শব্দ কাকে বলে


প্রশ্ন (১)-শব্দ কাকে বলে? উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

উত্তর : শব্দ হচ্ছে ভাবের দ্যোতক। এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে যদি কোনো অর্থ প্রকাশ করে তবে তাকে শব্দ বলে। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭)-এর মতে, অর্থযুক্ত ধ্বনিকে বলে শব্দ। কোনো বিশেষ সমাজের নর-নারীর কাছে যে ধ্বনির স্পষ্ট অর্থ আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নর-নারীর ভাষার শব্দ।” উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ : উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১) তৎসম শব্দ ২) অর্ধতৎসম শব্দ ৩) তদ্ভব শব্দ ৪) দেশি শব্দ ৫) বিদেশি শব্দ।

তৎসম শব্দ : সংস্কৃত ভাষা থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, সেসব শব্দকে তৎসম শব্দ বলে। যেমন-চন্দ্র, সূর্য, বৃক্ষ, ধর্ম, পুষ্প।
অর্ধতৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কিছুটা বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে, সেসব শব্দকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন - চন্দ্র > চন্দ, গাত্র > গতর, গৃহিণী > গিন্নি, জন্ম > জনম, প্রাণ > পরাণ।
তদ্ভব শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এসেছে সেসব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে। চর্মকার > চম্ময়ার > চামার, হস্ত > হন্থ > হাত , চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ।
দেশি শব্দ: যেসব শব্দ আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষার নিজস্ব শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সেসব শব্দকে দেশি বা খাঁটি বাংলা শব্দ বলে। যেমন-কুলা, মই, ডাব, ডিঙ্গি, চোঙ্গা, ঠোঙ্গা।
বিদেশি শব্দ: সংস্কৃত ছাড়া অন্যান্য বিদেশি ভাষা থেকে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে সেসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন চেয়ার, টেবিল, স্কুল, কলেজ নামাজ, ইমান, হারাম, হালাল, রিকশা, হারিকেন, চা, চিনি, এলাচি, শয়তান।



প্রশ্ন (২)-অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

উত্তর: অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। যেমন সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত ইত্যাদি। অর্থগতভাবে বাংলা শব্দসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. যৌগিক শব্দ
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ৩. যোগরূঢ় শব্দ

যৌগিক শব্দ : যেসব শব্দের প্রচলিত অর্থ ও তার মূল বা প্রকৃতির অর্থ অভিন্ন সেসব শব্দকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন: পক্ষ+ইক= পাক্ষিক, দল+ঈয়= দলীয়, কৃ+তব্য= কর্তব্য।

রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ : যেসব শব্দ তার মূল বা প্রকৃতির অর্থের অনুগামী না হয়ে ভিন্ত অর্থ প্রকাশ করে, সেসব শব্দকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন: হস্ত+ইন= হস্তী, এর মূল অর্থ হচ্ছে, ‘হস্ত আছে যার’ কিন্তু প্রচলিত অর্থে ‘হস্তী’ বলতে এক ধরনের বৃহৎ পশুকে বোঝায়। তেমনি বাঁশি, সন্দেশ, মহাজন ইত্যাদি শব্দগুলো রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দের উদাহরণ।

যোগরূঢ় শব্দ: সমাস নিষ্পন্ন যেসব শব্দ তার সমস্যমান পদসমূহের অর্থের সম্পূর্ণ অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, সেসব শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন পঙ্কজ= পঙ্কে জšে§ যা। পঙ্কে শৈবাল, শামুক, মাছ ছাড়াও অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ জন্মালেও ‘পঙ্কজ’ বলতে কেবল পদ্ম ফুলকেই বোঝায়। তেমনি, অনুজ, অগ্রজ, জলধি, তপোবন ইত্যাদি। শব্দগুলো যোগরূঢ় শব্দের উদাহরণ।




প্রশ্ন-৩: গঠন অনুসারে বাংলা শব্দের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

উত্তর: বাংলা ভাষার অসংখ্য শব্দ ভাণ্ডার গঠিত হয়েছে নানা প্রক্রিয়ায়। এ গঠন প্রক্রিয়ার দিক থেকে বাংলা শব্দ সমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন ১. মৌলিক শব্দ ২. সাধিত শব্দ
মৌলিক শব্দ: যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ বা বিভাজিত করা যায় না, অর্থাৎ প্রত্যয়, বিভক্তি, উপসর্গ ছাড়া যেসব শব্দ গঠিত হয় সেসব শব্দকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন হাত, মুখ, ফুল, পথ।
সাধিত শব্দ: যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ বা বিভাজিত করলে আলাদা অর্থ পাওয়া যায় অর্থাৎ, প্রত্যয় বা উপসর্গ দ্বারা গঠিত শব্দকেই সাধিত শব্দ বলে। যেমন: নায়ক, মানব, মেধাবী, আহার, বিহার, পরিহার।



প্রশ্ন-৪: শব্দ গঠন বলতে কি বোঝ? কি কি উপায়ে বাংলা শব্দ গঠন করা যায় উদাহরণসহ আলোচনা কর।

