বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮

ছবি মোজাম্মেল



Mountains

Mountains

Lorem ipsum dolor..

Lights

Lights

Lorem ipsum dolor..

Nature

Forest

Lorem ipsum dolor..

Car

Retro

Lorem ipsum dolor..

Car

Fast

Lorem ipsum dolor..

Car

Classic

Lorem ipsum dolor..

Car

Girl

Lorem ipsum dolor..

Car

Man

Lorem ipsum dolor..

Car

Woman

Lorem ipsum dolor..

মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮

সিরাজউদৌলা নাটক



Girl in a jacket লিংক






রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

মাসিপিসি গল্প

Girl in a jacket Girl in a jacket

কবি পরিচিতি :

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯এ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম নীরদাসুন্দরী দেবী। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকনাম মানিক । বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন।

মাত্র আটচল্লিশ বছর তিনি বেঁচেছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি পড়ার সময়ে মাত্র বিশ বছর বয়সে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তিনি প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তাপর জীবনের বাকি আটাশ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে গেছেন। মাঝে বছর তিনেক মাত্র তিনি চাকরি ও ব্যবসায়িক কাজে নিজেকে জড়ালেও বাকি পুরো সময়টাই তিনি সার্বক্ষণিকভাবে সাহিত্যসেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক হিসেবে মানিক বাংলা সাহিত্যে খ্যাতিমান। অল্প সময়েই তিনি সৃষ্টি করেছেন প্রায় চল্লিশটি উপন্যাস ও প্রায় তিনশ ছোটগল্প। সেই সঙ্গে লিখেছেন কিছু কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ও ডায়েরি। বিজ্ঞানমনস্ক এই লেখক মানুষের জগৎ তথা অন্তর্জীবনের রূপকার হিসেবে সার্থকতা দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে সমাজবাস্তবতার শিল্পি হিসেবেও সাক্ষর রেখেছেন। ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘চিহ্ন’, প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘প্রাগেতিহাসিক’, ‘সরিসৃপ’, ‘সমুদ্রের স্বদ’, ‘কুষ্ঠরোগীর বৌ’, ‘টিকটিকি’, ‘হলুদ পোড়া’, ‘আজকাল পরশুর গল্প’,‘হারানের নাসজামাই’, ‘ছোটবকুল পুরের যাত্রী’ প্রভৃতি।
কলকাতায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তেসরা ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বহু নির্বাচনী

১। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাক নাম কী?
ক. নয়ন খ. খোকা
গ. মানিক ঘ. প্রফুল

২। জল নেমে গিয়ে কী বেরিয়ে পড়েছে?
ক. ইটপাটকেল
খ. ভাঙা নৌকা
গ. গাছের গুঁড়ি
ঘ. ভেজা খড়

৩। কয়টি সালতি পাশাপাশি জোড়া লাগানো ছিল?
ক. দুইটি খ. তিনটি
গ. চারটি ঘ. পাঁচটি

৪। আহ্লাদী স্বামীর কাছে যেতে চায় না, কারণ-
ক. স্বামীর অত্যাচার খ. অর্থকষ্ট
গ. স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে ঘ. স্বামীর পঙ্গু হওয়া
৫। নিচের কোন পেশাটির সঙ্গে কানাই জড়িত?
ক. মাছধরা খ. ওষুধ বিক্রি
গ. চৌকিদারি ঘ. কৃষিকাজ

৬। সালতি সম্পর্কে নিচের কোন বাক্যটি প্রযোজ্য?
ক. শালকাঠ নির্মিত সরু ডোঙ্গা
খ. কদমকাঠ নির্মিত সরু ডোঙ্গা
গ. পরিধেয় বস্ত্রবিশেষ
ঘ. ধানবিশেষ

৭। আহ্লাদী স্বামীর ঘরে যেতে চায় না কেন?
ক. খুন হওয়ার ভয়ে খ. যৌতুকের কথা শুনে
গ. মাসি-পিসির মায়ায় ঘ. বাবার সম্পত্তি রক্ষায়

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৮ ও ৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে হরিপদ মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠালেও স্বামীর অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত সে বাবার সংসারেই ফিরে আসে। শ্বশুরবাড়ির কথা বললেই ভয়ে মেয়েটি আঁতকে ওঠে।
৮। উদ্দীপকের মেয়েটি কার আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে?
ক. দিগম্বরী খ. আহ্লাদী
গ. সিলভী ঘ. হজের

৯। উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মূল ভাব কোনটি?
ক. জীবিকার ধরন খ. মমত্ববোধ
গ. নির্যাতনের স্বরূপ ঘ. দায়িত্ববোধ

