্ঠ।
পশু হত্যা করে যে ---কসাই।
পরের ভালো যে দেখতে পারে না ---পরশ্রীকাতর।
পরিণাম চিন্তা করে যে কাজ করে ---পরণামদর্শী।
পুরাকালের বিষয়ে যিনি জানেন--- পুরাতা্ত্ত্বিক।
পায়ে হেঁটে গমন করে না যে ---পন্নগ।
পন্ডিত হয়েও মূর্খ যে-- -পণ্ডিতমূর্খ।
পায়ে হাঁটা---পদব্রজ।
পাঁচ মেশালি মসলা ---পাঁচফোড়ন।
পড়া হয়েছে যা ---পঠিত।
পড়ার উপযুক্ত---পঠিতব্য।
পথিকদের আহারাদি করার গৃহ--- পান্থশালা।
পূর্বকাল সম্পর্কিত---প্রাক্তন।
পূর্বে ছিল এখন নেই-- -ভূতপূর্ব।
পুনরায় জীবনপ্রাপ্ত---পুনর্জন্ম।
পরিমিত ব্যয় করে যে ---মিতব্যয়ী।
পরিব্রাজকের ভিক্ষা--- মাধুকরী।
পূর্ণিমার চাঁদ---রাকা।
পুনঃ পুনঃ দীপ্তি পাচ্ছে ---দেদীপ্যমান।
পরিমিত আহার করে যে ---মিতাহারী।
ফল পাকলে যে গাছ মরে যায়--- ওষধিব।
ফুল হতে জাত---ফুলেল।
ফুটছে এমন ---ফুটন্ত।
ফল প্রসব করে য়া ---ফলপ্রসু।
ফুলদিয়ে তৈরী গয়না ---পুস্পাভরণ।
ফূল সাজিযে রাখা হয় যে পাত্রে---ফুলদানি।
ফিকা কমলা রং---বাসন্তী
ফুরায় না যা ---অফুরন্ত।
বসন আলগা যার---অসংবৃত।
ফুলের বাইরের আবরন---বৃত্তি।

ব ,ভ
বেতন দেওয়া হয়না যাকে---অবৈতনিক।
বিসংবাদ নেই যাতে---অবিসংবাদিত।
বিদেশে থাকে যে ---প্রবাসী।
বিশ্বজনের হিতকর ---বিশ্বজনীন।
বহুর মধ্যে েএকটি ---অন্যতম।
বাক্য ও মনের অগোচর ---অবাঙমনসগোচর।
বর্ণনা করা যায় না যা ---অবর্ণনীয়।
বমন করার ইচ্ছা---বিবমিষা
বৃহৎ অরণ্য---অরণ্যানী
বোধ নেই যার---নির্বোধ
বসে আছে যে ---আসীন,উপবিষ্ট
বাল্যে পৌঢ় তুল্য আচরণকারী---ইঁচরে পাকা
বুকে হেটে গমন করে যে ---উরগ
বলা হয়েছে যা ---উক্ত
বাস্তু থেকে উৎখাত হয়েছে যে---উদ্বাস্তু
বপন করা হয়েছে ---উপ্ত
বাতাসে উবে যায েএমন---উদ্বায়ী
বয়সে সবচেয়ে ছোট য---কনিষ্ঠ
বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ---জো
বীঁনার ঝঙ্কার---নিক্বন
বনের অগ্নি- -দাবানল
বাঘের চামড়া--কৃত্তি
বাঘের ডাক--হুঙ্কার
বচনে কুশল --বাগ্মী
বিবদ করে যে--- বিবাদমান
বেদ সম্বন্ধীয়---বৈদিক
বিদ্যা আছে যার---বিদ্বান
যে গাছে ফুল হয় না কিন্তু ফল হয --বনস্পতি
ব্যাকরণ জানেন যিনি--বৈয়াকরণ
বাক্যের দ্বারা কৃত কলহ--বচসা
বোনের বর --বোনাই
বিহায়াসে ( আকাশে) গমন করে যে --বিহঙ্গ,বিহগ
বৃদ্ধিপাওয়া যার স্বভাব--বর্ধিষ্ণু
বেশি কথা বলে যে --বাচাল
বহু দেখেছে যে--ভূয়োদর্শী, বহুদর্শী
বিধিকে অতিক্রম না করে -- যথাবিধি
ভিতর থেকে গোপনে ক্ষতিসাধন--অর্ন্তঘাত
