ভাষা: বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকেই ভাষা বলে।
২. বাংলা ভাষা কাকে বলে?
বাঙালি সংস্কৃতির অধিকারী বাঙালি জাতি যে ভাষায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটিই বাংলা ভাষা।
[ ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর ৪র্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। বর্তমানে, বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি। বাংলা ভাষাভাষীরা থাকে- বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, এবং ভারতের ত্রিপুরা, উড়িষ্যা, বিহার ও আসামের কিছু অংশে। তবে এখন প্রবাসী বাংলাদেশি ও প্রবাসী ভারতীয় বাঙালিদের কল্যাণে পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ থাকে।]
প্রমিত চলিত ভাষারীতি: দেশের সকল মানুষ যে আদর্শ ভাষারীতিতে কথা বলে, যেই ভাষারীতি সকলে বোঝে, এবং যে ভাষায় সকলে শিল্প-সাহিত্য রচনা ও শিক্ষা ও অন্যান্য কাজকর্ম সম্পাদন করে, সেটিই প্রমিত চলিত ভাষারীতি।
ভাষাপন্ডিত ড.মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন - “মানুষ্য জাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনি সকল দ্বারা ভাব প্রকাশ করে তাহার নাম ভাষা। ”
ড.সুকুমার সেন বলেছেন - “মানুয়ের উচ্চারিত বহুজনবোধ্য ধ্বনিসমষ্টিই ভাষা । ”
প্রশ্ন: বাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে ? ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।
যে শাস্ত্র জানিলে বাংলা ভাষা শুদ্ধরুপে লিখিতে পড়িতে ও বলিতে পারা যায তাহাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে ।
ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব
ব্যাকরণের প্রয়োজন বা গুরুত্ব সম্পর্কে ড. এনামুল হক বলেছেন, ‘আলো, জল, বিদ্যুৎ, বাতাস প্রভৃতি সম্বন্ধীয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য না জানিয়াও মানুষ বাঁচিয়াছে, বাঁচিতেছে ও বাঁচিবে। কিন্তু তাই বলিয়া ওই সমস্ত বস্তুর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যকে মানুষ অস্বীকার করিয়া বর্তমান সভ্যতার গগন বিচুম্বী সৌধ নির্মাণ করিতে পারে নাই। ব্যাকরণ না জানিয়াও ভাষা চলিতে পারে কিন্তু ভাষাগত সভ্যতা না হউক, অন্তত ভব্যতার পত্তন বা সমৃদ্ধি হইতে পারে না। এই জন্য শিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে ব্যাকরণ সম্বন্ধীয় সাধারণ জ্ঞানের সহিত বিশেষ জ্ঞানও আবশ্যক।’ রাষ্ট্রের সকলের ব্যাকরণ পাঠ অবশ্যই প্রয়োজন। ব্যকরণ পাঠ বিভিনন্নে প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। যেমন :
ক) ভাষার গতিবিধি লক্ষ করে ভাষা বিশ্লেষণ করা যায় এবং সুন্দর, শুদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায়।
খ) উচ্চারণ সঠিক এবং বানান প্রমিত করা যায়।
গ) ছন্দ ও অলংকারের সঠিক প্রয়োগ-পদ্ধতি শেখা যায়।
ঘ) সাহিত্যের ছন্দ, অলংকার ও রস সম্পর্কে জানা যায়।
ঙ) ভাষাকে শুদ্ধভাবে পড়তে, বুঝতে, লিখতে ও বলতে পারা যায়।
চ) ভাষার মৌলিক উপাদান—ধ্বনি, শব্দ ও বাক্যের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়।
ছ) ভাষার রূপ সম্পর্কে অর্থাৎ ধ্বনি, শব্দ ও বাক্য সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায়।
জ) ভাষার মৌলিক অংশ বা বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপ নির্ণয়, গঠন ও প্রয়োগবিধি সম্পর্কে জানা যায়।
ঝ) বাক্যগঠন ও ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
ঞ) সাহিত্যের দোষগুণ সম্পর্কে জানা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যাকরণের কাজ বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিখেছেন—‘বাংলাভাষার নিয়ম বাহির করিয়া লিপিবদ্ধ করাই ব্যাকরণের কাজ বা উদ্দেশ্য
উত্তর:ড.সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়ের মতে মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগ-যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিস্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।
পৃথিবীর বহু উন্নত ভাষার মতো বাংলা ভাষার দুইটি রূপ বিদ্যমান এর একটি মৌখিত বা চলিত রূপ অপরটি সাধুরীতি
১. সাধুভাষা বা সাধুরীতি:- উনিশ শতকে বাংলায় যে লিখিত রূপ গড়ে উঠে , তার নাম দেয়া হয় সাধু ভাষা প্রখ্যাত বৈয়াকরণ ও ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়ের মতে সাধারণ গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত বাঙ্গালা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে। ‘যাহাকে তাহাকে মারিতে যাওয়া তোমার উচিৎ হয় নাই’ । এখানে ‘যাহাতে’ ‘তাহাকে’ -- সর্বনামপদ ‘মারিতে’-- ক্রিয়াপদ এবং ‘নাই’ -- নঞ্র্থক অব্যয় পদের পূর্ণ রূপ ব্যবহৃত হয়েছে
২. কথ্য রীতি বা চলিত ভাষা :- ড.সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়ের মতে ‘দক্ষিন পশ্চিম বঙ্গে ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানের ভদ্র ও শিক্ষিত সমাজের ব্যবহৃত মৌখিক ভাষাকে , সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজ কর্তৃক গৃহিত হইয়াছে । এই ভাষাকে চলিত ভাষা বলে।
যেমন: যাকে তাকে যা তা শোনাতে যাওয়া তোমার উচিৎ হয় নি । এখানে যাকে’ তাকে, যা, তা, যথাক্রমে যাহাকে, তাহাকে ---সর্বনামপদ ,যাহা তাহা অব্যয়পদ শোনাতে ও নি যথাক্রমে শুনাইতে -ক্রিয়া ও নাই নাই নঞ্র্থক অব্যয়ের সংক্ষিপ্ত রূপব্যবহৃত হয়েছে ।
৩. উপভাষা:কোন ভাষা সম্প্রদায়ের ান্তর্গত ছোট ছোট দলে বা অঞ্চলে বিশেষ প্রচলিত ভাষা ছাঁচকে উপভাষা বলে ?যেমন বগুরার উপভাষা এক ঝনের দুেই ব্যাটাছৈল আছিল ।পাবনার উপভাষা কোন মান্ষের দই ছাওয়াল ছিল ।