১০। কৈলাশ ব্যস্ত ছিল কেন?
ক. ধানের আঁটি বাঁধায় খ. নৌকাটি খুলে দিতে
গ. বাহকের মাথায় খড় চাপাতে ঘ. নিজে খড় বহন করতে

১১। মাসি বিরক্ত হয় কেন?
ক. কৈলাশের গড়িমসিতে খ. পিসির আচরণে
গ. বাহকের কথায় ঘ. জগুর কথা শুনে

১২। ফিকির বলতে বোঝায়-
ক. কৌশল খ. উদ্দেশ্য
গ. ফাঁকিবাজ ঘ. ফকির

১৩। বুড়ো রহমান কার মাথায় খড় চাপিয়ে যায়?
ক. বাহকের খ. কৈলাশের
গ. জগুর ঘ. যুবকটির

১৪। মাসি-পিসি জলে কী ভিজিয়ে রাখে?
ক. কাঁথা-কম্বল খ. পুরনো বালিশ
গ. ছেঁড়া কাপড় ঘ. কাঁথা-বালিশ

১৫। মাসি-পিসি গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে কোনটি?
ক. মাসি-পিসির কর্মদক্ষতা
খ. তাদের বুদ্ধিদীপ্ত চেতনা
গ. মাসি-পিসির সরলতা
ঘ. মাতৃত্বের মহিমা

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ১৬ ও ১৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
পিতৃ-মাতৃহীন মিতু স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে আসে ফুফুর কাছে। গ্রামের উঠতি যুবকের দৃষ্টি পড়ে মিতুর ওপর। কিন্তু ফুফু সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মিতুকে লালসা-উন্মুত্ত লোকদের হাত থেকে আগলে রাখে।

১৬। উদ্দীপকের মিতু তোমার পঠিত কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে?
ক. হাজেরা খ. আহ্লাদী
গ. দিগম্বরী ঘ. সিনথিয়া

১৭। উদ্দীপকের ফুফুর মধ্যে মাসি-পিসি চরিত্রের যে দিকটি ইঙ্গিত করে-
i. মমত্ববোধ
ii. দায়িত্ববোধ
iii. আত্মসচেতন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii

১৮। আহ্লাদী কান পেতে রাখে কেন?
ক. মাসির ইশারায়
খ. কৈলাশের কথা শুনতে
গ. জগুর কথা মনে পড়ায়
ঘ. পিসির কথা শুনতে

১৯। মাসি-পিসির মধ্যে গভীর ভাব গড়ে ওঠার কারণ-
ক. অর্থ উপার্জন
খ. দুজনই আশ্রিত
গ. একসাথে ব্যবসা করে
ঘ. আহ্লাদীর দায়িত্ব পড়ায়

২০। কৈলাশের প্রতিবাদের অন্তরালে মূলত কী লুকিয়ে আছে?
ক. ভণ্ডামি খ. শঠতা
গ. মিথ্যাচার ঘ. সরলতা

২১। মাসি-পিসি আহ্লাদীকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে চায় না। কারণ-
i. সন্তানবাৎসল্যে
ii. নির্যাতনের ভয়ে
iii. আহ্লাদী যেতে চায় না বলে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. i ও ii
গ. i ও iii ঘ. ii ও iii

২২। কৈলাশ বাহকের মাথায় কী চাপাতে ব্যস্ত ছিল?
ক. খড় খ. ধান
গ. বাঁশ ঘ. ঘাস

২৩। আহ্লাদীর মাসির নাম কী?
ক. বিপুলা খ. পদী
গ. রাধিকা ঘ. সবিতা

২৪। কানাইয়ের সাথে গোকুলের কতজন পেয়াদা এসেছে? ক. দুজন খ. তিনজন
গ. চারজন ঘ. পাঁচজন

২৫। বেমক্কা শব্দের অর্থ হিসেবে নিচের যেটি গ্রহণীয়-
i. স্থানবহিভর্র্‚ত
ii. অসংগত
iii. অসম্ভব
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii

২৬। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের একটি অন্যতম দিক কী?
ক. সমাজ শোষণ খ. নারী নির্যাতন
গ. নারীর ব্যক্তিত্ব চেতনা ঘ. স্বাধীনচেতা মানুষ

২৭। আহ্লাদী স্বামীর ঘরে যেতে না চাওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ-
ক. স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে
খ. যৌতুকের চাপ
গ. অমানবিক নির্যাতন
ঘ. শ্বশুর-শাশুড়ির যন্ত্রণা

২৮। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক হলো-
i. দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শ স্মৃতি
ii. প্রকৃতির প্রতি নিবিড়তা
iii. মানবিক জীবনসংগ্রাম
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii

২৯। কত বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় মাসি-পিসি গল্পটি প্রকাশিত হয়?
ক. ১৩৪৬ বঙ্গাব্দে খ. ১৩৫২ বঙ্গাব্দে
গ. ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে ঘ. ১৩৯৫ বঙ্গাব্দে