ভাবা যায় না যা--অভাবনীয়
ভূ-কেন্দ্রের দিকে জড়বস্তুর অকর্ষণ--অতিকর্ষ
ভ্রমরের শব্দ--গুঞ্জন

শ স ষ হ
শুভ ক্ষণে জন্ম যার- ক্ষণজন্মা।
শত্রুকে/অরিকে দমন করে যে- অরিন্দম।
শত্রুকে বধ করে যে- শত্রুঘ্ন।
সম্মুখে অগ্রসর হয়ে অভ্যর্থনা- প্রত্যুদ্গমন।
সকলের জন্য প্রযোজ্য-- সর্বজনীন।
সকলের জন্য হিতকর-- সার্বজনীন।
স্ত্রীর বশীভূত হয় যে-- স্ত্রৈণ।
সেবা করার ইচ্ছা-- শুশ্রুষা।
হনন/হত্যা করার ইচ্ছা-- জিঘাংসা।
হরিণের চামড়া-- অজিন্।
হাতির ডাক-- বৃংহতি।
সমুদ্র থেকে হিমাচল পর্যন্ত--আসমুদ্রহিমাচল।
সন্ন্যাসীর আশ্রম-- আখড়া।
সংসারের প্রতি বিরাগ--নির্বেদ।
সাপের খোলস --নির্মোক।
সম্রাট বা রাজাদের বিবরণ--শাহানামা রাজাবলি।
স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান --সস্ত্রীক।
শুভ ক্ষণে জন্ম যার--ক্ষণজন্মা।

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮

কবিতা


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি--আবু জাফর ওবায়দুল্লা


আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল।
তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন
অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন
পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।
আমি উচ্চারিত সত্যের মতো
স্বপ্নের কথা বলছি।
উনুনের আগুনে আলোকিত
একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।
আমি আমার মা’য়ের কথা বলছি,
তিনি বলতেন প্রবহমান নদী
যে সাতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে নদীতে ভাসতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মা’য়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি
গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।
ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়
যুদ্ধ আসে ভালোবেসে
মা’য়ের ছেলেরা চলে যায়,
আমি আমার ভাইয়ের কথা বলছি।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধরে রাখতে পারে না।
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্ব পুরুষের কথা বলছি
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল
কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন।
আমরা কি তা’র মতো কবিতার কথা বলতে পারবো,
আমরা কি তা’র মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো!