উত্তর: শব্দের অর্থ বৈচিত্র্যের জন্য বিভিন্নভাবে এর গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। বর্ণের সঙ্গে বর্ণ কিংবা ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়ে যে প্রক্রিয়ায় শব্দ গঠিত হয় সে প্রক্রিয়াকেই বলা হয় শব্দ গঠন। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন উপায়ে শব্দ গঠিত হয়। যেমন ক. প্রত্যয়যোগে: ধাতু বা শব্দের পর যেসব ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, সেসব ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে প্রত্যয় বলে। এ প্রত্যয়যোগে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন ঢাকা+আই=ঢাকাই, গম্+তব্য=গন্তব্য, পৃথিবী+অ=পার্থিব, স্বপ্ন+ইল=সপ্নিল।


প্রশ্ন:৫ বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্যে কত প্রকার ও কী কী? উদহরণসহ আলোচনা করো।
অথবা, গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকার বাক্যের উদাহরণ দাও।
অথবা, গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী, আলোচনা করো।

উত্তর: বাক্য: যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে। ডক্টর সুনীতিকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘পরস্পর অর্থসম্বন্ধবিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সে পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।’ গঠন অনুসারে বাক্য: গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা
সরল বাক্য: যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যথা: দ্বীনা বই পড়ে। এখনে দ্বীনা কর্তা এবং পড়ে সমাপিকা ক্রিয়া।
জটিল বাক্য: যে বাক্যে একটি মাত্র প্রধান খণ্ড বাক্য এবং তার ওপর এক বা একাধিক নির্ভরশীল বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমন: যে পরিশ্রম করে সেই সুখ লাভ করে। এখানে ‘যে পরিশ্রম করে’ নির্ভরশীল বাক্য এবং ‘ সেই সুখ লাভ করে’ প্রধান খণ্ড বাক্য।
যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য কোনো অব্যয় দ্বারা সংযুক্ত হয়ে একটি পূর্ণ বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন: লোকটি ধনী কিন্তু অসুখী।

যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো এবং ও, কিন্তু, অথবা, অথচ প্রভৃতি অব্যয় যোগে সংযুক্ত থাকে। প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী বাক্যের শ্রেণীবিভাগ বাক্যের প্রকাশভঙ্গির ভিত্তিতে বাক্যকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. বিবৃতিমূলক বাক্য : কোন কিছু সাধারণভাবে বর্ণনা করা হয় যে বাক্যে, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। বিবৃতিমূলক বাক্য ২ প্রকার।
ক) অস্তিবাচক বাক্য/ হাঁ বাচক বাক্য :
যে বাক্যে সমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে অস্তিবাচক বাক্য বা হাঁ বাচক বলে। যে বাক্যে হাঁ বাচক শব্দ থাকে, তাকে হাঁ বাচক বা অস্তিবাচক বাক্য বলে। যেমন- তুমি কালকে আসবে। আমি ঢাকা যাব। [সদর্থক বা অস্তিবাচক বাক্য : এতে কোনো নির্দেশ, ঘটনার সংঘটন বা হওয়ার সংবাদ থাকে। যেমন : বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা জিতেছে। আজ দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ভাষা অনুশীলন; হৈমন্তী]

খ) নেতিবাচক বাক্য/ না বাচক বাক্য : যে বাক্যে অসমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে নেতিবাচক বাক্য বা না বাচক বলে। যে বাক্যে না বাচক শব্দ থাকে, তাকে নেতিবাচক বাক্য বা না বাচক বাক্য বলে। যেমন- তুমি কালকে আসবে না। আমি ঢাকা যাব না। [নেতিবাচক বা নঞর্থক বাক্য : এ ধরনের বাক্যে কোন কিছু হয় না বা ঘটছে না- নিষেধ, আকাঙ্ক্ষা, অস্বীকৃতি ইত্যাদি সংবাদ কিংবা ভাব প্রকাশ করা যায়। যেমন : আজ ট্রেন চলবে না। আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন না।

৩.প্রশ্নসূচক বাক্য : যে বাক্যে কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা প্রকাশিত হয়, তাকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলে। যেমন- তুমি কেমন আছ?

৪. বিস্ময়সূচক বাক্য : যে বাক্যে আশ্চর্য হওয়ার অনুভূতি প্রকাশিত হয়, তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে। যেমন- সে কী ভীষণ ব্যাপার!

৫. ইচ্ছাসূচক বাক্য : যে বাক্যে শুভেচ্ছা, প্রার্থণা, আশীর্বাদ, আকাঙক্ষা প্রকাশ করা হয়, তাকে ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। যেমন- তোমার মঙ্গল হোক। ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করচন। ভালো থেকো। আদেশ বাচক বাক্য : যে বাক্যে আদেশ করা হয়, তাকে আদেশ সূচক বাক্য বলে। যেমন-বের হয়ে যাও। ওখানে বসো। জানালা লাগাও। সবসময় দেশের কথা মাথায় রেখে কাজ করবে।