৩০। বাইরে থেকে কার হাঁক আসে?
ক. গোকুলের খ. কানাই চৌকিদারের
গ. সরকার বাবুর ঘ. পেয়াদার

৩১। স্বামী পরিত্যক্ত মোমেনা বেগম কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মোমেনা বেগম নিচের কোন চরিত্রকে স্মরণ করিয়ে দেন?
ক. আহ্লাদী খ. বুড়ি
গ. মাসি-পিসি ঘ. দিগম্বরী

৩২। জগু মামলা করবে কেন?
ক. মাসি-পিসিকে ভয় দেখাতে
খ. বউকে নেওয়ার জন্য
গ. জমি রক্ষা করতে
ঘ. বউকে ভয় দেখাতে

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৩৩ ও ৩৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শিপ্রা পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। কিন্তু সমাজে অপমানের কথা চিন্তা করে বাবা শিপ্রাকে আবার শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন।

৩৩। উদ্দীপকের শিপ্রার সঙ্গে কোন চরিত্রের বৈপরীত্য রয়েছে?
ক. দিগম্বরী খ. আহ্লাদী
গ. সিলভী ঘ. সিনথিয়া

৩৪। উদ্দীপকের শিপ্রার বাবার চরিত্রে কোন গুণটি থাকলে মাসি চরিত্রের ধারক হতে পারত?
ক. সহনশীল খ. প্রতিবাদী
গ. সততা ঘ. হাতুল

৩৫। স্বভাবগত কারণে নিচের কোন স্থানের সঙ্গে জগুর সম্পর্ক রয়েছে?
ক. চায়ের দোকান খ. মন্দির
গ. স্কুলমাঠ ঘ. শুঁড়িখানা

৩৬। মাসি-পিসি আহ্লাদীকে পাঠাতে চায় না, কারণ-
ক. জগু নির্যাতন করে খ. জগু অর্থলোভী
গ. জগু দরিদ্র ঘ. জগু অশিক্ষিত

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৩৭ ও ৩৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
চার বছরের তপনকে নিয়ে সদ্য বিধবা হয়েছে রেবতী। কিন্তু বৈধব্য গ্রহণ করতে না করতেই গ্রামের প্রভাবশালী হরিপদ তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। এ নিয়ে সমাজের কাছে বিচার চেয়েও বিচার পায়নি রেবতী। অবশেষে এক দিন বঁটি দিয়ে হরিপদের পা কেটে দেয় রেবতী।

৩৭। উদ্দীপকের হরিপদ শ্রেণির লোকের সঙ্গে নিচের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. কৈলাশ, কানাই
খ. কানাই, গোকুল
গ. জগু, কৈলাশ
ঘ. কৈলাশ, রহমান

৩৮। সাদৃশ্যগত দিকটি হলো-
i. আর্থিক দীনতা
ii. চারিত্র্যিক স্খলন
iii. ক্ষমতার দৌরাÍয
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

৩৯। সালতি অর্থ কী?
ক. আমকাঠের সরু ডোঙ্গা
খ. তালকাঠের সরু ডোঙ্গা
গ. বড় গাছের গুঁড়ি
ঘ. খাদ্যবিশেষ

৪০। অস্ফুট আর্তনাদের মতো শব্দ করে কে?
ক. মাসি-পিসি খ. বুড়ো রহমান
গ. আহ্লাদী ঘ. কৈলাশ
উত্তরগুলো মিলিয়ে নাও
১. গ ২. ক ৩. ক ৪. ক ৫. গ ৬. ক ৭. ক ৮. খ ৯. গ ১০. গ ১১. ক ১২. ক ১৩. ক ১৪. ক ১৫. খ ১৬. খ ১৭. ঘ ১৮. খ ১৯. ঘ ২০. গ ২১. ঘ ২২. ক ২৩. খ ২৪. খ ২৫. ক ২৬. গ ২৭. গ ২৮. গ ২৯. খ ৩০. খ ৩১. গ ৩২. খ ৩৩. খ ৩৪. খ ৩৫. ঘ ৩৬. ক ৩৭. খ ৩৮. গ ৩৯. খ ৪০. গ







বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়



Girl in a jacket

কবি পরিচিতি:

কবি পরিচিতি সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭এ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। সৈয়দ হক প্রথমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রযোজক ছিলেন। পরে তিনি পুরোপুরি সাহিত্যসাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য ও শিশুসাহিত্যে লেখক হওয়ায় তিনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। চিত্রনাট্য রচয়িতা ও গীতিকার হিসেবেও তিনি খ্যাত। মানুয়ের জটিল জীবনপ্রবাহ এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তাঁর সাহিত্যকর্মের মূল প্রবণতা। সাহিত্যের গঠনশৈলীর ক্ষেত্রে তিনি সর্বদাই নিরীক্ষাপ্রিয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো: ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘প্রতিধ্বনিগণ’, ‘পরাণের গহীন ভিতর’. ‘রজ্জুপথে চলেছি’। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘গণনায়ক’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘এখানে এখন’, ‘ঈষা’ প্রভৃতির তাঁর কাব্যনাটক। সৈয়দ শামসুল হক বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজি সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একেুশে পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন।