তিনি মৃত্তিকার গভীরে
কর্ষণের কথা বলতেন
অবগাহিত ক্ষেত্রে
পরিচ্ছন্ন বীজ বপনের কথা বলতেন
সবত্সা গাভীর মত
দুগ্ধবতী শস্যের পরিচর্যার কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
যে কর্ষণ করে তাঁর প্রতিটি স্বেদবিন্দু কবিতা
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
শস্যহীন প্রান্তর তাকে পরিহাস করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্ষুধার্ত থেকে যাবে।
যখন প্রবঞ্চক ভূস্বামীর প্রচন্ড দাবদাহ
আমাদের শস্যকে বিপর্যস্ত করলো
তখন আমরা শ্রাবণের মেঘের মত
যূথবদ্ধ হলাম।
বর্ষণের স্নিগ্ধ প্রলেপে
মৃত মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করলাম।
বারিসিক্ত ভূমিতে
পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করলাম।
সুগঠিত স্বেদবিন্দুর মত
শস্যের সৌকর্য অবলোকন করলাম,
এবং এক অবিশ্বাস্য আঘ্রাণ
আনিঃশ্বাস গ্রহণ করলাম।
তখন বিষসর্প প্রভুগণ
অন্ধকার গহ্বরে প্রবেশ করলো
এবং আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট তাম্রলিপির মত
রৌদ্রালোকে উদ্ভাসিত হলাম।
তখন আমরা সমবেত কন্ঠে
কবিতাকে ধারণ করলাম।
দিগন্ত বিদীর্ণ করা বজ্রের উদ্ভাসন কবিতা
রক্তজবার মত প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
পরভৃতের গ্লানি তাকে ভূলুন্ঠিত করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
অভ্যূত্থানের জলোচ্ছ্বাস তাকে নতজানু করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
পলিমাটির সৌরভ তাকে পরিত্যাগ করবে।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তিনি স্বপ্নের মত সত্য ভাষণের কথা বলতেন
সুপ্রাচীন সংগীতের আশ্চর্য ব্যাপ্তির কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
যখন কবিকে হত্যা করা হল
তখন আমরা নদী এবং সমুদ্রের মোহনার মত
সৌভ্রত্রে সম্মিলিত হলাম।
প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মত অগ্নিগর্ভ হলাম।
ক্ষিপ্রগতি বিদ্যুতের মত
ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করলাম।
এবং হিংস্র ঘাতক নতজানু হয়ে
কবিতার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলো।
তখন আমরা দুঃখকে ক্রোধ
এবং ক্রোধকে আনন্দিত করলাম।
নদী এবং সমুদ্রে মোহনার মত
সম্মিলিত কন্ঠস্বর কবিতা
অবদমিত ক্রোধের আনন্দিত উত্সারণ কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে তরঙ্গের সৌহার্দ থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
নিঃসঙ্গ বিষাদ তাকে অভিশপ্ত করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মূক ও বধির থেকে যাবে।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল
আমি একগুচ্ছ রক্তজবার কথা বলছি।
আমি জলোচ্ছ্বাসের মত
অভ্যূত্থানের কথা বলছি
উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের মত
কমলের চোখের কথা বলছি
প্রস্ফুটিত পুষ্পের মত
সহস্র ক্ষতের কথা বলছি
আমি নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননীর কথা বলছি
আমি বহ্নমান মৃত্যু
এবং স্বাধীনতার কথা বলছি।
যখন রাজশক্তি আমাদের আঘাত করলো
তখন আমরা প্রাচীণ সংগীতের মত
ঋজু এবং সংহত হলাম।
পর্বত শৃংগের মত
মহাকাশকে স্পর্শ করলাম।
দিকচক্রবালের মত
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলাম;
এবং শ্বেত সন্ত্রাসকে
সমূলে উত্পাটিত করলাম।
তখন আমরা নক্ষত্রপুঞ্জের মত
উজ্জ্বল এবং প্রশান্ত হলাম।
উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের প্রস্ফুটিত ক্ষতচিহ্ন কবিতা
স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের আলোকিত উম্মোচন কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে নীলিমাকে স্পর্শ করতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মধ্যাহ্নের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্ত্রাসের প্রতিহত করতে পারে না।
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি শ্রমজীবী মানুষের