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
লেখকঃ সৈয়দ শামসুল হক

নূরলদীনের কথা মনে পরে যায়
নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগণিত আর
নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে উনসত্তর হাজার।
ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার।
নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার
তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস
দিয়ে এত বড় চাঁদ?
অতি অকস্মাৎ
স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত?
গোল হয়ে আসুন সকলে,
ঘন হযে আসুন সকলে,
আমার মিনতি আজ স্থির হয়ে বসুন সকলে।
অতীত হঠাৎ হাতে হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরোজায়।
এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায়
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
কালঘুম যখন বাংলায়
তার দীর্ঘ দেহ নিয়ে আবার নূরলদীন দেখা দেয় মরা আঙিনায়।
নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে যে ছিল,
রংপুরে নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিল
১১৮৯ সনে।
আবার বাংলার বুঝি পড়ে যায় মনে,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়’
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়’
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে;
যখন স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে,
তখন কে থাকে ঘুমে? কে থাকে ভেতরে?
কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে?
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপুত্রে মেশে।
নূরলদীনেরও কথা যেন সারা দেশে
পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে এসে সমস্ত ভাষায়,
অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায় ,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’


পাঠ পরিচিতি :।

‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটি সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ শীর্ষক কাব্যনাটক থেকে সংকলিত হয়েছে। এটি এই নাটকের প্রস্তাবনা অংশ।

নাটকটির প্রস্তাবনা অংশে সূত্রধার আবেগঘন কাব্যিক বর্ণনার মাধ্যমে দর্শকদের সঙ্গে নাট্যকাহিনির সংযোগ স্থাপন করেছেন। নূরলদীন এক ঐতিহাসি চরিত্র। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে সামন্তবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাহসী কৃষকনেতা নূরলদীনের সংগ্রামের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নূরলদীনের সাহস আর ক্ষোভকে অসামান্য নৈপুণ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে।

১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় মাস যখন এই বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়, যখন শকুনরূপী দালালের আলখাল্লায় ছেয়ে যায় দেশ, যখন বাঙালি হারায় তার স্বপ্ন ও বাক-স্বাধীনতা, যখন স্বজনের রক্তে ভেসে যায় ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা-তখন মনে পড়ে ইতিহাসের প্রতিবাদী নায়ক নূরলদীনকে-এই চেতনাই কবিতাটিতে সৈয়দ শামসুল হক তুলে ধরতে চেয়েছেন। ১১৮৯ বঙ্গাব্দে (১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ) নূরলদীনের ডাকে মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছিল, এখনও ঠিক সেইভাবে জেগে উঠবে বাংলার জন-মানুষ-এটাই কবির বিশ্বাস। এভাবে কবির শিল্পভাবনায় নূরলদীন ক্রমান্বয়ে এক চিরায়ত প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়। ইতিহাসের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে নূরলদীন মিশে যায় বাংলার শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ভিড়ে-অংশগ্রহণ করে সমকালীন সকল আন্দোলন-সংগ্রামে। তাই কবির মনে হয়-অভাগা মানুষ জেগে উঠে পাহাড়ি ঢলের মতো ভাসিয়ে দেবে অন্যায় যখন নূরলদীন দেবে ডাক-‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবাই’।

সৃজনশীল প্রশ্ন

১ । নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
'মাগো, ওরা বলে
সবার মুখের ভাষা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
তাই কি হয়?'

ক. নূরলদীন কত সালে ডাক দিয়েছিল? ১
খ. 'যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়।'_ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ২
গ. উদ্দীপকে ওরা 'নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়' কবিতার কাদের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের শেষ দুই চরণ যেন 'নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়' কবিতার নূরলদীনেরই মনোভাব।_ বিশ্লেষণ কর। ৪

সৃজনশীল

২। শত বছরে শত সংগ্রাম শেষে
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

ক) ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় হঠাৎ নীলক্ষার নীলে কী দেখা দেয়?
খ) ‘স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ?’ পঙিক্তটি ব্যাখ্যা করো।
গ) উদ্দীপকের শেষের দুই চরণ ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন দিকটির কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) উদ্দীপকটি ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূল ভাবের সঙ্গে কতখানি সাদৃশ্যপূর্ণ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

আরও জানতে ক্লিক করুন