উদ্বেল অভিযাত্রার কথা বলছি
আদিবাস অরণ্যের
অনার্য সংহতির কথা বলছি
শৃংখলিত বৃক্ষের
উর্দ্ধমুখী অহংকারের কথা বলছি,
আমি অতীত এবং সমকালের কথা বলছি।
শৃংখলিত বৃক্ষের উর্দ্ধমুখী অহংকার কবিতা
আদিবাস অরণ্যের অনার্য সংহতি কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
যূথভ্রষ্ট বিশৃংখলা তাকে বিপর্যস্ত করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
বিভ্রান্ত অবক্ষয় তাকে দৃষ্টিহীন করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম হীনমন্য থেকে যাবে।
যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম
তখন চতুর্দিকে ক্ষুধা।
নিঃসঙ্গ মৃত্তিকা শস্যহীন
ফলবতী বৃক্ষরাজি নিস্ফল
এবং ভাসমান ভূখন্ডের মত
ছিন্নমূল মানুষেরা ক্ষুধার্ত।
যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম
তখন আদিগন্ত বিশৃংখলা।
নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননী শোকসন্তপ্ত
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ বিভ্রান্ত
এবং রক্তবর্ণ কমলের মত
বিস্ফোরিত নেত্র দৃষ্টিহীন।
তখন আমরা পূর্বপুরুষকে
স্মরণ করলাম।
প্রপিতামহের বীর গাঁথা
স্মরণ করলাম।
আদিবাসী অরণ্য এবং নতজানু শ্বাপদের কথা
স্মরণ করলাম।
তখন আমরা পর্বতের মত অবিচল
এবং ধ্রুবনক্ষত্রের মত স্থির লক্ষ্য হলাম।
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি স্থির লক্ষ্য মানুষের
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের কথা বলছি
শ্রেণীযুদ্ধের অলিন্দে
ইতিহাসের বিচরণের কথা বলছি
আমি ইতিহাস এবং স্বপ্নের কথা বলছি।
স্বপ্নের মত সত্যভাষণ ইতিহাস
ইতিহাসের আনন্দিত অভিজ্ঞান কবিতা
যে বিনিদ্র সে স্বপ্ন দেখতে পারে না
যে অসুখী সে কবিতা লিখতে পারে না।
যে উদ্গত অংকুরের মত আনন্দিত
সে কবি
যে সত্যের মত স্বপ্নভাবী
সে কবি
যখন মানুষ মানুষকে ভালবাসবে
তখন প্রত্যেকে কবি।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি বিচলিত বর্তমান
এবং অন্তিম সংগ্রামের কথা বলছি।
খন্ডযুদ্ধের বিরতিতে
আমরা ভূমি কর্ষণ করেছি।
হত্যা এবং ঘাতকের সংকীর্ণ ছায়াপথে
পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করেছি।
এবং প্রবহমান নদীর সুকুমার দাক্ষিণ্যে
শস্যের পরিচর্যা করছি।
আমাদের মুখাবয়ব অসুন্দর
কারণ বিকৃতির প্রতি ঘৃণা
মানুষকে কুশ্রী করে দ্যায়।
আমাদের কণ্ঠস্বর রূঢ়
কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কণ্ঠকে কর্কশ করে তোলে।
আমাদের পৃষ্ঠদেশে নাক্ষত্রিক ক্ষতচিহ্ন
কারণ উচ্চারিত শব্দ আশ্চর্য বিশ্বাসঘাতক
আমাদেরকে বারবার বধ্যভূমিতে উপনীত করেছে।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমার সন্তানেরা
আমি তোমাদের বলছি।
যেদিন প্রতিটি উচ্চারিত শব্দ
সূর্যের মত সত্য হবে
সেই ভবিষ্যতের কথা বলছি,
সেই ভবিষ্যতের কবিতার কথা বলছি।
আমি বিষসর্প প্রভুদের
চির প্রয়াণের কথা বলছি
দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের
পরিসমাপ্তির কথা বলছি
সুতীব্র ঘৃণার
চূড়ান্ত অবসানের কথা বলছি।
আমি সুপুরুষ ভালবাসার
সুকণ্ঠ সংগীতের কথা বলছি।
যে কর্ষণ করে
শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে।
যে মত্স্য লালন করে
প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে।
যে গাভীর পরিচর্যা করে
জননীর আশীর্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে।
যে লৌহখন্ডকে প্রজ্জ্বলিত করে
ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে।
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ
আমি তোমাদের বলছি।
আমি আমার মায়ের কথা বলছি
বোনের মৃত্যুর কথা বলছি
ভাইয়ের যুদ্ধের কথা বলছি
আমি আমার ভালবাসার কথা বলছি।
আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা
সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবো
আমরা কি তাঁর মত স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো ?